EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ১৪,১৫

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ১৪,১৫
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১৪

নেহাকে নিয়ে কলেজে গেলাম।নেহাকে ওর বান্ধবীদের কাছে দিয়ে আমি
আমার বন্ধুদের কাছে গেলাম। বন্ধুদের কাছে যাতেই ইকবাল [( ইকবাল
হলো আমার বন্ধু।আরো দুজন আছে। শাকিব আর রিয়াদ)] বললঃ সাহিদ
দোস্ কলেজে নাকি একটা ইংলিশ জয়েন করবো।

রিয়াদঃ শালা তোর তো শুধু মেয়েদের কথা। কোথায় নতুন মেডাম
জয়েন করবে, কোথায় নতুন ম্যাডাম প্রাইভেট পড়াবে এসব। ছেলেটা
কেবল আসলো কেমন আছে তা জিজ্ঞাসা না করে তিনি শুরু করেছেন
ম্যাডামের কথা।

রিয়াদের কথা শুনে আমরা হেঁসে দিলাম আর ইকবাল শুধু রাগে
ফোসতেছে।

আমিঃ দোস্ত এসব বাদ দে। ইকবাল নতুন ম্যাডাম ম্যারিড নাকি
আনম্যারিড রে ?

ইকবালঃ আমি কেমন করে বলবো😞😞😞( গম্ভীর ভাবে)

রিয়াদঃ সরিরে দোস্ত,রাগ করিস না প্লিজ। তুই রাগ করলে আজকে
আমাদের খাওয়াবে কে?

ইকবালঃ মানে?(অবাক হয়ে)

আমিঃ শালা মানে বুঝিস না। আজকে তোর খাওয়ানোর
তারিখ।

ইকবালঃ ভাই আজকে আমার কাছে টাকা নাই। আজকে আমি
পারবো না।

শাকিবঃ পারবি না বললে তো আমরা শুনবো না।তুই এর আগে আমার থেকে
জোর করে খাইয়ে ছিলি,,।

ইকবালঃ ভাই তোরা বুঝার চেষ্টা কর।(করুন সুরে)

আমিঃ কোনো বুঝা বুঝি নেই খাওয়াবি নাকি তোর গার্লফ্রেন্ডকে
উল্টোপাল্টা কিছু বলতে হবে 😎😎😎।(ভাব নিয়ে)

ইকবালঃ না না তোকে কিছু বলতে হবে না। আমি রাজি আছি।
শালা তোরা বন্ধু নাকি শত্রু।

আমিঃ এইতো গুড বয়। যা ভাবিস ,,চল।

এরপরে আমরা চারজন মিলে ক্যান্টিনে গেলাম। যাওয়ার পরে তিনজন
ইচ্ছে মতো খেলাম, ইকবাল তো নিজের টাকায় বেশি খাবে না।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে টেবিল থেকে উঠতেই দেখি নেহা আর ওর
কয়েকটা বান্ধবী ক্যান্টিনে আসতেছে।

আমি বললামঃ আপু তুই এখানে? কী খাবি?

নেহাঃ ভাইয়া ফুচকা খেতে মন চাইলো, তাই আসলাম।

আমিঃ আচ্ছা তোরা যায়ে টেবিলে বসিয়ে পড়। আমি অর্ডার করতেছি।

নেহাঃ না ভাইয়া, তুই যা আমরা খাচ্ছি।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।আর এটা নিয়ে রাখ।

নেহার হাতে কিছু টাকা দিয়ে আসলাম। চারজন মিলে ক্লাসে গেলাম।
ক্লাস শুরু হতেই পিয়ন এসে বললেন এই ক্লাসের শেষে প্রিন্সিপাল স্যার
আমাদের নাকি হলো রুমে যেতে বলেছে।

ক্লাস শেষ করে আমরা সবাই কলেজের হলরুমে গেলাম।যায়ে দেখি প্রিন্সিপাল
স্যার এখনো আসেনি।

আসলে আমাদের ক্লাসে অনেক ছাত্র ছাত্রী প্রায় আড়াইশো জন। এজন্য স্যার
আমাদের হলরুমে ডাকলেন।

যাইহোক আমরা আমাদের আসনে বসে গেলাম। একটু পরে স্যার আসলেন।
আমরা সকলে সালাম দিলাম। স্যার সালামের জবাব দিয়ে বলতে
লাগলেনঃ প্রিয় শিক্ষার্থী বিন্দু তোমরা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছো যে,
আমাদের কলেজে একটা ইংলিশ টিচার জয়েন করবে। আমাদের এই কলেজের
নীতি অনুযায়ী যদি কোনো টিচার জয়েন করে তাহলে আমরা সেই টিচারকে একটা
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানাই।
এবারও এটার ব্যতিক্রম হবে না।

সবাইঃ জ্বি স্যার।

আমিঃ কবে জয়েন করবে স্যার?

