প্রেম_ফাল্গুন #পর্ব_২২

#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_২২
#নিশাত_জাহান_নিশি

“নেক্সট টাইম ভুলে ও যেনো দয়া মায়ার কথা না শুনি। সহ্য করতে পারি না আমি। একদম না। কেনো আমার যন্ত্রণাটা বুঝতে চাও না লিলি? হোয়াই?”

লিলি অশ্রসিক্ত চোখে ববির দিকে তাকিয়ে ম্লান স্বরে বলল,,

“আমি ঠিকই আপনার যন্ত্রণাটা বুঝি ববি। হয়তো আপনি আমার যন্ত্রণাটা বুঝতে চান না, বা বুঝার চেষ্টা ও করেন না!”

ববি তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উচ্চস্বরে বলল,,

“কিসের যন্ত্রণা তোমার হ্যাঁ? কিসের যন্ত্রণা?”

ববির থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে লিলি চোখের জল মুছে ম্লান স্বরে বলল,,

“কিছু না। রুমে চলুন।”

ববি লিলির ডান হাতটা চেঁপে ধরে এক রোঁখা ভাব নিয়ে বলল,,

“একদম না। বলে যেতে হবে তোমার কিসের যন্ত্রণা! এর আগে তুমি ভুলে ও এখান থেকে প্রস্থান নিতে পারবে না।”

লিলি কপাল কুঁচকে চোখ, মুখে তিক্ততার ছাপ ফুটিয়ে বলল,,

“উফফ। ছাড়ুন হাতটা। আপনার রূপ বদলাতে সময় লাগে না তাই না? এই ভালো তো, এই খারাপ।”

“তুমি বাধ্য করো ওকে? তোমার জন্যই আমার মুহূর্তে মুহূর্তে রূপ বদলাতে হয়!”

লিলি রাগান্বিত হয়ে উঁচু আওয়াজে বলল,,

“কোনো প্রশ্নের উত্তর পাবেন না আপনি বুঝেছেন? হাতটা মুচড়ে ভেঙ্গে ফেললে ও না।”

ববি চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“বাঃহ। উঁচু আওয়াজে কথা বলা ও শিখে গেছো?”

“হ্যাঁ গেছি। সব শিখে গেছি আমি। আপনিই আমাকে এসব শিখতে বাধ্য করেছেন।”

লিলির হাতটা ছেড়ে ববি রাগে গজগজ করে দ্রুত পায়ে ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিলো। লিলি গোমড়ামুখে ববির যাওয়ার পথে তাকিয়ে নিম্ন স্বরে বলল,,

“আমি আপনার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শুনতে চাই ববি। ঐ তিনটে ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড শুনতে চাই। যতোদিন না আপনার মনের কথা গুলো আমাকে শেয়ার করবেন, খুলে বলবেন, ঠিক ততোদিন আপনার সবকিছুই আমার দয়া মনে হবো। বারণ করা সত্ত্বে ও আমি বার বার আপনাকে ক্ষেপাবো, বার বার আপনাকে রাগাবো।”

অমনি ছাঁদের ছোট্ট গেইটটা হঠাৎ সশব্দে নড়ে উঠল। লিলি থতমত খেয়ে ভয়ার্ত চোখে গেইটের দিকে তাকালো। অন্ধকারে নিমজ্জিত আশপাশটায় ভালো করে চোখ বুলিয়ে লিলি বুকে এক দলা থুথু ছিটিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলল,,

“গেইটটা হঠাৎ নড়ল কেনো? আমার আশেপাশে ভূত নেই তো?”

শুকনো ঢোক গিলে লিলি কফির মগটা হাতে নিয়ে শাড়ির কুঁচি সামলে ধরে ভৌঁ দৌঁড়ে ছাঁদের গেইট থেকে প্রস্থান নিলো। দুতলার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে লিলি উঁকি মেরে চোখে প্রবল কৌতুহল নিয়ে ছাঁদের গেইটের দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে তার হাত, পা কাঁপছে। তবে কৌতুহল যেনো কিছুতেই হ্রাস পাচ্ছে না। উল্টে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। লিলির দু কদম পেছনে দাঁড়িয়ে ববি নিঃশব্দে হাসছে। লিলির এমন শিশু সূলভ কার্যকলাপ দেখে ববি রীতিমতো মনে মনে অট্ট হাসিতে ফেঁটে পড়ছে। হাসিটাকে কোনো রকমে সামলে ববি গম্ভীর ভাব নিয়ে ঠিক লিলির পেছনটায় এক আঙ্গুল ব্যবধানে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলল,,

“এই? তুমি এখানে কি করছ?”

