লেডি_হ্যাকারের_সাইকোগিরি,০২,০৩

#লেডি_হ্যাকারের_সাইকোগিরি,০২,০৩
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_২

সবাই ভয়েসটা শুনে বুঝে যায়,যে যেই মানুষটা তাঁদের কম্পিউটার হ্যাক করেছে সে একটা মেয়ে!কিন্তু কারোর এই যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না,যে একটা মেয়ে তাঁদের মতন হ্যাকারের পুরো সিকিউরিটি সিস্টেম কে হ্যাক করে নিয়েছে!আর অন্যদিকে আকাশ সেই ভয়েস শুনে আবারো সজোড়ে হেঁসে উঠে!আর মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করতে থাকে।তখনি অফিসার জেমস তাঁকে জিগ্যেস করে…

–আকাশ তুমি এমন পাগলের মতন হাসছো কেন?
আর কি কারনে তুমি কম্পিউটারটা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেললে?তুমি কি জানো এই কম্পিউটার টা বেস্ট ইলেভেনের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার ছিলো?
তুমি কি জানো এই কম্পিউটার বেস্ট ইলেভেনের সব চাইতে বড় হাতিয়ার ছিলো হ্যাকিং জগতের জন্য?
এই কম্পিউটার দাঁড়াই বাকি দশটা কম্পিউটারের কাজকর্ম প্রসারন করা হতো।

–স্যার হাসার কারনটা না হয় অন্য কখনো বলবো,আর তাছাড়া সময় আসলে অবশ্য আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন।আর কম্পিউটারটা ভেঙ্গে ফেলার আসল কারনটাই হলো এটা,যে এই কম্পিউটার টাই বেস্ট ইলেভেনের সব চাইতে ভয়ানক হাতিয়ার।

–তাহলে তুমি জেনে-বুঝে সেটা ভাংলে কেন?

–স্যার আপনি হয়তো এখনো আমার কাজের ধারা বুঝেন নি?আচ্ছা আমিই বুঝিছে বলছি।সেই হ্যাকার মেয়েটা বেস্ট ইলেভেনের অন্য কোনো কম্পিউটারে হাত দেয়নি।সে সোজা একদম গোঁড়ায় হাত দিয়েছে।সে কোনো ভাবে জানতে পেরেছে,যে সে যদি বেস্ট ইলেভেনের হেড-হোল্ডারকে বা সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার টাকে কাবু করতে পারে,তাহলে বাকি কম্পিউটার গুলোও তার হাতের মুঠোয় চলে যাবে।তাই সে একদম মেইন পয়েন্টেই হাত দিয়েছে।সে এতোটা সময় বেস্ট ইলেভেনের হেড-হোল্ডারটাকে নিজের জিম্মায় করে রেখেছে বলেই বাকি সব কয়টা কম্পিউটার তার হাতের ইশারায় নাচানাচি করেছে।তাই আমি হেড-হোল্ডার টাকেই ভেঙ্গে ফেলেছি।যাতে করে তার ভিতরে থাকা প্রোগ্রাম গুলো কল হয়ে যায়।কারন এতোটা সময় এই কম্পিউটার সচ্ছল থাকায় সেই লেডি-হ্যাকার কম্পিউটারের ভিতরে ঢুকে বসে ছিলো।

–কিন্তু আকাশ সেটা তো অন্য ভাবেও করা যেতো।

–স্যার এতোটা সময় কেউ পেরেছে কম্পিউটার গুলোকে সেই হ্যাকারের হাত থেকে মুক্ত করতে?
পারেনি তো কেউ।তাহলে ভবিষ্যতেও পারতো না।কারন হেড-হোল্ডারের অনেক বড় দূর্বলতা হয়তো তার হাতে লেগেছে।তাই সে সহজেই কম্পিউটারের প্রোগ্রামকে হ্যাক করে সব কয়টা কম্পিউটারকে নিজের দখলে করে রেখেছিলো এতোটা সময়।আর হ্যাঁ,তবে একেবারে অন্য কোনো উপায়ে কম্পিউটার গুলোকে ছুটিয়ে আনা যেতো না যে তা না,যেতো বাট সেই সময়ের মাঝে হয়তো সেই লেডি-হ্যাকার আপনাদের সিস্টেমের পুরো বারোটা বাজিয়ে দিতো।তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা।আর স্যার আপনি হয়তো অবশ্যই শুনেছেন,যে কখনো কাজের মাঝে বাঁধা আসলে কিছু সময় সেটাকে পুরোপুরি ভাবে নষ্ট করে দেওয়াই উচিৎ।না হয় একদম প্রথম থেকে কাজ শুরু করা উচিৎ…

