প্রেম_ফাল্গুন #পর্ব_৫

#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_৫
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

“আসলে আপনার খবর জানার জন্য আমি এতোটাই ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলাম যে শার্টের বোতম গুলো ঠিকভাবে লাগানোই হয় নি। তন্মধ্যে এ ও ভুলে গেছিলাম আজ ফ্রাইডে। ভার্সিটি বন্ধ।”

লিলি বিস্মিত হয়ে চোখ জোড়া প্রকান্ড করে ববির সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল,,

“মানে? আমার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন মানে?”

থতমত খেয়ে ববি অস্থির চাহনীতে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“না মানে। কিছু না। আমি তো এসেছিলাম রিসিট নিতে। কি থেকে কি বলে ফেলছি। মতিভ্রম হয়েছে বোধ হয়!”

“মতিভ্রম? আপনার মাথা কি সত্যিই আউলা হয়ে গেছে?”

ববি জোর পূর্বক হেসে বলল,,

“একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো না? মতিভ্রম মানেই আউলা না। ইট’স মিন, খনিকের জন্য মস্তিষ্কের তরঙ্গ থেমে যাওয়া।”

“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে ঠিক আছে!”

তন্মধ্যেই স্টাডি রুম থেকে সোনিয়া আহমেদ খানিক চেঁচিয়ে বললেন,,

“ববি। কই, কোনো রিসিট ই তো খুঁজে পেলাম না। তুমি এসে একটু দেখবে?

লিলির পাশ কাটিয়ে ববি স্টাডি রুমে এলো। অস্থিরতা নিয়ে ববি খানিক ইতস্ততা বোধ করে সোনিয়া আহমেদকে বলল,,

“আন্টি থাক। খুঁজে পাচ্ছেন না যেহেতু। নিশ্চয়ই অন্য কোথাও ভুলবশত রিসিট টা পড়ে গেছে। সন্দেহের বসে আসলে এ বাড়িতে আসা। বাড়িতে আরো একবার চেইক করলে হয়তো বা পেয়ে যাবো।”

ববি দম নিয়ে ফের বলল,,

“এই অসময়ে এসে আপনাদের বিব্রত করার জন্য আমি দুঃখিত আন্টি।”

সোনিয়া আহমেদ মৃদ্যু হেসে ববির সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললেন,,

“আরে ববি৷ এতো ব্যস্ত হচ্ছ কেনো? তোমার হঠাৎ আগমনে আমরা কোনো রূপ বিব্রত হই নি। উল্টে ভালো লেগেছে। তবে আমি দুপুরে রুম ঝাঁড়ু দেওয়ার সময় আরো একবার পুরো রুমটা চেইক কর নিবো, যদি রিসিট টা পেয়ে যাই তাহলে তো ভালোই। কাল পড়াতে এসে নিয়ে যাবে।”

“জ্বি আচ্ছা আন্টি। তাহলে আমি আসছি!”

“চা টা খেয়েছ তো?”

ববি পিছনের চুল গুলো টেনে আমতা আমতা করে বলল,,

“না। আসলে খাওয়া হয় নি।”

“ইসসস চা টা হয়তো এতক্ষনে ঠান্ডা হয়ে গেছে। কি যে করো।”

সোনিয়া আহমেদ ববিকে পাশ কাটিয়ে ডাইনিং টেবিলের সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছেন আর ববিকে পেছন থেকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,,

“দেখি আসো। চা টা খেয়ে যাও।”

“না আন্টি। আসলে আমার এক্ষুনি বাড়ি যেতে হবে।”

তন্মধ্যেই ববির ঠান্ডা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে লিলি সোনিয়া আহমেদকে উদ্দেশ্য করে ক্ষীণ স্বরে বলল,,

“চাচী। উনার চা টা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমি কি গরম করে দিবো?”

