গল্প :রহস্যময় মেয়ে,পর্ব :- ০৪

গল্প :রহস্যময় মেয়ে,পর্ব :- ০৪
Writing by Kabbo Ahammad
.
.
-:”পরদিন সকালে ইউনিভার্সিটি তে আমি কাব্যকে খুঁজছি। আর ভাবছি কাব্য এখন আমার ভালো বন্ধু। বন্ধু হয়ে বন্ধু কে সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। তাই আজ আমি কাব্য কে রাজি করাবই। কাব্যের ভালোর জন্যই। ভাবতে ভাবতে কাব্য আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।

:-কাব্য তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
:-কি কথা যারিন?
:-আগে প্রমিস করো রাখবে।
:-না জেনে কিভাবে?
:-না আগে বলো তার পর বলবো।
:-ওকে রাখবো। এবার বলো।
:-কাব্য,আমাকে তোমার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবে?
:-না যারিন,আমি সেখানে আর যেতে চাই না।
:-কাব্য প্লিজ,আমার অনেকদিনের সখ রাজবাড়ি দেখবো। আর আমি একা নই আমার কয়েকজন বন্ধু ও সেখানে যাবে। আর তুমি তো সেখানকার সব চেনো। আমাদের ঘুরিয়ে নিয়ে ই চলে আসবে।
:-আমার পক্ষে সেখানে যাওয়া সম্ভব না,বোঝার চেষ্টা করো।
:-কাব্য,এই প্রথম আমি কিছু চাইলাম আর তুমি দেবে না?
:-কিন্তু!
:-কোন কিন্তু নয়,আগের স্মৃতি নিয়ে বসে থাকলে জীবন চলবে না। তাহলে কালই আমরা যাবো আর তুমিও যাবে। রাজি?
:-আচ্ছা বাবা রাজি।
:-আমরা কখন বেরবো ?
:-কাল বিকাল ৪ টায় আমরা ট্রেনে করে যাবো।
:-ওকে তুমি রেডি থেকো আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে আসবো।

যাক কাব্য কে বুঝানো গেছে। আমি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে ইশান,দিপু আর অনা কে ফোন দিয়ে রেডি থাকতে বললাম। আমাদের মিশন শুরু। এই প্রথম আমরা কোন রহস্যের সমাধান করবো। আর এর পেছনে কাদের হাত আছে তাও জানবো।

বাড়িতে গিয়ে মা কে রাজী করি। প্রথমে মা মানা করে,কিন্তু আমি সেই নাছোড়বান্দা! রাজী করিয়েই ছাড়লাম।

সকাল সকাল ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। তবে কিছু বাড়তি জিনিস ও নিলাম যেগুলো পরে কাজে লাগতে পারে। তবে যেহেতু আমরা একটা রহস্যের সমাধান করতে যাচ্ছি তাই সেখানে বিপদ আসা টা স্বাভাবিক। এই কথা চিন্তা করে ইশানের রিভলবার টা নিয়ে নিতে বললাম। ইশান এটা নিজের বাড়িতে সবসময় রাখে সেফটির জন্য। যত বার ওর বাসায় গেছি ততো বার ওই রিভলবার টা আমায় আকৃষ্ট করতো। ওফফ কবে যে এমন একটা রিভলবার আমারো হবে…..

যাই হোক সব রেডি,এখন শুধু সকলের আসার অপেক্ষা।

তখনি নিশি ফোন দিল। আমার সাথে দেখা করতে চায়। কিন্তু আমি এখন কিভাবে যাবো সেটাই ভাবছিলাম। নিশি জোর করায় রাজী হলাম।

পাশের একটা পার্কে নিশি আসতে বললো। আমি গেলাম। গিয়ে দেখি নিশি আগে থেকেই সেখানে বসে আছে। নিশির কাছে যেতেই সেই শিউলিফুলের গন্ধ আমার নাকে ভেসে এলো। আমি নিজেকে আর সামলে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে বসলাম..

