অনুভূতি_জুড়ে_তুমি
পর্ব_০৬
লেখনীতে : স্পর্ষীয়া ভূমি
সন্ধ্যা নেমে রাত হয়েছে।অদূরে জ্বলছে রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট গুলো।যানবাহনের আলোও চোখে পড়ছে খুব করে।ভ্যাপসা গরমে বিরক্তিকর এক অবস্থা।রাতে সাধারণত এতোটা গরম পড়ে না।কিন্তু আজ যেন গরমে নাজেহাল হওয়ার অবস্থা।আকাশের চাঁদটা খুব ক্ষীণ দেখাচ্ছে।তারাদের ও যেন আজ দেখা নেই আকাশে।রাস্তার পাশের ঝোপঝাড় গুলো থেকে ভেসে আসছে ঝি ঝি পোকার আওয়াজ।ঝি ঝি পোকার আওয়াজটা রাতের এই আঁধারে ততোটাও খারাপ শোনাচ্ছে না।অয়ন্তী শাড়ির আচলটা দিয়ে কপালের ঘামগুলো মুঁছে নিলো।ঝোপঝাড়গুলোর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়েই মৃদু হাসলো।ছোটছোট গাছগুলোর ডালপালায় হঠাৎ হঠাৎ ঐ দেখা যাচ্ছে আলোর রেশ।ছোট ছোট আলো গুলো মাঝে মাঝেই মুক্তোর দানার মতো সেঁজে উঠছে।ঝি ঝি পোকার আওয়াজ আর জোনাকির ছোট্ট ছোট্ট আলোর দানা সত্যিই ঝোপঝাড়টাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে।অপেক্ষার প্রহর গুণতে তার আর মেহুর এতোটুকুও কষ্ট হচ্ছে না।কিছুটা সময় যাওয়ার পরই মেহু মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ অন্তি ঐ যে ওরা আসছে।’
অয়ন্তী মেহুর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো।প্রিয়া,অভ্র,রিয়াদ। সাথে অভ্রের প্রেমিকা রিয়া।অয়ন্তী দীর্ঘশ্বাস ফেললো।একনজর মেহুর দিকে তাকালো।এই মেয়েটা এতোটা শক্ত কী করে থাকে?অভ্রের পাশে রিয়াকে দেখে একটুও বুক কেঁপে উঠছে না তার?কান্না পাচ্ছে না?হয়তো পাচ্ছে।মেহু কখনো না বললেও অয়ন্তী ঠিকই বুঝে মেহু অভ্রকে পছন্দ করে।হয়তো অভ্রও জানে।মেহুর না বলা অনুভূতিটাও মাঝে মাঝে হুট করে প্রকাশ পেয়ে বসে তার মুখে,আচরণে।অভ্রকে মুগ্ধ ভাবে দেখা তার দুর্বলতার চিহ্ন নয়?রিয়াদ আর বিনয়ের দিকে তো এভাবে তাকায় না।অভ্রের সুবিধা গুলো ভেবে দেখা কী অভ্রের প্রতি ভালোবাসার প্রতীক নয়?যদিও সে সবসময় সব ফ্রেন্ডদের খেয়াল রাখে তবুও অভ্রের প্রতি কী সে একটু বেশিই সচেতন নয়?অয়ন্তী বুঝলো না।অনেকবার মেহুকে জিজ্ঞেস করবে ভেবেও জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠে নি।জিজ্ঞেস করলে কী মেহু হ্যাঁ উত্তর দিবে? জানে না। অয়ন্তী মেহুর হাতটা ধরলো।ঠোঁট টিপে হেসে বলে উঠলো,
‘মেহু একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
‘ কর না।জিজ্ঞেস করার কী আছে পাগল?’
‘ তোর মধ্যে সত্যিই অভ্রের জন্য কোন ফিলিংস নেই?’
