প্রেম_ফাল্গুন #পর্ব_৬

#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_৬
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

“আসছি চাচী।”

লিলি হম্বিতম্বি হয়ে মই বেয়ে বাড়ির ছাউনীতে দাঁড়াল। মাথা নিঁচু করে সে অপরাধী ভাব নিয়ে সোনিয়া আহমেদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সোনিয়া আহমেদ প্রখর রেগে বললেন,,

“যা রুমে যা। তাড়াতাড়ি জামাটা পাল্টে নে। জ্বর বাঁধিয়ে বসলে সেবা, যত্ন করবে কে? ঔষধ পত্রের খরচ বহন করবে কে?”

লিলি কাঁপা চোখে সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে ছোট আওয়াজে বলল,,

“বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যেস আছে আমার চাচী। তুমি চিন্তা করো না। কোনো রূপ অসুখ বাঁধবে না আমার।”

সোনিয়া আহমেদকে পাশ কাটিয়ে লিলি ওয়াশরুমে প্রবেশ করতেই সোনিয়া আহমেদ পেছন থেকে ডেকে বললেন,,

“জামা ছাড়া ওয়াশরুমে কি করবি?”

“জামাটা নিংড়ে আবার পড়ে নিবো চাচী।”

“এই তোর মাথায় কি ঘিলু নেই? ভেজা জামাটা আবার পড়বি? জ্বর বাঁধানের বুদ্ধি না?”

সোনিয়া আহমেদ ফের বিরক্তি নিয়ে বললেন,,

“দেখি,দাঁড়া একটু। রেশমীর একটা জামা এনে দিচ্ছি।”

ইতোমধ্যেই রেশমী হাতে এমব্রয়ডারীর কাজ করা গাঢ় নীল রঙ্গের সুন্দর একটা সালোয়ার স্যুট নিয়ে লিলির সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল,,

“নাও আপু। এই জামাটা পড়ে নাও। রঙ্গটায় তোমাকে ভীষষষণ মানাবে। কিছুদিন হলো জামাটা কিনেছি। মেবি একবার পড়েছি জামাটা। এরপর আর পড়া হয় নি। আর আজ তোমাকে দিলাম।”

“না রেশমী। জামাটা রেখ দাও। কোনো পুরাতন জামা থাকলে দাও। দেখেই বুঝা যাচ্ছে জামাটা তোমার ভীষণ পছন্দের।”

রেশমী হাত দিয়ে ঠেলে লিলিকে ওয়াশরুমের ভেতর প্রবেশ করিয়ে বেশ ব্যস্ত স্বরে বলল,,

“উফফ যাও তো আপু। বেশিক্ষণ ভেজা কাপড়ে থাকলে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।”

রেশমীর জোরাজুরিতে লিলি বাধ্য হয়ে জামাটা নিয়েই ওয়াশরুমে প্রবেশ করে দরজা আটকে দিলো। সোনিয়া আহমেদ রাগে গজগজ করে রেশমীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,,

“দরদ খুব উতলে পড়ছে না রে? আলমারীতে শুধু সব নতুন জামা ই আছে? পুরাতন কোনো জামা নেই? লিলিকে কেনো নতুন জামাটা দিতে গেলি?”

রেশমী কাঁপা স্বরে মাথা নিচু করে বলল,,

“পুরাতন জামা আপুকে কিভাবে দেই আম্মু? আপু তো আমার চাচাতো বোন। খারাপ লাগছিলো, তাই নতুন জামাটাই দিলাম।”

“আগামী এক বছর তুই কোনো নতুন জামা পাবি না, কথাটা মাথায় রাখিস।”

রেশমী কোনো প্রতিত্তুর না করেই পিছু ঘুড়ে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। তুখার রেগে সোনিয়া আহমেদ রান্নাঘরে প্রবেশ করে ছুরি দিয়ে বরবটি কাটছেন আর বলছেন,,

