শব্দহীন_অনুভূতি,পর্ব_২২,২৩,২৪ শেষ

শব্দহীন_অনুভূতি,পর্ব_২২,২৩,২৪ শেষ
পলি_আনান
পর্ব_২২

সময়ের সাথে সাথে এনায়েত বাড়িতে থাকাটা হৃদিতার জন্য বড্ড কঠিন হয়ে গেছে।কেটে গেছে আরো এক সাপ্তাহ।ডিভোর্সের কাগজ পত্র একদম তৈরি এখন শুধু সই করা বাকি।গত দুইদিন থেকে নোমান বার বার আরাফকে ফোর্স করছে সই’টা করার জন্য।কিন্তু আরাফের একটাই কথা হৃদিতা যদি সই করে দেয় তবেই সে সই করবে।এদিকে হৃদিতা নাছোড়বান্দা কিছুতেই সে আরাফকে ছাড়বে না।হৃদিতার কারনে তার খালু ওয়ালীদকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে নোমান। সবটা দাতে দাত চেপে সহ্য করছে হৃদিতা।কিন্তু আজ সকালে যা হলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে।মিথ্যা খুনের মামলায় ওয়ালীদের বাড়িতে পুলিশ পাঠায় নোমান।বিষয়টি জানতে পেরে হৃদিতা নোমানকে কথা দেয় খুব শীঘ্রই ডিভোর্সের কাগজে সই করবে।হৃদিতার স্বীকারোক্তিতে বেশ খুশি প্রভা এবং নোমান।বাড়ির ভরা মজলিশে সবার সামনে বাধ সাধে মাইশা।তার কথা তার আর নোমানের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত হৃদিতার ডিভোর্স হবে না।
মাইশার এমন কথা প্রভার পছন্দ না হলেও অবশেষে নোমান মাইশার কথায় সম্মোতি জানায়।

বিছানায় মাথা হেলান দিয়ে ফুফিঁয়ে কাদঁছে হৃদিতা। তার সামনেই চুপচাপ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে আরাফ।
– এখানে এমন দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
হৃদিতার কথায় আরাফ চোখ খুললো। গাঢ় নিশ্বাস ছেড়ে হৃদিতার পাশে হাটু মুড়ে বসে তার কোলে মাথা রাখে,
– তোকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না রে।
– না পারলেও থাকতে হবে নিয়তিতে যা আছে তাই হবে। আর তুই তো জানতি একটা সময়ে আমাদের আলাদা হতেই হবে তবে কিসের এত দুঃখ!
– তখন তো ভেবেছিলাম হয়তো বা মেনে নেবে বাড়ির সবাই। সাপোর্ট করবে আমাদের কিন্তু কেউ করলো না একমাত্র মাইশা ছাড়া।দেখিস মাইশা আমাদের আলাদা হতে দেবেনা।
– যদি আলাদা হয়ে যাই তবে কি হবে আরাফ?

হৃদিতার প্রশ্নে আরাফ কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকে।নিজেকে ধাতস্ত করে হৃদিতার চোখে চোখ রাখে,
– আমি আর এই বাড়িতে ফিরবো না রে। ভুলেও ফিরবো না৷তারপর দেখে নেবো নোমান এনায়েত কী করতে পারে!
– কিন্তু নোমান ভাই তো তোকে যে করেই হোক খুঁজে বের করবে।পালাতে পারবি না তুই।

-হৃদিতা একটু থাম আমাদের ডিভোর্স তো দূরের কথা আমরা এক দিনের জন্যে আলাদা হবো না। শুধু দেখতে থাক এই বাড়িতে কী কী হয়।আমার কাছে বর্তমান বাড়ির পরিবেশটা তেমন স্বাভাবিক লাগছে না।
– মানে?
– কিছুনা।
আরাফ হৃদিতার কপালে তার ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে হৃদিতা নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার দিকে।
লেখনীতে পলি আনান।
রাত নয়টার কাছাকাছি। প্রভা বাড়িতে আরেকটা কান্ড জুড়ে দিয়েছে।সে হৃদিতাকে এই বাড়িতে কিছুতেই সহ্য করতে পারছেনা। সে চায় ডিভোর্সের আগে হৃদিতা ওই বাড়িতে থাকবে।প্রভার কথায় তাল মিলিয়ে নোমানে’রো একই সিধান্ত। পুরো বাড়ির সবাই এক জোট হয়ে প্রভার সিধান্তে সহমত জানালেও মাইশা হৃদিতার পক্ষ নিয়ে কথা বলে।আরাফকে জানানো ছাড়া হৃদিতা কিছুতেই বাড়ি থেকে যাবেনা। এদিকে আরাফকে বিরতিহীন ভাবে ফোন করেও পেলেনো হৃদিতা।

অবশেষে হৃদিতা বাড়ি থেকে একাই বেরিয়ে গেলো
ওয়ালীদের বাড়ির উদ্দেশ্য।

রাত এগারোটার পরেই বাড়ি ফিরে আরাফ।কিন্তু হৃদিতার সাথে ঘটে যাওয়া কথা গুলো শুনে আর এক মূহুর্তে ও বাড়িতে না থেকে বেরিয়ে যায়।

নিকষ কালো আধাঁরে ওয়ালীদের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরাফ।হৃদিতাকে বেশ কয়েকবার ফোন সহ টেক্স করেছে কিন্তু হৃদিতা কোন প্রত্যুত্ত করলো না।এতে ভীষণ রেগে যায় আরাফ।বিরক্ত হয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে দরজায় করাঘাত করা শুরু করে। কিছুক্ষন পরেই ওয়ালীদ এসে দরজা খুলে দেয়। তাদের দুজনের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ আলাপচারিতা হয়।নোমানের কান্ড কীর্তিতে ওয়ালীদের কাছে ক্ষমা চায় আরাফ।
হৃদিতা আর আরাফের দেখা হলে দুজনের মাঝেই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। হৃদিতা আর ওই বাড়িতে যাবে না বলে সিধান্ত নেয়।হৃদিতা যেমন এক কাপড়ে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ঠিক আবার আরাফ তাকে জোর করে এক কাপড়েই ওই বাড়ি থেকে নিজ দায়িত্বে নিয়ে আসে।

রাতের অন্ধকারে হাতে হাত রেখে হাটছে দুজনে।দুজনের মনেই জমে আছে রাশভারী রাগ।হৃদিতা আরাফের হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ানো শুরু করলে আরাফ তৎক্ষনাৎ ধমকে উঠে,

– এই পিচ্চি, তুলে একটা আছাড় দেবে বলে দিলাম।এত রাগ কেন তোর?আর আমার পারমির্শন ছাড়া বাড়ি থেকে তুই কেন বের হলি?
– তোকে আমি কতবার ফোন করেছি তুই জানিস?আমার জন্য বার বার খালুজান অপমানিত হচ্ছে আর আমি কি না ওই বাড়িতে মিথ্যা ভালোবাসার দোহায় দিয়ে বসে থাকবো!

– মিথ্যা ভালোবাসা মানে?আমার ভালোবাসা তোর কাছে মিথ্যা।
– তা নয় তো কি?তুই আমাকে বিপদের মুখে রেখে এসে দিব্যি আড্ডা মাস্তি করছিস আর আমি কি না ওই বাড়ি থেকে ছিহহহ!আর এইসব কথা তুলতে ভালো লাগছেনা।

– আমি আড্ডা মাস্তি করতে যাই নি।আমার কাজ ছিল তাই গেছিলাম। যাই হোক বাইকে কি উঠবি?নাকি এখনো ঘাড় ত্যারামো করবি।
হৃদিতা ভেঙচি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।আরাফ তার হাত ছেড়ে অনুনয় সুরে বলে,

– না বিয়ের আগে আমার বাইকে উঠেছিস, না বিয়ের পর।কি একটা করুন অবস্থায় আছি আমি তুই কি জানিস।
– তোর বাইকে উঠতে আমার রুচিতে লাগে। এই বাইকে কত মেয়ের সাথে যে ঘুরেছিস তার কোন ইয়ত্তা নেই।
– তোর গালটা বাড়িয়ে দে।আমার হাত অনেকক্ষণ যাবৎ নিশপিশ করছে।তোর গালে একটা চড় দিয়ে হাতের অস্থিরতা কমাই একটু।
– মানে কি আরাফ?
– ডাফার মেয়ে, এটা বিয়ের পর কিনেছি। আগের টা বিক্রি করে দিয়েছি।
– ওহ আচ্ছা। যাই হোক।
-এবার কি আমার বাইকে উঠে আমায় ধন্য করবেন মহারানী!