অয়ন্তীর এমন প্রশ্নে থমকে গেলো মেহু।হঠাৎ এমন প্রশ্ন?অয়ন্তী কী ধরে ফেলেছে মেহু অভ্রকে ভালোবাসে?মেহু কী একটু বেশি আবেগ দেখিয়ে ফেলেছে?মেহু অসহায় দৃষ্টিতে অভ্রের দিকে ফিরে চাইলো।লাল রংয়ের পাঞ্জাবিতে অপূর্ব লাগছে।অনেকটা দূর থেকে ভারী সুন্দর লাগছে।অভ্রের ডান হাতটা জড়িয়ে রেখেছে রিয়া।রিয়া মেয়েটা খুব সুন্দর।অভ্রের সাথে খুব মানায়।এর আগে রিয়াকে কখনো শাড়ি পরিহিত দেখেনি মেহু।আজ প্রথম।মেহু নিজেকে সামলে নিলো।জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
‘ অভ্র আমার ফ্রেন্ড।তুই কেমন ফিলিংসের কথা বলছিস অন্তি?
অয়ন্তী মুখ কাচুমাচু করে বলে দেয়,
‘ তুই অভ্রকে ভালোবাসিস?আই মিন ভালো লাগে তোর ওকে?’
মেহু ঠিক ধরেছে।অয়ন্তী নিশ্চয় আন্দাজ করে নিয়েছে এই বিষয়টা।মুহুর্তেই মনে হলো অয়ন্তীকে জড়িয়ে চোখজোড়া ভিজিয়ে দিক।জড়ানো কন্ঠে বলুক ” হ্যাঁ,আমি ভালোবাসি অভ্রকে।”কিন্তু পারলো না।কান্নাটা দলা পাকিয়ে ভিতরেই রয়ে গেলো।কথাটা গলার কাছে এসেই থেমে গেলো।মস্তিষ্ক বলে উঠলো,” মেহু তুমি ওর যোগ্য না।ও কখনোই তোমাকে মেনে নিবে না।নিজের অনুভূতিটা প্রকাশ করে হাস্যকর করে তুলো না।অভ্রের কাছে তোমার অনুভূতি কিছুই না।তাছাড়া ও অন্য একজনকে ভালোবাসে।তোমার অনুভূতি প্রকাশটা কী এখন বেহায়াপনা হয়ে যাবে না?”মেহুর কন্ঠ শক্ত হয়ে এলো।কাঁটকাঁট গলায় বললো,
‘ না,আমি অভ্রকে বন্ধু হিসেবে ভালোবাসি।এর বাইরে কিছুই না।তোর মাথায় হঠাৎ এমন চিন্তা কেন অন্তি?’
অয়ন্তী দীর্ঘশ্বাস ফেললো।ঠোঁট চেপে বললো,
‘ না, আমার কেন জানি না মনে হলো।’
‘ তোর মনে হওয়াটা ভুল ছিলো অন্তি।’
অভ্ররা কাছাকাছি আসতেই ছয়জনে মিলে হাঁটা ধরলো।কিছুটা পথ হেঁটে তিন তিনটা রিক্সা ডেকে নিলো।দুজন দুজন করে বসে পড়লো রিক্সায়।রিয়া-অভ্র,অয়ন্তী-মেহু,রিয়াদ-প্রিয়া।কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছেই সকলে নেমে পড়লো।বিনয়কেও সঙ্গে নিলো।তারপর জেনীদের বাসার দিকে পা এগুলো।জেনীর বার্থডে আজ।মা বাবার থেকে বন্ধুদের সাথে রাতের বেলা এই সময়টা উপভোগ করার পারমিশন পেয়েছে সে।কাল পহেলা বৈশাখ।পহেলা বৈশাখ উপলক্ষেই পাশের পাড়ায় বড়সড় উৎসব জমেছে।আয়োজন করেছে বিশাল অনুষ্ঠান।সারাদিনের আনন্দের পরই রাতে থাকছে দেশের জনপ্রিয় গায়ক নিরব চৌধুরীর গান।তাই এই সুযোগটা মিস করলো না জেনী।বন্ধুদের জন্যও টিকেট নিয়ে নিয়েছে।অভ্র বরাবরই গানের ভক্ত।ছোটবেলা থেকেই গানের একটু আধটু ঝোক মাথায়।রিয়ার সাথে গিটার শেখার সময় থেকেই পরিচয়।রিয়া নিরবের গানে ভীষণ দুর্বল। এখানে আসবে শুনেছে থেকে তার এখানে আসার আবদার। তাই রিয়াকে নিয়ে নিরবের গান শোনার জন্য আসা।মেহু ছাড়া বাকি সবারই নীরবের গানে ইন্টারেস্ট আছে।সবাই এক কথাতেই রাজি হয়েছে।মেহু প্রথমে না করলেও পরে না এসে থাকতে পারে নি।জেনীর জন্য বিল্ডিংয়ের গেটে অপেক্ষা করার এক পর্যায়েই হুট করে রিয়া বলে উঠলো,
‘ আমি কিন্তু নিরবের খুব বড় ভক্ত।খুব ভালো লাগে।’
সবাই মৃদু হাসলো।বিনয় মজা করে বলে উঠলো,
‘ কেন ভাবি আমাদের অভ্ররে ভালো লাগে না?’
