অনুভূতি_জুড়ে_তুমি
পর্ব_০১
লেখনীতে :স্পর্ষীয়া ভূমি( ছদ্মনাম)
নগ্ন পিঠে কারো তপ্ত স্পর্ষ পেয়েই কেঁপে উঠলো অয়ন্তী।পেছন ফিরতেই বলিষ্ঠ বাহু চেপে ধরলো তার চোখ।নড়াচড়া করার নূন্যতম শক্তিটাও আবদ্ধ হয়ে গেলো অদৃশ্য মানুষটার কাছে।ভয়ে হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলেছে ।চিন্তাভাবনার ক্ষমতাটাও যেন অবশ হয়ে রয়েছে।গলা দিয়ে শব্দ বেরুনো কষ্টকর হয়ে উঠেছে।তাও ব্যর্থ চিৎকার করতেই আরেকটা হাত চেপে ধরলো তার ঠোঁটজোড়া।কানের কাছে গম্ভীর এক পুরুষালি কন্ঠ বলে উঠলো,
‘ এটা ভার্সিটি। কোন শো আপ করার জায়গা না যে এভাবে পিঠ, পেট দেখিয়ে শাড়ি পরে নিজেকে ছেলেদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।আশা করি আপনি অবশ্যই এটা মাথায় রাখবেন।এসব তো অন্য কোথাও দেখাতে পারেন। লোকে টাকা ছুড়ে মারবে ফর্সা পিঠ, পেট দেখে।আরও অনেক কিছু অফার করতে পারে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে থেকে দেখা গেলো হুট করেই বড়লোক হয়ে গেলেন। তাই না ম্যাম?’
অয়ন্তী কপাল কুচকে ফেললো কথা গুলো শুনে।সে কখনোই এমন টাইপের মেয়ে না। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সে। কখনোই এইধরণের অভ্যাস তার মধ্যে বাসা বাঁধে নি।লোকটার মনমানসিকতা দেখে অয়ন্তীর ঘৃণা হচ্ছে। ছিঃ!লোকটার সাহস হয় কী করে ওর সম্পর্কে এসব নোংরা কথা বলার?লোকটা কে অয়ন্তী তাও জানে না।লোকটার কন্ঠ কোনকালে কোথাও শুনেছে কিনা মনে পরছে না। কিন্তু মনে হচ্ছে চেনা কন্ঠ।কোথাও একবার হলেও সে এই কন্ঠ শুনেছে। কিন্তু কোথায়?না মনে পরছে না। অতিরিক্ত রাগ আর নারভাস হয়ে এবার কেঁদেই দিলো সে।লোকটার সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকলেও নিজেকে ছাড়ানোর প্রচন্ড চেষ্টায় লেগে পড়লো।এক পর্যায়ে লোকটার শরীরের সাথে লেপ্টে থাকা হাতজোড়া কোন ভাবে মুক্ত করে নিয়েই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালালো।কোন কাজ হলো না।অদৃশ্য মানবটা এক পা ও নড়লো না।অয়ন্তী আরো ক্ষিপ্ত হলো।নিজের নখের আঁচড়ে ভরিয়ে তুললো লোকটার হাত, গলা। কিছুটা সময় পরই লোকটা হালকা কন্ঠে বলে উঠলো,
‘এতোবড় নখ রেখেছো কেন হুহ?এইভাবে মানুষকে আহত করার জন্য নাকি?ভেবেছিলাম শান্ত টাইপের ভদ্র একটা মেয়ে তুমি।কিন্তু এই তো দেখি রণচন্ডী!এতো এতো ফাইজলামি সহ্য হবে না আমার।থাডিয়ে চড় দিয়ে দাঁত পেলে দিবো এসব আমার সাথে করলে।’
লোকটি বললেও তেমন কিছু করলো না।অয়ন্তীর ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে উল্টো দিকে ঘুরিয়েই হাত জোড়া নিজের বলিষ্ঠ বাহু দিয়ে চেপে ধরলো অদৃশ্য মানব।কানের কাছে মুখ নিয়ে আবারো ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
‘চিৎকার করলে এক্ষুনি চুরি দিয়ে গলা কেঁটে দিবো বলে দিলাম।’
অয়ন্তী ভয়ে চুপসে গেলো। সারা শরীর ঘামাচ্ছে।শরীর একপ্রকার নুইয়ে এসেছে তার। কাঁপা গলায় লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
‘ ক কে কে আপনি?আমি কী ক্ষতি করেছি আপনার?’
