আঁখির আড়ালে,পর্বঃ- ০৯, ১০ ও ১১

আঁখির আড়ালে,পর্বঃ- ০৯, ১০ ও ১১
সাদিয়া_সৃষ্টি

দিশা অন্যদিকে বসার জায়গা ঠিক করছে। অনেক দিন বাড়ি খালি থাকায় কেউ পরিষ্কার করে নি জায়গাটা। অতিথিকে তো আর এই ময়লার মধ্যে বসতে দিতে পারবে না সে!

বিহান আনমনে বলে উঠল,

— দিশা!

— জ্বি বলুন।

— এই অন্ধকার বাড়ার সাথে সাথে আপনার জন্য আমার মনে অনেক অন্য ধরণের চিন্তা জেগে উঠছে।

— হুম।

— হুম বলে রেখে দিলেন? এটা মোটেই স্বাভাবিক না।

— তাহলে কি করব? দু গালে দুটো থাপ্পড় দিব?

— সেটা হলেও হত।

— তাহলে আপনি থাপ্পড় খাওয়ার জন্য ইচ্ছা করে বলেছেন?

— না, আমার সত্যিই মনে হচ্ছে।

— আপনি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে, এসব মনে আসা আপনাদের কাছে সাধারণ।

— আপনি জানা সত্ত্বেও এখনো আমার সাথে আছেন কেন?

— কারণ আপনাকে আমার খারাপ মানুষ বলে মনে হয়নি। পৃথিবীতে এমন খুব কম মানুষ-ই দেখা যায় যারা নিজেদের মনে অন্য ধরণের চিন্তা আনে-ই না। জীবনে একবার হলেও না। তবে নিজেদের সীমা মনে রেখে নিজেদের শুধরে নেওয়ার ক্ষমতা খুব কম মানুষের আছে। তার মধ্যে আপনিও পড়েন।

— এতোটা নিশ্চিত হলেন কি করে?

— মানুষ চিনতে আমি ভুল করি না বিলেতি বাবু।

দিশার বলা “বিলেতি বাবু” কথাটা আবার বিহানের বুকে তীরের মতো বিঁধল। এক চিনচিনে ব্যথা হলেও এই ব্যথায় কোন দুঃখ নেই, কষ্ট নেই। বরং এই ব্যথায় এক আলাদা সুখ আছে। সেটা একমাত্র যে অনুভব করবে, সে-ই বুঝতে পারবে।

— তাছাড়া আপনি আমার সাথে খারাপ কিছু করতে চাইলে আমি যে নিজেকে রক্ষা করতে পারব না , সেটা কি আমি একবারও বলেছি। তাই এখানে এসে চুপচাপ বসে পড়ুন।

বলেই বিহানের হাত ধরে টেনে নিজের পাশে পরিষ্কার জায়গায় বসিয়ে দিল দিশা। বিহান আবার সামনের দৃশ্য দেখায় মগ্ন হয়ে পড়লে ওর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কেউ গেয়ে উঠল,

“”তুমি যে আমার কবিতা,
আমার বাঁশির রাগিণী
আমার স্বপন, আধো জাগরণ
চিরদিন তোমারে চিনি
তুমি যে আমার কবিতা।””

কণ্ঠ চিনতে ভুল হলো না বিহানের। তবে গানের গলা অন্যরকম ঠেকল। আগের বারের মতো চিৎকার করে বেসুরো গলায় না, বরং বিহান আবিষ্কার করল দিশার মিষ্টি কণ্ঠ। যতক্ষণ শুনল, ততক্ষন মনে হলো কণ্ঠ দিয়ে মধু চুয়ে চুয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু করে। বিহান আনমনে আবার বলে উঠল,

— হঠাৎ?

— খুব বেশি কাউকে বিশ্বাস না করলে আমি কাউকে গান শোনাই না।

— আমি কি আপনার বিশ্বাসের যোগ্য?

— হতে পারেন।

— তাহলে এই গান?

— ইচ্ছা হলো, তাই গাইলাম।

— আম…

— বেশি কিছু ভাববেন না। এখন আর কথা বলার দরকার নেই। সামনে তাকান।

বলেই দিশা সেখান থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। বিহান সেখানে বসেই বলে উঠল,

— গ্রামের সবাই বলে আপনার সাথে না মিশতে। দিনে কয়েকবার করে এই কথা শুনতে হয়। আপনার মধ্যে কি এমন রহস্য আছে?

— আজ গান শুনলেন তো?

— হ্যাঁ?