হৃদিতা মুচকি হেসে আরাফের বাইকে উঠে যায়। আরাফ ঘাড় ঘুরিয়ে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।
– ধন্য ধন্য ধন্য,আমার বাইক ধন্য সাথে আমিও ধন্য! মহারানী আমার বাইকে উঠেছেন আমি আজ সত্যি ধন্য।
– এত কথা না বাড়িয়ে এবার চল।

আরাফ ঠোঁট কামড়ে হেসে দ্রুত বাইক স্টাট দেয়।

রাত গভীর প্রায়।বাড়ির সবাই ঘুতে তলিয়ে গেছে।নিয়াজ তার রুমে নেশায় মগ্ন।হঠাৎ করেই তার রুমে প্রবেশ করে মাইশা।তাকে দেখে নিয়াজের ভূত দেখার মতো অবস্থা প্রায়।

– আরে সুন্দরি এত রাতে আমার রুমে?
– কেন তোমার রুমে আসাটা কি আমার জন্য অপরাধ নাকি?
– কি যে বলো?তোমার পদধূলি আমার রুমে প্রবেশ করেছে তুমি বুঝতে পারছো আমি কতটা ধন্য?
– হুম তা বুঝতে পারছি।তা কি গেলা হচ্ছে আজ?
– প্রতিদিন যা গেলা হয়।সেয়ার করবে নাকি এক প্যাগ?
– ওকে দাও।

মাইশা নিয়াজের হাত থেকে গ্লাসটা হাতে তুলে নেয়।রুমের এদিক সেদিক ভালো করে পরখ করতে থাকে।এদিকে নিয়াজ তার দিকে তাকিয়ে লালসার দৃষ্টিতে।
– নিয়াজ তোমার রুমে প্রভা আসবে কখন?আই মিন প্রতিদিন রাতে ড্রিংস করতে সে কখন আসে?
– আনুমানিক একটায়। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে গেলেই আসে।
নিয়াজের কথায় মাইশা প্রত্যুওর করলো না। সে ঘুরে ঘুরে সেন্টার টেবিলের উপর থাকা প্রত্যকটি মদের বোতল পরখ করতে ব্যস্ত।নিয়াজের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলে,

– তোমার ফেবারিট ড্রিংসটা একবার ট্রাই করতে চাই।
মাইশার কথা শুনে নিয়াজ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। মাইশার দিকে তাকিয়ে একটা প্যাগ তুলে দেয়।মাইশা সাদরে তা গ্রহন করে বারান্দার দিকে হাটা দিলো।পাশের বারান্দায় তাকিয়ে বুঝতে পারলো আরাফ এখনো বাড়ি ফিরে নি।দ্রুত একটা কাগজ ছিড়ে ভেতরে থাকা কিছু পাউডার সেই গ্লাসে দিয়ে দিলো।নিয়াজকে আসতে দেখে আবার স্বাভাবিক হয়ে তার দিকে ঘুরে দাড়ালো।

– প্রভা আসার সময় হয়ে গেছে আমি এখন আসি বেবি।এই নাও গ্লাস, এখানে কিন্তু আমার চুমুক আছে চাইলে ট্রাই করতে পারো।
– অবশ্যই বেবি তোমার ছোঁয়ায় বিষ ও গ্রহন করতে পারি।

মাইশা সন্তর্পণে হেসে চলে যায়।মনে মনে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,
– একটা আগাছা ঝেরে ফেলেছি।মেয়েদের দিকে কু-দৃষ্টিতে তাকানো।হৃদিতার সাথে বাজে ব্যবহার করায় তোর শাস্তি দিয়ে দিয়েছি ওপারে ভালো থাকিস।

মাইশা নিজের রুমে ঢুকতেই নিয়াজের রুমে প্রবেশ করে প্রভা।তা দেখে পৈচাশিক আনন্দ সৃষ্টি হয় মাইশার মনে।

পিচ ঢালা রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট গুলোকে সাক্ষি রেখে এগিয়ে যাচ্ছে একজোড়া যুগল দম্পত্তি।অতীতের দুঃখ,ভবিষ্যতের ভাবনা ভুলে তারা যেন এই মূহুর্তেটা নিয়ে বাচঁতে চায়।থাকতে চায় দুজনের হাতে হাত রেখে বছরের পর বছর।

– কোথায় যাবি হৃদিতা?এই মূহুর্তে বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না।
– যেখানে নিয়ে যাবি ঠিক সেখানেই যাবো।
– চল আরো একবার পিছিয়ে যাই সময়ের কাছে।সেই কফিশপে যেখান থেকে শব্দহীন অনুভূতি গুলোর ভালোবাসা আদান-প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয়।
– কিন্তু এত রাতে কফিশপ খোলা থাকবে তো?
– না থাকলেও খুলে নেবো।

আরাফ আর হৃদিতা পৌছে যায় কফিশপে।অতীতের অনুভূতি গুলো।আরো একবার সতেজ হয়ে উঠেছে মনে প্রাণে।আরাফ হৃদিতার হাত ধরে কফি শপের ভেতরটায় প্রবেশ করে।দুজনে একসাথে বসে যায় সেই স্থানে যেখানে দুজনে একসাথে আড্ডায় মেতে ছিল।

– তফাতখানি সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারছিস হৃদিতা?
– কিসের তফাত?
– তখন তুই ছিলি আমার না বলা ভালোবাসা, সেদিন ছিলাম একে অপরের চোখের বালি,সময়টা থাকতো পড়ন্ত বিকেল।আর এখন তুই আমার স্ত্রী,তোকে চোখে হারানো আমার জন্য দায়।আর এখন মধ্যে রাত!
– এখনো কি নিজের ভালোবাসার কথা স্বীকার করেছিস নাকি?
হৃদিতার গম্ভীর কন্ঠের কথায় খিলখিল করে হাসে আরাফ।হৃদিতার হাত টেনে উঠিয়ে কফি শপের কিচেনের সামনে নিয়ে যায়।সেখানে আগে থেকেই আরাফের নির্দেশে ধৌয়া ওঠা দুই কাপ গরম চা রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে একটা কাপ চা আরাফ হৃদিতার হাতে তুলে দেয়,

– তুমি আমার গরম ধৌয়া ওঠা চায়ের আড্ডার সঙ্গী হবে?আমার পড়ন্ত বিকালের আড্ডায়, মধ্যে রাতের তন্দ্রাহীন প্রহরের সঙ্গী হবে?আমরা না হয় হাতে হাত রেখে চুপটি করে সূর্য অস্তের দৃশ্য দেখবো।নিকষ কালো রাতের আধারে আকাশের বুকে জ্বলজ্বল করে থাকা তারা গুলো গুনবো।নির্ভেজাল একটি শহরে বাস করবো।যেখানে আমাদের পিছুটান থাকবে না।প্রতিটি সকালে তোর রিনঝিন চুড়ির শব্দে আমার ঘুম ভাঙবে।একটি কাপ চায়ে দুজনে চুমুক দিয়ে আমাদের সপ্নময় দিন শুরু করবো। কিরে হবি তো আমার সঙ্গী?

হৃদিতা নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে।সে কি রেগে গেছে নাকি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে তা ধরতে পারলো না আরাফ।আরাফ ভ্রু কুচকে হৃদিতার দিকে তাকালে হৃদিতা গমগম সুরে বলে,
– এত নাটক করে কথা বলতে পারিস আর “ভালোবাসি” এই শব্দটা বলতে পারিস না?
– না পারি না। আমি পাগল প্রেমিক নই যে ভালোবাসি ভালোবাসি বিলাপ দেবো।আমার প্রপোজাল পছন্দ না হলে মুড়ি খা।আমার আর কিচ্ছু করার নেই।

হৃদিতা গাল ফুলিয়ে চলে যেতে নিলেই আরাফ পেছন থেকে হাত টেনে ধরে,
– কই যাচ্ছিস তুই?খালি তেজ দেখানো, মেয়ে মানুষ কিছু পারিস আর না পারিস তেজ দেখাতে ভালোই পারিস।
– সামর্থ্য থাকলে তোকে একটা চড় দিতাম। কিন্তু পারছি না বলে।আফসোস হচ্ছে।
– সাহস দেখি দিন দিন তোর বেড়েই যাচ্ছে। আচ্ছা যা এটা দ্বিতীয় প্রপোজ। এবার পছন্দ না হলে আমার কিচ্ছু করার নেই।
আরাফ হৃদিতাকে একটানে তার সাথে মিশিয়ে নেয়।হৃদিতার পীঠ আরাফের বুকে গিয়ে ঠেকে।আরাফ হৃদিতার কানে সামনে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

– আমি তোমায় আমার ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে রাখবো;আর আমি তোমার প্রতিটি ভালোবাসার স্পর্শে বেঁচে রইবো!
ভালোবাসি তো বুঝিস না কেন?

হৃদিতা কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকে।হুট করেই উলটো ঘুরে আরাফকে জড়িয়ে ফুফিঁয়ে কেঁদে উঠে।
– আজব কাদঁছিস কেন?
– আমাদের মনে হয় সত্যি সমাপ্তি ঘটবে রে। প্রভা তোকে না পাওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না।
– বোকা মেয়ে কাদিঁস না। দেখবি যা হবে ভালোর জন্যই হবে।আমার উওর কই?
– জানি না।তোর শব্দহীন অনুভূতি গুলো অনুভব কর পেয়ে যাবি।
#চলবে……

🌼পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন!