লিলি পেছনে না তাকিয়েই চোখ দুটো প্রকান্ড করে জোরে চিৎকার দিয়ে মুখটাকে হা করে একদম স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে শুধু তার বুকটা ধড়ফড় করে কাঁপছে। ববির আকস্মিক আওয়াজটা লিলি ঠিকভাবে নিতে পারে নি৷ ভয়ের উপর উর্ধ্ব ভয় পেয়েছে। এই দুই ভয় মিলিয়ে “অ্যাক্লুও ফোবিয়া” হয়ে গেছে। যা মস্তিষ্ককে রিজার্ভ করে রেখেছে। মনস্তাত্ত্বিক সাড়া বা উদ্দীপনা থেকে বিরত রেখছে।

কফির মগটা এতক্ষনে ফ্লোরে ছিটকে পড়ে দু টুকরো হয়ে গেছে৷ লিলির দম ফাঁটা চিৎকার প্লাস কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজে দু তলার স্টাডি রুম থেকে খায়রুল আহমেদ পেরেশান হয়ে দৌঁড়ে এলেন সিঁড়ির কাছটায়। ববি এতক্ষনে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে লিলির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লিলির গালে চাপড় মারছে আর বলছে,,

“কি হয়েছে লিলি? এভাবে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”

লিলি পলকহীন দৃষ্টিতে চোখ দুটো প্রকান্ড অবস্থায় রেখেই হুট করে সেন্সলেস হয়ে ববির বুকে লুটিয়ে পড়ল। ববি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে লিলির দিকে তাকিয়ে বেশ চেঁচিয়ে বলল,,

“লিলি???”

খায়রুল আহমেদ হম্বিতম্বি হয়ে ববি এবং লিলিকে ঐ অবস্থায় দেখে পেছন থেকে ববিকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে বললেন,,

“কি হয়েছে ববি? তোমরা এভাবে চেঁচাচ্ছ কেনো?”

ববি কাঁপা কাঁপা স্বরে খায়রুল আহমেদকে উদ্দেশ্য করে উঁচু আওয়াজে বলল,,

“মামু। লিলি ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে!”

“আজব৷ মেয়েটা সেন্সলেস হয়ে গেছে অথচ তুমি এখন ও মেয়েটাকে নিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছো? উপস্থিত বুদ্ধি কি মোটে ও নেই।”

খায়রুল আহমেদ দম নিয়ে আবার বললেন,,

“মেয়েটাকে রুমে নিয়ে এসো। কুইকলি।”

ববি তাড়াহুড়ো করে লিলিকে পাজাকোলে তুলে খায়রুল আহমেদের স্টাডি রুমটায় ঢুকে পড়ল৷ বড় সোফাটায় লিলিকে লম্বা করে শুইয়ে ববি খায়রুল আহমেদের হাত থেকে পানির পট টা হাতে নিয়ে লিলির চোখে, মুখে পানি ছিটকাতে লাগল। বেশ কয়েকবার পানি ছিটানোর পর লিলি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো। ববিকে মুখোমুখি দেখা মাএই লিলি খুব ক্ষিপ্ত হয়ে ববির শার্টের কলার চেঁপে ধরে বলল,,

“আপনার জন্য আমি ভয় পেয়েছিলাম বুঝেছেন? কি দরকার ছিলো ঐভাবে পেছন থেকে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করার? দেখছিলেন না, আমি আগে থেকেই ভয় পাচ্ছিলাম? ছাঁদের দরজাটা আপনা আপনি নড়ছিলো।”

ববি চোখ লাল করে আড়চোখে লিলিকে ইশারা করে বলছে একটু সামনে তাকাতে। রুমে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আছে। লিলি কিছুতেই ববির ইশারায় দৃষ্টিপাত করছে না। উল্টে ভীষণ রাগ দেখিয়ে ববির শার্টের কলার শক্ত করে চেঁপে ধরছে। খায়রুল আহমেদ মাথা নিচু করে গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,,

