শব্দহীন_অনুভূতি,পর্ব_১৩,১৪

শব্দহীন_অনুভূতি,পর্ব_১৩,১৪
পলি_আনান
পর্ব_১৩

রুমের দ্বারের সামনের পর্দাটায় আড়াল হয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হৃদিতা।তার সামনেই আরাফ আর সুফিয়া বাক্যালাপ করছে।আরাফ শান্ত হয়ে সুফিয়ার প্রতিটা কথাই হজম করছে। কথার তালে তালে আরাফকে বিভিন্ন ভাবে অপমান করে যাচ্ছে সুফিয়া।পর্দার আড়াল থেকে হৃদিতা আরাফের চোখ মুখের অবস্থা দেখছে।কি করে এত কথা সহ্য করছে আরাফ।শুধু কি বাড়ির জামাই হওয়ার ভদ্রতায়?নাকি দাদীকে কিছু বললে হৃদিতার অপমান বোধ হবে সে জন্য।

নেহা বেশ কয়েকবার সুফিয়াকে এমন অকথ্যকথনে বারন করেছে।ওয়ালীদ বার বার তার মায়ের দিকে অনুনয় চোখে তাকিয়ে ছিল শুধুমাত্র আরাফকে যেন কথা না শোনায়।কিন্তু রাগী রুক্ষভাষী সুফিয়া সবাইকে অগ্রাহ্য করে, আরাফকে কথার তালে তালে অপমান করেই যাচ্ছে।আরাফ সবাইকে চোখ ইশারায় সরে যেতে বলে।কিছুক্ষণ পর ওয়ালীদের লজ্জানত অবস্থা দেখে আরাফ মিষ্টি করে হেসে বলে,

– আমার দাদী শাশুড়ী আমার মুরব্বী। তিনি আশা করি কোন কথাই মন্দ বলেন নি।আপনারা আপনাদের কাজে যান। আমি বরং ওনার সাথে একটু গল্প করি।

সবাই চলে গেলেও হৃদিতা থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর সেটা দেখেও আরাফ না দেখার ভাব নিয়ে বসে আছে।

– হুনো, মাইয়াডারে জলে ভাসাইয়া দিসে এটা আমি আগেই বুইঝা গেসি।
– আপনার কোন দিক থেকে মনে হলো হৃদিতা জলে ভেসে গেছে যদি একটু বলতেন।
আরাফের কথায় তড়াক করে তাকায় সুফিয়া।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে পানের বাটা থেকে পান মুখে পুরে বলে,

– এই যে দেহ,তোমার চাকরি-বাকরি নাই,কয়বার যানি ইস্কুল কলোজের লাত্তি উষ্ঠা খাইয়া ফাশ করছো।তোমায় মতো পোলারে কোন হানে চাকরি দিবো?আর আমগো মাইয়াডা দেহো,শিক্কিত দেখতে হুনতে মন্দ না। আবার এই বয়সে টিউশনি কইরা রোজাগার করে।আর তুমি…..
সুফিয়ার কথায় দাড়ি বসিয়ে আরফা এক গাল হেসে দেয়।দুই হাটুর উপরে হাত রেখে জোরে জোরে দুইটা ধাপ্পা দিয়ে বলে,

– ওহ আচ্ছা,মেয়ে শিক্ষিত, দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ এই জন্য কি এমন অর্ধ-বুড়ো ধরেই বিয়ে দিচ্ছিলেন?আর শুনলাম আগের ঘরের নাকি দুই বাচ্চা ছিল!
আরাফের প্রত্যুত্তের থতমত খেয়ে যায় সুফিয়া। কথার ভাবভঙ্গি আবার কাটিয়ে বলেন,

– হুনো পোলা,মাইয়া গো রুজিরোজগার না করলেও চলে, তাও আবার এত পড়াশোনাও লাগেনা। রোজকার করবো পোলারা। আর সংসার সামলাইবো মাইয়ারা।হেই মাইয়ার যদি ওই হানে বিয়া হইতো মাইয়াডা আমার সুখেই থাকতো।ওই পোলাডার কম টেকা উপার্জন করেনা।চালের আড়তদার সে।আগের ঘরের দুইডা পোলাপাইন নিয়া ভালোভাবেই সংসার সামলাইতে পারতো।

– বাহ বাহ!এক মুখে দুই কথা।একটু আগে নাতনির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আর এখন বলছেন পড়ালেখা না করলেও চলে।
– হুনো পোলা বেশি কইয়ো না।তোমরা আগে আইছো দুনিয়ায় নাকি আমরা।আমগো জ্ঞান তোমগো থেইকাও তুরুক।এই যে তোমার নিজেস্ব কোন সম্বল নাই, এহন তোমার বাড়ির মাথা কিন্তু ওই পোলার,
– কোন পোলার দাদী?
আরাফের সন্দিহান প্রশ্ন।
– ওই যে মাইর পীট করে,রাউজনীতি করে নাম কি যানি ওহ হ নোমান!হেই পোলারে এলাকার হজ্ঞলে বাঘের লাহান ডরায়।হেই পোলা যদি তোমারে বাইর কইরা দেয় তহন কি হইবো।আমার নাতনি রে নিয়া কই যাইবা তুমি?