লোকটা কিছু বললো না। কিছুক্ষণ নিরব থেকেই কঠিন কন্ঠে বললো,
‘ ক্ষতি তো করেই পেলেছো মিস অয়ন্তী আহমেদ অন্তি।এখন তুমি কিংবা আমি কেউই এই ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দিতে পারবো না। ইউ নো? তুমি আমার কত বড় ক্ষতি করেছো?’
অয়ন্তী ভাবলো।কোনকালে কারো খুব বড় ক্ষতি করেছে কিনা মনে পড়ছে না তার।মাথাটা ঝিম ঝিম করছে।মনে হচ্ছে এক্ষুনিই বুঝি ঢলে পড়ে গেলো সে।গলা দিয়ে আর কোন কথা বের হচ্ছে না। কিছুটা সময় পরই বুঝতে পারলো তার কপালে বিচরণ করছে কারো ঠোঁটজোড়া।কিন্তু কিছু বলার বা নিজেকে ছাড়ানোর বিন্দুমাত্র শক্তিও তার দেহে নেই।ভয়ে শরীর থরথর করে কাঁপছে।ঘামে ব্লাউজ ভিজে উঠেছে।অবাধ্য খোলা চুলগুলো আষ্ঠেপৃষ্ঠে আছে সামনের মানুষটার সাথে।নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে তার।অদৃশ্য মানুষটা অয়ন্তীর দুর্বলতা বুঝতে পারলো কিনা কে জানে।অয়ন্তীকে পেছন দিকে ঘুরিয়ে একটা রুমাল দিয়ে বেঁধে দিলো চোখ জোড়া। তারপর অয়ন্তী আর তার স্পর্ষ পেলো না।দুর্বল শরীরে স্বস্তি ফিরে এলো যেন।দুর্বল হাতে রুমালের বাঁধনটা খুলেই এদিক ওদিক তাকালো।কিন্তু কোথাও কাউকে দেখলো না।রুমালটার দিকে তাকিয়েও কোন অর্থ খুঁজে পেলো না। হাত পা কাঁপছে তার।শরীরের ভরটাও নিজে নিতে পারছে না।নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। শরীর কেমন অবশ হয়ে আসছে।সামনে থাকা বেঞ্চটায় ধপ করেই বসে পড়লো অয়ন্তী।দেয়ালের সাথে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।
ভার্সিটির মাঠ ভরে গিয়েছে অসংখ্য শাড়ি পরিহিত রমণী আর পাঞ্জাবি পরিহিত যুবকে।এতো ভীড়ের মাঝে মাঠের এককোণে প্রিয়া,জেনী,মেহু, বিনয়, রিয়াদ আর অভ্রের গল্প জমে উঠেছে খুব জমজমাট হয়ে।ভার্সিটিতে বসন্ত বরণ উৎসবে সবাই উপভোগ করছে নিজেদের মতো।অয়ন্তী আড্ডা থেকে উঠে মিনিট পনেরো হলো গিয়েছে কিন্তু এতক্ষণ করছেটা কী তা সবার মনে প্রশ্ন জাগলো।অভ্র উৎসাহী কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ অন্তি গেলো টা কই?হাওয়া টাওয়া হয়ে গেলো নাকি?’