“আমি আসছি। তোমরা কথা বলো।”

লিলি হকচকিয়ে উঠে ববির শার্টের কলারটা ছেড়ে কপাল কুঁচকে এক চোখে খায়রুল আহমেদের দিকে তাকালো। জিভ কেটে সে হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে মাথা নিচু করে বসল। খায়রুল আহমেদ পিছু ফিরে রুম থেকে প্রস্থান নিতেই লিলি পেছন থেকে খায়রুল আহমেদকে ডেকে নিচু স্বরে বলল,,

“স্যরি মামু। আমি একদম আপনাকে খেয়াল করি নি। দয়া করে আমার ধৃষ্টতা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।”

খায়রুল আহমেদ পিছু ফিরে একবার শান্ত চোখে লিলির দিকে তাকালেন। লিলির অবুঝ মুখটার দিকে তাকিয়ে উনি ম্লান হেসে বললেন,,

“ডিনারের সময় হয়ে গেছে। চলে এসো।”

দ্রুত পায়ে উনি রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। লিলি এবং ববি দুজনই উনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে মৃদ্যু হাসল। ববি হঠাৎ ভাব ভঙ্গি পাল্টে লিলির দিকে তেড়ে এসে লিলির পাশে বসে চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“তোমার তো সাহস কম না। মামুর সামনে তুমি আমার শার্টের কলার চেঁপে ধরো?”

লিলি ঝগড়ুটে ভাব নিয়ে বলল,,

“ধরব না তো কি করব শুনি? আপনি বুঝেন নাই আমি আগে থেকেই ভয় পাচ্ছিলাম?”

“ভয়টা কেনো পাচ্ছিলে শুনি? ভয় পাওয়ার তো কোনো কারণ দেখছিলাম না আমি।”

“ছাঁদের দরজাটা আপনা আপনি নড়ছিলো! ওখানে আমি একা ছিলাম। আপনি তো রাগ দেখিয়ে আমাকে রেখেই চলে গেলেন। একটা বার মনে পড়ল না লিলি ভয় পাবে কিনা?”

ববি লিলির মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,,

“তোমাকে আমি অযথাই গম্ভাট বলি না ওকে?রাতের হিমেল বাতাসে ছাঁদের দরজা হঠাৎ নড়তেই পারে। এতে ভয়ের কি আছে?”

লিলি ফ্যাল ফ্যাল চোখে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ইসসস। তা তো ভেবে দেখি নি!”

ববি আচমকা লিলির থুতনী চেঁপে ধরে লিলির ঠোঁটে দীর্ঘ একটা চুমো খেয়ে বলল,,

“খাবে চলো। ডাইনিং টেবিলে সবাই হয়তো আমাদের জন্য ওয়েট করছে।”

লিলি রাগী চোখে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“চুমো খাবেন ভালো কথা। সোজাসুজি খান। থুতনী চেঁপে ধরার কি আছে?”

ববি বাঁকা হেসে বলল,,

“তুমি বুঝবে না।”

লিলি মুখটা বাঁকিয়ে ববির পাশ থেকে উঠে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে প্রস্থান নিলো। লিলিকে অনুসরণ করে ববি ও নিচ তলায় নেমে ডাইনিং টেবিলে চলে এলো। খায়রুল আহমেদের পাশের চেয়ারটা টেনে ববি মাথা নিচু করে বসল। সাহেরা খাতুন বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লিলিকে প্রশ্ন নিক্ষেপ করে বলল,,

“এই মেয়ে, তুমি নাকি জ্ঞান হারিয়েছিলে?”

লিলি গম্ভীর ভাব নিয়ে বলল,,

“আগে আমার নাম ধরে ডাকুন এরপর বলছি!”

সাহেরা খাতুন লিলির থেকে মুখ ফিরিয়ে প্লেইটের খাবার গুলো নেড়েচেড়ে রূঢ় স্বরে বললেন,,

“এতো শর্ত মানতে পারব না। বলার হলে বলো, না হয় থাক!”

