শব্দহীন_অনুভূতি,পর্ব_১১,১২

শব্দহীন_অনুভূতি,পর্ব_১১,১২
পলি_আনান
পর্ব_১১

দুপুরের সময়টাতে হৃদিতা এবং আরাফ দুজনেই একসাথে নিচে যায়।কিন্তু নিচে গিয়ে বাড়ির বেশির ভাগ সদস্যর অবজ্ঞার শিকার যে তাকে হতে হবে সে তা আগেই জানতো।আরাফের জেঠিমা হুমায়রা আর আইদা বাদে বাদ বাকি সবাই কানা চোখে তাকায় হৃদিতার দিকে।আরাফের পাশে একই ডাইনিং টেবিলে বসায়, আরাফের চাচি তানিয়া বিভিন্ন ভাবে হৃদিতাকে কথা শুনাতে থাকে। এতে টু-শব্দটাও করেনি আরাফ আর হৃদিতা।বরং তাদের দেখতে মনে হচ্ছে কোন কথাই যেন তাদের কর্ণকুহর পৌঁছাচ্ছে না। খাওয়ার শেষে হৃদিতাকে আরাফ ইশারা করে রুমে চলে যেতে, হৃদিতা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়।বর্তমানে এই বাড়ির সবার সাথে থাকার চেয়ে না থাকা তার জন্য ঢের ভালো।

– আরাফ,
– বল,
– আমার ভার্সিটির কাগজ পত্র ওই বাড়িতে।এডমিট কার্ড সহ যাবতীয় সব।আমি বরং এখন যাই আবার সন্ধ্যায় ফিরে আসবো।
– যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছিনা আমি। তুই পড়তে বস আর বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি। নেহাকে বললে দিয়ে যাবে সমস্যা হবে না।নিশ্চিন্তে থাক।
হৃদিতা মুখের সামনে বই ধরে পড়তে শুরু করলো।কাল সকাল থেকেই তার পরিক্ষা একটু সময় ও অপচয় করা যাবে না।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে পরিক্ষার দিনটা চলেই এলো।সাত সকালে বাকি পড়াটা পড়ে হৃদিতা তৈরি হয়ে নেয়।হুমায়রা আজ হৃদিতাকে নিচে যেতে দেয়নি বরং আগে থেকেই আরাফ আর তার জন্য রুমে নাস্তা পাঠিয়ে দেয়।বোরকা পরে নিকাবটা মুখের উপর দিয়ে পার্ফেক্ট ভাবে তৈরি হয়ে নেয় হৃদিতা।আজ তার গায়ে তার অতীতের দীর্ঘ পুরানো বোরকাটি নেই। আজ আরাফের দেওয়া নতুন বোরকাটি গায়ে জড়িয়েছে সে। ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিতেই হৃদিতা উপলব্ধি করে আজ আরাফের মন মেজাজ একদম ভালো নেই।সকালে কার সাথে যেন ফোনে তর্কাতর্কি করলো এখন আবার মুখটা গম্ভীর করে শার্ট পরে তৈরি হচ্ছে।
– আরাফ আমি বরং একা চলে যাই।
– ওই দাড়া! কয়েকটা কথা আছে শুনে যা দ্রুত।
হৃদিতা থামে। প্রশ্ন বিদ্ধ চোখ নিয়ে আরাফের দিকে তাকিয়ে থাকে।আরাফ পেছনে ঘুরে শার্টের কলারটা ঠিক করতে করতে বলে,
– যাওয়ার সময় আমার সাথেই যাবি তবে তোকে ভার্সিটির কিছুটা আগে নামিয়ে দেবো।আর আশার সময়ও আমার সাথেই আসবি।আর বিয়ের প্রসঙ্গে কিছু কথা, তোর আর আমার বিয়ের কথা যেন একটা কাক-পক্ষিও টের না পায়।আমার ফ্রেন্ড শাকীল আর নাফিসা ছাড়া কেউ যেন না যানে,আর ওরা আগে থেকেই যানে।যা বলছি আশা করি বুঝতেই পারছিস।ওই পেট মোটা লিবান ও যেন না যানে। না মানে না।
আর বিয়ে সর্ম্পকিত কোন বাক্যালাপ যেন ভার্সিটিতে না হয়।যদি কেউ যানতে চায় তুই আমার সাথে কেন আসা যাওয়া করিস বলবি আমরা সবাই মিলে গ্রুপ মিলে স্টাডি করি।

হৃদিতা এখবো আহাম্মকে মতো তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে।সে বুঝতে পারছে না এত লুকোচুরি কেন এই বিয়েটা নিয়ে। হৃদিতার চোখের দিকে তাকিয়ে আরাফ বুঝে নেয় তার সংশয় গুলো।
– আমি বুঝতে পারছি বিয়ের বিষয়টা যানানো নিয়ে আমার এতো নিষেধাজ্ঞা কেন?তাই তুই নিশ্চই অবাক হচ্ছিস।
– অবাক হওয়ার কি আছে নিশ্চই বিয়ের কথা শুনলে তোর গার্লফ্রেন্ড জুটবেনা তাই লুকোচুরি খেলছিস।
আরাফ নিঃশব্দে হাসতে থাকে। চুলে ব্রাশ করতে
করতে আয়না থেকে হৃদিতার প্রতিবিম্বে দৃষ্টি রাখে,

