অনুভূতি_জুড়ে_তুমি পর্ব_১২

অনুভূতি_জুড়ে_তুমি
পর্ব_১২
লেখনীতে: স্পর্ষীয়া ভূমি

ইট সিমেন্ট দিয়ে ছিমছাম বাড়ি।উপরে টিনের ছাদ।বাড়ির পাশে লাগোয়া আরো দুই তিনটা ঘর।বাড়ির সামনে সিমেন্ট দিয়ে দু পাশে দুইটি বসার জায়গা করা হয়েছে।উঠোন ছিপছিপে।উঠোনে আছে বিশাল বড় এক কৃষ্ণচূড়া গাছ।বর্ষার বৃষ্টিতে পাতাগুলো ভিজে চুপসে আছে।উঠোনের এককোণায় লাগানো জড়োসড়ো হওয়া জবাফুল গাছটাও ভিজে ছিপছিপে হয়ে আছে।মেহু যাওয়ার সময় ছাতা নিয়ে গিয়েছিলো ভাগ্যিস।নয়তো ভিজেই ফিরতে হতো তাকে।চোখজোড়া চারপাশে একনজর ঘুরিয়ে নিয়ে উঠোনের কর্দমক্ত মাটিতে পা রেখে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো।মাথার উপর কালো রংয়ের ছাতাটা থাকলেও জামার কিছুটা অংশ ভিজে নিয়েছে ইতোমধ্যে।মেহু বিরক্ত হয়ে ওড়না দিয়ে ডান হাতের ভেজা অংশটা মুঁছে নিয়ে পা বাড়ালো।দরজার সামনে এসেই হাঁকিয়ে বলে উঠলো,

‘ মা, দরজা খুলো।’

কথাটা বলে বাম দিকে ফিরে দাঁড়াতেই তার মা এসে দরজা খুলে দিলেন।ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো,

‘মেহু দিনদিন পাগলামো গুলো কমাবি?সন্ধ্যা বয়ে রাত হয়ে যাবে এতোক্ষন নদীর পাড়ে এতো বড় একটা মেয়ের কাজ কী?গ্রামের মানুষজন খারাপ বলবে তো।পরে দেখা যাবে কতো রকমের কথা উঠবে।’

মেহু শান্ত কন্ঠে বললো,

‘ আর হবে না মা।ওরা কোথায়?’

‘ ওহ ওরা?তোর রুমে আছে।বসেছে।এতোদূর থেকে এসেছে একটু আরাম করুক বরং।’

‘ নাস্তা দিয়েছো ওদের? ‘

‘ হ্যাঁ নাস্তা দিয়ে তারপর তোর রুমে বসতে বললাম।’

মেহু শান্ত চাহনিতে মায়ের দিকে তাকালো।ভেজা ছাতাটা ঘরের সামনের খালি জায়গায় মেলে দিয়ে মা চলে যেতে সেও ধীর পায়ে দরজা আটকিয়ে হাঁটা ধরলো।বুক ধপধপ করছে কেমন?আজ প্রায় পনেরো দিন পর অভ্রের সাথে দেখা হচ্ছে তার।কেবল অভ্র না।বন্ধুদের সাথে ও।তবুও কোথায় একটা ভয় কাজ করছে।কেন সে নিজেও জানে না।নিজের রুমের দরজায় পা জোড়া থমথমিয়ে লাল রংয়ের পর্দার আড়ালে দাঁড়ালো।টিনের উপর বৃষ্টি পড়ার জমজম আওয়াজ হচ্ছে।একনজর উপরের দিকে তাকিয়েই রুমের দিকে দৃষ্টি ফেলতেই বিছানায় বসে থাকা চারজনকে চোখে পড়লো মেহুর।অয়ন্তী,জেনী, বিনয় আর অভ্র।অয়ন্তী পা জোড়া লম্বাভাবে টেনে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।তার পাশেই জেনী হাতে একটা মোটা বই ধরে রেখেছে মুখের সামনে।জেনী আবার পড়ালেখায় বরাবরই ভালো।কয়েকদিন পর পরীক্ষা তাই বই নিয়ে বসে রয়েছে।জেনীর সামনাসামনি অপর পাশে বিনয়।হাতে মোবাইল নিয়ে বসে আছে।তারপাশেই অভ্র।চোখ জোড়া বন্ধ রেখে খাটের সাথে থাকা দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে।মুখটা উঁচু করে রাখায় গলার কালো কুচকুচে তিলটা খুব স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। মুখের খোচা দাঁড়ির কিছুটা নিচেই উজ্জ্বল হয়ে তারার মতো জ্বলজ্বল করছে।উজ্জ্বল ফর্সা ত্বকে তিলটা নেশাতুর দৃষ্টি কাড়ছে।চোখেমুখে ক্লান্তি।মেহু অভ্রের দিকে আর তাকানোর সাহস পেলো না।ঢোক গিলে রুমে ডুকতেই অয়ন্তী বলে উঠলো,