লিলি গোমড়া ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ববি আড়চোখে লিলির দিকে তাকাচ্ছে৷ লিলি যে সম্পূর্ণটা নাটক করছে ববি বেশ বুঝতে পারছে৷ খায়রুল আহমেদ গভীর মনযোগ দিয়ে বিড়বিড় করে নিউজপেপার পড়ছেন। কোনো দিকেই ভ্রুক্ষেপ নেই উনার।
জিনিয়া আহমেদ আহ্লাদি স্বরে লিলির দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“বলো না লিলি। কি হয়েছে? জ্ঞান হারালে কিভাবে?”

সাহেরা খাতুনের পাশ থেকে সরে এসে লিলি জিনিয়া আহমেদের পাশে দাঁড়িয়ে হালকা হেসে বলল,,

“আপনাকে সব বলব মামানী৷ আপনি কি সুন্দর আমার নাম ধরে ডাকলেন! একটু সাইডে চলুন। আপনার কানে কানে সব বলছি!”

সাহেরা খাতুন চোখ তুলে লিলির দিকে তাকালেন। লিলি আড়চোখে সাহেরা খাতুনের দিকে তাকিয়ে জিনিয়া আহমেদের কানে বিড়বিড় করে সমস্ত ঘটনা টা বলল। জিনিয়া আহমেদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ববির দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“ববি তুমি কি পাগল? মেয়েটাকে ওভাবে ভয় দেখালে কেনো?”

ববি প্রসঙ্গ পাল্টে গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বলল,,

“তোমরা ও বসে পড়ো মামানী। ক্ষিদে পেয়েছে।”

জিনিয়া আহমেদ পাশ ফিরে লিলির দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“তুমি ও বসে পড়ো লিলি।”

লিলি মৃদ্যু হেসে বলল,,

“আপনি বসবেন না?”

“বসব তো। এই যে এখনি বসছি।”

সাহেরা খাতুনের পাশের চেয়ারটা টেনে লিলি বসে পড়ল। সাহেরা খাতুন রাগী দৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ জোড়া নামিয়ে নিলেন। সাহেরা খাতুনের মুখভঙ্গি দেখে লিলি মুখ চেঁপে হাসছে। খায়রুল আহমেদ নিউজ পেপারটা টেবিলের এক পাশে রেখে বেসিনে হাতটা ধুঁয়ে এসে খাবার মেখে ববিকে উদ্দেশ্য করে গলা ঝাঁকিয়ে বললেন,,

“ববি শুনো। কাল সকাল ১০ টার মধ্যেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে তুমি হেমার শ্বশুড় বাড়ি চলে যাবে। মিষ্টি, রসমালাই, ফল, পান, সুপোরি যা যা লাগবে সব নিয়ে যাবে। আমি তোমার বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিবো একটু পরেই।”

ববি মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। সাহেরা খাতুন প্রশ্নবিদ্ধ চোখে খায়রুল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“তুমি যাবে না ভাইয়া?”

“যাবো। দুপুরের পর। পাশের এলাকায় জরুরি একটা মিটিং আছে। ওটা শেষ করেই যাবো।”

“ঠিক আছে।”

_______________________________________

রাত ১১ টা। সাহেরা খাতুন উতলা হয়ে রুমে পায়চারী করছেন। কিছুক্ষন পর পর বেডের উপর চোখ তুলে তাকাচ্ছেন। দুটো গহনার বক্স, লাল পাড়ের সাদা ও ঘিয়ে রঙ্গের কম্বিনেশনে একটা সিল্কের শাড়ী, নীল রঙ্গের পাথরের কাজ করা একটা বেনারসী শাড়ি পুরো বিছানাটা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মনে উনার প্রচন্ড দ্বিধা কাজ করছে৷ নিঃসংকোচে উনি লিলিকে ডেকে শপিং গুলো লিলির হাতে তুলে দিতে পারছেন না। কিছুক্ষণ হাঁসফাঁস করে উনি বড় একটা দম নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ববির রুমের দরজায় টোকা দিলেন। ববি বেডের কার্ণিশে হেলান দিয়ে বসে পা দুটো ডানে বায়ে দুলিয়ে খুব মনযোগ দিয়ে ম্যাগাজিন পড়ছে। লিলি ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছে। দরজায় টোকা পড়তেই ববি মনযোগ ভেঙ্গে দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কে?”

