গল্পঃ রহস্যময় মেয়ে,পর্ব :- ০৭

গল্পঃ রহস্যময় মেয়ে,পর্ব :- ০৭
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
-:”দরজার সামনে একটা আংটি পড়ে ছিলো। আমি আংটি টা তুললাম। কার হতে পারে ভাবছি। হয়তো এখানে যে লাশ টা ছিল তার নয়তো যারা এসবের মধ্য জড়িত তাদের কারো হবে। আংটি টা সাবধানে রেখে আমি,দিপু,ইশান রাজবাড়ি তে ফিরে আসি।

ভেতরে ঢুকেই দেখতে পেলাম কাব্য দাঁড়িয়ে আছে।আমাদের দেখে প্রায় দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো।

কাব্য:-কিছু জানতে পারলে,নীলাদ্রি কি সত্যি কোন বিপদে আছে?
আমি:-কাব্য আমরা নীলাদ্রির কোন খুঁজ পাই নি।কিন্তু সেখানে গিয়ে অনেক অদ্ভুত কিছু দেখেছি।
কাব্য:-কি দেখেছো?

ইশান:-কাব্য,আমার জানা মতে নীলাদ্রি তার পরিবার কে নিয়ে অনেক দিন আগেই এখান থেকে চলে গেছে। যদিও সেটা কতটা সত্যি তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারন আমরা তাদের ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস ভালোভাবে লক্ষ্য করেছি আর যা বুঝা গেল,আমরা যাওয়ার আগে নীলাদ্রি দের বাড়িটা খুব সুন্দর করে পরিষ্কার করা হয়েছে যাতে আমরা কোন ধরনের প্রমাণ
খুঁজে পেতে না পারি।

দিপু:-আমারা নিশ্চিত নীলাদ্রি খুব বড় একটা
চক্রান্তের শিকার হয়েছে।

কাব্য কান্না শুরু করে দিল। আমার খুব খারাপ লাগছিলো। কিন্তু কাব্য কে এখুনি ডায়েরির কথা বলা যাবে না। তাই আমি কাব্য কে আংটি টা দেখিয়ে বললাম….

আমি:-কাব্য,এই আংটি টা চেনো?
কাব্য:-না,এই আংটি আমি চিনি না। তবে
কোথায় যেন দেখেছি বলে মনে হচ্ছে।
আমি:-কাব্য,কথায় দেখেছো মনে করো। এই
আংটি আমাদের এই রহস্যের সমাধান দিতে পারবে।

কাব্য:-আমি পারছি না,মনে পড়ছে না আমার।

কাব্য অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু মনে করতে পারলো না।আমি কাব্য কে শান্ত হতে বললাম। আর একটু সময় নিয়ে ভাবতে বললাম। পেছনে হঠাৎ চোখ যেতেই দেখলাম রনি দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে কেমন যেন একটু রেগে তাকিয়ে ছিল। আমি ওর দিকে তাকাতেই
যতোটা সম্ভব স্বাভাবিক ভাবে চেয়ে কাব্যের কাছে এলো।

রনি:-কাব্য আমার একটা জরুরি কাজ আছে
আমি যাই।
কাব্য:-তোর পায়ে তো ব্যথা। কিভাবে যাবি?
রনি:-আমি যেতে পারবো এখন অনেক টা ঠিক
আছি। তুই চিন্তা করিস না।
কাব্য:-রনি এই আংটি টা চিনিস?
রনি:-কই না তো! কার আংটি?(মুখে স্পষ্ট
ভয়ের ছাপ)

কাব্য:-জানি না ঠিক মনে পড়ছে না। কোথায়
যেন দেখেছি।
রনি:-কাব্য আমি এবার আসি রে। অন্য সময়
আসবো।