“আমি এক্ষনি তোকে বলতাম, এর পূর্বেই তুই বুঝে গেলি৷ যা তাড়াতাড়ি গরম করে নিয়ে আয়।”

লিলি রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াতেই সোনিয়া আহমেদ ববিকে ইশারা করে মৃদ্যু হেসে বলল,,

“বসো ববি। চা টা খেয়ে যাও।”

জুবায়ের আহমেদ মুখে পরোটা নিয়ে ববিকে অস্পষ্ট স্বরে বললেন,,

“হুম ববি বসো। চা টা খেয়ে যাও।”

আপত্তি সত্ত্বে ববি চেয়ার টেনে বসল। সোনিয়া আহমেদ ববির পাশের চেয়ারটা টেনে বসলেন। আর তৃষ্ণার্ত গলাটা পানি দিয়ে ভিজিয়ে মলিন হেসে বললেন,,

“এই যে মেয়েটা দেখলে, ওর নাম লিলি৷ আমার ভাসুড়ের মেয়ে। গ্রাম থেকে এসেছে।”

“একেবারের জন্য? নাকি বেড়াতে এসেছে?”

“আরে না না। একেবারের জন্য আসবে কেনো? কয়েকদিনের জন্যে বেড়াতে এসেছে। গ্রামে ওর মা-বাবা আছে না।”

“ওহ্ আচ্ছা। বেড়াতে এসেছে!”

“হুম৷ এই প্রথম আমাদের বাড়িতে এলো বুঝলে? তাই বললাম, কয়েকদিন থেকে যেতে। আমার ছেলে, মেয়ের ও তো মন চায় জেঠাতো বোনের সাথে সময় কাটাতে, দুষ্টু, মিষ্টি খুনসুটি করতে। তাই আরো বিশেষ করে রেখে দিলাম!”

ববি এদিক ওদিক তাকিয়ে ফের স্থির দৃষ্টিতে সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“আপনার মা-বাবা বাড়িতে নেই?”

“না। গত কাল রাতে কক্সবাজার ট্যুরে গেছেন। বাবার অফিস থেকে। অবশ্য মা-বাবা বলেছিলেন, রেশমী, রনককে সাথে নিয়ে যেতে, তবে আমিই বাধ সাধলাম। কিছু দিন পরই ওদের সেমিষ্টার পরীক্ষা। পরীক্ষার পূর্বে পড়ালেখায় কোনো বিলম্ব করতে চাই নি।”

ববি তিক্ততা নিয়ে মনে মনে বিড়বিড়িয়ে বলল,,

“আপনার তো সব বিষয়েই বাড়াবাড়ি। দুই বছর ধরে আমি ওদের গাইড করছি৷ শুক্রবার বাদে আজ পর্যন্ত আপনাদের কোথাও একদিনের জন্য বেড়াতে যেতে দেখলাম না। কোনো কারণে অন্তত একদিনের জন্য ও প্রাইভেট মিস করতে দেখলাম না। প্রতিবার আমাকেই বাহানা দিয়ে এক, দুই দিনের জন্য গ্যাপ দিতে হয়। ছেলেমেয়েদের জ্বর থাকলে ও কান মলে পড়াতে বসান। পড়তে মন চাইলে ও বকা ঝকা করে পড়তে বসান। উপর ওয়ালা জানেন, উনি কোন মাটি দিয়ে আপনাকে তৈরী করেছেন।”

তন্মধ্যেই লিলি গরম চা নিয়ে ববির সম্মুখে চা টা রাখল। লিলির ঘর্মাক্ত ক্লান্ত মুখটাতে ও ববি এক ধরনের মাদকতা খুঁজে পাচ্ছে। অপলক দৃষ্টিতে ববি লিলির দিকে তাকিয়ে শুকনো মুখে ম্লান হাসি ফুটিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,

“এবার তো আমার রোজই নিয়ম করে টিউশনে আসতে হবে পুতুল বৌ। শুক্রবারে ও গ্যাপ দেওয়া যাবে না। হাজার প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বে ও এই ববি ঠিক ছুটে আসবে। কোনো পিছুটানই ববিকে আটকে রাখতে পারবে না। লিলির টানে, পুতুল বৌয়ের টানে, ববি ঠিক সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তার দু চোখের তাঁরায় জ্বলে উঠবে!”

ক্লান্তহীন দৃষ্টিতে ববি লিলির দিকে তাকিয়ে আছে। লিলি মাথা নিচু করে ববিকে উদ্দেশ্য করে মলিন স্বরে বলল,,

“চা টা জলদি খেয়ে নিন ববি ভাই। নতুবা ফের ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

সোনিয়া আহমেদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

“এই, তুই ববিকে ববি ভাই বললি কেনো? ববির নাম ধরে ডাকলি কেনো?”