–হ্যাঁ আকাশ আমি বুঝে গিয়েছি তুমি কি বুঝাতে চাইছো।ধন্যবাদ তোমাকে আকাশ।যা বেস্ট ইলেভেন এতোটা সময়েও করতে পারেনি,তা তুমি আধঘন্টায় করে দেখিয়েছো।তোমার জন্য অনেক বড় উপহার রয়েছে।আকাশ তুমি চাইলে আমাদের বেস্ট ইলেভেনের হয়ে কাজ করতে পারো।

আকাশ জেমস নামক মানুষটার মুখে বেস্ট ইলেভেনের হয়ে কাজ করার কথা শুনে চমকে উঠে!কারন সে এতো বড় হ্যাকারের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে।কিন্তু সে পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে মুচকি একটা হাসি দেয়।

–কি হয়েছে আকাশ হাসছো কেন?

–স্যার অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এতোটা সম্মান দেওয়ার জন্য।কিন্তু স্যার আমি এতো বড় বড় মহান হ্যাকারদের সাথে কাজ করার মতন যোগ্যতা রাখি না।আমার মাঝে যদি সত্যিই যোগ্যতা থাকতো,তাহলে আমি আপনাদের ক্ষতি না করা ছাড়াই উপকার করতাম।কিন্তু সেটা আমি করতে পারিনি।আমার মাঝে সত্যিই কোনো কিছু নেই স্যার।আর তাছাড়া আমি একজন স্টুডেন্ট।আমার পড়ালেখার পিছনেও সময় দিতে হয়।তাই হয়তো সব কিছু মিলিয়ে কাজ করা সম্ভব হবে না আমার কাছে।আমাকে ক্ষমা করবেন স্যার।

–আকাশ তোমার মতন মানুষ আমি আমার বাপের জন্মেও দেখিনি!কারন ডার্ক ওয়েব পুরো ইলেভেনের নামে কাপে।এই বেস্ট ইলেভেনে আসার জন্য অনেক বড় বড় হ্যাকাররা মনের মাঝে বিশাল আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বসে আছে।আর সেখানে তুমি কাজ করার সুযোগ পেয়ে সেটাকে প্রত্যাখ্যান করছো।ঠিক আছে যাও তোমায় আর জোর করবো না আমি।যদিও তোমার কাজে মুগ্ধ আমি।কিন্তু তোমার পড়ালেখার বিষয়টার জন্য আর জোর করলাম না।

–ধন্যবাদ স্যার আমার বিষয়টাকে বুঝার জন্য।

–তবে হ্যাঁ কখনো তোমাকে সাহায্যের জন্য ডাকলে চলে এসো কিন্তু।

–অবশ্যই স্যার..

–আচ্ছা ঠিক আছে চলো তোমায় আমি ছেড়ে দিয়ে আসি।

–না,না স্যার তার কোনো দরকার নেই।আমি একাই চলে যেতে পারবো।

–শিউর?

–অবশ্যই স্যার..

আকাশের কথা শুনে জেমস নামক লোকটা পকেট থেকে ছোট একটা টাকার বান্ডিল নিয়ে আকাশের হাতে চেপে দেয়।আর বলে…

–এটা আমি তোমায় খুশি হয়ে দিয়েছি।তুমি কিছু মনে করোনা।

লোকটার বিনয়ী ভাব দেখে আকাশ আর কিছু বলতে পারে না।তাই সে চুপচাপ টাকাগুলো নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।সেখান থেকে বের হতেই তার নাম্বারে একটা ফোন আসে।সে স্বাভাবিক ভাবে ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলে….

–কিরে কি খবর তোর?

একটা মেয়ে তাঁকে ফোন করেছে।

–জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো,বাট আপনি কে?আপনাকে তো চিনতে পারলাম না!

–আরেহ আমাকে চিনতে পারলি না?এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেছিস আমায়?

–আসলে দূর্বল মস্তিষ্কের মানুষ তো,তাই মাথায় বেশিক্ষন কিছু থাকে না।সো কে আপনি পরিচয় টা দিলে খুশি হতাম।

–কে হতে পারি আইডিয়া কর তো?

