#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ২৩ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পড়ে ইভানা ও ফাহিম। গ্রামে সকাল সকাল পাখির কিচির মিচির ডাক, মুরগীর ডাকেই তাদের ঘুম ভাঙার জন্য যথেষ্ট ছিল। তার উপর রাবেয়া বানুর সকাল সকাল বাঁজখাই গলার আওয়াজ এসে তাদের ঘুম ভাঙতে বাধ্য করলো।

রুম থেকে বাইরে এসে ইভানা সকালের মিঠা রোদে দাঁড়ালো। এমন সময় রাবেয়া বানু তাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
‘তুমি না নতুন বউ। সক্কাল সক্কাল উইঠা গোসল করতে হয় জানো না? তা না এখানে দাঁড়িয়ে আছ সংয়ের মতো।’

ইভানা বেশ অপমানিত বোধ করে রাবেয়া বানুর কথায়। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারজানা বেগম সেখানে এসে উপস্থিত হন। তিনি রাবেয়া বানুর কথা শুনতে পেয়েছেন৷ তাই বেশ রাগী গলায় বলেন,
‘খবরদার আমার বৌমার সাথে এইভাবে কথা কইবি না রাবেয়া। তোকে শে’ষ বারের মতো সাবধান করলাম।’

রাবেয়া বানু কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। কারণ তার স্বামী খুব সম্মান করে ফারজানা বেগমকে। তাই নিজের স্বামীর কথা যা না শুনতে হয় তাই আপাতত চুপ থাকলেন। কিন্তু ইভানার প্রতি তার চাপা ক্ষোভ তৈরি হলো। যেই করেই হোক এই মেয়ের উপর প্রতিশোধ তিনি নেবেনই।

ইভানা কিছু ভাবল না আর। তার গ্রামে এসে কারো সাথে ঝগড়া করার মুড অন্তত নেই। তাই চুপচাপ রইল। কিছুক্ষণ পর গোসল করতেও চলে গেল।

ফাহিম উঠে এসে রহিম মিয়ার সাথে বাজারে চলে গেল একটু পর। রুবি ও রফিক দুই ভাই গোসল করতে পুকুরের দিকে যাচ্ছি। ইভানাকে কলপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইভানা এগিয়ে গিয়ে বলে,
‘এখানে তুমি কি করতাছ ভাবি?’

‘গোসল করতে এসেছিলাম। কিন্তু আমি তো নলকূপ কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানি না। আমাদের বাসায় তো আমি সাওয়ার দিয়ে গোসল করি।’

‘ওহ বুঝতে পারছি। তা তোমার এইহানে গোসল করবার দরকার নাই। আমাদের সাথে পুকুরে চলো৷ সবাই সাঁতার কা’ইটা গোসল করব।’

ইভানা ছোট থাকতে সুইমিংপুলে সাঁতার কা’টতে শিখেছিল৷ তাই সে আর আপত্তি করে না। ভাবে সবার সাথে পুকুরে গিয়ে গোসল করলে ভালোই হবে। আগে কখনো সে পুকুরে গোসল করেনি৷ তাই ভীষণ আগ্রহ হচ্ছিল তার। সে আর বেশি কিছু না ভেবে রুবি ও রফিকের সাথে পুকুরের দিকে রওনা দেয়।

৪৫.
পুকুরে যাওয়ার পথে রুবির দিকে ভালো ভাবে খেয়াল করে ইভানা। মেয়েটাকে দেখে ভীষণ মিশুকই মনে হয়। অন্তত নিজের মায়ের মতো নয় সে। শ্যামলা গড়নের রুবি বেশ চঞ্চলও সেটা বুঝতে বেগ পেতে হলো না ইভানার। রুবির কাছে কিছু সময় কথা বলেই বুঝতে পারল তার স্বভাব সম্পর্কে।

তবে রফিককে ভীষণ ইন্ট্রোভার্ট মনে হলো ইভানার কাছে। কারণ সে কারো সাথে তেমন কথা বলছিল না। চুপচাপ নিজের মতো থাকছিল।

রুবি একটি পেয়ারা গাছ দেখে নিজের সালোয়ারের কোমড়ে ওড়না পেঁচিয়ে সেখানে উঠে পড়ে। ইভানা অবাক হয়ে রুবির দিকে তাকিয়ে থাকে। গ্রামের মেয়েরা যে গাছেও চড়তে পারে সে সম্পর্কে ধারণা ছিল না ইভানার।

রুবি গাছ থেকে মিষ্টি পেয়ারা এনে ইভানার হাতে দিয়ে বলে,
‘খাইয়া দেখ ভালো লাগবে।’

ইভানা পেয়ারায় একটি কামড় দিয়ে দেখে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। কিছু সময়ের মধ্যেই তারা পুকুরের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। রফিক ও রুবি দ্রুত পুকুরে নেমে যায়। কিন্তু ইভানা পুকুরে নামতে ইতস্তত বোধ করছিল। কারণ পুকুরের নামার পথটা কাঁদায় পরিপূর্ণ এবং বেশ পিচ্ছিল। সকালের ঘটনা মনে পড়ে ইভানা তো আরো নামতে চাইছিল না।

রুবি ইভানাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে পুকুরে নামতে বলে। কিন্তু ইভানা বলে,
‘থাক, আমি নামবো না।’