– আহারে পিচ্চি,সব কথায় নেগেটিভ মাইন্ডে না নিলেও হয়।গত কয়েকদিনে পড়ার খাতিরে আমাদের মেলামেশাটা মোটেও পছন্দ করতো না লিবান।লিবান সহ বেশ কয়েকজনের চোখে বিষয়টি ধরাও পরে। তোর মতো নিশ্চুপ, একটা মেয়ে আমার মতো ছেলের সাথে কি করে মেলামেশা করছে স্টেইঞ্জ!এখন যদি বিয়ের কথাটা পাবলিক হয় তবে তোর উপর সবাই আগে আঙুল তুলবে।সবাই ভেবেই নিবে তোর আর আমার মাঝে নিশ্চই খারাপ কিছু হয়েছে।যার কারনে এই প্লে বয় আরফকে তোর বিয়ে করতে হয়েছে।তুই নিজেই বল আমার মতো একটা বেকার,ভাবঘুরে ছেলেকে তোর মতো ব্যাক্তি সম্পূর্ন মেয়ে কেন বিয়ে করবে?

হৃদিতা তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। সত্যিত!কেন আরাফের মতো ছেলেকে সে বিয়ে করবে? কিন্তু আরাফ কি এটা যানে, ভালো আর পড়াশোনায় ভালো হলেই যে এই পৃথিবীতে শুরু থেকে মাথা উচু করে বাঁচা যায় তা কিন্তু নয়।মাথার উপরে যার বাবা-মা নামক ছানি নেই সে কখনোই হয়তো এগিয়ে যাওয়ার ভরসাটা পায় না।এই তো এত ব্যাক্তিত্ব, পড়াশোনার মাঝেও তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল মধ্যে বয়স্ক একজনের সাথে।কিন্তু বাবা মা থাকলে এমন পরিস্থির ফেস তাকে কখনোই করতে হতো না। মনের চাপা কষ্টটা চাপা রেখেই আরাফের দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
– ওকে কেউ কিচ্ছু যনাবে না। আমি আমার মতো তুই তোর মতো।

হৃদিতা লেডিস ব্যাগ নিয়ে দরজার সামনে চলে যায়। কি মনে করে যেন আবার ফিরে তাকায়।ঘাড় ঘুরিয়ে আরাফকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– তোর যাথে কখনোই সংসার বাধঁতে চাই না আমি আরাফ।তুই আর আমি তেল আর জলের মতো যারা মিশতে চায় তবে কিছু কারনে আবার ছিটকে দূরে সরে যায়।

হৃদিতা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আরাফ হাতে থাকা চুলের ব্রাশটা দেয়ালের সাথে ছুড়ে মারে। রাগে সারাশরীর জ্বালা করছে এত অবহেলা এত অবজ্ঞা কেন?

বাংলাদেশে মাটিতে পা রাখতেই উচ্ছ্বসিত মাইশা।নোমানকে সারপ্রাইজ দেওয়ার লোভ সামলে নিতে এখনো কোন যোগাযোগ করে নি সে।তার বাবা গিয়াস দেওয়ানকে নানান ছল বাহানায় রাজি করিয়ে অবশেষে দেশের মাটিতে পা রাখে সে।এয়ারপোর্টে থেকে সোজা কোন হোটেল বুক না করেই নোমানের বাড়িতে গিয়ে উঠে। ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া টাইলসের উপর ঠকঠক শব্দ করে হাই হিল পড়া এগিয়ে আসছে একটি মেয়ে।ঘাড়ের কাছের চুল গুলো দোলাতে দোলাতে বাড়ির এদিকে থেকে সেদিক চাতক পাখির মতো দৃষ্টি দিচ্ছে।
হঠাৎ এমন একটি মেয়েকে ঘরের ভেতরে দেখেই অবাকের শেষ সীমানায় পৌছে যায় তানিয়া।

-এই মেয়ে কে তুমি?আর এখানে কি চাই তোমার?
সামনে থাকার ব্যাক্তিটির উগ্র কন্ঠ শুনেই চোখ কুচকে নেয় মাইশা।
– হেই,আমি মাইশা?তুই নিশ্চই আইদা আদীবের মম!
মাইশার কথা শুনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তানিয়া। কয়েক সেকেন্ডে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে আবারো বাজঁখাই গলায় বলে,
-তোমাকে বাড়িতে ডুকতে দিয়েছে কে?কার পার্মিশনে ডুকেছো আর কার গেস্ট তুমি?
– নোমান! আমি নোমানের শুভাকাঙ্ক্ষী।
– হাহ!নোমান, বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। দ্রুত বাড়ির বাইরে গিয়ে দাঁড়াও নোমান আসলে বাকিটা বুঝে তোমায় ভেতরে আসতে দেবো।