— তাহলে ধরে নিন, সময় আসলে আমি নিজেই বলব।

— ততদিন যদি আমি না থাকি?

বলেই দিশার পাশে দাঁড়াল। এক পশলা হাওয়া তাদের ছুঁয়ে গেল। সেদিকে দুজনের কারোর খেয়াল নেই। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে যেন চোখের আড়ালে লুকিয়ে রাখা গোপন তথ্য খুঁজে চলেছে। কিন্তু দুজনেই ব্যর্থ। দিশা সামনে তাকাল।

গ্রামের প্রান্ত ধরে প্রাচীরের দিকে যেই রাস্তা গিয়েছে, সেদিকে চোখ পড়ল তার। মশাল হাতে একজন সামনে হেঁটে চলেছে। তাকে অনুসরণ করে পিছনে সারি বেঁধে গ্রামের যুবকরা হাঁটছে। কিছু কিশোরও আছে। বিহান দিশার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাল। তারপর নিজেই চমকে উঠল। ভাগ্যিস! আজ সেই খাবার না খেয়েও বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়েছিল। লুকিয়ে। তাই আজ আরেক গোপন তথ্য জানতে পারল। দিশার দিকে তাকিয়ে দেখল তার চোখে অবিশ্বাসের ছাপ। বিহান বুঝতে পারল ওদের সম্পর্কে দিশাও জানে না। ওরা যেতে যেতে একসময় অদৃশ্য হতে শুরু করল। শেষ মানুষটা অদৃশ্য হতেই দিশার ধ্যান ভাঙল। সে গোঙানোর স্বরে বলে উঠল,

— ভাইয়া।

এক মুহূর্তেই সে জানালা দিয়ে নামার চেষ্টা করলে বিহান বাঁধা দিল। সে দিশার কোমর দুই হাতে জড়িয়ে ধরে আটকাল। রাতের অন্ধকারে দিশাকে এভাবে ছাড়া ঠিক না। কিন্তু সে যেন দিশার সাথে পেরে উঠছে না। দিশা অস্পষ্ট স্বরে বার বার “ভাইয়া” বলছে আর বিহানের হাত খামচে শেষ করে দিচ্ছে। তবুও বিহান ছাড়ছে না। বিহান চমকে উঠল,

“দিশার তাহলে ভাইও আছে? কেউ তো বলেনি!”

দিশাকে থামান গেল অনেক কষ্টে। দিশা ছটফট করছিল সেখানে যাওয়ার জন্য। এমনকি জানালা দিয়ে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করছিল। যদিও সেখান থেকে লাফ দিলে সামনের কর্দমাক্ত রাস্তায় পড়ে নিজের ক্ষতি করার সম্ভাবনা বেশি। তবুও সেদিকে খেয়াল নেই তার। দিশার মূল কাজ যেন কোন ভাবে তার ভাইয়ের কাছে গিয়ে তাকে ধরে আটকানো। কেন তার ভাই ওদের সাথে গেল আর কিভাবে-ই বা সে অদৃশ্য হলো সেটা দিশা জানতে চায়। কিন্তু বিহান এসবের কিছুই বুঝতে পারছে না। বিহানের মাথায় তো তখনও এটাই ঢুকছে না যে সে এতদিন ধরে গ্রামে আছে, তাও জানতে পারল না সে দিশার একটা ভাই-ও আছে। কেউ তাকে বলেনি। এমনকি দিশার বাবা মা-ও না। এসবের কারণ কি হতে পারে? আর এতো রাতে-ই বা সে কোথায় যাচ্ছে। তবে এসবের থেকে বেশি যেই চিন্তা বিহানের হচ্ছে তা হলো দিশার সেখানে না যাওয়া। দিশা যদি সাবধানে যেত তাহলে বিহান আটকাত না। কিন্তু দিশা সেখানে যাওয়ার জন্য রীতিমতো পাগলামি করছে। অন্ধকার রাস্তায় কি হতে পারে সেদিকে খেয়াল না রেখে-ই যাওয়া যে নিতান্ত বোকামি, সেদিকে দিশার খেয়াল না থাকলেও বিহানের আছে। তাই সে দিশাকে আটকে রাখল। যতক্ষণ না দিশা শান্ত হয়। দিশা শান্ত হতেই তাকে আগের জায়গায় বসিয়ে দিল বিহান। কিছু সময় অপেক্ষা করার পর নিজেই কথা শুরু করল।

— কি হয়েছে দিশা? আপনি কিছুক্ষণ আগে এমন করছিলেন কেন? আর ভাইয়া বলে-ই বা কাকে ডাকছিলেন? আপনার ভাইয়া সম্পর্কে তো আগে কখনো বলেন নি!