অভ্র বিনয়ের পিঠ চাপটে চড় দিতেই বিনয় আবারো বললো,
‘ আরেহ মারোস কেন?তোর বউ তোরে রাখি অন্য কারো প্রেমে পড়তেছে। এটা তো আমগো জন্য প্রচুর দুঃখের!আমগো বন্ধু ভালো সার্ভিস দিচ্ছে কিনা জানতে হবে না?’
সবাই হেসে উঠলো।মেহুও মৃদু হাসলো।অভ্র হাসির মাঝেই মেহুর দিকে এক নজর তাকালো।খয়েরি রংয়ের শাড়ি পরেছে।চুলগুলো বরাবরের মতো বেনুনি করা।শ্যামলা মুখশ্রীতে হালকা ঘাম জমেছে।কপালে ছোট্ট কালো টিপ।বড় বড় চোখজোড়া হালকা লাল দেখাচ্ছে।মেহুর দিকে তাকিয়ে হাসলো অভ্র। পৈশাচিক আনন্দে ভরে উঠলো ভেতরটা। মেহু কষ্ট পাচ্ছে।হ্যাঁ কষ্ট পাচ্ছে। এটাই তো চায় সে।মেহুর ব্যাথিত মৃদু হাসিটাও আনন্দ দিচ্ছে অভ্রকে।লাল রক্তিম চোখজোড়াও কোথাও আনন্দ কুড়িয়ে দিচ্ছে তাকে।
‘ তেমন কিছু না বিনয় ভাইয়া।নিরবের গান ভালো লাগে এটাই।’
রিয়া কথাটা বলতেই রিয়াদ পিছল গলায় বলে উঠলো,
‘ তা ভাবি আপনার জম্মদিন তো পরশু দিন।আপনি আমাদের ট্রিট দিবেন না?আমার বন্ধু এতো কষ্ট করে আপনার জন্য চিঠি লিখছে।’
কথাটা বলে রিয়াদ চোখ টিপলো অভ্রের দিকে তাকিয়ে।রিয়া চিঠির কথাটা শুনে খানিকটা বিস্ময় নিয়ে অভ্রের দিকে তাকালো।পরমুহুর্তেই মৃদু হাসলো।খোলা চুলগুলো একপাশে এনে বললো,
‘ আপনাদের বন্ধু দিয়ে দিবে ট্রিট।’
মেহু একপাশে দাঁড়িয়ে অভ্র আর রিয়াকে দেখছিলো।হুট করেই নিজেকে ভীষণ অপ্রয়োজনীয় মনে হলো।এই পৃথিবীতে তার কোন প্রয়োজন নেই।যেখানে নিজের কোন প্রয়োজন নেই,মূল্য নেই সেখানে থাকা কী শ্রেয়?না কখনো না।তবুও তাকে থাকতে হবে।সঙ্গ দিতে হবে বন্ধুদের ভেতরে এক পাহাড় কষ্ট লুকিয়ে।
বিশাল স্টেজটা সাঁজানো হয়েছে বিভিন্ন ফুল দিয়ে। হরেক রকমের বাতি জ্বলছে।পহেলা বৈশাখের বিভন্ন চিত্র ভেসে উঠছে স্টেজের পেছনে বড় পর্দাটায়।স্টেজের চারদিকের উঁচু দেওয়ালে লাগিয়ে রেখেছে বিভিন্ন বাংলা শব্দ।লাল, নীল,হলুদ রংয়ে সাঁজানো হয়েছে অক্ষর গুলো।গমগমে একটা পরিবেশ।সাথে রয়েছে মানুষের কথার আওয়াজ।স্টেজে একটা সুদর্শন লোক মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে চলেছে অনেক কিছু। আদ্রিতা কলেজ লাইফের ফ্রেন্ডদের সাথে বসে আছে সামনের সারির চেয়ারে।তার দু তিন সারি পেছনেই বসেছে রৌদ্র।বোনের পাগলামোর কাছে হার মেনে অবশেষে অফিস থেকে ফিরেই বোনকে নিয়ে আসতে হলো এখানে।কপাল কুচকে বামহাতের ঘড়িটায় সময় দেখে নিতেই পাশের চেয়ারে বসে পড়লো একটি মেয়ে।মেয়েটিকে সে আগে দেখেছে।মেয়েটিকে একনজর দেখে নিয়েই অন্যদিকে ফিরে তাকালো।মোবাইলে মুখ গুঁজে নিজের মনোযোগ মোবাইলে নেওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু পারলো না।বারবারই দৃষ্টি কালো শাড়ি পরিহিত মেয়েটির দিকেই যাচ্ছে।মেয়েটির সাথে হসপিটালে এমন একটা ব্যবহার করে আবার এখন হা হয়ে তাকিয়ে থাকাটা নির্ঘাত বিশ্রী একটা ব্যাপার।রৌদ্রের তাকিয়ে থাকার মাঝেই পাশের মেয়েটি বলে উঠলো,
‘ এই!আপনি এখানে?আমার পাশে?এভাবে হা হয়ে তাকিয়ে আছেন কেন?আমাকে ফলো করতে করতে চলে এসেছেন?ওহ মাই গড!এতোটা ছ্যাঁচড়া!’
রৌদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।পেছন ফিরে পেছনের লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ ভাইয়া?আপনি কী এই মেয়েটিকে ফলো করতে করতে এখানে এসেছেন?’
পেছনের লোকটি গম্ভীর চাহনিতে তাকালো।কী বলবে বুঝতে পারলো না।চেনে না জানে না এমন একটা ছেলে হুট করে এমন কিছু বলে বসলে উত্তর জোগানোটাও মুসকিল।।সঙ্গে নববিবাহিত বউ চমকে তাকালো।তার বর কাউকে ফলো করতে করতে কেন আসবে এটা ভেবেই কপাল কুচকে ফেললো।লোকটি বউয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এক নজর চোখ রেখে শুকনো ঢোক গিললো।তারপর মৃদু স্বরে বললো,
‘ আমায় বলছেন?’
রৌদ্র হাসলো।মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে বললো,
‘ হ্যাঁ।আপনাকেই বলছি।আপনি মেয়েটির পেছনের সিটে বসেছেন তাই।’
লোকটি সামনের মেয়েটির দিকে তাকালো। মেয়েটিকে তো সে চিনেই না। মেয়েটিকে ফলো করতে করতে এখানে আসার কোন মানেই হয় না।লোকটি স্পষ্ট কন্ঠে বললো,
‘ না।আমি উনাকে চিনিই না।তো উনাকে ফলো কেন করবো?’
লোকটির কথায় রৌদ্র হাসলো।
‘ আসলে তো।আমিও তো উনাকে চিনি না।তাহলে আমি উনাকে ফলো করতে করতে এখানে আসবো কেন বলুন তো? মেয়েটির কথা অনুযায়ী আমি উনাকে ফলো করতে করতে এখানে এসেছি।কিন্তু কেন আসবো বলুন তো।’
পেছনের লোকটি হাসলো। অয়ন্তী রাগে মুখ ফুলিয়ে নিলো।তারপর বললো,
‘ আমি উনাকে কিছু বলিনি।আপনাকে বলিছি। বেয়াদব ছেলে।উঠুন আমার পাশ থেকে।’
রৌদ্র উঠলো না। দৃঢ় ভাবে বসে থেকে চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো,
‘ উঠবো না।এখানে ফার্স্ট আমি বসেছি।দেন আপনি কোথায় থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন।তাহলে তো বলা যায় আপনি আমাকে ফলো করছেন।সেদিনও হসপিটালে গায়ের উপরে পড়ে যাচ্ছিলেন।’
‘ ওহ।হ্যালো?আমার জন্য ছেলের অভাব হবে না।আমি আপনার পিছনে কেন পড়বো?’
‘ সেটা তো আপনিই ভালো জানেন।’
মেহু অয়ন্তীর পাশেই বসেছে।অয়ন্তীর কান্ডকারখানায় অবাক হচ্ছে সে।তবে অয়ন্তীর পাশের লোকটিকে সে কোথায় দেখেছে ঠিক মনে পড়ছে না।তবে দেখেছে।অয়ন্তীর রাগ দেখে অয়ন্তীর হাত চেপে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো মেহু,
‘ অন্তি ছেড়ে দে না।কে না কে চিনিও না।তাছাড়া পাব্লিক প্লেসে এভাবে ঝগড়া করাটা কী ভালো দেখাচ্ছে?’