মেহু অভ্রের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।এই ছেলেটাকে দেখতে দেখতে যদি মরেও যায় সে ক্ষতি হবে না।উজ্জ্বল ফর্সা শারীরটা আসলেই অভ্রের জন্য মানানসই।ঘন কালো চুল আর ঘন পাপড়িতে ডাকা চোখ দুটো বরাবরই মুগ্ধ করে মেহুকে।গলার ডানপাশে কালো কুচকুচে তিলটা আরও উজ্জ্বল করে তুলে অভ্রকে।কালো রংয়ের পাঞ্জাবিতে দূর্দান্ত দেখতে লাগছে তাকে।মেহু ঠোঁটজোড়া জিহ্বা দিয়ে স্পর্ষ করিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে মৃদু গলায় বললো,
‘বললো তো শাড়ির পিন খুলে গেছে।ঠিক করতে যাচ্ছে।মিনিট পাঁচ পর ফিরে আসছে।কিন্তু এতোক্ষণ করছেটা কী অন্তি?’
মেহুর কথাটাকে পাত্তা না দিয়েই বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকালো অভ্র।কেন জানি না মেহু নামক মেয়েটাকে তার সহ্য হয় না।একেবারেই না।তবুও বন্ধুমহলের সবার জন্য তার সাথে মিশতে হয়।অভ্রের মস্তিষ্ক এটাই বলে মেহুর সাথে কথা না বললেই সে বাঁচে।কিন্তু বন্ধুমহলের প্রয়োজনে কথাটা না বলা আর হয়ে উঠে না।তিন বছর হলো মেহুকে সে চেনে।অনার্স ফার্স্ট ইয়ার থেকে এখন অনার্স থার্ড ইয়ার শেষ হওয়ার পথে।তবুও অপ্রিয় থেকে প্রিয় হয়ে উঠতে পারে নি মেহু। মেহু আর অভ্রের দিকে তাকিয়ে প্রসঙ্গটা পাল্টানোর জন্যই প্রিয়া একগাল হেসে বলে উঠলো,
‘ দোস্ত আমার তো মনে হচ্ছে অন্তি লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করছে।প্রেমিক হয়তো আসতে দিচ্ছে না…’
প্রিয়ার কথাটা একেবারেই ভালো লাগলো না জেনির কাছে।মুখে চোখে ফুঁটে উঠেছে বিস্তর বিরক্তি।চোখ মুখ কুচকে কিছু বলতে যাবে তার আগমুহুর্তেই প্রিয়া ভাব নিয়ে বললো,
‘নয়তো তোরাই বল শাড়ির পিন ঠিক করতে পনেরো মিনিট সে কী করছে?নিশ্চয় প্রেমিকের সাথে প্রেমালাপে ব্যস্ত হয়ে আমাদের ভুলে বসেছে।এম আই রাইট?’
জেনি দ্বিগুণ বিরক্ত হলো।বিরক্তটা চোখে মুখে স্পষ্ট ফুঁটে উঠেছে।কপাল কুচকে নিয়ে চশমাটা ঠিক করে ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ দোস্ত তোর এসব আবালমার্কা কথা তোর কাছেই রাখ।আমরা জানি কে প্রেমিকের সাথে প্রেমালাপ করতে গিয়ে হারিয়ে যায়।সো এসব কথা তোর ছোট্ট ব্যাগটায় ভরে রাখ।স্যরি তোর প্রেমিকের দেওয়া ব্যাগটায়।’
জেনির কথা হেসে উঠলো সবাই।প্রিয়া হাসলো না।নিজের অতি সুন্দর ব্যাগটাতে ঝুলে থাকা দুটো কার্টুনকে আলতো হাতে আদর করে দিয়ে বললো,
‘ উফফস!আমার ব্যাগ নিয়ে পরলি কেন?ব্যাগটা কত কিউট দেখ?এই যে কার্টুন দেখছিস তার মধ্যে একটা আমি আর একটা রোহন।এভাবে বলবি না আমার রোহু বেবি শুনলে কষ্ট পাবে তো।’
