প্রেম_ফাল্গুন #পর্ব_২৩

#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_২৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। এগারোটার মধ্যেই আমরা রওনা হবো।”

তন্মধ্যেই রুমের দরজা ঠেলে জিনিয়া আহমেদ রুমে প্রবেশ করলেন। এক হাতে উনার পাথরের কাজ করা গোলাপী রঙ্গের একটা শাড়ি, অন্য হাতে লাল রঙ্গের একটা গহনার বক্স। ববি এবং লিলি দুজনের থেকে চোখ ফিরিয়ে জিনিয়া আহমেদের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মৃদ্যু হেসে জিনিয়া আহমেদ
শাড়ি এবং গহনার বক্সটা খাটের উপর রেখে লিলিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“এই শাড়ি এবং গহনা টা পড়েই তুমি হেমার শ্বশুড় বাড়িতে যাবে লিলি।”

লিলি কিছু বলার পূর্বেই ববি খানিক সংকোচবোধ করে পেছনের চুল থেকে টেনে বলল,,

“আসলে মামানী, গতকাল রাতেই আম্মু লিলির জন্য দুটো শাড়ী আর গহনার বক্স পাঠিয়েছেন। এখন তুমিই বলো লিলি কোন গুলো পড়বে?”

জিনিয়া আহমেদ আনন্দে আপ্লুত হয়ে ববির দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“সিরিয়াসলি ববি? সাহেরা লিলির জন্য এসব পাঠিয়েছে?”

ববি কিছু বলার পূর্বেই লিলি উত্তেজিত হয়ে মৃদ্যু হেসে বলল,,,

“হুম মামানী। আম্মু সত্যিই আমাকে শাড়ি এবং গহনা গুলো দিয়ে গেছেন! দাঁড়ান আপনাকে সব দেখাচ্ছি।”

লিলি ব্যতিব্যস্ত হয়ে কাবার্ড থেকে শাড়ি এবং আলমারি থেকে গহনা গুলো বের করে খুব উচ্ছ্বাসিত হয়ে একের পর এক সব ঘেঁটে জিনিয়া আহমেদকে দেখাচ্ছে। ববি ম্লান হেসে লিলির প্রফুল্লিত মুখটা দেখছে। দরজার বাহির থেকে উঁকি দিয়ে সাহেরা খাতুন সব প্রদর্শন করছেন আর শুকনো হেসে বলছেন,,

“কতো খুশি হয়েছে মেয়েটা। খুব অল্পতেই মেয়েটা খুশি হয়ে যায়। মেয়েটার এই ছোট ছোট গুন গুলো আমাকে খুব মুগ্ধ করে।”

সাহেরা খাতুন রুমের দরজা থেকে প্রস্থান নিলেন। জিনিয়া আহমেদ হাতে করে উনারা আনা সমস্ত শাড়ি এবং গহনা নিয়ে উনার রুমে ফিরে গেলেন। সাহেরা খাতুনের দেওয়া শাড়ি এবং গহনা গুলোই উনি লিলিকে পড়তে বললেন। লিলি ওয়াশরুমে শাড়ি পাল্টাতে চলে গেলো। ববি কাবার্ড থেকে লাল পাঞ্জাবি এবং পায়জামা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। লিলি ওয়াশরুমে থেকে বের হলেই ববি শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে প্রবেশ করবে।

টানা আধ ঘন্টা পর লিলি ওয়াশরুমের দরজা খুলল। নিচু হয়ে লিলি শাড়ির কুঁচি ভাজ করে ওয়াশরুমের বাইরে পা রাখতেই আচমকা ববির গাঁয়ের সাথে হালকা ধাক্কা খেলো। বিরক্তি নিয়ে লিলি কপাল কুঁচকে শাড়ির কুঁচিটা ছেড়ে মাথা তুলে ববির দিকে তাকালো। ববি ভাব শূণ্য হয়ে লিলির দিকে তাকিয়ে ছোট স্বরে বলল,,

“আধ ঘন্টার মধ্যে রেডি হবে। আমি ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই যেনো দেখি তোমার সাজ কমপ্লিট ওকে?”