লিলি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে নিচু আওয়াজে বলল,,

“তাহলে কি বলে ডাকব চাচী?”

“স্যার ডাকবি স্যার। রেশমী আর রনক যা ডাকে তা।”

জুবায়ের আহমেদ গলা খাঁকিয়ে বললেন,,

“হ্যাঁ স্যার ই ডাকবি। স্যার ই ভালো। আগে থেকে স্যার ডেকে প্র্যাক্টিস করে রাখতে হবে তো নাকি? বলা যায় না, ভবিষ্যতে হয়তো এই ডাকটাই কাজে লাগতে পারে!”

সোনিয়া আহমেদ কৌতুহলী হয়ে জুবায়ের আহমেদকে বললেন,,

“এই, আগে থেকে প্র্যাক্টিস করে রাখবে মানে? কি বলতে চাইলে তুমি?”

তন্মধ্যেই ববির নাকে, মুখে উঠল। চায়ের প্রথম চুমুকেই সোনিয়া আহমেদের খড়তড় কথা শুনে ববির গলার গহ্বরে চা টা আর ঠায় পেলো না। উল্টে বেরিয়ে এলো। কাশতে কাশতে ববি প্রসঙ্গ ঘুড়ানোর জন্য পেরেশান হয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দেওয়া সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আন্টি, আজ সন্ধ্যায় আমি রেশমী, রনককে পড়াতে আসব। মূলত এই কথাটা বলার জন্যই এই সময় আসা। কথার মারপ্যাঁচে আসল কথাটা বলতেই ভুলে গেছিলাম।”

তৎক্ষনাৎ সোনিয়া আহমেদ চোখ দুটো প্রকান্ড করে দাঁতের পাটি বের করে হেসে বললেন,,

“সত্যি ববি? তুমি শুক্রবারে ও রেশমী, রনককে পড়াতে আসবে?”

ঐদিকে রেশমী, রনক অগ্নিশর্মা হয়ে ববির দিকে তাকিয়ে আছে। হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে, এক্ষনি হাতে থাকা কাটা চামচ দিয়ে ববিকে থেতলে দিবে। লিলি এবং জুবায়ের আহমেদ মুখে চেঁপে হাসছে রেশমী, রনকের মুখ ভঙ্গি দেখে। লিলি বাঁকা হেসে পাশাপাশি বসে থাকা রেশমী, রনকের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,

“আহারে। ছুটির দিনে ও আজ তোমাদের পড়তে হবে! কপাল দেখো!”

দুজনই রাগান্বিত চোখে লিলির দিকে তাকালো। লিলি তড়িঘড়ি করে উড়না দিয়ে হাসি চেঁপে সোজা দন্ডায়মান হয়ে গেলো। চা টা কোনো রকমে একটানে শেষ করে ববি চেয়ার ছেড়ে উঠে সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,,

“জ্বি আন্টি সত্যি। কিছুদিন পরেই তো রেশমী, রনকের সেমিষ্টার এক্সাম। তাই এই সময়টাতে হেলা করতে চাইছি না।”

“কিন্তু শুক্রবারে তো তুমি ফ্রেন্ডসদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ট্যুর দাও৷ এর কি হবে? ট্যুর ছাড়া তো তুমি একটা সপ্তাহ ও কল্পনা করতে পারো না। আর গতকাল তো এই বলেই আধ ঘন্টা পূর্বে রেশমী, রনককে ছুটি দিয়ে গেলে। তুমি নাকি মধ্যরাতের দিকে ট্যুরে যাবে।”

ববি ছটফটে ভাব নিয়ে পেছনের চুল গুলো টেনে মনে মনে বলল,,

“ধ্যাত, এই মহিলা দেখছি গোয়ান্দা রানী। পর পর প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। কিভাবে বলি মধ্যরাতে পুতুল বৌকে দেখে আমার ট্যুরে যাওয়া ভেস্তে গেছে। বন্ধুরা সবাই আমাকে ছেড়েই ট্যুরে চলে গেছে।”

মৌণতা ভেঙ্গে ববি অস্পষ্ট স্বরে সোনিয়া আহমেদেকে বললেন,,

“আসলে আন্টি হয়েছে কি, কোনো কারণে ট্যুর যাওয়াটা আমার ভেস্তে গেছে। তাই ভাবলাম রেশমী, রনককে আজ সন্ধ্যায় এক ঘন্টা সময় দেই।”

“খুব ভালো ববি। আমি ভীষণ খুশি। তাহলে আজ সন্ধ্যায় তুমি আসছ তাই তো?”

