গল্পঃ রহস্যময় মেয়ে,পর্ব :- ০৯ এবং শেষ

গল্পঃ রহস্যময় মেয়ে,পর্ব :- ০৯ এবং শেষ
Writing by Kabbo Ahammad
.
.
-:”আমি:-নিশি কোথায় তুমি সামনে এসো।
নিশি:-বলো যারিন।
আমি:-কাব্য কোথায়,কে নিয়েগেছে কাব্য কে?
নিশি:-হাহাহা!
আমি:-হাসছো কেনো।।বলো কোথায় কাব্য?
নিশি:-এই গ্রামের শেষ সীমানায় একটা বাড়িতে কাব্য রয়েছে।
আমি:-কে নিয়ে গেছে সেখানে ওকে?
নিশি:-যে একটু পর মরতে চলেছে। হাহাহা!
আমি:-কে মরতে চায় নিশি?কে,নিশি কোথায় তুমি?বলে যাও কে সে?

মিশি চলে যায়। আমি নিশি কে ডাকছি কিন্তু নিশি আর আসে না। তার পর ভাবতে লাগলাম কে হতে পারে? এর পর মাথায় এলো। আবির তো লিমন নামে একটা ছেলের নাম বলেছিল। তাহলে কি সেই ছেলে কাব্যকে কিডন্যাপ করলো? কিন্তু ও কেন এমন করবে? মাথায় কিচ্ছু আসছে না।

আমাকে কাব্যের কাছে তাড়াতাড়ি পৌছাতে হবে। আমি ইশান,দিপু,অনা আর কাব্যের পরিবার কে সব বললাম। সবাই ঘাবড়ে গেলো। আমরা সেখানে যেতে চাইলে কাব্যের চাচা বললেন তিনি ও আমাদের সাথে যাবেন। তাই যাওয়ার জন্য ওনি একটা গাড়ি নিয়ে আসলেন।

আমরা ঝটপট গাড়িতে উঠে পরলাম। কালাম চাচা(কাব্যের চাচা)গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমি শুধু মনে মনে প্রার্থনা করছি যাতে কাব্যের কোন ক্ষতি না হয়। আর নিশি যেনো লিমন কে আগেই না মারতে পারে। সেই মাস্টার মাইন্ড এর কথা টা তবে হয়তো আর জানা যাবে না।

রাস্তায় হঠাৎ গাড়ি খারাপ হয়ে গেল। ভালো ভাবে চেক করে দেখা গেল পেট্রোল শেষ। এখন আমরা কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। তবে কাব্যকে বাঁচাতেই হবে। কালাম চাচা কে বললাম অন্য একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে কিন্তু তিনি জানান অন্য গাড়িতে একটু সমস্যা দেখা দেয়ায় সার্ভিসিং এর জন্য শহরে পাঠানো হয়েছে।

এবার আমাদের হাতে একটাই রাস্তা। হেঁটেই যেতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম হেঁটে যাবো। কালাম চাচা বলে উঠলেন এখান থেকে অনেকটা দূরের পথ। যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে। তার চেয়ে আমরা অপেক্ষা করি।

আমি বললাম রাজবাড়ি গিয়ে আবার পেট্রোল নিয়ে ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে। আর এখানে তেমন নেটওয়ার্ক না থাকায় ফোনে কল ও করা যাবে না।

কিন্তু যাই হোক আমাকে সেখানে পৌছাতেই হবে। এখন তো সবে দুপুর। হয়তো পৌছাতে পারবো। চাচা বললো আমাদের যেতে তিনি গাড়িতে তেল ভরার ব্যবস্থা করবেন। আমরাও তাই করলাম। চাচা তেল আনতে রাজবাড়ি তে চলে গেলেন।

এদিকে আমি,অনা,দিপু,ইশান মিলে হাঁটতে লাগলাম
অনেক্ষন হাঁটার পর গ্রামের ঘর বাড়ি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করলো। রাস্তায় একটা লোক কে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম…