ববিকে পাশ কাটিয়ে লিলি টাওয়াল দিয়ে ভেজা চুল গুলো উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মুছছে আর ববিকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,

“চুল শুকাতেই তো আধ ঘন্টা লেগে যাবে। রেডিটা হবো কখন শুনি?”

“প্রয়োজনে ভেজা চুলেই খোঁপা বাঁধবে। আধ ঘন্টার মধ্যেই রেডি হওয়া চাই। ওয়েট করতে আমার বিরক্তি লাগে। জাস্ট বিরক্তি লাগে!”

লিলি কোনো প্রতিত্তুর করল না। ববি ওয়াশরুমে প্রবেশ করে সশব্দে দরজা টা আটকে দিলো। লিলি ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল,,

“এক ঘন্টা ওয়েট করাব আপনাকে বুঝেছেন? টানা এক ঘন্টা। ওয়েট করতে পারবে না, যত্তোসব ঢং।”

পাখার সোজাসুজি বসে লিলি ভেজা চুলগুলো দুদিকে ছড়িয়ে চোখ বুজে হাতের উপর ভর করে বসে আছে। চুল গুলো শুকালেই লিলি প্রথমে খোঁপাটা বেঁধে এরপর হালকা সেজে নিবে। টানা বিশ মিনিট পর ববি টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। দরজা খোলার শব্দে লিলি ফট করে চোখ জোড়া খুলে হুড়মুড়িয়ে বসা থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলে খোঁপা বাঁধতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। লিলির দিকে দৃষ্টিপাত না করেই ববি ব্যালকনীর দিকটায় চলে গেলো। মাঝ খানে সিঁথি করে কোনো রকমে হাত খোঁপাটা বেঁধে লিলি পিছনে ঘুড়তেই ববি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“এখনো রেডি হও নি?”

লিলি খোঁপায় হাত দিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,,

“এতো ধৈর্য্যহীন কেনো আপনি? একটু ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে পারেন না?”

“না পারি না। ১৫ মিনিটের মধ্যে রেডি হবে। জাস্ট ১৫ মিনিট ওকে?”

লিলি মুখটা বাঁকিয়ে চোখে মোটা করে কাজল পড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ববি ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে ব্রাউন কালার ওয়াচটা বের করে চোখে, মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে ওয়াচটা পড়ছে। চোখে কাজল পড়ে লিলি আলমারি থেকে সাহেরা খাতুনের দেওয়া এক ভরি ওজনের জার্সিডি নেকলেসটা গলায় পড়ে পেছনের হুকটায় হাত দিয়ে ববির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,

“হুকটা লাগিয়ে দিন তো।”

এক পলক লিলির দিকে তাকিয়ে ববি লিলির পেছনটায় দাঁড়িয়ে আলতো হাতে নেকলেসের হোকটা লাগিয়ে অদ্ভুত এক ঘোরে ডুবে গেলো। আনমনেই ববি লিলির শুভ্র পিঠটায় দীর্ঘ একটা চুমো এঁকে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় লিলি খানিক কেঁপে উঠল। হন্তদন্ত হয়ে ববির কাছ থেকে সরে এসে লিলি আয়নার সামনে দাঁড়ালো। ববি দু কদম এগিয়ে এসে হুট করে লিলির ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে ঘোর লাগা স্বরে বলল,,

“কি অপূর্ব লাগছে তোমাকে! সৌন্দর্যের হাজারটা উদাহরণ দিলে ও হয়তো তোমার এই চিরাচরিত সৌন্দর্যের উপমা বিশ্লেষণ করা যাবে না।”

লিলি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে আয়নায় ববির প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে ববির ভেজা চুল গুলো হাতের আলতো ছোঁয়ায় এলোমেলো করে বলল,,