প্রিন্সিপাল স্যারঃ আগামী ২২ তারিখে কলেজে একটা প্রোগ্রাম আছে
আর সেদিন তোমাদের নতুন টিচার জয়েন করবেন। তোমাদের এই কথা গুলো
বলার উদ্দেশ্য হলো তোমরা হলে এই কলেজের সিনিয়র। সকল কিছু করার দায়িত্ব
তোমাদেরই থাকে। এক কথায় তোমরা এই কলেজটা কে মাতিয়ে
রাখো। আর এই বারের যে অনুষ্ঠান হবে তার আয়োজন কিন্তু
তোমাদের কেই করতে হবে।

সবাইঃ ঠিক আছে স্যার।

প্রিন্সিপাল স্যারঃ এই অনুষ্ঠানের সকল কিছুর দায়িত্ব থাকবে
তোমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় সাহিদ হাসান সাহির উপর।আর আমি আশা
করি সে এই কাজে কোনো অবহেলা করবে না।সাহিদ হাসান দাঁড়াও।

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।
প্রিন্সিপাল স্যার বললেনঃ তোমার কি এই কাজে কোনো সমস্যা আছে?

আমিঃ না স্যার। কোন সমস্যা নেই।

প্রিন্সিপাল স্যারঃ গুড। আজকে ১৮ তারিখ।আর বাকি তিন দিন।
যা করার ভালোভাবে করবে।তাহলে তোমরা যাও।আর সাহিদ তুমি আমার
সাথে দেখা করবে।

আমিঃ ঠিক আছে স্যার।

আমরা সবাই হলরুমে থেকে বের হয়ে ক্লাসে গেলাম।সব ক্লাস
শেষ করে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে গেলাম।

আমিঃ মে আই কাম ইন স্যার।

প্রিন্সিপাল স্যারঃ ইয়েস,, আসো।

আমিও রুমের ভেতরে গেলাম। স্যার আমাকে বললেনঃ
সাহিদ শোন তোমাকে কিন্তু সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আমিঃ জ্বি স্যার।

প্রিন্সিপাল স্যারঃ আমি তোমাকে কিছু কথা বলি আর এইভাবেই এই
অনুষ্ঠানের সকল কিছু প্রস্তুত করবে।

আমিঃ ঠিক আছে স্যার।

এরপরে প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে কিছু কাছে কথা বললেন
যেগুলো করলে অনুষ্ঠানটি ভালো ভাবে প্রদর্শিত হবে।

স্যারের রুম থেকে বের হয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেহার কাছে গেলাম।
এরপরে নেহাকে ক্যান্টিনে নিয়ে যায়ে একপ্লেট ফুচকা অর্ডার করলাম।
আর সেটা নিজ হাতে নেহাকে তুলে খাওয়ালাম‌।

এটা আমার প্রতিদিন কলেজ শেষের ডিউটি আর কি😁😁😁।
প্রতি দিন কলেজ ছুটির পর নেহাকে নিজ হাতে ফুচকা খাওয়াই।
এতে আমাকে খুব ভালো লাগে। এই বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করে না।
কারণ,সবাই জানে আমরা ভাইবোন।

যাইহোক, আমার আপুকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে গোসল করে নামাজ পড়লাম।নেহার নামাজ পড়ে।

নামাজ পড়ে দুই ভাই বোন একসাথে লাঞ্চ করতে বসলাম।
আমি আমার আপুকে তুলে খাইয়ে দিচ্ছি আর আপু আমাকে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আপুর রুমে যায়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে
আমি আমার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।

বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসরের নামাজ পড়ে আপুর রুমে
গেলাম।যায়ে দেখি আপু নামাজ পড়তেছে।