আঙ্কেল গ্রামের শেষ সীমানা আর কতো দূর? লোকটি বলল আমরা কাছেই এসে গেছি এখান থেকে এক ঘন্টার রাস্তা।

আমরা আবার হাঁটতে লাগলাম। প্রায় এক ঘন্টা পর একটা সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম। অন্য একটা গ্রামের নাম লিখা। তার মানে এখানেই গ্রামের শেষ সীমানা। কিন্তু কাব্য কোথায়? এদিকে প্রায় সন্ধা হয়ে গেছে। তাই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।

কিছুক্ষণ খুঁজার পর একটা বাড়ি দেখতে পেলাম। দেখে মনেহচ্ছে বেশ পুরনো। সেখানেই কাব্য কে হয়তো রেখেছে। আমি,অনা,ইশান,দিপু আস্তে আস্তে বাড়ির পেছনে গিয়ে কান পেতে রাখলাম কারো আওয়াজ আসে কি না দেখতে।

শুনতে পেলাম কথার আওয়াজ আসছে। জানালার ভাঙা অংশ দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখতে পেলাম কাব্য অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। ভেতরে আরো কিছু লোকজন একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ইশান কে রিভলবার টা হাতে নিতে বললাম।

এবার সময় এসে গেছে। আমি ইশান দিপু অনামি চারজন দুইদিক থেকে বাড়ির সামনের যাচ্ছিলাম
তখনি একজন বেরিয়ে এলো। ইশান সেই সুযোগে ছেলেটার মাথায় রিভলবাল টা তাঁক করলো। ছেলেটা সেই ভয়ে কাঁপছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি? ছেলেটা জবাবে বললো রিফাত। তুমিও নিশি কে হত্যার মধ্য জড়িত ছিলে? ছেলোটা মাথা নিচু করে ফেললো। আমরা সবাই মিলে রিফাতকে ধরে বাড়ির দিকে যেতে লাগলাম। বাড়ির সামনেও কিছু লোক ছিল। মনেহয় এদের ভাড়া করে আনা হয়েছে।

আমাদের দিকে লোক গুলো এগিয়ে আসছিল। তখনি আমি বললাম কেউ সামনে এলে একে আমরা মেরে ফেলবো। রিফাত নিজের প্রাণের ভয়ে সবাইকে সবাইকে পিছিয়ে যেতে বলল। আমি ইশানকে বললাম প্রথমে কাব্য কে ঘর থেকে বের করতে হবে। তাই আমরা ঘরের দিকে যেতে লাগলাম। আমরা ঘরের ভেতরে ঢোকার সময় ভাড়া করা লোক আমাদের ঘিরে ধরে।ইশানেক হাত থেকে রিভলবার টা কেড়ে নেয়।

রিফাত মুক্ত হয়ে যেন ভিজে বিড়াল থেকে হিংস্র বাঘ হয়ে গেলো। আমাদের সবাইকে বেঁধে ফেলে। তখনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে আরো একজন। রিফাত বলে উঠলো..

রিফাত:-দেখ লিমন,আমাদের জন্য মেহেমান এসেছে।এবার আর নিশি আমাদের কিছুই করতে পারবে না।
লিমন:-ঠিক বলেছিস রিফাত। আমাদের আর ভয় পাবার প্রয়োজন নেই। এবার শুধু নিশির আত্মা কেন নিশির চৌদ্দ গুষ্ঠির আত্মা আসলেও আমাদের কিছু করবে না। যদি কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে কাব্য আর এই পিচ্চি গুলো কে….!হাহাহা।

রিফাত:-এখন কি করবি ভাবছিস?
লিমন:-ভাবছি একটু মজা করবো। এই দুটো মেয়ের মধ্য একজন কে নাচাবো। কেমন হবে বল?
রিফাত:-দারুন মজা হবে।
লিমন:-আরে ধুর বোকা। জীবনে কতো মেয়ের নাচ দেখলাম। আত্মার নাচ কখনো দেখেছিস? আজ আমরা আত্মার নাচ দেখবো। অহ,আমার যে তর সইছে না।