সাহেরা খাতুন গলা ঝাঁকিয়ে বললেন,,

“তোর আম্মু। দরজাটা খোল।”

ববি হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে রুমের দরজাটা খুলে দিতেই সাহেরা খাতুন অস্থির দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকিয়ে ববিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“তোর বউ কোথায়?”

“ওয়াশরুমে। কেনো আম্মু? কিছু দরকার আছে?”

“তুই একটু আমার রুমে আয়।”

“চলো।”

সাহেরা খাতুনকে অনুসরণ করে ববি একটু হেঁটেই সাহেরা খাতুনের রুমে প্রবেশ করল। বেডের উপর থেকে গহনার বক্স, শাড়ি দুটো গুছিয়ে সাহেরা খাতুন ববির হাতে তুলে দিয়ে বললেন,,

“তোর বউকে বলবি, কাল হেমার শ্বশুড় বাড়িতে এই গহনা এবং এখান থেকে যেকোনো একটা শাড়ি পড়ে যেতে।”

ববি অতি আশ্চর্যিত হয়ে বলল,,

“সিরিয়াসলি আম্মু? তুমি লিলিকে দিচ্ছ এসব পড়তে?”

“অবাক হওয়ার কি আছে ববি? বাড়ির ব্যবহৃত শাড়ি পড়ে তো আর ঐ মেয়েটা হেমার শ্বশুড় বাড়ি যেতে পারবে না! তাই বাধ্য হয়ে দিতে হলো।”

সাহেরা খাতুন পরক্ষনে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বললেন,,

“ক্যারিয়ার না গড়েই তো বউ জুটিয়ে নিলি। যদি আজ তোর ঐ রকম সামর্থ্য থাকত তাহলে নিশ্চয়ই তোর বউকে আমার ব্যবহৃত শাড়ি পড়তে হতো না, গহনা পড়তে হতো না!”

ববি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ববির থেকে মুখ ফিরিয়ে সাহেরা খাতুন পেছন থেকে ববিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“রুমে যা। অনেক রাত হয়েছে। আমি ঘুমুবো।”

“ঔষধ খেয়েছ?”

“হুম। তোর বউ দিয়ে গেছে।”

“আসছি তাহলে৷ গুড নাইট।”

সাহেরা খাতুন হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়ালেন। ববি রুম থেকে প্রস্থান নিতেই সাহেরা খাতুন সশব্দে রুমের দরজাটা আটকে দিলেন। ববি পিছু ফিরে একবার সাহেরা খাতুনের রুমের তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,,

“স্যরি আম্মু। অজান্তেই তোমাকে খুব হার্ট করেছি। আ’ম সো স্যরি। তবে কথা দিচ্ছি, একদিন আমি ঠিক ঘুড়ে দাঁড়াবো। তোমার সমস্ত কষ্ট মুছে দিবো। ছেলের বউকে ব্যবহৃত জিনিসপএ দিতে তোমার খুব খারাপ লাগছিলো আম্মু। আমি জানি!”

,
,

হাতে গহনার বক্স এবং শাড়ি নিয়ে ববি রুমের ভেতর প্রবেশ করতেই লিলি ডেসিং টেবিলের সামনে থেকে চোখ ফিরিয়ে ববির দিকে তাকালো। বিস্ময় ভরা চোখে লিলি ববির হাতে থাকা শাড়ি এবং গহনা গুলোর দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,,

“কে দিলো এসব?”

ববি রুমের দরজাটা আটকে শাড়ি এবং গহনা গুলো বেডের উপর রেখে ম্লান স্বরে বলল,,

“আম্মু দিয়েছে। কাল আপুর শ্বশুড় বাড়িতে পড়ে যাওয়ার জন্য।”

লিলি হাসোজ্জল মুখে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“সিরিয়াসলি ববি? আম্মু আমাকে এসব দিয়েছেন পড়তে?”

ববি বিষন্ন মন নিয়ে ব্যালকনীর দিকে যাচ্ছে আর বলছে,,

“হুম।”

লিলি উত্তেজিত হয়ে বেডের উপর বসে শাড়ি এবং গহনা গুলো চোখ বুলিয়ে দেখছে। লাল পাড়ের শাড়িটা লিলির খুব পছন্দ হয়েছে। দুটো শাড়ি হাতে নিয়েই লিলি দৌঁড়ে ব্যালকনীতে গেলো। মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা ববিকে উদ্দেশ্য করে লিলি খুব উত্তেজিত হয়ে বলল,,

“ববি বলুন না কোন শাড়িটা পড়ব? কোন রঙ্গটায় আমাকে বেশি মানাবে?”