অয়ন্তী মেহুর দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো।লোকটির উপর সব রাগ মেহুর উপর ঢেলে দিতে মন চাইলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘ তোর মতে আমি ঝগড়া করছি?’
‘ আমি সেটা বলিনি অন্তি।’
‘ আমি বুঝেছি তুই কী বলেছিস।’
রৌদ্র হাসলো।শার্টের হাতাটা ঠিক করে বল উঠলো,
‘ আরেহ!ঝগড়া তো করছিলেন আমার সাথে এবার উনার সাথে করছেন কেন?’
অয়ন্তীর ইচ্ছে করলো লোকটির চুলগুলো সব ছিড়ে ফেলতে।হাতের কাছে ইট থাকলে একটা ইট মেরে মাথা ফাটিয়ে দিতো।কিন্তু তেমন কিছুই করা সম্ভব হয়ে উঠলো না।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
‘ আপনার সমস্যা? ওর সাথে ঝগড়া করি না করি আমার ব্যাপার।আপনার সমস্যা কোথায়?আজব!’
‘ সমস্যা নেই বলছেন?’
রৌদ্র কথাটা বলে অয়ন্তীর মুখে দৃষ্টি ফেললো।লাল লিপস্টিকে রাঙ্গানো ঠোঁটজোড়া হুট করেই ইচ্ছে করলো ছুঁয়ে দিতে।নাকের অগ্রভাগে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।খোলা চুল গুলোতে মুহুর্তেই ইচ্ছে করলো মুখ গুঁজতে।কালো শাড়িতে জড়ানো রমণীটিকে জড়িয়ে ধরার প্রবল ইচ্ছে জাগলো।নিজের ভয়ানক সব ইচ্ছেকে ভেতরে গুঁড়িয়ে দিয়ে অয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
‘ আপনি কিন্তু প্রচুর ঝগড়ুটে।প্রথম দিন দেখেই বুঝে নিয়েছিলাম।’
অয়ন্তীর রাগ যেন এবার আকাশ ছুঁয়ে গেলো।থমথমে মুখ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।মুখটা ফুলিয়ে বলে উঠলো,
‘ আমি তো প্রথম দিন দেখেই বুঝে নিয়েছিলাম আপনি ধোঁয়া তুলসি পাতা।’
অয়ন্তী কথাটা বলে মেহুর দিকে তাকাতেই এগিয়ে এলো বিনয় রিয়াদ সহ বাকিরা।ওরা এতোক্ষণ বাইরেই ছিলো।অয়ন্তী আর মেহু আগে ডুকে গিয়েছে।বিনয় অয়ন্তীর রাগের কারণটা বুঝে উঠলো না।কপাল কুচকে বলে উঠলো,
‘ কীরে ভাই রেগে আগুন হয়ে আছিস কেন?’
‘ কুত্তায় কাঁমড় দিছে।’
জেনী চশমাটা ঠিক করে এগিয়ে এলো।মেহুকে উৎসুক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কী হয়েছে রে?অন্তি এমন ফুলে আছে কেন?’
মেহু কিছু বলে উঠার আগে অয়ন্তী বলে উঠলো,
‘ তোর চোখ ফুলে আছে বেয়াদব।আমি কেন ফুলে থাকবো।চশমার ভেতরে কী উল্টাপাল্টা দেখোস কুত্তি?’
‘ বইন।আজকে তো ছাড়।আমার জম্মদিন আজ।আজ না হয় কুত্তি উপাধিটা দিলি না।’
প্রিয়া খোচা মেরে বললো,
‘ কেন?আজ কুত্তি থেকে গরু হয়ে গিয়েছিস নাকি?’
‘ ফালতু!আমি জেনী।গরু হবো কেন?’
