Revenge (পর্ব ০৩)

#Revenge (পর্ব ০৩)
#Tisha_Islam_Nabila
·
·
·
আয়াশ হেসে দিয়ে নাবিলার মুখে পানি মারলো। এতে নাবিলা ধরফরিয়ে উঠে গেলো। উঠেই আয়াশ কে দেখে ভয়ে কাঁপছে। তার উপর পোড়া হাতে অসহ্য জ্বালা করছে। আজকে নাবিলার মনে হচ্ছে এর চেয়ে মরন ভাল। আয়াশ মুচকি হাসি দিয়ে বললো..!!

—–বেবী তোমার বাম হাত দাও..!!

নাবিলা ভয় পেয়ে তুতলিয়ে বললো..!!

—–কেকেকেন??

আয়াশ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো..!!

—–আমি বলেছি তাই দিবি তুই। আসলে কি হয়েছে বলোতো?? তোমার তো বেশী সাহস তাইনা?? তাই আজকে আমাকে ডান হাতে থাপ্পর মারলে। ওই হাতের ব্যবস্থা তো করলাম বাম হাতের করবো না??

নাবিলা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো..!!

—–এমন কেন করছো তুমি?? আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে আয়াশ। আর আমি তো বাম হাতে তোমাকে মারিনি তাহলে??

আয়াশঃ ওই হাত যাতে কখনো আমার গায়ে না ওঠে। তাই সেই ব্যবস্থা করবো বেবী দাও..!!

নাবিলা কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। উঠে দৌড় দিতে চাইলো বাট পারলো না। তার আগেই আয়াশ ধরে ফেললো। নাবিলা ছটফট করতে করতে বললো..!!

—–আয়াশ প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে। আমার এই হাতে ভীষন জ্বালা করছে। আবার আরেক হাত পুড়িয়ে দিয়োনা। এরথেকে আমাকে মেরে ফেলো প্লিজ..!!

কে শোনে কার কথা?? আয়াশ নিজের মধ্যে নেই এখন। ওর মাথায় ঘুরছে জাস্ট এন্ড জাস্ট রিভেন্জ নিতে হবে এটা। তাই ও আগুনে পোড়া লোহার শিকটা। নাবিলার বাম হাতে চেপে ধরলো। নাবিলা আবারও চিৎকার করে উঠলো। আজ হয়তো এই চিৎকারও বলছে। আমি বাঁচতে চাইনা আমি মরতে চাই। প্লিজ লেট মি ডাই প্লিজ লেট মি ডাই। নাবিলা আবারও সেন্সলেস হয়ে গেলো। আয়াশ পাগলের মতো হাসতে লাগলো..!!

আয়াশঃ আবারও সেন্সলেস হয়ে গিয়েছো?? এখনোতো অনেক কিছু বাকি। অবশ্য সেন্সলেস হয়েই ভাল হয়েছে। সেন্স আসার পর আবার তোমার ছটফটানি। তোমার কান্না যে দেখতে পাবো..!!

বলে আয়াশ নিচে গেলো। নিচে গিয়ে শিকটা রেখে এলো। আর সাথে করে কিছু নিয়ে এলো। রুমে এসে নাবিলা কে ফ্লোর থেকে তুলে। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হাত ব্যান্ডেজ করে দিলো। এরপর ওয়েট করতে লাগলো কখন সেন্স আসবে। অনেকক্ষণ পর নাবিলার সেন্স এলো। সেন্স আসতেই মনে হলো কলিজা বেরিয়ে যাচ্ছে। হাতগুলো খুব বেশীই জ্বালা করছে। নাবিলা ছটফট করতে লাগলো খুব। আর জোরে জোরে চিৎকার করে কান্না করছে। আয়াশ সোফায় বসে মিটিমিটি হাসছে। নাবিলা টান দিয়ে দুই হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেললো। ব্যান্ডেজ খুলেই পাথর হয়ে গেলো। হঠাৎ করেই কান্না থামিয়ে দিলো। দুই হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। দুই হাতেই গুড়া মরিচ লাগানো। আয়াশ শিকটা রেখে তখন গুড়া মরিচ এনেছিলো। আর এটা আগে লাগিয়েই জাস্ট দেখানো ব্যান্ডেজ করে। আয়াশ নাবিলা থেমে যাওয়ায় ভ্রু কুঁচকে বলে..!!

—–একি কাঁদছো না কেন?? হাতে বুঝি আর জ্বালা করছে না??






