#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ২২ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা ও ফাহিম দুজনে তৈরি হয়ে নিচ্ছে। এর পেছনে অবশ্য বড় একটা কারণও আছে। আজ তারা দুজনে ফারজানা বেগমের সাথে মিলে ফাহিমদের গ্রামের বাড়িতে যাবে দুদিনের জন্য। ফারহানেরও জরুরি কাজ থাকায় সে যেতে পারছে না।

ফারজানা বেগম তৈরি হয়ে এসে ফাহিমের কক্ষের সম্মুক্ষে এসে বললেন,
‘তোরা কি তৈরি হইছিস? সক্কাল সক্কাল বের হইতে হইবো আমাগো। নইলে দেরি হওন যাইবো।’

ফাহিম উত্তর দেয়,
‘হ্যা আম্মু। আমরা দুজনেই একদম রেডি।’

ফারজানা বেগম ফাহিমের দিকে তাকালেন। ফাহিম একটি সবুজ কালারের পাঞ্জাবি পড়েছে। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। নিজের ছেলেকে দেখে তিনি বলে উঠলেন,
‘মাশাল্লাহ।’

অতঃপর তার চোখ গেলো ইভানার দিকে। ইভানার দিকে তাকাতেই তার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল। কারণ ইভানার পরনে টপ আর জিন্স। ফারজানা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
‘হায়, হায়! এসব কি পরচ? এইসব পইড়া নতুন বউ গেরামে গেইলে সবাই তো নানান কু’কথা কইবো।’

‘কেন এসব পোশাক কি খা’রাপ?’

‘তুমি তো কোনদিন গেরামে যাওনি তাই জানো না। এমন পোশাক গেরামের লোকেরা ভালো চোখে দেখে না। তুমি একটা কাজ করো শাড়ি পইড়া লও।’

ইভানা ফাহিমের দিকে তাকালো। ফাহিমও ইভানাকে সম্মতি দিল। তাই ইভানা রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। অতঃপর ওয়ারড্রব থেকে একটি লাল রঙের সুন্দর শাড়ি বের করে পড়ে নিলো। কিছু দিন ধরে ইউটিউব দেখে প্রাকটিস করে সে শাড়ি পড়াও শিখে গেছে৷ তাই বেশি বেগ পেতে হয়নি। তবে এখন সমস্যা একটাই। শাড়ি পড়ে হাটতে গিয়ে যদি নিজেকে সামলাতে না পেরে হো’চট খেয়ে পড়ে যায় তাহলে মান ই’জ্জত কিছু আর বাকি থাকবে না। তাই ইভানা খুব সন্তপর্ণে হাটতে লাগল।

ধীরে পায়ে হেটে দরজা খুলে দিলো ইভানা। দরজা খুলেই ফাহিমকে দেখতে পেলো ইভানা। ফাহিমও ইভানার দিকে মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকায়। লাল শাড়িতে ভীষণই সুন্দর লাগছে ইভানাকে। তার দিক থেকে চোখ ফেরানোই মুশ’কিল হয়ে যাচ্ছে। ফাহিমের পক্ষে নিজেকে সামলানোই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ইভানা নিজের শাশুড়ীর উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
‘দেখুন তো আমাকে এখন ঠিক লাগছে কিনা?’

ফারজানা বেগম মৃদু হেসে বলেন,
‘হ, এখন তোমাকে একদম বউ বউ লাগতেছে।’

ইভানা খুশি হয়ে যায়। ফাহিম কিছু একটা মনে করে বলে,
‘দাঁড়াও এখনো একটা জিনিস বাকি আছে।’

ইভানা জিজ্ঞাংসু দৃষ্টিতে তাকায়। ফাহিম ইভানার কাছাকাছি এসে তার শাড়ির আঁচলটা তুলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দেয়। হালকা হেসে বলে,
‘এবার একদম পার্ফেক্ট লাগছে।’

ইভানা লজ্জা পেয়ে যায়। অতঃপর সবাই মিলে গ্রামের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।

৪৩.
ঢাকার অন্তর্গত মানিকগঞ্জ জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম কুসুমপুর। শহর থেকে দূরে এ যেন এক প্রশান্তির স্থান। গাছপালাতে পরিপূর্ণ গ্রামটি। শহরের দূষিত হাওয়ার বদলে এখানে প্রকৃতির নির্মল হাওয়া মিলবে।