দিশা বিহানের প্রশ্নের উত্তরে বলল,

— আমার ভাইয়া ছিল ওটা। দুর্জয় খন্দকার। কোন এক কারণে সে আমাদের সাথে থাকে না। নিজেই আব্বার সাথে ঝগড়া করে আলাদা থাকা শুরু করেছিল। তারপর থেকে তাকে দেখা ছাড়া কথা বলার সাহস হয়নি। মাঝে আব্বাও মানা করে দিয়েছিল। তাই চাইলেও কিছু করতে পারি নি। আব্বাকে অমান্য করার সাহস আমার নেই। আম্মার সাথেও ওর কথা হয় না। আর না হয় আমার সাথে। জানি না কেন, কিন্তু আমাদের যোগাযোগ কয়েক বছর আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই হয়তো কেউ বলে নি। অনেকে দেখবেন ভুলেও গিয়েছে যে আমরা ভাই বোন।

শেষ কথাটা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলে উঠল দিশা। কারো প্রতি মনে জমিয়ে রাখা অভিমানের পাল্লা অনেক ভারী হয়ে গিয়েছে হয়তো। কিন্তু সেদিকে কেউ নজর দেয় না। সেখানে ধুল জমে গেলেও কেউ পরিষ্কার করে না। দিশার মনে প্রচুর অভিমান জমেছে তার বড় ভাইটার জন্য। কবে শেষ হবে কিংবা আদৌ শেষ হবে কি না সেটা কারোর জানা নেই।

কিন্তু দিশার সম্পর্কে আরেকটা নতুন তথ্য আবার এলোমেলো করে দিল বিহানকে। সে জানতে চায় দিশা নামক মানুষটা সম্পর্কে। কিন্তু সেই অধিকার হয়তো আজও তার হয়ে ওঠে নি। তাই জোর করেও সবটা জানতে পারছে না। এই গ্রামে থেকে শুধু প্রশ্নের পাল্লা-ই ভারী হচ্ছে বিহানের। উত্তর মিলছে না কোন কিছুর। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সব ছেড়ে চলে যেতে। গাড়িও ঠিক করা লাগবে না। কিন্তু সমস্যা গাড়ি না, গাড়ির ভেতর থাকা তার জিনিসটা। সেটা না নিয়েও কোথাও যেতে পারবে না সে। আবার দিশাকে ছেড়ে দূরে যাওয়ার কথাও আপাতত ভাবতে চাচ্ছে না বিহান। ওকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবলে সেই অচেনা চিনচিনে ব্যথা বেড়ে যায় বুকে। সেটা সহ্য করতে ইচ্ছা করে না বিহানের।

বিহান আর বেশি কিছু ভাবল না। দিশা শান্ত হতেই ওকে বাড়িতে চলে যেতে বলল বিহান। শুরুতে দিশা না যেতে চাইলেও পরে দিশাকে নিয়ে এই রহস্য সমাধানে সে নিজে যাবে- এই আশ্বাস দিয়ে দিশাকে পাঠানো গেল। এরপর নিজের মনে মনে কিছুক্ষণ ভেবে নিল সব। এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে কিছু-ই হবে না। যা করার সব ভেবে চিনতে করতে হবে। এদিকে প্রশ্ন জমছে মনে। প্রতিবার নতুন প্রশ্ন যুক্ত হচ্ছে। প্রথমদিকে মকবুল মির্জার দিকে আঙুল না উঠলেও এবার উঠাতে বাধ্য হচ্ছে বিহান। গ্রামের সব ঘটনা যেহেতু তার নখদর্পণে, সেই হিসেবে অবশ্যই বলা যায় যে রাতে গ্রামের মানুষের সারি বেঁধে হেঁটে যাওয়া আর হুট করে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া তার অজানা কিছু নয়। তাও এক দুই জন কিংবা হাতে গোনা কিছু মানুষ হলে হত একটা কথা, তবে বেশ কয়েকজনের এভাবে রাতে বের হওয়ার ঘটনা যে স্পবার থেকে লুকিয়ে করা অতো সহজ নয়, সেটা বুঝতে বাকি নেই বিহানের। এদের উপরে কেউ একজন তো অবশ্যই আছে যে এদের সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সেটাই বের করার ভুত উঠেছে বিহানের মাথায়। সব ভেবে নিয়ে যেই না মির্জা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে, সেই ওর খেয়াল হলো যে চারপাশে অন্ধকার। সে চাইলেও এখান থেকে এখন যেতে পারবে না। তাই সূর্যোদয়ের অপেক্ষা করতে থাকল। নাহলে কাদায় পড়ে নিজের হাল বেহাল হয়ে যাবে আর গোয়েন্দাগিরি করার ভুত পালাবে মাথা থেকে। বিহান আগের জায়গায় বসে পড়ে দিশার সব কিছুর কথা মনে করতে থাকল। আজকের গানটা অপ্রত্যাশিত ছিল সত্যিই। তবে গ্রামের কেউ জানে না দিশার গানের ব্যাপারে, শুধু সে-ই জানে , বিষয়টা মনে পড়তেই মুখে এক হাসি খেলে গেল। অন্যরকম আনন্দানুভূতি হচ্ছে তার মনে। তারপ আজ আটকাতে গিয়ে দিশাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে হয়েছিল। ভাবতেই কান লাল হয়ে এলো বিহানের। অন্ধকারে দেখতে না পেলেও নিজে বেশ বুঝতে পারল সেটা। আপনাআপনি তার হাত চলে গেল নিজের কানে। গরম অনুভুত হতেই আরও লজ্জায় মিইয়ে গেল যেন বিহান।

