#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ৪১(অন্তিম) #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৪১(অন্তিম)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা নিজের বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে ফিরে এলো। ফাহিমকে ছাড়া থাকা আর তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই চলে এলো। ফাহিম খুব খুশি হলো ইভানা ফিরে আসায়।

তবে নিজের খু্শি প্রকাশ না করে ইভানাকে বলল,
‘এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে? আরো কিছুদিন থেকে আসতে পারতে।’

‘আপনাকে ছাড়া থাকা আর সম্ভব ছিল না৷ খুব মিস করছিলাম যে।’

ফাহিম স্মিত হাসে। ইভানা মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখে। ফাহিম ইভানাকে বলে,
‘তুমি পড়াশোনায় মন দাও। এতদিন তো পড়াশোনা একদম স্টপ ছিল। এখন আবার শুরু করতে হবে।’

ইভানা মাথা নাড়ালো।

অতঃপর ফাহিম ও ইভানা দুজনে মিলে নিজেদের রুমে গেল।

★★★
ফারহানের সাথে আজ একটি কফিশপে দেখা করতে এসেছে তোহা। সেদিন যখন ফারহান তাকে বিয়ের প্রশ্ন করেছিল তখন তোহার উত্তর ছিল,
‘দেখুন, আমরা এখনো একে অপরকে সেভাবে চিনি না। তাই এত হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাইনা৷ বিয়ে তো সারাজীবনের ব্যাপার। তার থেকে বরং একটা কাজ করি৷ আপাতত কয়দিন আমরা একসাথে মিশি, একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করি৷ তারপর যদি মনে হয় আমরা একে অপরের জন্য পারফেক্ট তাহলে নাহয় সিদ্ধান্ত নেব।’

তোহার প্রস্তাবটা পছন্দ হয় ফারহানের। তাই ফারহান মেনে নেয় তোহার সব কথা। তারপর আজকে কফিশপে দেখা করতে বলে। তোহা রাজি হয়ে যায়।

বর্তমানে ফারহান ও তোহা সামনাসামনি বসে আছে৷ কেউই কোন কথা বলছিল না৷ ফারহান নীরবতা ভঙ্গ করে বলে,
‘কেমন আছ?’

‘দেখতেই পাচ্ছেন।’

এরপর কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। ফারহান খাবার অর্ডার দেয়। দুজনে মিলে খেয়ে নেয়। অতঃপর তোহা বলে,
‘তাহলে এখন আমি চলি৷’

ফারহান আটকালো তোহাকে। বলল,
‘কাল আবার দেখা করি?’

‘কালকের টা কাল দেখা যাবে।’

ফারহানের মন খারাপ হয়ে গেল। তোহাকে পাওয়ার ইচ্ছা যেন ক্ষীণ হয়ে আসছিল তার জন্য। এরমধ্যে আশার আলো জ্বালিয়ে তোহা বলে ওঠে,
‘আমরা আবার ঠিকই দেখা করব। একমাস একে অপরকে সময় দেওয়া উচিৎ আমাদের। তারপর নাহয় দেখা যাবে আমাদের ভবিষ্যৎ কি হয়।’

ফারহান মাথা দুলালো।

৮১.
সময়ের স্রোত বয়ে এসেছে কিছুদূর। দুই মাস যেন দেখতে দেখতে চলে গেছে সবার জীবন থেকে।

ইভানা এখন আগের থেকে পড়াশোনায় মনযোগী হয়েছে। ভালো রেজাল্ট নিয়ে সে অনেক বেশি আশাবাদী। ফাহিমও ইভানার এই উন্নতিতে খুশি হয়েছে।

এদিকে ফারহান ও তোহার জীবনেও বসন্ত এসে গেছে। একমাসে তারা একে অপরের জন্য যে পার্ফেক্ট সেটা বুঝে গেছে। তোহা এখন ফারহানের প্রেমে একদম হাবুডুবু খাচ্ছে। ফারহান তো আগে থেকেই তোহাকে পছন্দ করে। দুজনে তাদের পছন্দের কথা পরিবারে জানিয়েও ছিল। প্রথমদিকে ইভানার পরিবার একটু আপত্তি করেছিল৷ যার প্রধান কারণ ইভানার সাথে ফারহান যা করেছিল সেটা৷ এছাড়া দুই বোনকে এক বাড়িতে বিয়ে দেওয়া নিয়েও তাদের আপত্তি ছিল৷ কিন্তু তোহা ও ইভানা মিলে সবাইকে বুঝিয়েছে। যার ফলে এখন কারো কোন আপত্তি নেই বিয়েতে।