#শব্দহীন_অনুভূতি
#পলি_আনান
#পর্ব_২৩

আরাফ হৃদিতা বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় ভোরে হয়ে যায়।সবার আড়ালে বাড়িতে ঢুকলেও হুমায়রা স্পষ্ট আড়াল থেকে তাদের দেখতে পান।

প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে।সূর্যের প্রখর তাপ জানালা ভেদ করে প্রভার চোখে পরতেই আড়মোড়া কাটিয়ে ঘুম থেকে উঠতে চেষ্টা করে।কিন্তু মাথাটা প্রচন্ড ভারী লাগায় আবারো বিছানায় শুয়ে যায়।কয়েক মিনিট পর তার সৎবিৎ ফিরে এলে পিট পিট করে চোখ খুলে বোঝার চেষ্টা করে সে কোথায় আছে?সিলিং এর দিকে তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে হড়বড় করে উঠে বসে। সামনে তাকিয়ে ফ্লোরে নিয়াজকে দেখতে পায়।তার আর বুঝতে বাকি নেই সে সারা রাত নিয়াজের রুমেই ছিল।দ্রুত বিছানা থেকে নেমে নিয়াজের হাতে হাত রাখতেই ভীতিকর বিস্ময় হয়ে যায় প্রভা।নিয়াজের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা। এক কথায় সারা শরীর শক্ত ঠান্ডা হয়ে আছে।প্রভা ঢোক গিলে নিয়াজের মুখের সামনে দুটো আঙুল দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস চলাচলের পরিক্ষা করে।কয়েক সেকেন্ডে প্রভা বুঝে যায় নিয়াজ মৃত!ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখতে পায় নিয়াজের পেটের দিক থেকে রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে আছে। মদের বোতলের অর্ধ কাঁচ এখনো নিয়াজের শরীরে বিধে আছে।সারা রুমে ছড়িয়ে আছে উটকো গন্ধ।

প্রভা ভয় পেয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে চারিদিকে পরখ করে নেয়।এই মূহুর্তে কেউ যদি দেখে সে নিয়াজের রুমে আছে তবে নির্ঘাত তাকে খুনি হিসেবে ধরা হবে।ভারী মাথাটার ভেতর টনটন ব্যাথার অনুভব হচ্ছে কিন্তু সেদিকে মন না দিয়ে প্রভা দ্রুত রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। পর্দা ঠেলে সামনে অগ্রসর হতেই হুমায়রার সাথে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা লাগে।টাল সামলাতে না পের প্রভা ছিটকে যায় দরজার সাথে।

– আরে কি হয়েছে তোর এমন তাড়াহুড়ো করছিস কেন?
– স-স-সরি আন্টি!

প্রভা আর এক মূহুর্তেও দাড়ালোনা ছুটে চলে যায় নিজের রুমে।ওয়াশরুমে ঢুলেই ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকে।মনে পড়ে যায় কাল রাতের কথা।
মাতাল হয়ে প্রভার সাথে নিয়াজের সম্পর্ক অনেকবার হয়েছে তবে গত কাল নিয়াজের আচরন ছিল অস্বাভাবিক। হয়তো বা অতিরিক্ত মদ গেলায়।নিয়াজের হঠাৎ করেই আচরন পালটে যায়। নেশার মাত্রা তার প্রবল হয়ে যায়।প্রভা নিয়াজের অস্বাভাবিক আচরন দেখে কিছুটা চমকায়।অতঃপর তাদের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ ঝগড়া হয় বিরক্ত হয়ে প্রভা নিয়াজকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মাতাল প্রভা তখনো বুঝতে পারেনি নিয়াজের পেটের এক সাইডে কাঁচ ভেঙে শরীরে বিধে গেছে যার ফলে প্রচন্ড রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
প্রভা নিজেও বিছানায় ঘুমিয়ে যায়।কিন্তু সকালটা যে এতটা ভয়ংকর হবে কে জানতো?

হুমায়রার চিৎকারে হুড়মুড় করে বাড়ির সবাই নিয়াজের রুমে যায়।মাইশা নিয়াজের লাশ দেখেই চিৎকার দিয়ে মুখে হাত দিয়ে মেঝেতে বসে যায়।তাকে সামলাতে দ্রুত হৃদিতা এগিয়ে যায়।নোমান নিজের ভাইয়ের এমন পরিস্থিতি দেখে পাথর বনে যায়।হুমায়রা এক তালে বিলাপ দিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
– ওই মেয়ে কাল নাগিনী।আমার বোনেরে খাইছে দুলাভাইরে খাইছে এখন আমার ছেলেটারেও খাইছে। আল্লাহরে এই মাইয়ারে কেন এই বাড়িতে আসতে দিলাম রে।

হুমায়রার কথায় চমকায় বাড়ির সবাই।সবার জানা মতে লন্ডনে বাড়িতে আগুন লাগার ফলে প্রভার মা বাবা মারা যায়। তবে এইসব কি বলছে হুমায়রা।নোমান তার মাকে টেনে আনতে গেলে তিনি আরো রেগে যান।

– তোর কারনে, শুধু তোর কারনে এই মেয়ে এই বাড়িতে আসতে এত আশকারা পায়।যে মেয়ে বারো বছরে মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে নিজের মা বাবাকে মেরে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে এক্সিডেন্ট কেস সাজাতে পারে সে মেয়ে ঠিক কতটা চতুর তা আমি ভালো করেই জানি।আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দে আমার বুকে। আমার নিয়াজকে ফিরিয়ে দে।

হুমায়রার কথা গুলো শুনে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির সবাই।নোমান কথা ঢাকতে বার বার তা মাকে ইশারা করছে যেন চুপ থাকে।কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেজা চুল টি-শার্ট গায়ে দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসে প্রভা।নিয়াজের লাশের দিকে তাকিয়ে মাথা নুইয়ে নেয়।এক কদম দুই কদম করে পিছিয়ে যেতেই তার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে আরাফের ছোট চাচা জসীম।

– এই মেয়ে পালাচ্ছিস কোথায়।খুন করে পার পেয়ে যাবি ভেবেছিস।ভাই পুলিশকে ফোন করো,

জসীমের কথা শুনে দ্রুত আরাফের বাবা পুলিশকে ফোন করে।আইদা,আদীভ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে।এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে এর আগে কখনো পরে নি তারা।

কেটে গেছে সূর্যের আলোকিত একটি দিন।সন্ধ্যায় সবাই লিভিং রুমে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।নোমান কপালে আঙুল দিয়ে কিছু একটা ভাবছে।
জসীম মুখ দিয়ে চ এর মতো শব্দ করে আরাফের বাবা জহিরের দিকে তাকায়,

– পোস্ট মার্টাম রিপোর্ট আসতে তো দুই তিনদিন সময় লাগবে, কিন্তু পুলিশের ধারণা কি?
– নিয়াজের গ্লাসে বিষাক্ত মাদক ছিল।যার প্রভাব আগে থেকেই তার শরীরে পৌছে যায়।তাছাড়া অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই এমনটা হয়েছে।সবচেয়ে বড় কথা নিয়াজের মদের গ্লাসে প্রভার আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে।

-মেয়েটা কত ডেঞ্জারাস ভাবতে পারছো তোমরা।ভাবী না বললে তো জানতেই পারতাম না এই মেয়ে এতটা ডেঞ্জারাস ,নিজের মা বাবাকে ও ছাড় দিলো না।
– এটা শুনেই চমকে যাচ্ছো মেয়েটা লন্ডনে কি করে যানো?ব্লাকমেইল!
– ব্লাকমেইল?

– হুম।ব্লাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তার কাজ।গত কয়েকদিন আগেই টাকা না দেওয়ায় একজন ক্লাইন্ট কে লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করে।এবং আঘাতটা এতটাই গুরুতর হয় বেচারা কোমায় চলে যায়।সব তথ্য তার দলের লোকেরা ফাস করে দিয়েছে।
– কিন্তু দলের লোকেরা এইসব কথা ফাস করলোই বা কেন?
– হা হা হা বোকা নাকি তুই? বুঝতে পারছিস না কেন?অলরেডি তার দলের তিনজন সদস্য ওই দেশের জেল খানায়।প্রভাকেও ধরার জন্য সব প্রমান কালেক্ট করা হচ্ছিলো তখনি সব তথ্য ফাস হয়ে যায় আর এইসব তথ্য জোগাড় করে মাইশার বেস্ট ফ্রেন্ড রিক।সে গোয়ান্দা বিভাগের অফিসার।
– কোন দেশের আর এত কিছু আমাদের অজানায়।ওহ গড!
– বাংলাদেশের।

সবাই চকিতে তাকায় মাইশার দিকে।নোমান এতক্ষন সব কথা শুনে ঘামছিল কিন্তু মাইশার কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলো না।এই মেয়েকে যতটা সহজ ভেবেছিল ততটা সহজ এই মেয়ে না।
মায়মুনার ভেতরটা প্রশান্তির হাওয়া বইছে।একটা উচিলায় ছেলের সংসারটা বেঁচে গেছে। অন্যদিকে নিয়াজের জন্য মনটা ভার হয়ে আছে শত হোক ছোট বেলা থেকেই এই ছেলে তার সামনে বড় হয়েছে। আজ তার মৃত্যু পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মায়মুনা সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলতে শুরু করে,
– আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছিলি নোমান।আল্লাহ বাঁচিয়েছেন বিয়েটা যদি হয়ে যেত কোনদিন এই মেয়ে আমার ছেলের গলায় ছুরি চালাতো কে জানে।
বাড়ির সবাই মায়মুনার কথায় সায় দেন।তানিয়া এতদিন প্রভার দলে ভিড়লেও আজ প্রভার কান্ড কীর্তি দেখে দলপাল্টে ফেলেন।
– তা ঠিক বলেছো ভাবী। বাড়ির বউ হিসেবে হৃদিতাই ঠিক। এবার ওদের ডিভোর্স নামের ঝামেলাটা বিদায় করো।

