গল্প :- রহস্যময় মেয়ে,পর্ব :- ০৫

গল্প :- রহস্যময় মেয়ে,পর্ব :- ০৫
Writing by Kabbo Ahammad
.
.
-:”বিশালদেহী ছায়ামূর্তিটা আমার সামনে চলে এলো। ভয়ে আমি ছিটকে পিছিয়ে গেলাম। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অনা জিজ্ঞেস করলো। “”কি হয়েছে?”” আমি ইশারা দিয়ে ছায়া মূর্তিটার দিকে দেখালাম। সবাই একটু ভয় পেয়ে গেল। এতো বিশাল দেহের কে এটা?

তখনি কাব্য হেসে উঠলো। আমি কাব্যের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। কাব্য সেই ছায়ামূর্তির কাছে যেতে লাগলো।মদরজার বাইরে কিছুটা অন্ধকার হওয়ায় শুধু দেহের আকৃতি টা দেখা যাচ্ছিল। কাব্য দরজার সামনে গিয়ে ডাক দিল “”সামনে আসুন”” একটা লোক আবছা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এলো। কাব্য বলল এই লোক তাদের বাড়ির একজন কর্মচারী। এখানে আমাদের দেখতে এসেছিল।

আল্লাহ্‌! একটুর জন্য আমার প্রাণ টা বেরিয়ে যাচ্ছিলো।মনে হচ্ছিলো এই বুঝি আমার গলা চেপে ধরবে। এভাবে কেউ আসে? আজব!

কাব্য ও হাসছে সাথে সেই বিশাল দেহী লোকটা ও। ওদের হাসি দেখে সবাই উচ্চস্বরে হেসে পড়লো। কি বেয়াদব সবগুলো।আর আমার সাথে তো তোরাও ভয় পেয়েছিলি? এখন আবার আমাকে দেখেই হাসছে।ধুর…সবার সামনে এভাবে লজ্জিত হতে হলো।

কাব্য বলল “” অনেক রাত হয়েছে,সবাই যার যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পর। কাল ভোরে উঠতে হবে। এই বাড়ির নিয়ম। “”

আমরা সবাই যার যার ঘরে শুয়ে পড়লাম। অনেকটা জার্নি করে আসায় সহজেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। চারপাশে তাকিয়ে সবকিছু কেমন অচেনা লাগছে। আমি রাজবাড়িতে নেই, বরং ছোট একটা অর্ধপাকা ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছি।কিন্তু আমি এখানে এলাম কিভাবে? চারদিকে আর কোনো বাড়ি ঘর বা মানুষ কিছুই নেই। শিয়ালের ডাকে চারদিক ভূতুরে হয়ে উঠেছে। অন্ধকার সব গ্রাস করে ফেলেছে। ভেতর থেকে ক্রমশ আত্মচিৎকার বেরিয়ে আসছে। প্রচন্ড ভয় করছে আমার। আমি আস্তে আস্তে সেই ঘরটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যতই কাছে যাচ্ছি চিৎকার আরো বেড়ে যাচ্ছে।

এখন স্পষ্ট শুনতে পেলাম একজন নয় ৩/৪ জন একসাথে চিৎকার করছে। নিশ্চই কোন বিপদ হয়েছে। এখন আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। পালিয়ে যাবো,নাকি ওদের বাঁচাবো?

কিছু একটা করতেই হবে। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না। এখনে আসার পেছনে নিশ্চই কোন কারণ রয়েছে। আমাকে দেখতে হবে।

আমি দরজার কাছে গিয়ে কান পেতে দাঁড়াই। কিছু মানুষের হাসির শব্দ পাচ্ছি তবে কান্নার কারনে সেটা বুঝা বেশ শক্ত। কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পারলাম এখানে কিছু গন্ডগোল হচ্ছে।

আমি ধাক্কা দিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। ঘরটা বেশ অন্ধকার। আমার হাতে কোন লাইট নেই। জানিনা বিদ্যাুৎ আছে কি না। তাই আস্তে আস্তে পা ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। তখনি কিছু একটায় ধাক্কা খেয়ে পরে যাই। মেঝেতে কিছু একটা পরে ছিল যা উপর আমার হাতটা গিয়ে পরলো আমি জিনিস টা হাতে নিলাম। উঠে বসতে যাবো তখনি দরজা টা আটকে গেল। আমি অন্ধকারে বন্দি হয়ে গেলাম। উঠে দরজার কাছে গিয়ে ধাক্কাতে লাগলাম। চিৎকার করতে লাগলাম।

পেছন থেকে কেউ গম্ভীর গলায় বলল “””বিপদ””” ।বলার সাথে সাথেই কেউ আমার মুখ চেপে ধরে দেয়ালের সঙ্গে আমার মাথা আঘাত করলো।

আমি হকচকিয়ে উঠে বসি। স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ।ইশশ কিছুদিন ধরে যে আমার সাথে কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এমন অদ্ভুত স্বপ্ন….
পাশে অনা নেই। উঠতে যাবো..