:-নিশি তু্মি কি শিউলিফুলের পারফিউম ব্যবহার করো?
:- (নিশি একটু ইতস্তত হয়ে বললো)কেন?
:-তোমার কাছে আসলেই এই ফুলের গন্ধ আমি পাই। তাই আরকি!
:-হুম করি।
:-আচ্ছা আসল কথায় আসি,হঠাৎ কেন ডাকলে এভাবে?
:-তোমাকে কিছু দেয়ার ছিল।
:-কি?
নিশি আমার হাতে একটা লকেট ধরিয়ে দিল।
:-এটা কেন নিশি?
:-যারিন,এটা আমার। সবসময় তোমার সাথে রেখো। হয়তো কেন প্রয়োজনে আসতে পারে।

আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না এই লকেট আমার কি প্রয়োজনে আসতে পারে। তবু যখন দিয়েছে নিজের কাছে রেখে দিলাম।
:-যারিন,সাবধানে থেকো। তুমি যেখানে যাচ্ছো সেখানে অনেক বিপদ। অনেক খারাপ লোক আছে চারপাশে। সবসময় সাবধানে থেকো। আমি সবসময় তোমার সাথে আছি।
:-তুমি সাথে আছো মানে?
:-তেমন কিছু না। এবার আমাকে ফিরতে হবে। বিদায় যারিন।
:-আল্লাহ্‌ হাফেজ!

এই প্রথম আমার নিশিকে দেখে কেমন যেন লাগলো। মনে হলো নিশি আমার কাছে কিছু লোকাচ্ছে। আমি বসে ওর যাওয়া দেখতে লাগলাম। কিছু দূর গিয়ে নিশি একবার আমার দিকে তাকালো। কেমন প্রাণহীন একটা চাহনি। আমার বুকের ভেতর কেমন ধক করে উঠলো।কেন এমন হলো বুঝতে পারলাম না।

নিশি চলে গেল। আমিও বাসায় চলে আসলাম।

বিকেল ২:৩০ এ দিপু,অনা,ইশান সবাই আমার বাসায় হাজির হলো। এখন আমরা কাব্য কে নিতে যাবো। একটা গাড়ি নিয়ে যখন কাব্যের ফুফুর বাসায় যাবো ঠিক সেই মুহূর্তে কাব্য ফোন করে জানালো সে রেলস্টেশন এ পৌছে গেছে। আমাদের সোজা সেখানে যেতে বলল।

আমরা ও সেখানে গেলাম। ট্রেন আসতে আরো ৪৫ মিনিট এর মতো বাকি। গাড়ি থেকে নেমে কাব্যের সাথে সকলকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। কাব্য আগে কখনও ওদের দেখে নি। কারণ আমরা আলাদা আলাদা ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছি।

আজ আমি কাব্যের চোখমুখে সেই আগের মতো গম্ভীরতার ছাপ দেখতে পাচ্ছি। তাই কাব্য কে একটু আড়ালে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম…

:-কাব্য,কিছু হয়েছে?
:-না,কিছু হয় নি।
:-তাহলে তোমাকে এমন গম্ভীর লাগছে কেন?
:-তুমি তো সব জানোই যারিন,নতুন করে আর কি বলবো?
:-সব ঠিক হয়ে যাবে কাব্য। চলো ট্রেন এর সময় হয়ে গেছে।
:-হুম!

ট্রেন প্লাটফর্ম এসে দাঁড়ালো। কাব্য আগেই আমাদের সকলের জন্য টিকিট কেটে রেখেছে।
গ বগি তে আমাদের সিট পরলো। সকলেই ট্রেনে উঠে যার যার জিনিসপত্র সাবধানে রেখেদিলাম।

শিলাকুন্ত গ্রামে পৌছাতে আমাদের ৪/৫ ঘন্টা সময় লাগবে। এমনিতে এখন দিনে বেশি শীত না থাকলে ও রাতে ঠান্ডা লাগে। তার উপর ট্রেনের প্রবল হাওয়া।

আজ ট্রেনে তেমন ভির নেই,ইশান,দিপু,অনা সবাই গান গাইতে শুরু করলো। কাব্য ও ওদের সাথে বেশ ভালোই মিশে গেছে। আমার একটু পিপাসা পাওয়ায় অনা কে বললাম পানির বোতল টা দিতে। পানি পান করে কাব্যের দিকে তাকালাম। আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম,”” ছেলেটা ইচ্ছে করে সবাইকে দূরে সরিয়ে রাখে,আসলে ও যেমন টা সবাইকে দেখাতে চায় তেমন টা নয়। মনে মনে ও খুব একা।

ভাবতে ভাবতে একটু সামনে চোখ গেলো। দেখতে পেলাম একটা মেয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে আছে। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। তখনি আমার হাত থেকে পানির বোতল টা পরে গেলো। আমি সেটা উঠাতে নিচের দিকে চাইলাম। বোতল টা হাতে নিয়ে আবার সেদিকে তাকালাম। আশ্চর্য মাত্র ৩ সেকেন্ডের ব্যবধানে মেয়ে টা উধাও হয়ে গেলো।

