প্রেম_ফাল্গুন #পর্ব_৮

#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_৮
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

“হোয়াই নট?”

লিলি আচমকা গম্ভীর ভাব নিয়ে বলল,,

“কিন্তু চাচী?”

“চাচী সো হোয়াট? আমি তো উনার কাছে এক্সট্রা টিউশানের টাকা দাবী করব না। তো?”

“চাচী যদি বিষয়টা খারাপ ভাবে নেন?”

“আমি উনাকে বুঝিয়ে বলব। ডোন্ট ওরি।”

“তাহলে ফাইনাল। কাল থেকে রোজ আপনি আমাকে গাইড করবেন?”

“হুম ফাইনাল।”

তন্মধ্যেই সদর দরজায় জুবায়ের আহমেদের আবির্ভাব হলো৷ ক্লান্ত, শ্রান্ত, ঘর্মাক্ত শরীরে উনি চোখে, মুখে দুঃশ্চিতার ছাপ নিয়ে ঠায় দন্ডায়মান। জুবায়ের আহমেদকে দেখা মাএই লিলি ভীষণ প্রফুল্লিত হয়ে উনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল,,

“চাচা। জানো ববি ভাই কি বলেছেন?”

জুবায়ের আহমেদ ছোট আওয়াজে বললেন,,

“কি?”

“ববি ভাই বলেছেন কাল থেকে রোজ উনি আমাকে গাইড করবেন।”

কাঁধ থেকে অফিস ব্যাগটা হাতে নিয়ে জুবায়ের আহমেদ হতবিহ্বল চোখে লিলির দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“দু দিন পরেই তুই গ্রামে ফিরে যাচ্ছিস লিলি। গাইড, টিউশন এসবের কোনো প্রয়োজন নেই!”

জুবাদের আহমেদের অনাকাঙ্ক্ষিত কথাটা শুনা মাএই লিলির দু চোখ বেয়ে অঝড়ে জল গড়াতে শুরু হলো। ববি চোখে অপার বিস্ময় নিয়ে জুবায়ের আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে জল নিয়ে লিলি জুবায়ের আহমেদকে ঝাঁকিয়ে বলল,,

“তুমি এসব কি বলছ চাচা? তুমি আমাকে গ্রামে ফিরে যেতে বলছ?”

জুবায়ের আহমেদ হঠাৎ অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন,,

“হ্যাঁ বলছি। তোকে আমি গ্রামে ফিরে যেতে বলছি।”

“কিন্তু কেনো চাচা?”

“তোর কলেজ, ভার্সিটি, টিউশান, পড়ালেখার আনুষাঙ্গিক খরচ উঠানো আমার পক্ষে সম্ভব নয় লিলি। ঢাকা শহর এটা, বেঁচে থাকার জন্য সামান্য পানিটা ও এখানে কিনে খেতে হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তো রোজই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সংসারের আনুষাঙ্গিক খরচ না হয় বাদই দিলাম। তুই জানিস? প্রতি মাসে কত হাজার টাকা খরচ করতে হয় আমার এই সংসারে? হাতে গোনা ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এরপরে ও মাস ফুরানোর আগে চাল, ডাল, অন্যান্য খরচ ফুরিয়ে আসে। তার বাইরে আছে রেশমী, রনকের পড়ালেখার খরচ, টিউশান খরচ, ভরণ পোষনের খরচ, আরো কতো কি। ববিকে মাস শেষে আমার কতো টাকা দিতে হয় জানিস? পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। সঞ্চয় করার মতো মাস শেষে একটা কানা কড়ি ও বেঁচে থাকে না। ভাগ্যিস বাড়িটা আমার শ্বশুড়, শ্বাশুড়ীর। যদি আলাদা কোনো ফ্ল্যাটে থাকতাম না? মাস শেষে পনেরো হাজার টাকা শুধু ফ্ল্যাট ভাড়াই দিতে হতো। খেয়ে, পড়ে এই বিলাসীতার শহরে বেঁচে থাকতে পারতাম না। মাএ তেইশ হাজার টাকা স্যালারি আমার। তুই বল না? এই সামান্য টাকা থেকে আমি কিভাবে আলাদা করে তোর পড়ালেখার খরচ চালাই? এরপরে ও আমার যা আছে আমি চেষ্টা করতাম। কিন্তু তোর চাচী? সে কেনো চাইবে তার স্বামীর সামান্য বেতন থেকে ভাসুড়ের মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে? কোন স্বার্থ আছে তার এতে? আমার না হয় স্বার্থ আছে তুই আমার ভাতিজী। কিন্তু তোর চাচীর? তার তো কোনো স্বার্থ জড়িত নেই এখানে!”