“কবে যে এক সপ্তাহ শেষ হবে উপর ওয়ালা জানেন৷ ছেলে, মেয়ে গুলো ও বিগড়ে যাচ্ছে ঐ মেয়ের জন্য৷ মুখে মুখে তর্ক করা শিখে গেছে৷ কিছু বললেই সাপের মতো ফনা তুলে।”

খানিক থেমে উনি ফের বললেন,,

“কোথায় রান্নাঘরে এসে আমাকে একটু সাহায্য করবে। হাতে হাতে কাজ করে দিবে, তা না এতো বড় যুবতী মেয়ে গেছে বৃষ্টিতে ভিজতে। সাথে আবার আমার ছেলে, মেয়ে দুটোকে ও নিয়ে গেছে। আজ যদি ঐ মেয়েকে দিয়ে আমি রান্নার কাজ না করাই তবে আমার নাম ও সোনিয়া না।”

আধঘন্টা পর। লিলি শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। ভেজা জামা গুলো ব্যালকনীর গ্রীলে ছড়িয়ে লিলি ভেজা চুলে রান্নাঘরে প্রবেশ করতেই সোনিয়া আহমেদ কটমট করে বললেন,,

“দুপুরে বরবটি আর মাছ রান্না করছি। তোর চাচা বলেছেন, মুরগীর মাংস রান্না করতে। তুই কি বলিস? মুরগির মাংস খাবি?”

“না চাচী। বরবটি আর মাছ ই ঠিক আছে।”

“না থাক। তোর চাচা শুনলে রাগ করবেন। ফ্রিজ থেকে মুরগি নামিয়ে রেখেছি। রান্না করে দিবো।”

সোনিয়া আহমেদের পাশে দাঁড়িয়ে লিলি ব্যস্ত স্বরে বলল,,

“তুমি যাও চাচী, আমি রান্না করছি।”

“না থাক। পরে তো বলবি চাচী তোকে দিয়ে কতো কাজ করিয়েছে।”

“আমাকে দেখে কি তোমার এমন মেয়ে মনে হয় চাচী?”

“না। তবু ও বললাম।”

“বলতে হবে না। তুমি যাও। আমি রান্না করছি।”

“পারবি তো?”

“পারব চাচী। রান্না করার অভ্যেস আছে আমার।”

“অহেতুক বৃষ্টিতে না ভিজে তখনই আমাকে একটু সাহায্য করতি। তাহলে এতোক্ষনে রান্না বান্না কমপ্লিট হয়ে যেতো, আর তোর ও অকারণে কথা শুনতে হতো না।”

“ভুল হয়ে গেছে চাচী। আর কখনো হবে না।”

রান্নাঘর থেকে সোনিয়া আহমেদ প্রস্থান নিচ্ছেন আর বলছেন,,

“ঠিকাছে ঠিকাছে। মন দিয়ে রান্না কর। ওয়াশরুমে এক বালতি কাপড় ভেজানো আছো, আমি কাপড় গুলো ধুঁয়ে আসছি।”

“আচ্ছা চাচী।”

লিলি মনযোগ দিয়ে রান্না করছে। দুপুর একটায় লিলির রান্না কমপ্লিট হলো। সোনিয়া আহমেদ তন্মধ্যে বাড়ির অন্যান্য কাজ কমপ্লিট করে নিলেন। জুবায়ের আহমেদ উনার অফিস কলিগদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি ফিরে এলেন। খাবার টেবিলে সবাই খাবারের স্বাদে বিভোর। লিলির রান্নার হাতের প্রশংসায় স্বয়ং সোনিয়া আহমেদ ও পঞ্চমুখ। মনে মনে ভীষণ তৃপ্ত লিলি। সবাই খাবারটা তৃপ্তি করে খেতে পেরেছে এটাই হলো তার সব’চে বড় পাওয়া।