–আমি সত্যিই বলছি আমার মনে পড়ছে না।আর আইডিয়া করতে পারলে তো অবশ্যই কারো না কারো নাম বলতাম।

–আরেহ আইডিয়া তো কর….
পরে যদি মনে করতে নাই পারিস,তাহলে না হয় নিজেই পরিচয় টা দিব।

–উমমমমম,নাম ধরে যেহেতু ডাকছেন,তাহলে অবশ্যই পরিচিত কেউ হবেন।কে হতে পারেন,কে হতে পারেন,ধুর মনে পড়ছে না।প্লিজ পরিচয় টা দিন।

–আরেহ আজি বেহরোজ।

–কোন বেহরোজ?

–আরেহ তাও মনে করতে পারছিস না তুই!আমি তোর স্কুল ফ্রেন্ড বেহরোজ।

–আরেহ তুই!হটাৎ তুই আমায় ফোন করলি কি মনে করে?আর আমার নাম্বারো বা পেলি কোথায়?

–পেয়েছি পেয়েছি।যে কোনো একজন থেকে নিয়েছি।

–বাপরে,কতোদিন পর ফোন দিলি।

–হুম চার বছর পর তোর সাথে আমার যোগাযোগ হচ্ছে।সেই যে স্কুল বেলা শেষ হওয়ার পর হারিয়েছিস,তারপর আর কখনো খবর ও নিস নি আমার।

–আরেহ কি করে খবর নিব বল,আমি অনেক কয়বার তোর নাম্বারে ফোন দিয়েছি,বাট সেটা বারবারই বন্ধ এসেছে।তাই আর ফোন দেই নি।

–আচ্ছা বল কি অবস্থা তোর?
কোথায় আছিস তুই?আর কি করছিস এখন।

–এই তো ভালোই আছি।আর আছি বলতে কিছুদিন হলো ঢাকায় খালার বাসা এসেছি।তুই তো জানিস স্কুলে পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর বাবা-মা আমায় চট্টগ্রাম নিয়ে আসে।তারপর সেখানে নিয়ে একটা কলেজে এডমিশন করিয়ে দেয়।আর সেখানে কলেজ লেভেল শেষ করে চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছি।

–যাক ভালোই হয়েছে।

–হুম।আচ্ছা চল কাল দেখা করি…

–হুম দেখা তো অবশ্যই করবো।আজ এতোদিন পর ঢাকায় এসেছিস।দেখা না করলে কি চলে বল…

–তো কখন দেখা করবি?

–কাল সকাল দশটায় রমনায় চলে আসিস।কাল না-হয় তোর জন্য ক্লাস করবো না।

–ঠিক আছে…

তারপর আকাশ বেহরোজের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেয়।তারপর বাসায় চলে যায়।
.
রাতের বাজে আটটা।হুট করেই কে যেনো বেস্ট ইলেভেনের বিষয়টা সোশ্যালে মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেয়।যে বেস্ট ইলেভেন একজন লেডি-হ্যাকারে হাতে শিকার হয়েছে।সেই নিউজ মূহুর্তের মাঝেই সারা দেশে ভাইরাল হয়ে যায়।সমস্ত টিভি নিউজে একই খবর প্রচার হচ্ছে।মানুষজন বিভিন্ন ভাবে সরকারি কর্মকর্তা এবং আইসিটি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তাকে জেরা করতে শুরু করে…

