ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:১২ ( অন্তিম পর্ব)

#ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:১২ ( অন্তিম পর্ব)
#Writer:#Meheruma_Imtaz_Raya(S.Q)

এদিকে,,

জেল খানায় মাহির এর সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে রুদ্র ,

– মিস্টার ‌রুদ্র ,আপনি যে মিস রিধি কে কিডন্যাপ করেছিলেন তার যথাযথ প্রমাণ আমাদের কাছে আছে ,
– তো ?
– আপনার মধ্যে কি নূন্যতম অনুশোচনা বোধ বলতে কিছু নেই ?
– না ,আমি যা করেছি বেশ করেছি ,আমি রিধি কে ভালোবাসি ওর উপর সব ধরনের অধিকার আমার আছে ,এমনকি রিধি নিজেও আমাকে ভালোবাসে ।
-নিজের মুখের কথা অন্যের মুখে বসাবেন না ,মিস রিধি আপনাকে কখনোই ভালোবাসতো না ,আপনি শুধু কিডন্যাপ নয় বরং মিস রিধি কে ইচ্ছাকৃতভাবে ওই উঁচু জায়গা থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন ,
– আমি যদি আরেকবার সুযোগ পাই তাহলে এবার আমি রিধি কে নিজের হাতে শেষ করে দিবো তারপর নিজে আত্মহত্যা করবো ,রিধি যখন আমার নয় তখন সে আর কারো নয়
– ঠিক আছে তবে আমার মনে হয় না আপনি সেই সুযোগ আর পাবেন কারণ আপনার বিরুদ্ধে শুধু কিডন্যাপিং নয় সাথে এটেন্ড টু মার্ডার এর কেস ফাইল করা হয়েছে
– কোনো লাভ হবে না ,আমার বাবার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নেই ,
– সেটা নাহয় সময়ই বলবে ,