তানিয়ার কথা শুনে এগিয়ে আসে নোমানের মা হুমায়রা।তাকে দেখেই উচ্ছ্বসিত কন্ঠে মাইশা কুশল বিনিময় করে কিন্তু এখনো মাইশার বিষয়ে সুস্পষ্ট নয় হুমায়রা।
– তা তুমি কার গেস্ট তা তো বল্লে না।
-আমি নোমানের গেস্ট।নোমান আর আমার বছর খানিক রিলেশন চলছে কিন্তু নোমান আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে। বিষয়টা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না আন্টি।আপনি প্লিজ কিছু একটা করুন!
মাইশার কথায় সবাই বিষ্ফরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কি বলছে এই মেয়ে?
তাদের কথার মাঝেই বাড়ি ঢুকে নোমান।কিন্তু মাইশাকে দেখতে পেয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
– একি,এই মেয়ে এখানে কি করছে?মা এই মেয়েকে বাড়ি ঢুকতে দিলো কে?
নোমানের ধমক সুরের কথায় কেঁপে উঠে উপস্থিত সবাই।
মাইশা বুঝতে পারে এখন নোমান এখানে মারাত্নক সিনক্রিয়েট করবে তাই দ্রুত এগিয়ে যায় নোমানের দিকে।
-বাহ নোমান বাহ! আমাকে এই বাড়িতে খবর দিয়ে এনে এখন বলছো আমাকে ডুকতে দিলো কে?
– মানে? কি বলছো এইসব,কে বাড়িতে আসতে বললো তোমায়।
মাইশা নোমানকে উপেক্ষা করে হুমায়রার সামনে দাঁড়ায়,
– আন্টি আপনার ছেলে যে বিয়ে করেছে এই খবর সে আমায় দিলো না।কিন্তু এখন যখন আমি যেনে গেছি এবার আমায় বললো তার নতুন বউ যেন এসে দেখে যাই। এবার আসলাম কিন্তু তোমার ছেলে আমায় বাড়ি থেকেই বের করে দিতে চাইছে এইসব কোন ধরনের ফাজলামো একটু বলবেন আন্টি।
নোমানের রাগের মাত্রা প্রবল বেড়েই যাচ্ছে। মাইশার সাথে তর্ক না করে বরং দ্রুত উপরের দিকে যেতে নেয়।তখনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-এই মেয়েকে যেন আমি রুম থেকে বের হলেই বাড়ি থেকে চলে যেতে দেখি।

নোমান উপরে চলে যায় কিন্তু তানিয়া আর হুমায়রা অবাক হয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।হুমায়রা মাইশার হাত টেনে সোফায় বসায়।তার পাশে নিজেও বসে গমগম সুরে বলে,
– এই মেয়ে তুমি কি বলছো এইসব, নোমান কখন বিয়ে করলো?
– কেন একদিন আগেই।আপনিও কি আপনার ছেলের মতো বিয়ের বিষয়টি লুকোনোর চেষ্টা করছেন।পরসূ নোমান বিয়ে করে বাড়িতে বউ নিয়ে ডাইরেক ঢুকেছে।আমি আমার স্পাইয়ের মাধ্যেমে যেনেছি।

মাইশার কথা বলার ভাবভঙ্গি আচার আচরণের ভাবভঙ্গিতেই হুমায়রা বুঝে নেয় এই মেয়ে নিশ্চই কোন আলালের ঘরের দুলালি।
– এই মেয়ে কি বলছিস তুই?নোমান বিয়ে করেনি বিয়ে করেছে এই বাড়ির ছেলে আরাফ।ভুল যানিস তুই।
হুমায়রার কথা শুনেই তড়াক করে উঠে বসে মাইশা।
– আন্টি কি বলছেন?আমি জানি নোমান বিয়ে করেছে।
– না নোমান না আরাফ।আরাফ তার ক্লাসমিট হৃদিতাকে বিয়ে করেছে।
মাইশা ধুপ করে সোফায় বসে যায়। কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে হুমায়রার কাছ থেকে অনুমতি নেয় নোমানের রুমে যাওয়ার কিন্তু তিনি বারন করলেও দুরন্ত মাইশা নোমানের রুমে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নেয়।
ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে ঢোকার আগে দরজা লক করতে ভুলে যায় নোমান। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তার রুমে ঢুকে মাইশা।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই নিজের রুমে মাইশাকে দেখে চরম ক্ষিপ্ত হয় নোমান।
– এই মেয়ে এই রুমে কি করছো তুমি?সমস্যা কি তোমার।
-আমার রুমে আমি আসতেই পারি। তোমার তো সমস্যা হওয়ার কথা না।
– তোমার রুম মানে?
-আমার ফিউচার বরের রুম। তার মানে কি আমারো রুম।
– হ্যা মুখে ঘাস দিয়ে এইসব ভুল ধারনা নিয়ে চলো। আর আমি তোমার সামনে দিয়ে অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করে এই বাড়িতে ঢুকবো। সেদিন দেখি কি করতে পারো.
নোমানের কথায় শুনে মাইশা,নোমানের দিকে আরো কয়েক কদম এগিয়ে যায় ।নোমানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