,
,

সন্ধ্যে সাতটা। ববি উচ্ছ্বাসিত মনে নিষকালো রঙ্গের শার্ট পরিহিত অবস্থায় ঠোঁটে মৃদ্যু হাসি ঝুলিয়ে চোখে কাঙ্খিত মানুষটাকে দেখার পিপাসা নিয়ে জুবায়ের আহমেদের বাড়ির সদর দরজার সামনে দন্ডায়ান। সমস্ত প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ববি কলিং বেল চাপতেই সোনিয়া আহমেদ দরজা খুলে দিলেন। মুহূর্তেই ববির প্রাণোচ্ছ্বলতায় ভরা হাসি মুখটা বিষন্নতায় মিলিয়ে গেলো। মুখে গম্ভীরতার ছাপ ফুটিয়ে ববি মাথা নিচু করে সোনিয়া আহমেদের পাশ কাটিয়ে স্টাডি রুমের দিকে অগ্রসর হতেই সোনিয়া আহমেদ পেছন থেকে ববিকে ডেকে বললেন,,

“ববি শোনো।”

ববি পিছু ফিরে তাকাতেই সোনিয়া আহমেদ হালকা হেসে বললেন,,

“আজ তুমি ডিনার করে এরপরেই বাড়ি যাবে। কোনো রকম বাহানা চলবে না কিন্তু।”

এদিকে ববি ব্যস্ত পুরো বাড়িতে চোখ বুলাতে। অস্থির চোখে সে বাড়ির প্রতিটা আনাচে কানাচে লিলিকে খুঁজছে। উত্তেজনায় তার সমস্ত শরীরের লোপকূপ শিউরে উঠছে। ববি আন্দাজ করতে পারছে লিলি বাড়িতে নেই। থাকলে নিশ্চয়ই এতোক্ষনে ববির চোখে একবার হলে ও লিলির ছায়া পড়ত। ববির বুকের বাঁ পাশটা এতক্ষনে জানান দিয়ে দিতো। ববির এহেন অস্বাভাবিক কার্যকলাপে সোনিয়া আহমেদ খানিক কৌতুহলী হয়ে ববির দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“কাউকে খুঁজছ ববি?”

ববি খানিক থতমত খেয়ে এক নিশ্বাসে বলল,,

“না আন্টি৷ আপনি বলুন না, কি যেনো বলছিলেন?”

“আজ তুমি আমাদের বাড়িতে ডিনার করে যাবে। পোলাও, মুরগি সব রান্না করেছি। রাতে আমরা একসাথে বসে খাবো।”

ববি ইতস্তত বোধ করে বলল,,

“না আন্টি। আজ আপুর বাড়িতে ডিনার করতে হবে। আসলে, জিজু আজ দেশে ফিরেছেন। মূলত, উনার সাথেই দেখা করতে যাওয়া।”

সোনিয়া আহমেদ মুখটা শুকনো করে বললেন,,

“ওহ আচ্ছা। তাহলে ঠিক আছে।”

ববি স্টাডি রুমে প্রবেশ করতেই রেশমী, রনক চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ববিকে সালাম জানালো। সালামের জবাব নিয়ে ববি মুহূর্তের মধ্যেই রাগান্বিত হয়ে শার্টের প্রথম দুটো বাটন খুলে চোয়াল শক্ত করে বিড়বিড় করে বলল,,

“ধ্যাত। লিলিকে দেখা হলো না। মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো। এতো উদগ্রীব হয়ে আমি কার জন্য ছুটে এলাম? ওর জন্য জিজুর সাথে ও এখনো দেখা করা হলো না আমার। ভীষণ ইম্পর্টেন্ট কাজ ছিলো জিজুর সাথে।”

