কিছু_মেঘ_কিছু_বৃষ্টি,পর্ব-০৪
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
হঠাৎ আমার কাছে একটা ফোনকল আসলো…. স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি আননোন নম্বর।আমার কাছে সচরাচর আননোন নম্বর থেকে ফোনকল আসে না।যাই হোক ফোনটা রিসিভ করলাম….
—হ্যালো কে বলছেন?
—(ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসলো না)
—কি হলো কথা বলছেন না কেন,হ্যালো,,
—(এবারেও কোনো উত্তর আসলো না)
—যদি কথাই না বলবেন ফোন কেন করেছেন।আজব তো,
—কথা বলবার জন্যই তো ফোন করেছি।কেমন আছো সংকেত?
(নারীকন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম!এতো প্রশংসার গলার আওয়াজ)
—কে….কে তুমি….??
—আমাকে ভুলে গেলে এতো তাড়াতাড়ি…সত্যি তোমার জবাই নেই,
—দেখো আমার সাথে প্লিজ মজা করো না, ভালোয় ভালোয় নিজের পরিচয় দাও…
—আমার পরিচয় শুনলে নিজেকে স্থির রাখতে পারবে তো তুমি?
—কেন স্থির না রাখতে পারার কি আছে,বলো কে তুমি?(ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করি)
অমনি সেই মহিলা কোনো উত্তর না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো।আমি পুনরায় নম্বরটা ডায়াল করতে যেতেই দেখি সে নম্বরটা বন্ধ করে দিয়েছে।আচ্ছা,এটা কোনোভাবে প্রকৃতি নয় তো,ও কি মজা করছে আমার সাথে?কিন্তু আমার সাথে তো এরকম মজা করার কথা নয়।তাছাড়া আমার ফোন নম্বর ও পাবেই বা কোথা থেকে।তাহলে কি ওটা কোনোভাবে প্রশংসাই ছিলো।সেদিন রাতে নিজের হাতে প্রশংসাকে খুন করেছি আমি।সেটা কোনোকিছুর বিনিময়ে অস্বীকার করতে পারি না আমি।জানি না কি হচ্ছে আমার সাথে…!!শুধু এইটুকু জানি এই বাজে অবস্থা থেকে যেকরেই হোক বেরিয়ে আসতে হবে আমার।সেটা যেকোনো প্রকারে।নয়তো এই প্রকৃতি আর মৃত প্রশংসা পাগল করে ছাড়বে আমায়।
আজ থেকে বারো বছর আগে প্রশংসার সাথে পরিচয় আমার।ওর সাথে দীর্ঘ চার বছর রিলেশন করার পরে বিয়ে হয় আমাদের।আমাদের বিয়েতে প্রাথমিকভাবে পরিবারের কেউ রাজি না হলেও পরে প্রশংসা নিজের গুনে সবার মন জয় করে নেয়।কিন্তু সেই জায়গাটা বেশী দিন ধরে রাখতে পারলো না সে।বিয়ের চার পাঁচ বছর পরেও যখন আমাদের সংসারে সন্তান আসছিলো না,সবার চক্ষুশুল হয়ে ওঠে প্রশংসা।এর পরের গল্প আর কি বলবো।সেটা কারোরই অজানা নয়।এখন প্রশ্ন হলো,আমার ওপরে কি এমন রাগ ছিলো প্রশংসার।যা দীর্ঘ দশটা বছর ধরে পুশে রেখেছিলো সে।আমাকে খুন করতে চাওয়ার পেছনে কি এমন রহস্য থাকতে পারে।এখন ভীষণ আফসোস হচ্ছে, এমন একটা সময়ে প্রশ্নগুলোর সমুক্ষীন হচ্ছি আমি,যখন আমার হাতে আর কিছু নেই।প্রশংসা বেঁচে থাকলে যেকোনো প্রকারে উত্তরগুলো জেনে নিতাম ওর থেকে।কিন্তু এখন সেটা অসম্ভব।
এর কিছুদিন পরে প্রকৃতির সাথে বিয়ে হয় আমার।আমার পরিবারের লোকজন প্রথমে ওকে দেখে অবাক হলেও,আমি কোনোভাবে ম্যানেজ করি তাদের।অবশেষে সবার সম্মতিতে বিয়ে হলো।আজ আমাদের বাসর রাত।শোবার ঘরে প্রকৃতি অপেক্ষা করছে আমার জন্য।আমি হাতে একটা সিগারেট নিয়ে বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।এটা শেষ হলেই ঘরের ভেতরে ঢুকবো।হঠাৎ বাড়ির মেইন গেটের দিকে চোখ পড়লো আমার।দেখি প্রকৃতি বৌএর সাজে বাইরের দিকে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
—-আজব তো,এতো রাতে কাউকে কিছু না বলে কোথায় যাচ্ছে ও।
আমি সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে গেটের দিকে ছুটে গেলাম।রাত তখন প্রায় এগারোটা।প্রকৃতির কোনদিকে দৃষ্টিপাত না করেই মাঝরাস্তা দিয়ে হেঁটে চলছে।আমি ওর একটু পেছনে।রাস্তায় খুব একটা যানবাহন নেই বললেই চলে।তাই চলতে অসুবিধা হচ্ছে না কারোরই।
একটা বিষয় খেয়াল করলাম প্রকৃতি সেই রাস্তা ধরেছে যেখানে প্রশংসাকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছিলাম।আমিও ওর পিছু ছাড়লাম না।ছায়ার মতো অনুসরণ করতে থাকি ওকে।এর কিছু সময় পরে আমার মনের ধারনাকে সঠিক প্রমান করে দিয়ে প্রকৃতি ঠিক সেই জাগায়ায় এসে উপস্থিত হলো যেখানে প্রশংসা খুন হয়েছিলো।এই মুহূর্তে প্রকৃতি আমায় দেখতে পেলে ওর চুপি চুপি এখানে আসার কোনো কারণ জানতে পারবো না আমি।তাই একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম।তারপর সেখানে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করতে থাকি ঠিক কি ঘটছে।
প্যান্টের পকেটে রাখা ফোনটা হঠাৎ করেই বেজে উঠলো।যাতে শব্দটা বেশী দূর অবধি যেতে না পারে তাই আমি হাত দিয়ে চেপে ধরি।এরপর বের করে ফোনটা নিজের সামনে ধরলাম।
—আশ্চর্য,এটা তো প্রকৃতির ফোন নম্বর।কিন্তু প্রকৃতি তো এখানে আছে।তার মানে কি অন্য কেউ কল করেছে ওর ফোন দিয়ে,
আমি ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলাম,ঠিক তখন ওপাশ থেকে প্রকৃতির কন্ঠস্বর বলে উঠলো :
—-কি ব্যপার বলুন তো,আপনি কোথায় চলে গেলেন এতো রাতে?
এটা শুনে ভয়ে হাত পা যেন ক্রমশ অবশ হয়ে যেতে লাগলো আমার।তার মানে অামার সাথে গেম খেলছে কেউ।যাকে বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছি আমি সেটা প্রকৃতি ছিলো না।অন্য কেউ ছিলো…কিন্তু সে আমাকে এখানে নিয়ে আসলো কেন?কি উদ্দেশ্য তার?
চলবে……