– আমি উপড়ে নেবো সেই দুচোখ যে দুচোখ দিয়ে ওই মেয়ে তোমায় দেখবে।হাত কেটে দেবে সেই মেয়ের যে মেয়ে তোমায় স্পর্শ করবে।আর লাশ ফেলে দেবো সেই মেয়ের যে মেয়ে তোমাকে তার বলে দাবি করবে।
মাইশার কথায় আরাফ ঠোঁট কামড়ে হাসে। মাইশার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
– এখনো সময় আছে মাইশা দেওয়ান এই বাড়ি,আমার লাইফ ছড়ে চলে যাও।তা না হলে একটু আগে যে বর্ননা গুলো তুমি দিয়েছো সেই বর্ননা গুলো একে একে তোমার উপর প্রয়োগ করবো আমি।
– হাহ,এত সহজ নয়।মাইশা দেওয়ানের চোখ সব কিছুর উপর পরে না। আর যে জিনিসের উপর পরে সে জিনিসটা সে কখনো নিজের কাছ থেকে হারাতে দেয় না। হোক সেটা মানু্ষ কিংবা কোন বস্তু।
মাইশার দৃঢ় কন্ঠে সুপ্ত রাগটা আবার চেপে বসে নোমানের মাথায়। হঠাৎ করেই মাইশার চুলের৷ ভেতর হাত দিয়ে ঘাড়ে দুইটা আঙুল এবং গলায় বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে বেশ জোরে চেপে ধরে। মাইশা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলেও মুখদিয়ে আর্তনাদ করলো না। বরং শক্ত চোখে নোমানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
– কি ভেবেছো নোমান ভালো ব্যবহার করছে এই না তোমার সব কিছু সহ্য করে নেবে। সময়, সুযোগ দুটোই দিচ্ছি বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে।
মাইশা ঠোঁট বাকিয়ে হেসে প্রত্যুওর দেয়,
– আমি যদি তোমার জীবন থেকে সরে যাই তবে মনে রেখো প্রতিটা মূহুর্তে বিপদে পড়বে। যাস্ট একবার বেরিয়ে যাই,তবেই বুঝবে এই মাইশা দেওয়ান কি ছিল।
নোমান ছিটকে দূরে সরিয়ে দিলো মাইশাকে। তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই মাইশা চুল ঠিক করতে করতে বলে,
– আমি যাচ্ছি না এই বাড়ি থেকে বিষয়টা মাথায় রেখো।

চলবে…..

শব্দহীন_অনুভূতি
পলি_আনান
পর্ব_১২

পরিক্ষার শেষ দিন একা একা বাড়ি ফিরবে বলে সিধান্ত নেয় হৃদিতা।কিছুক্ষন আগেই আরাফের সাথে দু চারটা কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আরাফো ছেড়ে কথা বলেনি রাগের মাথায় যা এসেছে মুখে তাই বলেছে।ঝগড়ার কারন আরাফ,লিবান,শাকীল আর নাফিসা ঠিক করেছে এক্সাম শেষ হলেই ঘুরতে যাবে কিন্তু তাদের মাঝে লিবান আবদার করে বসে সে হৃদিতাকে নিয়ে যাবে। আরাফ তখনি রেগে যায় লিবানকে দুইচারটা কথা শোনাতে নিলে লিবান বলে দেয়, হৃদিতা তাদের সাথে ঘুরতে যেতে রাজি আছে।যদি হৃদিতাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে আরাফের কোন সমস্যা থাকে তবে লিবান নিজ দায়িত্বে হৃদিতাকে নিয়ে যাবে।আর হৃদিতার সঙ্গ দেবে লিবান।
সবার সামনে বলা লিবানের হৃদিতাকে নিয়ে এত শত মিথ্যা কথার এক চুল পরিমানেও জানতোনা হৃদিতা, না জানতো তাদের ঘুরতে যাওয়ার বিষয়টা।তাই আরাফ হঠাৎ করেই এক্সাম শেষে হৃদিতার সাথে তর্ক বির্তকে জড়িয়ে যায়। কিন্তু ঠান্ডা মাথার ব্যাক্তিত্ব সম্পূর্ন হৃদিতা কোন তর্কে না জড়িয়ে আরাফকে বিষয়টা ঠান্ডা মাথায় বোঝাতে নেয় ফল সরূপ কোন লাভ না দেখে দ্রুত ভার্সিটি ছেড়ে চলে যাওয়ার সিধান্ত নেয় সে।গেট থেকে বের হয়ে কিছুটা দূরে গেলেই হৃদিতার সামনে দাঁড়ায় লিবান,