আমি বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা গন্ডগোল আছে। রনি চলে গেল। আমি ডায়েরি টা নিয়ে আমাদের থাকার ঘরে চলে এলাম।ইশান,দিপু ফ্রেশ হতে গেছে। ঘরে গিয়ে দেখি অনা ঘুমোচ্ছে। আমি ডায়েরি টা এক হাতে নিয়ে অন্য হাতে চাবি টা নিলাম। এবার চাবি টা তালায় ঢুকিয়ে চাপ দিতেই তালা টা খুলে গেলো।

ডায়েরি তে প্রথমেই কয়েকটা শুকনো শিউলি ফুল দেখতে পেলাম। এর পর পাতা উল্টাতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছি না।

সেখানে লিখা ছিল “”নীলাদ্রি নিশি”” এর মানে নীলাদ্রির নাম নিশি ছিল? এই কি সেই নিশি যে আমার সাথে দেখা করেছিল?ভাবতে ভাবতেই দেখতে পেলাম আমার চারদিক অন্ধাকার হয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে সব অস্পষ্ট হয়ে যেতে লাগলো। এক সময় সব অন্ধকার। আমি কিছুই দেখতে পারছি না। হঠাৎ চারদিক শিউলি ফুলের গন্ধে ভরে গেল।।তখনি কেউ আমাকে ডেকে উঠলো।

যারিন………

আমি গলা টা চিনে ফেললাম। হ্যাঁ এটা নিশির গলা। কিন্তু ও কোথায়? শব্দটা শুনে বুঝতে চেষ্টা করলাম কোন দিক থেকে আওয়াজ টা আসছে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না।আবার আমাকে নিশি ডাকলো।

নিশি:-যারিন…..
আমি:-কোথায় তুমি নিশি,আমার সামনে এসো। অনেক কিছু যে জানার আছে তোমার থেকে।
নিশি:-আমি জানি কি জানতে চাও তুমি।
আমি:-তাহলে বল আমায় সব।
নিশি:-তাহলে শুনো। আমাকে হত্যা করা হয়েছে। আর এইযে আমাকে দেখছো আমি মানুষ নই,একটা আত্মা।

আমি:-কে তোমাকে হত্যা করেছে বলো। আমি
তাদের শাস্তি দেবো।
নিশি:-হাহাহা! না যারিন ওদের তো আমি নিজের হাতে শাস্তি দেবো। আমি চাইলে ওদের অনেক আগেই মেরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু এভাবে মরলে যে কাব্য আমাকে সারা জীবন ভুল বুঝে যাবে। তাই আমি তোমাকে
এখানে এনেছি।

আমি এমন একজন কে খুঁজছিলাম যে কাব্যের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারবে। ওকে আবার সাধারন জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবে। কিন্তু এমন কাউকে পাই নি।
যেদিন তুমি প্রথম দিন কাব্যের সাথে ইউনিভার্সিটি তে যাচ্ছিলে সেদিন তোমাকে প্রথম আমি দেখি। সব সময় তোমার চারপাশে থাকতাম। তোমাকে দেখে আমার মনে হয়েছিল একমাত্র তুমি আমাকে আর কাব্য কে সাহায্য করতে পারো।

যারিন আমি তোমাকে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বলতে চেয়েছিলাম অনেক আগেই। কিন্তু প্রথম দিন তুমি আমার দেয়া চিঠি টা দেখে ভয় পেয়ে যাও। তার পর যখন তোমাকে ঘুমের মধ্য সব বলতে চাইলাম তুমি আবারো ভয় পেয়ে গেছিলে। তাই আর কোন উপায় না পেয়ে আমি তোমার সাথে অভিনয় করি।
তোমাকে কাব্যের সাথে মিশতে সাহায্য করি। আর এই গ্রামে নিয়ে আসি।

আমি:-কিন্তু তোমাকে কারা মেরেছিল?
নিশি:-জানতে পারবে,সব জানতে পারবে তবে এক এক করে সবার মুখোশ সামনে আসবে আর আমি তাদের শাস্তি দেবো।
আমি:-মানে,তুমি কি করতে চাও?
নিশি:-সব বুঝতে পারবে যারিন সব। বলেই কোথায় উধাও হয়ে গেল। আমি নিশিকে বার বার ডাকছি কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই। শুনতে পেলাম। পেছন থেকে অনা
আমাকে ডাকছে। আস্তে আস্তে আবার সব পরিষ্কার হয়ে গেলো। দেখতে পেলাম আমি আগের জায়গা তেই দাঁড়িয়ে আছি।