“লাল পাঞ্জাবিতে আপনাকে ও দারুন লাগছে ববি। একদম নজর কাঁড়ার মতোন।”

তন্মধ্যেই রুমের দরজায় টোকা পড়ল। জিনিয়া আহমেদ ব্যতিব্যস্ত স্বরে চেঁচিয়ে বললেন,,

“লিলি, ববি তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসো। আমরা রেডি।”

লিলিকে ছেড়ে ববি হাত দিয়ে চুলটা সেট করছে আর লিলিকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,

“তুমি যাও। আমি আসছি।”

লিলি মাঝারি সাইজের ঝুমকো দুল গুলো কানে পড়ছে আর বিরক্তি নিয়ে বলছে,,

“দুল পড়ি নি তো এখনো। পড়তে দিন না দুল গুলো।”

ববি চোখ ফিরিয়ে লিলির দিকে তাকালো। একটা দুল কানে পড়ে লিলি আহ্লাদি স্বরে ববিকে বলল,,

“হুক গুলো লাগিয়ে দিন না ববি।”

ববি ম্লান হেসে খুব মনযোগ দিয়ে দুটো দুলের হুক ই লাগিয়ে দিলো। মৃদ্যু হেসে লিলি শেষ বারের মতো নিজেকে আয়নায় দেখে রুম থেকে বের হতেই ববি পেছন থেকে লিলির হাতটা টেনে ধরে বলল,,

“একটা জিনিস চাইব লিলি, দিবে?”

লিলি কৌতুহলী চোখে পিছু ফিরে বলল,,

“কি?”

লিলির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ববি বাঁকা হেসে ববির ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বলল,,

“কিস মি অন মাই লিপস।”

লিলি এক ঝটকায় ববির হাতটা ছেড়ে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হচ্ছে আর ব্যতিব্যস্ত স্বরে বলছে,,

“স্যরি, আই কান্ট!”

ববি চোয়াল শক্ত করে লিলির যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। লিলি হুড়মুড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়াতেই সাহেরা খাতুন এবং জিনিয়া আহমেদকে দেখতে পেলো। জিনিয়া আহমেদ গাঢ় নীল রঙ্গের একটা কাতান শাড়ী পড়েছেন এবং সাহেরা খাতুন ব্ল্যাক রঙ্গের একটা জামদানী কাপড়ে পড়েছেন। দুজনকেই হালকা সাজে দারুন লাগছে। লিলিকে দেখা মাএই জিনিয়া আহমেদ লিলির দিকে এগিয়ে এসে মুগ্ধিত হয়ে হালকা হেসে বললেন,,

“মাশাআল্লাহ্ লিলি। তোমাকে দেখতে দারুন লাগছে।”

লিলি মৃদ্যু হেসে মাথাটা নিচু করে বলল,,

“আপনাকে ও খুব সুশ্রী লাগছে মামানী।”

সাহেরা খাতুন এক গজ দূর থেকে অপলক দৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললেন,,

“মেয়েটা বরাবরই খুব দৃষ্টি নন্দন। সব সাজেই অমায়িক।”

জিনিয়া আহমেদ পিছু ঘুড়ে সাহেরা খাতুনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“সাহেরা। বালা জোড়া কোথায়?”

সাহেরা খাতুন দু কদম এগিয়ে এসে হাত থেকে মাঝারি সাইজের স্টোন প্লেটেডের নক্সা করা এক জোড়া বালা লিলির হাতে ধরিয়ে এদিক অদিক তাকিয়ে রূঢ় স্বরে বললেন,,

“এই নাও। বালা জোড়া পড়ে নাও।”

লিলি আহ্লাদী স্বরে বলল,,

“আম্মু, নাম ধরে ডাকুন না প্লিজ! আপনার মুখ থেকে লিলি নামটা শুনতে আমার ভীষষষণ ভালো লাগে।”