– হেই হৃদিতা কেমন আছো?
লিবানের দিকে বিরক্তে মুখ কুচকে তাকায় হৃদিতা।প্রশ্নের উওর কি দেবে না কি দেবে না ভাবতে ভাবতেই লিবান তার দিকে আঙুলের তুরি বাজিয়ে ভাবনার জগৎ থেকে বের করে আনে।

– কি হলো প্রশ্নের উওর দিচ্ছো না কেন?
– আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।আর কিছু প্রশ্ন করবেন?
– হ্যা, পরিক্ষা কেমন হয়েছে তোমার?
– আল্লাহর রহমতে ভালো হয়েছে! আর কিছু?
– তুমি কি আমার প্রশ্নে বিরক্ত ?
– জি!
হৃদিতার সহজ সোজা ত্যাড়া ত্যাড়া কথায় অপমান বোধ হয় লিবানের। তবুও মুখ বুঝে সবটা সহ্য করে বলে,
– আচ্ছা যাই হোক, আমরা ঠিক করেছি এক্সাম শেষে ঘুরতে যাবো।তুমি কি যাবে আমাদের সাথে যেতেই পারো আরাফের সাথে তো তোমার ভালো সম্পর্ক।
হৃদিতার কাছে এবার সম্পূর্ন বিষয়টা পরিষ্কার হয়, লিবানের এখানে আসাটা।আরাফের দোহায় দিয়ে তাকে ঘুরতে যেতে, নিয়ে যেতে চাইছে সে।আবার আরাফের সামনে বলছে হৃদিতা লিবানের সঙ্গে যেতে রাজি।
– আপনারা যেখানে ইচ্ছে যান তবে দয়া করে এইসব বিষয়ে আমায় টানবেন না প্লিজ।
– কিন্তু কেন?আরাফ তোমায় যেতে বলেছে। সে চায় তুমি যাও।
হৃদিতার মাথা এবার প্রচন্ড গরম হয়।তবুও নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,

-লিবান ভাই যাই করেন একটু বুজরুকি গুলো কমাই করবেন।আরেকটা কথা আপনি হয়তো আমার প্রতি দূর্বলতা দেখাতে এসেছেন।আপনি আমার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।আমি বিবাহিতা। আমার হাজবেন্ড দেশের বাইরে থাকে আশা করি আমার পেছনে ঘুর ঘুর করে নিজের সময় এবং এনার্জি লস করবেন না। এবার আসি আমি, ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর যে মেয়ের সাথে রিলেশনশিপে যেতে চাইবেন সে মেয়ের সম্পর্কে আগে জেনে নেবেন। আশা করি আর এমন উজবুক কাজ করবেন না।

হৃদিতা মোড় কাটিয়ে বেগবান হাটা শুরু করে।এদিকে লিবান ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কি শুনলো সে নিজ কানে?সে কি না একটা বিবাহিত মেয়ের জন্য দিবারাত্রি সপ্ন দেখলো।এবার সম্পূর্ন তার মাথায় এসেছে আসল ঘটনাটা তবে কি! আরাফ এত গুলো মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়ালেও কেন হৃদিতার থেকে নিজেকে কিছুটা হলেও আলাদা রাখে,অন্য মেয়ে গুলোর নজরে হৃদিতাকে দেখেনা।আরাফ নিশ্চই যানে হৃদিতা বিবাহিত।
লিবান আবারো দ্রুত হাটা শুরু করে।আজ সারা দিনেও হৃদিতার কথার ভাবভঙ্গি ভুলবেনা সে।

হৃদিতা হাটতে হাটতে বেশ কিছুটা দূরে চলে যায়। তখনি পাশ দিয়ে একটা গাড়ি বেগবান গতিতে থেমে যায়।বিরক্তে কপালে ভাজ করে পাশে তাকাতেই হৃদিতার চোখে পড়লো আরাফের গাড়ি।তাকে দেখে আরো জোরে হাটা শুরু করে হৃদিতা।
আরাফ গাড়ির জানলা দিয়ে মাথা বের করে হৃদিতার জন্য ছুড়ে দেয় একটি আদেশ বানী,

– রঙ ডঙ না করে দ্রুত গাড়িতে বসুন।হৃদিতা আরাফের কথায় পাত্তা না দিয়ে আবারো হাটা শুরু করে। আরাফ তার আচরণ দেখে বেশ রাগান্বিত হয় কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে পেছন থেকে আবারো দুইচার বার ডাক দেয়।কিন্তু হৃদিতা সম্পূর্ণ আরাফকে অগ্রাহ্য করে আবারো হাটতে থাকে,আরাফ এবার রাগটা দমিয়ে না রেখে সিট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।হৃদিতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ধমকের সুরে বলে,