যে দেশের সব চাইতে বড় হাতিয়ার বেস্ট ইলেভেন টিম যদি একজন লেডি-হ্যাকারের হাতে শিকার হয়,তাহলে আমাদের মতন সাধারণ মানুষজন কি করবে!কারন দেশের সমস্ত সিকিউরিটি সিস্টেমকে বেস্ট ইলেভেন প্রটেক্ট করছে,সেখানে তারাই যদি নিজেদেরকে প্রটেক্ট করতে না পারে,তারাই যদি নিজেরা হ্যাকারের শিকার হয়,তাহলে দেশের কি হবে!আর দেশের মানুষের কি হবে!দেশের মানুষ তো সেইফ না তাহলে।সেই লেডি-হ্যাকার তো যে কোনো সময় ব্যাংকের সিকিউরিটি সিস্টেম কে ব্যান করে বা হ্যাক করে বিশাল এমাউন্টের টাকা হাতিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
.
আবার কেউ কেউ বলছে যেই দেশের প্রোগ্রামার রাই নিজেদের প্রোগ্রামকে সামলে রাখতে পারে না,তারা আবার দেশকে বাহিরের দেশের হ্যাকার থেকে কি করে রক্ষা করবে।
.
মোট কথা বেস্ট ইলেভেনের নাম খানিকক্ষণের মাঝেই মানুষ ধুলোয় মিশিয়ে দেয়।সমস্ত সোশ্যাল সাইড গুলোতে বেস্ট ইলেভেনকে নিয়ে মানুষজন ট্রোল করতে শুরু করে দেয়।যেই বেস্ট ইলেভেন মানুষের চোখের মনি ছিলো,সেই বেস্ট ইলেভেনের সম্মান এখন মানুষে পায়ের কাছে এসে নেমেছে।আইসিটির প্রধান যিনি জেমস এর ও সিনিয়র,তিনি এসব দেশে নিজের সোশ্যাল একাউন্ট থেকে পোস্ট করে,যে তিনি রাত দশটায় অনেক কয়টা টিভি চ্যানেল থেকে লাইভে আসবেন।তিনি অনেক কয়টা টিভি চ্যানেলকে রাত দশটায় তার কার্যলয়ে আমন্ত্রণ করেছেন।লাইভে কলিং সিস্টেম চালু থাকবে।কারোর যদি কোনো ধরনের হ্যাকিং নিয়ে সমস্যা হয়,বা কেউ যদি বেস্ট ইলেভেনের মতন সেই লেডি-হ্যাকারের হাতে শিকার হয়,তাহলে তারা কলের মাধ্যমে সেসব জানাতে পারে।কিন্তু
মানুষজন সবাই আক্রমনাত্মক ভাবে সেই সময়ের অপেক্ষা করছে।আইসিটি প্রধান রাত দশটায় লাইভে আসতেই মানুষজন তিনাকে লাইভে কল দিয়েই গালাগাল দিতে শুরু করে।কারন লাইভে কলিং সিস্টেম চালু করে দেওয়া হয়েছে।তিনি মানুষের গালাগাল খেয়েও দেশের উগ্র মস্তিষ্কের মানুষগুলোকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।কিন্তু সবাই তো ক্ষিপ্ত বেস্ট ইলেভেনের প্রতি।তাই কেউ তিনার কথা শুনতেই রাজি নন।অকাট্য ভাষায় গালাগাল করেই যাচ্ছে মানুষ।আর তিনি শেষমেশ না পারতে লাইভেই চুপচাপ বসে আছে।
.
অন্যদিকে
“Z”ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করে।”Z”ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করেছে জানতেই পেরেই সমস্ত হ্যাকার নিজেদের গাট্টি গোস্তা গোল করে পালাতে শুরু করে।কিন্তু “Z” তার আগেই সমস্ত ডার্ক ওয়েবকে পুরো সশানঘাট বানিয়ে ফেলেছে।কারন তার কানেও সেই খবর পৌঁছে গিয়েছে,যে কেউ বেস্ট ইলেভেনের সিকিউরিটি সিস্টেম কে হ্যাক করেছে।কিন্তু এতে তার কোনো আপত্তি নেই।তার আপত্তি হলো সেই লেডি-হ্যাকার তার নামের আলফাব্যাট ব্যবহার করেছে।সে ডার্ক ওয়েবকে তো তসনস করে দিয়েছেই,সাথে আইসিটি প্রধান যেইসব চ্যানেল থেকে লাইভে এসেছে,সে সেইসব চ্যানেলের সিস্টেমকে নিজের কবলে নিয়ে নেয়।আর সে নিজেই পরে সে-সব চ্যানেল থেকে মাক্স পড়ে লাইভে চলে আসে।সমস্ত চ্যানেল থেকে “Z”এর লাইভ চলছে।
তারপর ” Z” ম্যাকানিকাল টোন ব্যবহার করে কথা বলতে শুরু করে।অবশ্য সে লাইভে এসে বেশি কিছু বলে না।সেই সেই লেডি-হ্যাকারের উদ্দেশ্য করে শুধু কয়েকটা কথা বলে….

–বাপ সে মাত লে পাঙ্গা..
নেহি তো মে শুরু হো গেয়া
তো ফের হো যায়েগা দাঙ্গা।

“Z” কে লাইভে দেখে সবার বুক ধুপধুপ করে কাঁপতে শুরু করে!কারন “Z” কোনো মানুষ না,সে হ্যাকিং জগতের সব চাইতে ভয়ানক রাওয়ান!তার সামনে কারোর খাওয়া নেই।সে মুহূর্তের মাঝেই কয়েক শতাধিক হ্যাকারকে পায়ের নিচে রেখে পিশে মেরে ফেলতে পারে!অবশ্য সে সেটা বহু আগে করেও দেখিয়েছে….