আমি:-তোমাদের মতো সয়তান দের কি ভেবেছো নিশি ছেড়ে দেবে? ভুল করছো। এখনো সময় আছে। সব স্বীকার করে আইনের কাছে ধরা দাও। নইলে তোমাদের নিস্তার নেই। তোমাদেরও রনি আর আবিরের অবস্থা হবে।

লিমন:-হাহা! আমরা কি অই দুটো গর্ধপের মতো নাকি? আমাদের বুদ্ধি তেই আমরা বেঁচে যাবো। সেদিন কিভাবে জানি না আমাদের ভাড়া লোক গুলোর হাত থেকে বেঁচে গেছিলে। কিন্তু আজ না। আজ আমি যা চাইবো তাই হবে।

আমি:-এতো সহজ না লিমন। আমি জানি তোমাদের পেছনে কোন মাস্টার মাইন্ড রয়েছে। কে সে?
লিমন:-তোমাকে এই কথা কে বলেছে?
আমি:-আবির আমাদের সব বলে গেছে।
লিমন:-এই আবির হলো একটা বলদ। সব সময় ভয় পায় আর একটুতেই সব কথা পেট থেকে বের করে দেয়।
আমি:-এবার বলো সেই মাস্টার মাইন্ড টা কে?
আরে দাঁড়াও দাঁড়াও এতো অধৈর্য হওয়ার কি আছে? সবে তো শুরু।

বলতে বলতে লিমন একটা চেয়ারে বসলো। হঠাৎ চেয়ার টা হাওয়ায় ভাসতে লাগলো। চারদিকের লোকগুলো ভয় পেয়ে গেলো। কিন্তু আমরা বুঝতে পারলাম এটা নিশি।

লিমন কে আবার চেয়ার সহ নিচে ফেলে দিল। এদিকে রিফাত ইশানের রিভলবার টা নিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেলো। দিপু ইশান ভাড়া করা লোকগুলোর সাথে লড়াই করছে। আমি রিফাতের পেছন পেছন ঘরে ঢুকতেই দেখি রিফাত কাব্য কে মেরে ফেলার জন্য উদ্ধত হয়েছে।

আমি এক ধাক্কায় রিফাত কে ফেলে দিলাম। কাব্যের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না। পাশেই একটা ছোট্ট বোতল দেখতে পেলাম। বোতল থেকে পানি বের করে কাব্যের চোখ মুখে ছিটিয়ে দিতেই ওর জ্ঞান ফিরে এলো।

এদিকে রিফাত একটা লাঠি দিয়ে আমায় আঘাত করলো। আমি হাতে প্রচন্ডে ব্যথা পেলাম। কাব্য রিফাতের হাত থেকে লাঠি টা কেড়ে নিয়ে ওকে মারতে লাগলো।

রিফাত কে নিয়ে কাব্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমিও পেছন পেছন বেরিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি নিশি লিমন কে তখনও হাওয়ায় ভাসিয়ে রেখেছে। এক সময় লিমনের জিহ্বা বাইরে বের হতে থাকলো। একটা গাছের কাছে গিয়ে জিহ্বা টা পেচিয়ে গেল। লিমন গাছে ঝুলছে। হঠাৎ জিহ্বা লিমনের মুখ থেকে ছিড়ে বেরিয়ে এলো। ক্রমশ রক্ত বের হচ্ছে ওর মুখ থেকে। লিমনকে আবার মাটিতে ছুড়ে মারলে নিশি। তার পর আবার হাওয়ায় তুলে ওর হাত আর পা ভেঙে উল্টো করে দিল। এর পর লিমনের গলা থেকে ঘার টা ছিড়ে নিচে ফেলে দিল। এসব দৃশ্য দেখে রিফাত অজ্ঞান হয়ে গেল।