– দ্রুত গাড়িতে উঠ।হাতে সময় একদম নেই।
– তোর সময় নেই যেহেতু তুই চলে যা আমি আমার মতো করে চলে আসবো।
– কথা বেশি বলিস তুই। আমাদের বেড়াতে যেতে হবে, দ্রুত কর।
– কেন কোথায় যাবো?
– আমার শশুড় বাড়ি!
-মানে?
-আহ!গাড়িতে গিয়ে বস আগে তারপর বলছি।
আরাফ হৃদিতাকে টেনে এনে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। নিজে গিয়েও বসে যায়।দ্রুত গাড়ি স্টাট দিয়ে বলে,
– আমার দাওয়াত এসেছিল শশুড় বাড়ি থেকে আর তুই আমায় বললি না।
– মানে কি বলছিস আমায় বুঝিয়ে বল,
এমন সময় আরাফের ফোনে প্রভার কল আসে। তুই তিনবার কেটে দেওয়ার পরেও প্রভা একাধারে ফোন করতেই থাকে । নোমানের ভয়ে অবশেষে কল রিসিভ করে আরাফ,
– হ্যা বলো,
– তুমি আমার কল ধরছো না কেন আরাফ।হোয়াটি’স দিস?
– আসলে আজ এক্সাম শেষ হয়েছে তাই বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মশগুল ছিলাম।কেন ফোন করেছো সেটা বলো,
-আমি চাইছিলাম বিডিতে আসবো,যেহেতু তোমার এক্সাম শেষ তবে বিডিতে আসাই যায় তুমিও ফ্রি আমিও ফ্রি।
প্রভার বিডিতে আসার খবরটা শুনেই আরাফ সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে।হৃদিতার সিট বেল্ট বাধা শর্তেও আরাফের সহসা কান্ডে ছিটকে সামনের দিকে ঝুঁকে যায় সে।আরাফ গাড়ির স্টেয়ারিং এ জোরে প্রহার করেই হৃদিতার বাহু টেনে আগলে ধরে। আরাফের হঠাৎ রাগে স্তম্ভিত হয়ে যায় হৃদিতা।কিছু বলার আগেই আরাফ সিট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রাস্তার অপর পাড়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে প্রভার সাথে। এদিকে হৃদিতা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে। কি হলো হঠাৎ এই মানুষটার?

– প্রভা তুমি এখন বিডিতে কেন আসবে?কোন প্রয়োজন আছে?
– অফকোর্স,তোমার আর আমার বিয়ে আরাফ।কিন্তু আমরা একে অপরকে টাইম দিতে পারছি না যেহেতু তুমিও ফ্রি আমিও ফ্রি সেহেতু এই সময়টা আমি মিস করতে চাইনা এটাই ফাইনাল।
– নো ওয়ে,তুমি আগামী দুই বছরেও বিডিতে আসবেনা।
-বাট হোয়াই?ইদানীং আমি খেয়াল করেছি তুমি নিয়মিত আমার সাথে কথা বলোনা মেসেজ দিলেও ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যায় তারপর এন্সার দাও।সমস্যা কি তোমার?
– আরে তুমি কি আমায় সন্দেহ করছো?আমার এক্সাম ছিল তাই আমি তোমার সাথে তেমন কন্ট্রাক করতাম না এটা নিয়েও ঝামেলা পাকাবে এখন।আমি বলছি তোমায় এখন বিডিতে আসার প্রয়োজন নেই।
– আমি আসবো মানে আসবো।এই নিয়ে তোমার সাথে কোন কথা আমি বলতে চাই না আমি নোমান ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।
প্রভা ফোন কেটে দিলেই আরাফ রাগের মাথায় নিচের চুল নিযে টেনে ধরে। রাস্তার কিনারাত একাধারে পায়চারি করতে থাকে।
– অসভ্য ইতর মেয়ে সব কাজে নোমান ভাই, নোমান ভাই।এতই যখন সব কাজে তোর নোমান ভাই তবে নোমান ভাইকে বিয়ে করছিস না কেন?আমাকে বিয়ে করতে কেন উঠে পড়ে লাগলি। অসভ্য মেয়ে। উফফফ এখন কি করবো আমি।

আরাফ গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।হৃদিতা তার দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।

গত দুই সাপ্তাহ থেকে মাইশা নোমানের বাড়িতেই অবস্থান করছে।এর মধ্যে আরাফ,হৃদিতা,হুমায়রা আইদা আর আদীবের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক জমে উঠেছে তার।
দুপুরের খাওয়ার টেবিলে বাড়ির সবাই বসে আছে শুধু মাত্র তানিয়া আর হুমায়রা সবাইকে সার্ভ করছে।নোমান আর মাইশা একদম মুখোমুখি। নোমান আর তার বাবার মাঝে রাজনৈতিক বিষয়বস্তু নিয়ে আলাপচারিতা চলছে।তাদের কথার মাঝেই মাইশা মুখে ভাত পুরে দিয়ে বলে,