__________

দিশার ভাবনায় ডুবে থাকতেই কখন যে ভোর হয়ে গেল, সেদিকে খেয়াল নেই বিহানের। সূর্যের আলো চোখে পড়তেই উঠে পড়ল বিহান। প্রথমে লুকিয়ে লুকিয়ে মির্জা বাড়িতে ঢুকতে হবে। আজ বেশ কিছু কাজ করতে হবে। শুধু শুধু বসে না থেকে কিংবা কোন অকাজ না করে নিজের সময়টুকু মস্তিষ্কের ব্যবহার করে সব বের করাই মূল কাজ। তার কিছু পদক্ষেপ পূরণ করবে আজ সে।

বাড়িতে ঢুকছিল ঠিক-ই কিন্তু তার আগেই মাথার ঘোমটা ঠিক করতে করতে বের হতে দেখা গেল মকবুল মির্জার স্ত্রীকে। বিহান তৎক্ষণাৎ দরজা দিয়ে ঢোকার বদলে উল্টো পথে পা চালাল। এমন ভাব যেন সে এই সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুতে কলপাড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেটাও সনেদ জনক লাগতে পারে বলে মনে হলো বিহানের। ঘুম সম্পর্কিত প্রশ্ন গুলো এখনো মনে ঘুরছে। তাই বিহান হাঁটার গতি ঠিক রেখেই নলকূপ পার করে সোজা শৌচাগারে চলে গেল। এমন এক ভাব যেন সে প্রাকৃতিক চাপে পড়ে সেখানে যাচ্ছে। সেখানের দরজা লাগিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। আর মনে মনে ভাবল,

“কি এক জমানা চলে আসলো, এখন কিনা এখানে লুকাতে হচ্ছে! হায়রে বিহান, তোর ভাগ্যে এটাই ছিল। এখানেই সারা জীবন পড়ে থাক।”

কিছু সময় পর বের হয়ে সেই ঘুম ঘুম ভাব চোখে রেখেই সতর্ক ভাবে আশপাশ আধ বোজা চোখে পরখ করে নিল।

“নাহ! কেউ নেই।”

সকলের অগোচরে এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করল বিহান। কেউ পাশে না থাকা সত্ত্বে। যেন দেওয়ালটা পর্যন্ত ওর এই সন্দেহের কথা কাউকে জানিয়ে দিবে। শব্দ না করেই নিজের ঘরে ঢুকে একেবারে দরজা আটকে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল। এখন আর ঘর থেকে বের হবে না। সূর্যের উত্তাপ যখন বেড়ে যাবে কিছুটা, তখন বের হবে প্রতি দিনের মতো করে। গ্রামে যেহেতু তার ঘুম দেরিতে ভাঙে শুরু থেকেই, তাই আর কষ্ট করে বের হলো না বিহান। তাছাড়া সারা রাত ঘুমানো হয়নি তার। তারপর শেষ রাতের দিকে দিশা চলে যাওয়ার পর ওর অপেক্ষা করতে হয়েছে সূর্য ওঠার। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য চোখ বন্ধ করতেই নিজের ক্ষুধার অস্তিত্ব টের পেল হাড়ে হাড়ে। নিজের পেট চেপে ধরল সে। হঠাৎ কি একটা মনে পড়তেই চোখ খুলে তাকাল। নিজের বিছানার নিচে থেকে থালা বের করে দেখল। ঢাকা ছিল বিধায় বেশি কিছু হয়নি। আপাতত এটাই চলবে। তাছাড়া থালাও তো ফেরত দিতে হবে। গতরাতে কৌশল করে খাবার নিজের ঘরে আনার পরিকল্পনা একটু হলেও সফল হয়েছে। খাবারের প্রতি টান ছিল না বিহানের এমন নয়, তবে গত রাতে তার মধ্যে দিশার সাথে চন্দ্রবিলাশ করার উত্তেজনায় পেট ভরে গিয়েছিল। আর ক্ষুধা লাগে নি, তাই খাবার ঘরে রেখে যেতেই বলেছিল। তারপর রাতে দেরি করে বের হলো সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে।