হৃদিতা বেগবান দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকায়।আরাফ তার হাত আলতো করে ছুঁয়ে অভয় দেয়।মাইশা তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।
মায়মুনা উঠে গিয়ে নিজের গলার চেন হৃদিতাকে পড়িয়ে দেয়।
– আমার ছেলের বউ! এই কথা বলতে আমার আর কোন আপস নেই।
মায়মুনার কথায় সবাই সায় দিলেও।হুমায়রা কিড়মিড় করে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে।হুমায়রার দিকে একপলক তাকিয়ে দ্রুত লিভিং রুম থেকে উঠে যায় নোমান।

মাইশা সেদিকে তাকিয়ে গোপনে হাসে।
– মি.নোমান এনায়েত তুমি চলো ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায় খেলা এখনো বাকি।
লেখনীতে পলি আনান

গভীর রাত নিস্তব্দ একা রুমে বসে সিগারেট ফুঁকছে আরাফ।ভাইয়ের মৃত্যুর শোক অন্যদিকে প্রভার এই দূর্দশা মাথার ভেতরে চিন্তার পোকারা ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে।তখনি নোমানের রুমে প্রবেশ করে মাইশা।তাকে দেখে নোমান কিছুটা বিচলিত হলেও নিজেকে ধাতস্ত করে নেয়।

– তুমি।এখানে?
মাইশা প্রত্যুওর করলো না।সোজা নোমানের সামনে বসে তার হাটুতে মাথা রাখে।কান্না সুরে বলে,
– আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না নোমান কোথা থেকে কি যে হয়ে গেলো।প্রভা এটা কি করলে পারলো বলতো?তুমি সবচেয়ে বেশি প্রভাকে সাপোর্ট করতে আর প্রভা কি না তোমার ভাইকে মেরে দিলো।ইসস নিয়াজের প্রচন্ড মাত্রায় রক্তক্ষরণ হয়েছে ভাবতেই আমার গা কেঁপে উঠছে।

মাইশা ঝরঝর করে কেঁদে দেয়।তার মাথায় হাত রেখে নোমান বলে,
– বেইমান! বেইমানকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। যাইহোক তার শাস্তি সে পাবে তুমি একদম কেঁদোনা।
মাইশা থামে নোমানের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে সেন্টার টেবিলে থাকা মদের বোতল থেকে, মদ গ্লাসে ঢেলে নোমানের দিকে বাড়িয়ে দেয়।নিজেও একটি গ্লাস হাতে তুলে নেয়।

– নাও একটু রিলেক্স ফিল হবে।
নোমান মুচকি হেসে গ্লাসে চুমুক দেয়।এভাবে কেটে যায় প্রায় আধা ঘন্টা।নোমানকে একের পর এক মদের নেশাত মাতাল করে দেয় মাইশা।নোমানের নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেছে। সোফায় মাথা হেলান দিয়ে কি যেন বিড়বিড় করছে তখনি সুযোগ বুঝে মাইশা ভিডিও রেকড করতে শুরু করে।

– নোমান তুমি কি মাইশাকে সত্যি ভালোবাসো?
মাইশার কথায় মাথা তুলে তাকায় নোমান।তার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,
– ভালোবাসা? সে তো আমার জীবনে নেই।আর আমি চাই না।আমি কাউকে ভালোবাসি না আর ভালোবাসতে চাইনা।নোমান শুরু শরীর চেনে শরীর।তার কাছে এইসব ভালোবাসা মূল্যহীন।

মাইশা নিজেকে শান্ত রাখে। কয়েকটা ঢোক গিলে বলে,
– তাহলে তাকে বিয়ে করতে চাইছো কেন?
– ওই যে বললাম শরীর!ওই মেয়ে অসম্ভব ধূর্ত। এত সহযে তাকে কবজায় আনা আমার পক্ষে সম্ভব না তাই বিয়ে বিয়ে নাটক খেললাম।বিয়ের এক মাস পরেই ছুড়ে ফেলে দিতাম।
নোমান কথাটা বলেই বিকট শব্দে হাসতে থাকে।তার হাসি দেখে মাইশাও মুচকি হাসে।মনে মনে বলে,
– আমি তোর প্রেমে কোন দিন পড়িনি নোমান। আমার যে কিছু হিসেব বাকি আছে তাই তো এত বাহানা।

মাইশা কিছুক্ষন চুপচাপ নোমানের দিকে তাকিয়ে থাকে।নোমানের হাসি থামতেই শান্ত কন্ঠে বলে,

– পায়েলের কথা মনে আছে তোমার?
– প.পায়েল!কোন পায়েল?
– ভুলে গেলে চার বছর আগে যাকে একা নির্জন পোড়া বাড়িতে……
মাইশার কথা শেষ হওয়ার আগেই নোমান হাসলো।
– মনে থাকবে না। অবশ্যই মনে আছে।
– সেই মেয়েকে ধর্ষণ করে কোথায় লাশ গায়েব করেছিলে তুমি?
মাইশা আরেকটা গ্লাস তুলে দেয় নোমানের হাতে। নোমান সেই গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে,

– কোথায় আবার পোড়া বাড়ির পশ্চিমের বাগানে একটা গর্ত আছে সেখানে ফেলে মাটি আর পঁচা পাতা দিয়ে আড়াল করে রেখছি।
মাইশার চোখে অশ্রু কণারা ভাসমান।চোখ বন্ধ করতেই টুপটাপ তার হাতে নেত্রবারি গড়িয়ে পরে।

– কেন মেরেছিলে তাকে? কি অন্যয় ছিল তার?
নোমান স্থিত হতে মাথা হেলান দিয়ে রাখে।এই মূহুর্তে তার সম্পূর্ণ বোধ শক্তি ফুরিয়ে আসছে।মাইশা দ্রুত ওড়নার আড়াল থেকে একটা দলিল বের করে এবং নোমানকে সই করতে বলে। নোমান হেলেদুলে সেখানে সাইন করে দেয়।মাইশা সস্তির শ্বাস ছাড়ে।

– এ-এ-এটা কিসের পেপার?
– কিছু না তুমি বললে না তো পায়েলকে কেন মেরছো?
– সে একটা বিশ্রি ঘটনা।পায়েল মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে পছন্দ করে প্রভা।কিন্তু ছেলেটা ভালোবাসে পায়েলকে।কিন্তু লন্ডনে প্রভা কিছুতেই তার পথ থেকে পায়েলকে সরানোর রাস্তা পায় না। তাই তার আবদার পায়েল যখন বিডিতে এসেছে তখন তার পথের কাঁটা যেন আমি দূরে সরিয়ে দি।কিন্তু মেয়েটাকে দেখে কন্ট্রোল করতে পারিনি।

নোমান আবারো হাসতে থাকে।মাইশা তার চোখ বন্ধ করে নেয়।ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙ্গেচুরে গুড়িয়ে দিতে।
– কিন্তু প্রভার লাভ হলো কি?সে তো একটা পর্যায়ে ওই ছেলেকে লুট করে ছেড়ে দেয়।এতে তো তার ভালোবাসা প্রকাশ পায় না।
– দূর… কিসব প্রশ্ন করো তুমি। প্রভার কাজ এটাই,বড় বড় ঘরের ছেলেদের সাথে লিভিং করে ব্লাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া যেমনটা করেছে পায়েলের বয়ফ্রেন্ডের সাথে।
– কিন্তু আরাফের সাথে প্রভার বিয়ে দিতে চাইছো কেন?

মাইশা আর কোন উওর পেলোনা তার আগেই নোমান ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে।চোখের পানি মুছে মাইশা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।মোবাইলটা হাতে তুলে নোমানে দিকে তাকিয়ে বলে,
– কাল থেকে তোমার জীবনে জাহান্নাম শুরু নোমান এনায়েত প্রস্তুত হও!

