EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ২৬

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ২৬
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi

পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে তো আমি অবাক হয়ে গেলাম। কেননা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে মিম আর নেহা। আর যাকে দেখে আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম তিনি হলেন প্রিন্সিপাল স্যার।

আমি ভাবতেছে, স্যার এখানে কেন? স্যারকে এখানে দেখে আমি কিছু টা লজ্জা পেলাম। কারণ একজন কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের সামনে একজন ম্যামের সাথে রোমাঞ্চ করাটা লজ্জারই ব্যাপার🙊🙊🙊।

মিম এসে আমার কোলে উঠলো। আমিও ওকে কোলে তুলে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিলাম।

প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের দিকে এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বললোঃ তাহলে সামিয়া তুই অনেক কষ্টে তোর ভালোবাসার মানুষ কে কাছে পেলি।

সামিয়ায় প্রতি উত্তরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ হ্যাঁ মামা পেয়েছি। তবে এখানে তোমার অবদান টাই বেশি।

প্রিন্সিপাল স্যারকে সামিয়া মামা ডাকায় আমি আর নেহা খুব অবাক হলাম। আমি সামিয়া কে বললামঃ মামা মানে?(অবাক হয়ে)

সামিয়া কে প্রিন্সিপাল স্যার কিছু বলতে না দিয়ে তিনিই বললেনঃ অবাক হওয়ার কিছুই নেই আমি সামিয়ার মামা আর সামিয়া হলো আমার একমাত্র বোনের একমাত্র মেয়ে।

আমিঃ কিন্তু,,

আমাকে আর বলতে না দিয়ে প্রিন্সিপাল স্যার বললেনঃ হ্যাঁ তুমি হয়তো ভাবতেছো যে আমার বাসা সিলেটে হলে আমি এখানে কেন? আর সামিয়াই বা তোমাকে আমার কথা বলেনি কেন?তাইতো?

আমিঃ হ্যাঁ।

প্রিন্সিপাল স্যারঃ আসলে ঢাকায় আমাদের একটা কম্পানি আছে। আর কয়েকটা বাসা আছে যেগুলো বর্তমানে ভাড়া দেওয়া আছে। আমি এইগুলো দেখাশুনার সুবাদে সিলেট থেকে ঢাকায় আসি আর এখানেই লেখাপড়া শুরু করি। আর আজকে আমি এই কলেজের প্রিন্সিপাল।আর আমি বাসায় মানে সিলেটে তেমন যাইনা। যার জন্য সামিয়া দের ওখানেই যাওয়া হয়না। আর এই জন্যই তোমার সাথে আমার পরিচয় নেই। বুঝতে পেরেছো?

আমিঃ হ্যাঁ স্যার। কিন্তু সামিয়া যে বললো আপনার অবদান বেশি। এটা কোন কাজে?

প্রিন্সিপাল স্যারঃ তাহলে শুনো। সামিয়া লেখা পড়া শেষ করে জব করতে চাইলে ওর বাবা মা নিষেধ করে। কিন্তু সামিয়া জব করবেই। একি কথা জব করবেই। ওর বাবা মা আর ওকে বাঁধা দেয়নি। কারণ, তোমাকে হারানোর পর থেকে সামিয়া একে বারে ভেঙে পড়েছিল। এখানে জয়েন করার কয়েক মাস আগে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠছিল। যার ফলে সামিয়ার মা বাবা আর তাকে জব করতে বাঁধা দেয়নি। যদি আবার তাদের একমাত্র সন্তান আগের মতো অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তারা কীভাবে থাকবে। এই জন্য থাকে জব করার অনুমতি দেয় যাতে সে সুস্থ থাকে। ভেঙ্গে না পড়ে। এরপরে তাকে আমার এখানে মানে ঢাকায় পাঠানো হয় আর আমাদের কলেজে একটা ইংলিশ টিচার প্রয়োজন ছিল। সামিয়ার রেজাল্ট ভালো হওয়ায় তাকে এখানে জব পেতে কোনো সমস্যা হয় নি।
এরপরে যেদিন তুমি সামিয়াকে বরণ করে নিতে যাও। সেদিন সামিয়া তোমাকে দেখার পর থেকে কেমন জানি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলো। তবে তার চিন্তার মাঝে আমি দেখতে পেয়েছিলাম কোনো অমূল্য সম্পদ হারানোর পরে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ।
সেইদিন সামিয়া স্টেজ থেকে নেমে সোজাসুজি আমার রুমে আসে।আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ কী হয়েছে মা? তোকে সেই তখন থেকে চিন্তিত মনে হচ্ছে?