এরপরে দুই জনে হালকা নাস্তা করে গাড়ি( আব্বুর কার) নিয়ে বের হলাম এতিমখানায়।

আর হ্যাঁ আমি একটা এতিম খানা তৈরি করেছি। সেটা আজ থেকে প্রায় আট
থেকে নয় মাস আগে।এতিম খানা তৈরি করার আগে আমি আর নেহা দুজনে
বিকেলের দিকে ঘুরতে গিয়েছিলাম একটা লেকের পাড়ে। সেখান থেকে ফিরে
আসতে রাত প্রায় নয়টার বেজে গিয়েছিলো।

আর তখন ছিলো শীত কাল। শীতকালে রাত নয়টা মানে অনেক
রাত।বাইক নিয়ে আসতেছি হঠাৎ নজর পড়লো কয়েকটা পথ
শিশুর উপর।
আমি বাইক নিয়ে ওদের কাছে গেলাম।বয়স হয়তোবা ছয় সাত
এরকম হবে।রাস্তাও ধারে শুয়ে আছে আর শীতে কাঁপতেছে। যাদের
কাছে একটা করে পাতলা কাপড় আছে তাদের গায়ের সাথে
অন্যজনেরা লেপ্টে আছে।

তবুও তারা শীতের সঙ্গে পেরে উঠতে পারতেছে না।
পাশেই একটা বাচ্চাকে দেখে চমকে উঠেছিলাম।কারণ
তার গায়ে কোন কাপড় ছিলনা। শুধু পড়নে যেটা ছিলো
সেটাই আছে। একেতো সে ছোট বাচ্চা চার থেকে পাঁচ বছর
হবে, তারপরে গায়ে কিছু নেই আবার প্রচন্ড শীত। যার ফলে
কাঁপতেছে।
এটা দেখে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম।আমার গায়ের
জ্যাকেট খুলে ওই বাচ্চা টাকে পড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে নেহাকে
নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

রাতে ডিনার করার সময় নেহাকে বললামঃ নেহা আমি একটা
সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

নেহাঃ কি সিদ্ধান্ত ভাইয়া?

আমিঃ এই পথ শিশুদের জন্য একটা এতিম খানা তৈরি করতে
চাই।

নেহাঃ এতো ভালো সিদ্ধান্ত ভাইয়া।

আমিঃ হুমমম।

তারপরে এতিমখানা তৈরীর উদ্যোগ নেই।আর আল্লাহর রহমতে সেটাতে সফলও
হই।ঐ পথ শিশুগুলো সহ মোট চল্লিশ জন ছেলে মেয়ে আছে
আমার এই এতিম খানায়।

যাইহোক,নেহাকে নিয়ে এতিমখানায় গেলাম।গাড়ি থেকে নেমে চকলেটের
একটা বক্স হাতে নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। আমাকে দেখে আমার মেয়ে মিম দৌড়ে
এসে আমার কোলে উঠে বললোঃ বাবাই থুমি এতেথো?

আমিঃ হ্যাঁ মামনি আমি এসেছি।

মিমঃ আমাল দন্য তি নিয়ে এতেথো?

আমিঃ আমার আম্মুর জন্য আমি চকলেট এনেছি।

মিমঃ থত্যি,,, আমার চুন্দল বাবা,।( কপালে চুমু দিয়ে)
আন্নি(আন্টি) তুমি তেমন আথো?

নেহাঃ ভালো আছি। আমার আম্মু টা কেমন আছে?

মিমঃ আমিও ধালো আথি।

আমিঃ আম্মু তোমার ভাইয়া আপুদের ডেকে নিয়ে এসো।

মিমঃ আততা বাবাই।

মিম ওদের ডাকতে চলে গেল।
অবাক হওয়ার কিছুই নেই মিম আমার মেয়ে এটা নিয়ে।
আট মাস আগে একটা বোরকা আর হিজাব পড়া মহিলা এসে এই
বাচ্চা কে এখানে নিয়ে আসে।ঐ মহিলাটি কোন কথা না বলে বাচ্চাটিকে
আমার কোলে দিয়ে চলে যায়।