ভেবেছিল আর ঘুমাবে না। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ল বিহান। ঘুম ভাঙল বেশ সকাল করে। ঘুম থেকে উঠে যখন দেখল সূর্য একেবারে পূর্ব আকাশ থেকে উঠে মাথার উপরে অবস্থান করার উপক্রম তখন সে হুড়মুড় করে উঠে পড়ল বিছানা থেকে। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে তার। ভেবেছিল সকাল সকাল উঠে বাইরে যাবে। কিন্তু সেটা হলো না। বিহান কোন মতে হাত-মুখ ধুয়ে খাবার খেয়ে নিল। মুখে তার লজ্জা লজ্জা ভাব। যদি আসলে এতো লজ্জা লাগছে না তার। তবুও প্রকাশ করতে হচ্ছে। মানুষের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন না চাইতেও তাকে অনুভূতির অতি প্রকাশ ঘটাতে হয়। নাও চাইতেও হাসতে হয়, না চাইতেও দুঃখ প্রকাশ করতে হয়। এমনকি না চাইতেও লজ্জা পেতে হয়। মেয়েরা এটা সব চেয়ে ভালো বোঝে। তাদের বিয়ের জন্য যখন পাত্র দেখতে আসে, তখন তো মুচকি হাসি দিয়ে রাখতে রাখতে মনে হয় মুখে কেউ বাঁশ লাগিয়ে দিয়েছে। চাইলেও যেন আর মুখ নাড়ানো যায় না কিছুতেই। তবে যাই হোক, আজ বিহানের পরিস্থিতি কিছুটা তেমন। না চাইতেও লজ্জা পেতে হচ্ছে। নাহলে ছেলে বেহায়া বলে গণ্য হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।

