ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:৬

#ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:৬
#Writer:#Meheruma_Imtaz_Raya(S.Q)

রিধির দিকে খেয়াল হতেই মুহিব রিধির কাছে গেলো,রিধি কে ধরে বসাতেই রিধি মুহিবের কোলে ঢোলে পরলো,

রিধি যখন রাতে মুহিবের সাথে ফোনে কথা বলছিলো তখন সেই ফোনালাপ রুদ্রের ক্লোজ ফ্রেন্ড শিহাব আড়াল থেকে শুনেছিলো ,শিহাব রিধিদের উপরের তলায় থাকে , রুদ্রের ক্লোজ ফ্রেন্ড হওয়ায় সেদিন রুদ্র কে রিধির ব্যপারে সব খোঁজ খবর দিয়েছিলো ,আর সেই অনুযায়ী রুদ্র রিধি কে অজ্ঞান করে নিয়ে গিয়েছিল। শিহাব কে অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর সে মুখ খুলেছিলো ,আর সেই সূত্র ধরেই মিরাজ ,মিরাজের বন্ধু,মুহিব আর মুহিবের বন্ধুরা মিলে রিধি কে উদ্ধার করতে গিয়েছিলো ,

বর্তমান(৬ বছর পর)

রিধি ভাবছে,,
সেদিন রিধি জ্ঞান হারানোর পর মুহিব রিধি কে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল আর রুদ্রের বিরুদ্ধে রিধির বাবা-মা থানায় মামলা করেছিলো কিন্তু রুদ্রের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় রুদ্রের বিরুদ্ধে মামলা করেও কোনো লাভ হয়নি ,,

এদিকে ওই ঘটনার পর রিধি পুরোপুরি ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছিলো ,সেই ট্রমা থেকে বের হতে ২মাস সময় লেগেছিল।পুরো ২মাস রিধি নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছিলো , কারো সাথে কোনো কথা বলতো না ,এমনকি মুহিব কে দেখলেও নিজেকে গুটিয়ে নিতো ,রিধির পরিবারের সবার আর মুহিবের সহযোগিতার জন্য রিধি আবারও সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছিলো। কিন্তু ওই ঘটনার জন্য এলাকাতে রিধির নাম দিন দিন খারাপ হচ্ছিলো আর রিধির উপরেও এর খুব খারাপ প্রভাব পরছিলো ,তাই শেষ পর্যন্ত প্রায় অনেকটা বাধ্য হয়েই এলাকা ছেড়ে বনানী তে শিফ্ট করে রিধি আর রিধির পরিবার ।

আর রিধি চলে যাওয়ার পর ,রিধির প্রতি রুদ্রের পাগলামী দিন দিন আরও বারছিলো , রুদ্রের যে সাইকোলজিক্যাল সমস্যা আছে সেটা রুদ্রের পরিবার বুঝতে পেরেছিলো তাই রুদ্রকে ভালো সাইকোলজিস্ট এর কাছে ৬মাস কাউন্সিলিং এর জন্য পাঠিয়েছিলো কিন্তু এতেও রুদ্রের কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় রুদ্রের বাবা রুদ্রকে উন্নত মানের চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছিলো ।
সময়ের সাথে সাথে রিধি সেই ৬বছর পুরোনো ঘটনা গুলো কে প্রায় অনেকটাই ভুলে গিয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই রুদ্র নামের ঝড় টা আবারও কোথা থেকে যেনো চলে এলো ,,,

অতীতের সেই ভয়ংকর ঘটনা গুলো নিয়ে যখন ঘাঁটতে ব্যস্ত ছিলো রিধি তখন রুদ্র খাবার এর প্লেট নিয়ে ঘরে ঢুকলো ,দরজা খোলার আওয়াজে রিধি বাস্তবে ফিরে এলো ,

-রিধি ,দেখো তোমার জন্য আমি খাবার এনেছি ,তোমার নিশ্চয় অনেক খিদে পেয়েছে তাইনা ?আমি আজ তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো ,
-না না ,
-কেনো?
-আসলে আমি নিজের হাতে খেতে পছন্দ করি তো তাই আর কি (মুখে জোর পূর্বক হাসি টেনে)
-আচ্ছা ঠিক আছে তুমি খাও ,
রিধি খাবার খেতে খেতে ইনিয়ে বিনিয়ে রুদ্র কে জিজ্ঞাসা জিজ্ঞাসা করলো,
-তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে ?
– মালয়েশিয়া ,
-ওহ ,দেশে কবে ফিরেছো ?
– ১বছর আগে
– রুদ্র একটা কথা বলি?
-হ্যা বলো
-আমি বাড়ি যেতে চাই,দেখো আমার বাবা হার্টের পেশেন্ট,উনি নিশ্চয় আমার জন্য অনেক চিন্তা করছেন প্লিজ আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাও( অনুনয় করে)
-না ,একবার যখন তোমাকে আমি আমার কাছে পেয়েছি ,তখন আর ছারছিনা (গম্ভীর কণ্ঠে)
রিধি বুঝতে পারলো রুদ্র কে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই তাই প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললো,
– আচ্ছা তুমি আমাকে এখন তোমার কথা বলো, তোমার ব‌্যপারে জানতে ইচ্ছে করছে (আগ্রহী হয়ে)
-সত্যি ? আমার ব্যপারে তোমার জানতে ইচ্ছে করছে?(খুশি হয়ে)
-হুম
– আচ্ছা বলো তুমি কি জানতে চাও ?
-তুমি মালয়েশিয়া তে যাওয়ার পর কি কি করলে ?
– মালয়েশিয়া তে যাওয়ার পর আমি ওখান কার নামি সাইকোলজিস্ট এর কাছে কাউন্সিলিংয়ে ছিলাম ১বছর,
-তারপর?
– তারপর সুস্থ হওয়ার পর ওখানকার স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম
– সুস্থ না ছাই , এখনও সেই আগের মতই সাইকো রয়ে গেছে (বিরবির করে)
-কিছু বললে?
-না তেমন কিছু না , আসলে আমি ভাবছিলাম তুমি কতো ভাগ্যবান কারণ ওরা ওখানকার স্কুলে পড়েছ
-আমি মোটেও ভাগ্যবান নই (গম্ভীর কণ্ঠে)
-কারণ এই ৬বছর আমি তোমার থেকে দূরে ছিলাম , জানো আমি এতো গুলা বছর অপেক্ষা করেছি কবে তোমাকে নিজের কাছে পাবো ,ওই মুহিব সবসময় তোমার পেছনে আঠার মতো লেগেই থাকতো ,তাইতো আজ যখন সুযোগ পেলাম তখন তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে এলাম,
-ওহ আচ্ছা
-তুমি এখনো মুহিব কে ভালোবাসো তাইনা ?(গম্ভীর কণ্ঠে)
রিধি কথা ঘোরানোর জন্য বললো ,
-খাবার টা অনেক ভালো হয়েছে ,কোথা থেকে আনিয়েছো ?
– পাশেই একটু দূরে একটা ছোট হোটেল আছে ওখান থেকে,
-ওহ,
-আচ্ছা আমি একটু আসছি ,
রুদ্র খাবারের প্লেট গুলা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো ,আর রিধি ভাবছে,