সাহেরা খাতুন শক্ত চোখে লিলির দিকে তাকিয়ে খুব রাগ দেখিয়ে পালাক্রমে লিলির দুটো হাতেই বালা জোড়া পড়িয়ে দিলেন। লিলি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সাহেরা খাতুনের দিকে তাকিয়ে আছে। গোল্ডের বালা জোড়া লিলির শুভ্র হাতগুলোকে খুব ফুঁটে আছে। তবে বালা জোড়া লিলির চিকন হাতে লুজ হয়ে সামান্য ঝুলে আছে। সাহেরা খাতুন হাঁসফাঁস করে লিলির দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“একটু সামলে রেখে বালা গুলো। যা উড়নচন্ডী মেয়ে তুমি। কখন হাত থেকে ফসকে পড়ে যায়, টের ও পাবে না।”

লিলি মিষ্টি হেসে বালা গুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“খেয়াল রাখব আম্মু। আপনি চিন্তা করবেন না!”

তন্মধ্যেই ববি সদর দরজার তালা হাতে নিয়ে সবাইকে বাইরে দাঁড় করিয়ে ভালো করে সদর দরজার তালাটা আটকে দিলো। তদ্রুপ বাড়ির প্রতিটা রুমে এক এক করে তালাবদ্ধ করে ববি শেষ বারের মতো পুরো বাড়িটায় ভালো করে চোখ বুলিয়ে সবাইকে নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠে পড়ল। ড্রাইভিং সিটে ববি এবং তার পাশের সিটে লিলি বসল। ব্যাক সিটে সাহেরা খাতুন এবং জিনিয়া আহমেদ বসলেন। লিলির দিকে এক প্রকার রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ববি গম্ভীর ভাব নিয়ে বলল,,

“সিট বেল্টটা বেঁধে নাও।”

লিলি মুখটা কাঁচুমাচু করে বলল,,

“বেঁধে দিন না ববি। আই কান্ট ডু ইট।”

ববি রাগে গজগজ করে লিলির সিটবেল্ট টা বেঁধে অন্য হাতে নিজের সিটবেল্ট টা ও বেঁধে নিলো। মুখে গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে ববি গাড়িটা স্টার্ট করে দিলো। ববির গম্ভীর মুখটার দিকে তাকিয়ে লিলি মুখ চেঁপে ভীষণ হাসছে। ববির রাগের কারণটা তার খুব ভালো করে জানা আছে!

ঘড়িতে ১১ঃ৩০ মিনিট। ববি গাড়ি নিয়ে হেমার শ্বশুড় বাড়ির মেইন গেইটে প্রবেশ করল। বাড়ির লনে গাড়িটা পার্ক করে ববি সিট বেল্টে হাত দিয়ে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“বাড়িতে প্রবেশ করেই সবাইকে সালাম দিবে। ভালো, মন্দ জিগ্যেস করবে। ওকে?”

লিলি মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানালো। জিনিয়া আহমেদ এবং সাহেরা খাতুন গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন। লিলি সিটবেল্ট খুলে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নামতেই ববি পেছন থেকে হেচকা টান দিয়ে লিলিকে সিটের সাথে চেঁপে ধরে জোর পূর্বক লিলির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,,

“রিভেঞ্জ ওকে? একটা কিস চেয়েছিলাম। জাস্ট ওয়ান কিস। এভোয়েড করে চলে এলে? এখন হাজার চেঁচালে ও ছাড়ব না।”

দুতলার করিডর থেকে আয়রা তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গাড়ির ভেতরের সবটা অবলোকন করছে আর রাগে হাত, পা কচলে চোয়াল শক্ত করে বলছে,,

“আমাকে নরক যন্ত্রণা দিয়ে বউয়ের সাথে খুব রোমান্স করা হচ্ছে না? আই উইল সি ইউ ববি। আই উইল সি ইউ।”

ফুঁফিয়ে কেঁদে আয়রা করিডর থেকে প্রস্থান নিয়ে এক দৌঁড়ে রুমে ঢুকে পড়ল। ববি মাএ লিলির ঠোঁট জোড়া ছেড়ে আলতো হাতে লিলির ভেজা ঠোঁট দুটো মুছে দিয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে লিলির বদ্ধ চোখে চুমো খেয়ে বলল,,