লিলি গলা জড়ানো স্বরে বলল,,

“তার মানে ঐ দিন তুমি চাচীকে যা বলেছিলে সবটাই সত্যি বলেছিলো? আমার এক সপ্তাহের জন্য বেড়াতে আসাটাই সত্যি ছিলো চাচা?”

জুবায়ের আহমেদ টল মল চোখে লিলির দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“আমি অপারগ লিলি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে। চাচা হয়ে এই দুর্দিনে আমি তোর পাশে থাকতে পারছি না! তোর আকাশ জোড়া স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করতে পারছি না।”

ববি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে লিলির অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে মানতে পারছে না, এত্তো ব্রাইট এন্ড ব্রিলিয়েন্ট একটা স্টুডেন্টকে তার পড়ালেখা ছেড়ে আবার গ্রামে ফিরে যেতে হবে। কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে ববির। গ্রামে ফিরে গেলে সম্ভবত লিলির সাথে আর কখনো দেখাই হবে না ববির। একটা দিন লিলিকে দেখতে না পেলে ববির মনে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয় সেই অস্থিরতা সে কিভাবে কাটাবে তা নিয়ে ভাবতেই আপাতত ব্যস্ত সে। লিলির কান্নার ঢেউ ক্রমশ বাড়ছে। বুক ফাঁটিয়ে কাঁদছে সে। লিলির বুক ফাঁটা আর্তনাদ সহ্য করতে না পেরে ববি চোখে জল নিয়ে জুবায়ের আহমেদ এবং লিলিকে পাশ কাটিয়ে বাড়ি থেকে প্রস্থান নিলো। মুখ চেঁপে কাঁদতে কাঁদতে লিলি জুবায়ের আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“চাচা প্লিজ। আমাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিও না। প্রয়োজনে আমি তোমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে হিসেবে থাকব। সকাল থেকে রাত অব্দি সমস্ত কাজ আমি করব। চাচীর যতো কাজ আছে সব আমি করব। মাস শেষে তুমি শুধু আমার কলেজের খরচ টা চালিও। টিউশানের টাকা তোমাকে দিতে হবে না। আমি টিউশান পড়ব না। নিজে নিজে যতোটা পারি পড়ার চেষ্টা করব। তবু ও আমাকে গ্রামে ফিরে যেতে বলো না চাচা। দোহাই তোমার।”

“লিলি প্লিজ। বুঝার চেষ্টা কর। তুই আমার ভাতিজী। রক্তের সম্পর্ক আছে তোর সাথে আমার। তোকে এই বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে আমি দেখতে পারব না। কষ্ট হবে আমার। খুব কষ্ট হবে। তাছাড়া তোর চাচী ও তোকে এই বাড়িতে মেনে নিবে না। কাজের মেয়ে হিসেবে ও না।”

“তাহলে আমাকে অন্য কোথাও একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে দাও চাচা। বাসা বাড়ির কাজ হলে ও চলবে। রান্না বান্না হতে শুরু করে ঘর গোছানোর সমস্ত কাজ আমি পারি চাচা। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তো নিয়মিত ক্লাস করতে হয় না। আমি না হয় সপ্তাহে একদিন কাজের ফাঁকে কলেজে ক্লাস করে আসব।”

জুবায়ের আহমেদ প্রচন্ড রেগে ঠাস করে লিলির গালে এক চড় মেরে বললেন,,

“আমার ভাতিজী হয়ে তুই বাসা বাড়িতে বুয়ার কাজ করবি? এই কথাটা শোনার আগে আমার মরণ হলো না কেনো লিলি? উপর ওয়ালা কেনো আমাকে উঠিয়ে নিলেন না?”

রেশমী, রনক দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব শুনছে আর কাঁদছে৷ লিলি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে অঝড়ে চোখের জল ছাড়ছে। জুবায়ের আহমেদ অশ্রুসিক্ত স্বরে লিলিকে বললেন,,

“কালকের পর দিনই আমি তোকে গ্রামে দিয়ে আসব। গ্রামের কোনো ভালো কলেজে পড়বি তুই। এ নিয়ে আমি বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলব। আশা করি ভাই আমার কথা রাখবেন। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস লিলি৷ আমি হয়তো আজীবন তোর কাছে দোষী হয়ে থাকব।”