বিনয় ভ্রু জোড়া কুচকে বললো,
‘রোহু বেবি?বইন তোর একটার পর একটা বেবি, জান, কলিজা দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।মানছি তুই সুন্দরী তাই বলে জামাকাপড়ের মতো বয়ফ্রেন্ড পাল্টাবি?বাপরে বাপ!তাও যেটা পাস ঐটার সাথে চিপকাইয়া থাকস অলটাইম।আজ কেমনে কেমনে ওই রোহন নেই।’
প্রিয়া রেগে উঠলো।গর্জন করে বলে উঠলো,
‘ কাইল্লা।এইজন্যই তোর ভাগ্যে গার্লফ্রেন্ড জুটে না।’
ঝগড়ার একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে মেহু শান্ত গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ ঝগড়া থামাবি তোরা?অন্তিকে কল কর তো বিনয়।এতোক্ষণ করছে টা কী ও?কোন সমস্যা হয়েছে নিশ্চয়।আমার মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ।’
মেহুর কথায় নিজেদের থামিয়ে নিলো বিনয় আর প্রিয়া।বিনয় খোশমেজাজে বলে উঠলো,
‘ কল রিসিভ করেই বলবে ভাই আমারে না কিডনাপ করে বেঁধে রাখছে।তাই আসতে পারছি না’
কথাটা বলেই হু হা করে হেসে উঠলো বিনয়। সাথে রিয়াদ, প্রিয়া, জেনিও। অভ্র মুচকি হাসলো।মেহু আবারো বিরক্ত হলো।ঝাঝালো কন্ঠে বললো,
‘তোর কল করা লাগবে না যা।’
‘আরেহ বাবা করছি তো।’
বিনয় পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে নিয়ে অয়ন্তীকে কল দিলো।তারপর লাউড দিয়ে মোবাইলটা সবার মাঝখানে ধরলো।দুবার রিং হতে ওপাশ থেকে কল রিসিভ করলো সে।কিছুক্ষণ নিরবতার পর হাঁপাতে হাঁপাতে অয়ন্তী বলে উঠলো,
‘ বি বিনয় শোন, কেমেস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের দোতালার ২০৪ নং রুমটায় আস ভাই। তুই না এলে অন্য কাউকে পাঠা।মেহুকে বল।ও আসবে।আমার কেমন যেন লাগছে।হাত পাঁ কাঁপছে।কথা বলতে পারছি না।’
বিনয় মূলত মজা করার জন্যই মোবাইলটা সবার মাঝখানে ধরেছিলো।অয়ন্তীর এমন কথায় অবাক হলো ছয়জনই।কপাল কুচকে নিয়ে মোবাইলটা কানে নিয়ে বলে উঠলো বিনয়,
‘আরেহ তোর কী হয়েছে?কথা এভাবে বলছিস কেন? অন্তি?তোর গলা কেমন যেন শোনাচ্ছে।’
‘ প্ল প্লিজ আয়।’
তারপর ছয়জনই দ্রুত পা চালালো সেদিকে। সিঁড়ি বেয়ে কাঙ্খিত রুমটায় গিয়েই চমকে উঠলো সবাই।মেহু তাড়াতাড়ি গিয়ে ঝাপটে ধরলো অন্তিকে।চোখের কাজল লেপ্টে
রয়েছে মুখে। ঠোঁটের লিপস্টিকটাও ছড়িয়ে গিয়েছে।ঘামে চুপসে আছে ধবধবে ফর্সা মুখটা।গোঁছানো সুন্দর অন্তি আজ এলেমেলো, ক্লান্ত।ফর্সা মুখটা মিইয়ে আছে। চোখ গুলো আবছা খোলা।লম্বা কালো চুলগুলো এলেমেলো হয়ে মুখে জড়িয়ে আছে।আবছা চোখে মেহুকে দেখে একহাত দিয়ে জড়িয়ে কাঁপা কন্ঠে বললো,