নিশি রিফাতকে কাব্যের কাছ থেকে হাওয়ায় উঠিয়ে নিয়ে চলে যেতে লাগলো।

কাব্য নিশি কে পেছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো “”কোথায় যাচ্ছো নিশি?””নিশি বলল “”রিফাতকে তার পাপের শাস্তি দিতে।””বলে হাওয়ায় ভাসিয়ে রিফাত কে নিয়ে চলে যাচ্ছে।

আমি নিশি কে মানা করলাম কিন্তু ও আমার কোনো কথা শুনলো না। উপায় না পেয়ে আমরাও পেছন পেছন যেতে লাগলাম। নিশি রিফাতকে নিয়ে অনেকটা দূরে একটা কাঁঠ কাটার মিলের মধ্য চলে গেল।

যেখানে কাঁঠ কাটার জন্য কাঁঠ রাখা হয় সেখানে রিফাত কে রাখলো। রিফাতের শরীর দড়ি দিয়ে পেচিয়ে গেল। রিফাত তখনো অজ্ঞান ছিল। কিছুক্ষন পর জ্ঞান ফিরতেই চারদিকে তাকিয়ে দেখলো সে মেশিন টার সামনে। আমাদের দিকে তাকিয়ে রিফাত বার বার চিৎকার করছে।মকাব্যকে ডাকছে তাকে বাঁচাতে।

হঠাৎ মেশিন না চালু হয়ে গেল। রিফাত আস্তে আস্তে ধারালো বড় ব্লেট টার সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাণপণে চিৎকার করছে কিন্তু নিশি হাওয়ায় ভেসে ভেসে হাসছে।

এক সময় রিফাতের মাথা টা ব্লেডের মধ্যে চলে গেল।একটা বৃহৎ চিৎকার। সাথে সাথে মাথা টা কেঁটে দুভাগ হয়ে গেল। তাতেও নিশি শান্ত হয় নি। নিতে নিতে পুরো শরীর টা কেঁটে দুভাগ করে ফেলল।

আমরা সবাই এই নৃশংস দৃশ্য দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এর পর নিশি হাসতে হাসতে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।

নিশি চলে যাওয়ার পর আমি কাব্য কে জিজ্ঞেস করলাম…
আমি:-কিভাবে তোমাকে ওরা এখানে নিয়ে এসেছে?
কাব্য:-বাড়িতে গিয়ে আমি আমার জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনি রিফাত আমার জানালার নিচে দাড়িয়ে বাইরে বেরোতে বলল। আমি বাইরে বেরোতেই কেউ আমার মুখ চেপে ধরে তার পর আমার জ্ঞান হারিয়ে যায়। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি এই ঘরে পরে আছি। আমি জেগে উঠতেই ওরা আবার আমার মুখে একটা রোমাল চেপে ধরে তাই আবার আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।

সব তো হলো। কিন্তু আমরা জানতে পারলাম না কে আসলে এই সবকিছুর মাস্টার মাইন্ড। আর এই পুরো ঘটনা কে সাজিয়েছে?

তখনি কাব্য বলে উঠলো আমি জানি কে এসব করেছে। আমরা সবাই মিলে জিজ্ঞেস করলাম কে করেছে এসব?আর তুমি কিভাবে জানো?

কাব্য বলতে লাগলো….

কাব্য:-আমাকে যখন ওরা এখানে অজ্ঞান করে নিয়ে এসেছিল এর কিছুক্ষণ পর আমার জ্ঞান ফেরে। আমি চোখ না মেললেও রিফাত আর লিমনের কথা গুলো স্পষ্ট শুনতে পারছিলাম। ওরা তখন সেই মাস্টার মাইন্ড এর নাম টা বলল।

আমি:-কে সে কাব্য?

