কিছু_মেঘ_কিছু_বৃষ্টি,পর্ব-০৬

কিছু_মেঘ_কিছু_বৃষ্টি,পর্ব-০৬
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

আমি আমার চোখের সামনে থেকে ডাক্তার এবং নার্স কে চলে যেতে দেখলাম,মনে হল আমারও তাদের সাথে যাওয়া দরকার।প্রশংসা নামের ভদ্রমহিলার চিৎকারের আওয়াজ বারবার ভাবিয়ে তুলছে আমাকে।দুটো মানুষের নাম একসাথে কাকতালীয়ভাবে মিলে যেতে পার, কিন্তু তাই বলে তাদের তাদের গলার শব্দ মিলে যাওয়া এতো কিছু কাকতালীয় হতে পারে না। নিশ্চয়ই এর ভেতরে কিছু রয়েছে…

এই ভেবে আমি সামনের দিকে পা বাড়ালাম, ঠিক তখন আমাকে চমকে দিয়ে পেছন থেকে প্রকৃতি বলে উঠলো:

—কি হলো ঐদিকে কোথায় যাচ্ছো?

আমি বুঝতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি ওর চেকআপ হয়ে যাবে,আমতা আমতা করে উত্তর দিলাম,

—না,কোথাও যাচ্ছি না তো,,

—কিন্তু আমি তো দেখলাম তুমি ওইদিকে যাচ্ছো,

—আরে ছাড়ো তো,সেরকম কিছু না।এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে বোর হচ্ছিলাম তাই ভাবলাম একটু হেঁটে আসি,আর কিছু না।

—আচ্ছা ঠিক আছে,চলো এবার বাসায় যাওয়া যাক।
এই মুহূর্তে প্রকৃতির সাথে বাসায় যাওয়া ফিরে ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই,আমি জানিনা ওই মেয়েটা সত্যি প্রশংসা কিনা নাকি অন্য কেউ।যদি সে সত্যি প্রশংসা হয়ে থাকে তার প্রকৃতি তাকে দেখে ফেলে,তাহলে আমি মহা ঝামেলায় পরে যাবো।আমাকে দ্বিধাগ্রস্থ দেখে হয়তো প্রকৃতির খানিকটা সন্দেহ করে বসলো।

—কি ব্যাপার তোমার বলতো?

–কেন কি হয়েছে?

—না তোমাকে আজ ভীষণ অন্যরকম লাগছে, কোন গভীর ভাবনায় ডুবে আছো এমন মনে হচ্ছে কেন জানি না।

—তুমি শুধু শুধু সন্দেহ করছো আমায়,সেরকম কোনো ব্যাপার নয়।

— কি জানি,হবে হয়তো!

আমি আর প্রকৃতির সাথে কথা বাড়ালাম না, কিন্তু মন থেকে কিছুতেই ওই মহিলার যার কন্ঠস্বর এবং নামের সাথে প্রশংসার মিল ছিল,তার কথা দূর করতে পারছি না।যদি একবার তাকে নিজের চোখে দেখতে পেতাম তাহলে মনের সকল সন্দেহ দূর হয়ে যেত।কিন্তু এখন তার কোনো উপায় নেই।যাই হোক সেদিনের মত বাসায় ফিরলাম….

সারাটা দিন কেটে যায়….এরপর রাতের বেলা,ঘড়ির কাটায় তখন আটটা বাজে। প্রকৃতিকে একটা কাজের অজুহাত দেখিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পরলাম।উদ্দেশ্য হাসপাতালে যাওয়া।ওই মহিলা নিশ্চয়ই এখনও ওখানে আছো ওখানে।তাকে আইডেন্টিফাই না করা পর্যন্ত শান্তিতে ঘুমাতে পারবো না আমি,এটা নিশ্চিত।একটা ট্যাক্সি বুক করে হাসপাতালে উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম…
তখন প্রায় সাড়ে আটটা যখন হাসপাতালে পৌঁছেছি।প্রথমেই রিসিপশনে যোগাযোগ করি।সেখানে এক ভদ্র মহিলা বসে ছিলেন..

—এক্সকিউজমি ম্যাডাম,আমার একটু ইনফরমেশনের দরকার ছিল‌

— হ্যাঁ বলুন,কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি।

—-সকালে এখানে প্রশংসা নামের একজন ডেলিভারি পেশেন্ট এসেছিলেন,ওনার রকি ডেলিভারি হয়ে গেছে আর তিনি কোন কেবিনে আছেন,

—ডেলিভারি পেশেন্ট!!কিসের ডেলিভারি পেশেন্ট??আজতো হাসপাতলে কোন ডেলিভারি পেশেন্ট আসেনি!