চলবে…

#লেডি_হ্যাকারের_সাইকোগিরি
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৩

“Z” কে লাইভে দেখে সবার বুক ধুপধুপ করে কাঁপতে শুরু করে!কারন “Z” কোনো মানুষ না,সে হ্যাকিং জগতের সব চাইতে ভয়ানক রওয়ান!তার সামনে কারোর খাওয়া নেই।সে মুহূর্তের মাঝেই কয়েক শতাধিক হ্যাকারকে পায়ের নিচে রেখে পিশে মেরে ফেলতে পারে!অবশ্য সে সেটা বহু আগে করেও দেখিয়েছে।তারপর সে লাইভ কেটে দিয়ে চলে যায়।
“Z” লাইভে আসার পর থেকে যে মানুষের মনে এক ধরনের আতংকের সৃষ্টি হয়েছে,সেই আতংকে সবাই এখনো আতংকিত হয়ে আছে!বিশেষ করে ডার্ক সাইডের হ্যাকার দের!ডার্ক সাইডের হ্যাকাররা হতাশ হয়ে আছে”Z”এর আচরণে!কারন তাঁদের সমস্ত কিছুই এখন”Z”এর দখলে।
.
অন্যদিকে “Z” ডার্ক ওয়েবে রান করছে।সে পুরো ডার্ক ওয়েব তসনস করে দিয়েছে।ডার্ক ওয়েবে বাংলাদেশ সার্ভারের কোনো হ্যাকার এই নেই।সব কয়টাকে সে গিলে খেয়ে নিয়েছে।আর বেস্ট ইলেভেন তো বহু আগেই ডার্ক সাইড থেকে নিজেদের নাম নিশানা মুছে দিয়েছে।”Z”সারারাত বসে বসে ডার্ক ওয়েব থেকে যেই সকল হ্যাকারদের সিস্টেমকে হ্যাক করেছে,তাঁদের প্রোগ্রাম ঘাঁটতে থাকে।সে সবার কম্পিউটারে প্রবেশ করে একজনকেই তালাশ করছে।সে হলো সেই লেডি-মাফিয়া।যাকে সে খুঁজে পেলে বারোটা বাজিয়ে দিবে।কিন্তু সে সারারাত হ্যাকারদের প্রোগ্রাম চেক করেও সেই লেডি-মাফিয়াকে খুঁজে পায় না।তার মাথায় যেনো আগুন জ্বলছে!সে রাগে কটমট করতে থাকে!
রাগে কটমট করতে করতে কিছুক্ষণ পর সে নিজেই শান্ত হয়ে যায়।পরে সে কালো জগতের সবাইকেই তাঁদের একাউন্ট ফিরিয়ে দেয়।সবাই তো মহাখুশি নিজের একাউন্ট ফিরে পেয়ে।কিন্তু তারা এটা জানে না,যে “Z” তাঁদের সিস্টেমের মাঝে কিছু একটা করে রেখেছে।আবারো সেই “Z”ডার্ক ওয়েবে রেটিংয়ে চলে আসে।ডার্ক ওয়েবে “Z” এর নামে গুঞ্জন শুরু হয়।
যে কালো জগতের রাজা হলো”Z”।একজন আরেকজনের সাথে ওয়ার করলেও “Z” এর সাথে ওয়ার করার কথা কেউ ভুলেও মাথায় আনে না।কারন সবাই জানে যে “Z” এর সাথে লাগতে গেলে তাঁদের নাম নিশানাও মুছে যাবে এই ডার্ক সাইড থেকে।
.
অপরদিকে আকাশ সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে রমনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।সে ঘর থেকে বের হতেই বেহরোজ তাকে ফোন করে….

–কিরে কোথায় তুই?

–এই তো বাসা থেকে বের হয়েছি।

–আচ্ছা শোন তাড়াতাড়ি রমনায় চলে আয়।আমিও বাসা থেকে বের হয়েছি।

–হুম আসছি।

আকাশ একটা রিক্সা নিয়ে রমনায় চলে গিয়ে বেহরোজের সাথে দেখা করে।বেহরোজ আকাশের আগেই রমনায় পৌঁছে গিয়েছে।বেহরোজ আকাশকে দেখতে পেয়ে বসা থেকে উঠে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরে।বেহরোজের এমন আচরণে আকাশ থতমত খেয়ে যায়!তবে সে শান্ত মাথায় বেহরোজকে বলে…

–কিরে এভাবে হটাৎ জড়িয়ে ধরলি যে?