‘ আরেহ দোস্ত!গেলি তো গেলি হাওয়া হয়ে গেলি।প্রায় আধঘন্টা অপেক্ষা করেছি তোর জন্য।’

অয়ন্তীর কথায় সবাই নিজেদের মনোযোগ সরিয়ে মেহুর দিকে তাকালো।জেনী বইটা পাশে রেখে চশমা ঠিক করলো।বিনয় ও মোবাইলটা পকেটে ডুকালো।অভ্র চোখজোড়া খুলে বিস্ময় নিয়ে মেহুর দিকে তাকালো।বেশ শুকিয়ে গিয়েছে মেয়েটি।পরনের সালোয়ার কামিজের কিছু অংশ ভিজে চুপসে আছে।বেনুনি করা চুলগুলো ডানপাশে এনে রেখেছে।শ্যামলা মুখশ্রীতে মৃদু হাসি ঝুলে আছে।মেহু এক নজর তাকাতেই দ্রুত কৌশল করে চোখ সরিয়ে নিলো অভ্র।তৃষ্ণার্ত চোখজোড়ার তৃষ্ণা অপূর্ণ রেখে নিজের আত্নসম্মানটাকে দাম দিলো।এটা কী সত্যিই আত্নসম্মান?নাকি ইগো?অভ্রের সচল মস্তিষ্ক স্পষ্টভাবে উত্তর দিলো,” না, এটা ইগো নয় আত্নসম্মান।”অভ্র মৃদু হাসলো।চোখের সামনের মেয়েটিকে ইচ্ছেমতো দেখার ইচ্ছে থাকলেও দেখা হলো না।নিরব হয়ে চোখজোড়া বন্ধ করতেই মেহুর চিকন কন্ঠে শোনা গেলো,

‘ কিরেহ!সবাই নিজের কাজ ছেড়ে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস যে?’

বিনয় হেসে উঠলো।কৃষ্ণবর্নের মুখশ্রীতো রসালো হাসি।পরনে সবুজ রংয়ের টিশার্ট।চুলগুলো ঠিক করে পকেট থেকে আবারো মোবাইলটা নিয়ে খোশগলায় বলে উঠলো,

‘ তুই শালী!পনেরো দিনের জন্য এমনে উধাও হই গেলি?বাপরে ভয় পাইয়ে দিছিলি তো।’

মেহু টোয়ালেটা নিয়ে হাত পা মুছে নিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,

‘ এবারে এক্সাম যাচ্ছে তাই হবে আমার।কতোগুলো ক্লাস মিস দিয়েছি।তোদের কাছে নোটস গুলো আছে?’

অয়ন্তী ফিক করে হেসে বলে উঠলো,

‘ আমরা কী সব ক্লাস করি নাকি?তুই থাকলে তোর জোরে করা হয় আর কি।পনেরো দিনে অনেকগুলো ক্লাস মিস দিয়েছি।জেনীর কাছে পাবি দুই তিনটা ক্লাসের বাদে।’

‘ তাতেই হবে।’

জেনী কপালের ঘাম মুঁছে বললো,

‘ এতোদিন বন্ধুদের ছাড়া তো দিব্যি ছিলি মেহু।মনেও পড়লো না আমাদের কথা।’

‘ ভুল বলেছিস।মনে না পড়লে তোদের সাথে কল করে কথা বলেছি কেন?আমি কিন্তু তোদের সবাইকে রোজ একবার করে কল করেছি।ওহ স্যরি অভ্রকে দিই নি।’

অভ্র চোখজোড়া বন্ধ করে সবগুলো কথাই শুনছিলো।মেহুর কন্ঠে তার নামটা শুনে অভিযোগে তেঁতো হয়ে উঠলো ভেতরটা।অভ্রকে কেন কল দেওয়া হলো না?বাকি সবার খোঁজ নেওয়া গেলে অভ্রের খোঁজ কেন নেওয়া গেলো না?মেহু তো অলটাইম বলে অভ্র তার বন্ধু।তবে বন্ধু হিসেবেও কী খবর নেওয়া যেতো না?নাকি ইচ্ছে করেই নেয় নি সে?মেহু কী বন্ধুর খাতা থেকেও অভ্রের নাম মুঁছে দিতে চাইছে?অভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেললো।চোখজোড়া খুলে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য মাখা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

‘ কল করলেও পেতে না মেহু।আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম।তোমার সাথে কথা বলার জন্য অতো সময় আছে নাকি?’