বাচ্চাটি ছিলো খুব সুন্দর।তখন তার বয়স ছিলো চার মাসের মতো। সে আমার
কোলে ঘুমাতো। আর তখন আমি এখানে ই বেশি সময় থাকতাম।
যাইহোক, বাচ্চাটির প্রতি আমার একপ্রকার মায়া
জন্মে। আস্তে আস্তে বাচ্চাটি বড় হয়।আর তার নাম রাখি মিম।
সে ছোট বেলা থেকেই আমাকে বাবাই বলে ডাকে আর নেহাকে আম্মু না
বলে আন্নি আই মিন আন্টি বলে ডাকো।
তার কথা শুনলে আমার প্রাণ জুড়ে যায়।

সেজন্য আমি এখানে দিনে দুই থেকে তিন বার আসি। রাতে এসে মিমকে ঘুম
পাড়িয়ে দিয়ে চলে যায়।
আর এই এতিম খানা টা আমার বাসার পাশেই ‌।

একটু পর মিম সবাইকে খাবার জন্য ডেকে নিয়ে আসলো।ওরা সবাই ছাদে
খেলতে গিয়েছিল। মিম এসে আমার কোলে বসলো।

দারোয়ান চাচাকে আমার গাড়িতে যেই বিরিয়ানি ছিলো
তা নিয়ে আসতে বললাম।

দারোয়ান চাচা বিরিয়ানি নিয়ে আসার পরে সবাইকে এক
প্যাকেট করে দিলাম। নেহা অন্য ছোট বাচ্চা কে খাইয়ে দিচ্ছে
আর আমূল মিমকে খাইয়ে দিচ্ছি।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওদের সবাইকে পাঁচটি করে চকলেট দিলাম।

ওদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে খালা ওদের দেখা শুনা
করে তার সাথে কথা বলে মিমকে নিয়ে আমার বাসায় আসার জন্য গাড়ির
কাছে আসলাম।মিমকে আজ আমার বাড়িতে রাখবো।
গাড়িতে উঠার সময় হঠাৎ করে আমার,,,,

(চলবে)

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১৫

এতিমখানার বাচ্চা দের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে খালা
বাচ্চা গুলো কে দেখাশোনা করে তার সাথে কিছু কথা বলে
মিমকে নিয়ে বাসা থেকে বাহিরে আসলাম।

মিম আজকে আমার বাসায় থাকবে। মাঝে মাঝেই আমার
বাসায় নিয়ে যাই। বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে যেতেই হঠাৎ
করে আমার মাথাটা ঘুরে আসলো।এরপরে আমার আর
কিছুই মনে নেই।

চোখ খুলে দেখি আমি একটা রুমে শুয়ে আছি। রুমটা আমার
কাছে অপরিচিত মনে হলো। চারিপাশে তাকিয়ে বুঝলাম এটা
হাসপাতালের রুম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে বুঝতে
পারলাম সকাল হয়েছে। আবার কিছু শহুরে পাখি যেমন কাক
ইত্যাদি পাখি ডাকতেছে।

আমার শরীরের দিকে লক্ষ্য করে দেখি দুজন আমার
দুই হাত ধরে শুয়ে আছে।তারা দুজন হলো নেহা আর মিম
আমি একটু নড়ে উঠতেই নেহা জেগে গেল। আমার দিকে
তাকিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।

আমি মাথায় হাত বুলিয়ে বললামঃ এই পাগলি বোন আমার
কাদছিস কেন?

নেহা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বললোঃ ভাইয়া
তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। তোমার কিছু
হলে আমি কিভাবে থাকবো? কি নিয়ে বাঁচবো?😭😭😭

আমিঃ আল্লাহর রহমতে আমার কিছুই হবে না বোন।

আমাদের দুজনের কথাই আমার মেয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়লো।
আমার মেয়েও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে
করতে বললোঃ বাবাই থুমি থিত আতো?

আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ হ্যাঁ আমার
আম্মু আমার কাছে থাকলে আমি সবসময় ভালো থাকি।

মিম আমার কপালে গালে চুমু খেতে খেতে বললোঃ বাবাই
তুমি দেনো আমারে থেলে দেওয়ো না। আমি তোমালে থালা
বাদবো না।
তোমাল মতো থেউ আমালে থুলে থাওয়ায় না। তেও আমারে
ঘুলতে নিয়ে দায়না।
আমারে থেলে দেওয়ো না বাবাই😭😭😭।

আমি আর কী বলবো নিজের কান্না আর ধরে রাখতে পারলাম
না। আমিও আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অজস্র চুমু দিতে দিতে বললামঃ
আমি কখনো আমার আম্মুকে ছেড়ে যাবো না।

আমার আপু আমার হাত ধরে কান্না করতেছে আর আমার
মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছে।

এরা দুজন আমাকে এতো ভালবাসে? তা আজকের দিন না
আসলে বুঝতে পারতাম না। তারা আমার রক্তের সম্পর্কের
কেউ না। তারপরেও তারা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
অথচ যাদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক তারাই আজ আমাকে
ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
হয়তোবা এটাই দুনিয়ায় টিকে থাকার একটা পরিক্ষা।

যাইহোক,বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার আপু আর মেয়ে কান্না
বন্ধ করলো।এখনো জড়িয়ে ধরেই আছে।

নেহাকে দেখে মনে হচ্ছে রাতে কিছু মুখে দেয়নি। তাই আমি
আপুকে বললামঃ আপু তুই মনে হয় রাতে কিছু খাসনি, এখন
ফ্রেশ হয়ে নে। আমি খাবার অর্ডার করতেছি। খাবার অর্ডার
করলাম।

আপু আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে গেল।আপু যেতেই ডাক্তার
রুমে প্রবেশ করলো। আমি আমার মেয়েকে বললামঃ আম্মু তুমি
একটু উঠো। তোমার বাবাই উঠে বসবে। ডাক্তার এসেছে।

আমার কথা শুনে আমার মেয়ে আমার বুক থেকে উঠে পাশে বসলো।
আমি উঠে বসতেই আমার হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

ডাক্তার আমার কাছে এসে বললোঃ এখন কেমন বোধ করতেছেন
স্যার?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। আমার কি হয়েছিলো?

ডাক্তারঃ স্যার আপনি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রেগুলার ভাবে
চেকআপ করেন নি। আর গতকাল মনে হয় আপনি কোন বিষয়ে
উত্তেজিত বা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।যার ফলে আপনার
ব্রেনে একপ্রকার চাপ পড়ে আর আপনি সেন্সলেস হয়ে পড়েন।

আমিঃ আমি কী আজকে বাসায় যেতে পারবো?

ডাক্তারঃ হ্যাঁ পারবেন। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করে আপনাকে চলতে
হবে আর নিয়মিত চেকআপে করতে হবে।

আমিঃ ঠিক আছে।

নেহা ফ্রেশ হয়ে আসলো। ডাক্তার কে দেখে বললোঃ কেমন
আছেন ডাক্তার?

ডাক্তারঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো আপু?

নেহাঃ আলহামদুলিল্লাহ। ভাইয়া কে কী আজকে বাসায়
নিয়ে যেতে পারবো।

ডাক্তারঃ হ্যাঁ পারবেন।তবে সতর্ক ভাবে চলতে হবে। যেন কোন
ভাবে উত্তেজিত না হয়।

নেহাঃ ঠিক আছে।

ডাক্তার চলে যাওয়ার পরে বয় এসে খাবার দিয়ে গেল।
আমি উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আমার
মেয়ে আর আপু একটা প্লেটে খাবার নিয়ে বসে আছে।
বুঝতে পারলাম আমার কলিজা দুটা আমার হাতে খাওয়ার জন্য
বসে আছে।

আমি যায়ে ওদের কাছে বসতেই আমার আম্মু এসে আমার কোলে
ওঠে বসলো। আমি আর কথা না বাড়িয়ে দুজনকেই খাইয়ে দিলাম।
নেহাও আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।এটা দেখে আমার আম্মু
বললঃ বাবাই আমিও থোমাতে থাইয়ে তিবো,,(বাবাই আমিও
তোমাকে খাইয়ে দিবো।)

আমিঃ না আম্মু তুমি আমাকে খাইয়ে দিতে পারবে না। তুমি এখন
ছোট আগে বড় হও।

আম্মুঃ না বাবাই আমি পালবো। আন্নি তোমালে থাইয়ে জিততে
আমিও তিবো।

আমিঃ আচ্ছা আম্মু দেও।

এরপরে আমার মেয়ে আমাকে তার ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে
বিরিয়ানি আমার মুখে তুলে দিচ্ছে। খাওয়ানোর সময় তার
ছোট্ট হাত দিয়ে আমার গালে এবং নাকে খাবার লেগে যাচ্ছে
এটা দেখে আমার মেয়ের হাসি আর আটকে না।ফোকলা দাত
দিনে খিলখিল করে হাসতেছে। আমার মেয়ের হাসি যে যেন
মুক্তা ঝরতেছে। কে বলবে কিছু সময় আগে এদের জীবনে
অন্ধকার বিরাজ করেছিলো।