কাব্য:-সে……

কাব্য বলতে চাইতেই একটা গাড়ির আওয়াজ হলো।দেখলাম আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। বুঝতে পারলাম ওটা কালাম চাচা। তিনি গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে কাব্যের কাছে যান।

চাচা:-তোমরা এখানে কেনো? তোমাদের তো গ্রামের শেষ সীমানায় থাকার কথা। আর কাব্য,তুই ঠিক আছিস তো? ওরা তোকে কেন নিয়ে গিয়েছিল?
কাব্য:-সেটা তো আমার থেকে ভালো আপনার জানার কথা চাচা।

চাচা চমকে উঠলেন। আর আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম। এসব কি বলছে কাব্য?

আমি:-এসব কি বলছো কাব্য? তোমার মাথা ঠিক আছে?
কাব্য:-আমি সম্পূর্ণ সুস্থ যারিন। ইনি সব জানেন। বলুন জানেন না?
চাচা:-কাব্য কি সব উল্টাপাল্টা বকছিস। চল বাড়িতে চল।
কাব্য:-আর কতো মিঃ মাস্টার মাইন্ড?

আমি,ইশান,দিপু,অনা কেউ যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তার মানে মাস্টার মাইন্ড কালাম চাচা? আমরা এটা ধারনাই করতে পারি নি।

চাচা:-এসব কি বলছিস কাব্য,কে মাস্টার মাইন্ড? তোর কোথাও ভুল হচ্ছে।
কাব্য:-কোনো ভুল নেই লিমন নিজের মুখে এই কথা বলেছে।
চাচা:-মিথ্যে বলেছে সব।
কাব্য:-সব সত্যি আর আপনিই মাস্টার মাইন্ড। স্বীকার না করলেও এটাই সত্যি।

তখনি চাচা পকেট থেকে একটা রাজার আমলের রিভলবার বের করে কাব্যের মাথায় ধরলো। আর জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো…

চাচা:-তাহলে জেনেই গেছো? হ্যাঁ আমি মাস্টার মাইন্ড
এই সবকিছুর পেছনে আমার হাত রয়েছে।
কাব্য:-কেন করলেন এসব? কেন এত গুলো নিরীহ মানুষকে মেরে ফেললেন?
চাচা:-হ্যাঁ মেরেছি। কারন তুই কাব্য।
কাব্য:-আমি?
চাচা:-হ্যাঁ তুই। ভাইয়ার সব সম্পত্তির মালিক তুই আর আমি কেউ না?
কাব্য:-কিন্তু নিশি কে কেন মারলেন?
চাচা:-তোকে মেরে ফেললে তো সব দোষ আমার হতো তাই যেদিন জানতে পারি নিশির সাথে তোর সম্পর্ক রয়েছে সেদিনই প্লেন করি।

যেভাবেই হোক নিশিকে তোর জীবন থেকে বের করতে হবে। আমি চেয়েছিলাম তুই নিশির জন্য জীবনের সব মায়া ত্যাগ করে আত্মহত্যা কর। আর এই সম্পত্তি আমি পেয়ে যাই।

তাই তোর বন্ধু রনি কে ডেকে তোর আর নিশির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে বলি। কিন্তু ও পারে না। শেষে উপায় না দেখে নিশি কে মারতে চাইলে রনি বলে ও নিশি কে ভালোবাসে। নিশিকে নিয়ে এখান থেকে দূরে চলে যাবে।আমিও সুযোগ পেয়ে গেলাম।

ভাইয়া কে বলে তোর আর নিশির দেখা বন্ধ করে দিলাম। এর পর তোর পরিক্ষা শেষ হওয়ার দিন রাতে রনি আর কয়েকজন ভাড়া করা লোক গুলোকে নিশি দের বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। সেখানে ওরা প্রথমে নিশির ভাই আর তার পর মা কে খুন করে।

নিশির ভাই আর মাকে একটা নদীতে ফেলে দেয়া হয়।

ওরা নিশি আর তার ছোট বোন তমা কে উঠিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গলের সেই বাড়ি টায়। সেখানে গিয়ে রনি তার তিনজন বন্ধুকে ডাকে। রনি চেয়েছিল নিশি কে বিয়ে করে অনেক দূরে চলে যেতে আর ওর বোন তমা কে মেরে ফেলতে। কিন্তু ওর তিন বন্ধু তমাকে ভোগ করতে চাইলো। আমিও বাঁধা দিলাম না।