রুবি আর জোরাজুরি করে না। নিজের মতো সাঁতার কা’টতে থাকে।

রাবেয়া বানুও কিছু সময় পর গোসল করার উদ্দ্যেশ্যেই পুকুর পাড়ে আসেন। ইভানাকে দেখতেই তার তখনকার অপমানের কথা মনে পড়ে যায়। ফলে ভীষণ রাগ জন্ম নেয় তার মনে। রাগের বশে প্রতিশোধস্পৃহা জেগে ওঠে তার মনে। তিনি ইভানাকে পেছন থেকে ধা’ক্কা দেন। ইভানা পুকুরের ঠিক কিনারাতেই দাঁড়িয়ে ছিল। আচমকা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় পুকুরের মধ্যে। হঠাৎ করে পুকুরে পড়ে যাওয়ায় তার চোখে মুখে পানি ঢুকে যায়। তবে পুকুরের কিনারায় পানি কম ছিল জন্য সে দ্রুতই নিজেকে সামলে নেন।

এতটুকুতে যেন রাবেয়া বানু শান্তি পান না। তাই তিনি দ্রুত পুকুরে নেমে যান। ইভানা বুঝতে পারে কেউ তাকে ধা’ক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলেছে এবং সেটা যে রাবেয়া বানু সেটাও সে বুঝতে পেরেছে। ইভানার মধ্যেও এবার প্রতিশোধস্পৃহা জন্ম নেয়৷ তাই রাবেয়া একটি অদ্ভুত কাজ করে বসে। রাবেয়া বানুর কাছাকাছি গিয়ে তার গ’লা ধরে বেশ কয়েকবার পুকুরে তাকে ডুবানি খাওয়ায়।

রুবি ও রফিক এই অবস্থা দেখে দ্রুত সেখানে ছুটে আসে। তারা এসে ইভানার হাত থেকে রাবেয়া বানুকে উদ্ধার করে। রাবেয়া বানু খুব রেগে যান। চেঁচিয়ে বলতে থাকেন,
‘তোমরা হগ্গলে বাড়িত চলো। আইজ এর একটা শেষ দেখে ছাড়মু আমি।’

ইভানাও বলে,
‘আমিও আপনাকে দেখে নিবো। আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে পু’কুরে ধা’ক্কা দিয়েছেন৷ তার জন্য এটুকু আপনার প্রাপ্য ছিল।’

৪৬.
বাড়িতে ফিরেই রাবেয়া বানু রহিম মিয়ার কাছে বিচার ঠুকে দেন ইভানার নামে। বলেন,
‘ঐ মাইয়াডা আমারে পু’কুরে ডুবাইয়া মা’ই’রতে চাইছিল। ওর একডা বিচার করেন।’

ফারজানা বেগম পাশেই ছিলেন। তিনি বলে ওঠেন,
‘আমি ইভানারে ভালো করেই চিনি। তুই নিশ্চয়ই আগে কিছু করছিস। নাইলে ও এমন করার মেয়ে না।’

ফাহিমও ততক্ষণে উপস্থিত হয় সেখানে। ফাহিমকে দেখামাত্রই ইভানা তার কাছে ছু’টে যায়। অতঃপর তাকে সব ঘ’টনা খুলে বলে। সব শুনে ফাহিম খুব রেগে যায়। রহিম মিয়া রাবেয়া বানুর গালে চ’ড় মেরে বলেন,
‘ওরা আমাগো কুটুম। আর তুমি রত বা’জে ব্যবহার করলা। ছি লজ্জায় আমার মাথা কা’টা যাইতাছে।’

ফাহিম বলল,
‘আপনি যা করেছেন তার জন্য আমার স্ত্রীর কাছে এক্ষুনি ক্ষমা চান।’

রাবেয়া বানু ক্ষমা চাইতে চান নি। কিন্তু রহিম মিয়ার চাপে পড়ে ক্ষমা চান। এরপর ফাহিম ইভানার কাছে এসে তাকে বলল,
‘কু’কুর আমাদের কা’মড়ালেই তাদের কা”মড়ানো যায় না ইভানা। হাজার হোক উনি তোমার থেকে বড়। তোমার ওনার সাথে এমন করা উচিৎ হয়নি৷ আমাদের কাছে আগে এসেই বিচার দিলে পার‍তে৷ তাই তুমিও ক্ষমা চাও ওনার কাছে।’

ইভানা ফাহিমের কথার অর্থ বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে নেয়। ফারজানা বেগম ততক্ষণাৎ শহরে ফিরে আসতে চান। কিন্তু রহিম মিয়ার অনুরোধে আর একটা দিন থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বারবার এত কাতর ভাবে অনুরোধ করছিলেন যে ফেলতে পারেন নি।


রাতের বেলা গ্রামে স্বভাবতই লোডশেডিং হয়। ঘরের মধ্যে গরম লাগায় ইভানা ও ফাহিম বাইরে আসে হাওয়া খেতে। বাইরে আসার আগে ফারজানা বেগম ইভানাকে ভালো করে মাথায় ঘোমটা দিতে বলেন। ইভানা তাই করে।

বাইরে এসে জোনাকি দেখে অনেক খুশি হয় ইভানা। সেগুলোকে ধরার চেষ্টা করতে থাকে। ফাহিমই নিজ হাতে আবদ্ধ করে একটা জোনাকিকে। অতঃপর ইভানার দিকে হাত দিয়ে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘এই নাও ইভাঞ্জনা। এটা তোমার জন্য।’

‘ইভাঞ্জনা এটা আবার কেমন নাম?’

‘সে প্রথম প্রেম আমার ইভাঞ্জনা।’

বলেই হালকা হাসে ফাহিম। ইভানাও হেসে দেয়।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখছিলেন রাবেয়া বানু। তিনি বেশ ক্রোধ নিয়ে বলেন,
‘আমাকে অনেক অপমান হইতে হইছে এদের জন্য। এবার তার এমন শোধ তুলব আজীবন মনে রাখবে৷ এদের খুব সোহাগ না? সব এবার বার করমু। বুঝিয়ে দিমু রাবেয়া বানু কি জিনিস।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here