এই গ্রামেই রয়েছে ফাহিমদের পৈত্রিক ভিটা। কয়েক ঘন্টার জার্নি শেষ করে ফাহিমরা সবাই কুসুমপুর গ্রামে এসে পৌঁছালো। গাড়ি থেকে নেমে গ্রামের কাচা রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগল সবাই। ইভানা এই প্রথম গ্রামে এসেছে। এর আগে বন্ধুদের মুখেই শুধু গ্রামের প্রশংসা শুনেছে। আজ সচক্ষে গ্রাম দেখে তার নিজেরও খুব ভালো লাগছে।

কিন্তু তার এই ভালো লাগা হঠাৎ করেই মিলিয়ে যায়। গ্রামের রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে কাঁদা হয়ে ছিল। ইভানা অসাবধনাবশত হাঁটতে গিয়ে এই কাঁদায় পা পিছলে পড়ে যায়। আশেপাশে কিছু বাচ্চারা খেলা করছিল। ইভানাকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে তারা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। ফাহিমও না হেসে পারে না। ফারজানা বেগম বিচলিত হয়ে বলেন,
‘আরে দেইখা চলবা তো। ইশ কি অবস্থা হইল। ফাহিম তুই দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া হাসতাছিস কেন? ওকে টেনে তুল।’

ফাহিম ইভানাকে তোলার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। ইভানাও প্রথমে ওঠার জন্য হাতটা ধরে। কিন্তু ফাহিম তাকে পড়ে যেতে দেখে হেসেছিল এটা মনে পড়তেই তার মনে প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে। তাই ইভানা ফাহিমের হাত ধরে হেচকা টান দেয়। যার ফলে ফাহিমও কাঁদায় পড়ে গড়াগড়ি খায়।

বাচ্চাগুলো আবারও জোরে শব্দ করে হাসতে থাকে। ফারজানা ইভানার এদের বাচ্চামো কাণ্ড দেখে মুখে আঁচল চেপে হাসেন। ফাহিম নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ায়। ইভানাও ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। ফাহিম রাগী স্বরে ইভানাকে ধমকে বলে,
‘হোয়াট দা হেল? কি ছিল এটা?’

ইভানা হালকা হেসে বলে,
‘আমাকে পড়ে যেতে দেখে হেসেছিলেন তাইনা? এটা ছিল তার #মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ।’

ফাহিমের খুব রাগ হয় ইভানার উপর। কিন্তু সে নিজের রাগ সামলে হাঁটতে থাকে। ফারজানা বেগম এগিয়ে এসে ইভানার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
‘তুমিও না! দিলা তো আমার ছেলেটাকে রাগিয়া! এহন রাগ কেমনে ভাঙ্গাও দেখমু।’

ইভানা মুচকি হেসে বলে,
‘আমি রাগ ভাঙাতে যাবো না। ওনাকে পারলে আরো শা’য়েস্তা করব। আমাকে পড়ে যেতে দেখে হেসেছেন।’

ফারজানা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বলেন,
‘তোমাগো নিয়া আর পারিনা।’

৪৪.
রহিম মিয়া বাড়ির আঙিনায় বসে বসে গাছ লাগাচ্ছেন। তাকে সাহায্য করছে তার স্কুলপড়ুয়া ছেলে রফিক।

অন্যদিকে তার স্ত্রী রাবেয়া বানু রান্নাঘরে বসে বসে ভাত-তরকারি রাধছেন। আচমকাই রাবেয়া বানু রহিম মিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
‘তোমার ঐ চাচাতো ভাইয়ের বউ আর পোলা কখন আইবে? আমি কিন্তু হগল্লের লগে রান্না করছি। যদি কেউ না আসে আর আমার খাবারগুলা নষ্ট হয় তাইলে একদম ভালা হবে না।’

রহিম মিয়া বিরক্ত হন নিজের স্ত্রীর কথায়। এইরকম কথাবার্তা বলার জন্যই নিজের স্ত্রীকে তার পছন্দ নয়। তিনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই ঘর থেকে ছুটে এলো তার বড় মেয়ে রুবি। রুবি এসেই রহিম মিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘আব্বা আমারে কিছু টাকা দেওতো। পাশের গেরামে বৈশাখী মেলা বইছে। আমার সব বান্দুবিরা যাইতেছে ঐদিকে। আমিও যামু।’