সামিয়া তখন আমাকে বলেছিলঃ মামা আজকে যেই ছেলেটা আমাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য স্টেজে উঠেছিল সে কে?

আমি(প্রিন্সিপাল স্যার)ঃ কেন মা তুই কি সাহিদ হাসানের কথা বলেছিস?

সামিয়াঃ হ্যাঁ।

আমিঃ সে হলো আমাদের কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র খুবই ভদ্র এবং মেধাবী। তার আরেক টা পরিচয় হলো সে এখান কার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আখতারুজ্জামানের ছেলে। আর আখতারুজ্জামান হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

সামিয়াঃ আখতারুজ্জামান কী তার আসল বাবা নাকি অন্য কিছু?

আমিঃ না আসল নয়। আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে আখতারুজ্জামান সাহেব রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসতেছিলো। আর তার বিপরীত দিক থেকে একটা ট্রাক হর্ণ দিতে দিতে আসতেছিলো। কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই। হঠাৎ করে কে যেন তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় যার ফলে সে এক্সিডেন্ট এর থেকে রক্ষা পায়। আর যে তাকে ধাক্কা দিয়েছিলো সে হলো সাহিদ হাসান সাহি। এরপর থেকে আখতারুজ্জামান সাহিদ হাসান সাহি কে সকলের কাছে তার ছেলে হিসেবে পরিচয় দেয়। আর তার মৃত্যুর কয়েক মূহুর্ত আগে তার সমস্ত সম্পত্তি সাহিদ হাসানের নামে করে দিয়ে যায়।

সামিয়াঃ কিন্তু আখতারুজ্জামানের কি কোনো পরিবার নাই ?

আমিঃ ছিলো কিন্তু আজ থেকে আট বছর আগে একটা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।

সামিয়াঃ ওও।

আমিঃ কিন্তু তুই এতো কিছু জানতেছিস কেন?

এরপরে সামিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ মামা এই সাহিদ ই হলো আমার সেই সাহিদ যে একটা মেয়েকে রেপ করার চেষ্টা করেছিলো।

আমিঃ কিহহহ। এটা আমার কখনো বিশ্বাস হবে না। তোদের মধ্যে কোনো ভুল হয়েছে। যেই ছেলে একটা মেয়েকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসে নিজের বোনের মর্যাদা দেয়, যেই ছেলের সঙ্গে শয়ে শয়ে মেয়ে ঘোরাফেরা করে, তার পরেও সে তাদের দিকে ফিরে তাকাই না। সেই ছেলে কি করে এসব একটা জঘন্য কাজ করতে পারে? নিশ্চয় তোদের মধ্যে কিছু একটা ভুল হয়েছে নইলে এ মেয়ে ( রিপা) মিথ্যা নাটক করেছে।

সামিয়াঃ আমারো তো তাই মনে হয় আমার সাহিদ এই রকম কাজ করতে পারে না। (কান্না করতে করতে)

প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে বললেনঃ এরপরে সে কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে। একটু পরে সেন্স ফিরলে সে তার ভাড়া বাসায় চলে যায় তবে সেটাও আমার বাসা।

কয়েক দিন পর এসে আমার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে রাজশাহীতে যায়। এর পরে সেখান থেকে সোজাসুজি আমার কাছে এসে বললোঃ মামা আমাকে একটা হেল্প করতে হবে।