অভ্র একটা চোয়ারে বসে পড়লো।কপালের ঘাম মুঁছে নিয়ে বললো,
‘ সেটাই তো। গরু কেন হবি?তুই তো গাঁধা।’
কথাটা শুনেই হেসে উঠলো সকলে। সকলে বসে যেতেই বিনয় ধমকে অয়ন্তীকে বলে উঠলো,
‘ ওই ফুলি বসে পড়।এসব ফুলোফুলি পরে দেখাবি।’
অয়ন্তী তাকালো। মুখ ফুলিয়ে বললো,
‘ আমি এই সিটে বসবো না।তুই উঠ।তোর সিটে বসবো।তুই এখানে বস।’
‘ কেন ঐ সিটে এলার্জি আছে?’
অয়ন্তী বিনয়ের সিটের দিকে এগিয়ে গেলো।বিনয় বিরক্তি চাহনিতে অয়ন্তীর দিকে একনজর তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো।তারপর মেহুর পাশের সিটে গিয়ে বসে পড়লো।ডানদিক ফিরতেই যেন চমৎকার কিছু আবিষ্কার করলো।মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকা রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর বলে উঠলো,
‘ আরেহ!রৌদ্র ভাই।কেমন আছো?’
রৌদ্রে বাম দিকে মুখ ফিরে চাইলো।অয়ন্তীদের কথা গুলো এতোক্ষণ তার কানে এসেছে তবে দৃষ্টিটা মোবাইলের স্ক্রিনেই ছিলো।বিনয়কে দেখে হাসলো।মৃদু কন্ঠে বললো,
‘ ভালো।তুমি?’
‘ আমিও ভালো আছি।দুইবছর ধরে তো তোমার দেখাই নেয়।’
‘ একবছর চাকরির ইন্টারভিউ দিতে দিতে গেলো।আরেকবছর অফিসের কাজে। বের হয়ে আড্ডা দেওয়ার সময় কোথায়?’
অয়ন্তী বিনয় আর রৌদ্রের কথাগুলো শুনে অবাক হলো।প্রিয়া, অভ্র, রিয়াদের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তারাও ছেলেটিকে চেনে।কিন্তু এই ছেলেটা কে তা তার বোধগম্য হলো না।কিছুটা সময় বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে প্রিয়াকে বলে উঠলো,
‘ এই?ছেলেটা কে? ‘
প্রিয়া মোবাইলে স্ক্রিনে প্রেমিকের সাথে ম্যাসেজে ব্যস্ত ছিলো।অয়ন্তীর কথা শুনে মুখ তুলে বললো,
‘ আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র ভাই।আদনান মাহমুদ রৌদ্র।মনে নেই?আরেহ আমরা যখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে উনি মাস্টার্সে তখন।মনে পড়েছে?’
অয়ন্তী সাথে মেহু ও চমকে উঠলো।আরেক নজর তাকিয়ে বুঝে উঠলো।হ্যাঁ ছেলেটাকে তো তারা চেনে।অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে অয়ন্তীর সাথে একবার ঝগড়াও হয়েছিলো ছেলেটির।মেহু মৃদু হেসে বললো,
‘ আমিও চিনতে পারিনি রে রৌদ্র ভাইকে।’
অভ্র রিয়ার সাথে পাশাপাশি চেয়ারেই বসেছে।অদ্ভুত ভাবে আজ মেহু তার দিকে হা করে তাকিয়ে নেই।অন্যদিন তো অভ্রকে দৃষ্টিভরে দেখে।আজ তাকাচ্ছে না কেন?পাশে রিয়া আছে বলে?অভ্র উত্তর খুঁজলো।না উত্তর পেলো না।মেহুর লাল টকটকে বড় বড় চোখজোড়া দেখে মুহুর্তেই ইচ্ছে করলো।চোখজোড়াকে নিজের দিকে স্থির করে দিতে।তাকিয়ে থাকুক সে অভ্রের দিকে।অভ্র অবহেলায় ভরিয়ে দিবে সে চাহনি।কিন্তু না।আজ অবহেলাটা মেহু করছে।খব সুন্দরভাবেই সে অবহেলা করছে। মেহু কেন অভ্রকে ইগনোর করবে?অবহেলা করার কেবল এবং কেবলই অভ্রের অধিকার।
#চলবে…..
(( পার্টটা একবার লিখেছি।পোস্ট করার সময় ডিলিট হয়ে গেলো।তারপর আবার লিখছি।জানি গোছানো হয় নি।তাও কেমন হয়েছে জানাবেন…কাল থেকে সন্ধ্যায় গল্প দিবো।সকালে গল্প দেওয়াটা মুসকিল হয়ে যায়..))
হ্যাপি রিডিং…