–আরেহ আজ এতো বছর পর তোর সাথে দেখা।কতো আবেগ জমে আছে জানিস তুই,তাই জড়িয়ে ধরেছি তোকে।

–ওহহহ,
এবার তো ছাড়।আর কতটা সময় জড়িয়ে ধরে থাকবি।

বেহরোজ আকাশকে ছেড়ে দেয়।তারপর দুজন মিলে রমনার একটা গাছের নিচে বসে।দুজনে বসে বসে অনেকটা সময় নিজেদের ভাবমূর্তি শেয়ার করে।কারন আজ অনেকদিন পর তাঁদের দেখা হয়েছে।আকাশ তাঁকে জিগ্যেস করে..

–কিরে আর কতোদিন তুই এই শহরে থাকবি?

বেহরোজ আকাশের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার দিকে!বেহরোজের এমন আচরণে আকাশের কেমন যেনো একটা লাগে!সে হাত দিয়ে বেহরোজকে নাড়া দেয়।আর বলে….

–কিরে কি হয়েছে তোর?

বেহরোজ এবারো কোনো উত্তর দেয় না।কিন্ত সে উত্তর না দিলেও অদ্ভুত একটা কাজ করে!সে সোজা মাথা নিয়ে গিয়ে আকাশের কাঁধে রাখে।বেহরোজের আচরণে আকাশ এবার চমকে উঠে!

–কিরে কি হয়েছে তোর?তুই সেই কখন থেকে অদ্ভুত আচরণ করছিস!আসার সাথে সাথেই আমায় জড়িয়ে ধরলি!তার উপরে আবার এখন আবার কাঁধে মাথা রাখলি!তোর আচরণ দেখে মনে হচ্ছে আমি তোর বফ।
এই তোর এইসব আচরণের কথা তোর বয়ফ্রেন্ড জানতে পারলে কষ্ট পাবে না বুঝি?

–আরেহ তেমন কেউ থাকলে না কষ্ট পাবে।

–মানে কি তুই প্রেম করিস না?

–না….

–কিন্তু কেন?

–কারন হলো আমার জীবনে অনেক বড় একটা ইচ্ছে আছে।সেই ইচ্ছেটা এখনো আমার পূরণ হয়নি।তাই আমি প্রেম করি না।আর তাছাড়া অবশ্য একজনকে অনেক আগ থেকেই ভালো লাগে আমার।তাই কখনো এসবে জড়াইনি।

–কিসের ইচ্ছে?আর কাকে তোর পছন্দ।

–ইচ্ছের কথা তো বলা যাবে না।কারন সেটা একদম পার্সোনাল।আর কাকে পছন্দ করি সেটাও বলবো না।

–আরেহ একটা তো বল..
ইচ্ছেটা পার্সোনাল দেখে হয়তো বললি না,কিন্তু পছন্দের কথা তো বন্ধু হিসেবে আমায় বলতে পারিস?

–আচ্ছা আকাশ তুই কি সেই আগের মতন গাধাই থেকে যাবি?

–মানে…..

–মানে কি বুঝিস না তুই?

–নাহ বুঝি না তো।আর তুই যদি আমাকে বুঝিয়ে নাই বলিস,তাহলে বুঝবো কি করে বল তো?

–আচ্ছা চোখ বন্ধ কর।আমি বলছি তোকে…

–আরেহ আজিব তো,কি শুরু করলি তুই!তুই তোর পছন্দের কথা বলবি,এতে আমি চোখ বন্ধ করবো কেন?

–আজিব আমি না,আজিব হলি তুই।কারন সব কথায় তোর প্রশ্নবোধক চিহ্নটা থাকবেই।কখনো প্রশ্ন ছাড়া কারোর কথা মানতে পারিস না তুই।

–আচ্ছা ঠিক আছে যা চোখ বন্ধ করলাম।

আকাশ চোখ বন্ধ করতেই বেহরোজ আকাশের একদম কাছে গিয়ে তার ঠোঁটের মধ্যে স্পর্শ করতে শুরু করে।বেহরোজের নরম ঠোঁট জোড়া সে ইচ্ছে করেই আকাশের ঠোঁটের সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।বেহরোজের এমন আচরণে আকাশ আবারো চমকে উঠে!কিন্তু সে কিছু বলার মতন অবস্থায় নেই!সে পুরো শকট হয়ে গিয়েছে!কিছুক্ষণ পর বেহরোজ নিজেই আকাশের ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নেয়।আর বলে…

–এবার বুঝেছিস কে সেই মানুষ।

এবার আকাশ চুপ করে আছে।বেহরোজের বোবা জ্বীন এবার তার উপরে শোয়ার হয়েছে!