ববি সোফায় মাথা এলিয়ে চোখ জোড়া বুজে বলল,,

“সব রঙ্গেই তোমাকে খুব মানাবে। যেকোনো একটা পড়ে নিও।”

“না। আপনি যেটা চুজ করবেন আমি ঠিক ঐটাই পড়ব। প্লিজ বলুন না কোনটা পড়ব।”

“বললাম তো যেকোনো একটা পড়ে নিও।”

লিলি এক রোঁখা ভাব নিয়ে বলল,,

“না। আপনি যেটা বলবেন আমি সেটাই পড়ব।”

ববি প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে চোখ জোড়া খুলে রাগান্বিত দৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“গেট আউট ফ্রম হেয়ার। আই সে গেট আউট।”

লিলি থতমত খেয়ে বেশ আতঙ্কগ্রস্থ চোখে ববির দিকে তাকালো৷ ববি এখনো তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে লিলির দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে জল নিয়ে লিলি রুমে প্রবেশ করে শাড়ি দুটো মুচড়ে কাবার্ডে প্যাকিং করে গহনার বক্স গুলো আলমারির এক কোণায় রেখে বেডের এক পাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়ল। চোখের জল ছেড়ে লিলি ঢুকড়ে কাঁদছে। ববির হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠা টা লিলি মন থেকে একদম মানতে পারছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে তার খুব। ক্রন্দনরত অবস্থাতেই লিলি এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ল৷ সেই ঘুমে ছেদ পড়ল লিলির বুকে ভারী কিছুর অস্তিত্ব পেয়ে। চোখ খুলে লিলি বুকের দিকটায় তাকাতেই ববিকে চোখ খোলা অবস্থায় দেখতে পেলো। চোখে, মুখে রাগ ফুটিয়ে লিলি দুহাত দিয়ে ববিকে ঠেলছে আর ছোট আওয়াজে বলছে,,

“এই উঠুন। বিছানায় এতো জায়গা থাকতে আপনি আমার উপর শুলেন কেনো?”

ববি ইচ্ছে করে কিছু বলছে না। নিশ্চুপ হয়ে লিলিকে আরো টাইট করে আঁকড়ে ধরছে। লিলি দ্বিগুন হাঁসফাঁস করছে আর তিক্ত স্বরে বলছে,,

“ববি ছাড়ুন। শুনতে পারছেন না আমার কথা?”

ববি মুখ খুলে এবার ছোট স্বরে বলল,,

“চুপচাপ ঘুমাও। বেশি কথা বলবে না।”

“আমি এভাবে ঘুমুতে পারব না। বুঝেছেন আপনি? দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার, উঠুন!”

“খুব রাগ দেখানো হচ্ছে না? খুব রাগী হয়ে গেছো ইদানিং?”

লিলি উচ্চ স্বরে বলল,,

“ছাড়বেন কিনা বলুন?”

“ছাড়ব না। যা করার করে নাও।”

লিলি শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে ও ববিকে তার বুকের উপর থেকে সরাতে পারছে না। কিছুসময় পর ক্লান্ত হয়ে লিলি শরীরের সমস্ত শক্তি বিছানার উপর ছেড়ে দিলো। ববি বাঁকা হেসে চোখ তুলে লিলির দিকে তাকালো। রাগে লিলির মুখটা একদম লাল টমেটোর মতো হয়ে আছে। আচমকা ববির চোখে ঘোর লেগে এলো। চোখ জোড়া বুজে ববি লিলির ঠোঁটের দিকে এগিয়ে এসে তীব্রভাবে লিলির ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। লিলি চোখ দুটো প্রকান্ড করে ববির দিকে তাকিয়ে আছে৷ ববির উত্তেজনা দেখে লিলি ও চোখ জোড়া বুজে ববির ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরল। অল্প সময় পর ববি লিলির ঠোঁট জোড়া ছেড়ে লিলির বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল। লিলি ও মৃদ্যু হেসে ববিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পা বাড়ালো।