আমি(, প্রিন্সিপাল স্যার)ঃ কী করতে হবে বল।

সামিয়াঃ ——————-। তবে আমাদের পরিচয় যে না কেউ না জানতে পারে।

আমিঃ ঠিক আছে তুই যা বলবি তাই হবে।

প্রিন্সিপাল স্যারঃ এর পর থেকে সামিয়া আর আমার মিশন শুরু হয় কী করে তোমাকে সামিয়ার প্রতি আকৃষ্ট করা যাবে। আমি বুদ্ধি বের করে তোমাকে সামিয়ার এসিস্ট্যান্ট বানিয়ে দিলাম। কিন্তু সেখানে কাজ হলো না। এরপরে সামিয়ার বুদ্ধিতে একটা ট্যুরের ব্যবস্থা করলাম। যেটা এর আগে কলেজ থেকে কয়েক বছর ধরে বন্ধ ছিল। এটা শুধু সামিয়ার জন্য করা হয়েছিল আর উদ্দেশ্যে ছিলো তোমাকে সামিয়ার প্রতি আকৃষ্ট করা। কিন্তু এখানেও কাজ হলো না। এর পরে নেহা আর সামিয়ার বুদ্ধিতে সামিয়া কে তোমার বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। তবে আমার আর সামিয়ার সম্পর্কে নেহা কিছুই জানতো না। কিন্তু তোমার বাসায় সামিয়া অনেক অত্যাচার সহ্য করে ছিলো। যেটা সামিয়া আমাকে না বললেও আমি জানতে পেরেছিলাম। অনেক অত্যাচার অপমান সহ্য করার পর আজকে আমার ভাগ্নি তার ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পেয়েছে। একজন মানুষ তার ভালোবাসার মানুষটাকে কত টুকু ভালোবাসলে তার দেওয়া অপমান, তার দেওয়া অত্যচার সহ্য করে শুধু তাকে পাওয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতো? তা আমি আমার ভাগ্নি কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। ভালোবাসার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে, সন্দেহ হতেই পারে একজন অপর জনকে ভুল বুঝতেই পারে এর অর্থ এই নয় যে সেও তাকে ভুল বুঝবে, তার প্রতি অত্যাচার করবে। এটি কিন্তু ঠিক নয়।
পরিশেষে তোমাকে একটা কথাই বলি আমার মেয়ে তোমাকে খুবই ভালোবাসে যেটা আমি না দেখলে বুঝতে পারতাম না। সো সাহিদ তুমি আর তাকে কখনো আর কষ্ট দিয়ো না।

আমিঃ না স্যার আর কখনো কষ্ট দিবো না। এখন থেকে সুখেই রাখবো।

প্রিন্সিপাল স্যারঃ গুড। তাহলে আমি আসি। আর তোমরা চাইলে আজকে ঘোরাফেরা করে আসতে পারো। আজকে তোমাদের ছুটি।

সামিয়া খুশি হয়ে ওর মামাকে বললঃ থ্যাংকস মামা।

প্রিন্সিপাল স্যার মুচকি হেসে সামিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললোঃ হুমম আমার পাগলি মেয়ে।

প্রিন্সিপাল স্যার রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। স্যার যাওয়ার পর নেহা বললোঃ আচ্ছা ভাবি আমি একটা জিনিস বুঝলাম না ?

সামিয়াঃ কি বুঝলে না ননদি?

আমিঃ বিয়ে না হতেই এতো ভাবি ননদ ডাকা ডাকি বিয়ে হলে না যানি কী হয়।

সামিয়াঃ ওও হ্যালো,, এটা আমাদের ভাবি ননদের ব্যপার। আপনাকে কেউ নাক গলাতে বলেনি। আর কি বললে বিয়ে? তাই না? দাঁড়াও আজকেই আব্বুকে ফোন দিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলতেছি।

আমিঃ এই না না,, এখন আমি বিয়ে করে প্যারা সহ্য করতে পারবোনা।

সামিয়াঃ কীহহহ আমি প্যারা?

আমাদের কথা শুনে নেহা দাঁত কেলিয়ে হাসতেছে।
আমিঃ না না আপনি কেন প্যারা হতে যাবেন? আপনি তো হলেন আমার মেয়ের ভদ্র আম্মু। তাই না আম্মু (মিমকে উদ্দেশ্য করে)?

মিমঃ হ্যাঁ বাবাই। তিন্তু আমাল আম্মু তে?