মেহু বিস্ফোরক চাহনিতে তাকালো।অভ্রদের নিজস্ব কোম্পানি আছে সে শুনেছে।অভ্র অনার্স কম্প্লিট করলে কোম্পানিতে জয়েন করবে এটাও শুনেছিলো।তারপরই রিয়ার সাথে অভ্রের বিয়ে হবে এটা অভ্রই বলেছিলো।মুহুর্তেই দুমড়ে মুঁচড়ে গেলো মেহুর হৃদয়।অভ্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেই রিয়া আর অভ্র একে অপরের হয়ে যাবে।অভ্র তার নিজের হবে না ভেবে যতোটা না কষ্ট হয় তার থেকেও বেশি কষ্ট হয় অভ্র অন্য কারো হবে ভেবে।মেহু ছলছল নয়নে একনজর তাকিয়ে কাঁপা গলায় বললো,

‘ তুই কী তোদের কোম্পানিতে জয়েন করেছিস?’

অভ্রের শান্ত গলায় উত্তর,

‘ হ্যাঁ।’

‘ এতো তাড়াতাড়ি?’

‘ মন চাইলো।তাছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি কোম্পানিতে নিজেকে এটেন্ড রাখলে ক্ষতি তো নেই।রিয়ার দিকটাও ভেবে দেখতে হবে তো।এক বছরের জুনিয়র।বেকার ছেলের কাছে তো ওর বাবা মা তাদের মেয়েকে বিয়ে দিবে না তাই না?

মেহু অভ্রের ক্লান্ত চেহারার দিকে একনজর তাকিয়ে ভিজে ওঠা চোখজোড়া লুকিয়ে নিলো।মুখে একরাশ হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,

‘ তাহলে খুব শীঘ্রই তোদের বিয়ে খাচ্ছি।আচ্ছা তুই কী অফিস থেকে এখানে এসেছিস?খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ‘

অভ্র বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো,

‘ অন্তির জন্যই। ওর জোরাজুরিতে বাবাকে বলে এখানে আসতে হয়েছে।নয়তো আসতাম না।’

মেহুর কাছে মুহুর্তেই অভ্রের এখানে আসার কারণটা স্পষ্ট হয়ে গেলো।অভ্র কেন আসবে তার বাড়িতে?প্রশ্নটার উত্তর মিলে গেলো।শুধু মাত্র অন্তির কথা রাখতেই এসেছে।এর বাইরে কিছুই নয়। মেহুর পাশে থাকার জন্য আসে নি সে।শুধু মাত্র বাধ্য হয়ে এসেছে।মেহু মৃদু হাসলো।অয়ন্তী চট করেই বলে উঠলো,

‘ তো না আসতি?এতো বাধ্য হয়ে আসতে কে বলেছে তোকে?’

অভ্র তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ তিনবার কল করেছিলি।তোর কলের জন্য তো থাকা যাচ্ছিলো না।’

‘ তাই নাকি?’

‘ একদম।’

অভ্র অার অয়ন্তীর কথোপকোথনের মাঝেই মেহু উঠে দাঁড়ালো।তার আর এক মুহুর্তে এখানে বসার ইচ্ছে নেই।বুকের ভেতর অদ্ভুত এক কষ্ট নড়েচড়ে উঠছে।বুকের ভারী নিঃশ্বাসগুলো অভ্রকে দেখে আরো ভারী হয়ে উঠেছে।মেহু যেতে যেতে মৃদু হেসে বললো,

‘ তোরা বস।আমি বরং তোদের জন্য চা করে আনি।’

অভ্র মেহুর যাওয়ার পথে এক নজর তাকালো।মেহু কষ্ট ফেলে তার কী? তার ভেতরে কেন মুঁচড়ে উঠে?কেন?সে কী মেহুকে এখনো ভালোবাসে?না, কিছুতেই না।মেহু নামক মেয়েটাকে কখনোই ভালোবাসা যেতে পারে না।