অন্যদিকে রনি নিশি কে অনেক বার বোঝায় । মারধর করে কিন্তু সেই মেয়ে শুধু কাব্য কাব্য করতো। এই কারনে রনি ওর জিহ্বা কেঁটে দেয়।

তার পরো নিশি কাব্যের কাছে যেতে চাইতো। এসব দেখতে না পেরে রনি নিশিকে মেরে ওর শরীর কেঁটে টুকরো টুকরো করে আমাদের পুকুরের পেছনে শিউলি গাছের নিচে পুঁতে দেয়। কারণ সেদিকে লোকজন বেশি আসা যাওয়া করতো না। নিশির ছোট বোনকে ওরা চার জন মিলে কিছুদিন ভোগ করে সেই বাড়িতেই ফেলে রাখে।

এই সব কিছুই হয়েছিল আমার কথায়।

রনিকে দিয়ে হুবহু নিশির হাতের লেখার মতো লিখে একটা চিঠি তোকে দিতে বলি। যাতে তুই নিশি চলেযাওয়ায় নিজের ক্ষতি করিস। তার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা আমি করি। তোকে তোর ফুফুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। সেখানে তুই আরো একা হয়ে যাস।

এর কিছুদিন পর নিশির ভাই এর লাশ পানিতে ভেসে উঠে। সবাই সেটা বলাবলি করতে থাকলে কোন ভাবে আমি ব্যাপার টা ধামাচাপা দিই।

কাব্য:-ছিঃ চাচা! একবার বললেই আমি আপনাকে সব দিয়ে দিতাম। আপনি ভালো করেই জানেন আমার এসবের প্রতি লোভ নেই।

চাচা:-বললেই হলো? আমি জানি তুই দিতি না। তাই এই প্লেন। কিন্তু ভাবি নি তুই শহরে থেকে এসব বন্ধু জুটিয়ে ফেলবি। আর আমার সাজানো খেলা এভাবে নষ্ট করে দিবি। এই সবকিছুর মূলে রয়েছে এই যারিন মেয়েটি। ওর জন্যই আমার সব গন্ডগোল হয়ে গেছে। সবার আগে ওকে মারবো।

বলেই আমার দিকে গুলি ছুড়ে দিল। কিন্তু কোথায় গুলি? আমার শরীরে কোনো গুলি লাগলো না। চারপাশে শিউলি ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। নিশি আমায় বাঁচিয়ে দিল। আমার ঠিক পেছন থেকে নিশি সবার সামনে বেরিয়ে এলো।

নিশি আসতেই কালাম চাচা হাসতে লাগলেন। নিশির চোখ মুখে চরম প্রতিশোধ এর আগুন। নিশিকে দেখে চাচা হাসছে।

আমরা এসব দেখে অবাক। যেখানে ভয় পাবার কথা সেখানে কেউ কিভাবে হাসতে পারে?

তখন চাচা বলতে লাগলো:-আরে নিশির আত্মা আমার কিছুই করতে পারবে না। (তিনি একটা তাবিজ আমাদের দিকে দেখিয়ে বললেন) এই দেখ। এই তাবিজ টা আমি বড় একটা হুজুরের কাছ থেকে নিয়ে এসেছি। এবার আমাকে কেউ কিছুই করতে পারবে না। বলে আবার হাসতে লাগলো।

নিশি ওর হাত টা উপরে তুলতেই রিভলবার টা চাচার হাত থেকে পড়ে গেলো। এবার নিশি হাতের ইশারায় চাচা কে ধাক্কা দিয়ে কিছু দূরে ফেলে দিলো। চাচা ধাক্কা খেয়ে হতভম্ব হয়ে গেলেন।

তখন নিশি বলে উঠলো…তুই যেমন মুখোশ ধারী তেমনি একটা মুখোশ পড়া হুজুরের তাবিজ তুই এনেছিস। এবার তোর রক্ষা নেই। কেউ তোকে বাঁচাতে পারবে না।

দেখতে পেলাম নিশির হাত ওর শরীর থেকে আলাদা হয়ে চাচার গলায় ধরেছে। চাচার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।নিশি বলে উঠলো..