আমিঃ এটা (সামিয়া কে) তোমার আম্মু।

মিমঃ এতাতো আমাল মামনি হয়।

সামিয়া মিমকে আমার কোল থেকে ওর কোলে নিতে নিতে বললোঃ আমিই তোমার আম্মু আমিই তোমার মামনি।
বুঝেছো আম্মু?

মিম সামিয়ার গলি জড়িয়ে ধরে বললোঃ হ্যাঁ আম্মু বুদেতি।

সামিয়াঃ ওকে সোনা।(কপালে চুমু দিয়ে)

নেহাঃ ভাবি আমি কিন্তু আমার উত্তর এখনো পেলাম না! ( মুখ ভার করে)

সামিয়াঃ বাসায় যায়ে ফ্রি টাইমে বলবো বুঝেছো?

নেহাঃ হুমম।

সামিয়াঃ চলো আজকে ঘুরতে যাই।

আমিঃ ঠিক আছে চলো।

কতদিন পরে আজকে দুজনে ঘুরতে যাবো ভাবতেই মনের মধ্যে একটা অজানা অনুভূতি জেগে উঠতেছে। আজ থেকে তিন বছর আগে কত একসাথে ঘোরাঘুরি করেছি? কত দিন পরে আজকে আবার ঘুরতে বের হচ্ছি। তবে সেই দিনগুলো আর আজকের দিনের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, সেই দিনে ছিলো আমার মাথার উপর পিতা নামক একটা ছাদ। আর আজকে আমিই হয়ে গেছি একজনের পিতা নামক ছাদ। হা হা হা ভাবতেই অন্যরকম একটা অনুভূতি ফিল করতেছি। আজকে আমার আছে একটা নিষ্পাপ মেয়ে আর একটা আছে সরল সহজ মনের অধিকারী একটা বোন।যার মধ্যে নেই কোনো অহংকার। তাকে যদি বলি আপু তোর কি কিছু জামাকাপড় প্রয়োজন? সে বলবে না ভাইয়া আমি এতেই ঠিক আছি। অন্য কেউ হলে হয়তো আমার সম্পদের বড়াই করে নিজে আধুনিক হয়ে থাকতো। কিন্তু আমার বোন ঠিক তার বিপরীত।

যাইহোক, সামিয়া,মিম, নেহা আর আমি সামিয়ার রুম থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা ধরলাম। ক্যাম্পাসে পৌছতেই আমার বন্ধুরা আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হলো।

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই রিয়াদ বললোঃ কি মামা কোথায় যাও? আমাদের বাজির কথা মনে নেই।

এইরে , আমার তো মনেই ছিলনা। কি জন্য যে বাজি ধরতে গেলাম?
আমিঃ আরে কিসের বাজির কথা বলতেছিস? ( না জানার ভান করে)

ইকবালঃ ওও ভাই তুই ভাবিকে পেয়ে আমাদের বাজির কথা ভুলে গেলি? আমাদের জন্য তুই আজ তোর EX গার্লফ্রেন্ড কে ফিরে পাইলি আর আমাদেরই ভুলে গেলি,,। (আমাকে ইমোশনাল করার চেষ্টা করে)

আমিঃ আচ্ছা তোরা কি চাস্?

রিয়াদঃ আমাদের তিনজনকে মোট পাঁচ হাজার টাকা দে তাহলেই হবে।

আমিঃ কিহহ,, পাঁচ হাজার টাকা😲😲😲। মানে পাঁচের পরে তিন তিনটা শূন্য।ভাই এতো টাকা আমার কাছে নাই। তুই আমার ভালো গুলমুল বন্ধু হস্ তাই না? একটু কম কর না দোস্।( রিয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে)

রিয়াদঃ আমি তোর গুলমুল বন্ধু, ভালো বন্ধু সব কিছু। এখন টাকা বের। এসব ইমোশনাল কথা বলে কাজ হবে না।

কি করি কি করি? পাঁচ হাজার টাকা? হোসস্ খেলে তো বন্ধুরাই খাবে দিয়ে দেই। পকেট থেকে ম্যানিব্যাগটা বের করতেই সামিয়া ওর ব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে দিলো।ওরা সামিয়ার থেকে নিতে না চাইলেও সামিয়ার জোরাজুরিতে নিতে রাজি হলো।