খাবার শেষ করেই বের হয়ে পড়ল বিহান একা একা। গন্তব্য নিজের গাড়ি। এতদিন ধরে গাড়ি কি ঠিক করছেন মকবুল মির্জা সেটা দেখে আসতে হবে একবার। যদিও জানে না যে কোথায় খুঁজবে সেই গাড়ি। কিন্তু এক জায়গা থেকে শুরু করবে। তবে কিছুটা লুকিয়েই। ওর গাড়িটা রাখা হয়েছিল গ্রামের প্রান্তভাগে। সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই কারোর। না বিহানের আর না পুরো গ্রাম বাসীর। একেবারে অশরীরীর অস্তিত্ব তীব্রভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সবাইকে। তবে সকালে তো তারা আর দেখা দিবে না। তাই সাহস নিয়েই গেল। বিহানের ভয় অন্য জায়গায়। (লেখা- সাদিয়া সৃষ্টি) আগের রাতে যেভাবে মার খেতে হয়েছিল তার, সেই মার আবার খেতে চায় না সে। আবার মার খেলে তিনটে ঝামেলা হবে। এক তো তাদের হাতে মার খেয়ে হাড় ভেঙে আসতে হবে। দুই মকবুল মির্জা জেনে যাবেন সব। তারপর কিছু বলবেন কি না সেটা বিহানের জানা নেই। কিন্তু তার উপর নজর রাখা শুরু করবেন। আর তিন গ্রামের লোকেরা ভাববে তার উপর আত্মার ছায়া রয়েছে সেখানে যাওয়ার ফলে। এসবের জন্য লুকিয়ে যাওয়া শুরু করল। বন এলাকা হওয়ায় সুবিধা হলো বিহানের। কেউ সহজে বুঝতে পারবে না তার অস্তিত্ব। তাছাড়া লুঙ্গি পরিধান করে একেবারে এই গ্রামের মানুষ বলেই মনে হচ্ছে তাকে। শার্ট প্যান্টের অভ্যাস তো সেই কবেই চলে গিয়েছে। লুঙ্গির অভ্যাস গড়ে উঠেছে সেখানে। এখন লুঙ্গি পরে সে দৌড় প্রতিযোগিতায় নেমে প্রথম হবে- এই আত্মবিশ্বাস গাঢ় হয়েছে বিহানের। গাছগাছালি পার করে নিঃশব্দে এগিয়ে চলার প্রচেষ্টায় রইল সে। তবুও শব্দ তো হবেই। খালি পায়েই বের হয়েছিল। যার জন্য পায়ের অবস্থা আপাতত বেশ খারাপ। জঙ্গলের রাস্তায় কাঁটা পড়ে রয়েছে। তাতে না চাইতেও পা লেগে যাচ্ছে আর বিহান চাইলেও শব্দ করতে পারছে না। মুখে ডান হাত ভালো করে চেপে ধরেছে নিজের। যাতে একটু শব্দ হলেও সেটা আটকানো যায়। ঠিক জায়গায় পৌছুতেই থেমে গেল বিহান। কিন্তু সেখানে নিজের গাড়ি দেখল না। সরাসরি মাথায় হাত চলে গেল তার। এখানে যে গাড়ি থাকবে না সেটা সে জানত, তবে নিশ্চিত ছিল না। একটু যা আশা ছিল সেটাও গেল। শহরের সাথে যোগাযোগ করার আশাটা একেবারে শেষের দিকে। দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ঘাসের উপর বসে পড়ল হাঁটু ভেঙে। মাথা নিচু করতেই গাড়ির চাকার ছাপ দেখতে পেল। মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে বৃষ্টি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাল অনেক বার। চাকার ছাপ দেখে দেখে সামনে এগিয়ে চলল। মাঝে মাঝে আশেপাশেও খেয়াল করল যে কোনদিকে যাচ্ছে। ছাপটা দেখে মনে হলো বিহানের দুই দিনও হয়তো হয়নি গাড়ি সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার। এই দিক থেকে বেশ রাগ হলো বিহানের। গাড়ি এতদিন এখানে রেখে দিয়েছিল। তল্লাশি চালায় নি তো? চিন্তা আসলেও বেশি সময় স্থায়ী হলো না। তল্লাশি চালিয়ে গাড়ি ভেঙে টুকরো টুকরো করলেও বিহানের জামাকাপড় ছাড়া কিছুই পাবে না ওরা। বড়জোর বড় ও ছোট আকারের জামা কাপড় পাবে। এর থেকে বেশি কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে যদি বুদ্ধিমান কেউ একটু বুদ্ধি খাটায় তাহলেই সমস্যা। তাই আবার চাকার ছাপ অনুসরণ করতে লাগল সে।

অনুসরণ করতে করতে এক জায়গায় এসে থেমে গেল। সামনে আর কোন ছাপ নেই। সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে প্রথমে হালকা কিছু মনে করার চেষ্টা করল। সফল ও হলো। সামনে মাটির কুঁড়েঘর দেখেই বুঝতে পারল এটা গত কালের ঘর। এখানে সে আর দিশা ছিল। তারপর নিজের অবস্থান খেয়াল করল। তার মনে পড়ল এখান থেকেই গত রাতে দুর্জয় সহ বাকিরা অদৃশ্য হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বিহান কি করবে সেটা ভেবে পেল না। নিজেই সামনে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করতেই কোন অদৃশ্য কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ল কিছু দূরে। সে আবার উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করল। হাত থেমে যেতেই তার মনে হলো,

“সত্যিই কি এখানে আত্মাদের বসবাস রয়েছে? এখানকার আত্মাগুলো কি বেশি শক্তিশালী? দিনের বেলায়ও শক্তি ব্যবহার করতে পারছে। অদ্ভুত তো!”