বিয়ের দিন তারিখও ঠিক হয়ে গেছে। আজকে তাদের গায়ে হলুদ, আগামীকাল বিয়ে।

তোহার বিয়ের কিছুদিন আগেই ইভানা চলে এসেছে তার বাপের বাড়িতে। নিজের বোনের বিয়ের সব ইভেন্ট সুন্দরভাবে উপভোগ করতে চায় সে।

গায়ে হলুদ উপলক্ষে হলদে রাঙা একটি শাড়ি পড়েছে তোহা। ইভানা তোহার একটি পিক তুলে নিল৷ অতঃপর সেই পিক পাঠিয়ে দিল ফারহানের ফোনে। তোহার ছবি দেখে ফারহানের চোখ জুড়িয়ে গেল। কত সুন্দর লাগছে তার প্রেয়সীকে! ফারহান মুগ্ধ না হয়ে পাড়ল না।

★★
আজকে ফারহান ও তোহার বিয়ে। বেজে চলেছে বিয়ের সানাই। তোহা ও ফারহানকে মুখোমুখি বসানো হয়েছে। কাজি ইতিমধ্যে বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছে। কবুল বলতে বললে তোহা একটু সময় নিয়ে কবুল বলে নিলো। আর ফারহান তো বিন্দুমাত্র সময় ন*ষ্ট না করে কবুল বলল।

এভাবে সম্পাদন হয়ে গেল বিয়ে। বিয়ের পর এলো বিদায়ের পালা। তোহা খুব বেশি কাঁদলো না৷ শুধু দুফোটা অশ্রু বিসর্জন দিল। যা দেখে ইভানা মজা করে বলল,
‘তুই মেকআপ ন*ষ্ট হওয়ার ভয়ে কাঁদছিস না। তাই না আপাই?’

তোহাও কম কিসে। সেও বললো,
‘আমি তোর মতো ছিঁচকাদুনে নই, যে কেঁদে জলের বন্যা বানিয়ে দেব।’

এভাবে দুইবোনের মজায় মজায় সময়গুলো চলে গেল। এখন দুই বোন দুই জা হয়ে একই বাড়িতে থাকবে!

৮২.
দেড় বছর পর,

ইভানা দাঁত দিয়ে হাত কা’মড়ে বসে আছে। উত্তেজনার পা’রদ জমেছে তার মনে। যা ভীষণ স্বাভাবিক ছিল!

আজ তার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট আসবে। দীর্ঘ দুই বছর মন দিয়ে পড়েছে সে। অতঃপর পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা যে খা’রাপ হয়েছে সেটা নয়। অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েছে সে। রেজাল্টও ভালো আসার কথা। তবুও ইভানার মন থেকে চিন্তারা দূর হচ্ছে না।

ইভানাকে অযথা চিন্তা করতে দেখে তার পাশে বসে থাকা তোহা বলল,
‘এত চিন্তা করিস না বোন। দেখিস রেজাল্ট অনেক ভালো আসবে।’

ফারজানা বেগমও বলে,
‘হ চিন্তা করিও না। আল্লাহর উপর ভরসা রাইখো। ভালো কিছুই হবে ইনশাআল্লাহ।’

ইভানাও নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে তার রেজাল্ট ভালো আসবে। কিন্তু চিন্তা দূর হলে তো!

এরমধ্যে ফাহিম থমথমে মুখে ড্রয়িংরুমে চলে আসে। ইভানা ফাহিমের এমন মুখ দেখে কেঁদেই দেয়। বলে,
‘আপনি তো আমার রেজাল্ট দেখতে গেছিলেন। রেজাল্ট কি ভালো হয়নি?’

ফাহিম চুপ থাকে। ইভানার কান্নার গতি বাড়তে থাকে। তোহা, ফারজানা বেগম সবাই তাকে শান্তনা দিতে থাকে। তোহা বলে,
‘কোন ব্যাপার না বোন। আমি জানি তুই চেষ্টা করেছিলি। রেজাল্ট ভালো হয়নি তো কি হয়েছে, তোর পড়াশোনা থেমে থাকবে না।’

ফারজানা বেগমও বলেন,
‘তুমি এহন এই বাড়ির বউ। পড়াশোনা যে সব তা তো নয়। মন দিয়া সংসার করো।’

সবার এমন অভিব্যক্তি দেখে ফাহিম হেসে ফেলে। সবার নজর তার দিকেই যায়। ফাহিম হাসিমুখে ইভানার কাছে এগিয়ে এসে তার চোখের জল বলে,
‘কষ্ট পেও না ইভানা। তোমার রেজাল্ট খা’রাপ আসে নি। তুমি গোল্ডেন A+ পেয়েছ।’

