#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ২৪ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা ও ফাহিম বসে বসে গল্প করছিল। আজকেই তাদের গ্রাম থেকে শহরে ফিরে যাওয়ার কথা। তাই আজ শে’ষবারের মতো গ্রাম ঘুরে দেখতে চায় ইভানা। ফাহিম ইভানার এই ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্য বলে,
‘চলো আজ আমি তোমাকে গ্রাম ঘুরিয়ে আনি।’

ইভানা তো ভীষণ খুশি হয়ে যায়। তবে সে যদি জানতো কিছু সময়ের মধ্যেই তার এই খুশি মিলিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তাহলে হয়তো এত খুশি সে হতে পারতো না।

ইভানা ও ফাহিম হাটতে হাটতে একটি পুরাতন অশ্বথ গাছের সামনে এসে দাড়ালো। কিছু বাচ্চা গাছের সাথে ঝুলন্ত একটি দোলনায় দোল খাচ্ছিল। ইভানার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে ব্যাপারটা। আগে সে কখনো এরকম গাছের সাথে ঝুলন্ত দোলনা দেখে নি। তারও বেশ ইচ্ছা করে এখানে দোল খেতে। ফাহিম হয়তো ইভানার এই মনোভাবটা ধরতে পারে। তাই ইভানাকে প্রশ্ন করে,
‘তুমি কি দোলনার দোল খেতে চাও?’

ইভানা কি উত্তর দেবে সেটা ঠিক করতে সময় নেয়। যদিও তার দোল খাওয়ার ইচ্ছা ছিল তবে মনে মনে একটু ভয়ও হয়৷ যদি পড়ে টড়ে যায় তাহলে কি হবে। ইভানাকে চুপ থাকতে দেখে ফাহিম বলে,
‘তুমি চাইলে আমি তোমাকে দোল দিতে পারি।’

ফাহিমের কথা শুনে সহসাই ইভানার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আর বলে,
‘আমি দোল খেতে চাই।’

ফাহিম ঠোট প্রসারিত করে হাসে। অতঃপর দোলনায় বসে থাকা বাচ্চাদেরকে বলে তাদের হাতে কিছু চকলেট তুলে দেয়। যার কারণে তারা ইভানাকে দোল খেতে দিতে রাজি হয়।

ইভানা খুবই আগ্রহের সাথে দোলনায় গিয়ে বসে। ফাহিমও এগিয়ে আসে। সে প্রথমে মৃদুভাবে ধা’ক্কা দিতে থাকে। ইভানা এতে খুব বেশি মজা পাচ্ছিল না৷ তাই সে ফাহিমের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আপনার শরীরে কি জোর নেই? একটু জোরে ধা’ক্কা দিতে পারেন না?’

ফাহিম এতক্ষণ ইভানার ভালোর জন্যই আস্তে ধা’ক্কা দিচ্ছিল। যাতে সে ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে না যায়। কিন্তু ইভানার মুখে এমন কথা শুনে তার বেশ রাগ হয়। সেই জোরে ধা’ক্কা দিতে থাকে। ইভানার এবার প্রাণ যায় যায় দশা। খুব ভয় করতে থাকে তার। ফাহিমকে তখন ওভাবে বলায় এখন বেশ পস্তাতে থাকে সে। ইভানা এবার কাতর স্বরে বলে,
‘প্লিজ থামান। আমি আর পারছি না৷’

‘তুমি তো বলেছিলে আমার শরীরে নাকি জো’র নেই। তাহলে এখন এমন বলছ কেন?’

ইভানা পারে তো কেদেই দেয়। ফাহিম ইভানার অবস্থা বুঝতে পেরে দোলনা দোলানো থামিয়ে দেয়। মৃদু হেসে বলে,
‘এটা ছিল আমার #মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ।’

৪৭.
রাবেয়া বানু ঘরে বসে বসে পান চিবোচ্ছিলেন৷ তিনি ভাবছিলেন এতদিন ধরে তার তৈরি করা পরিকল্পনার কথা। ছোট বেলা থেকেই বেশ লো*ভী প্রকৃতির মানুষ রাবেয়া বানু। চেয়েছিলেন কোন বড়লোক বাড়িতে বিয়ে করতে। কিন্তু তার বিয়ে হলো গ্রামের এক সাধারণ কৃষকের সাথে। এ নিয়ে তার আফসোসের শে’ষ নেই। এরপর তিনি ভাবলেন নিজে পারেন নি তো কি হয়েছে? নিজের মেয়েকে কোন বড়লোক ঘরে বিয়ে দেবেন। আর এইজন্য তিনি টা’র্গেট করেন ফারজানা বেগমের ছেলেদের।

তাই প্রথমে তাদের গ্রামে আসার কথা শুনে খুব খুশি হন। কিন্তু যখন জানতে পারেন ফারজানা বেগমের ছেলে বিবাহিত তখন তার আশা মাটি হয়ে যায়। সেই রাগ থেকে তিনি ইভানার সাথে খা’রাপ ব্যবহার করেন। এতসব কাহিনি তিনি এইজন্যই ঘটিয়েছেন। তবে এখন তার মাথায় অন্য কথা ঘুরছে। ফারজানা বেগমরা এখন গ্রাম থেকে গেলে যে আর কখনো এখানে আসবে না সেটা বুঝতে আর বাকি নেই তার। তাই যা করার আজই করতে হবে। হোক না ফাহিম বিবাহিত, তাতে তার কোন সমস্যা নেই। তার তো নিজের মেয়েকে বড়লোক ছে’লের ঘা’ড়ে ঝুলিয়ে দিতে পারলেই শান্তি। তাই খুব জ’ঘন্য একটি পরিকল্পনা করে নিয়েছেন তিনি।