– এইসব ফালতু কথা আপনার মাথায় এলো কেন আমি তো বুঝলাম না দাদী।তাছাড়া ওই বাড়িতে কে বলেছে নোমান ভাইয়ের একার পাওয়ার।আমার বাবা চাচার সম্পত্তির অংশীদার আছে। আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সেই দিক থেকে শুধু একার মালিক আমি।
– উহহহ দেহুম কত পাও তুমি।দেইখো ওই পোলা তোমগোরে গাঙ্গে ভাসাই সব নিজের হাতে কইরা নিবো।কোন কানা কড়িও তোমগো জুটবো না। আকাইম্মা পোলার থেইকা মাইয়া বিয়া দিয়া ওয়ালীদ ভুল করছে।তোমার কি বিশ্বাস যদি ছাইড়া যাও আমগো মাইয়ারে।

সুফিয়ার কথায় মাথা নামিয়ে নেয় আরাফ।কেউ বুঝলো না তার ভালোবাসা,কেউ যানলো না তার অনুভূতির কথা। অব্যক্ত ভালোবাসাটা গাঢ় হলেও সবাই ভেবে নেয় হয়তো দুজনের কোন মনের মিল নেই। এই সম্পর্কে কোন ভালোবাসা নেই, কিন্তু কেউ কোনদিন হয়তো দেখবে না আরাফের ভালোবাসা।চাইলেও নিজেকে উজার করে ভালোবাসতে পারবেনা আরাফ।তার হাত পা যে অদৃশ্য শেকলে আটকা পরা।তবে দেহের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও আরাফ চাইবে,সে হৃদিতাকে মন প্রাণ দিয়ে চাইবে।

আরাফের নত মুখ খানা দেখে হৃদিতার টনকনড়ে।আরাফ কি সুফিয়ার কথায় কষ্ট পেয়েছে? নাকি আর শুনতে পারছে না এই চরম অপমানের কথা।আরাফকে চুপ থাকতে দেখে সুফিয়া পানের পিক জানলা দিয়ে ছুড়ে মেরে বলে,
– হুনো পোলা কাজ কাম কিছু করো, আর কত দিন বইয়া বইয়া খাইবা।কাম কাজ না পাইলে দোকানের কাপ পিরিজ ধুইবা দিনে একশ টাকা পাইলেও পাইতে পারো।না হইলে তরকারির ক্ষেত কাম করো।

আরাফের ভিষণ হাসি পাচ্ছে হাসির কারন তার অজানা।হয়তো ভাবনার চাদর থেকে বেরিয়ে আসছে তার জীবনের গতির কথা। হাতের ঘড়িয়ে বিক্রি করলেও বেশ কয়েক হাজার টাকা পাওয়া যাবে।যার বাবার অফিসে এত শত কর্মী কাজ করে সে কি না আরেক জনের কামলা খাটবে।

হঠাৎ আরাফ অনুভব করে কেউ তার হাত ছুয়ে দিয়েছে।এবং হাত টা ভিষণ ঠান্ডা। দ্রুত দৃষ্টি ফেলতেই আরাফ দেখতে পায় হৃদিতা তার হাত টেনে দাড় করাচ্ছে।তৎক্ষনাৎ আরাফ দাঁড়িয়ে যায়।বাম হাতের উল্টা পীঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে হৃদিতা সুফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– অনেক হয়েছে।সেই ছোট বেলা থেকে আপনার গায়ে লাগানো অপমান জনক কথা শুনে এসেছি আর আজ আপনি আমার স্বামীকে নিয়ে শুরু করেছেন।আজ একটা কথা না বললেই নয় নেহা আপুর স্বামী কোন দিন এই বাড়িতে এলে আপনি কি এইভাবে অপমান করতে পারতেন?না পারতেন না কোন দিন পারতেন না।আমি এতিম বলে আমার শেষ আশ্র‍য় আপনারা বলে যা নয় তাই বলছেন। এই ছেলেটাকেও ছাড় দিচ্ছেনা না।

হৃদিতা অশ্রুসিক্ত নয়নে আরাফের দিকে তাকায়।আরাফ তো তাজ্জব বনে দাঁড়িয়ে আছে হৃদিতার চোখের দিকে তাকিয়ে।হঠাৎ করেই হৃদিতা আরাফের বুকের বাম পাশে ধুম করে কিল বসিয়ে দেয়। হালকা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে আরাফ তবুও তা প্রকাশ না করে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে।

