#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ৩৯ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৩৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানাদের পুরো বাড়ি খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। হবে নাই-বা কেন? আজ তোহা ও রাফিদের এনগেজমেন্ট বলে কথা! তাই এত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে চারপাশ৷

অনেক অতিথিও ইতিমধ্যে এসে উপস্থিত হয়েছে। সবমিলিয়ে জমজমাট পরিবেশ।

ইভানা তোহার রুমে বসে আসে। তোহাকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক এসেছে। তারা খুব নিপুণতার সাথে সাজিয়ে দিচ্ছে তোহাকে। সাজগোজ শেষ হলে ইভানা তোহার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যান। তোহার সৌন্দর্য যেন আজ বহুগুণে বেড়ে গেছে। ইভানাকে নিজের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তোহা বলল,
‘এভাবে কি দেখছিস বলতো?’

‘তুই নিজেও জানিস না আপাই আজ তোকে কতটা সুন্দর লাগছে। আমি তো শুধু রাফিদ ভাইয়ার কথা ভাবছি। উনি বোধহয় তোকে দেখে পাগলই হয়ে যাবেন।’

‘তুই সবসময় আমাকে এভাবে বলিস কেন বল তো? আমার কিন্তু এসব একদম ভালো লাগে না।’

‘বিশ্বাস হচ্ছে না তো? তাহলে এই নাও আয়নায় দেখ নিজেকে।’

ইভানা তোহাকে নিয়ে আয়নার সম্মুখে এলো। তোহা নিজেকে দেখে অনেক অবাক হয়ে গেল। সত্যি ভীষণ সুন্দরী লাগছে তাকে। এটা তার শত্রুও অস্বীকার করবে না। তোহা নিজেই নিজের প্রতি মুগ্ধ হলো।

এসবের মধ্যে ইশরাত খাতুন তাদের রুমে চলে এলো। রুমে এসে তাড়া দিয়ে বললো,
‘তোহা তুই তৈরি তো? রাফিদরা সবাই এসে গেছে। তাড়াতাড়ি নিচে চল। এনগেজমেন্টের সময় তো হয়ে এলো।’

ইভানা উত্তর দিলো। বলল,
‘হ্যাঁ আম্মু, আপাই একদম তৈরি হয়ে গেছে। তুমি নিচে যাও আমি এক্ষুনি আপাইকে নিয়ে আসছি।’

ইশরাত খাতুন নিশ্চিন্ত হয়ে চলে গেলেন। তার যাওয়ার পরেই ইভানার ফোনে ফাহিমের কল এলো। ইভানা ফোনটা রিসিভ করে জিজ্ঞেস করল,
‘কতদূর আপনারা?’

‘এই তো প্রায় পৌঁছেই গেছি। এনগেজমেন্ট কি হয়ে গেছে? আসলে অনেকক্ষণ জ্যামে আটকে ছিলাম তো তাই লেট হয়ে গেল। তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না। আমি যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছে যাচ্ছি।’

‘না। লেট হয়নি। এখনো অনেক সময় আছে। আপনি ধীরেসুস্থে আসুন। আরো কিছু সময় বাকি আছে।’

ফাহিম কল রাখল। ইভানা তোহাকে বলল,
‘চল এখন নিচে যাই। আমাদের দ্রুত যেতে হবে। রাফিদ ভাই তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে শহিদ না হয়ে যায়।’

‘তোকে কিন্তু চ’ড় মা’রব।’

‘উফ, আপাই চল তো এখন।’

দুজনে মিলে নিচের দিকে রওনা দিলো।

৭৭.
ইভানা ও তোহা একসাথে নিচে নামলো৷ তারিকুল ইসলাম তাদের দুজনকে দেখে মৃদু হেসে বলল,
‘এই তো এসে গেছে ওরা।’

রাফিদ একপলক তোহার দিকে তাকালো। তোহাকে সত্যি অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। কিন্তু তাতে কি? মারিয়া রয়েছে তার মনজুড়ে। তোহাকে তো শুধু স্বার্থের জন্য লাগবে তার। নাহলে আর তার কি প্রয়োজন। এসব ভেবে আনমনে হেসে দিলো সে। এদিকে তোহা রাফিদের দিকে তাকিয়ে ভাবল হয়তো রাফিদ তাকে দেখেই হাসছে। সেও রাফিদের দিকে তাকিয়ে হাসি দিল। রাফিদ চোখ সরিয়ে নিল।

এমন সময় ফারহান ও ফাহিম চলে এলো তাদের বাড়িতে। তোহার এনগেজমেন্ট এর কথা শুনে ফারহানও চলে এসেছে। যদিও তার মনে অনুভূতি এখনো অবশিষ্ট আছে কিন্তু নিজেকে শক্ত করার জন্যই এখন সে এসেছে। কিন্তু এসে গিয়ে তো সে আরো বেশি অবাক হলো। কারণ তার নজর গিয়ে পড়ল রাফিদের দিকে। গতকাল রাফিদের সাথে দেখা হওয়া থেকে সকল ঘটনা তার মনে আছে। রাফিদকে দেখে তাই সে বলল,
‘এই ছেলেটা এখানে কি করছে? তাহলে কি এর সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তোহার? দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু ছেলেটা তো ভালো না। এই বিয়ে হলে তো সবথেকে বেশি ক্ষতি তোহারই হবে।’

তোহার কথা ভেবে ফারহান বলল,
‘না, আমাকে এই এনগেজমেন্ট টা যে করেই হোক আটকাতে হবে। তোহার এত বড় ক্ষতি আমি কোন ভাবেই হতে দেবো না। আমাকে সবকিছু সামলাতে হবে।’

