#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ২১ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সকালে চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে ফাহিমের বুকে আবিষ্কার করল ইভানা। তার মনে পড়ে গেলো গতকাল রাতের মধুর স্মৃতি। লজ্জায় নুইয়ে গেলো। ফাহিমের ঘুমও ভেঙে গেলো। ইভানার দিকে মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। ইভানা বলল,
‘আমাকে ছেড়ে দিন। অনেক বেলা হয়ে গেছে। কলেজে যেতে হবে।’

ফাহিম বাধন হালকা করে বলে,
‘ঠিক আছে চলো৷ আজ আমি তোমাকে কলেজে পৌঁছে দেব।’

‘আপনি দেবেন?’

‘হ্যাঁ, কেন? দিতে পারিনা নাকি?’

‘না, আমি সেটা বলছি না।’

ইভানা বিছানা থেকে উঠে ওয়ারড্রব থেকে নিজের ড্রেস বের করে নেয়। অতঃপর শাওয়ার নিতে চলে যায়। ইভানা শাওয়ার নিয়ে বেরোনোর পর ফাহিমও শাওয়ার নিতে চলে যায়।

দুজনে ব্রেকফাস্ট করতে নিচে নামে। ব্রেকফাস্ট শেষ করে ফাহিম ইভানাকে বলে কলেজের জন্য তৈরি হতে। ইভানা ফাহিমের কথামতো রুমে যায়। রুমে গিয়ে কলেজের ড্রেস পড়ে তৈরি হয়ে নেয়।

তৈরি হয়ে নিচে চলে আসে ইভানা। নিচে নামতেই সে দেখে ফারহান ও ফাহিম কথাবার্তা বলছে। ফাহিম যখন ফারহানকে বলে সে ইভানাকে নিয়ে কলেজে যাবে সেইজন্য ক্যাব বুক করছে তখন ফারহান বলে ওঠে,
‘ক্যাব বুক করতে হবে কেন? আমি তো এখন বাড়িতে আছি। ৯ টার সময় বের হবো৷ তুই বরং আমার গাড়িটা নিয়ে যা।’

ফাহিম কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইভানা বলে ওঠে,
‘না, থাক। তার কোন দরকার নেই। আমরা ক্যাবে করেই যেতে পারবো। আপনার গাড়ি লাগবে না।’

ফারহান বেশ অপমানিত বোধ করল। তবে এ নিয়ে কোন কথা বলল না৷ ফাহিম ইভানাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
‘আচ্ছা, চলো। আমরা ক্যাবে করেই যাবো।’

ইভানা ফাহিমের সাথে চলে যায়। বাড়ির বাইরে এসে ইভানা ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনার ভাইয়ার সাথে ওভাবে কথা বলায় আপনি রাগ করেন নি তো?’

‘রাগ তো করেছি একটু। তবে তুমি মানা না করলেও আমি মানা করে দিতাম। কারণ তোমার আত্মসম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমার। তবে এত রূঢ়ভাবে কথা বলা তোমার উচিৎ হয়নি। উনি কিন্তু তোমার ভাসুর হন।’

ইভানা নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে বলে,
‘হুম। আপনি ঠিক বলেছেন। অতীতে যা হওয়ার হয়েছে সেই নিয়ে বর্তমান সম্পর্ক গুলো খারাপ করা ঠিক না।’

‘এই তো। তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতী আর বুঝদার মেয়ে। কত সহজে সবকিছু বুঝে যাও।’

ইভানা ফাহিমের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে বেশ গর্ববোধ করে। এরমধ্যে ক্যাব চলে এলে তারা ক্যাবে করে কলেজের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।

৪১.
তোহা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে সকালে বাড়ির গাড়ি নিয়েই মেডিকেল কলেজের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে হঠাৎ গাড়িটি ন*ষ্ট হয়ে যায়। তাই এখন বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাকে। গাড়ির ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে,
‘গাড়ির সমস্যা কি ঠিক হলো?’

‘না ম্যাডাম। সমস্যাটা অনেক টাই গুরুতর। আমি দেখি আশেপাশে কোন মেকানিক পাওয়া যায় কিনা।’

তোহা নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকায়। তার হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে। যদি সেটা মিস হয়ে যায় তাহলে অনেক লস হবে। তাই তোহা সেই ক্লাসটা মিস করতে চাইছে না। তোহা আর কালক্ষেপণ করতে চায় না বিধায় ড্রাইভারের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তুমি মেকানিক ডেকে গাড়িটা ঠিক করার ব্যবস্থা করো। আমি দেখি কোন সিএনজি বা রিক্সাতে করে যাই৷ তাছাড়া আর উপায় নেই৷ আমার ক্লাসের টাইম হয়ে যাচ্ছে।’

তোহা রাস্তার এক পাশে এসে দাঁড়ায়। কোন সিএনজি বা রিক্সার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। এমন সময় সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল ফারহান। তোহাকে এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো সে। গাড়িটা থামিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। অতঃপর এগিয়ে এসে তোহাকে বলল,
‘আপনি ইভানার বড় বোন না? এখানে কি করছেন?’