রুবি ঘরে ঢুকতেই রাবেয়া বানু বলে উঠলেন,
‘তোকে যা কইছি মনে আচে তো? কোন ভুল যেন না হয়।’

রুবি অসহায় স্বরে বলে,
‘এসব না করলে হয়না আম্মু? তুমি এমন ক্যান করচ? আমার মন সায় দিচ্ছে না।’

‘তুই একদম তোর বাবার মতো গা’ধা হইছোস৷ নিজের ভালা চাইলে আমার কথা শোন। রাজরাণী হয়ে থাকতে পারবি।’

রুবি মিশুক প্রকৃতির হলেও সেও তার মায়ের মতো লোভীই হয়েছে। লোভ মানুষকে অ’ন্ধ করে দেয়৷ তাই এখন রাবেয়া বানু ও রুবি বুঝতে পারছে না তারা যেটা করতে চলেছে সেটা অন্যায়। এর ফল কখনো ভালো হতে পারে না।

৪৮.
সবাই শহরে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এমন সময় রাবেয়া বানু এসে ফারজানা বেগম ও ইভানার সামনে এসে ন্যাকা’কান্না করে বলে,
‘আমার অনেক বড় ভুল হইয়া গেছে আমারে ক্ষমা কইরা দেন।’

রাবেয়া বানু এভাবে নানা নাটক করেন। ফলে ফারজানা বেগম ও ইভানার মন গলে যায় এভাবে তারা ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর পরিস্থিতি অনুকূলে বুঝে রাবেয়া বানু বলে ওঠেন,
‘আইজ তো চইলাই যাইবেন। চলেন আমার লগে যাওয়ার আগে গেরাম টা ঘুইরা লন।’

তারা আর আপত্তি করে না। ফারজানা বেগম ও ইভানা মিলে রাবেয়া বানুর সাথে গ্রাম ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে।

ফাহিম তখন ঘরের মধ্যেই শুয়ে ছিল। আচমকা রুবি ফাহিমের ঘরে ঢুকে যায়। ফাহিম কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর নিজের সালোয়ারের হা’তা এবং অংশ ছি’ড়ে। ফাহিম হতভম্ব হয়ে যায়। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুবি চিৎকার করা শুরু করে। রুবিদের বাড়ির পাশেই বিভিন্ন জমি রয়েছে। রুবির চিৎকার শুনে সেখানে কর্মরত কিছু কৃষক ছুটে আসে। রুবি সুযোগ বুঝে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। ইভানা, ফারজানা বেগম, রাবিয়া খাতুনও ততক্ষণে ছুটে এসেছেন।

রুবি সবার সামনে নাটক করে বলতে থাকে,
‘ফাহিম ভাইয়া আমারে একা পা’ইয়া আমার সাথে ন”ষ্টামি করার চেষ্টা করছে।’

সবাই ক্ষে’পে যায় ফাহিমের উপর। ফারজানা বেগম বলে ওঠেন,
‘আমার পোলা এমন কিছু কইরতে পারে না।’

ইভানাও তালে তাল মেলায়। বলে,
‘আমিও আমার স্বামীকে বিশ্বাস করি।’

রাবেয়া বানু বলেন,
‘আমার মাইয়ার এতবড় সর্ব’না’শ কইরা ঐ পোলা রেহাই পাইবো না। তোমরা হগ্গলে সালিশ ডাকো। তারপর বিচার হইবো।’

গ্রামে সা’লিশ বসে। সেখানে রাবেয়া বানু ও রুবি যথাসম্ভব নাটক করে। রহিম মিয়াও তাদের এই নাটক বিশ্বাস করে এবং ফাহিমকে দো’ষী ভাবে।

ফাহিম সালিশের মাঝেও নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে। কিন্তু তখন যেসব কৃষক উপস্থিত ছিল তাদের স্বাক্ষীর কারণে ফাহিমের কথার আর দাম থাকে না। কিন্তু ফারজানা বেগম ও ইভানা তখনো ফাহিমের উপর বিশ্বাসে অটল ছিল।

সালিশে পুলিশ ডাকার কথা উঠলে রাবেয়া বানু বলে ওঠেন,
‘আমার মাইয়ার যা সর্ব’না’শ হওনের তা তো হইয়াই গেছে। এহন থানা পুলিশ কইরা কি হইবো? কেউ কি আর আমার মাইয়ারে বিয়া করবো?’

গ্রামের একজন মাতব্বর জানতে চাও,
‘তাইলে আপনে কি চান?’

রাবেয়া বানু নিঃসংকোচে বলেন,
‘এই পোলারে আমার রুবিরে বিয়া করা লাগবো।’

ফাহিম সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বলে ওঠে,
‘অসম্ভব। আমি বিবাহিত। আমি ইভানাকে ভালোবাসি৷ আর আমি জানি আমি নির্দোষ। তাই কাউকে ভয় করিনা। আপনারা পুলিশ ডাকুন। আমি থানায় যেতে রাজি তবু বিয়ে করবোনা।’

ইভানা পরিস্থিতি বুঝতে পারে। থানা পুলিশ হয়ে গেলে ব্যাপারটা অনেক বিশ্রী রূপ ধারণ করবে। তাই ইভানা ফারহানের কানে কানে গিয়ে বলে,
‘আপনি রুবিকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যান। আর বাকিটা আমার উপর ছেড়ে দিন। আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে নির্দোষ প্রমাণ করবো এবং এই বিয়েটাও হতে দেবো না।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here