– শুধু রাজনীতি,জনগনের সেবা, আর আপনারা কি বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাকি অন্য কিছু চলে।
মাইশার শান্ত ভঙিমার কথায় তড়াক করে তাকায় নোমান আর তার বাবা জাবেদ।জাবেদ থতমত খেয়ে মাইশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।

– মামনি তুমি এই বাড়িতে জোর করে আছো!নোমান তোমায় আগেই বের করে দিতো নেহাত তার মায়ের কথা আর চাচাজান জহিরের কথায় এই বাড়িতে তোমার ঠাই হয়েছে।তাই আমাদের ব্যাক্তিগত আলাপ পরামর্শে তোমার নাক না দেওয়াই ভালো।
– যদি বলি পারি, আমি এই বাড়ির বউ হতে চলেছি আমাকে তো এই বাড়ির ভাব মতিগতি, বাতাস সম্পর্কে জানতেই হবে।
মাইশার কথায় ধমকে উঠে নোমান।নোমানের ধমক শুনেই বিষম খায় হৃদিতা। কাশতে কাশতে ধম যেন তার দম বন্ধ হয়ে আসছে তড়িঘড়ি করে হুমায়রা পানি মুখে তুলে দেয় হৃদিতার।আরাফ সবার সামনে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না কেননা হৃদিতার প্রতি কেয়ার দেখালেই নোমান তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে।হৃদিতা মাইশার পাশেই বসেছে। মাইশা হৃদিতার পীঠ চাপড়ে বলে,
– একটা ধমকেই তুমি বিষম তুলে ফেলেছো আর আমি এই লোকটার বউ হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছি। বুঝতে পারছো কতটা ফাস্ট আমি। মেয়ে তোমায় দৃঢ় ভেবেছিলাম অন্তত এই বাড়ির ছেলেদের বউ হতে গেলে কলিজা শক্তের প্রয়োজন। একেকটা মানুষ রূপের অমানুষ।

মাইশার উগ্র মেজাজের কথা শুনে সবাই অবাক চাহনীতে তাকায়। আরাফের মা মায়মুনা মাইশার দিকে ভ্রু বাকিয়ে বলে,
– শোন মেয়ে এই বাড়ির বউ হওয়ার জন্য না তোমায় পছন্দ না আমার ওই মেয়েকে পছন্দ।আমরা চাই তুমি আর ওই মেয়ে, নাম যেন কি? ও হ্যা হৃদিতা! হৃদিতা বাড়ি ছেড়ে চলে যাও।

হৃদিতা চকিতে তাকায় মায়মুনার দিকে।আবার কিছু একটা ভেবে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।মাইশা মায়মুনার দিকে তাকিয়ে গমগম সুরে বলে,

-আপনাকে কে বলেছে আমায় পছন্দ করতে?আমার শাশুড়ী মা আমায় পছন্দ করেছে ব্যস এই টুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।
খাওয়ার টেবিলের তর্কাতর্কিতে রাগ দেখিয়ে চলে যায় নোমান।তার পেছনে আরাফ উঠে যায় আর হৃদিতাকে চোখ ইশারা করে যেন দ্রুত উপরে আসে।গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।

আলমারি থেকে একে একে কয়েকটা জামা ট্রলিতে গুছিয়ে নিচ্ছে আরাফ। রুমে ঢুকে আরাফের কান্ড দেখে হৃদিতা বলে,
– ঘুরতে যাবি বুঝি?কোথায় যাবি তোরা?
– আগেই বলেছি শশুড় বাড়ি যাবো।তোর খালামনি খালুজান, নেহা সবার সাথেই আমার আজ কথা হয়েছে। তারা নাকি আমাকে দাওয়াত করেছে।গত চারদিন থেকেই তোকে বলেছে আমাকে নিয়ে যেন বেড়াতে যাস।কিন্তু তুই দাওয়াতটা ক্যান্সেল করেছিস।কিন্তু কেন হৃদিতা।বিয়ের পরে ওই বাড়িতে তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো এটা স্বাভাবিক নয় কি?
হৃদিতা গাঢ় করে শ্বাস ছাড়ে। বিছানার এক কোনায় আরাফের মুখোমুখি বসে চোখে চোখ রাখে।আরাফ সুদীর্ঘ লম্বা হওয়ায় তাকে বেশ মাথা তুলে তাকাতে হয়।
– আমি তোকে দুটো কারন ভিত্তি করে ওই বাড়িতে যাওয়ার কথা বলিনি আরাফ!
হৃদিতার কথায় পলকহীন ভাবে তাকায় আরাফ। আবারো ব্যাগ গোছাতে গোছাতে হৃদিতার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
-কোন দুটো কারন?
– দেখ তোর আর আমার বিয়ে স্বাভাবিক ভাবে হয় নি…
হৃদিতার কথায় দাড়ি বসিয়ে আরাফ সহসা জবাব দেয়,
– কেন তোর আর আমার বিয়েতে কি কাজী আসেনি?কবুল বলায় নি আমাদের?কাবিননামায় স্বাক্ষর নেয় নি?কোন দিক থেকে বিয়েটা অস্বাভাবিক হয়েছে বলবি আমায় তুই?
– আহ! আরাফ আমি তা বলিনি। দেখ তোকে বিয়ে করার ঠিক দশ মিনিট আগেও যানতাম না তুই আমার বর আমি তো জানতাম ওই লোকটাই আমার বর তাহলে…
– তুই জানতি না ঠিক তবে তোর পরিবার জানতো। তোর দাদী ছাড়া সবাই জানতো আমার সাথে তোর বিয়ে। ঠিক বিকালেই নোমান ভাই বিয়ে ভাঙতে বলে আর নোমান ভাইয়ের নির্দেশ অমান্য করলেই এই শহর ছাড়তে হবে তোদের এই কথাটা ভালো করেই যানে তোর খালুজান। তাই বিকালের মধ্যেই সব ক্যান্সেল করা হয়।দ্বিতীয়ত তোকে যেন না বলা হয় এই বিষয়টা আমাদের পক্ষ থেকেই বারন করা হয়েছে। আশা করি এবার অন্তত বলবি না বিয়েটা অস্বাভাবিক ভাবে হয়েছে।