ববি পারছে না শার্টটা টেনে ছিড়ে ফেলতে। ঘাঁড়ের রাগ গুলো তার টান টান হয়ে আছে। চোখ দুটো অসম্ভব রকম লাল হয়ে চোখের রগ গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সামনের চুল গুলো টেনে ববি সশব্দে চেয়ারটা টেনে বসল। পাখার নিচে থেকে ও সে প্রচুর ঘামছে। রেশমী, রনক ভয়ে চুপসে আছে। মুখে এক আঙ্গুল গুজে দুজন নিজেদের পড়া গুছাতে ব্যস্ত। চোখ বুজে ববি নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। খনিক ক্ষণ বাদে চোখ জোড়া খুলে ববি নিজেকে কিছুটা শান্ত করে রেশমীর দিকে স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে ছোট আওয়াজে বলল,,

“লিলি কোথায়?”

রেশমী কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,,

“আআআপু তো আব্বুর সাথে শশপিং কমপ্লেক্সে গেছে।”

ববি চরম আশ্চর্যিত হয়ে বলল,,

“কেনো?”

“আব্বুর অফিস কলিগের ম্যারেজ এনিভার্সারি কাল। তাই আব্বু গিফট কিনতে গেছে শপিং কমপ্লেক্সে৷ সাথে আপুকে ও নিয়ে গেছে। এই শহরে আপু এই প্রথম বার এসেছে তো, তাই একটু ঘুড়তে নিয়ে গেছে।”

তৎক্ষনাৎ ববি বসা থেকে উঠে শার্টের বাটন গুলো লাগিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে স্টাডি রুম থেকে প্রস্থান নিচ্ছে আর রাগী স্বরে পেছনে থাকা রেশমীকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,

“আজ পড়াতে পারব না। জরুরি কাজ পড়ে গেছে। তোমার আম্মুকে বলে দিও।”

রেশমী, রনক খুশিকে আত্নহারা হয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,,

“ওকে স্যার। আসসালামু আলাইকুম।”

বাড়ির মেইন গেইটে দাঁড়াতেই খালি রিকশা পেয়ে ববি শপিং কমপ্লেক্সের উদ্দেশ্যে রিকশায় উঠে পড়ল। ব্যাকুলতা, আকুলতা, অস্থিরতায় সম্পূর্ণ জর্জরিত ববি। চোখে তার অপার উদ্দীপনা। কখন সে লিলিকে দেখবে, তার মন মেজাজ শান্ত করবে সে ভেবেই অস্থির। একদিনের ব্যবধানে লিলিকে দেখার জন্য এতোটা উদগ্রীব হয়ে উঠবে সে স্বপ্নে ও ভাবতে পারে নি। শপিং কমপ্লেক্সে পৌঁছাতেই ববি রিকশা ভাড়া মিটিয়ে উন্মাদের মতো তিন তলা শপিং কমপ্লেক্সটার একতলা, দুতলা ঘুড়ে অবশেষে ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে তিন তলায় উঠতেই আকস্মিক কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে চোখ তুলে উপরের দিকে তাকাতেই অকস্মাৎ লিলিকে দেখতে পেলো। লিলি চোখ বুজে ব্যাথায় কপাল ঘঁষছে আর ছোট আওয়াজে বলছে,,

“উফফ কপালটা ফেঁটে গেলো আমার।”

ববি একটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বুকে হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,

“ওহ্ গড। অবশেষে তাকে পেলাম।”

লিলি এখনো কপাল ঘঁষে ব্যাথায় কুঁকাচ্ছে। অস্থির হয়ে ববি লিলির দিকে সামান্য ঝুঁকে বলল,,

“লিলি৷ তাকান। আমি ববি।”

চোখে জল নিয়ে লিলি ববির দিকে তাকাল। ববি উদ্বিগ্ন হয়ে লিলির অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“কি হয়েছে লিলি? আপনি কাঁদছেন কেনো? বেশি ব্যাথা পেয়েছেন? নাকি অন্য কোনো কারণ?”