“চোখ খুলো।”

লিলি চোখ খুলে মৃদ্যু হেসে ববির দিকে তাকিয়ে আচমকা টুপ করে ববির ডান গালে সশব্দে একটা চুমো খেয়ে ববিকে ধাক্কা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। ববি বাঁকা হেসে লিলির যাওয়ার পথে তাকিয়ে বলল,,

“এই দাঁড়াও। একা যাবে না। আমি আসছি।”

লিলি সামনে পা বাড়াতে গিয়ে ও থেমে গেলো। ববি সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে ব্যাক সিট থেকে সমস্ত সুইটস, ফ্রুটস, পান, সুপারি হাতে নিয়ে লিলির পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

“চলো।”

লিলি এক পলক ববির দিকে তাকিয়ে সামনে হাঁটা ধরল। সিঁড়ি বেয়ে দুজন দু তলায় উঠল। ববি কলিং বেলে চাপ দিতেই আয়রা রুম থেকে দৌঁড়ে এসে সদর দরজার কাছে হম্বিতম্বি হয়ে এগিয়ে যাওয়া হেমাকে থামিয়ে বলল,,,

“ভাবী দাঁড়াও। আমি দরজাটা খুলছি।”

হেমা থেমে গেলো। সোফায় বসে সাহেরা খাতুন এবং জিনিয়া আহমেদের সাথে আড্ডায় মেতে গেলো। আয়রা লাল রঙ্গের গোল গাউনটা ঠিক করে উড়নাটা গলায় ঝুলিয়ে মৃদ্যু হেসে দরজার খিলটা খুলেই ববির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,

“হায় ববি।”

ববি ম্লান হেসে বলল,,

“হ্যালো।”

ববির পাশেই লিলি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়রা এক নজর লিলির দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“হায় লিলি। কেমন আছো?”

লিলি মিষ্টি হেসে আয়রার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ভালো আছি আপু। আপনি কেমন আছেন?”

কোনো রূপ প্রতিত্তুর না করে আয়রা মৃদ্যু হেসে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“চলো ববি। রুমে চলো।”

ববির হাত থেকে সুইটস এবং ফ্রুটসের প্যাকেট গুলো নিয়ে আয়রা কিচেন রুমের দিকে চলে গেলো। ববি লিলির হাতটা শক্ত করে ধরে ড্রইং রুমে পা বাড়ালো। রাশেদা খানম (হেমার শ্বাশুড়ী) ববিকে দেখা মাএই মুখটা ঘুড়িয়ে নিলেন। হেমা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে লিলির দিকে তাকালো। লিলি শুকনো ঢোক গিলে প্রথমে রাশেদা খানমকে নম্রভাবে সালাম দিয়ে বলল,,

“কেমন আছেন আন্টি?”

লিলির দিকে দৃষ্টিপাত না করেই উনি ম্লান স্বরে সালামের উত্তর দিয়ে বললেন,

“ভালো আছি।”

লিলি এবার হেমার পাশে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বলল,,

“আপু। কেমন আছেন?”

হেমা কোনো প্রতিত্তুর না করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লিলির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ববিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“ছাব্বিশ দিন হলো আমি এই বাড়িতে এসেছি। একবার ও তো কল করে খবর নিয়েছিস বোনটা কেমন আছে? ভালো আছে কিনা? মানে বউ পেয়ে একটা মাএ বোনকেই ভুলে গেলি?”