নিজের ভাবনার মধ্যেই মগ্ন ছিল ফারহান। এমন সময় শুনতে পেল তারিকুল ইসলামের কথা। তিনি বললেন,
‘তোহা সামনে এগিয়ে এসো। রাফিদ অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে চলেছে৷ তুমি এসে এখানে দাঁড়াও, তোমাদের এনগেজমেন্ট টা হয়ে যাক।’

ফারহান কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। কোন উপায়ন্তর না দেখে সে ইভানার দিকে তাকাল। ইভানাই এখন কিছু করলে করতে পারে। তাই সে ইভানার কাছে গিয়ে বলল,
‘ইভানা একটু এদিকে এসো। তোমার সাথে জরুরি কথা আছে আমার।’

ইভানা বুঝল না কি এমন জরুরি কথা। তবুও ফারহানের সাথে বাইরে আসল। বলল,
‘যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। আমার আপাইয়ের এনগেজমেন্ট হবে।’

‘এই এলন এনগেজমেন্ট হওয়া ভালো হবে না। এটা আটকানো দরকার।’

‘কেন আটকাতে হবে? আপনার কথা কিছু বুঝছি না।’

‘ঐ ছেলেটা ভালো নয়।’

বলেই ফারহান গত কালের সব ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে ইভানা চিন্তায় পড়ে গেল৷ তার ফারহানকে বিশ্বাস করা উচিৎ কি না সেটাই বুঝছিল না। কারণ ফারহান তো তোহাকে ভালোবাসে। তাই এমনও হতে পারে যে তোহার বিয়ের আটকানোর জন্য মিথ্যা বলছে। ইভানা যে এমন কিছু ভাবছিল সেটা ফারহানও বুঝল। তাই সে বলল,
‘আমি জানি তুমি হয়তো আমাকে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছ না। কিন্তু আমি একদম সত্য বলছি। তুমি আমায় বিশ্বাস করো।’

ইভানা বলল,
‘প্রমাণ ছাড়া আমি কিছু করতে পারব না। তাছাড়া আমি বিশ্বাস করলেও বা কি? আব্বু আপাই কেউ বিশ্বাস করবে না।’

‘তাহলে কিছু একটা করো। তুমি কি চাও তোমার বোনের ক্ষতি হয়ে যাক?’

ইভানা ভাবনায় পড়ে গেল৷ ফারহান বলল,
‘ঠিক আছে, তুমি কিছু করতে না পারলে আমি যা করার করছি।’

বলেই ইভানাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত প্রস্থান করলো ফারহান। ইভানা বুঝল আজ বড় কিছু হতে চলেছে। ভয় হতে লাগল তার।

৭৮.
রাফিদ তোহার হাতে আংটি পড়াতেই যাবে এমন সময় ফারহান দ্রুতবেগে চলে এলো। এসেই রাফিদের হাত ধরে ফেলল। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই চমকে উঠল। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফারহান সজোরে থা’প্পর বসিয়ে দিল রাফিদের গালে। নাক ব’রাবর কয়েকটা ঘু’ষি দিয়ে বলল,
‘শ’য়তান ছেলে। তুই এভাবে একটা মেয়ের জীবন ধ্বংস করতে পারিস না।’

সবাই থম মে’রে তাকিয়ে রইল। তোহা চেচিয়ে বলল,
‘এসব হচ্ছেটা কি? আপনি আমার উডবিকে মা’রলেন কেন?’

ফারহান সবার সামনে সব সত্য কথা খুলে বলল। সব শুনে তোহা বলল,
‘আপনি আর কত মিথ্যা বলবেন? আমি জানি এই সব আপনার সাজানো নাটক। আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম জন্য এখন আপনি এভাবে রিভেঞ্জ নিতে চাইছেন। আমি আপনাকে একদম বিশ্বাস করি না।’

‘আপনি বিশ্বাস করুন তোহা আমি কাল নিজ চোখে এয়ারপোর্টে সব দেখেছি।’

‘বিশ্বাস আর আপনাকে কখনোই না।’

তারিকুল ইসলাম, হাশেম আলী, রাফিফের বাবা সহ উপস্থিত আরো অনেকে রেগে গেল ফারহানের উপর। হাশেম আলী বললেন,
‘আমার এক নাতনির সাথে অন্যায় করে তোমার শান্তি হয়নি এখন আমার আরেক নাতনির জীবন ন’ষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছ। এক্ষুনি বেরিয়ে যাও এখান থেকে।’

তারিকুল ইসলামও বললেন,
‘তুমি আমার মেয়ের ভাসুর হও। তাই আমি কোন অশান্তি চাইছি না। কিন্তু তুমি এমন করলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।’

ফাহিম ফারহানের কাছে এসে বলল,
‘ভাইয়া চল এখান থেকে অশান্তি করিস না।’

এমন সময় ইভানা সেখানে উপস্থিত হয়ে বলল,
‘তোমরা সবাই ওনাকে ভুল বুঝছ কেন? এমনো তো হতে পারে উনি সত্য বলছেন।’

তোহা রাগী সুরে বলল,
‘আমি চিনি ওনাকে। উনি সব মিথ্যা বলছেন। তুই সাফাই গাস না।’

বলেই তোহা রাফিদের সামনে হাত বাড়িয়ে বলে,
‘আপনি এক্ষুনি আমার হাতে আংটি পড়ান। আমি আপনাকে বিশ্বাস করি। এই এনগেজমেন্ট হবে।’

রাফিদ খুশি হয়ে আংটি পড়াতে গেল তোহার হাতে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here