তখনি বুঝতে পারলাম আমার হাতে কিছু একটা আছে।একটু ভয় পেলাম। হাতটা মেলে যে দেখবো কি আছে সেই সাহস টাও হচ্ছে না। তবু আস্তে আস্তে হাত টা খুলে দেখলাম ছোট্ট একটা চাবি।

এমন চাবি কোন ঘরের বা এমন কিছুর হতে পারে না। তাহলে এটা কিসের চাবি। কিছুটা ভয় পেলাম। স্বপ্নে ও তো আমি কিছু একটা হাতে নিয়েছিলাম। এই চাবি ছিল না তো? কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব? সেটা তো কেবল স্বপ্ন ছিলো। আদৌ কি ছিলো? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছি। কিন্তু কোন উত্তর পাচ্ছি না। অনেক ভাবার পরও কিছুই বুঝতে পারলাম না। নিশ্চই এর পেছনে কোন রহস্য আছে।

উঠে ফ্রেস হতে গেলাম। মুখ ধোয়ার জন্য আয়নার দিকে তাকাতেই মনে পড়লো আমার মাথায় আঘাত থাকার কথা। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। ব্যাপার টা কেমন যেন ভৌতিক লাগছে আমার কাছে।

কিন্তু ভূত কি সত্যিই হয়? নাকি সব আমার কল্পনা। নাহ!কল্পনা হতে পারে না চাবি টা তো আমার হাতেই ছিল যেটা সেই বাড়িতে পেয়েছিলাম। আচ্ছা সেই বাড়ি টা কার?।আমাকে খুঁজে বের করতে হবে।

রেডি হয়ে ঘরের বাইরে বেরোলাম। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৭ টা বাজে। বেশি লেইট হয়নি। বিশাল বড় রাজবাড়িটা ভালো করে ঘুরে দেখতে লাগলাম। প্রতিটি দেয়ালে পুরনো কারুকার্যে ছেয়ে গেছে। দেয়াল গুলো এখনও বেশ মজবুত। হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলাম।

একটা বড় বাগান দেখলাম।সেখানে সবাই সেখানে দাড়িয়ে আছে।আমি কাছে যেতেই কাব্য সবাইকে খাবার জন্য যেতে বলল।

খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি একটা মাঝবয়সী লোক টেবিলে বসে আছে।পাশেই দুজন মহিলা একজন পুরুষ আর ২ টা বাচ্চা।

কাব্য সবার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিল।
মাঝবয়সী লোকটি কাব্যের বাবা,পাশের জন মা আর তার সাথে কাব্যের চাচি,পুরুষ টি হলো কাব্যের চাচা। পাশের ২ টা বাচ্চা হলো কাব্যের চাচার ছেলে মেয়ে। মেয়ে ত্রিশা আর ছেলে অনিক।

সবার সাথে পরিচিত হতে বেশ ভালোই লাগলো কিন্তু কাব্যের বাবা একজন গম্ভীর লোক। একবারও ওনার মুখে হাসি দেখতে পেলাম না। বরং মনে হলো আমাদের দেখে বিরক্তই হয়েছেন।

খাওয়া শেষ করে আমি কাব্য কে বললাম পুরো গ্রাম টা আমাদের ঘুরিয়ে দেখাতে। কাব্য রাজি হলো।

আমরা বেরবো ঠিক সেই সময় অনামি জিগ্যেস করলো””
অনা:-আমরা কি হেঁটে যাবো?
কাব্য:-গ্রাম যদি ভালোভাবে দেখতে হয় তবে হেঁটে ই যেতে হবে। বড় গাড়ি সেখানে যেতে পারবে না।

শুনেই অনার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ও আবার একটু বেশি রুপচর্চা করে। মুখে ময়দা মনেহয় অর্ধেক বস্তা ঢালে। এখন ওনি হাঁটতে চাইছেন না। রোদে ঘেমে যদি ময়দা উঠে যায়। এসব দেখলে আমার গা জ্বলে। আরে বাবা আমিও তো মেয়ে। তাই বলে এভাবে কি ময়দা মাখি?