ববি সাবলীল স্বরেই বলল,,

“তুমি ও তো আমার কোনো খোঁজ নাও নি আপু। চাইলে আমি ও অভিযোগ করতে পারতাম।”

“মুখে মুখে তর্ক করিস না ববি। কোনো কারণ ছাড়া আমি তোর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করি নি কিন্তু।”

“কারণটার জন্য আমি তোমাদের সবার কাছে প্রায় অনেকবার ক্ষমা চেয়েছি। ক্ষমা আমি পাই নি। ছোট ভাইয়ের একটা ভুল ক্ষমা করার মতো মন মানসিকতা তোমার এখনো তৈরী হয় নি।”

সাহেরা খাতুন বসা থেকে উঠে এসে ববির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উঁচু স্বরে বললেন,,

“খুব গলাবাজি করছিস না? অন্যায় করার পরে ও মাথা নিচু করে থাকতে পারিস না না? বড় বোনের মুখে মুখে তর্ক করছিস?”

ববি ক্ষিপ্র হয়ে কিছু বলার পূর্বেই লিলি ববির ডান হাতটা চেঁপে ধরে অশ্রুসিক্ত চোখে ববিকে ইশারা করে বলল চুপ করতে। লিলির চোখের দিকে তাকিয়ে ববি শান্ত হয়ে গেলো। জিনিয়া আহমেদ হেমাকে উদ্দেশ্য করে ম্লান স্বরে বললেন,,

“তোমাদের ইনভিটিশান পেয়েই কিন্তু আমরা এই বাড়িতে এসেছি হেমা। আশা করব তোমরা হাসি মুখে আমাদের বিদায় দিবে। কোনো রকম বাক বিতন্ডা, মনো মালিন্য ছাড়াই। অতিথিদের সাথে অবশ্য এতোটা রূঢ়ভাবে আচরণ করতে নেই তাই না?”

হেমা জোরপূর্বক হেসে জিনিয়া আহমেদের হাতে হাত রেখে বলল,,

“তুমি চিন্তা করো না মামানী। ঐ রকম কোনো কিছুই হবে না। ভাইয়ের সাথে আমি আর কোনো তর্কে জড়াব না।”

জিনিয়া আহমেদ মৃদ্যু হাসলেন। হেমা আড়চোখে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তোর বউকে নিয়ে আয়রার রুমে বস। ওখানে আমি নাশতা পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

ববি প্রশ্নবিদ্ধ চোখে হেমার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“জিজু কোথায়?”

“আফনানকে পিক করতে এয়ারপোর্ট গেছে। ঘন্টা খানিক বাদেই ব্যাক করবে।”

তন্মধ্যেই আয়রা কিচেন রুম থেকে দৌঁড়ে এসে ববির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে বলল,,

“চলো ববি। রুমে চলো।”

ববি লিলির হাত ধরে ম্লান স্বরে বলল,,

“চলো।”

আয়রা রাগে গজগজ করে রুমের দিকে অগ্রসর হলো। পেছনেই ববি এবং লিলি ধীরপায়ে হেঁটে আয়রার রুমে প্রবেশ করল। লিলিকে নিয়ে ববি সোফায় বসতেই হঠাৎ ববির ফোনে রিং বেজে উঠল। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে ববি ব্যতিব্যস্ত হয়ে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি একটু আসছি লিলি। ইতালি থেকে রনি (ববির ফ্রেন্ড) কল করেছে।”

লিলি মাথা নাঁড়ালো। ববি রুম থেকে প্রস্থান নিতেই আয়রা দ্রুত পায়ে হেঁটে ববির জায়গা দখল করে লিলির পাশে বসল। লিলি ইতস্তত বোধ করে আয়রার দিকে তাকালো। আয়রা জোরপূর্বক হেসে বলল,,

“ইউ আর লুকিং সোসোসো গর্জিয়াস লিলি।”

লিলি ম্লান হেসে বলল,,

“আপনাকে ও সাংঘাতিক সুন্দুরী লাগছে আপু।”

আয়রা লজ্জারাঙ্গা হয়ে বলল,,

“থ্যাংকস।”

কিছুটা সংকোচ বোধ করে আয়রা আমতা আমতা করে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আচ্ছা। ববি কি সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে?”

লিলি কপাল কুঁচকে বলল,,

“কেনো আপু? আপনার কোনো সন্দেহ আছে?”