ইভানা খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। বসা থেকে লা’ফিয়ে উঠে বলে,
‘ইয়েস, আমি সফল হয়েছি। সবাইকে দেখিয়ে দিতে পেরেছি যে আমিও পারি। যারা বলেছিল আমার দ্বারা কিছু হবে না ভালো রেজাল্ট করে তাদের থেকে #মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ আমি নিতে পেরেছি। আজকে আমি সফল।’

ইভানা মনে করে তার প্রতিটি রাতজাগা পরিশ্রমের কথা। অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ সে এই সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।

ইভানার এই সাফল্যে খুশি সবাই। তোহা ইভানাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘তুই পেড়েছিস বোন। আমি খুব খুশি। আব্বু আম্মু এই কথা শুনলে কত খুশি হবে।’

তখনই ইশরাত খাতুন ও তারিকুল ইসলাম বাড়িতে চলে আসেন। মূলত ফাহিমই তাদের ডেকে এনেছে। তাদেরকে দেখেই ইভানা ছুটে যায়। নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘আমি পেরেছি আব্বু। তোমার ইভানা গোল্ডেন A+ পেয়েছে।’

‘আমি জানি মা। ফাহিম বলেছে। আমি খুব খু্শি। আমি জানতাম তুমি পারবে। আজ আব্বু বেঁচে থাকলে কত আনন্দ পেতেন।’

নিজের দাদার কথা মনে করে কষ্ট পায় ইভানা। ছয় মাস আগেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আজ বেঁচে থাকলে তিনিই সবথেকে বেশি খুশি হতেন এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

ইশরাত খাতুনও মেয়েকে বুকে টেনে নেন। ফারজানা বেগম তো পারেন না আনন্দে নাচতে শুরু করেন। তিনি ফাহিমকে বলেন,
‘যা গিয়া মিষ্টি নিয়া আয়। আমার বৌমা এত ভালো রেজাল্ট করেছে সেটা গোটা এলাকায় জানামু। হগগলরে মিষ্ট খাওয়ামু। বেয়াই বিয়ান আপনারাও বসেন। ‘

এরমধ্যে ফারহানও নিজের ঘর থেকে বাইরে আসে। ইভানার রেজাল্ট সেও শুনেছে। ইভানাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলে,
‘তোমার রেজাল্ট শুনলাম খুব খুশি হয়েছি।’

ইভানা প্রতিত্তোরে স্মিত হাসি দেয়। জয়ের হাসি। কিছু মানুষের থেকে এভাবেই প্রতিশোধ নেওয়া যায়। যেই লোকটা একসময় মেট্রিক ফেল বলে অপমান করেছিল আজ তিনিই ইন্টারে ভালো রেজাল্টের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।

এত সবকিছুর মাঝে ফাহিম বলে,
‘ইভানা এখানেই কিন্তু সব শে’ষ নয়। বরং এখান থেকেই তোমার ল”ড়াই শুরু। তুমি তো জানো আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন! এত ভালো রেজাল্টের পরেও এসএসসির রেজাল্টের কারণে তুমি ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে না। তাই আমি ঠিক করেছি তোমায় নিয়ে লন্ডনে যাবো। আমি স্কলারশিপ পেয়েছি তুমিও নাহয় লন্ডনের কোন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবে। এভাবেই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যাবে। #মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ নেওয়া যে এখনো বাকি!’

ইভানা স্মিত হাসে। সত্যি এখন তার নতুন লড়াই শুরু।

✨সমাপ্ত ✨
[গল্পটা অবশেষে শেষ করে দিলাম। দীর্ঘ দেড় মাসের জার্নি ছিল। আজ শেষ পর্ব দিতে গিয়ে আমি নিজেও অনেক ইমোশনাল হয়ে গেছি। ইভানা ফাহিমকে নিয়ে আর লেখা হবে। গল্পটায় এত আপনাদের এত ভালোবাসা পাবো ভাবিও নি। আমি চাইলে গল্পটি আরো বড় করতে পারতাম কিন্তু কাহিনি যে শেষ! তবে ইভানার সংগ্রাম চলবে। সে জীবনে সফল হবে এই আশা আমার। এই ইভানা কিন্তু গল্পের ইভানা নয়। সমাজে ইভানার মতো এমন অনেকে আছে যারা হয়তো পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করে ভেঙে পড়ে। তাদের অনুপ্রাণিত করার জন্যই আমি এই গল্পটা লিখেছি৷ যারা এমন আছেন তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলব, ইভানার মতো চেষ্টা করুন আপনারাও সফল হবেন ইনশাআল্লাহ ✨ সবশেষে সকলকে বলব আজ শে’ষ দিনে সুন্দর মন্তব্য করুন ❤️ খুব শীঘ্রই নতুন গল্প নিয়ে ফিরছি। সেখানেও কিন্তু আপনাদের এমন ভালোবাসা চাই। আল্লাহ হাফেজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here