_______________________________________

পরের দিন।
সকাল ৯ টা। সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে বাড়ির সবাই হেমার শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। জিনিয়া আহমেদ লিলিকে তাড়া দিয়ে জলদি শাওয়ার নিতে বললেন। লিলি ও উনার কথা মতোন শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। হেমার শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য আনুষাঙ্গিক সব খরচপএ কিনতে ববি অনেক আগেই বের হয়ে গেছে। ১০ টার মধ্যেই ববি সমস্ত সুইটস, ফল, পান সুপুরি কিনে তাদের প্রাইভেট কারের ব্যাক সিটে গুছিয়ে রেখে রুমে চলে এলো রেডি হতে।

লিলি সদ্য শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। তোয়ালেটা চুল থেকে ছাড়িয়ে লিলি আয়নার সামনে দাঁড়াতেই ববি দরজা ঠেলে রুমে ঢুকল। ভেজা চুলে লিলিকে দেখা মাএই ববি চরম ঘোরে ডুবে গেলো। ধীর পায়ে হেঁটে ববি লিলির পেছনটায় দাঁড়ালো। লিলি একটু নিচু হয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে কিছু একটা খুঁজছে। ববির দিকে একদমই ধ্যান নেই তার। রুমে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব ও লিলি এখনো টের পায় নি। ববি মুগ্ধিত দৃষ্টিতে আয়নায় লিলির প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে আছে। লিলির চুলের সেই মাতাল করা স্মেল ববিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতোন টানছে। ইতোমধ্যেই লিলি সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আয়নায় ববির প্রতিবিম্বকে দেখা মাএই লিলি পিছু ফিরে ববির দিকে তাকালো। ববির ড্যাব ড্যাব চাহনী দেখে লিলি খানিক লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে মাথা নিচু করে বলল,,

“কখন এলেন?”

“মাএ।”

“সামনে থেকে সরুন।”

“কেনো?”

“ব্যালকনীতে যাবো।”

ববি আচমকা লিলির গাঁয়ের সাথে একদম ঘেঁষে দাঁড়ালো। চোখের সামনে পড়ে থাকা লিলির কয়েকটা ভেজা চুল ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে কানের পেছনে গুজে ববি ঘোর লাগা স্বরে বলল,,

“তুমি এমনিতেই খুব সুশ্রী লিলি। আলাদা কোনো সাজের প্রয়োজন নেই। আমি চাইছি না আজ তুমি অতিরিক্ত সাজো৷ হালকা সাজেই তুমি শ্রেয়সী।”

লিলি চোখ তুলে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি কোথায় অতিরিক্ত সাজি? কাজল, লিপস্টিপ এসব তো সব মেয়েরাই ইউজ করে।”

“তুমি করবে না। শুধু কাজল পড়বে। লিপস্টিক বাদে।”

লিলি ম্লান হেসে বলল,,

“এজ ইউর উইশ।”

ঝোঁকের বসে ববি লিলির কোমড়ে হাত দিয়ে লিলিকে একদম তার শরীরের মিশিয়ে নিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় লিলি হতভম্ব হয়ে ববির দিকে তাকিয়ে আছে। ববি বাঁকা হেসে মুহূর্তের মধ্যে লিলির ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো। লিলি ম্লান হেসে চোখ জোড়া বুজে নিলো।

অল্প সময় পর ববি লিলির ঠোঁট জোড়া ছেড়ে লিলির কপালে দীর্ঘ একটা চুমো খেয়ে বলল,,

“লাল পাড়ের শাড়িটা পড়বে। সিম্পলের মধ্যে অনেকটাই গর্জিয়াস শাড়িটা। পড়তে ও যেমন কমফোর্টেবল ফিল করবে তেমনি খুব সহজে শাড়িটা সামলাতে ও পারবে।”

লিলি মুখটা কালো করে বলল,,

“কাল এমন করলেন কেনো? হঠাৎ আমার সাথে ওভাবে রেগে গেলেন কেনো? কি করেছিলাম আমি?”

ববি প্রসঙ্গ পাল্টে গম্ভীর স্বরে বলল,,

“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। এগারোটার মধ্যেই আমরা রওনা হবো।”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here