অনা আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করছে কখন এসেছি। তার মানে আমার আর নিশির কথা গুলো অনা শুনেনি। আমি অনামির কথার কোনো উওর না দিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলাম। কাব্য দের বাগানের কাছে গিয়ে ডায়েরি টা পড়তে শুরু করলাম।

“”””””পৃষ্ঠা ১:-আজ আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। আজ আমি জানতে পারলাম কাব্য আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু বোকা আমাকে প্রপোজ করলো তো করলো তাও উল্টো করে।

পৃষ্ঠা২:-কাব্যের ভালোবাসা পেয়ে আমি পৃথিবীর সবথেকে সুখী মেয়ে। কিন্তু আমার কপালে এই সুখ সইবে তো? ওরা অনেক বড়লোক আর আমি গরিব। জানি না কি হবে। বিধাতার কাছে আমি কাব্য কে ছাড়া আর কিছু চাই না।

পৃষ্ঠা ৩:-আজ আমি অনেক খুশি। কাব্যের বাবা আমাদের বিষয় টা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু কাব্যের সাথে আমার দেখা করতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন কাব্য আর আমার পরীক্ষা শেষ হলে দেখা করতে আর কাব্য প্রতিষ্ঠিত হলে আমাদের বিয়ে দেবেন। কিছু পেতে হলে তো কিছু হারাতে হয়। নাহয় কিছুদিনের জন্য আমাদের দেখা হলো না। তার পর তো সব ঠিক হয়ে যাবে। আর আমাদের মিল কেউ আটকাতে পারবে না।

পৃষ্ঠা৪:-অনেক দিন হলো কাব্যের সাথে আমার দেখা হয় না। ও আমাকে ছাড়া সে কেমন আছে। জানি ভালো নেই। আমিও না,খুব ভালোবাসি যে কাব্য কে।

পৃষ্ঠা৫:-ঘরের বাইরে কিছু লোক বার বার দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। আমার অনেক ভয় করছে। মা,ভাই,আমার ছোট বোন টা খুব ভয় পাচ্ছে। মনে হচ্ছে লোক গুলো দরজা ভেঙে একটু পরই ঢুকে পরবে। কি চায় ওরা?

পৃষ্ঠা৬:-মা জোর করে আমাকে আর তমা কে
ঘরের ভেতের পাঠিয়ে দিয়েছে।

পৃষ্ঠা৭:-ওরা আমার মা আর ভাইয়ার উপর খুব অত্যাচার করছে। আমাকে ওরা নিয়ে যেতে চায়। কি করবো আমি? খুব ভয় করছে। ওরা
জোরে জোরে ধমক দিচ্ছে।সবাইকে নাকি মেরে ফেলবে আমি না গেলে। এদের মধ্য একজনের গলা অনেক টা রনির মতো লাগছে কিন্তু তা কিভাবে হতে পারে? রনি তো কাব্যের বন্ধু। সে এসব করবে?

পৃষ্ঠা৮:-ওরা আমার ভাইয়া কে মেরে ফেলেছে। মায়ের চিৎকার আমাকে যেতে বাধ্য করলো। আমি চাই না ভাইয়ার মতো মা আর তমা কে ওরা মেরে ফেলুক। এই বোধহয় আমার শেষ লিখা…..

এর পর আর কোন লিখা নেই। তার মানে রনি এইসবের মধ্য যুক্ত ছিলো? আমাকে এই ডায়েরি কাব্যের কাছে নিয়ে যেতে হবে। পেছনে ঘুরতেই মাথায় কেউ ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করলো। আমি মাটিতে পরে গেলাম। হাত থেকে ডায়েরি টাও পরে গেলো।
.
.
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here