– তোর সমস্যা কি?তুই এইসব কেন শুনছিস?সেধে সেধে অপমান গায়ে লাগাচ্ছিস কেন তুই?এই বাড়ি থেকে তোকে শাসন করার অধিকার একমাত্র আমার খালুজান আর খালামনির আছে।তারা আমায় লালন পালন করেছে আমার মা বাবা তারা।তাই এই বাড়ির অভিভাবক হিসেবে তারা দুইচারটা কথা তোকে বলতে পারবে অন্য কেউ নয়।বিশেষ করে তারা নয় যারা আমার খারাপ চেয়েছে আমাকে ধ্বংস করতে চেয়েছে।

সুফিয়া নির্বাক হয়ে গেছে। এত দিনের চুপচাপ মেয়েটি কি আজকের হৃদিতা।
আরাফকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে হৃদিতা। আরাফ হৃদিতার হাতের বন্ধনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
কে যেন বলেছিল,বাঙালি মেয়েরা বাপের বাড়িতে তাদের স্বামীদের অপমান মোটেও সহ্য করতে পারেনা।তখন তারা হয়ে যায়
রায়বাঘিনী। আজকের হাতেনাতে প্রমাণ পেলো আরাফ।তার জন্য হৃদিতার এই রাগ ক্ষোভ সত্যি মুগ্ধ করেছে তাকে।

বিছানার এক কোনে কাদঁছে হৃদিতা অন্যকোনে বসে আছে আরাফ।আরাফ কিছুটা এগিয়ে হৃদিতার সামনে বসে,
– কিরে কাদঁছিস কেন?আমার গায়ে লাগেনি দাদীর কথা।তিনি মুরব্বি বলতেই পারেন। এই মেয়ে আর কাদিঁস না।
– তুই নেহার কাছে যা আরাফ। আমায় একা থাকতে দে।
আরাফ হৃদিতার একটা হাত বাড়িয়ে ধরে,হৃদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে কানে ফিসফিস করে বলে,
– কখনো যদি কেউ আমাদের আলাদা করতে চায় আগলে রাখতে পারবি আমায় তুই?
আরাফের কথায় বেগবান দৃষ্টিতে তাকায় হৃদিতা হেচঁকি তুলে বলে
– কে আলাদা করবে? আমরা নিজেরাই আলাদা হবো। ভুলে গেলি এতদিনের কথা। তুই নাকি শুধু মাত্র আমাকে পড়াশোনার জন্য বিয়ে করেছিস।তবে তোর পড়া শেষ হলেই আমরা আলাদা হয়ে যাবো।আর দেখবো না দুজন দুজনকে। হয়তো বা এইভাবে আর হাতটাও ধরা হবে না।
– ধর আমি ছেড়ে যেতে চাই না তুই ও না তখন?তখন পারবি তো আমায় আটকে রাখতে।

হৃদিতার হঠাৎ আরাফের আবেগী কথাতে দুনিয়া ঘুরে যাচ্ছে। আরাফ তো এমন কথা বলে না।চোখের পানি মুছে ঘাড় কাত করে হৃদিতা বলে,
– যদি তুই না ছাড়িস আমিও না ছাড়ি তবে আমাদের আলাদা করবে কে?
– আছে আছে এমন অনেকেই আছে।সামনে যা দেখছিস আশা করি একটু হলেও বুঝতে পারবি।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
রাত গভীরে বাড়ি ফিরে নোমান রুমে ডুকতেই চেয়ারে হেলান দিয়ে মাইশাকে দেখেই ভড়কে যায় সে।
– এই মেয়ে তুমি?
– ওহ তুমি ফিরেছো!আমি তো তোমার চিন্তায় ঘুম হারাম করে বসে আছি। কয়বার ফোন করেছি দেখো তো?
– কিন্তু আমার আশায় বসে থাকার কারনটা কি?
মাইশা মাথা নিচু করে নেয়।আমতা আমতা সুরে বলে,
– বাবা আমার ঠিক করে নিয়েছে নোমান।তিনি চান দেশে ফিরে আমি বিয়েটা করে নি।
– বাহ বেশ ভালো সংবাদ।তোমার বিয়ে তুমি করে নাও তাতে আমার কি?
– দেখো নোমান আমি তোমাকে চাই।আমি জানি তুমি বুঝবেনা।একটি বার অন্তত ভালোবেশে দেখো । প্লিজ নোমান আমায় ফিরিয়ে দিও না। আমি তোমায় কাল দুপুর পযন্ত সময় দিলাম যদি তুমি সম্মোতি না দেও তবে বেশ আমি আমার রাস্তায় তুমি তোমার রাস্তায়৷ একটু ভাবো,আর কতদিন এই ভাবে চলবে এবার অন্তত বিয়ে করে সংসার সামলাও।
– আমার জীবন ঘুছিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আমার তোমার নয়।
– তা অবশ্য ঠিক।তবে আমি কালকেই চলে যাবো।
এটাই আমাদের শেষ কথা।আর বিরক্ত করবো না তোমায়।
হঠাৎ করেই মাইশা নোমানের পায়ের সামনে বসে যায় হুহু করে কেঁদে উঠে। নোমান দুই পা পিছিয়ে যায়। হাসিখুশী মাইশার চোখের পানি দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। যার মুখে লাগামহীন কথা আর হাসি লেগে থাকতো তার চোখে জল যেন বেমানান।
মাইশা ঘাড় নুইয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় কিন্তু নোমানের বুকে যেন ভারী পাথর তুলে দিয়ে যায়৷ অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে বুকের ভেতরটায়। মাইশা চলে যাবে যাক না তাতে তার কি? এই সব ভাবতে ভাবতেই দুচোখে আর ঘুম নামেনি নোমানের।অদৃশ্য চিন্তারা তাকে গ্রাস করে নেয়।