– আ আমি বাসায় যাবো মেহু।
অভ্র তাড়াতাড়ি জলের বোতলের জন্য ছুটলো।প্রিয়া, রিয়াদ আর জেনিও এসে দাঁড়িয়েছে পাশে।বিনয় শক্ত হাতে অন্তিকে সোজা করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসালো।অভ্র পানির বোতল নিয়ে এসে অয়ন্তির মুখে পানির ছিটকে দিলো।অভ্রকে ব্যস্ত ভঙ্গিতে দেখে অবাধ্য চোখজোড়া হা হয়েই তাকিয়ে রইলো মেহুর।ফর্সা দেহের গড়নে মায়াবি মুখে হালকা খোচা দাঁড়ি। কপালে জমেছে অল্পবিস্তর ঘাম।পানির ছিটকে দিতে গিয়েই একপর্যায়ে মেহুর দৃষ্টিতে চোখাচোখি হয়ে গেলো তার দৃষ্টি।মেহু তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নিচের দিকে তাকালো।অভ্র কিছুটা বিরক্ত হলেও ভাবহীন ভাবে অন্যদিকে ফিরে তাকালো।তার মতে মেহু তাকে ডিজার্ব করে না।অতি সাধারণ ডিলেডালা পোশাক পরিহিত, বেনুনি করে থাকা একটা মেয়ে সে।যাকে আধুনিকতার দিক দিয়ে “গাঁইয়া” অথবা “সেকেলে মেয়ে”নাম দেওয়া যায়।অন্যদিকে অভ্র?সুদর্শন,স্মার্ট, উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে।মেহু ফ্রেন্ড হিসেবেও হয়তো তার যোগ্য নয় তার উপর মেহুর কল্পনা?কোনক্রমেই মেহু যা কল্পনা করে তা হতে পারে না। কিছুতেই না।
রাতের আঁধারটা গভীর থেকেও গভীর হয়ে উঠেছে। রাস্তা অবিচল চলে থাকা গাড়ি গুলো থেকে ভেসে আসছে আওয়াজ।চারদিকে হালকা বাতাস বয়ে চলেছে।অন্ধকার আকাশে আজ চাঁদের দেখা নেই।গুঁটি কয়েক তারা জায়গা করে নিয়েছে আকাশে। অাদ্রিতা মনে মনে ভাবে আজ আমাবস্যা নয়তো?নয়তো চাঁদের দেখা নেই কেন আজ আকাশে?তার মন হ্যাঁ উত্তর দিলো।হোস্টেলের বেলকনিটা আজ তিক্ত থেকেও তিক্ত হয়ে উঠেছে তার কাছে। কেন তা তার জানা নেই।অনেকবার কারণটা খুঁজেও ব্যর্থ সে।হয়তো বৃথায় খুঁজে চলেছে কারণ।কিন্তু তবুও কারণ খুঁজতেই ব্যস্ত।একেই বলে মানুষ। উত্তর পাবে না জেনেও খুঁজে চলে। কোন জিনিস পাবে না জেনেও তার পেছনেই পড়ে থাকে।কোন কারণ ছাড়াই তারা অন্য কারণকে পাত্তা দেয়।অদ্ভুত জীব নয় কী তবে মানুষ?হ্যাঁ অদ্ভুতই।আদ্রিতা বার কয়েক ব্যস্ত রাস্তার পানে তাকিয়ে শ্বাস নিলো।সাথে সাথে বেঁজে উঠলো মসৃন তলের মোবাইলটা।
‘আদি বুড়ি কী রাগ করেছে নাকি?’
ওপাশ থেকে কথাটা শুনে মোটেও ভালো লাগলো না আদ্রিতার।অভিমানী সুরে বলে উঠলো,
‘ তুই আমার রাগ ভাঙ্গাবি নাকি?’
পুরুষালি কন্ঠটা গম্ভীর কন্ঠে বললো,
‘ সে কী!আদি বুড়ির রাগ ভাঙ্গানোর কেউ নেই?’