হৃদিতা নির্বাক হয়ে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে।এই মূহুর্তে কি বলবে সে।বাড়ির মানুষ গুলো তাকে কিচ্ছু জানালো না।তবে আরাফকে বিয়ে করে যে, তাকে একপ্রকার মাঝ সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছে তা হৃদিতা ভালো করেই উপলব্ধি করছে।
– বাকি কথাটা শেষ কর!
হৃদিতা বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।আলমারি থেকে নিজের জামা নামাতে নামাতে বলে,
– আরাফ তুই কত বড় ঘরের ছেলে ওই পরিবেশের সাথে তুই একদিনেও মানিয়ে নিতে পারবি না।
– কেন?কেন পারবো না আমি?
– তুই থাকিস কত বড় বাড়িতে,তোর জন্য আলাদা আলাদা সব কিছুর ব্যবস্থা। কিন্তু সেখানে টিনের চালের ঘর, ওয়াশরুম বাইরে, গোসল করতে হবে পুকুর পাড়ে বুঝতে পারছিস তুই?এতটা ভোগান্তি তোর জন্য না। তুই সামলে পারবি না।
– মানসিক শান্তি আছে?
– কি!
হৃদিতার অবাক চাহনীর প্রশ্ন
– বলছি যে, মানসিক শান্তি আছে তোর খালার বাড়িতে।
– যানি না। তবে কারো মাঝেই অহংকার, অবজ্ঞার শিকার তুই হবি না। শুধুমাত্র দাদী ছাড়া।
– যেখানে মানসিক শান্তি আছে সেখানে একটু কষ্ট নিয়ে বাঁচাই যায়।এই কয় দিনে কি বুঝেছিস?এই বাড়িতে সব থাকলেও মানসিক শান্তি নেই,কোন প্রাণ নেই যেন অমানুষে পরিপূর্ণ এই বাড়ি।

হৃদিতা মাথা নামিতে ভাবতে থাকে সত্যি এই বাড়িতে মানসিক শান্তি নেই ভালোবাসা নেই। আছে শুধু অহংকার, প্রতিহিংসা,অবজ্ঞা।
– হৃদি কি আমাদের সাথে যাবে আরাফ।
– হ্যা, অবশ্যই হৃদি যাবে।
হৃদিতা নিজে তৈরি হতে ড্রেস খুঁজতে থাকে এমন সময় আরাফ মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– শুনছিস পিচ্চি, ওইদিনের লাল জামদানিটা পড়।
আরাফের কথায় হৃদিতা ভ্রু বাকিয়ে বলে
– কেন,, ওই দিন বলেছিলি আমাকে নাকি ভালো লাগেনা তোর ছত্রিশ নাম্বার এক্স গার্লফ্রেন্ডকে অনেক মানাতো তাহলে এখন এই শাড়ি পড়তে বলছিস কেন?
– আরে বুঝিস না কেন? আমি চাইনা তোকে দেখতে সুন্দর লাগুক। আর কারো নজর সহযে পড়ুক।আরেকটা কথা আরাফ সমসময় সোজাটা বলেনা উলটা’টা বলে।ভেবে দেখ বিয়ের পর তোকে আমি কি কি বলেছিলাম।
আরাফ মোবাইলটা রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়।হৃদিতা ভাবতে থাকে মানে কি?আরাফ সত্যটা মিথ্যা করে বলে!তবে বিয়ের পর তাকে কি কি বলেছিল আরাফ?

চলবে…

🌼গল্পটা কেমন হয়েছে জানাবেন.!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here