ববি শুকনো ঢোক গিলে বলল,,

“জ্বি আন্টি৷”

“পাশের বাড়ির ঝর্ণার ছেলেকে ও কি আজ পড়াবে?”

ববি ইতস্ততবোধ করে বলল,,

“নানানা আন্টি। পল্লবকে আজ পড়ানো যাবে না। ওরা তো বেড়াতে গেছে।”

“এই ঝর্ণাটা না, আসলেই একটা বেয়াক্কেল। ঘন ঘন শুধু বেড়াতে যায়। মানে, ছেলের পড়ালেখা নিয়ে কোনো আগ্রহ ই নেই।”

“হহহহয়তো৷ আচ্ছা আন্টি, এবার আমি আসি।”

“ঠিক আছে বাবা। সন্ধ্যায় দেখা হবে।”

ববি সদর দরজার দিকে মোড় নিতেই সোনিয়া আহমেদ লিলিকে ডেকে বললেন,,

“যা তো লিলি৷ ববি বের হওয়ার পর দরজাটা বন্ধ করে আসিস।”

লিলি মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। ববি সদর দরজা থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বমুহূর্তে পিছু ঘুড়ে লিলির দিকে আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছোট আওয়াজে বলল,,

“রাতে দেখা হচ্ছে। আর একটা কথাঃ শুভ্র অবয়বে কৃঞ্চ রঙ্গ। আপনার চিরাচারিত সৌন্দর্যকে তিনগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে। একদম বিমোহিত হওয়ার মতো!”

লিলি ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুুচকে বলল,,

“বিমোহিত! আমাকে বললেন?”

“আপনি ছাড়া তো আশেপাশে কেউ নেই।”

“বোধগম্য হলো না কিন্তু।”

ববি মলিন হেসে বলল,,

“কিছু না। আসছি।”

ববি প্রস্থান নিলো। লিলি কৌতুহলী দৃষ্টিতে ববির যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। দরজাটা আটকে লিলি খাবার টেবিলে বসল। মাথা নিচু করে খাওয়ার মনযোগ দিলো। অপরপ্রান্তে, ববি উদাসী চিত্তে ফুটপাতের পাশ ঘেঁষে হাঁটছে। অজান্তেই সে মিটিমিটি হাসছে। ভাবছে কখন সন্ধ্যা হবে, কখন সে তার পুতুল বৌয়ের সান্নিধ্যে নিজের উতলা মনকে প্রসন্ন করবে। প্রতিটা প্রহর যেনো তার কাছে দম আটকে আসার অনুভূতির মতোন লাগছে। তক্ষনি গলির মোড়ে থাকা বিশাল প্লে গ্রাউন্ড থেকে একদল কিশোর ছেলে ববিকে গলা ছেড়ে ডেকে বলছে,,,

“ববি ভাভাভাই?”

ববি নিজের খেয়ালে এতোটাই ডুবন্ত ছিলো যে, কোনো আওয়াজ ই তার কানে প্রবেশ করছিলো না। কিশোর গুলো ফের এক জোট হয়ে গলার সমস্ত জোর দিয়ে ডেকে বলল,,

“ববি ভাভাভাই!”

ববির টনক এবার নড়ল। পাশ ফিরে গলির মোড়ে তাকাতেই কিশোর ছেলে গুলো ফের চেঁচিয়ে বলল,,,

“ববি ভাই। আজ খেলবে না?”

ববি এক ছুটে রাস্তার ওপাশে গিয়ে ছেলে গুলোর সম্মুখে দাঁড়িয়ে একটা ছেলের হাত থেকে ক্রিকেট ব্যাট হাতে নিয়ে ব্যাটটাকে চোখ ঘুড়িয়ে দেখছে আর উল্লাসে চেঁচিয়ে বলছে,,

“ইয়েয়েয়েয়েস। খেলা হবে।”

ছেলে গুলো খিলখিলিয়ে হেসে বলল,,,

“চলো। তবে শুরু হয়ে যাক।”

ববি ব্যাটে ঢ্যাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে বেশ ভাব নিয়ে বলল,,

“প্রথমে কিন্তু আমিই ব্যাটিং করব!”