এদের দুজনের এই হাসিকে আজীবন টিকিয়ে রাখার জন্য
আমি আমার জীবনটা বিলিয়ে দিতে রাজি।

যাইহোক, অসীম আনন্দের মাধ্যমে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম।
ওদের দুজনকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে
কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম।

নেহাকে বললামঃ আপু আজকে তুই কলেজে যাস না। রাতে তোর
ঘুম জাগা আছে।আর আমার আম্মুকে দেখে রাখিস।

নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া তাড়াতাড়ি ফিরো।

আমিঃ আচ্ছা।

কোথা থেকে আমার মেয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললোঃ
বাবাই থুমি তোথায় দাবে?

আমিঃ কলেজে যাবো আম্মু।

আমার মেয়েঃ আততা দাও।আল আতার থময় আমাল
দন্য তকলেত আনবে।

আমিঃ ঠিক আছে আম্মু।আর কোনো দুষ্টুমি করবে না।

আমার মেয়েঃ আততা বাবাই।
বলেই কপালে একটা চুমু দিয়ে আমার কোলে থেকে নেমে গেল।

কলেজে এসে ক্লাস করে অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু
কাজ করে বাসায় আসলাম।শরীরটাও বেশ ভালো নেই।

বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতে ই আমার আম্মু এসে দরজা খুলে
দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বরলোঃ বাবাই আমাল দন্য তাদের
এনেতো?

পকেট থেকে চকলেট বের করে দিতে দিতে বললামঃ আমার আম্মু
আমাকে আনতে বলেছে আমি না নিয়ে এসে পারি।

চকলেট নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ আমার বেত্ত(বেস্ট) বাবাই।

বলে কোল থেকে নেমে চিৎকার করে বলতে লাগলোঃ আন্নি আন্নি
দেথো আমাল বাবাই আমাল দন্য তকলেত নিয়ে এতেথে‌। তুমি
নিবে?

নেহাঃ না আম্মু তুমি খাও।

আমার মেয়েঃ না আন্নি থুমি এততা (একটা) নেও।না হলে লাখ তলবো।

নেহাঃ ওরে বাবা আমার আম্মু টা দেখছি রাগও করতে জানে। তোমাকে
আর রাগ করতে হবে না দাও একটা আমি নিচ্ছি।

আমার মেয়েঃ এইতো চুন্দল আন্নি।

আমি ওদের কাহিনী দেখতেছি আর হাসতে ছি।

সন্ধ্যায় এতিম খানায় যায়ে মিমকে রেখে কিছুক্ষণ থেকে ওকে
ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে চলে আসলাম।

পরের দিন দুজনে কলেজে গেলাম।ক্লাস করে বাহিরে এসে দেখি
নেহা দের ক্লাসের একটা বাজে ছেলে নেহাকে বলতেছে। [যেগুলো আমি নাই বললাম]

ওর কথা শুনে নেহা কথা শুনে নেহা কাঁদছে।আর ছেলে
মেয়েরা পাশে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে।আমি যে এখানে এসেছি তা
ওরা কেউ জানে না। আমার সাথে আমার বন্ধুরা ছিলো।তারা
মারা-মারির জন্য এক্সপার্ট।

আমি আর কোনো কথা না বলে ঐ ছেলেগুলোর উপর ঝাপিয়ে পড়লাম।
সাথে আমার বন্ধুরাও।

ওদের ইচ্ছে মতো পিটাইলাম।আর আপনারা হয়তো জানেন আমি
আগে থেকেই অন্যায় সহ্য করতে পারিনা। আমার আজকের রুপ
এর আগে এই কলেজে আর কেউ দেখেনি।

একটু পরে পুলিশ আসলো। এরমধ্যেই কে যেন ফোন করেছে।
পুলিশ আসতেই। ঐ ছেলে গুলোর একজন বললোঃ দেখুন স্যার
আমাদের কি ভাবে মেরেছে।

পুলিশ অফিসার আমাকে দেখে বললোঃ আরে সাহিদ স্যার আপনি এখানে?