কথা শেষ করে মাহির বের হয়ে আসলো ,

বিকেল চারটা ,,

গাড়ি এসে রিধিদের বাড়ির সামনে থামলো ।রিধি ,মুহিব ,মিরাজ গাড়ি থেকে নামলো ,,,রিধি সামনে তাকিয়ে দেখলো মা দাঁড়িয়ে আছে ,রিধি ছুটে গিয়ে নিজের মা কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো ,
– আম্মু কেমন আছো ?
– ভালো নেই রে ,তোর এ কি অবস্থা হয়েছে রে রিধি ,চল ভেতরে চল
সবাই যখন বাসায় চলে যাচ্ছিলো তখনি পেছন থেকে পাশের বাসার কিছু ২জন মহিলা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলো ,
– আরে আরে ওই যে দেখো ,রিধি ফিরে এসেছে ,না জানি এতো দিন কোথায় ছিলো ,সবাই তো বলছে কিডন্যাপ হয়েছিলো কিন্তু আমার কাছে মনে হয় নিশ্চয় তলে তলে অন্য কিছু চলেছিলো ,
– হ্যা তা যা বলেছো ,আমার সেটাই মনে হয় ,
কথাগুলো শুনে মিরাজ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না তাই মহিলার গুলোর সামনে গিয়ে বললো ,
– আপনাদের কোনো কাজ নেই তাইনা ? সারাদিন অন্যের বাড়িতে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেগুলো নিয়েই পড়ে থাকতে পছন্দ করেন ,নিজে একজন মেয়ে হয়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে এতো খারাপ কথা বলছেন আপনাদের একটু লজ্জা হওয়া উচিত,
– শোনো ছেলে ,আমরা একটা ভদ্র সমাজে বাস করি ,যে মেয়ে এক মাস অন্য ছেলের সঙ্গে একসাথে ছিলো সে মেয়ে যে কতটা ভালো চরিত্রের তা আমাদের জানা আছে ,এই মেয়ের তো চরিত্রের ঠিক নেই ,
-আমার বোন এর চরিত্রের সমস্যা থাকলে আপনাদের তা তে কি হ্যা ?আর যদি একটাও বাজে কথা বলেন তাহলে আমি ভুলে যাবো আপনারা আমার চেয়ে বয়সে বড় , এক্ষুনি এখান থেকে বিদায় হোন ,
– যাচ্ছি যাচ্ছি তবে আমরাও দেখবো এই মেয়েকে কে বিয়ে করে ,
কথাগুলো বলে মহিলা গুলো চলে গেলো ,আর রিধি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো ,মুহিব রিধি কে নিয়ে ভিতরে গেলো ,
– রিধি ,
– হুম
– তুমি ওনাদের কথায় কান দিয়ো না ,তুমি তো জানোই এসব মহিলারা নিজের বাড়ির চেয়ে অন্যের বাড়ির খবর বেশি রাখে ,
– ওনারা হয়তো ঠিকি বলেছেন মুহিব ,এক মাস অন্য এক ছেলের সাথে একি সাথে থাকা মেয়ের চরিত্রে আসলেই সমস্যা আছে ,( ধরে আসা কন্ঠে)
– রিধি ( হাল্কা ধমক দিয়ে)
– আমি কি নিজে থেকে কিডন্যাপ হতে চেয়েছিলাম মুহিব বলো ?আমি তো চাইনি তাইনা ?( কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লো)
– রিধি তোমাকে শক্ত হতে হবে প্লিজ তুমি ভেঙে পরোনা ,আমরা সবাই তোমার সাথে আছি ,তোমাকে রুদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে ,
– আমি পারবো তো মুহিব ?
– হ্যা তোমাকে পারতেই হবে ,তুমি এখন রেস্ট নাও আমি বাসায় যাবো , অনেক দিন ঠিক মতো ঘুমাতে পারিনি ,
– হুম তুমি যাও
মুহিব চলে যাচ্ছিলো রিধি আবার ডাক দিলো ,
– মুহিব ,
– হ্যা বলো ,
– আংকেল আর আন্টি আমাকে মেনে নিবেন ?
– রিধি ,আম্মু আর আব্বু তোমাকে খুব ভালোবাসে ,উনারা তোমার জন্য অনেক চিন্তা করছিলো , প্লিজ তুমি আর কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করোনা ,এখন লক্ষ্যি মেয়ের মতো রেস্ট নাও ,ওকে ?
– হুম

মুহিব বাসা থেকে বের হয়ে সোজা পুলিশ স্টেশনে গেলো, অফিসার মাহির এর সাথে কথা বলে রুদ্রের সাথে দেখা করতে গেলো,
মুহিব দেখলো রুদ্র মাথা নিচু করে মাটিতে বসে আছে ,মুহিবের উপস্থিতি টের পেয়ে রুদ্র সামনে তাকালো , মুহিব কে দেখা মাত্রই রুদ্র তেরে আসলো ,
– জেলে থাকতে কেমন লাগছে রুদ্র?( বিদ্রুপের স্বরে )
– মজা দেখতে এসেছিস তাইনা ?( ক্ষুব্ধ কন্ঠে)
– আমার সাথে একদম উচ্চ স্বরে কথা বলবি না ,তোর সাত জনমের ভাগ্য আজ পুলিশ ছিলো নয়তো তোকে আমি ,,,
– কি করতি ? কিচ্ছু করতে পারতি না ,
– তখন পারিনি এখন পারবো ,তুই যেনো সারাজীবন এই জেলে পড়ে থাকিস তার ব্যবস্থা আমি করবো ,
– আমি এখানে জেলে পচে মরবো আর তোরা ওখানে সুখে শান্তিতে বসবাস করবি ?সেটা আমি কখনোই হতে দিবো না ,
– দেখা যাবে ,আর হ্যা রিধি তোর বিরুদ্ধে খুব শক্ত ভাবেই লড়াই করবে ,আর ওর পাশে কেউ থাকুক আর না থাকুক আমি সবসময় রিধির পাশে ছিলাম আছি আর থাকবো ,
– রিধি কে আমি শান্তি তে বাঁচতে দিবো না ,
– খবরদার তোর ওই অপবিত্র মুখে রিধির নাম নিবি না ,
– আমার মুখ অপবিত্র?আর তোর রিধি কি খুব পবিত্র নাকি ?
-কি বলতে চাচ্ছিস তুই ?
– রিধি আর আমি এক মাস একি বাড়িতে ছিলাম ,একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এক মাস একি বাড়িতে ছিলো অথচ তাদের মধ্যে কিছু হয়নি ? এইটা কেউ বিশ্বাস করবে ?
-রুদ্র( চিৎকার করে)
– চিৎকার করে কি সত্যি টা বদলাতে পারবি?তোর রিধি আর আগের মতো পবিত্র নেই
– রিধির নামে আর একটাও বাজে কথা বললে তোকে আমি এখানেই খুন করবো ,
– হা হা হা ,
-তোর শাস্তি যেনো আরও ভয়ংকর হয় তার ব্যবস্থা আমি করবো ,,
কথাগুলো বলে মুহিব বের হয়ে গেলো ,,