:-এভাবে তোর কথায় আমার বোন কে নির্যাতন করে শেষে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছিল তাই না?

এর পর রিভলবার টা হাওয়ায় ভেসে চাচার দিকে তাঁক করে ওনার ঠিক বুকের মধ্যে গুলি করলো। আর বলল..

:-এভাবে আমার মা কে মেরে ছিল তোর কথায় মনে পড়ে?

চাচা চিৎকার করতে লাগলো। আর ব্যথায় ছটফট করতে লাগলো। বলতে লাগলো মেরো না আমায় মেরো না কিন্তু নিশি কোন কথাই শুনলো না।

এবার নিশি একটা ছুরি কোথা থেকে নিয়ে এলো আর চাচার জ্বিহব্বা টা কেটে দিল। জ্বিহব্বা টা নিচে পড়ে লাফাতে লাগলো। আর হাতের আঙুল গুলো পায়ের আঙুল গুলো কেঁটে দিল। আর বললো.

এই ছুরি দিয়ে আমার জ্বিহব্বা আর হাত পায়ের আঙুল কাটা হয়েছিল মনে পড়ে?

চাচার মুখ হাত পা থেকে ক্রমশ রক্ত বের হচ্ছে চাচা কথাও বলতে পারছে না। শুধু আ আ করছে।

কাঁটা হাত দিয়ে মাফ চাচ্ছে। কিন্তু নিশি ক্রমশ হাসছে।আর বলছে….

আমার পরিবারের সবাইকে যখন মেরেছিলি কোথায় ছিল তোর ভয়,কোথায় ছিল তোর মনোষ্যত্ব। আমার মা ভাই বোন কি দোষ করেছিল? কিসের শাস্তি দিয়েছিলি ওদের?

ওদের রেহায় দিস নি। আর আমি তোকে রেহায় দেব?হাহাহা

বলোই একটা বড় পাথর নিল। চাচা হাতের ইশারায় না না করতে লাগলো। কিন্তু নিশি কোন কথাই শুনলো না।

পাথর টা চাচার উপর ছেড়ে দিল। চাচার দেহ পাথরে স্পৃষ্ট হয়ে গেল। তবও এখনো ওনি বেঁচে আছেন।

এবার নিশি ছুরি টা সোজা ওনার হৃদপিন্ডের কাছে ঢুকিয়ে দিল। ছুরির আঘাতে হৃদপিন্ড বেরিয়ে এলো।নিশি সেটা কে নিজের মুখে দিয়ে চিবিয়ে ফেলে দিল।চাচা মারা গেলেন সেখানেই।

কাব্য এতক্ষণ দাঁড়িয়ে পলকহীন ভাবে নিশি কে দেখে গেলো। নিশি কাব্যের সামনে গেলো।

নিশি:-যারিন আজ তোমার জন্য আমি কাব্যের চোখে আবার আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পেলাম।ধন্যবাদ যারিন। এই ঋণ আমি কিভাবে শোধ করবো?

আমি:-ধন্যবাদ দিও না নিশি। এই কাজের বিনিময় হিসেবে আমি কাব্যের মতো একজন ভালো বন্ধু পেয়েছি। এটা আমার জন্য সবচেয়ে বড় গিফ্ট।

নিশি ইশারায় আমাকে আবার ধন্যবাদ জানিয়ে কাব্য কে বলল….