হেচকি তুলে কেঁদে লিলি জুবায়ের আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি তোমাকে দোষ দিচ্ছি না চাচা। তুমি হয়তো আমার জন্য যথেষ্ট করার চেষ্টা করেছ। তবে আমার ভাগ্য আমার পাশে ছিলো না। তাই হয়তো হারটা আমাকে মানতে হলো। যাই হোক, আমাকে কলেজে ভর্তি করানো নিয়ে আব্বুকে তোমার কিছু বলতে হবে না চাচা। পারলে তুমি আমায় কিছু খুচরো টাকা দিও। কাল ভোরে উঠেই আমি গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হবো। কারো জীবনে আমি বোঝা হয়ে থাকতে চাই না চাচা। মন্দ ভাগ্য নিয়েই আমি আমার গ্রামে ফিরে যাবো।”

ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে লিলি সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল৷ পানিযুক্ত ফ্লোরে ধপ করে বসে লিলি বুকের ভেতর দলা পাকা তীব্র কষ্ট গুলোকে বুক ফাঁটা চিৎকারের মাধ্যমে প্রকাশ করছে। গরীর হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়াটাই হয়তো ঘোর অপরাধ। আর তার চেয়ে বড় অপরাধ হলো মেয়ে হয়ে জন্মানো। সে জানে গ্রামে ফিরে গেলে তার ভবিষ্যত কি হবে। পড়ালেখা তো হবেই না উল্টে মেম্বারের ঐ খারাপ ছেলে তাকে জোর করে বিয়ে করার জন্য আবারো উঠে পড়ে লাগবে। ছোট্ট জীবনটা তার কাঁচের টুকরোর মতোন ভেঙ্গে যাবে৷ আকাশজোড়া স্বপ্ন গুলো তখন এক খন্ড কালো মেঘে ছেঁয়ে যাবে। কিছু করার থাকবে না তখন লিলির কিছু না!

জুবায়ের আহমেদ মাথা নিচু করে নির্বিকার ভঙ্গিতে হেঁটে রুমে প্রবেশ করে রুমের দরজাটা আটকে দিলেন। বেডের উপর ধপ করে বসে উনি আহত স্বরে বললেন,,

“আমাকে মাফ করে দিস লিলি। তোর অসহায়ত্বের সুযোগ নেওয়া আমার উচিত হয় নি। তোর বিশ্বাস, আস্থা, ভরসা, স্বপ্ন সব এক নিমিষে ভেঙ্গে দিলাম আমি। পারলাম না, ছাঁয়া হয়ে তোর পাশে থাকতে। আমাকে মাফ করে দিস লিলি৷ প্লিজ মাফ করে দিস।”

জুবায়ের আহমেদ ও কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। চোখ থেকে উনার টপটপ করে জল পড়ছে। লিলি এখনো ওয়াশরুমে বসে হাত, পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদছে। রেশমী, রনক ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের জল ছাড়ছে। বাবা এবং বোন কারো কষ্টই তারা দুজন সহ্য করতে পারছে না। মুখ খুলে কাউকে সান্তনা দিতে ও পারছে না!

কেটে গেলো মাঝ খানে এক সপ্তাহ। রাতের নিস্তব্ধ আকাশের নিচে ছাঁদের রেলিংয়ের উপর পা ঝুলিয়ে বসে ববি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে আবার চোখ নামিয়ে চার তলা ছাঁদের উপর থেকে রাস্তায় চলমানরত শোঁ শোঁ বেগে ছুটে আসা ছোট, বড় যানবাহন গুলোর দিকে তাকাচ্ছে। চোখের কার্ণিশে তার অশ্রুকণা ছলছল করছে। একটু আগেই সে খুব বিব্রত কর পরিস্থতিতে পড়েছে। তার বড় আপুর হাজবেন্ড হুট করে তাকে প্রস্তাব দিয়ে বসেছে উনার ছোট বোনকে বিয়ে করতে। ববির বড় আপুর বিয়ের পর থেকে উনার হাজবেন্ড ই ববিদের দেখাশোনা করছে। অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে চতুর্থ বর্ষ অব্দি পড়ালেখার সমস্ত খরচ চালিয়েছে ববির দুলাভাই। ববি যখন দুই বছরের, তখনই তার বাবা হার্ট এ্যাটাকে মারা যায়৷ মামার দাপট, প্রতিপত্তি, সম্পওি ছিলো বলে বোন এবং বোনের ছেলে, মেয়েকে উনি উনার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। ববির বড় বোন হেমাকে অনার্স কমপ্লিট করিয়ে উনি ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন৷ আর তখন থেকেই আতিক (ববির দুলাভাই) নিস্বার্থভাবে ববি এবং তার মায়ের ভরণপোষণের খরচ চালাচ্ছে। কোনো রকম অবহেলা, কৃপনতা, অযত্ন করে নি। সবসময় ছাঁয়া হয়ে পাশে থেকেছে। ববির মামার সকল দায়িত্ব নিজের ঘাঁড়ে তুলে নিয়েছে। এর ফাঁকে ববি দু, একটা টিউশান করে তার হাত খরচটা চালিয়েছে। তাই ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ঐ ভালো মানুষটার কথা রাখতে ববি বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই তাদের বিয়ে ফিক্সড হয়েছে। বেকার ছেলের কাছেই ববির দুলাভাই উনার বোনকে বিয়ে দিতে রাজি! একেবারে উতলা হয়ে আছে উনি।