তারপর নিজের মনে মনে নিজেকে গালি দিল। গতকাল দিশাকে বোঝাল নিজে যে এসব বলে কিছু হয় না। এখন নিজেই এসব ভাবছে। বিহান হাত দিয়ে সেই অদৃশ্য দেওয়াল ধরেই নিজের বাম দিকে হাঁটা ধরল। সোজা পথ। একটা সময় গিয়ে হাতে কিছু অনুভব না করতেই থেমে গেল সে। কানের পানির আওয়াজ আসতেই ধ্যান ভাঙল তার। এখানে নদী। স্রোতের শব্দ শুনতে পারছে সে। আর সে নিজেও এসে দাঁড়িয়েছে একেবারে কিনারে। কিছুক্ষণ ভাবার পর নদীর পানিতে নিজের পা ধুয়ে নিল। বেশ জ্বলছিল পা দুটো তার। তারপর অদৃশ্য দেওয়াল ধরে নিল। দেওয়ালের কোনা ধরে কিছুটা নিজের ভারসাম্য ঠিক রেখে কিছুটা বাঁকা হয়ে ওপারে চলে গেল। সামনের দৃশ্য একই রকম আছে। দেওয়াল এর উপর ভর না ছেড়ে শুধু ছুঁয়েছিল সে। যাতে করে বুঝতে পারে দেওয়ালের পুরুত্ব কতোটুকু। আর নিজের ভারসাম্য ঠিক রেখে চলায় আর পড়ে গেল না। কিন্তু অবাক হল। এমন অদ্ভুত দেওয়াল যে দিনের বেলা ভুতের কারবার হবে না সেটা বেশ ভালো ভাবেই বোঝা গেল। তবে এই বিষয়টা তাকে ভাবাল। সে বেশি সময় না ভেবে আবার নিচের দিকে তাকাল। চাকার ছাপ আবার শুরু হয়েছে। সেটা অনুসরণ করেই চলতে চলতে পৌঁছে গেল রাজ বাড়ির কাছে। তবে সরাসরি রাজবাড়ীতে না। তার পাশ ঘেঁষে আরও কিছু দূরে। সেখানে এক বিশাল ঘর। কারখানা ধরণের যেন। বিহান এই নিয়ে বেশি গবেষণা না করেই সেখানে ঢুকে গেল লুকিয়ে লুকিয়ে। মূলত গাড়িটা নেওয়া হয়েছিল সেই কারখানার পিছন দিক দিয়ে। তাই লুকানোর বেশি প্রয়োজন পড়ল না। সেদিকে মানুষের অস্তিত্ব একেবারেই নেই। এর মাঝে রাজ বাড়ির কথা তার মাথা থেকে বের হয়ে গেল।

নিজের গাড়ির কাছে গিয়ে সবটা ভালো করে দেখে নিল। তল্লাশি চালিয়েছিল ওরা। কিন্তু ভালো করে চালায় নি। শুধু তার জামাকাপড়ের ব্যাগটা পিছন থেকে সামনের সিটে চলে এসেছে। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র সব ঠিক দেখে মনের একটা চিন্তা দূর হলো। বিহানের ভাগু ভালো যে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তল্লাশি চালায়নি। এখন সে আরও কিছুদিন নিসচিন্তে থাকতে পারবে। তবে সেখানে ভালো করে দেখে নিল একবার। কারখানার পেছনের একটা ঘরে রেখে দেওয়া ছিল গাড়িটা। এখানে বিশাল জায়গা জুড়ে ঘরটি। বিহান চাকার ছাপ দেখে আন্দাজ করল ট্রাক জাতীয় গাড়ি এখানে রাখা হয়। এটা যে কারখানা। সে সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ায় যেন তার সাহস আরও বেড়ে গেল। ঘরটায় ২ টা দরজা। একটা দরজা বাইরের দিকে। আরেকটা দরজা দিয়ে হয়তো কারখানার ভেতরে প্রবেশ করা যায়। তবে সেটা একটু অন্যরকম। সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে ছোট একটা দরজা। মানুষের যাতায়াতের জন্য। বিহান আর দেরি না করে সেখানে উঠে পড়ল। গলায় ঝুলিয়ে রাখা গামছাটা মুখ জড়িয়ে নিয়ে মাথায়ও ভালো করে পেঁচিয়ে নিল। শুধু মুখ লুকালে ডাকাত ডাকাত মনে হয় – এমন ধারণা বিহানের। তাই মাথায়ও পেচালে যে শ্রমিক মনে হতে পারে, সেই চিন্তা থেকে এই ব্যবস্থা। দরজাটা হালকা ধাক্কা দিতে যাবে এমন সময় কারো পায়ের শব্দে সে সরাসরি নিচে নেমে গাড়ির পেছনে লুকাল ঠিক করে। তারপর সরাসরি গাড়ির নিচে চলে গেল। দোতলা থেকে যে গাড়ির পেছনের অংশ দেখা যাবে না- এটা ভাবা বোকামি। বিহানের ভাবনা সঠিক করে দিয়ে একটা লোক কথা বলতে বলতে দরজা খুলে ফেলে। নিচে নামার জন্য উদ্যত হতেই কারো ডাক পেয়ে আবার দরজা লাগিয়ে দেয়। বিহানের দৃষ্টি এতক্ষণ দরজাতেই ছিল। দরজা খুলে দেওয়ার পর যন্ত্রপাতির শব্দ তার কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। অবশ্য যন্ত্রপাতির পাশাপাশি মানুষের আওয়াজ কিংবা তাদের পায়ের শব্দও কম ছিল না। বিহান তৎক্ষণাৎ সে স্থান ত্যাগ করল। পূর্বের নিয়মে আবার সেই অদৃশ্য দেওয়াল পার করে আগের জায়গায় ফিরে এলো। তারপর আগের বাঁকা পথ না ধরে সোজা পথে হাঁটা ধরল খন্দকার বাড়ির উদ্দেশ্যে।