১ সপ্তাহ পর ,

আজ রুদ্রের কেস কোর্টে উঠবে ,রিধি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি , কিন্তু চেষ্টা করছে স্বাভাবিক হওয়ার । রুদ্রের বাবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে রুদ্র কে জেল থেকে জামিনে বের করেছে ,এই ১সপ্তাহে রুদ্রের বাবা অনেক বার রিধি দের বাড়ি এসে হুমকি দিয়ে গেছে যেনো রিধি ভয় পেয়ে কোর্টে কোনো সাক্ষী না দেয় কিন্তু রিধিও থেমে যাওয়ার পাত্রী নয় ।কোর্টের সামনে রিধি , রুদ্র ,মিরাজ ,নিয়াজ আর অফিসার মাহির দাঁড়িয়ে আছে , নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলো তখনি রুদ্র আর রুদ্রের পরিবারের লোকেরা সেখানে আসলো ,,
– রিধি এখনো সময় আছে কোর্টে আমার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী দিতে যেয়োনা ,এর ফলাফল ভালো হবে না ,আর আমার ছেলে তো তোমার কোনো ক্ষতি করেনি তাইনা , শুধু এক মাস একটু বন্দি করে রেখেছিলো( রুদ্রের বাবা)
– আজকে আমার জায়গায় আপনার মেয়ে থাকলে এগুলো বলতে পারতেন? আপনার ছেলে অন্যায় করেছে আপনার উচিত তাঁকে শাস্তি দেয়া কিন্তু আপনি তাকে সাপোর্ট করছেন? অবশ্য আপনার থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করাটাই বোকামি ,যেমন বাবা তেমনি তাঁর ছেলে ( রিধি )
-রিধি খুব তেজ বেরেছে তোমার তাইনা?( রুদ্র)
-হ্যা বেরেছে,( রিধি)
-কোনো লাভ হবেনা ,আমি আমার ছেলেকে নির্দোষ প্রমাণিত করেই ছাড়বো তারপর তোমার ব্যবস্থা নিবো ( রুদ্রের বাবা )
– আপনার সাহস তো কম নয় আপনি কোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে হুমকি দিচ্ছেন (অফিসার মাহির )
– এদের কাজ এমনি ,নিজেদের দোষ ঢাকতে এরা সব কিছু করতে পারে ( মুহিব )
-মিস্টার মুহিব,এদের সাথে কথা না বাড়িয়ে চলুন আমরা ভেতরে যাই ,