“কিছুটা তো আছেই! তোমার মুখ থেকে শুনলে খুশি হতাম।”

লিলি শুকনো মুখে বলল,,

“ববি আমাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছেন।”

“তুমি ও কি ববিকে ভালোবাসতে?”

লিলি মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। আয়রা সন্দেহজনক দৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“সিউর?”

“উনি আমার হাজবেন্ড আপু। উনাকে ভালোবাসাটা কি স্বাভাবিক না?”

“ভাগ্য গুনে এতো সুদর্শন একটা ছেলেকে হাজবেন্ড হিসেবে পেয়ে গেলে। তোমার তো লটারি লেগে গেলো লিলি। পারবে তো ববিকে ভাগ্যের জোরে বেঁধে রাখতে? বলা যায় না, যদি কখনো হাত থেকে ফসকে যায়?”

লিলি উদ্বিগ্ন চোখে আয়রার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ফসকে যাবে কেনো আপু? আমি তো হালকা হাতে উনাকে ধরি নি। তাছাড়া উপর ওয়ালা উনাকে আমার ভাগ্যের সাথে জুড়ে রেখেছেন। কারো সাধ্য নেই হয়তো উনাকে আমার ভাগ্য থেকে আলাদা করার।”

আয়রা প্রসঙ্গ পাল্টে তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,,

“তো, গুড নিউজ কবে শুনব? প্ল্যানিং চলছে তো?”

লিলি মাথা নিচু করে লজ্জারাঙ্গা হয়ে ছোট আওয়াজে বলল,,

“এখনি না। ববি বলেছেন সঠিক সময়ে!”

আয়রা দাঁত কিড়মিড় করে লিলির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“যে হারে বরের সাথে রোমান্স করছ, আমার মনে হয় না, গুড নিউজ শুনতে খুব বেশি একটা দেরি হবে।”

লিলি কপাল কুঁচকে আয়রার দিকে তাকাতেই ববি দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করল। আয়রা তাড়াহুড়ো করে লিলির পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো। ববির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আয়রা ম্লান স্বরে বলল,,

“তোমরা বসো ববি। আমি ড্রিংকস নিয়ে আসছি।”

ববি মাথা নাঁড়ালো। আয়রা হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ববি লিলির পাশে বসে বেশ রোমান্টিক ভাব নিয়ে লিলির ডান হাতে চুমো খেয়ে আচমকা লিলির ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে বলল,,

“মিস ইউ লিলি।”

লিলি কপাল কুঁচকে বলল,,

“পাশেই তো আছি। মিস করছেন মানে?”

লিলির ঘাঁড়ে খুব আস্তে করে একটা লাভ বাইট দিয়ে ববি ঘোর লাগা স্বরে বলল,,

“তুমি বুঝবে না!”

লিলি সাংঘাতিক ভাবে কেঁপে উঠে ববিকে হালকা করে ঠেলছে আর বলছে,,

“আয়রা আপু চলে আসবে ছাড়ুন।”

ববি আরো শক্ত করে লিলিকে ঝাপটে ধরে বলল,,

“আসলে আসুক। আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার!”

_____________________________________

দুপুর ২ টা।
আফনানকে নিয়ে আতিক এবং রাজিব রহমান (হেমার শ্বশুড়) সবে মাএ বাড়ির ড্রইং রুমে প্রবেশ করলেন। আফনানকে পেয়ে আয়রা এবং রাশেদা খানম ভীষণ খুশি। দুজনই আফনানকে ঝাপটে ধরে খুশিতে ফেঁটে পড়ছে। হেমা মিষ্টি হেসে আফনানের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

“কেমন আছো আফনান?”

আফনান উচ্চ হেসে বলল,,

“ভালো আছি ভাবী। আপনি কেমন আছেন?”

দূর থেকে ববিকে দেখা মাএই আফনান খুব হেসে ববিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“হেই ববি। কেমন আছো?”

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here