-তারমানে আমি এখন এমন এক জায়গায় আছি যেখানে একটা হোটেল আছে ,এখান থেকে একবার যদি বের হয়ে ওই হোটেলে গিয়ে সাহায্য চাই তাহলেই আমি বাড়ি ফিরতে পারবো ,তবে এই রুম টা অনেক অদ্ভুত কারণ কোনো বারান্দা অথবা জানালা নেই , শুধু একটা ওয়াসরুম আছে,ওয়াশরুমে তো নিশ্চয় জানালা আছে ,একবার দেখে আসি

রিধি ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলো একটা জানালা আছে কিন্তু সেটা অনেক ছোটো ,,
-এখান থেকে কিভাবে আমি বের হবো ?(আশাহত হয়ে)

তখনি রুদ্রের ডাক শুনতে পেলো রিধি ,

-রিধি এই রিধি কোথায় তুমি?(ভয়ার্ত কন্ঠে)

রুদ্রের কন্ঠ শুনে রিধি তারাতাড়ি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এলো ,

-এইতো আমি ,
-কোথায় গিয়েছিলে?
-এই রুমে ওয়াসরুম ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার জায়গা আছে ?
-না ,
-তাহলে ?
-না আসলে আমি তোমাকে না দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ,
– কি ভেবেছিলে আমি পালিয়ে গিয়েছি? ভয় পেয়োনা ,তোমার কাছে মনে হয় যে আমি এখান থেকে পালাতে পারবো ?তোমার কাছ থেকে আমার মুক্তি নেই (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
-এভাবে বলছো কেনো রিধি ?আমি তো তোমাকে ভালোবাসি তাইনা ? ভালোবাসি বলেই তোমাকে এখানে আমার কাছে এনে রেখেছি ,
-তোমার ভালোবাসা টা একটা এবনরমাল ভালোবাসা (মনে মনে )
-রিধি কি ভাবছো?
-না কিছু না ,আমার মাথা টা একটু ব্যথা করছে ,আমি একটু ঘুমাবো ,তুমি এখন এখান থেকে যাও
-কি হয়েছে তোমার ?বেশি খারাপ লাগছে ?( উদ্বিগ্ন কন্ঠে)
-না তেমন কিছু না , একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে
-আচ্ছা তুমি ঘুমাও আমি তোমার মাথায় বিলি কেটে দেই ,
-না না ,আসলে আমার রুমে কেউ থাকলে আমি ঘুমাতে পারি না
-কিন্ত,
-প্লিজ (মায়াবী কন্ঠে)
-আচ্ছা
তারপর রুদ্র চলে গেলো ,আর রিধি বিছানায় শুয়ে পরলো , কিন্তু রিধির ঘুম আসছে না,
-তোমাকে অনেক মিস করছি মুহিব ,তোমার কথা অনেক মনে পরছে , আচ্ছা মুহিব তুমি কি আমাকে খুঁজছো?বাবা মা ,মিরাজ ,নিয়াজ ওরা সবাই নিশ্চয় আমার জন্য অনেক চিন্তা করছে , আল্লাহ প্লিজ আমাকে সাহায্য করো (কাঁদতে কাঁদতে)
কাঁদতে কাঁদতে রিধি ঘুমিয়ে পড়লো,

এদিকে ,,

মুহিব নিজের ঘর অন্ধকার করে বসে রয়েছে ,মুহিব রিধি কে অনেক খুঁজেছে কিন্তু কোথাও পায়নি ,এমনকি থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়েছে, কিন্তু রিধির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না , কিন্তু মুহিব এর কাছে খবর আছে রুদ্র ১বছর আগে দেশে ফিরেছে , রুদ্রের উপর মুহিবের সন্দেহ হচ্ছে,

-আমি যদি আরেকটু সতর্ক হতাম তাহলে এমন হতো না ,রিধি কোথায় তুমি ?তুমি ঠিক আছো তো রিধি ?তোমার এই কিডন্যাপিং এর সাথে যদি সত্যি রুদ্রের কোনো কানেকশন থাকে তাহলে আর ও যদি তোমার কোনো ক্ষতি করে তাহলে এবার রুদ্র কে আমি আর জীবিত ছারবো না ,,,,,

#চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here