“চাচাকে খুঁজে পাচ্ছি না ববি ভাই। অনেকক্ষণ যাবত খুঁজছি।”

“মানে? আঙ্কেল আপনার কাছাকাছি ছিলেন না?”

“ছিলো। এতো লোকজনের ভীড়ের মাঝে চাচাকে আমি ঠিক ঠাওর করতে পারি নি। ভীড়ের মাঝে কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে।”

“ওহ্ আচ্ছা এই ব্যাপার? আমি তো ভাবছিলাম ভয়ঙ্কর কিছু হয়েছে বোধ হয়!”

“সিরিয়াসলি ববি ভাই? বিষয়টা আপনার কাছে নরমাল মনে হচ্ছে?”

“আমার কাছে তো নরমাল ই মনে হচ্ছে। কজ, আঙ্কেলকে খুঁজে পাওয়া একদমই ইজি। মেবি আঙ্কেলের মোবাইল নাম্বরটা আমার ফোনে সেইভ আছে।”

“কিন্তু আমার একার পক্ষে ইজি ছিলো না। আমার কাছে যোগাযোগ করার মতোন কোনো ফোন নেই। এমনকি চাচার ফোন নাম্বার ও আমার জানা নেই। কিভাবে খুঁজতাম আমি চাচাকে?”

ববি ক্ষীণ হেসে বলল,,

“একটা জিনিস খেয়াল করলে হয়তো বুঝতে পারবেন লিলি, এই শহরে আসার পর থেকে আপনি যতোবারই বিপদে পড়েছেন, ততোবারই কোনো না কোনো ভাবে আমি আপনার সম্মুখীন হয়েছি৷ আচ্ছা, আপনার কি মনে হয় না? উপর ওয়ালা কিছু একটা ইঙ্গিত করতে চাইছেন!”

লিলি বিস্মিত হয়ে বেশ ছোট আওয়াজে বলল,,

“বুঝলাম না ববি ভাই। এক্সেক্ট কি বুঝাতে চাইলেন?”

ববি প্রসঙ্গ পাল্টে ক্ষুব্ধ স্বরে বলল,,

“নাথিং। এক্সেক্ট মিনিং বুঝার মন মানসিকতা হয়নি মেবি তোমার।”

সামনের চুল গুলো টেনে ববি চোখে, মুখে তিক্ততা নিয়ে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“স্যরি। আসলে আমি তোমাকে আপনি করে আর বলতে পারছিলাম না। আই থিংক তুমিটাই ব্যাটার। তুমি কি মতামত?”

লিলি মাথা নিচু করে ছোট আওয়াজে বলল,,

“বয়সে আমি আপনার ছোট। আই থিংক তুমিটাই ব্যাটার।”

পকেট থেকে সেলফোনটা বের করে ববি জুবায়ের আহমেদের ফোনে কল করতে গিয়ে ও থেমে গেলো৷ রাগী মুখে আচমকা বাঁকা হাসি ফুটিয়ে ববি বিড়বিড় করে বলল,,

“এই চান্স। লিলির সাথে প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করার। এই চান্স কিছুতেই মিস করা যাবে না৷ থ্যাংকস জুবায়ের আঙ্কেল, অজান্তেই খুব বড় একটা হেল্প করলেন আমার।”

গলাটা খাঁকিয়ে ববি সেলফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে আমতা আমতা স্বরে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আসলে লিলি৷ জুবায়ের আঙ্কেলের ফোন নাম্বারটা আমার কাছে নেই। কোনোভাবে হয়তো নাম্বারটা ডিলিট হয়ে গেছে।”

লিলি শুকনো মুখে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তাহলে কি হবে ববি ভাই? চাচাকে কিভাবে খুঁজব আমরা?”