কিশোল দল থেকে একটা দশ বছরের ছেলে মাথায় ক্যাপ পড়ে গম্ভীর স্বরে বলল,,

“তুমিই তো সবসময় প্রথম ব্যাটিং করো ববি ভাই। আমাদের কাউকে সুযোগ ই দাও না।”

ববি ব্যাটটা হাত তুলে ব্যাটিং করার ভঙ্গি নিয়ে বলল,,

“আচ্ছা যা। আজ তোকে প্রথমেই ব্যাটিংয়ে চান্স দিলাম। কেনো বল তো?”

কিশোর ছেলেটা দাঁতের পাটি বের করে হেসে বলল,,

“কেনো কেনো?”

ববি বল ছাড়াই ব্যাটিং করছে আর এক গাল হেসে বলছে,,

“কারণ, আজ তোদের ববি ভাই ভীষণ খুশি।”

কিশোর ছেলের দল খুশিতে উচ্ছ্বাসিত হয়ে খেলায় মনোনিবেশ করল। ববি ও লিলিকে কিছু মুহূর্তরের জন্য ভুলে খেলায় মনযোগ দিলো।

_______________________________________

দুপুর এগারোটা। লিলি ছাঁদে উঠে রেশমী, রনকের সাথে লুকোচুরি খেলছে। মই বেয়ে তিনজন এক তলা বাড়ির ছাঁদে উঠেছে। ছাঁদ থেকে গলির মোড়ের প্লে গ্রাউন্ডটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। লিলির চাচার বাড়ি থেকে প্লে গ্রাউন্ডটা বেশি দূর হবে না। লিলি এবং রেশমী টাঙ্কির পেছনে লুকিয়ে রনকের সাথে লুকোচুরি খেলছে। রনক কিছুতেই তাদের ধরতে পারছে না। রনক যে দিকটায় আসছে তারা দুজনই দৌঁড়ে এর উল্টো দিকটায় যাচ্ছে। মুখ চেঁপে হেসে দুজন গলির মোড়ের প্লে গ্রাউন্ডের দিকে তাকাতেই চুপ হয়ে গেলো। রেশমী ভয়ে কেঁপে কেঁপে লিলির কানে ছোট আওয়াজে বলল,,

“দেখছ আপু, স্যার খেলছে। আমাকে এখানে দেখে নিলেই বকবে।”

“কেনো বকবে হুম? উনি ও তো খেলছন। এখানে দোষের কি আছে?”

“দোষটা খেলার না। দোষটা হলো ছাঁদে উঠার। আমার দুই ভাই, বোন সবসময় ছাঁদে উঠে খেলি তো, কখন না অসতর্কতাবসত ছাঁদ থেকে পড়ে যাই, সেজন্য আম্মু স্যারকে বলে দিয়েছেন, স্যার যেনো আমাদের এই বিষয়ে শাস্তি দেন। এজন্য স্যার শাস্তি স্বরূপ আমাদের দুই ভাই বোনকে গুনে গুনে ২০০ বার কান ধরে উঠ বস করিয়েছেন। এরপর থেকে আমরা তেমন ছাঁদে উঠি না। তবে আজ তোমাকে পেয়ে ছাঁদে উঠলাম। উঠেই তো মসিবতে ফেঁসে গেলাম! স্যার যদি এখন আমাদের দেখে নেন?”

“আরে দেখবে না। তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেনো? উনাকে এমন ভয় পাওয়ার কি আছে?”

“তুমি স্যারের ছাএী হলে বুঝতে আপু! স্যার কতোটা ভয়ঙ্কর!”

“স্যার কি সত্যিই ভীষণ রাগী?”

“ভীষষষণ রাগী। স্যারের আম্মু, বড় বোন সবাই স্যারকে ভীষণ ভয় পান।”

“কই উনাকে দেখে তো এতোটা রাগী মনে হয় না!”