সকালে নোমানের যখন চোখ খুলে তখন তার সামনে কয়েকজন পুলিশ দেখতে পায়।তাদের দেখেই ভড়কে যায় সে।
– আ–আপনারা?
– চলুন থানায়। অনেক বছর জালিয়েছেন সমান তালে।রাজনৈতির দোহায় দিয়ে চাঁদা বাজি লুটপাট। হত্যাকান্ড কম করেন নি।এবারের কেস একদম স্টং। ধর্ষণ এবং হত্যা মামলা স্বীকারক্তি মূলক জবান বন্ধি আছে।উপর মহল থেকে নির্দেশ আছে আপনাকে দ্রুত এরেস্ট করার।
– হোয়াট?আমার সাথে টক্কর দেওয়ার সাহস কার হলো।
পুলিশ সহ বাড়ির সবার ভিড় ঠেলে সামনি এগিয়ে আসে মাইশা।
– আমার!আমার সাহস হয়েছে।
– ম-মাইশা তুমি?
– হ্যা আমি। মনে আছে পায়েলের কথা আমি সেই পায়েলের বোন।আমার চাচ্চুর মেয়ে পায়েল।তাকে ছোট থেকে আমি আর আমার বাবা মানুষ করি কিন্তু তার মৃত্যু এত জঘন্য কারনে হবে তা আমি মানতে পারিনি। তাই তো এত নাটক করে তোমার কাছে এলাম ভালোবাসার দোহায় দিলাম।
– মানে কি?তুই আমার সাথে আড়ালে বেইমানি করেছিস!

– কেন তুমি করো নি।বিয়ের পর তো আমায় ছুড়ে ফেলে দিতে।মনে আছে সেদিন সন্ধ্যার কথা আমি বাবা আর পায়েল বিডিতে এসেছিলাম চাচা চাচি এবং আমার মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে। কিন্তু এর পরের দিন গ্রামের পোড়া বাড়িতে ঘুরতে গেলে তুমি তাকে ধরে নিয়ে যাও। আমি পায়েলকে খুঁজতে খুঁজতে বাগানের দিকটায় যাই।তখন প্রায় রাত, কিন্তু যা দেখলাম তা আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি।কয়েকটা ছেলে মিলে পায়েলকে গাড়িতে তুলে নেয়।বিবস্ত্র পায়েলের দিকে তাকিয়ে আমার সারা শরীর অসাড় হয়ে যায়।

আমি তোমায় দেখেছিলাম সেদিন তুমি নিজেই নির্দেশ দিয়েছিলে পায়েলকে গুম করার। সেখানেই আমি সেন্সলেস হয়ে যাই।তারপর তোমার বিষয়ে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে বুঝতে পারি এত সহযে তোমায় ধরতে পারবো না।আমি বাবা মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছিলাম।তখন আমার বন্ধু রিক এসে আমার পাশে দাড়ায়। আর শুরু হয় তোমার সম্পর্কে জানা। জানতে পারি প্রভা তোমার বোন। কিন্তু প্রভাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম পায়েল আমায় তার সর্ম্পকে অনেকবার বলেছে।প্রভা বার বার হুমকি ধামকি দিয়ে পায়েলের ক্ষতি করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি।অবশেষে বিডিতে এসে আমার বোনটার জীবনের সমাপ্তি ঘটলো।কয়েকমাস পরে জানতে পারি পায়েলের বয়ফ্রেন্ডকে প্রভা বিয়ে করেছে।আবার কয়েকমাস পর শুনি তাদের ছাড়া ছাড়ি হয়ে যায়।যানতে পারি প্রভার ব্লাকমেইলের কথা।

প্রভাকে শায়েস্তা আর তোমাকে হাত করতে এত নাটক সাজিয়েছি।কিন্তু আফসোস মাঝ থেকে প্রভার কারনে নিয়াজ মরে যায়।মনে আছে আমি বলেছিলাম, তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আমি বিডিতে আসবো।আসলে তোমার বিষয়ে অনেকটা হেল্প করেছে আমায় আরাফ!আরাফের সাথে আমার পরিচয় হয় তোমার সাথে পরিচিত হওয়ার ঠিক কয়েক সাপ্তাহ আগে তত দিনে আমরা ভালো বন্ধু হয়ে যাই।

মাইশার কথা শুনে চমকে যায় নোমান।সে অবাক হয়ে আরাফের দিকে তাকালে আরাফ ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।

মাইশা আরাফের কথা হাসি দেখে শব্দ করে হেসে দেয়।
– একদম হাসবে না আরাফ।তোমার হাসিও বন্ধ করছি।
মাইশার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না আরাফ। ভ্রু কুচকে মাইশার দিকে তাকালে সে বলে,
– তুমি তো তোমার জেঠিমাকে খুব ভালোবাসো তাই না?একদম নিজের মায়ের চেয়েও বেশি।তোমার বাবা-মা , ছোট চাচা অনেক কষ্ট করে এই বাড়ির জন্য,ব্যাবসার জন্য, কিন্তু এই বাড়িতে এসেই জেঠিমাকে আমার মোটেও ভালোলাগে নি। তিনি সবার সাথে হাসি মুখে চললেও আড়ালে বিষ নিয়ে ঘুরে।নোমান তার বাবা মা মিলে এই বাড়ি শুধু মাত্র তাদের নামে লিখে নেয়।যেখানে বাড়ির ভাগ হবে তিন ভাইয়ের নামে।এবং কি আরাফের ভালো হুমায়রা কোন দিন চাননি।

তোমার মায়ের থেকে জানতে পারি তোমার দাদীমা বেশ ভালোবাসতো তোমার মাকে আর তাই তিনি হিংসায় জ্বলে পুড়ে যান।তিনি কোন দিন তোমাদের ভালো চাননি।অন্যর গিবত হিংসায় থাকতে থাকতে তার দুই ছেলে নোমান এবং নিয়াজ একজন ও আর্দশ মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি।যাই হোক এই নাও তোমাদের বাড়ির দলিল এখানে নোমানের সই আছে এবার এই বাড়ির সম্পূর্ণ মালিক তিন ভাই।আমার কাজ এখানেই শেষ।

মাইশার কথা শুনে কেঁদে দেন হুমায়রা।হিংসার আগুনে তিনি এতটাই জ্বলেছেন কখনো নিজ স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝেন নি।আরাফ তার জেঠিমায়ের দিকে তাকিয়ে দুচোখের পানি ছেড়ে দেয়।

পুলিশ নোমানকে নিয়ে যায়। নোমান আর মাইশা আরেকবার চোখাচোখি হয়।বাড়ির সবাই স্তব্দ হয়ে গেছে। আরাফ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নামিয়ে নেয়। লজ্জা ঘৃণা তার ভেতরটা তাকে বার বার জখম করছে।
#চলবে….

🌼অনেক বড় পর্ব দিয়েছি কেমন হয়েছে জানাবেন।

#শব্দহীন_অনুভূতি
#পলি_আনান
#পর্ব_২৪(শেষ)

ঝুম বৃষ্টিতে গাড়ির জানালা দিয়ে হাত বের করে বৃষ্টি উপভোগ করছে মাইশা।গাড়ি দীর্ঘ যানজটে আটকে আছে।মেঘাবৃত আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে হাসেছে সে।সেদিনের পর জীবন থেকে কেটে গেলো আরো একটি মাস।বদলে গেছে অনেক কিছু।সময়ের পাল্লায় সবাই ব্যস্ত সময় পার করছে, তাকেও ফিরে যেতে হবে তার নীড়ে।আর কত দিন থাকবে এই দেশে।
নোমান আর প্রভার যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।হৃদিতা আর আরাফ তাদের মতো করে সংসার শুরু করেছে।বাড়ির সবাই স্বাভাবিক থাকলেও স্বাভাবিক নেই নোমানের বাবা মা।দুই ছেলেকে একসাথে হারিয়ে তারা পাথর বনে গেছে।মাইশা এখন আর এনায়েত মঞ্জিলে থাকে না।অবশ্য তাকে দেখলে যে হুমায়রা আর জাবেদের পুত্র হারানোর শোক জেগে উঠবে,সব দিক বিবেচনা করে মাইশা এখন তার বন্ধু রিকের বাড়িতেই থাকে।
এই সাপ্তাহ শেষে ফিরে যাবে নিজের দেশে আবারো ব্যস্ত হয়ে উঠবে দৈন্দিন কাজে।তাই আজ শেষ বারের মতো নোমান আর প্রভার সাথে দেখা করতে এসেছে সে।
গাড়ি কারাগারের সামনে দাড়াতেই দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দ্রুত নেমে যায় মাইশা।সবার সাথে কথা বলে,সব ফর্মালিটি পূরণ করে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় সে।নোমানের সাথে এইসহ জেলখানায় ৩য় বার দেখা।

– কেমন আছো?মি.নোমান এনায়েত।
– তুই,তুই এখানে কেন এসেছিস?
– কেন আবার আসামীর সাথে দেখা করতে।
– একবার ,একবার শুধু আমি এখান থেকে বের হই তারপর তুই যেখানেই থাকিস, পাতালে থাকলে পাতালে তোকে খুঁজে বের করবোই।আর তিল তিল করে তোকে মারবো।তোর কারনে আমার রেপুটেশন শেষ হয়ে গেছে।

– আরে থাম থাম এই বন্ধী দশা থেকে তোমার মুক্তি হবে না।না মানে না।কোন দিন না।তোমাকে এই পর্যায়ে আনতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে
হয়েছে।আর কষ্টের ফল বুঝি এতটাই অতৃপ্তি হবে।
শত তালবাহানা করলেও মুক্তি পাবে না।একটা কথা কি যানো আমি না অনেক খুশি হয়েছি তোমার যাবজ্জীবন জেল হয়েছে।ফাঁসি হলে লাভ কী হতো বলো?গলায় দড়ি ঝুলবে আর টুকুস মরে যাবে। কিন্তু এখানে তুমি তিল তিল করে মরবে।