ফারহানকে দেখে তোহা ভীষণ রেগে গেল। এই লোকটাকে একদম পছন্দ নয় তার। এই লোকটার জন্য তার বোন ও পরিবার কি রকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল সেটা ভেবেই রাগ উঠে তার মনে। তাই তোহা ফারহানের সাথে কথা বলার আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু পরপর বেশ কয়েকবার ফারহান একই প্রশ্ন করায় তোহা বেশ রুঢ় ভাবে বলে,
‘আমার গাড়ির মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই কারণে আমি এখানে দাঁড়িয়ে কোন রিক্সা বা সিএনজির অপেক্ষা করছি।’

ফারহান তোহার দিকে তাকালো। তার পরণে সাদা এপ্রোণ। দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে মেডিকেলে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে। ফারহান তোহাকে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি ডিএমসিতে যাবেন তাই তো?’

তোহা বিরক্তির সাথে বলে ওঠে,
‘হুম। আপনি কেন জানতে চাইছেন?’

‘আমিও ঐদিক দিয়েই যাবো। আপনার যদি কোন অসুবিধা না থাকে তাহলে আমি আপনাকে ড্রপ করে দিতে পারি।’

‘আমার অসুবিধা আছে। আমি আপনার সাথে যেতে ইচ্ছুক নই।’

‘ভেবে চিন্তে কথা বলুন। আজ কিন্তু সিএনজি আর রিক্সার ধর্মঘট চলছে।’

তোহা আর কোন উপায় খুঁজে পেলো না। গাড়ি ঠিক হওয়ার কোন নাম নেই,এদিকে ধর্মঘট চলছে আবার তাকে সঠিক সময় ডিএমসিতে ক্লাস করতে পৌছাতে হবে। তাই কোন উপায় না পেয়ে সে ফারহানকে বলে,
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আমাকে ডিএমসিতে ড্রপ করে দিন।’

ফারহান মৃদু হাসে। এ যেন বিজয়ের হাসি। অতঃপর তোহাকে নিজের গাড়িতে করে ডিএমসিতে ড্রপ করে দেয়। সেখানে পৌছানো মাত্রই তোহা দ্রুতবেগে গাড়ি থেকে নেমে ক্লাসের উদ্দ্যেশ্যে দৌড় দেয়৷ কারণ সময় প্রায় শেষ। ফারহান তোহার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে অকারণেই হেসে ওঠে।

৪২.
ইভানা কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তার কলেজ বেশ অনেকক্ষণ আগেই ছুটি হয়েছে। ফাহিম তাকে নিতে আসতে চেয়েছিল কিন্তু এখনো আসে নি। ইভানা বিরক্ত হচ্ছিল খুব। এমন সময় মেঘলা এসে তার পাশে দাঁড়ায়। মেঘলার পাশে আরো একটি ছেলে ছিল।

মেঘলা এসে ইভানাকে বলে,
‘তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন ইভা? তোকে কি কেউ নিতে আসে নি?’

ইভানা না সূচক মাথা দুলিয়ে বলে,
‘না রে মেঘ। আমাকে কেউ নিতে আসে নি।’

মেঘলার পাশের ছেলেটি ইভানার সাথে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে বলে,
‘ওয়াও ইভা সো নাইস নেম। হাই আমার নাম রাহুল। আমি মেঘলার কাজিন।’

ইভানা হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতেই যাবে তার আগেই ফাহিম রাহুল নামে ছেলেটার সাথে হ্যান্ডশেক করে বলে,
‘ওর নাম ইভা নয়, ওর নাম ইভানা। আর আমি হলাম ওর হাসবেন্ড ফাহিম। নাইস টু মিট ইউ।’

রাহুল নামের ছেলেটা অবাক হলো খুব। সে তো ইভানার সাথে ফ্লার্ট করতে চেয়েছিল আর তার স্বামী এসে হাজির! তবুও সৌজন্যমূলক হেসে বলে,
‘নাইস টু মিট ইউ, টু।’

ফাহিম দৃষ্টি ফিরিয়ে ইভানার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘সরি, রাস্তায় জ্যাম থাকায় আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো ভাগ্যিস ঠিক সময় এসেছিলাম। চলো এখন।’

ইভানা মেঘলা ও রাহুলের থেকে বিদায় নিয়ে ফাহিমের সাথে চলে আসে। ফাহিম ক্যাবে উঠে মুখ গোমড়া করে বসে ছিল। ইভানা ফাহিমের এমন অবস্থা দেখে প্রশ্ন করে,
‘আপনি কি কোন কারণে অখুশি?’

ফাহিম যেন কি মনে করলো হাসলো। অতঃপর ইভানার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ইভা! নামটা সত্যিই খুব সুন্দর। আজ থেকে আমি তোমাকে এই নামেই ডাকব। তবে তুমি অন্য সবাইকে বলবে তোমাকে ইভানা বলে ডাকতে। কারণ এটা আমার স্পেশাল নাম বুঝলা?’

ইভানা হ্যাঁ বোধক ইশারা করল। ফাহিম খুশি হয়ে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here