এই এক সপ্তাহে কোনো ক্রমেই ববি লিলিকে ভুলতে পারছে না। লিলি ঢাকা ছেড়েছে চার দিন হলো। আজ পর্যন্ত লিলির খোঁজ নিতে পারে নি ববি। রেশমী, রনককে পড়াতে গেলেই তার ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। বুকটা ধক করে কেঁপে উঠে। আপনা আপনিই চোখের কোণে জল ভেসে উঠে। সাহস করে এই পর্যন্ত রেশমী, রনককে লিলির কথা জিগ্যেস করতে পারে নি, লিলির বর্তমান খবর জানতে পারে না। লিলির নামটা উচ্চারণ করতেই তার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে আসে। গলা ধরে আসে। নিজেকে কন্ট্রোল করা তখন দায় হয়ে পড়ে!

টুপ করে চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়তেই ববি জোসনা ভরা মায়াবী আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ফাঁটা চিৎকার করে বলল,,

“আই মিস ইউ পুতুল বউ। আই রিয়েলি মিস ইউ। তোমাকে ছাড়া আমি ভালো নেই লিলি। একদম ভালো নেই।”

মেয়েদের মতো ফুঁফিয়ে কেঁদে ববি আবার চিৎকার করে বলল,,

“বিশ্বাস করো লিলি, তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে নিজের বউ হিসেবে মানতে পারব না। ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে আমি। প্রচন্ড রকম ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার নামটা উচ্চারণ করতেই আমার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে আসে। বাক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি আমি। চোখের কোণে ও অবাধ্য জলদের ছুটাছুটি শুরু হয়। কেনো এতোটা কষ্ট হয় আমার লিলি? আছে এর কোনো উত্তর তোমার কাছে? তুমি কি সত্যিই শুনতে পারছ না লিলি আমার এই আত্নচিৎকার?”

অল্প সময় চুপ থেকে ববি নাক টেনে কেঁদে সামনের চুল গুলো খুব জোরে জোরে টানছে আর বলছে,,

“আমি কাকে বেছে নিবো লিলি? তোমাকে? নাকি আমার জিজুর দেওয়া কথাকে? সঠিক সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারছি না লিলি। খুব বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেঁসে গেছি। সিদ্ধান্ত হীনতায় দারুনভাবে ভুগছি। তবে আমি এটা জানি, তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত ও আমি বাঁচতে পারব না লিলি। পুরোপুরি মরতে না পারলে ও জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকব।”

ঐদিকে লিলি বিছানার উপর শুয়ে বুক ভাসিয়ে কাঁদছে। গাঁয়ে তার হলুদ রঙ্গের শাড়ী। হলুদের সাজে সজ্জিত সে। আজ তার গাঁয়ে হলুদ ছিলো। মেম্বারের ঐ খারাপ ছেলের সাথে আবারো তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। তার বাবা-মা বাধ্য হয়ে আবারো তাকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়েছে। বড় বোন ঝুলি লিলির পাশে বসে নাক টেনে কাঁদছে আর বলছে,,

“বোন। তুই আবার পালিয়ে যা। চাচার বাড়িতে গিয়ে উঠ। বাবাকে বলে আমি মাসে দু, তিন হাজার টাকা তোর জন্য ঢাকায় পাঠিয়ে দিবো। ঐ টাকা দিয়ে তোর পড়ালেখার খরচ চলবে। প্লিজ তুই আবার পালিয়ে যা বোন। নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিস না।”