—ডেলিভারি পেসেন্ট আসেনি মানে?আমি আজ নিজে সকালে তার ব্যপারে জেনেছি।

—সরি,স্যার।আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আজকে হাসপাতলে কোন ডেলিভারি পেসেন্ট আসেনি।

— আচ্ছা আজকে সকালে আমি এসেছিলাম আমার স্ত্রীকে নিয়ে,সেটা খেয়াল আছে তো আপনার?

—কেন খেয়াল থাকবে না,নিশ্চয়ই আছে। এটা ঠিক আপনি এসেছিলেন আজ সকালে সাথে আপনার স্ত্রীও ছিলেন।

ভদ্রমহিলার কথা আরো বেশি ভাবিয়ে তুললো আমায়!সত্যিই তো উনি আমাকে মিথ্যে কেন বলতে যাবেন,আর আজ সকালে আমি প্রশংসার চিৎকারের আওয়াজ শুনেছি,এমনকি নার্স ডাক্তার আমার সামনে তার বিষয়ে আলোচনা করেছে।সেগুলো নিছক আমার মনের ভুল হতে পারে না।
সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার…মাথাটা যেন ভনভন করে ঘুরতে লাগলো…কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না কিছুই।এরপর হাসপাতালে আমার পরিচিত ডক্টর হুমাইরা ইসলামের সাথে কথা বলি।তারও একই বক্তব্য।আজকে হাসপাতলে কোন ডেলিভারি পেসেন্ট আসেনি,না কোন ডেলিভারি হয়েছে।

হাসপাতালে এসে সবার কথায় আমি নির্বাক হয়ে যাচ্ছি আমি,এদের প্রত্যেকের একই দাবী।অথচ আমার নিজের কানে শোনা,আর চোখে দেখা দৃশ্যগুলো ভুল কিকরে হতে পারে!জানি না,কী হচ্ছে আমার সাথে।এখন আর এখানে সময় নষ্ট করে লাভ হবে না।বাসায় যেতে দেরী হলে প্রকৃতি আবারো প্রশ্নে জর্জরিত করে ফেলবে আমায়।এই ভেবে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।





মেইন গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজায় নক করতে যাবো,ঠিক তখন পেছন থেকে কেউ ডাক দিলো আমায়।আমি ফিরে তাকাই।

—আরে শাফিন ভাই আপনি এই সময়?
(লোকটা আমার গ্রামের পরিচিত,তবে এখন এই শহরেই থাকে বলে জানি।)

—তোমার মাকে তোমার জন্য একটা ভালো মেয়ের সন্ধান দিলাম,কেমন মানুষ তোমরা বলো তো।কেউ দেখতে পর্যন্ত গেলে না?

—কি বলছেন আপনি এসব শাফিন ভাই,আমি গিয়েছিলাম তো দেখতে।আপনি জেনে হয়তো খুশি হবেন প্রকৃতির সাথে বিয়ে।হয়েছে আমার তিন মাস হয়ে গেছে।

শাফিন ভাই আমার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো।

—এই তুমি নেশা টেশা করে আসোনি তো, প্রকৃতিকে বিয়ে করেছো মানে,আজ সকালে তার সাথে তার বাসায় দেখা হলো আমার।

—কি বলছেন আপনি এগুলো,কিন্ত আমি তো আম্মার পাঠানো ঠিকানা অনুসারেই মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম।আর সেখান থেকেই প্রকৃতিকে পছন্দ করি আমরা।

—সেটা কিকরে সম্ভব,দাঁড়াও তোমাকে প্রকৃতির ছবি দেখাই,আমার ফোনে রাখা আছে।

শাফিন ভাই ফোনটা বের করে আমার সামনে ধরলেন।মেয়েটার ছবি দেখে চোখ জোড়া বিষ্ময়ে ক্রমশ বড়ে হয়ে যেতে লাগলো আমার। কি আশ্চর্য….এটা তো সে নয় যার সাথে বিয়ে হয়েছে আমার।তাহলে প্রশংসার মতো দেখতে আমার বর্তমান স্ত্রী যে,সে কি আসল প্রকৃতি নয়…যদি তাই হবে সে নিজেকে প্রকৃতি হিসেবে পরিচয় দিলো কেন,আর আমি প্রকৃতির বাড়িতে যেতে গিয়ে তার বাড়িতে উপস্থিত হলাম কিকরে…..???

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here