নিশি:-কাব্য আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি তোমাকে এভাবে ছেড়ে যেতে চাই নি। কিন্তু এই সয়তান গুলো আমাকে তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যেতে বাধ্য করেছে। এবার আমায় যেতে হবে।

কাব্য:-থেকে যাও নিশি। তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো? খুব ভালোবাসি তেমায়।
নিশি:-আমিও তেমাকে খুব ভালোবাসি কাব্য। কিন্তু আমায় যেতেই হবে।
কাব্য:-তাহলে আমাকে সাথে নিয়ে যাও।
নিশি:-না কাব্য! তা হয় না। তোমার এখনও অনেক দিন বাঁচতে হবে। বিয়ে করতে হবে। অনেক গুলো বাচ্চা হবে তোমার। তুমি বৃদ্ধ হবে । তার পর তোমার মৃত্যু। আমি চাই না এভাবে তুমি এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাও। এবার আমাকে যেতে হবে কাব্য।

বিদায়….
কাব্য এক রাশ চোখের জল নিয়ে অপলকে চেয়ে রইলো। নিশি হাওয়ায় ভেসে রইলো। এক অদ্ভুত আলো এসে তার গায়ে পরলো। তার পর হঠাৎ সেই আলো টার সাথে মিলিয়ে গেলো নিশি চির জীবনের মতো।

আমি,কাব্য,দিপু,ইশান,অনা সবাই মিলে নিশিকে বিদায় জানালাম।

কিন্তু এবার এই লাশগুলোর কি হবে? কেউ তো আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না। তখনি দিপু বলে উঠলো বিশ্বাস করবে। আমরা সবাই মিলে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে? দিপু তার মোবাইল টা পকেট থেকে বের করে বলল এটা আমি অনেক আগেই চালু করে রেখেছিলাম। এখানে চাচার সব কথা আর কিভাবে মরেছে সব রেকর্ড করা আছে। শুধু নিশি কে দেখা যাচ্ছে না।

আমি একটু সস্তুি পেলাম। যাক পুলিশ কেইস এ আমাদের সন্দেহ করবে না।

বাড়ি ফিরে আমরা সবাইকে সবটা বললাম। কঠিন হলেও সবাই মেনে নিলো। পুলিশ এসে সব তদন্ত করলো। আমাদের কারো বিরুদ্ধে প্রমাণ না পাওয়ায় আর ভিডিও টা দেখে ছেড়ে দিল।

কাব্যের মনের অবস্থা খুব খারাপ। সেই গ্রামে কিছুদিন থেকে পুলিশের ঝামেলা শেষ করে আমরা কাব্য কে নিয়েই শহরে ফিরে আসি। ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে। ডিপ্রেশন এ চলে গেছে কাব্য। এমন হওয়ার ই কথা প্রথমে নিশি তার পর একজন একজন করে সব আপন জন দের হারিয়ে ছেলেটার অবস্থা খুব খারাপ।

শহরে এসেই আমি আমার বান্ধবী দোলা কে ফোন দিলাম..

আমি:-হ্যালো দোলা,কাল দুলাভাইকে বলিস আমার পরিচিত একজন রুগী আছে তাকে দেখতে হবে। একটা এপয়েন্টমেন্ট আমাদের জন্য রেখে দিতে।
দোলা:-আরে পাগলি তুই এলে এপয়েন্টমেন্ট লাগবে নাকি? চলে আয় যেকোন সময় আমি বলে রাখবো।
আমি:-আচ্ছা।

এদিকে বাড়ি যেতেই মার ঝাড়ি শুনতে হলো। গ্রামে একটা দিন ও মাকে ফোন করি নি। করবো কিভাবে?সেখানে যে নেটওয়ার্ক ছিলা না। এই কথা কি মাকে বুঝাতে পারি?

তবে হ্যাঁ এর থেকে আমার রহস্য বের করার প্রতি আমার আকর্ষণ বেড়ে গেছে। আমি অপেক্ষায় আছি পরের কোন রহস্য বের করতে। কে বলতে পারে,হয়তো আবার কোন নতুন এডভেঞ্চার এর খুঁজ পেয়ে যাই।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here