‘ নাহ রে।কেউই নেই।’
‘ ইশশ!আচ্ছা আদি বুড়ি একটা কাজ করলে কেমন হয়?তুই তোর হোস্টেল থেকে টপকে বাসায় চলে আয়।আমি তোর রাগ ভাঙ্গিয়ে দিবো।’
‘ ভাইয়া তুই ইচ্ছে করেই আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস।জানিস আমার কতো কষ্ট হচ্ছে?আমি জানি তোরা কেউই এখানে এসে আমার কষ্ট কমিয়ে দিয়ে যাবি না সো শুধু শুধু কষ্ট দিস না।’
ওপাশ থেকে জোড়ালো নিঃশ্বাসের আওয়াজ শোনা গেলো।আদ্রিতা ভাবতে থাকে গতবছর এই দিনে তাদের বাড়ির ছাদে কতই না আনন্দ হয়েছিলো।কেক কাঁটা, কেক মাখানো।আর আজ?মা, বাবা, ভাইয়ের থেকে দূরে এসেছে আজ প্রায় কয়েক মাস। এই কমাসে অনেকবার মিস করেছে তাদের।তবে আজ একটু বেশিই।বাবা মা কী পারতো না রাত বারোটায় কল করে উইশটা করতে?বড় আপুও তো পারতো একটা কল করে উইশ করতে।তার ভাইয়া কী পারতো না তার হোস্টেলের সামনে কেক নিয়ে এসে দাঁড়াতে?প্রিয়জনদের থেকে এটুকু প্রত্যাশা করা কী তার ভুল ছিলো?মানুষ তো প্রিয়জনের থেকেই প্রত্যাশা করে।প্রত্যাশা গুলো দানা বাঁধে তাদের কাছেই তো।ক্ষুদ্র থেকে বৃহদাকার হয়ে উঠে ধীরে ধীরে প্রত্যাশার রূপ।অভিমানও জমে, রাগ ও হয় সব তো কাঙ্খিত প্রিয়জনদের কাছে।
‘ জম্মদিনের দিন এসব রাগ কী আদৌ মানায় আদি বুড়িকে?ভাইয়া স্যরি।আজকে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু ভার্সিটিতে এভাবে আটকে যাবো ভাবিনি। কাল সকালে রেডি থাকিস।বাড়িতে এসেই সব রাগ ভুলে যাবি প্রমিজ।’
‘ ভাইয়া তুমি বরং চট্টগ্রামেই একটা জব করো।প্লিজ।তাহলে তোমার সাথে অন্তত দেখা করা যাবে মন খারাপ করলে।তোমাদের থেকে এই দূরত্ব যে আর সহ্য হচ্ছে না।’
‘ আদিবুড়ি সবটা তো তোর জন্যই। এতো ভার্সিটি থাকতে খামোখা ওই ভার্সিটিতে নাম এসেছে বলেই যে ভর্তি হতে হবে তার কোন মানে আছে কী?অন্য ভার্সিটির লিস্টেও তো তোর নাম এসেছিলো।কিন্তু তুই তো তুই।’
আদ্রিতা কিছু বললো না।চুপ থেকে নির্বিকার আকাশে তাকিয়ে রইলো।কিশোরী বয়সটা সত্যিই অদ্ভুত।যদিও তাকে কিশোরী বলা যায় না।সে যুবতী।যৌবনে পা রাখা সদ্য নতুন এক যুবতী। হুট করেই মন খারাপ তো হুট করেই উৎফুল্ল হয়ে উঠা।হুট করেই রাগ তো হুট করেই হাসির জোয়ারে ভেসে যাওয়া।
#চলবে
( ( কেমন হলো বলবেন।ভালো লাগা মন্দ লাগা উভয়ই প্রকাশ করবেন।পরবর্তী পর্বের জন্য একদিন অপেক্ষা করবেন দয়া করে।))