– আমি যদি তোকে সেদিন বাড়ি থেকে বের করে দিতাম তবে আমায় আজ এইদিন দেখতে হতো না।বাড়িতে রেখে একটা কালসাপ পুষেছি।
– সে যাই বলো আমার বোনের হত্যার প্রতিশোধ আমি নিতে পেরেছি এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।দেখলে তো নোমান এনায়েত ক্ষণিকের আনন্দ তোমায় আজ কোথায় নিয়ে এসেছে।ভালো থাকিবেন বিদায়।
মাইশা দ্রুত হেটে সরে আসে নোমানের কাছ থেকে।তীব্র ঘৃণায় নোমানের সামনে দাড়াতেও তার বিবেকে বাধঁছে।কিছুক্ষণ পর প্রভার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় মাইশা।

– হেই মোস্ট বিউটিফুল লেডি!কেমন কাটছে তোমার দিন কাল?
মাইশা কন্ঠে চকিতে তাকায় প্রভা।নিস্তেজ মুখখানায় আগের মতো মলিনতা নেই।চোখের নিচে কালি পরে গেছে।
– এখানে কেন এসেছো?
– কেন আবার তোমায় দেখতে এসেছি।দেখলে তো অতি বাড়াবাড়ি করার ফল।পায়েল! পায়েলের কথা ভুলে যেওনা কিন্তু, যদি নিষ্পাপ মেয়েটাকে না মারতে তবে তোমায় এইদিন দেখতে হতো না।
এখানে ভালো থেকো। লন্ডান থেকে যত বার বিডিতে আসবো ততবার তোমাদের দেখে যাবো আমি চাই তোমরা তিলে তিলে মরো।গুড বায়।

প্রভাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মাইশা দ্রুত হেটে চলে যায়।তার মনে পড়ে যায় পায়েলের লাশের কথা।নোমানের কথা অনুযায়ী সেই জাঙ্গলেই পায়েলের কঙ্কাল পাওয়া যায়।রিকের সাহায্য নিয়েই মাইশা এত বড় চেলেঞ্জটার জয়ী হয়ে ফিরেছে।ঝুম বৃষ্টির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে দ্রুত গাড়িতে বসে সে।উদ্দেশ্য আরাফ আর হৃদিতার সাথে দেখা করতে যাওয়া।

– আরাফ বিয়ের সময় কবুল কয়বার বলতে হয়?
হৃদিতার প্রশ্নে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় আরাফ।ঠোঁট বাকিয়ে চোখ উলটে সে বলে,
– কেন তিন বার।
– তুই আমাদের বিয়ের সময় পাচঁবার কবুল বলেছিস।
হৃদিতার আড় চোখে তাকানো কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে হাসে আরাফ।হৃদিতার হাত টেনে তার পাশে বসিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।
– আসলে তোকে পাবো সেই জন্য একটু বেশি এক্সাইটেড হয়ে গেছিলাম।তাই পাচঁ বার বলে ফেলেছি।এতে আমার বিয়েটা আরো শক্ত পোক্ত মজবুত হলো তাই না।বাই দা ওয়ে তোর নাকি বিয়ের সময় হুশ ছিল না তাহলে জানলি কি করে আমি পাচঁবার কবুল বলেছি।

হৃদিতা আরাফের পাশ থেকে উঠে তার মুখোমুখি দাড়ায়।আরাফের গালে হাত দিয়ে চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে,
– কে আবার নেহা আপু বলেছে।তোর কবুলের বিষয়টা নিয়ে হাসাহাসি চলছে ওই বাড়িতে।একটা গুড নিউজ আছে।
– কী?
– সুফিয়া বানু আমাদের যেতে বলেছে।মানে বুঝতে পারছিস দাদী আমাদের মেনে নিয়েছে।
হৃদিতার ঠাট্টা সুরে কথায় ভ্রু কুচকায় আরাফ।
– মানে কি তোর দাদী আমাদের বেড়াতে যেতে বলেছে। এই বুড়ির মাথায় শুভ বুদ্ধি এলো কি করে।
– দেখ মুরব্বিদের কথা একদম ফেলবি না। মনে আছে দাদী বলেছিল নোমান ভাই তোদের সম্পদ মেরে খাবে, আমরা বিশ্বাস করি নি। উলটো রাগ দেখিয়ে তোকে টেনে নিয়ে চলে এসেছিলাম।কিন্তু দেখ দাদীর কথাটাই সত্যি হলো।মা যদি প্রভার সাহায্য না চাইতো তবে কি হতো আমাদের।
– হুম তা ঠিক বলেছিস।মাইশা তো আজ আসার কথা ছিল কিন্তু এখনো আসে নি কেন।
– চল নিচে যাই।

মাইশা বাড়িতে এসে সবার কাছ থেকে বিদায় জানায়।হুমায়রা তার ভুল বুঝতে পেরে মাইশার কাছে লজ্জায় পরে যান তবুও মাইশা সবার সাথে হাসি খুশি নির্ভেজাল সম্পর্ক বজায় রাখে।এত হাসি খুশির মাঝেও হুমায়রার মনে মনে মাইশাকে নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই যায়।

– মাইশা কি বলছো তুমি এত তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে তুমি।চলে যাবে আমাদের ছেড়ে।

হৃদিতার কথা নিশব্দে হাসলো মাইশা।

– দেখো বিডিতে থেকে আমার আর কাজ নেই আমি আর কি করবো বলো।বাবা বলেছে ফিরে যাওয়ার জন্য আমি বরং চলেই যাবো।
– কিন্তু তা তো হবে না আমার কাজিন নেহার বিয়ের অনুষ্ঠান সামনের সাপ্তাহে তোমাকেও আমাদের সাথে থাকতে হবে।

হৃদিতার কথায় তাল মিলিয়ে এগিয়ে আসে আরাফ।
– আরে নেহার বিয়েতে তো খুব মজা হবে।মাইশা মনে আছে আমার নেহা ফ্রেন্ডের কথা তোমায় বলেছিলাম।সে হৃদিতার কাজিন হয়।তোমায় তো দাওয়াত করা হয়েছে তবুও তুমি চলে যাবে বলছো।তাছাড়া নাফিসা আর শাকীল তো হুট করেই বিয়েটা করে নিলো তোমায় দাওয়াত দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিলনা এবার অন্তত থাকো প্লিজ বিয়েতে অনেক মজা হবে।

সবার জোরাজোরিতে মাইশা অবশেষে নেহার বিয়ে পর্যন্ত থাকার সিধান্ত নেয়।

বাড়িতে সল্প পরিসরে বেশ আয়োজনের মধ্যে দিয়েই নেহার বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়েছে।বিয়েতে আজ যুগল বন্ধী হয়ে এসেছে শাকীল আর নাফিসা।এই সহ দ্বিতীয়বার নাফিসাকে শাড়ি পরিধানে দেখে সব বন্ধুরা মুগ্ধ নয়কে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
– আল্লাহ এটা কে রে। টপ’স, জিন্স পড়ে লাফালাফি করা মেয়েটা বুঝি এখন শাড়ি পরে স্বামীর হাতে হাত রেখে হাটছে।

আরাফের কথায় লাজুক ভঙ্গিতে হাসে নাফিসা।
– দোস্ত দেখ,বিয়ে মানুষ কেন করে।নির্ঘাত ফকির হওয়ার জন্য করে।শাড়ি পরতে পারেনা অথচ বিয়ের পর একের পর এক শাড়ি কিনে আমারে ফকির বানাইছে।কিন্তু আজকে বললো সে নাকি শাড়ি পরবে না।দিসি ধমক। কিন্তু কথা হইলো সে তো মাইয়া মানুষ তারে তো আবার ধমক দেওয়া যায় না দিলেও বিগড়ে যাবে ত্যাড়ামি করবে,এবার নাকি বিয়েতেই আসবে না। আমি আর কি করমু হাতে পায়ে ধরে শাড়ি পরতে বলে রাজি করিয়ে,পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তারপর আসলাম। উফফফ জানটা বাইর হই যাচ্ছে রে দোস্ত।

শাকীলের কথায় সবাই অট্ট হাসিতে মেতে উঠে।নাফিসা চোখ গরম করে তাকিয়ে থাকে শাকীলের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে কাচুমাচু হয়ে যায় শাকীল।