কেটে যায় দুইদিন মাইশা নিজেকে আড়াল করে নেয়। এই বাড়িতে এখনো তার অবস্থান কিন্তু নোমানের সাথে ভুলেও দেখা করেনি।কিন্তু নোমান আসতে আসতে মিস করতে থাকে মাইশাকে।মেয়েটা কেন তাকে আর বিরক্ত করছে না।এইসব ভেবেই উল্টো বিরক্ত হচ্ছে সে।কোন কাজে মন বসাতে পারছে না।খাওয়ার টেবিলে মাইশার কথা ভাবতে ভাবতে বাড়িতে প্রবেশ করে তার ভাই নিয়াজ।নিয়াজকে দেখে নোমানের আর তার বাবার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে কিন্তু বাকিরা যেন আতংকিত হয়ে যায়।আইদা ঢোক গিলে তার একবছরের বড় ভাই আদীবের দিকে তাকায়।আদীব তার হাতে হাত রেখে বোনকে আস্বস্ত করে।বাড়িতে যেন আরেকটা তান্ডব আসতে চলেছে।
#চলবে….
🌼পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন!

#শব্দহীন_অনুভূতি
#পলি_আনান
#পর্ব_১৪

বাড়িতে নিয়াজকে দেখে পরিবারের কিছু সংখ্যাক সদস্য খুশি হলেও বাকিরা চুপচাপ গুমরে যায়।আইদা হাতটা শক্ত করে ধরে আছে তার ভাই।ক্লাস নাইনে পড়ুয়া আইদার দিকে এগিয়ে আসে নিয়াজ।এক গাল হাসি দিয়ে পকেট থেকে চকলেট বের করে তার দিকে এগিয়ে ধরে বলে,

– কি রে কেমন আছিস?পড়াশোনা ঠিকঠাক মতো চলছে তো?
– হ্যা ভাইয়া ভালোই চলছে।
নিয়াজ তীক্ষ্ণ চোখে দুই ভাইবোনের হাতের বন্ধনের দিকে তাকায়।নিয়াজ আদীবের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

– ইন্টারে পড়ুয়া ছেলে এখনো কি বোনের হাত ধরেই থাকবি? তোর বয়সে মেয়ে নিয়ে ঘুরেছি।আর তুই কি না, এখনো বোন বোন করে জান দিয়ে দিচ্ছিস।একটাও গার্লফ্রেন্ড জুটাতে পারলিনা।ছিহহ ব্যাটা কাপুরুষ!
নিয়াজের কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে আদীবের কিন্তু বাড়ির বড়দের সামনে নিয়াজকে কিচ্ছু বলা যাবে না।বললেও বেয়াদবির কাতারে তাকে পড়তে হবে। কেননা নিয়াজ আরাফের বড়।সেই দিক থেকে রেস্পেক্ট অবশ্যই করতে হবে।আদীব সবার দিকে পরখ করে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয়।কিছু টা রাগ ঝেরে শান্ত কন্ঠে বলে,
– আমার একটাই বোন আর তাকে প্রটেক্ট করার দায়িত্ব আমার।এখনো প্রেম ভালোবাসা করার জন্য যথেষ্ট সময় আছে।আমি বরং আমার বোনের হাতে হাত রেখে তার ভিত্তিটা মজবুত করে দি। তারপর এইসব নিয়ে ভাবা যাবে আসি নিয়াজ ভাই আমাদের পড়া বাকি আছে।

আদীব আইদাকে নিয়ে উপরে চলে যায়।নিজেদের রুমে গিয়ে আলাপ পরামর্শে ব্যস্ত হয়ে যায়।