নাবিলা তবুও কিছু বলছে না। আয়াশ সোফা থেকে উঠে। নাবিলার কাছে গিয়ে দাড়ালো। নাবিলা দুটো হাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়াশ নিজেও এবার তাকালো। তাকিয়ে নিজেই ভয় পেয়ে গেলো। হাতের দিকে তাকিয়ে ফ্লোরে তাকালো। ফ্লোর রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। আয়াশ নিজের মাথায় হাত দিয়ে বললো..!!

—–ওহ শিট এত রক্ত?? না না এভাবে বেশীক্ষণ রাখা যাবেনা। তাহলে বেশী বেশী হয়ে যাবে। যদি ও মরে যায় তখন?? নো নো আমার ইচ্ছে ওকে তিলে তিলে মারা। তাই এত সহজে ও মরতে পারেনা..!!

আয়াশ দৌড়ে নিচে গিয়ে রান্নাঘর থেকে বরফ আনলো। এরপর ওয়াসরুমে গিয়ে পানি নিয়ে এসে। নাবিলার হাত পানির মধ্যে রাখলো। কারন আগে গুড়া মরিচ ধোয়া উচিত। পানির মধ্যে হাত রাখতেই নাবিলা চিৎকার করলো। আয়াশ খুব সাবধানে হাত ধুয়ে হাতে বরফ লাগাচ্ছে। খুব আস্তে আস্তে নাবিলা কেঁদেই যাচ্ছে। আয়াশ কে ভীষন ভয় লাগছে ওর। থরথর করে কাঁপছে আর ঘামছে। মনে মনে আজকে নিজেই বলছে..!!

—–এত ভালবাসা কেন দিলো সবাই?? কোনদিন একফোটা কষ্ট আমি পাইনি। কেউ ফুলের টোকাও লাগতে দেয়নি। আর এখন আমি মার খাচ্ছি পুড়িয়ে দিচ্ছে আয়াশ। পাপা এত আদর ভালবাসা না দিয়ে। তুমি তোমার প্রিন্সেস কে একটু সাহসী করতে পারলে না?? পাপা, মাম্মি, ভাইয়া, আপু কোথায় তোমরা??

আয়াশ বরফ লাগানো শেষে। মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। এরপর ইনজেকশন আনলো নাবিলা তো ইনজেকশন নিতে ভয় পায়। যদিও নিজেও একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। কিন্তুু ইনজেকশন নিতে খুব ভয় পায়। আয়াশ চোখ গরম দিতেই নাবিলা আর কিছু বললো না। আয়াশ ইনজেকশন দিতেই নাবিলা ঘুমিয়ে পড়লো। আয়াশ এরপর আরো একটা ইনজেকশন দিলো। এটা জ্বালা পোড়া কমানোর জন্য দিলো। আয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে মিশানের রুমে এলো। আসতেই মনে পড়লো সেই রাতের কথা..!!

#অতীত..!!

বাড়ি থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে। বেরিয়ে যাচ্ছে মিশান তাতে প্রবলেম নেই। কিন্তুু এখন রাত বাজে ১২টা। আয়াশ সিরি থেকে দেখেই দৌড়ে নিচে এলো। এসে মিশানের কাছে গিয়ে বললো..!!

—–কোথায় যাচ্ছিস??






আয়াশ গিয়ে সব লাইট জ্বালালো। মিশান কে দেখে আয়াশ অবাক। ফর্সা মুখটা পুরো লাল হয়ে গিয়েছে। চোখগুলো ফুলে গিয়েছে। চুলগুলো উস্কো খুস্কো হয়ে আছে। আয়াশ অবাক হয়ে বললো..!!

—–মিশান এটা কি অবস্থা তোর??

মিশানঃ আমি বাইরে যাচ্ছি ভাইয়া..!!

মিশান আয়াশের ২বছরের ছোট..!!

আয়াশঃ হোয়াট?? এতরাতে কোথায় যাচ্ছিস??

মিশান মনে মনে তাচ্ছিল্য হেসে বললো..!!

—–আমার আর ফেরা হবেনা ভাইয়া। এটাই আমার লাস্ট টাইম রে..!!

আয়াশঃ কি রে বলছিস না কেন কিছু??

মিশানঃ জাস্ট একটা কথা বলবো ভাইয়া। আরসাল চৌধুরীর মেয়ে কে ক্ষমা করিস না তুই..!!