–কি হলো কথা বল…

–বেহরোজ তুই এখনো আমায় পছন্দ করিস?

–হুম…

–কিন্তু কেন?

–কেন মানে?এটা কি ধরনের প্রশ্ন..

–মানে হলো কি দেখে তুই আমায় পছন্দ করিস।

–কারন তোর আচার-আচরণ আমার ভালো লাগে।আর তুই মানুষটা অন্যান্য মানুষ থেকে পুরোপুরি আদালা।যেখানে স্কুল লেভেলে সবাই প্রেম নিয়ে মেতে থাকতো,সেখানে তুই কোনো মেয়ের ধারেকাছেই মিশতি না।তাই সেই তখন থেকেই তোকে আমার পছন্দ।

–ওহহ…
কিন্তু আমি তো তোকে নিয়ে কখনো সেই ভাবে চিন্তা করিনি।

–চিন্তা করিস নি তো এখন থেকে কর।

–নাহ এটা আমি পারবো না।কারন এসবের মাঝে আমি নেই।আর হ্যাঁ তবে তুই যদি চাস তোর পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর আমার বাসায় বিয়ের জন্য কথা বলতে পারিস।তখন আমার আর আপত্তি থাকবে না।

–একদম থাপড়ে গালের দাঁত সব কয়টা ফেলে দিব বেয়াদব!তুই কি আজীবন এই খ্যাঁত থাকবি বলে শপথ নিয়েছিস নাকি হ্যাঁ?আর তোর বাসায় কি করতে আমি বিয়ের প্রপোজাল পাঠাবো?কখনো শুনেছিস মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের বাড়ি বিয়ের প্রপোজাল দেয়?

–আসলে হলো যে…

–এই রাখ তোর আসলের টাসলে।সোজা এখন থেকে তুই আমার সাথে রিলেশন করবি।আর বিয়ের সময় হলে সোজা আমার বাসায় গিয়ে বাবার কাছ থেকে আমার হাত চাইবি।

–আচ্ছা….

–হুম চল তোকে নিয়ে এবার কোনো একটা রেস্টুরেন্টে যাবো।

আকাশ আর কোনো কথা বলেনা।সে চুপচাপ বেহরোজের সাথে পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে যায়।দুজন বসে বসে খাবার খাচ্ছে,তখনি আকাশের ফোনে একটা ফোন আসে।ফোনটা তার পরিচিত মানুষ এই করেছে।আর সেই মানুষটা হলো জেমস।সে ফোনটা রিসিভ করে সালাম দেয়।জেমস সালামের উত্তর দিয়ে তাকে বলে…

–আকাশ তুমি ইমেডিয়েটলি একটু আমার অফিসে আসো তো।আইসিটি প্রধান আমার অফিসে এসেছে।
অনেক বড় একটা ঝামেলা হয়েছে।তুমি তো জানোই
যে বেস্ট ইলেভেনের মানসম্মান পুরো ধূলোয় মিশে গিয়েছে।গার উপরে আইসি প্রধানের অনেক বড় একটা সমস্যা হয়েছে।যেই সমস্যার সমাধান বেস্ট ইলেভেনরাও করতে পারছে না।আমার মনে হয় তুমিই পারবে সেটার সমাধান দিতে।

–স্যার আমি কি করে সব সমস্যার সমাধান বের করবো?আগের বার না হয় মিরাক্কেল ঘটেছে আমার সাথে।প্রতিবার তো স্যার সেই মিরাক্কেল ঘটবে না।

–আরেহ আসো তো তুমি একবার।তুমি পারো না পারো সেটা পরের ব্যাপার।আগে তুমি অফিসে আসো…

–ঠিক আছে স্যার আমি আসছি…
এই বেহরোজ আমার অনেক প্রয়োজনীয় একটা কাজ পরে গেছে।আমি পরে তোর সাথে দেখা করবো।আর আমি বিল দিয়ে যাচ্ছি।তুই খেয়ে দেয়ে খালার বাসায় চলে যাস।

–আচ্ছা ঠিক আছে যা।কিন্তু বিল দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।কারন আমিই তোকে রেস্টুরেন্টে এনেছি।সো বিল আমিই দিব।

–আচ্ছা ঠিক আছে যা তুই দিস।
এবার আমি চললাম…

আকাশ রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে জেমসের অফিসে চলে আসে।সে জেমসের অফিসের আসতেই তাঁকে দারোয়ান আগেরদিনের ন্যায় জেমসের কাছে নিয়ে যায়।সেখানে সেই আইসিটি প্রধান এবং আরো কয়েকজন লোক রয়েছে।জেমস আকাশকে দেখতে পেয়ে বলে..