আমি বন্ধুদের কে বিদায় দিয়ে সামিয়া, নেহা আর মিমকে নিয়ে ক্যান্টিনে গেলাম। ক্যান্টিনে যায়ে কিছু খাওয়ার পরে ওদেরকে নিয়ে পার্কিং লটে আসলাম। এরপরে চারজনই চাপাচাপি ভাবে বাইকে উঠে বাসায় আসলাম।

বাসায় এসে গোসল করে গাড়ি নিয়ে বের হলাম ঘুরতে। লাঞ্চ করে আবার ঘোরাফেরা করে ওদেরকে নিয়ে এতিমখানায় আসলাম। সেখানে বাচ্চাদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম।
তবে এতিমখানার বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে গেছিলাম।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে হালকা ডিনার করে সকলে মিলে আড্ডা দিতে বসলাম। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আমি আমার রুমে গেলাম। আর সামিয়া, মিম আর নেহা নেহার রুমে গেল।

রুমে এসে রাফিকে ফোন দিলাম। একবার ঢুকতেই রিসিভ করলো।
আমিঃ কেমন আছিস?

রাফিঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। আমার বাসার সবাই কেমন আছে?

রাফিঃ সুস্থই আছে , আন্টিও এখন মোটামুটি সুস্থ। কিন্তু আন্টি মাঝেই তোর কথা ভেবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর তোর বাবা আর ভাইয়া তো প্রতিদিন আমার কাছে এসে বলে তুই কোথায় আছিস তা আমি জানি কিনা।

আমিঃ ওওও,,, আচ্ছা শোন তোকে যে জন্য ফোন দিয়েছে ।

রাফিঃ হুমম বল।

এরপরে আমি আজকে সামিয়ার সাথে যা কিছু হয়েছে সব বললাম।

রাফিঃ আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো। আর তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।

আমিঃ হুমম চেষ্টা করবো।

রাফির সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। একটু পরেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালাম।

_-_-_-_-_-

আড্ডা দিয়ে রুমে যায়ে শুয়ে থেকে নেহা সামিয়া কে বললঃ ভাবি তুমি কিন্তু বললে না!

সামিয়াঃ বলতেছি মাই ডিয়ার ননদি শুনো এবার,,,,,,,,,,,
এরপরে সামিয়া নেহাকে সাহিদ আর সামিয়ার প্রথম দেখা থেকে শুরু করে সাহিদের সাথে প্রেম, সাহিদের সাথে ঘোরাফেরা করা, সাহিদের পরিবার এবং সামিয়ার পরিবারের লোকজনের কথা, সাহিদের সাথে রিপার মিথ্যা নাটক, এরপরে সাহিদ কে বাসা থেকে বের করে দেওয়া অর্থাৎ সাহিদের সাথে যা কিছু হয়েছে সব বললো।

সামিয়ার কথা শুনে নেহার চোখের কোণায় বিন্দু বিন্দু পানি জমা হয়েছে।

সামিয়া নেহা কে বললোঃ আমার জায়গায় তুমি হলে কী করতে নেহা বলো।

নেহাঃ ঠিকই আছে ভাবি। তবে ভুল বুঝাবুঝি একটা সম্পর্ক কে নিমিষেই ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু ভাবি তোমাকেও বিষয়টা বিবেচনা করে দেখা উচিত ছিল। যাজ্ঞে, যা হওয়ার হয়ে গেছে সেই সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু করো। আর একটা মেয়ে তো আছেই একে কখনো মায়ের আদর থেকে বঞ্ছিত করো না প্লিজ।এটা আমার অনুরোধ।

সামিয়া মিমকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ নারে পাগলি এটা আমার মেয়ে একে কখনো আমার আদর থেকে বঞ্ছিত করবো না।
বলেই সামিয়া মিমের কপালে একটা চুমু দিলো।

এরপরে সামিয়া আর নেহা ঘুমিয়ে পড়লো।

_-_-_-_

ফজরের আযানে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিছানা থেকে উঠে অযু করে নামাজ পড়ে নেহার রুমে গেলাম। নেহার রুমে যায়ে নেহা আর সামিয়া কে নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলাম।