ব্যাবসা, এতিমখানা, হাসপাতাল থাকার কারণে এলাকার সবাই
না চিনলেও প্রভাবশালী আর ক্ষমতাশালীরা আমাকে চিনে।
পুলিশ অফিসারও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আমি
যে এই কলেজে পড়ি তা জানে না।

আমিঃ আমি এই কলেজের ছাত্র।

পুলিশ অফিসারঃ আচ্ছা স্যার আমরা আসি।
এই এদের (ছেলে গুলোকে) গাড়িতে উঠাও?

সহকারীঃ ওকে স্যার।

পুলিশ অফিসার সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো
সবাই কিছুটা হতাশার মধ্যে আছে। তাই বললেনঃ তোমরা
হয়তোবা ভাবতেছো আমি ইনাকে এ্যরেস্ট করলাম না কেন?
শুনুন, এনি হলেন সেই সাহিদ হাসান যিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ ছাড়া
কাউকে মারে না।ইনি হলেন সেই সাহিদ হাসান যিনি কয়েক মাস
আগে নিজের টাকায় গরিব পথ শিশুদের জন্য এতিমখানা
তৈরি করেছেন। আরো আছে তার অবদান।
আশা করি তোমরা বুঝতে পেরোছো।

পুলিশের কথা শুনে সবাই অবাক ।

আমি বললামঃ একটা কথা সবাই কান খুলে শুনে রেখো আজ
থেকে কেউ যদি কোন মেয়েকে আর বিশেষ করে আমার বোন কে
বাজে কথা বলে তার চোখ আমি তুলে নিবো, সে যেই হোক।
মনে থাকে যেন।

এরপরে বন্ধুদের বিদায় দিয়ে নেহাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করে অফিসে গেলাম।এমডি সাহেবের সাথে কিছু
কথা বলে হিসাবটা নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালে যায়ে সবকিছু দেখে শুনে
বাসায় আসলাম।

বিভিন্ন কাজের মধ্যে দিয়ে গেল তিন দিন।

আজকে কলেজে নতুন ম্যাম আসবে।আর অনুষ্ঠান শুরু হবে
দুপুর বারোটায়।

নেহাকে নিয়ে কলেজে গেলাম। যাওয়ার পরে ডেকোরেশন থেকে
শুরু করে সবকিছু ভালোভাবে দেখে নিলাম।যাতে কোনো ধরনের
সমস্যায় পড়তে না হয়।

অতঃপর দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরে চলে আসলো সেই
আনন্দদায়ক মূহুর্ত।মানে নতুন ম্যাম স্টেজে ওঠার সময়।

আমি আর আমার বন্ধুরা স্টেজের সামনে চেয়ারে বসে থেকে বিভিন্ন
দিকে লক্ষ্য রাখতে ছি।

হঠাৎ প্রিন্সিপাল স্যার বললেনঃ প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দু আমরা আজ
এখন সেই সময়ে উপনীত হয়েছি। যেটার জন্য আমরা এই বিশাল
আয়োজনের ব্যবস্থা করেছি। এখনি তোমাদের নতুন টিচার স্টেজে
আসবেন।আর তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য আমি স্টেজে আসার
জন্য অনুরোধ করতেছি এই কলেজের ছাত্র সাহিদ হাসান সাহি কে।
সাহিদ হাসান সাহি তুমি কোথায় আছো এই মূহুর্তে স্টেজে উপস্থিত হও।

আমি আর দেরি না করে স্টেজে উঠে গেলাম। আমি
নিচের দিকে তাকিয়ে ফুলের তোড়া টা ঠিক করতেছি।
একটু পরেই ছাত্র ছাত্রীরা তালি দিতে লাগলো। বুঝলাম
কেউ একজন স্টেজে উঠেছে। ভাবলাম ম্যাডাম হবে।

প্রিন্সিপাল স্যারঃ এখন নতুন ম্যাম কে বরণ করে নেওয়ার জন্য
সাহিদ হাসান কে অনুরোধ জানাচ্ছি।

আমি ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতেই,,,,,,,,

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here