____________________________

নদীর পাড়ে শান্ত শীতল হাওয়া।অদূরে নদীর ঢেউ খেলা জলে ভেসে আসছে এক নৌকা।নৌকায় রয়েছে এক মাঝিও।দূর থেকে যা চোখে পড়ছে তাতে এটা বোঝা যায় লোকটি মধ্যবয়স্ক চিপচিপে কালো রংয়ের মানুষ।পরনে একটা লুঙ্গি ছাড়া কিছু নেই।নৌকার বৈঠা বাওয়ার সাথে সাথে তার পেশি টান দিয়ে উঠছে মুহুর্তে।নদীর এপাড়ে বাঁশের তৈরি ছোট দু ফুট উঁচু মতো আয়তকার বসার জায়গা বানানো হয়েছে খুঁটি দিয়ে।তার নিচে অল্পবিস্তর ঘাসে নদীর পাড়ের জমিটা সেঁজে উঠেছে।কাল রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে নদীর জল পাড় ছুঁইছুঁই।শান্ত শীতল পরিবেশে পাঁচ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।কাল রাতে অভ্রের তেমন ঘুম হয় নি।মাথা ঝিমঝিম করছে কেমন।একটা রুমে বিনয় আর তাকে আর অন্য একটা রুমে অয়ন্তী,জেনী আর মেহুকে ঘুমাতে হয়েছে।বাড়ির চার চারটে রুমে দুটো রুম তাদের জন্য বরাদ্ধ ছিলো।তবুও অভ্রের ঘুম হয় নি।এখানকার পরিবেশে ঘুম নামক শব্দটা তার চোখে মিলে নি।তাও ভোর রাতে যা চোখ লেগেছিলো সকাল সকালই অয়ন্তীর ডাকে উঠে পড়তে হয়েছে তাকে।নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য অয়ন্তী আর জেনী পাগল হলেও বিনয় আর অভ্রের মনে কোন আনন্দ নেই।ঠান্ডা শীতল পরিবেশটা অনুভব করতে তাদের মন একেবারেই রাজি হলো না।অভ্রের ঝিমানো ভাবটা দেখে অয়ন্তী বলে উঠলো,

‘ কী হলো অভ্র? এমন ঝিমোচ্ছিস কেন?’

জেনী একনজর তাকিয়ে বলে উঠলো,

‘ রাত ধরে কী গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেছিস নাকি?’

অভ্র কাঁটকাঁট গলায় বললো,

‘ পিন পাওয়া যাবে?তোদের মুখে পিন মেরে দিতাম।’

কথাটা বলতেই হেসে উঠলো মেহু আর বিনয়। অয়ন্তী আর জেনী রাগী চাহনিতে তাকিয়েই মুখ ফুলালো।নৌকার দিকে চেয়ে বায়না ধরে বলে উঠলো,

‘ মেহু প্লিজ নৌকাটাকে ডাক না।নৌকা চড়বো।’

মেহু একনজর তাকিয়ে মৃদু হাসলো।নৌকার দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বললো,

‘ রাজু কাকা!নৌকাটা এদিকে আনবে?’

নৌকাটা ততোক্ষনে আরো কিছুটা কাছে এসেছে।মেহুর কন্ঠটা নৌকার মাঝির কানে যেতেই লোকটি এদিক ফিরে চাইলো।মেহুকে চিনতে পেরেই জোরে বলে উঠলো,

‘ আইতাছি মা। ‘

নৌকা নদীর কিনারায় আনতেই একে একে উঠে পড়লো পাঁচজন।নৌকার একপাশে কিনারার কাঠে বিনয় আর অয়ন্তী বসে পড়তেই অপর পাশে জেনী আর অভ্র ও বসে পড়লো।মেহু এক নজর এদিক ওদিক তাকিয়ে বিনয়ের পাশে বসতে যাবে তখনই বিনয় বলে উঠলো,

‘ ওপাশে বস।এখানটায় জলে ভেজা।’

মেহু অসহায় চাহনিতে তাকালো।কোন উপায় না পেয়ে অভ্রের পাশে দূরত্ব বজায় রেখে বসে পড়লো।হৃৎপিন্ডটা যেন বেরিয়ে আসতে চাইলো তার। অভ্রের হাতে কিঞ্চিৎ হাত ছোঁয়ানোর নেশাতুর ইচ্ছেটাকে বর্জন করে ঢোক গিললো।সামনের মধ্যেবয়স্ক লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমাদের একটু ঘুরিয়ে আবার দিয়ে যেয়ো রাজু কাকা।’

‘ আইচ্ছা।তা ভাই কেমন আছেরে মেহু?’