– কয় সাপ্তাহের জন্য এসেছে নিয়াজ ভাইয়া?এই মানুষটা একদম খারাপ। বিশ্রী ভাবে গায়ে হাত দেয়।আমার অসহ্য লাগে।এখন থেকে আমি আর নিচে যাবো না।খাওয়া দাওয়া আমার রুমেই করবো।
আইদার কথা শেষ হতেই জোরে শ্বাস ছাড়ে আদীব।বোনকে আস্বস্ত করে বলে,
– উওম সিধান্ত নিয়েছিস।সবসময় রুমের দরজা বন্ধ রাখবি।প্রয়োজনে বের হলে আমায় নক দিবি। নিয়াজ ভাইয়া কিন্তু বড্ড বেশি খারাপ।

দুই ভাই বোন আবার চিন্তার সাগরে ভেসে যায়।

আরাফ হৃদিতাকে নিয়ে তার বাড়িতে ফিরে আসে।কিন্তু লিভিং রুমে আসতেই নিয়াজকে চোখে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকায় হৃদিতার দিকে।হৃদিতা বুঝতে পারলোনা আরাফের চোখের ভাষা।চিনতে পারলো না সোফায় বসে আড্ডা দেওয়া ছেলেটি কে?

– উনি কে আরাফ?
হৃদিতার কথাকে অগ্রাহ্য করে আরাফ নির্দেশ ছুড়ে দেয় হৃদিতার দিকে,
– সোজা উপরে চলো।
আরাফ হৃদিতার ডান হাতটা টেনে তার সাথে আড়াল করে হাটা শুরু করে। কিন্তু কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই তার চাচি তানিয়া ডেকে উঠে,

– আরে আরাফ এসে গেছে।
সঙ্গে সঙ্গে দাড়িয়ে যায় আরাফ এবং হৃদিতা।নিয়াজ আরাফকে দেখেই দ্রুত কাছে এসে জড়িয়ে ধরে।আরাফ দ্রুত হৃদিতার হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যাওয়ার জন্য ইঙ্গিত করে।হৃদিতার সবটা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তবুও আরাফের নিয়ম রক্ষার্থে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।নিকাবের আড়ালে উদ্দীপ্ত চোখ দুটো দেখেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে নিয়াজ।

– মেয়েটা কে?
নিয়াজের অবাক হয়ে থাকা চাহনীতে ভড়কে যায় হৃদিতা। তানিয়া এগিয়ে এসে বলে,
– আরাফের বউ।তুই তো এই প্রথম দেখছিস।

নিয়াজ এগিয়ে যায় হৃদিতার দিকে।পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে গাল চুলকে বলে,
– দেখলাম আর কই?চোখ দুটো ছাড়া তো কিছুই দেখতে পারছি না।
নিয়াজের কথার ইঙ্গিত ইশারা বুঝতে পেরে আরাফ তাদের মাঝখানে হৃদিতাকে আড়াল করে দাঁড়ায়।নিয়াজের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রেখে বলে,

– কিরে ভাইয়া কখন এসেছিস?
– হলো ঘন্টা খানিকক্ষণ। তা তোর বউকে বল মুখ খুলতে আমি ভাসুর হই তার,চেহারাটা দেখবো না আমার ভাইয়ের বউয়ের।যে কিনা বড় বড় দুইটা ভাইকে টেক্কা দিয়ে আগে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে।

কথাটা বেশ গায়ে লাগলো আরাফের। তবুও রাগ দেখালোনা। চুপচাপ হৃদিতার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে।উপরে চলে যাওয়ার জন্য।হৃদিতাও কথা না বাড়িয়ে উপরে চলে যায়।আরাফ এবার পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিয়াজের উপর।
– আমার প্রয়োজনের তাগিদে আমি বিয়ে করেছি।তোমার চাইলে তুমিও করো।আর তোমার টাকায় তো আমি চলি না যে বিয়ের আগে ভাবতে হবে আমার বড় ভাইটা বিয়ে করে নি, আমি কেন করবো?আমার বাবার টাকায় আমি চলি তাই আমার ব্যক্তিগত জীবনের সিধান্ত নেওয়ার অধিকার একা আমার নিজের।অনেক ক্লান্ত আমি বিশ্রামের প্রয়োজন যাই আমি।