সামিয়া নামাজ পড়ে নাস্তা তৈরি করার জন্য রান্না ঘরে গেল।
আমি নিষেধ করলাম। কিন্তু সে নাস্তা তৈরি করবেই । আমিও আর বাঁধা দিলাম না।

নাস্তা করে গাড়ি (কার) নিয়ে কলেজে গেলাম।
কলেজে যাওয়ার পর ক্লাস শেষ করে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম।

লেখাপড়া করে,আড্ডা দিতে, বোন, মেয়ে আর মেয়ের মাকে নিয়ে ঘোরাফেরা করতেই কেটে গেল একবছর।এই একবছরের মধ্যে এখনো আমি আমার পরিবারের সাথে দেখা করিনি। আম্মু এখন পুরোপুরি সুস্থ। রাফির ফোন দিয়ে মাঝে মাঝে আম্মুর সাথে কথা বলি। আম্মু অনেক বার বাসায় যেতে বলেছে কিন্তু যাইনি। যাওয়া হবে কিনা তা জানি না।

আর এই একবছরের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো আমি আর সামিয়া আগের তুলনায় বেস্ট ক্যাপুল ( লাভার) হয়ে গেছি। হ্যাঁ, আপনারা হয়তো ঠিকই ধরেছেন। আমার আর সামিয়ার এখনো বিয়ে হয়নি। সামিয়ার বাবা মা মাঝে মাঝে এসে আমার সাথে দেখা করে যেতেন। আর সামিয়া খুব কম সময় রাজশাহীতে মানে তার বাবা মায়ের কাছে যাইতো।

আমার লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসার হাল ধরেছি। ভাবতে ছি সামিয়া কে বিয়ে করে লাইফটা সাজানো শুরু করবো। নেহা এবার মেডিকেল ফার্স্ট ইয়ারে। আর আমার মেয়ে এখন আমাকে আর ওর মামনি কে সবসময় জ্বালিয়ে মারে। একটু বড় হয়েছে তো তাই।
আর আমার বন্ধুরা এখন জব করতেছে।

আজকে বিকেল চারটায় অফিসে একটা মিটিং আছে। মিটিং টা সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানিনা। মানে কার সাথে হবে তা জানিনা। সব কিছু আমার পিএ তিশা (আরেক নাম বর্ষা) রেডি করেছে। আর হ্যাঁ এমডি আংকেল এখানে আর জব করে না। কারণ তার ছেলে তাকে নিয়ে খুলনায় থাকে।

হলরুমে ক্লাইন্টরা বসে আছেন আমার জন্য। একটু পরে আমি আমার পিএ তিশার সাথে হলরুমে ঢুকলাম। রুমে ঢুকে তাদের সাথে কথা বলতেই এক জায়গায় আমার নজর আটকে গেল। কারণ সেখানে ছিলো আমার বড় ভাই সাইম আহম্মেদ। সে আমার তাকে এক দানে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখার পরে আমি সাথে সাথে হলরুম থেকে বের হয়ে আমার কেবিনে আসলাম। আমার এমন বিহেভ দেখে তিশা আমার কাছে এসে বললোঃ সাহিদ তোমার কি হয়েছে?

আমিঃ আমি ঠিক আছি। তুমি যদি পারো তাহলে মিটিং টা কমপ্লিট করো আর না পারলে ক্যান্সেল করো।

তিশাঃ ঠিক আছে আমি পারবো।

আমিঃ গুড আমি বাসায় গেলাম। আর অফিসটা তুমি সামলে নিয়ো।

তিশাঃ ওকে।

আমি অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে বাসায় আসলাম।। বাসায় এসে কারো সাথে কথা না বলে রুমে গেলাম।

রুমে এসে অফিসের ব্যাগটা বেড়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বেডের একপাশে বসে ভাবতে লাগলাম, ভাইয়া কেনো তুমি আবার আমার সামনে আসলে। তুমিই বলেছিলে আমি পাপি। আজ কেনো আবার আমার সামনে এসে আমাকে সেই কালো অতীত কে মনে করিয়ে দিচ্ছো।

একটু পরে সামিয়া রুমে এসে আমার সামনে বসে আমার কাধে হাত রেখে বললোঃ কী হয়েছে তোমার? এমন করতেছো কেনো? কি হয়েছে আমাকে বলো।

