কিছু_মেঘ_কিছু_বৃষ্টি,পর্ব-০৫

কিছু_মেঘ_কিছু_বৃষ্টি,পর্ব-০৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

এই সময়ে প্রকৃতির ফোনকল চমকে দিলো আমায়।আমি ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করি।

—-হ্যালো,কি হলো আপনার,এতো রাতে কোথায় চলে গেলেন?(ওপাশ থেকে প্রকৃতির কন্ঠস্বর ভেসে আসলো)

—আমি একটু বাড়ির বাইরে এসেছি….

—সেটা তো বুঝতেই পেরেছি,তা বাড়ির বাইরে টা কোথায় শুনি….

(আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলাম।)

—কি হলো চুপ করে আছেন কেন….কোথায় আপনি?

—আমি একটা জরুরী কাজে এসেছি,আচ্ছা একটু ওয়েট করো,আমি এক্ষুনি বাড়িতে পৌঁছে যাবো।

—কি যে করেন না আপনি,তাড়াতাড়ি চলে আসুন।আমি কিন্তু ওয়েট করে থাকবো।

—হুমম….

ফোনটা রেখে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।এছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার কাছে।আজকে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত।বাসর ঘরে স্ত্রী আমার জন্য অপেক্ষা করছে।তার প্রতি কিছু দ্বায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে আমার।কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি সেগুলো অস্বীকার করতে পারি না।যাই হোক,যতোদ্রূত সম্ভব বাড়ির দিকে পা চালাতে লাগলাম আমি।এক পর্যায়ে পৌঁছেও গেলাম।

বেডরুমে ঢুকে দেখি প্রকৃতি ঘোমটা মাথায় দিয়ে বসে আছে।আমি ধীরে ধীরে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।হঠাৎ একটা অদ্ভুত ব্যপার লক্ষ্য করি।মনে হচ্ছে প্রকৃতি যেন কোনো কারণে হাফাচ্ছে….ঠিক আমার মতো।তাড়াহুড়ো করে বাড়িতে ফিরতে গিয়ে আমার যে অবস্থা হয়েছে, ওর ভেতরেও সেটা উপস্থিত দেখতে পাচ্ছি আমি।

—-আমায় একা রেখে কোথায় চলে গিয়েছিলেন?

—বললাম তো একটা কাজ ছিলো,,

—আপনার আমার প্রতি একদম মনোযোগ নেই দেখছি।তা না হলে আমাকে একা রেখে এভাবে চলে যেতে পারতেন।

—দেখো,আমি সত্যিই দুঃখিত।আমার এভাবে বেরিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি।কিন্তু তুমি একটা কথা বলো তো,তুমি তো এখানেই বসে ছিলে, তাহলে এভাবে হাফাচ্ছো কেন তুমি….

প্রকৃতি আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মুখটা চেপে ধরলো।

—আপনার মা আমাকে আজ কি বলেছেন জানেন…??

—-কি বলেছে?

—যতদ্রুত সম্ভব ওনার একটা নাতি বা নাতনি চাই…

—মা এই কথা বলেছে তোমায়…??

—হ্যাঁ,বলেছে।আমি জানি আপনিও নিশ্চয়ই সেটাই চান যেটা আপনার মা চায়…

—দেখো বিয়ের পরে প্রত্যেক দম্পতি চায় তাদের কোল আলো করে একটা ফুটফুটে সন্তান আসুক।আমিও তার ব্যতিক্রম নই।তাই বলে এতো তাড়াহুড়া নয়,আর মাও আছে…আমি ভাবতেই পারছি না এগুলো বলেছে তোমায়।

—তাড়াহুড়োর কিছু নেই,আমিও আপনার সন্তানের নিতে চাই…আর সেটা আজকেই। (প্রকৃতি আমার গায়ের শার্ট খুলতে খুলতে বলতে লাগলো)