বলে মিশান বেরিয়ে গেলো। আয়াশ মিশানের বলা কথা ভাবছে। মিশান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। আয়াশ কিছুই বুঝতে পারলো না। আয়াশ ওখানে বসেই সব ভাবতে লাগলো। এরপর মিশানের রুমে গেলো আর গিয়েই। একটা ডায়েরী পেলো বিছানায়। ডায়েরী পড়েই আয়াশ রেগে গেলো খুব। এভাবে ২ ঘন্টা চলে গেলো আয়াশ রাগে ফোস ফোস করছে। শেষের একটা পাতায় কিছু লেখা দেখেই। আয়াশের হাত থেকে ডায়েরীটা পড়ে গেলো..!!

আয়াশঃ নো মিশান ইউ কান্ট..!!

আয়াশ মিশান কে কল দিচ্ছে। কিন্তুু বার বার সুইচড অফ বলছে। আয়াশ তাড়াতাড়ি ওর বাবা কে ডাকলো। রায়হান খাঁন আর মিতা খাঁন নেমে এলো..!!

মিস্টার খাঁনঃ কি হলো আয়াশ??

আয়াশঃ পাপা মিশান..!!

মিসেস খাঁন উত্তেজিত হয়ে বললো..!!

—–কি হয়েছে মিশানের??

আয়াশ সবটা বললো ওনাদের। ওনারা দুজনেই ভয় পেয়ে গেলো খুব। মিসেস খাঁন কান্না করতে লাগলো। মিশানের ফোন এখনো সুইচড অফ। একটু পর ল্যান্ড লাইনে কল এলো। আয়াশ দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরলো। আর যা শুনলো আয়াশ ধপ করে বসে পড়লো। মিস্টার এন্ড মিসেস খাঁন তাড়াতাড়ি এলো..!!

মিসেস খাঁনঃ আয়াশ কি হলো??

আয়াশ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো..!!

—–মিসেস খাঁন মি মি মিশান..!!

#এখন..!!

আয়াশ মিশান বলে চিৎকার করে উঠলো। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে এখনো। দরজার পাশে দাড়িয়ে দেখছে মিস্টার এন্ড মিসেস খাঁন। দুজনেই চোখ মুছে নিজেদের রুমে গেলো। মাএই এসেছে ওনারা আর এসেই এখানে আসে। কারন ওনারা জানতো এটাই দেখতে হবে। আয়াশ দাতে দাত চেপে বললো..!!

—–আমি আজও ভুলিনি সেই রাতের কথা। সেদিন আমরা আমার ভাইয়ের লাশ দেখেছিলাম। আমার ভাই কত কষ্ট নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলো। যে নিজেই নিজের এক্সিডেন্ট করে দিলো। সেই রাতে সব শেষ হয়ে গেলো। চলে গেল আমার মিশান আমাকে ফেলে। আমাদের পরিবার কে ফেলে। শুধু তোমার জন্য নাবিলা। খুনী মেয়ে একটা তুমি..!!

আয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সকালে নাবিলা ড্রয়িংরুমে এলো। তখনই মিসেস খাঁন বললো..!!

—–একি তোমার হাতে কি হয়েছে??

নাবিলা সত্যিটা বললো না..!!

—–তেমন কিছু হয়নি মামনি..!!

আয়াশ কোথা থেকে এসেই। নাবিলার চুলের মুঠি ধরলো। মিসেস খাঁন রেগে গিয়ে বললো..!!

—–এটা কি করছো তুমি??

আয়াশঃ সেই কৈফিয়ত আপনাকে দেবোনা। সৎ মা আছেন সৎ মা থাকেন..!!

বলে নাবিলার চুলের মুঠি ধরেই রুমে গেলো। আর নাবিলা তো অবাক হয়ে গেলো। মনে মনে নিজে নিজেই বললো..!!

—–সৎ মা মানে?? এটা আয়াশের নিজের মা না??

নাবিলার ভাবনার মাঝেই আয়াশ। নাবিলা কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো। নাবিলা গিয়ে পড়লো ফ্লোরে তবে খাটের কোনায় কপাল লাগলো। যার কারনে কপাল কেটে রক্ত বেরিয়ে গেলো। নাবিলা আহ বলে চেচিয়ে উঠলো। আর হাতেও ব্যথা পেলো অনেক। রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে হাত থেকেও। আয়াশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সোফায় বসলো। একটুপরই এসে নাবিলার হাতের উপর দাড়ালো। নাবিলা জোরে চিৎকার করছে। তবে আয়াশ আগেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারনে নাবিলার চিৎকার আজও কেউ শুনতে পেলোনা। আয়াশ শয়তানি হাসি দিয়ে দাড়িয়েই আছে..!!
·
·
·
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here