রহিম মিয়া বললেন,
‘আমার কাছে টাকা থাকে কহন? সব টাকা তো তোর আম্মার আচলে গোজা থাকে। যা তোর আম্মার থাইকা নে।’

রাবেয়া বানু মুখ বাকিয়ে বললেন,
‘এমন ভাব করতাছেন যেন আমি টাকার গাছ নিয়া বইসা আছি। আর এই মা’ইয়া তোর এতো মেলায় ঘোরার সাধ হইছে কেন বল তো? যা ঘরে যা পড়তে বয়। সামনে না তোর মেট্টিক পরীক্ষা। আগেরবার তো ফে’ল মা’রছস। এবার যদি পা’স করতে না পারস তাইলে ঘা’ড় ধইরা তোর বিয়া দিমু।’

রুবি নিজের মায়ের কথা শুনে ভেংচি কা’টে। এমন সময় বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে ফারজানা বেগম বলে ওঠেন,
‘রহিম আছ বাড়িতে?’

ফারজানা বেগমের গলা শুনে রহিম মিয়া ভীষণ খুশি হন। রহিম মিয়া খুব ছোট থাকাতেই তার বাবা-মা মা’রা যান। তারপর থেকে তার বড় চাচাই তাকে মানুষ করেন। তার বড় চাচার ছিল এক ছেলে দুই মেয়ে। ফারহানের বাবাই ছিল রহিম মিয়ার বড় চাচার ছেলে। তাই তিনি খুব শ্রদ্ধা করতেন তাকে। ফারজানা বেগমকেও অনেক সম্মান করেন তিনি। এই গ্রামে এখন তাদের একমাত্র আত্মীয় তিনিই।

রহিম মিয়া বসা থেকে উঠে সদর দরজার কাছে আছেন। ফারজানা বেগমকে দেখে খুশি হয়ে বলেন,
‘ভাবি আপনেরা আইয়া পড়ছেন। কি সৌভাগ্য আমার আপনেরা এই গরীবের ভিটায় পা রাখলেন।’

‘এগুলা আবার কেমন কথা? আমরা তো তোমার আপনজন। আমরা আইবো না তো কারা আইবো?’

‘তাও ঠিক, তাও ঠিক। আহেন ভেতরে আহেন।’

ফারজানা বেগম ফাহিম ও ইভানার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,
‘এদের চিনতে পারচো তো? এ হইলো আমার ছোড পোলা ফাহিম আর ওয় হইলো ওর বউ ইভানা।’

রহিম মিয়া বিস্ময়ের সাথে বললেন,
‘সেই কোন ছোটবেলায় তোমায় দেখছিলাম। তা তোমাগো এই অবস্থা কেন? কাঁদায় গা ভর্তি।’

ফারজানা বেগম বললেন,
‘সে আর বইলো না অনেক কাহিনি। তোমায় আস্তে আস্তে সব কমুনি।’

‘আইচ্ছা, রুবি মা এনাদের কলপাড়ে নিয়া যা তো।’

রুবি এগিয়ে আসে। রুবির সাথে ফাহিম ও ইভানা কলপাড়ের দিকে যায় পরিস্কার হতে। রহিম মিয়া ফারজানা বেগমকে প্রশ্ন করেন,
‘ভাবি আপনের বড় পোলা আইলো না?’

‘ও কিছু কাজে ব্যস্ত তাই আসতে পারে নি।’

‘ও, আচ্ছা। আপনে ভেতরে যান। গিয়ে আরাম করুম। রাবেয়া সবার জন্য শরবত নিয়া আইসো তো।’

রাবেয়া বানু বিড়বিড় করে বলেন,
‘আদিখ্যেতা যতো। ওনার বড়লোক ভাবি আর ভাইপো আইছে এহন আমার ওনাগো ফাইফরমাশ খাটতে হবে। আমাকে যেন দাসী পাইছে।’

বলেই বিড়বিড় করতে করতে সরবত নিয়ে আসেন তিনি।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here