লিলি হেচকি তুলে কেঁদে বলল,,

“চাচী আমাকে মেনে নিবেন না আপু। আবারো আমার গ্রামে ফিরে আসতে হবে। তাছাড়া, দু তিন হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে থেকে, খেয়ে পড়ালেখার খরচ চালানো সম্ভব না। দয়া করে তুমি আমাকে আর আশার আলো দেখিও না আপু। যা হচ্ছে হতে দাও। আমি আমার দুর্ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। কারো জীবনে আমি বোঝা হয়ে থাকতে চাই না আপু। আমার মা-বাবার জীবনেও না এমনকি আমার চাচা-চাচীর জীবনে ও না। বাকিটা জীবন আমি মেম্বারের ঐ খারাপ ছেলের সাথেই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।”

তন্মধ্যেই ঝুলির বাটন ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখল জুবায়ের আহমেদ কল করছে। ঝুলি কান্নার মাঝে ও হালকা হেসে ফোনটা লিলির দিকে এগিয়ে বলল,,

“বোন। চাচা কল করেছে। নে, কথা বল।”

ধরফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে লিলি চোখে জল নিয়েই কলটা রিসিভ করল। ঐ পাশ থেকে জুবায়ের আহমেদ শান্ত স্বরে বললেন,,

“কেমন আছিস ঝুলি?”

লিলি ফুঁফিয়ে কেঁদে বলল,,

“চাচা আমি ঝুলি না লিলি।”

লিলির কান্না জড়িত স্বর শুনে জুবায়ের আহমেদ উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন,,

“কি হয়েছে লিলি? তুই কাঁদছিস কেনো?”

“কাল আমার বিয়ে চাচা। আজ গাঁয়ে হলুদ ছিলো!”

“কি? এসব তুই কি বলছিস?”

“সত্যি বলছি চাচা৷ মেম্বারের ঐ খারাপ ছেলের সাথেই আমার আবার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

“বড় ভাইকে ফোনটা দে। উনার সাথে আমার কথা আছে৷ এতো বার করে উনাকে বুঝানোর পরে ও উনি ঐ খারাপ ছেলেটার সাথেই তোর বিয়ে ঠিক করেছেন?”

“আব্বুর এখানে দোষ নেই চাচা। আব্বু হেল্পলেস। সমাজে থাকতে হলে সমাজের লোকদের কথা মেনে চলতে হয়। উনারা যা বলবেন তাই শুনে চলতে হয়। আব্বুর কিছু করার নেই এখানে।”

জুবায়ের আহমেদ বেশ পেরেশান হয়ে বললেন,,

“আচ্ছা, আমি দেখছি কি করা যায়। তুই টেনশান করিস না মা। কিছুতেই আমি ঐ খারাপ ছেলের সাথে তোর বিয়ে হতে দিবো না। চাচার উপর অন্তত এইবার ভরসা করতে পারিস।”

জুবায়ের আহমেদ কলটা কেটে অফিসের পোষাক না পাল্টেই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে ববির নাম্বারে কল করলেন। ববি এখনো ছাঁদের রেলিংয়ে বসে চোখের জল ছাড়ছে। প্যান্টের পকেটে ফোনের রিং বাজতেই ববি পকেট থেকে ফোনটা বের করে ঘোলা ঘোলা চোখে স্ক্রীনের দিকে তাকালো। জুবায়ের আহমেদের নাম্বারটা দেখে ববি খুব দ্রুত কলটা রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকে জুবায়ের আহমেদ উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন,,

“ববি। কোথায় তুমি?”

ববি কান্না থামিয়ে শান্ত স্বরে বলল,,

“আপুর বাড়িতে৷ কেনো আঙ্কেল?”

“কাল একটু আমার সাথে নড়াইল যাবে?”

চোখে মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ ফুটিয়ে ববি ভয়ার্ত স্বরে বলল,,

“কেনো আঙ্কেল? কি হয়েছে? লিলি ঠিক আছে তো?”

“লিলি ঠিক নেই বাবা। মেম্বারের ঐ অসভ্য ছেলের সাথে আবার লিলির বিয়ে ঠিক হয়েছে। আর কালই ওর বিয়ে। যে করেই হোক, বিয়েটা আমাদের আটকাতে হবে বাবা। আমার অসহায় ভাতিজীটাকে বাঁচাতে হবে।”

ববি হম্বিতম্বি হয়ে ছাঁদের রেলিং থেকে উঠে চোখের জল মুছে ভীষণ রেগে তেজী স্বরে বলল,,

“কাল কেনো আঙ্কেল? আজই আমরা নড়াইল যাবো। আপনি দ্রুত বাস স্টপে চলে আসুন। আমি ও আসছি।”

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here