‘ এখন মোটামোটি ভালো কাকা।তুমি কেমন আছো?’

‘ আছি ভালাই।’

মেহুর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো অভ্র।মেহুর ব্যবহার এতো ভালো কেন?মেহু অভ্রের মতো ঘাড়ত্যাড়া নয়।তার ব্যবহারে মুগ্ধতা আছে।তার ব্যবহারে কেয়ারিং আছে।তার ব্যবহারে ভালোবাসা আছে।অভ্র বরাবরই তার ব্যবহারে মুগ্ধ কিন্তু কোথাও সেই মুগ্ধতাটা দেখানো হয় না।দেখানো যায় না।অভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহুর দিকে এক নজর ফিরে চাইতেই নৌকাটা ঢুলে উঠলো।জেনী শক্তভাবে চেপে ধরলো অভ্রের হাত ভয়ে।অভ্র মৃদু হেসে ডান দিকে হাতের দিকে চাইলো।না মেহু তার হাত চেপে ধরে নি।মেহুর মুখে ভয়ের চাপ স্পষ্ট তবুও সে অভ্রের হাতটা একবারের জন্যও ছুঁয়ে দেখে নি।নৌকার কাঠটাকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছে।অভ্রের মনে বিষাদ ছুঁলো।মেহুর ঐ এক টুকরো কাঠের উপর যে ভরসা আছে অভ্রের উপর সেই ভরসা নেই?এটুকুও ভরসা নেই?

ভার্সিটির মাঠে তীক্ষ্ণ রোদ পড়েছে।সূর্য বোধ হয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে এদিকটায়।আদ্রিতা রোদে ঘেমে চুপসে গেছে।ফর্সা ধবধবে মুখটা লাল হয়ে উঠেছে।ভার্সিটির গেট ফেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতেই একটা গাড়ি এসে থামলো।গাড়িটি কার তার চেনা আছে।গাড়ির গ্লাসের ভেতরে তাকিয়ে মাস্ক পরা লোকটিকে দেখে লোকটিকেও চিনে ফেললো মুহুর্তেই।গাড়িটাকে ইগনোর করে দু পা ফেলতেই ভেতরের মানুষটি গ্লাস নামিয়ে গমগম কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ এই পিচ্চি?উঠে পড়ো।’

আদ্রিতা তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো,

‘ উঠছি না।যেতে পারেন আপনি।’

‘ উঠছো না?’

‘ না।’

নিরব দুষ্টু হাসলো।ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,

‘ ওকে ফাইন।আমি কোলে নিয়ে তুলে নিচ্ছি?’

আদ্রিতার পা জোড়া থেমে গেলো জড়বস্তুর মতো।চোখ জোড়া জোড়া বড় বড় করে চেয়ে কাঁপা কন্ঠে বললো,

‘ নাহ।একদম নাহ।’

‘ তো উঠে বসো।’

আদ্রিতার মুখটায় একরাশ বিরক্ত ফুটে উঠলো।নিরব গাড়ির দরজা ঠেলে খুলে দিতেই আদ্রিতা উঠে বসলো।গাড়ির দরজা অফ করে সিটবেল্ট বেঁধে নিয়ে তেজ নিয়ে বলে উঠলো,

‘ আপনি আমার পেছনে পড়ে আছেন কেন মিঃ নিরব চৌধুরি?হুয়াই?’

নিরব কিছু বললো না।রহস্যময়ী হাসিটা মুখে ঝুলিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে মনোযোগী হলো।আদ্রিতা সেই হাসির কিছুই বুঝলো না।মাথায় এক ঝাঁক প্রশ্ন আর বিরক্ত নিয়ে গাড়ির গদিতে বসে থাকলো।

#চলবে…..

( একটা পর্বে ২০০+ জনের রেসপন্স দেখলাম।অনেক খুশি হলাম।ভালোবাসা রইলো সবার জন্য এভাবে আমার কাঁচা লেখার পাশে থাকার জন্য।কেমন হয়েছে জানাবেন…)

6 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here