“স্যারের রাগ আঁতের মধ্যে বুঝলে? উনি উনার রাগ সহসা প্রকাশ করেন না।”

“ওহ্ আচ্ছা।”

“হুমম। চলো আমরা ছাঁদ থেকে নামি।”

তন্মধ্যেই আকাশজুড়ে বৃষ্টির আনাগোনা শুরু হলো। রোদ কেটে এতো শীঘ্রই আকাশে বাদলের তান্ডব শুরু হবে কারোই হয়তো বোধগম্য ছিলো না। শ্রাবনের দিন গুলো এমনই৷ আকাশ এই ভালো তো, এই খারাপ! রেশমী, রনকের হাত ধরে দৌঁড়ে মই বেয়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো। তারা দুজনই জানে বৃষ্টিতে ভিজলে তাদের মা তাদের আস্ত রাখবে না। লিলি এখনো ছাঁদে দাঁড়িয়ে প্লে গ্রাউন্ডের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। রেশমী, রনকের হাঁক, ডাক তার কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না।

ববি কিশোদের সাথে বৃষ্টিতে ভিজে দৌঁড়, ঝাঁপ সাথে হৈ, হুল্লোড় করছে এবং খেলছে ও। এই মুহূর্তে ববিকে কিশোরদের মতোই বেপরোয়া মনে হচ্ছে। প্যান্টের নিচের দিকটা বটে ববি টাকনুর অনেকটা উপরে উঠিয়ে রেখেছে। শার্টের হাতা জোড়া ফোল্ড করে কনুই অব্দি গুজে রেখেছে। ব্যাট হাতে নিয়ে কিশোরদের সাথে সে লাফাচ্ছে আর প্রানবন্ত হাসিতে ফেঁটে পড়ছে। চুল গুলো লেপ্টে কপালের সাথে মিশে আছে। সিক্ত অবস্থায় ববির সর্বাঙ্গে শুভ্রতা, স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ছে। এক অমায়িক সৌন্দর্যকে ববি প্রস্ফুটিত হচ্ছে। লিলি অপলক দৃষ্টিতে ববির প্রানোচ্ছ্বলতায় ভরা উচ্ছ্বাস দেখছে।

দৌঁড় ঝাঁপের মাঝেই অকস্মাৎ ববির চোখ গেলো ছাঁদে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লিলির দিকে। যদি ও দূর থেকে লিলিকে স্পষ্ট দেখছে না ববি। তা ও অস্থির দৃষ্টিতে ববি লিলির দিকে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে ভীড় জমিয়ে থাকা কিশোররা ববিকে নিয়ে চারপাশে ঘুড়ছে আর ববিকে হাত দিয়ে ঠেলছে। ববি সমস্ত ভীড়, বাট্টা, শোরগোল সবকিছুকে উপেক্ষা করে লিলির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। লিলি অকস্মাৎ ববির থেকে চোখ ফিরিয়ে ভেজা শরীরে ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিতেই প্লে গ্রাউন্ড থেকে ববি গলার সমস্ত জোর দিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,

“লিলিলিলিলিলি….”

ববির গলা ফাঁটানো ডাকটা লিলির কান অব্দি পৌঁছে গেলো। লিলি ভেজা চোখে কৌতুহল নিয়ে পিছু ফিরে প্লে গ্রাউন্ডে ববির দিকে তাকালো। ববি মৃদ্যু হেসে ইশারা করে বলল,,

“ছাঁদে আর একটু থেকে যেতে।”

ববির ইশারা না বুঝে লিলি হাত দিয়ে উল্টো ববিকে ইশারা করে বলল,,

“বুঝি নি কিছু!”

তন্মধ্যেই সোনিয়া আহমেদের খড়তড় গলার স্বর লিলির কানে এলো। সোনিয়া আহমেদ বাড়ির ছাউনীতে দাঁড়িয়ে ছাঁদের দিকে তাকিয়ে লিলিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলছেন,,

“লিলি। তাড়াতাড়ি ছাঁদ থেকে নেমে আয় বলছি। জ্বর বেঁধে গেলে ঔষধের বাড়তি খরচ কোত্থেকে সংস্থান হবে শুনি?”

লিলি উদ্বিগ্ন স্বরে মইয়ের দিকে পা বাড়াচ্ছে আর বলছে,,

“আসছি চাচী।”

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here