আমি:-অনা এই ময়দার জন্য তুই কি আমাদের গ্রাম ঘুরা বন্ধ করতে চাস?
অনা:-তা নয় কিন্তু!
আমি:-অই চল আমাদের সাথে।

শেষমেশ রাজি হলো। পুরো গ্রাম অনেকটা ঘুরলাম।ঘুরতে ঘুরতে একটা রাস্থা দেখিয়ে কাব্য বললো,,””এদিকে নিলাদ্রীর বাড়ি। আমি সেখানে যেতে চাইলাম কিন্তু কাব্য কিছুতেই রাজি হলো না। বরং তাড়াতাড়ি আবার রাজবাড়িতে ফিরে এলো।

কিন্তু আমি সেখানে যাবোই।

বিকেলে সেই আগের মতোই কাব্যের বাবার গম্ভীর মুখ দেখে খেতে হলো। আমাদের দিকে এমন ভাবে চেয়ে থাকে যেন গিলে খাবে। ইচ্ছে করছিল বুড়োর গোপ কেঁটে ফেলি। তার পর দেখি কিভাবে এতো ভাব ধরে থাকতে পারে।

বিকেল বেলা যখন সবাই ঘুমাচ্ছিলো। আমি চুপি চুপি উঠে রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম। বেরনোর আগে কৌশলে ইশানের রিভলবার টা নিয়ে নিলাম। যদি কোন বিপদে পড়ি কাজে লাগবে। আরো একটা জিনিস আমি সবসময় সাথে রাখি। যে কোন সময় কাজে লাগতে পারে। কি সেটা নাহয় পরে বলবো।
এখন কোন দিক থেকে এসেছিলাম সেটা মনে করার চেষ্টা করলাম। ভাবলাম এগোতে থাকি আস্তে আস্তে মনে পড়বে। যেতে যেতে পেয়ে গেলাম। এইতো কাব্য এখানে দাঁড়িয়ে ই বলেছিল নিলাদ্রীদের বাড়ি কোন দিকে।

কাব্যর দেখানো রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষন যাবার পর দেখলাম সামনে বাড়িঘর খুব কম। আস্তে আস্তে কমতে লাগলো। এক সময় আর কোন বাড়ি দেখতে পেলাম না। শুধু বাঁশঝাড় আর জঙ্গল। তবু কেন যানি আমি এগিয়ে যেতে লাগলাম।

মনে মনে ভাবছিলাম ফিরে যাবো কিন্তু একটা অদৃশ্য শক্তি অনুভব করলাম। মনে হচ্ছিল কিছুএকটা আমায় টানছে। নিজের দিকে আকৃষ্ট করছে। যেতে যেতে মনে হলো জায়গাটা আমি কোথাও দেখেছি। চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু কোথায় দেখেছি….কোথায় দেখেছি….ওহ হে মনে পড়েছে এই জায়গা তো আমি স্বপ্নে দেখেছি। তার মানে কি বুঝতে আর বাকি রইলো না।

একটু এগিয়ে যেতেই অর্ধ পাকা বাড়ি টি দেখতে পেলাম। এটাই তাহলে নীলাদ্রির বাড়ি। পেয়েছি! স্বপ্নে আমি তাহলে নীলাদ্রির বাড়ি দেখেছিলাম। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? আমি এখানে কখনও না এসেই কিভাবে বাড়িটা দেখতে পেলাম? কিছু তো গড়বড় আছে।

আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম ভেতরে কারা যেন চিৎকার করছিল কিন্তু এখানে তো তেমন কিছুই শুনতে পারছি না।

আমার সামনে তখন সেই স্বপ্নের মতো হুবহু বাড়িটা রয়েছে। সেই জায়গা ই। একটু ভয় করলে ও এখন আর পেছনে গেলে চলবে না। সূর্যের আলো কমে আসছে। কিছু একটা করতেই হবে।

বাড়ির চারদিক টা ঘুরে দেখলাম। তেমন কিছুই পেলাম না। জানলা গুলো বন্ধ করা।

আমি বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়ালাম। খুব ভয় লাগছে। স্বপ্নের মতো আবার আমি ভেতরে বন্দি হয়ে যাবো না তো? ঠিক যখনি দরজায় ধাক্কা দিতে যাবো তখনি দরজার নিচথেকে রক্ত বেরিয়ে আসতে লাগলো।লাল টকটকে রক্ত। আমি ভয়ে পিছিয়ে আসি।

হঠাৎ দেখতে পেলাম বাড়ির একপাশে কারো দুটি চোখ। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মাথার লম্বা চুল রক্তে লাল হয়ে গেছে। আমি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম,””কে এখানে,সামনে এসো। সামনে এসো বলছি। নইলে কিন্তু গুলি করবো””” বলতে বলতে রিভলবার টা সেদিকে তাক করলাম।

তখনি পেছন থেকে কেউ শক্তকরে আমার হাতটা চেপে ধরলো…….
.
.
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here