এই মুহুর্তে নিজেকে প্রকৃতির হাতের পুতুল মনে হচ্ছে।ও আমাকে পুরোপুরি কব্জা করে নিলো।আমিও এক প্রকার বাধ্য হয়ে ওর সকল ইচ্ছে পূরণ করতে থাকি।একটা অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো আমার।একজন নারীর সাথে মিলিত হবার সময় যেমন অনুভূত হয়,আমার তার সম্পূর্ণ উল্টোটা মনে হচ্ছে।কেমন জানি সবকিছু গোলমেলে লাগছে,ভেতর থেকে আমার ইন্দ্রিয় আনন্দ দিচ্ছে না আমায়।শুধু অপেক্ষা করে যাচ্ছি কখন এই প্রক্রিয়া পর্ব শেষ হবে, ভীষণ অস্বস্তি লাগছিলো।কিন্তু প্রকৃতি ছাড়তেই চাইছে না আমায়।ওর হয়তো শেষ পর্বের জন্য অপেক্ষা করছে।এভাবে আরো কিছুক্ষণ কেটে যায়।আমিও বুঝতে পারি প্রকৃতি যা চেয়েছে পেয়ে গেছে,এবার হয়তো ওর মা হবার ইচ্ছে পূরণ হবে।তার সাথে আমার মায়েরও।আমি ওর ওপর থেকে উঠে বিছানার অন্য প্রান্তে গিয়ে শরীরটা এলিয়ে দিলাম।নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত লাগছে এখন।যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।না জানি কেন নারী দেহের প্রতি এতো অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে আমার।

একটু পরে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো প্রকৃতি।আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।আজ প্রশংসার কথা বড্ড মনে পড়ছে আমার।সেদিনের ভুল কাজটা না করলে আজকের দিনটা অন্যরকম হতো।হয়তো সারাটা জীবন এভাবেই নিজের স্ত্রী আর সন্তান হত্যার অনুশোচনা বয়ে বেড়াতে হবে আমায়।এর থেকে মুক্তি কবে মিলবে জানি না।যা ভুলে থাকার চেষ্টা করি,এখন সেটুকুও সম্ভব নয়।প্রকৃতির চেহারা প্রতিমুহূর্তে প্রশংসার কথা মনে করিয়ে দেয় আমায়।

—কি ভাবছেন এতো আমার দিকে তাকিয়ে?
(ঈষৎ হেসে আমাকে প্রশ্ন করলো)

—না কিছু না,(চোখজোড়া ঘুরিয়ে নিয়ে উত্তর দিলাম)

—আচ্ছা,তুমি কিন্ত আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না।তখন ঐভাবে হাফাচ্ছিলে কেন তুমি?

—কোথায় হাফাচ্ছিলাম।আমি তো ঠিক আছি…

আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি প্রকৃতি মিথ্যে কথা বলছে।ওর চেহারায় সেটা ফুটে আছে।কিন্তু আমার থেকে ঠিক কি লুকোচ্ছে ও সেটাই বুঝতে পারছি না।

এর কিছুদিন পরে….





জানতে পারলাম প্রকৃতি প্রেগনেন্ট।আমার সন্তান বড়ো হচ্ছে ওর গর্ভে।আমার বাবা মায়ের খুশি আর কে দেখে তখন!আনন্দে আত্মহারা তখন সবাই।এদিকে আজ আমি প্রকৃতিকে চেকাপের জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।ওখানে ডক্তর হুমাইরা ইসলাম ওকে দেখছেন।উনি আমার বেশ পূর্বপরিচিত।যাই হোক,ভেতরে আমার স্ত্রীর চেকাপ চলছে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি।কিছুক্ষণ পরে একজন নার্স ছুটে আসলো।আমি রিসেপশনে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম।নার্স এক ডাক্তারকে বলছেন :

–স্যার,একটা ক্রিটিক্যাল পেসেন্ট এসেছে।মনে হচ্ছে ইমিডিয়েটলি অপারেশন করতে হবে।নয়তো বাচ্চাটাকে বাঁচানো যাবে না।প্লিজ তাড়াতাড়ি চলুন,,

তার মানে এটা ডেলিভারি কেস…আজ প্রশংসা বেঁচে থাকলে ওর ডেলিভারি হয়তো এমন সময়েই হতো।মনে মনে চিন্তা করছি।হঠাৎ আমার কানে সেই মহিলার চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসলো।আমি থমকে গেলাম তার গলার আওয়াজ শুনে।ডাক্তার নার্সের সাথে যেতে যেতে বলতে লাগলেন।

—আচ্ছা,পেসেন্টের সাথে কারা এসেছে?ডিটেইলস কিছু জানতে পেরেছেন?

—না,তেমন কেউ আসেনি স্যার।তবে ওনার নাম প্রশংসা এইটুকু জানতে পেরছি!!

নার্সের মুখে কথা শুনে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো আমার মাথার ওপরে।লক্ষ্য করলাম দাঁড়িয়ে থাকা পা জোড়া থরথর করে কাঁপছে…

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here