বিনি সুতোয় গাঁথা 💙,পর্ব_০১
লেখক_ঈশান_আহমেদ
বউ সেজে বসে আছে আমার চার বছরের ভালোবাসার মানুষটা।তবে আমার বউ নয় আমার বড় ভাইয়ের জন্য বউ সেজেছে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি নাহ্।ভাইয়ার হাতটা এমন ভাবে ধরে আছে মনে হয় কতদিনের পরিচিত।আর হাসি দেখলেই বুঝা যাচ্ছে বিয়েতে কতটা খুশি!এটা কি সেই নিধিকা!
যেই মেয়েটা আমি যখন কানাডায় পড়াশোনার উদ্দ্যেশে যাচ্ছিলাম তখন আমাকে চাপকে ধরে কেঁদেছিল।নিজেকে আর সামলাতে পারছি নাহ্।পিছনে ঘুরে চলে আসতে যাবো এমন সময় ভাইয়া ডাক দিল।ইচ্ছা না থাকলেও ভাইয়ার জন্য এগিয়ে গেলাম।
নিধিকা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল।এমন ভাব করল মনে হয় আমাকে চিনেই নাহ্।
আরাভ তুই তো তোর ভাবিকে দেখিস নাই।দেখবি বা কি করে আমাদের যখন রিলেশন হয় তখন তো তুই কানাডায় ছিলি।(ভাইয়া)
ওহ্।তার মানে আমি কানাডায় যাওয়ার পরে ও ভাইয়ার সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে।ও তাহলে আমাকে কি ভালোবাসতো যে দুইটা বছর অপেক্ষা করতে পারল নাহ্।এর জন্যই ও আমার সাথে যোগাযোগ অফ করে দিছিল।আমি কোথায় ভাবলাম হয়তো আমার জন্য কষ্ট হওয়ার কারণে আমার উপর রাগ করে কথা বলা বাদ দিয়েছে।ভেবেছিলাম দেশে এসে নিধিকাকে সারপ্রাইজ দিব।কিন্তু আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম!
কিরে আরাভ কোথায় হারিয়ে গেলি?(ভাইয়া)
কিছু নাহ্ ভাইয়া।আসলে আমার শরীরটা ঠিক লাগছে না।কাল জার্নি করে এসেছি আর আজকেই তোমার বিয়ে।বুঝতেই পারছো কতটা চাপ গিয়েছে।(আমি)
আচ্ছা শোন!তোর ভাবি নিধিকা।নিধিকা ও হলো….(ভাইয়া)
থাক বলা লাগবে না আয়ান।আমি তো জানি ও হলো আমার একমাত্র দেবর আরাভ।তাই না দেবর জি!(নিধিকা)
ওর মুখে হাসি দেখে ইচ্ছে করছে ঠাস করে গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই।কিন্তু নাহ্ ওর উপর তো আমার কোন অধিকার নেই।
কথা না বাড়িয়ে ওদের সামনে থেকে চলে আসলাম।গার্ডেনে হাঁটছি আর আগের দিনের কথাগুলো ভাবছি।হঠাৎ কার সাথে যেন ধাক্কা লাগল।তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে চোখ রাঙিয়ে,কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এই যে মিস্টার দেখে চলতে পারেন না?মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে ইচ্ছা করে!(মেয়েটা)
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
কি বলছেন এইসব?(আমি)
তো কি বলব আর আপনি যেভাবে গায়ের উপর এসে পড়লেন মনে হলো একটা রাক্ষস এসে পড়েছে।(মেয়েটা)
দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না।আমি একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে ছিলাম তাই খেয়াল করতে পারি নাই।তা আপনি তো দেখে চলতে পারতেন তাই না!(আমি)
আমি তো সেল্ফি তুলতে ছিলাম।আপনার জন্য আমার সেল্ফিটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।(মেয়েটা)
এমন পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সেল্ফি তুললে এমনি হবে।(আমি)
এই দেখুন……(মেয়েটা)
রিধিকা কি হচ্ছে এগুলো?(নিধিকার মা)
আম্মু দেখো না এই ছেলেটা আমার গায়ে এসে পড়েছে।আবার বড় বড় কথা বলছে।(রিধিকা)
রিধিকা ও হলো তোর জিজুর ছোট ভাই আরাভ।(নিধিকার মা)
তো কি হয়েছে?উনি যদি অন্যায় করে আমি সেটা একশো বার বলব হাজার বার বলব।(রিধিকা)
চুপ!আর একটা কথা বললে আমার কাছে মাইর খাবি।যা এখান থেকে।(নিধিকার মা)