আরাফ উপরে চলে যায়। এদিকে নিয়াজ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এই ছেলে তো মুখ ফুটে একটা কথাও বলতো না তবে এই ছেলে আজ এত কথা শুনিয়ে দিলো নিয়াজকে, এত পরিবর্তন।নিয়াজের ভাবভঙ্গিমা বুঝতে পেরে তানিয়া এগিয়ে এসে নিয়াজের কানের সামনে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
– আমাদের আগের আরাফ এখন আর নেই।এখন ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছে। নোমানের অনুমতিতে বিয়ে করে বাড়ি এনেছে এই মেয়েকে অথচ বাবা মায়ের অনুমতি পর্যন্ত নিল না বুঝলে এবার এই ছেলে কেমন সেয়ানা।
তানিয়ার কথার প্রত্যত্তুর করলোনা নিয়াজ সে শুধু ভেবেই যাচ্ছে কালো নিকাবে আবৃত উদ্দীপ্ত চোখ দুটোর কথা।এই চোখে যেন লুকিয়ে আছে অজস্র মায়া।ক্ষুদ্র তেজ।গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।

আরাফ রুমে ফিরে এসে শব্দ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে হৃদিতাকে ইশারায় কাছে ডাকে।
– আজ থেকে এই রুমের বাইরে ভুলেও বের হবি না।খবরদার, না মানে না।
– কিন্তু কেন আরাফ?আর ওই ছেলেটাই বা কে?
– নোমানের দাদাভাইয়ের ছোট ভাই নিয়াজ।

“নিয়াজ” নামটা শুনতেই হৃদিতা চমকে যায়।এই লোকটাকে দুচোখে দেখার বড্ড ইচ্ছা ছিল তার তবে আজকের সেই ছেলেটাই নিয়াজ।আইদার কাছ থেকে নিয়াজের চরিত্র সম্পর্কে অবগত হৃদিতা।এই বাড়িতে সকল সদস্যর শীর্ষে খারাপ নিম্ন মানের প্রানী যদি এই নিয়াজ এনায়েত।নারী ক্ষুদার পূরণে লালসার দৃষ্টিতে তাকাতে এই বাড়ির মেয়ে আইদাকেও ছাড় দেয় নি সে।সুযোগ পেলেই বাজে ভাবে ছুঁয়ে দেয়।কিন্তু এইসব কিছুর, একটা প্রমান ও রাখেনা নিয়াজ।ছোট্ট আইদাকে ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে নেয়।তাছাড়া নিয়াজকে বেশ পছন্দ আরাফের মা মায়মুনার। তার বিশ্বাস নিয়াজ যাই করুক বাড়ির মেয়েদের সাথে অন্তত অসভ্যতা করবেনা।পরবর্তীতে আইদা তার ভাই আদীবকে জানায়।আদীব আড়ালে নিয়াজের মা হুমায়রাকে আর আরাফকে যানায় কিন্তু কাউকে কিচ্ছু জানিয়েও লাভ নেই।এই ছেলেটা বড্ড চতুর। হাতে নাতে এই বাড়িতে তার কোন কার্যকলাপ ধরা পরে না।তাছাড়া বাড়িতে প্রতিমাসে এক দু সাপ্তাহের বেশি তার থাকাও হয় না। কিন্তু হৃদিতার দিকে লোকটা যেভাবে তাকিয়েছে মনে হয়না হৃদিতাকে ছাড় দেবে।

ভাবুক হৃদিতার দিকে তাকিয়ে তুড়ি বাজায় আরাফ।
– কই হারিয়ে গেলি?
– রুম থেকে বের না হলে সবাই আমাকে কি ভাববে আরাফ?আমাকে তো সকাল হলেই সবার কাজে হেল্প করতে হয়।বাড়ির বউ হিসেবে যে দুইচারদিন আছি এটাই নিয়ম।
-তোকে তো আর কাজের মেয়ে করে আনি নি?দাসী গিরি করতে হলে আমার করবি।
– আজব সংসারের কাজে দাসী হওয়ার কি আছে?
– এত শত যানি না আমি। তুই এই রুম থেকে বের হবি না।আমি কোথাও গেলে ভেতর থেকে দরজা আটকে হৃদিকে নিয়ে থাকবি টিভি দেখবি,বই পড়বি। তবুও পাকনামি করে তুই বের হবি না প্লিজ।
হৃদিতা আরাফের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে তাকে অভয় দেয়।

গভীর রাতে হৃদিতা অনুভব করে তার গায়ের উপর ভারী কিছুর চাপ।বাম হাতের দিকটায় তুলতুলে কিছু একটা চেপে রয়েছে তার হাতে।ঘুম জড়ানো চোখটা খোলার চেষ্টা করলেও খুলতে পারছে না।এদিকে নড়াচড়ার চেষ্টা করলেও ভারী বস্তুটি যেন আরো সেঁটে যাচ্ছে তার শরীরে।বিরক্তে মুখ কুচকে পিটপিট করে চোখ খুলতেই আরাফের লম্বা ,লম্বা দুটো পা চোখে পরে তার।দুই পা হৃদিতার গায়ে তুলে দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে আছে সে।মাঝখানে বেরিকেট দেওয়া কোলবালিশটাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে আরাফ।আরেকটু নড়তেই বাম হাতের দিকটায় হৃদিকে দেখতে পায়। ড্রিম লাইটের আলোতে সাদা আদুরে বিড়ালটা গুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে হৃদিতার হাতের মাঝে।