সবাই কোর্টের ভেতরে চলে গেল ,
নির্ধারিত সময়ে কোর্টের কাজ শুরু হলো ,
রুদ্রের বাবা রিধির বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে এনেছিলো কিন্তু কোনো লাভ হয়নি কারণ সত্যকে আর যাই হোক কখনোই ঢেকে রাখা যায়না ,
বিচার চলাকালীন সময়ে কেস যখন রিধির দিকে তখনি রাগে ক্ষুব্ধ হয়ে রুদ্র একজন পুলিশ এর কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে রিধির উপর গুলি চালানোর চেষ্টা করে,, রুদ্র কে পুলিশ রা মিলে আটকায় ,, রুদ্রের এমন ব্যবহার দেখে এবং সকল সাক্ষ্য ও প্রমাণের উপর ভিত্তি করে কোর্ট রুদ্র কে ১৪ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করে এবং,মেন্টাল এসাইলামে পাঠানোর নির্দেশ দেয় , রুদ্র যতদিন পর্যন্ত সুস্থ হচ্ছেনা ততদিন পর্যন্ত এসাইলামেই থাকবে , সুস্থ হওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে রাখা হবে ,,

২ মাস পর ,

শত বাধা পেরোনোর পর আজ অবশেষে মুহিব আর রিধির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ,রিধি নিজের পরিবার সহ বাসা ছেড়ে ধানমন্ডি তে শিফ্ট করেছে, আগের বাসায় থাকা রিধির জন্য কষ্টকর হয়ে উঠছিলো কারণ প্রতি মূহুর্তে আশেপাশের মানুষেরা রিধির চরিত্র নিয়ে কথা বলছিলো ।মুহিবেরাও বাসা বদলিয়ে বসুন্ধরায় চলে এসেছে।

রাত ১২টা,

বিয়ের কার্যক্রম শেষ হতে হতে রাত হয়ে গেলো ,বাসর ঘরে বসে আছে রিধি ,মুহিব এখনো আসেনি ,রিধি আর মুহিব এর বিয়ে ইসলামিক শরিয়ত অনুযায়ী হয়েছে ,কোনো রকম বড় অনুষ্ঠান করা হয়নি ।রিধি পুরো ঘরটা ভালো মতো দেখছে এই ২ মাসে অনেকবার সে এ বাড়িতে এসেছে কিন্তু তখন সেটা ছিলো মুহিবের বাড়ি ,আর আজ সেটা রিধিরও বাড়ি ,,
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেল রিধি , আর চোখে তাকিয়ে দেখলো মুহিব এসেছে ,,,মুহিব এসে রিধির পাশে বসলো ,
– রিধি ,
-হুম
– চলো নামাজ পড়ি ,

রিধি আর মুহিব একসাথে নামাজ পরলো,,
– রিধি আমার দিকে তাকাও,
রিধি লজ্জায় তাকাতে পারলো না ,
-তাকাও ,
রিধি মুহিবের দিকে তাকালো ,
– মাশা’আল্লাহ মেক আপ ছাড়া ন্যাচারাল লুকে আমার বউ কে অনেক সুন্দর লাগছে ,
– হুম ,
-রিধি ছাদে যাবে ?
– এখন ?
– হুম যাবে ?
– ঠিক আছে ,
রিধি আর মুহিব ছাদে গেলো ,মুহিব আর রিধি দোলনায় গিয়ে বসলো ,
-রিধি জানো তোমাকে আমি এতো রাতে ছাদে কেনো এনেছি ?
– না তো ,
-আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো তোমার সাথে বিয়ের প্রথম রাতে ছাদে এসে চাঁদ দেখতে দেখতে গল্প করবো ,তুমি খুশি হয়েছো ?
– হুম অনেক ,
-রিধি
– হুম বলো
– অনেক ভালোবাসি তোমায়
– আমিও
রিধি মুহিবের কাঁধে মাথা রাখলো আর ভাবতে লাগলো ,
– মুহিবের পবিত্র ভালোবাসার জন্য রুদ্রের #ভয়ানক_ভালোবাসা থেকে আজ সে বেঁচে গিয়েছে ,আর কারও জীবনে যেনো এমন #ভয়ানক_ভালোবাসা না আসে।

সমাপ্ত,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here