তুমি সবসময় এমন করো আমার সাথে আম্মু।হু!(রিধিকা)
রিধিকা মুখ ভেঙচি কেটে চলে গেল।
বাবা তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো নাহ্।আসলে একটু দুষ্টু তো।(নিধিকার মা)
নাহ্ আন্টি কিছু মনে করি নাহ্।(এই মেয়ের তো খবর আছে আমাকে রাক্ষস বলা।)আন্টি ও কে হয়।?(আমি)
আমার ছোট মেয়ে।মানে নিধিকার ছোট বোন রিধিকা।(নিধিকার মা)
ওহ্ তার মানে এই হলো নিধিকার বোন।যার কথা নিধিকা প্রচুর বলতো।(মনে মনে বললাম)
ওহ্ আচ্ছা।(আমি)
বাবা তুমি থাকো আমি যাচ্ছি।আমার ওইদিকে একটু কাজ আছে।(নিধিকার মা)
ঠিক আছে আন্টি।(আমি)
আমি বিয়ের দিকে গেলাম।কাজি বিয়ে পড়াচ্ছে।বিয়েটা হয়ে গেল।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুচকি হাসি দিলাম।অপর প্রান্তে তাকিয়ে দেখি রিধিকা দাঁড়িয়ে ফুল ছিটাচ্ছে।এই মেয়ের তো খবর আছে।আরাভ চৌধুরীকে রাক্ষস বলার শাস্তি হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাবে।
নিধিকাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসলাম।অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।নিধিকা তো অনেক খুশি।সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে।আমিও যতটা পারছি দূরেই থাকার চেষ্টা করছি।রাগে,ঘৃণায় অসহ্য লাগছে সবকিছু।
হঠাৎ করে রান্নাঘরে চোখ পড়তেই দেখলাম রিধিকা আম্মুর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।এই মেয়ে এলো কোথা থেকে?হয়তো নিধিকা আর ভাইয়ার গাড়িতে ছিল।আম্মু সরে যেতেই আমি রিধিকার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।চোখ লাল করে তাকিয়ে আছি।রিধিকা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
কি হয়েছে?পেত্নি ভর করল নাকি?এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?(রিধিকা)
এই মেয়ে আপনার এতো সাহস আসে কোথা থেকে আপনি আমাকে রাক্ষস বলছো কোন সাহসে!(আমি ধমক দিয়ে বললাম)
তা কি বলব!যা একটা বডি বানিয়েছেন রাক্ষসের থেকে তো কম না।(রিধিকা)
এতো ছোট একটা মেয়ে আমার মুখে মুখে কথা বলেন!(আমি)
ওই কে বলছে আপনাকে আমি ছোট?আমি অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি।মোটেও ছোট না।(রিধিকা)
দেখলে তো মনে হয় না।মনে তো হয় কোন ভিনদেশী চিকন প্রাণী।(আমি)
রিধিকাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর সামনে থেকে চলে আসলাম।
রিধিকার তো রাগ মাথায় উঠে গিয়েছে।রিধিকা নিধিকার কাছে গেল।
আপু আমি কি অনেক চিকন?(রিধিকা)
কি বলিস এইসব?(নিধিকা)
তুই বল না!(রিধিকা)
কই না তো।তুই তো একদম পারফেক্ট।(নিধিকা)
তা তোর দেবর আমাকে চিকন প্রাণী বলল কেন!দেখছিস কত বড় সাহস।দাঁড়া আজকে তো উনার খবর আছে।(রিধিকা)
(আরাভ রিধিকাকে এই কথা বলছে।আরাভ তো কখনও এই ধরনের কথা বলে না।আজ কি হলো!)(নিধিকা)
কি হলো আপু।কোথায় হারিয়ে গেলি।(রিধিকা)
আরে নাহ্।হয়তো মজা করেছে তোর সাথে।বাদ দে।যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে।অনেক তো ধকল গেল।(নিধিকা)
রিধিকা কিছু না বলে আনহির রুমের দিকে হাঁটা ধরল।আনহি হলো আয়ান আর আরাভের ছোট বোন।আনহির সাথে রিধিকার বেশ ভাব।রিধিকা আনহির সাথেই থাকবে।
–
–
–
–
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।কিছুই ভালো লাগছে নাহ্।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে।তবে না আমি কাঁদব নাহ্।একটা ধোঁকাবাজ মেয়ের জন্য আমি কেন কাঁদব!