“ডোন্ট ওরি ওকে? ওয়ে তো একটা বের হবেই। চলো এর আগে আমরা পুরো কমপ্লেক্সটা আরো একবার খুঁজে দেখি। মেবি পেয়ে যাবো।”

“চাচীর ফোন নাম্বার ও নেই? মানে চাচীর ফোন নাম্বারটা থাকলে তো চাচীকে কল করে চাচার ফোন নাম্বারটা কালেক্ট করা যেতো।”

“না নেই। আন্টির নাম্বারটা ও কোনোভাবে ডিলিট হয়ে গেছে। সময় নষ্ট না করে আই থিংক আমাদের কমপ্লেক্সটা ঘুড়ে দেখা উচিত।”

“ঠিক আছে। বাট, আপনি হঠাৎ এখানে কি করছেন? মানে আপনি কি আগেই থেকেই কমপ্লেক্সে ছিলেন?”

ববি থমতম খেয়ে গলা খাকারি দিয়ে বললাম,,

“না। মাএ এলাম। একচুয়েলি একটা কাজে আসা এখানে। তার মধ্যেই তো তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলো।”

“কিন্তু আপনার তো এই টাইমে রেশমী, রনককে পড়ানোর কথা ছিলো!”

ববি পেছনের চুল গুলো টেনে ছোট আওয়াজে বলল,,

“ছিলো৷ বাট জরুরি কাজে এখানে চলে আসতে হলো। চলো, আমরা কথা না বাড়িয়ে কমপ্লেক্সটা ঘুড়ে দেখি।”

“ঠিক আছে।”

ববি স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে লিলির পাশ ঘেঁষে হাটছে। আড়চোখে সে লিলির শুকনো মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ববির চোখ গেলো লিলির কপালের দিকটায়। কপালের ডান পাশটা খানিক ফুলে আছে লিলির। ববির কপালের সংঘর্ষে লিলির কপালের এই অবস্থা৷ হাঁটা থামিয়ে ববি উত্তেজিত হয়ে লিলির সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল,,

“লিলি। কপালটা ফুলে গেছে তোমার। আই থিংক ইমেডিয়েট বরফ লাগানো উচিত।”

“কিছু হবে না ববি ভাই। একটু পর এমনিতেই ফোলা কমে যাবে। এতো ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই।”

“ঠিক আছে। তবে পেইন তো হচ্ছে।”

“এই ব্যাথায় কিছু হবে না। প্লিজ চলুন আমরা চাচাকে খুঁজি।”

“বেশি পেইন হলে প্লিজ আমাকে বলো। চেঁপে রাখবে না ওকে?”

“ওকে।”

লিলির সম্মুখ থেকে ববি সরে দাঁড়ালো। তিন তলা ঘুড়ে দুজন দু তলায় কসমেটিকস কর্ণারের দিকে আসতেই লিলির হঠাৎ চোখ পড়ল রকমারী রেশমি চুড়ির উপর। চোখে এক ঝাঁক উল্লাস নিয়ে লিলি দূর থেকে চুড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে৷ লিলির দৃষ্টি অনুসরণ করে ববি মৃদ্যু হেসে আচমকা লিলির হাত টেনে দোকানটায় প্রবেশ করল। লিলি হতভম্ব হয়ে ববির দিকে তাকিয়ে আছে। ববি পাশ ফিরে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ডোন্ট ওরি। আমি খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তোমার হাত ধরি নি।”

লিলি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দোকানীকে উদ্দেশ্য করে ববি ক্ষীণ স্বরে বলল,,

“আপনার দোকানে যতো টাইপের চুড়ি আছে সব বের করুন।”

লিলি বিস্মিত চোখে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কেনো ববি ভাই? চুড়ি দিয়ে আপনি কি করবেন?”

“চুড়ি আমার জন্য না। তোমার জন্য।”

“আমি তো আপনাকে কিছু বলি নি। তবে?”

“সব কথা এক্সপ্লেইন করে বলতে হবে কেনো? কিছু কথা মন থেকে বুঝে নেওয়ার মন মানসিকতা তৈরি করতে হয়।”

#চলবে…..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here