হৃদিতা নিজের পা জোড়া নাড়াতে নিলেই আরাফের সুদীর্ঘ দুই পায়ের জন্য কিছুতেই নাড়াতে পারছেনা।এই মাঝ রাতে কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় তার।হৃদিকে ডান হাত দিয়ে দুরে সরাতে নিলে হৃদি যেন আরো চিপকে যায় তার শরীরে।বিরক্তে কান্না পাচ্ছে হৃদিতার। এ কোন মসিবতে পড়লো সে।

এক ঝটকায় হৃদিকে সরিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করে সে।কিছুটা মুক্ত হয়ে আরাফের হাটুতে অনবরত চিমটা দিতে থাকে কিন্তু আরাফ নড়ে চড়ে উঠলেও পা সরায় না,বেশ কয়েকবার আরাফের নাম ধরে ডাকলেও আরাফ সারা দেয় না।এক পর্যায়ে অসহ্য হয়ে বেডের পাশে থাকা টেবিলের উপর থেকে ফুলদানি নিয়ে বেশ জোরে প্রহার করে আরাফের পায়ে।সঙ্গে সঙ্গে ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠে আরাফ।দুই পা আগলে ধরে মা মা বলে চিৎকার দিতে থাকে।তার চিৎকারে হৃদি লাফিয়ে বসে যায়।হৃদিতা দ্রুত রুমের লাইট জ্বালিয়ে আরাফের মুখ চেপে ধরে।
-চেচামেচি করিস না প্লিজ। বাড়ির সবাই চলে।আসবে।
– উম্ম উম্ম উম্ম….
– ছাড়ছি ছাড়ছি তুই চেচাস না।
হৃদিতা আরাফের মুখ ছেড়ে দিয়ে পায়ের দিকে দৃষ্টি ফেলে।
-আহহহহ আমার পা..উহহহ আমার পা….

হৃদিতা অপরাধী চোখে তাকায় আরাফের দিকে।এই মূহুর্তে কি করবে সে কিছুই মাথায় আসছে না। উপান্তর না পেয়ে মলম এনে আরাফের পায়ে মালিশ করতে থাকে।

– অসভ্য মেয়ে মাঝ রাতে কি তোকে ভুতে পেয়েছে নাকি?আমার পা ভাঙিলি কেন?আহহ
-স..সরি রে, বিশ্বাস কর আমার দোষ নেই।তুই আমার গায়ে পা তুলে দিয়ে শুয়েছিস অন্যদিকে তোর বিড়াল টাও..
-আবার বিড়াল বলছিস তুই ওকে!
– সরি সরি হৃদি।তোরা দুইজন আমাকে যেভাবে কোলবালিশ বানিয়েছিস আমার তো নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেছিলো।ঘুমের ঘোরে তোকে ডেকেছি তুই শুনিস নি। তাই বিরক্ত হয়ে, প্লিজ মাফ কর আর এমন ভুল হবে না।

হৃদিতার কথায় প্রত্যুত্তর করলোন আরাফ বালিশ ঠিকঠাক করে সটান হয়ে আবার শুয়ে যায়।হৃদি লেজ নাড়িয়ে আরাফের পায়ের কাছটায় বসে থাকে।হৃদিতা কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। আরাফ যে কম ব্যাথা পায় নি সে ভালো করেই বুঝে গিয়েছে।

– লাইট অফ করে শুয়ে পড়।
আরাফের হঠাৎ কথায় হৃদিতা তড়িৎ গতিতে জবাব দেয়,
– আমি তোর সাথে ঘুমাবো না আরাফ।তোর এইসব মানা যাচ্ছে না।আরো কয়েক দিন ঘুমের ঘোরে হাত পা ছুড়ে দিয়েছিস আমার গায়ে। দিস ইজ টু মাচ।আজকের পর আমি আলাদা ঘুমাবো।
-ওহ রিয়েলি!কোথায় ঘুমাবি?
– সেটা তোকে ভাবতে হবে না।
হৃদিতা ঘড়ির দিকে তাকালো,রাতের চারটা বেযে এসেছে।কিছুক্ষণ পরেই আযান দিবে তারপর আস্তে আস্তে জেগে যাবে ধরনী।
আরাফ কপালে বাম হাত দিয়ে সটান করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।তার দিকে তাকিয়ে হৃদিয়া বলে,
– আমি লাইট অফ করছি। তুই বরং ঘুমা। এখন আর আমার ঘুম আসবে না।
আরাফ হাত সরিয়ে হৃদিতার উপর দৃষ্টি রাখে।বারান্দার দরজা খুলে বেরিয়ে যায় মেয়েটি।