মেয়ে টা কোথায় তা দেখার জন্য উঠতেই দিপু আমাকে আটকে দিল।

:-যারিন কোথায় যাচ্ছিস? বস একটা নতুন গল্প বলবো।

বাধ্য হয়ে বসতে হলো। এক সময় দিপুর গল্প গুলো শুনে খুব মজা পেতাম আর আগ্রহের সাথে শুনতাম কিন্তু আজ জানিনা কেন আমার সব অদ্ভুত লাগছে। সবার মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছি না।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এলো। সকলেই ক্লান্ত। পেছন থেকে হকার এসে চা দিয়ে গেলো। এর মধ্যে দিপু ঘুমিয়ে বেহুঁশ হয়ে গেছে। অনা ঝিমুচ্ছে আর ইশান মোবাইলে কার্টুন দেখছে। আমি,আর ইশান কার্টুনের অনেক বড় ফ্যান, যে পরিমান কার্টুন দেখি সে পরিমান মুভি ও দেখি না। এটা অবশ্য ছেলেমানুষি বলা যায় না। কারণ আমরা যথেষ্ট বড় হয়েছি।
এদিকে কাব্য তার ব্যাগ থেকে বের করে কি যেন একটা পড়ছে।

আমি যাচ্ছি আর ভাবছি কিভাবে সেই মেয়ের খুৃঁজ পাওয়া যায়।

রাত প্রায় ৯ টা ছুঁই ছুঁই অবস্থা। গাড়ি প্লাটফর্ম এ এসে থামলো। সবাই সবার ব্যাগ নিয়ে নামলাম।

হঠাৎ দেখলাম কিছু লোক আমাদের দিকে আসলো। আর আমাদের হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে চলে যাচ্ছে। সবাই অবাক হয়ে গেল। আমি ডাকাত ভেবে পেছনে দৌড়াতে লাগলাম।

আমার পেছন পেছন অনামি,ইশান,দিপু ও ব্যাগের পেছনে ছুটতে লাগলো। তখন পেছন থেকে কাব্য ডেকে বললো এই লোক গুলোকে তার বাবা পাঠিয়েছেন। সে আগেই তার বাবা কে আমাদের কথা বলে রেখেছিল।

শুনে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। যাক বাবা লোক গুলো ডাকাত নয়।

স্টেশন থেকে বেরিয়ে দেখলাম একটা গাড়িতে আমাদের জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। একে একে সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম।

প্রায় ২০ মিনিট পর আমরা কাব্যদের রাজবাড়ি তে পৌছালাম। বাড়িটা বাইরে থেকেই বিশাল বড়।
আমাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা দেখে বুঝাই যাচ্ছিল এখন রাজাদের আমল না থাকলে ও তাদের আগের মতই বাড়িতে সব আগের মতোই আছে।

আমাদের আলাদা আলাদা ঘরে থাকতে বললে ও আমরা ঠিক করলাম আমি আর অনামি এক ঘরে,ইশান আর দিপু আরেক ঘরে থাকবে।

বলা যায় না,অচেনা জায়গা। কি থেকে কি হয়ে যায়।

রাজাবাড়ির এক একটা রুম বিশাল বিশাল। আমরা সকলে ফ্রেশ হতেই একজন লোক এসে আমাদের খেতে ডাকতে এলো। আমরা লোকটির পেছন পেছন গেলাম।বড় একটা টেবিলে অনেক ধরনের খাবার। প্রায় ১০/১২ ধরনের রান্না করা। আমরা গিয়ে বসে আছি। পেছনেই দিপু, ইশান আর কাব্য এলো।

আমি কাব্য কে জিজ্ঞেস করলাম বাড়ির বাকি রা কেথায়। কাব্য বলল সকলেই টাইম ধরে কাজ করে। অরা খেয়ে নিয়েছে,যে যার কাজ করছে। সকালে উঠে সবাইকে দেখতে পাবে। তোমরা এখন খাওয়া শুরু করো।

বাড়ির এমন নিয়ম দেখে খুব অবাক হলাম না। রাজ পরিবারে সাধারনত এসব বিষয়ের প্রচলন ছিল। কিন্তু এখানে থেকেও কাব্য এতোটা আলাদা আর সাধারণ ভাবে কিভাবে থাকে তা বুঝতে পারলাম না।

খাওয়া শেষ করে আমরা সকলে একটা রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ আমার চোখ গেলো দরজার দিকে। একটা ছায়া সরে গেল। আমি কাউকে কিছু না বলে ছায়াটার দিকে যেতে লাগলাম। হঠাৎ ছায়াটা আমার সামনে চলে এলো। দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম……..
.
.
চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here