আমি আমার আবেগকে আর ধরে রাখতে না পেরে সামিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে ভাইয়ার কথা বললাম।

সামিয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললোঃ সাহিদ সব কিছু ভুলে যায়ে চলো না আবার আমরা সেই জিবনে ফিরিয়ে যাই। যেখানে থাকবে পরিবারের সব লোকেরা। একসাথে সালে বসে লাঞ্চ করবো, ডিনার করবো। যেখানে আমাদের ছেলে মেয়েরা খেলার সাথী হিসেবে পাবে তাদের দাদা দাদিকে।

আমিঃ তা সম্ভব নয় সামিয়া।

সামিয়াঃ কেন সম্ভব নয় বলো? তারাও তো আমার মতোই ভুল করেছিলো। আমাকে যদি মাফ করতে পারো তাহলে তাদের কেন পারবে না।মনেকর, তোমার ছেলে যদি একটা মেয়ের সাথে একাই একটা রুমে থাকে আর মেয়েটা যদি মিথ্যা চিৎকার করে তোমার ছেলে কে দোষী সাব্যস্ত করে তাহলে তুমি সেখানে যায়ে কি তাহলে করবে বলো।

আসলেই তো আমি তো এভাবে ভেবে দেখিনি। সামিয়ার কথাই লজিক আছে।

আমিঃ আচ্ছা ভেবে দেখি।

সামিয়াঃ কোনো ভাবা-ভাবী নেই। আমি আর কতদিন এভাবে থাকবো বলে। আমারতো শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে তাই না?

আমিঃ ওওও তাহলে এই ব্যাপার। বলবে তো তাহলে। এদিকে এসো আজকের জন্য কিছু দিয়ে দেই।(মুচকি হেসে)

সামিয়াঃ আমি এখন এসব চাইনা। একেবারে বিয়ের পর।

আমিঃ তা তো বললে হবে না জান পাখি।(সামিয়া কে কাছে টেনে নিয়ে)

সামিয়াঃ এই ন,,,,,

ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার ঠোট এক করিয়ে দিলাম। একটু পরে সামিয়ার রেসপন্স দিতে লাগলো।

হঠাৎ করে আমার মেয়ে এসে বললোঃ তি ব্যপাল তোমলা এতানে লোমান্ত কলতেথো আল আমলা তোমাদেল দাকতেথি।[(তুতলিয়ে তুলিয়ে। আসলে বয়স টা ঠিকই বেড়েছে কিন্তু কথা গুলো এখনো স্পষ্ট হয় নি)]

আমি সাথে সাথে সামিয়া কে ছেড়ে দিলাম। আমার মেয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে দৌড়ে এসে ওর মায়ের কোলে উঠলো।

[ {আমাদের দুজনের বিয়ে না হওয়ার পরেও মিম আম্মু আম্মু বলে ডাকতেছে বলে আপনারা কিছু মাইন্ড করিয়েন না। কয়েক দিন পরেই বিয়ে করে ফেলবো। আপনাদের সকলের দাওয়াত। তবে গিফট ছাড়া কেউ বিয়েতে আসলে তার দাওয়াত বাতিল বলে গণ্য করা হবে }]

সামিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে বললোঃ মেয়ের সামনে মান সম্মান টা খাবে আমার । ফ্রেশ হয়ে এসো একসাথে ডিনার করবো।

আমি কিছু না বলে ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে নিচে গেলাম। এরপরে ডিনার করে আড্ডা দিয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।

সকালে আমার মেয়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। আমার মেয়ে এসে আমাকে বললোঃ বাবাই কালা দেনো তোমালে দাকতেথে।

আমিঃ ঠিক আছে আম্মু তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।

মিমঃ আততা বাবাই।

ফ্রেশ হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই ড্রয়িং রুমের সোফায় আমার নজর গেল। বসে থাকা লোকদের দেখে আমি সিড়িতেই দাঁড়িয়ে গেলাম। কারণ তারা হলেন,,,,,,

(চলবে)

💘💘 কেমন হচ্ছে তা কমেন্ট করে জানাবেন 💘💘💘

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here