সুনশান নিরিবিলি পরিবেশটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পাশের বারান্দায় তাকাতেই হৃদিতা খেয়াল করে চাতক পাখির মতো দুটো চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে রেলিং ধরে। এক হাতে জ্বলন্ত সিগারেট উদম গায়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে লোকটি।তৎক্ষণাৎ পীলে চমকে উঠে হৃদিতা। মাথার ওড়নাটা আরেকটু টেনে বোঝার চেষ্টা করছে লোকটি কে।চোখে মুখে তাত স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।হঠাৎ করেই রুমের ভেতর থেকে হৃদিতার হাত টেনে কেউ দেয়ালের সাথে ছুড়ে মারে।সামনে তাকাতেই আরাফকে দেখে আরেক ধাপ অবাক হয়।

– একি তুই উঠে এলি কেন?তোর তো….
হৃদিতাকে এক ধমকে চুপ করিয়ে বারন্দার দরজাটা দ্রুত বন্ধ করে দেয়।আরাফের হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারনটা এখনো মাথায় ডুকছে না তার।
– আমি বলেছিলাম এই রুমের বাইরে তুই যাবি না তবে কেনগেলি?
– আমি রুমের বাইরে গেলাম কই,আমি তো বারান্দায় দাড়ালাম।
– না বারান্দাতেও দাড়াতে পারবি না।আজ থেকে বারান্দাও নিষিদ্ধ তোর জন্য।
আরাফের হঠাৎ ধমকে কেঁপে উঠে সে।
– কিন্তু কেন?বারান্দায় কি সমস্যা?
– কাকে দেখছিলি তখন? কিরে কথা বল কাকে দেখছিলি পাশের বারান্দায়?
– যানি না। জ্বলন্ত সিগারেট হাতে একটি মানবের অবয়।
– ওটা নিয়াজ ভাইয়ের রুম। তোকে দেখেই সে হয়তো রেলিং ধরে দাড়িয়েছিল। সারারাত ভাইয়া নেশা করে।মদ সিগারেটের নেশায় বুদ থাকে।খবরদার তুই আর বারান্দায় যাবি না। আরাফের ধমকে আরেকবার কেঁপে উঠে হৃদিতা।কিন্তু মুখ দিয়ে টু শব্দও বের করলো না। মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলে।
আরাফ তার হাত ধরে, পা খুড়ে খুড়ে বিছানার সামনে নিয়ে গেলো।
-যা ঘুমা,
হৃদিতা তার পাশে গুটিয়ে শুয়ে যায়।হৃদিও লেজ নাড়িয়ে মাঝে শুয়ে যায়।আরাফ তার জায়গায় সটান হয়ে শুয়ে পরে।কিন্তু আরাফের রাগ কমেনি। চোখ বন্ধ করে রাগ নিবারনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।তার পাশ থেকে হৃদিতা নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।কেন কাদঁছে সে তা তার অজনায়।কিন্তু এই মূহুর্তে না কাদঁলে তার মন দিল একটুও হালকা হবে না।পাশ থেকে আরাফ ঠিকি বুঝতে পারছে তার নেশাবতী কাদঁছে।বেশ শব্দ করে উত্তপ্ত শ্বাস ছেড়ে আরাফ রাগ মেটাতে জোরে জোরে হৃদিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

– প্রেয়সীর মায়াবী চোখের জাদুতে শুধু আমি খুন হবো!আমি আমার প্রবল বিভবে তাকে অবরুদ্ধ করবো।!

আরাফের কথায় হৃদিতা কি বুঝলো কে যানে? বিছানার চাদরটা মুড়িয়ে শব্দ করে কেঁদে দেয়।আরাফ কিছুটা এগিয়ে এসে হৃদিকে সরিয়ে হৃদিতার মাথাটা তার বুকের সাথে চেপে ধরে। হৃদিতাও বাঁধা দিলো না। ফুঁপিয়ে কাঁদতেই থাকলো।

-প্রেয়সীর নেশায় আকৃষ্ট থাকবে শুধু তার সুহৃদ।নেশার শহরে থাকবে শুধু সেই সুহৃদয়ের বসবাস।যেখানে অন্যর প্রবেশ নিষিদ্ধ হোক।প্রেয়সী চাইলেই সুহৃদের শব্দহীন অনুভূতি গুলো অনুভব করতে পারে!কিন্তু না প্রেয়সীতো নেশাবতী!সেই নেশাবতীর যথার্থ কাজ নে0শা লাগানো, নেশাটা কাটানো নয়!

হৃদিতা আবারো শব্দ করে ফুফিঁয়ে উঠে।আরাফ তার চুলে অনবরত হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

চলবে…..

🌼পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here