–আকাশ গতকালের সেই মেয়ে আমাদের স্যারের ল্যাপটপ ও হ্যাক করে নিয়েছে।প্লিজ তুমি কিছু একটা করে স্যারের ল্যাপটপ টা ফিরিয়ে আনো…

–স্যার আমি কি ভাবে কি করবো?
কালতো দেখলেন এই যে আমি একটা কম্পিউটার নষ্ট করে তারপর বাকি গুলো ফিরিয়ে এনেছি।কিন্তু আজ কি ভাবে কি করবো?

–আকাশ তা আমি জানি না।আমি শুধু জানি তুমি পারবে।স্যারের ল্যাপটপের ডেটাবেসের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু রয়েছে।সেসব যদি সেই লেডি হ্যাকার একবার ভাইরাল করে দেয়,তাহলে স্যারের অনেক বড় বিপদ হবে।সাথে আমাদের ও অনেক বড় বিপদ হবে।কারন এমনেই আমাদের নাম ধূলোয় মিশে গেছে।তার উপরে স্যারের ল্যাপটপ হ্যাক করার বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ালে পুরো কলঙ্ক লেগে যাবে।আর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাইরাল হলে তো আর কোনো কথাই নেই।

–স্যার জানি না কি ভাবে কি করবো,তবে যেহেতু আপনি আমার উপরে ভরসা করেছেন,তাহলে দেখি কিছু একটা করতে পারি কিনা।তবে হ্যাঁ কিছু ইনফরমেশন দরকার আমার।ল্যাপটপের সিকিউরিটি সিস্টেম হ্যাক হওয়ার পূর্বে কোনো মেইল বা কিছু এসেছে কিনা।নাকি স্যার কোনো লিংকে ক্লিক করায় স্যারের ল্যাপটপ হ্যাক হয়েছে।আমার সেই ইনফরমেশন টুকু লাগবে।মানে হলো ল্যাপটপ হ্যাক হওয়ার পূর্বে স্যার ঠিক শেষ কোন কাজটা করেছে।

আকাশের প্রশ্ন শুনে আইসিটি প্রধান বলে….

–আমার কাছে একটা মেইল আসে।যার মধ্যে হ্যাকারদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে কিছু লিখা পাঠায় সেই লেডি-হ্যাকার।যার মাঝে লিখা ছিলো,ব্যাঙ ইলেভেন এবং দেশের সমস্ত পাতি হ্যাকারদের কোনো খাওয়া নেই এখন।তাঁদের দিন শেষ।বাচ্চারা তোমরা এবার ঘুমিয়ে পড়ো,তোমাদের’গ্রান্ডমাদারকে’এবার একটু খেলতে দাও।তারপর আমি লিখাটা পড়ে শেষ করতেই ল্যাপটপ হ্যাক হয়ে যায়।

প্রধান স্যারের কথা শুনে আকাশের পুরো মাথায় রক্ত উঠে যায়!সে আর কোনো কথা না বলে একটা চেয়ার নিয়ে প্রধানের ল্যাপটপটার সামনে বসে।তারপর টেবিলে থাকা প্রধান স্যারের ল্যাপটপটা নিয়ে অন্যদিকে ঘুরে সে নিজের মতন কাজ করতে আরম্ভ করে।সে বুলেট গতিতে টাইপিং করতে থাকে ল্যাপটপের কিবোর্ডে।কিছুক্ষণ পর সে ল্যাপটপ টাকে সবার দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে রাগে ফসফস করতে করতে সোজা জেমসের অফিস থেকে বেরিয়ে যায়!অফিস থেকে বেরিয়েই সে নিজেকে আড়াল করে ফেলে।
.
এদিকে ল্যাপটপের দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জেমসের অফিসে থাকা সমস্ত লোকজন!
কারন আকাশ অনেক ভয়ংকর কিছু একটা ঘটিয়ে গেছে আইসিটি প্রধানের ল্যাপটপে!সবাই চোখ বড় বড় করে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে!কারন সে হ্যাকারদের মিলনমেলা লাগিয়ে দিয়েছে প্রধানের ল্যাপটপে!

চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here