– তোদের ঝগড়া বিয়ের পরেও চলছে বাহ বাহ।

আরাফ কথাটি বলে আবার হাসতে থাকে।সবাই সবার মতো করে বিয়ে বাড়ি উপভোগ করছে। মাইশার বাবা কল করায় সে একটু আড়ালে গিয়ে কথা বলে হঠাৎ করেই পিছনে ঘুরতে কারো সাথে ধাক্কা খায়।মাথা তুলে তাকাতেই লিবানকে দেখে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।
– সরি সরি আমি বুঝতে পারি নি।
লিবানের অনুনয় স্বরের কথায় সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় মাইশা।
– ইট’স ওকে।
– আরাফের কাছে আপনার সম্পর্কে অনেক কথাই শুনেছি।আপনি তো মাস্টার মাইন্ড। বাই দা ওয়ে আমরা কি পরিচিত হতে পারি?
-আমার পেছনে ঘুরে লাভ নেই আমি বিবাহিত।
মাইশার কথা শুনে ঠোঁট বাকিয়ে হাসে লিবান।মাইশার দিকে ঝুকে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
– হৃদিতা আমায় আগেই বলেছে যার সাথে লাইন করার চেষ্টা করবেন তার বিষয়ে একটু অবগত হয়ে নিবেন।তাই তো আপনার সম্পর্কে আগেই জানলাম।আপনি বিবাহিত না পিউর সিঙ্গেল।

লিবানের কথায় চমকে যায় মাইশা।এই ছেলেতো হাবলুর মতো থাকলেও আড়ালে শয়তানি নিয়ে ঘুরে।
– তো আমি সিঙ্গেল দেখেই কি প্রেম করতে হবে না কি?
– আমি আমার মনের কথাটাই বললাম আর বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
লিবান হাসতে হাসতে সেখান থেকে প্রস্থান করে।এদিকে মাইশা দ্বিধা দ্বন্দে পরে যায়।হঠাৎ এই ছেলেটা তার আশেপাশে থাকায় এমন অস্থিরতা লাগলো কেন?তার মন যে অন্য কথা বলছে।
লেখনীতে পলি আনান।
বিয়ে শেষে কনে বিদায় পর্ব চলে এলো।আরাফ হৃদিতা কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।নাফিসা,মাইশা হৃদিতার হাতে হাত রেখে সাহায্য করছে।লিবান আর শাকীল টুকটাক সাহায্য করে এক কোনায় দাঁড়ায়।

– কিরে লিবান তুই কি এখানে থাকবি না কি আড়ালে যাবি?
– কেন আমি আড়াল হবো কেন?
– না মানে তোর তো আবার মেয়েদের কান্না দেখলে নিজের ও কান্না পায় তাই বললাম।
শাকীল ঠোঁট টিপে হাসছে আর তা দেখে রেগে যায় লিবান।
– সবসময় ফাজলামো ভালোলাগে না শাকীল।
– ওকে যা আর মজা করবো না।অল দা বেস্ট চোখের পানি কন্ট্রোল করিস।

কিছুক্ষণ পরেই কনে বিদায় পর্ব শুরু হয়ে যায়। নেহাকে বিদায় দিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ওয়ালীদ,হামিদা এবং সুফিয়া।হৃদিতা ফুঁপিয়ে কাঁদছে।শাকীল, আরাফ,মাইশা নাফিসা,লিবান সবাই একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।

হঠাৎ করেই নাফিসার কানে ফ্যাচ ফ্যাচ কারো কান্নার আওয়াজ আসে।সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই লিবানের কান্নারত মুখটা দেখেই বিস্মিত হয়ে যায় সবাই।মাইশা আহাম্মক বনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লিবানের দিকে।সবার দৃষ্টি দেখে দ্রুত লিবান চোখ মুখ মুছে নেয়।

– হোয়াট দা ফাও!তুই আবার কান্দস লিবান? এইসব কি দেখায় আল্লাহ আমারে।
শাকীলের কথায় তার পীঠ চাপড়ে হাসতে থাকে আরাফ।
– থাক থাক জ্বালাইস না তোরা। সে একটু দুঃখ প্রকাশ করুক।
– লিবান তুই নাকি আমার বিয়েতে কেঁদে ছিলি কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি।আজ আমার বিশ্বাস হয়েছে তুই সত্যি কেঁদেছিস।
নাফিসার কথায় মুখ ঘুরিয়ে নেয় লিবান।
– তোরা ইমোশনাল জিনিসেও ফাজলামি করস ভাল্লাগে না।সর সামনে থেকে।
লিবান রাগ দেখিয়ে দ্রুত চলে যায়।কিন্তু তার দিকে এখনো দুটো চোখ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।

সবার আড়াল হয়ে মাইশা তার বাবাকে ফোন করে। গিয়াস মেয়ের আর্তনাদ কন্ঠ শুনেই থম মেরে যান।
– বাবা আই ওয়েন্ট লিবান!আই নিড ইট বাবা, আই নিড ইট!
– হোয়াট? কি বলছো তুমি?তোমার মাথায় আবার কোন ভূত চাপলো।
– বাবা তুমি বলেছিলেনা আমাকে কোন আহাম্মক বিয়ে করবে।
– আমি সেই আহাম্মকটাকে পেয়ে গেছি।
– কিন্তু কে সে?
– লিবান। প্লিজ বাবা তুমি আজকের ফ্লাইটে বিডিতে আসবে।আর আমি শীঘ্রই বিয়ে করবো ছেলেটাকে এটাই ফাইনাল ডিসিশন।
– ছেলে কি করে বংশ পরিচয় না জেনেই আমি তোমার বিয়ে দিয়ে দেবো আজব!
– বাবা ছেলে একটা আহাম্মক!তবে যাই হোক তোমার মেয়েকে কোন দিন কষ্ট দেবেনা সিওর থাকো।আমি যা বলি তাই করি বাবা।তাই আমাকে অবাধ্য করবে না।তুমি দ্রুত বিডিতে আসো।

মাইশা ফোন রাখতেই গিয়াস নির্বোধ হয়ে যান, হচ্ছে টা কি?

সময়ের তার আপন গতিতে পেরিয়ে যায়।কিন্তু বন্ধন গুলো অটুট থাকে সারাজীবন। কেটে গেছে আরো সাতটি মাস।মাইশা আর লিবানের বেশ ধুমধাম করেই বিয়ে হয়েছে।বর্তমানে তারা লন্ডনেই আছে।শাকীল আর নাফিসা দুজনে মিলে তাদের বাবার ব্যবসার কাজে মন দিয়েছে তার পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চলছে।

হৃদিতা বর্তমান সময়ে এনায়েত বাড়ির সবচেয়ে প্রিয় সদস্য।শশুড়-শাশুড়ীর সাথে পারিবারিক ব্যবসার কাজে হাত লাগিয়েছে সে নিজেও।তার সাথে আরাফ টুকটাক সাহায্য করছে।

ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে আরাফ হঠাৎ করেই উলটো রাস্তায় বাইক ঘুরিয়ে নেয়।
– আরে আরাফ কোথায় যাচ্ছিস? ভার্সিটি যাবি না? আমার ইনপটেন্ট ক্লাস আছে।
– হিসসস স্বামীর থেকে ইমপটেন্ট ক্লাস আর থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না। চুপ যা এবার।
– দেখ ফাজলামি করবি না একদম, দ্রুত গাড়ি ঘুরা আমি ভার্সিটি যাবো।
– চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে যা।আমি ভার্সিটিতে যাবো না।

আরাফের ঘাড় ত্যারামো কথায় তার ঘাড়ে জোরে ঘুষি দেয় হৃদিতা।তার কাদো কাদো মুখ খানা বাইকের আয়নায় দেখে মুচকি হাসে আরাফ।

কিছুক্ষণ পরেই তারা পৌছে যায় সেই কফি শপে। তা দেখে হৃদিতা অবাক না হয়ে পারলোনা।
– এখানে কেন আরাফ?
– আগে নাম তারপর বলছি।

হৃদিতা গুটি গুটি পা ফেলে এগিয়ে যায়। মূল ফটোকে আসতেই সে থেমে যায়।সম্পূর্ন মেঝে শিউলি ফুলের গালিচা। হৃদিতা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়েই আরাফ তাকে এগিয়ে যেতে বলে হৃদিতা জুতা খুলে এগিয়ে যায়।আগের কফি শপের চেহারাটা বর্তমানে সম্পূর্ণ পালটে গেছে।মাঝ খানে এসে দাড়াতেই হৃদিতার সামনে একটি পর্দা চোখে পড়ে আর সেই পর্দায় স্লো ভয়েজে মিউজিক চালছে। তার সাথে সাথে হৃদিতার একের পর এক ছবি আসতে থাকে। প্রত্যাকটা ছবি গোপনে তোলা।কিছু ছবি কফি শপের,আবার কিছু ছবি চিরচেনা সেই পুকুর পাড়ের, লাইব্রেরি, ক্লাস,মাঠ সব জায়গায় আড়ালে হৃদিতার ছবি তুলে সংগ্রহ করেছিল আরাফ।হৃদিতা স্তব্দ, স্তম্ভিত হয়ে থ বনে গেছে।
হৃদিতা মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই আরাফ তাকে সামনে পর্দায় তাকাতে ইশারা করে। তখনি আরেকটি ভিডিও অন হয়।যেখানে আরাফ এক গুচ্ছ সাদা-লাল গোলাপ হাতে কফি শপের চিরচেনা সিটে বসে আছে।আরাফ মুচকি হেসে বলতে শুরু করে,