__________

সময়টা বিকাল। খন্দকার বাড়ি থেকে বাচ্চাদের চিৎকার বেশ ভালোই শোনা যাচ্ছে। দিশাকে আবার ওদের সাথে বাচ্চাদের মতো করে খেলতে দেখে সেদিকেই চোখ আটকে গেল। দিশা বাদে বাকি সব ঘোলা হয়ে গেল। এক শীতল অনুভূতি বয়ে গেল রক্তনালি বেয়ে। এতক্ষনের পায়ের জ্বালাময় অনুভূতিও চলে গেল মুহূর্তেই।

বিহান যখন দিশার ভাবনায় ডুব দিয়েছিল, তখন তার কানে এলো ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজ। অবশ্য মহিলা দুজন যে বিহানকে শুনিয়েই কথাগুলো বলতে চেয়েছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সেই পুরনো কথা।

দিশার সাথে মেলামেশা করা উচিত না। মেয়েটা ভালো না। বাচ্চাদের আটকে রাখতে চেয়েও পারি না।

এধরনের সব কথা। বিহান সেদিকে আর মন দিল না। বিহানের ভাবতেই ইচ্ছা করে না যে কখনো এমন দিনও আসবে যখন এই গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। দিশাকে তখন আর এক পলকের জন্যও দেখতে পারবে না। এসব ভাবতেই চোখ লাল হয়ে এলো। রাগে নাকি দুঃখে বোঝা গেল না। কিন্তু মহিলা দুটো বিহানের এমন লাল চোখ দেখে সেখান থেকে সরে গেলেন।

কিছু সময় পর বাচ্চাগুল পাশাপাশি সমবয়সী সবাই নিজের বাড়ি চলে যেতে লাগল। দিশা নিজের বাড়ির ভেতর ঢোকার আগে একবার আশেপাশে তাকাতেই বিহানকে চোখে পড়ল। সেখানে পা জমে গেল তার। বাড়ির ভেতর ঢোকার শক্তি থাকল না যেন। সব চিন্তা এলোমেলো হয়ে এলো। বিহানের দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস হলো না হঠাৎ করে। চোখ নামিয়ে ফেলতেই তার দৃষ্টিতে আসলো বিহানের পা। ক্ষত ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে সেখানে। পায়ের পাতায় যে আরও ক্ষত আছে সেই বিশ্বাসও আছে দিশা। সে সব চিন্তা রেখে ছুটে গেল বিহানের কাছে। তারপর তার হাত ধরে সোজা টেনে নিয়ে গেল শান্তিপুকুরে। পা ভালো করে ধুয়ে দিয়ে সেখানে নিজেই গাছের পা ছিঁড়ে সেখানে লাগিয়ে দিল। দিশার কাজ গুলো এতো দ্রুত ছিল যে সবটা বুঝতে অনেক সময় লেগে গেল বিহানের। আর যখন বুঝতে পারল যে দিশা তার পায়ে হাত দিয়েছে, তখন বসা অবস্থাতেই পা সরিয়ে নিল। দিশা উঠে দাঁড়াল বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য। আজ সজ্ঞানে সে বিহানকে ছুঁয়েছে। হোক না সেটা বিহানের পা, কিন্তু ছুঁয়েছে তো! তার জন্য হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তার। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো বিহানের কাছে বসে থাকলে বিহানও তার অবস্থা বুঝতে পারবে। নিজের অনুভূতি লুকাতে সেই স্থান ত্যাগ করাই শ্রেয় ঠেকল দিশার কাছে। সে উঠে বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই বিহান বলে উঠল,

— আপনার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

দিশা থেমে গেল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করল প্রথমে। ঘুরে বিহানের দিকে মুখ করে দাঁড়াল। বিহান আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ একজন এসে দিশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে উঁচু করে ঘোরাতে শুরু করল।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here