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি নাহ্।
সকাবেলা,
পানির ছিটায় ঘুম ভাঙল।মাথাটা গরম হয়ে গেছে।তাকিয়ে দেখি রিধিকা দাঁড়িয়ে আছে।
ওই সমস্যা কি?পানির ছিটা মুখে দিলেন কেন?(আমি)
তো কি করব?আপনি তো উঠতেই ছিলেন না।বেলা ১১ টা বাজে সেদিকে খেয়াল আছে।আজকে তো বৌভাত।আন্টি বললো আপনাকে ডাক দিতে।বিশ্বাস করেন আমার কোন ইচ্ছা ছিল ন।জোর করে আমাকে পাঠিয়েছে।এমন ডাইনোসরকে কার ডাক দিতে মন চায়!(রিধিকা)
আমার মাথা বিগড়ে গেছে।বিছানা থেকে উঠে রিধিকার সামনে দাঁড়িয়ে দেয়ালের দুই পাশে হাত রাখলাম।
আমি ঘুম থেকে উঠি না উঠি এটা আপনার দেখার বিষয় নাহ্।আর এরপরে যদি এমন অভদ্রতা করেন তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে নাহ্।আন্ডারস্ট্যান্ড!ইউ বেটার আন্ডারস্ট্যান্ড!(আমি)
রিধিকা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
আরাভ…..(নিধিকা)
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি নিধিকা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি রিধিকার থেকে দূরে সরে দাঁড়ালাম।
কি করছিলে তুমি আরাভ?(নিধিকা)
কিছুই করছিলাম নাহ্।আমার চোখে পানি ছিটা দিয়ে ঘুম ভাঙিয়েছে।এইসব জিনিস একদম বিরক্ত লাগে আমার কাছে।(আমি)
তা দেয়ালের সাথে চেপে ধরেছিলে কেন?(নিধিকা)
আমি উনাকে স্পর্শও করি নাই।জাস্ট দেয়ালের দুই পাশে হাত দিয়েছি।(আমি)
রিধু ও কি কিছু করেছে?(নিধিকা)
নাহ্ আপু।আসলে আমার দোষ আমিও বেশি করে ফেলেছি।(রিধিকা)
রিধিকা মুখ মলিন করে রুম থেকে চলে গেল।নিধিকা আমার সামনে এসে দাঁড়াল।
আরাভ আমার বোনকে দিয়ে কোন সুযোগ নিবে না।(নিধিকা)
সবাইকে নিজের মতো ভাববেন না মিস.মায়াবীনি উপ্স সরি মিসেস.নিধিকা চৌধুরী।সবাই আপনার মতো সুযোগ খুঁজে না।একটাকে ছেড়ে আরেকটাকে ধরার।(আমি)
কথাগুলো বলে নিধিকার সামনে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলাম।
চলবে…………..