” ‘হৃদিতা’ আমার কাছে আস্ত একটা ভালোবাসার নাম।যাকে প্রথম দেখায় আমি প্রণয় আগুনে জ্বলেছি, তাকে পাওয়ার তৃষ্ণা আমায় আকুল করলেও নিজেকে অটুট রেখেছি।দৈর্য্য ধরেছি মাসের পর মাস।তাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু না তাকে তো ভুলার নয়; সে তো আমার রাতের ঘুমে হানা দেবে।বৃষ্টির দিনে তার কথা ভাবতেই শিহরণ বয়ে যাবে।ধাপে ধাপে আমার স্পন্দন বাড়িয়ে তুলবে। এবার এই মেয়েকে আমি ভুলবো কি করে?তাকে কাছে পাওয়ার আকুলতা যখন আমায় সম্পূর্ণ গ্রাস করেছে তখনি আমি নানান ছল বাহানায় তাকে কাছে আনি।

আমি জানি তোমার মনে আছে এই কফি শপের কাটানো প্রতিটি দিনের কথা।যে অবাধ্য ছেলেটা পড়াশোনা নামক মরিচিকার পেছনে ছুটেনা, সে ছেলেটা এই মরিচিকার মাধ্যেমেই তোমায় কাছে এনেছে।তোমার হৃদয়ে গড়ে তুলতে চেয়েছিল মৃদ্যু স্পন্দন!
তোমায় নিয়ে বললে আমার শেষ কখনোই হবেনা।
তুমি তো সেই মেয়ে,
পরিবারের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে সব কিছু করতে পারে। দায়িত্ব, দয়া, নিঃস্বার্থতা, সহানুভূতি এবং আনুগত্য তোমার দুর্দান্ত গুণ।যার হৃদয়ে আছে অফুরন্ত ভালোবাসা। হৃদিতা নিখুঁততার সাথে সবকিছু পরিচালনা করতে পারে এবং খুব বিশ্বাসযোগ্য।সবাইকে আগলে রাখে সে যে পরম যত্নে।

তোমাকে কি করে দূরে সরাই আমি বলো?তোমার ভালোর জন্য হলেও আমি তোমায় কখনো ছাড়বো না।কারন আমি জানি আমার চেয়েও কেউ কোন দিন তোমায় ভালোবাসতে পারবে না।সুখী করতে পারবেনা।তোমার বাধ্যে হয়ে চলবে না।তাই এই হৃদিতার জন্য গন্ডমূর্খ, হাঁদারাম,আহাম্মক আরাফটাই প্রয়োজন।

যদি আমি নির্বোধ হয়ে, আমাকে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য এমন একজন পার্ফেক্ট জীবন সঙ্গী থাকে তবে আমি নির্বোধ থাকতে চাই সারা জীবন।
তুমি বলনা ‘ভালোবাসি’ নামক শব্দটা তোমায় আমি কোনদিন বলিনি।কেন বলবো আমি?ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়ে যায়।তোমার প্রতি আমার যে যত্ন,আগলে রাখা, অবাধ্য ছেলে বাধ্য হওয়া।এইসবে কি ভালোবাসা খুঁজে পাওনা।যদি বলি আমার ভালোবাসা শব্দহীন, অর্থহীন,খুঁজে নাও তুমি তোমার মতো।আমার অনুভূতি গুলো অনুভব করো, খুঁজে নাও ভালোবাসা। আমার শব্দহীন অনুভূতির কাছে তোমার ‘ভালোবাসা’ নামক একটা শব্দ কিছুই না।আমার মুখে ভালোবাসি নামক শব্দটা তোমার যতটা তেষ্টা মেটাবে তার থেকেও বেশি প্রফুল্লিত হবে আমার অনুভূতি গুলো অনুভব করলে।এবার বলো থাকবে তো দি আহাম্মকটার পাশে, সারাজীবন! আগলে রাখবে তো তাকে?

পর্দায় আরাফের করুণ মুখখানা দেখে নিজেকে সামলাতে পারলোনা হৃদিতা। এতক্ষণ তার চোখ দিয়ে নিশব্দে গড়িয়ে পড়ছিল নোনাজল। হুট করেই ঢুকরে কেঁদে উঠে সে।আরাফ বিচলিত হয়ে তার সামনে গেলেই আরাফকে জাপটে ধরে হৃদিতা।

– থাকবো তো সারাজীবন পাশে হাতে হাত রেখে!তুই শুধু আগলে রাখিস তোর বাহুডোরে।
আরাফ ঠোঁট কামড়ে হাসে।তার চোখে চিকচিক করছে নোনা জল।

কেটে গেছে আরো নয় বছর।সময়ের সাথে সাথে পালটে গেছে সব কিছু।আইদা আদীব এখন অনেকটাই বড় হয়ে গেছে।পরিবার থেকে হারিয়ে গেছে “হৃদি”।হৃদির মৃত্যুতে বাড়ির সবার অন্তর আত্না কাপিঁয়ে তুলেছে।নোমান,প্রভা এখনো জেল খানায়। সারাজীবনের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছে তারা।লিবান আর মাইশা এখন এক বাচ্চার বাবা মা।শাকীল, নাফিসার ফুটফুটে একটি কন্য সন্তান হয়েছে।আরাফের ঘরেও আলোকিত করে এসেছে মেয়ে আরিহা।তার বর্তমান বয়স আট বছর।মেয়েটা আরাফের মতো দুরন্ত হলেও চালচলন সম্পূর্ণ হৃদিতা

আরিহাকে অনেক্ষণ থেকে পড়াচ্ছে হৃদিতা কিন্তু দুরন্ত মেয়ে কিছুতেই পড়তে চাইছেনা।ঘরের এদিক থেকে সেদিক ছুটাছুটিতে ব্যস্ত সে।হৃদিতা বিরক্ত হয়ে মেয়েকে ডাকতে থাকে,
– আরিহা আম্মু দ্রুত আসো।মিস কিন্তু কাল মারবে তোমায় নামতা গুলো পড়ে যাও আর একবার পড়ে নাও আমার লক্ষি মেয়েটা।
– আহ! তোর খালি সারাদিন পড়া আর পড়া। একটা সময় আমাকে জ্বালিয়েছিস এখন আমার মেয়েটাকে। কিসের এত পড়ালেখা বলতো?
আরাফের কথা শুনে চোখ গরম করে তাকায় হৃদিয়া।সঙ্গে সঙ্গে আরাফ তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
– আরিহা আম্মু এদিকে আসো। আজ আমরা একটা খেলা খেলবো,
– কি খেলা আম্মু?
– তোমার বাবা আজ আমাদের নয়ের নামতা শুনাবে।আরাফ বলতো নয়ের নামতা!
হৃদিতার কথাত আরাফের পেটের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠে। সে তো পড়ালেখা নামক বিরক্তিকর জিনিস আগেই ছেড়ে দিয়েছে এবার মুখস্থ বলবে কি করে।
– আব..এইসব কি হৃদিতা মেয়েকে পড়াচ্ছিস পড়া। আমাকে টানছিস কেন?
– নো বাবা নো!আমি তোমার কাছ থেকেই নামতা শুনবো।
আরিহার কথা শুনে হৃদিতা মিটিমিটি হাসছে। আরাফ পড়েছে ভীষণ ফ্যাসাদে।

– নয় একে নয়… নয় দু গুনে আঠারো…..তিন নয়?তিন নয়,,তিন নয়,,
আরাফ আর পারছেনা ঠোক গিলে আরিহার দিকে তাকালে আরিহা তার বাবার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।
– বাবা ইউ আর সো বেড। নামতা কেন পারো না তুমি? আম্মু তো আমায় সম্পূর্ণ নামতা শিখেছে আমি পারি।কিন্তু তুমি,

আরিহা আর কোন কথা বলতে পারলো না তার আগেই তার দাদুমনি ডাক পরায় ছুটে চলে যায় সে।হৃদিতা আরাফের শুকিয়ে যাওয়া মুখটা দেখে হাসতে হাসতে বলে,
– তোকে একদিন অভিশাপ দিয়েছিলাম, তুই আদুভাই হবি তোর বাচ্চার সাথে তুই পড়বি কিন্তু অভিশাপ টা যে এইভাবে লেগে যাবে ভাবতে পারিনি।এখন মেয়ের সাথে মিলে নয়ের নামতা শিখবি হা হা হা।
আরাফ রাগ দেখিয়ে উঠে যেতে নিলেই হঠাৎ করেই হৃদিতা মুখে হাত দিয়ে ওয়াশরুমে দৌড় দেয়।আরাফের বুঝতে বাকি নেই হৃদিতার কি হয়েছে।ক্লান্ত মুখ নিয়ে হৃদিতা ওয়াশরুম থেকে ফিরে এলে আরাফ মিটি মিটি হেসে বলে,
– যাক মেয়ে তো তোমার মতো হয়েছে ইনশাআল্লাহ পরের টা আমার মতো হবে। আমি অপেক্ষায় আমার সুইটি বউ কখব আবার নতুন মুখে বাবা ডাক শুনবো।
আরাফের কথা ক্লান্ত মুখে হৃদিতা মুচকি হাসে।আরাফ তাকে জড়িয়ে নেয় তার বাহুডোরে।

_______সমাপ্ত_________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here