গল্পঃআসলে_সে_কে?,পর্বঃপাঁচ শেষ পর্ব

গল্পঃআসলে_সে_কে?,পর্বঃপাঁচ শেষ পর্ব
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

নাঈম গাড়ি নিয়ে এসপি ব্রিজের সামনে আসতে দেখে ওদের সামনে বড়সড় একটা ট্রাক দাড়িয়ে আছে।এমন সময় ট্রাক থেকে তিনজন ছেলে নেমে আসে।তারা কাছে আসতে নাইম ওদের দেখে চিনে ফেলে।ওরা তিনজন সৌরভ,সাইমন আর রিফাত।তিনজনে এসে নাঈমের গাড়ির দরজা খুলে ওদের টেনে বের করতে থাকে।নাঈম বলে,এসব কি করছেন ভাই?।সৌরভ রাগে কটমট করতে করতে বলে,”আমাদের জেলে দিয়ে আমাদের মান সম্মান নষ্ট করেছিস আর সেজন্য আজ তোদের দুইজনকে দুনিয়া থেকে সরে দিবো”।এই বলে সৌরভ আর রিফাত মিলে নাঈমকে মারতে থাকে।নিলাদ্রি নাঈমকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে এলে সাইমন পিছন থেকে নিলাদ্রির চুল টেনে ধরে।হঠাৎ রিফাত একটা ছুরি বের করে নাঈমের পেটে ঢুকিয়ে দিলো।এটা দেখে নিলাদ্রি চিৎকার করে উঠলে সাইমন ওর মুখ চেপে ধরে টেনে ব্রিজের নিচের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।তখন রিফাত আর সৌরভ দুইজনে নাঈমকে গাড়িতে বসিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তারপর ওরা ট্রাক দিয়ে গাড়িটাকে ধাক্কা দিয়ে গভীর খাদে ফেলে দেয়।তারপর তিনজনে ব্রিজের নিচে চলে আসে আর নিলাদ্রির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে।নিলাদ্রি হাতজোড় করে অনেক অনুরোধ করে বলে
->প্লিজ আপনারা আমার সাথে এমন করবেন না।আমার বেবিটার কথা ভেবে?
কিন্তু কেউ ওর কথা শুনে না।নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সরে পড়ে।তখন নিলাদ্রি বলে
->আমায় আজ তোরা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শরীর ভোগ করেছিস এটা যেদিন তোদের সাথে ঘটবে সেদিন বুঝবি।
এটা শুনে ওরা হাসতে থাকে।আর সেখান থেকে যাওয়ার আগে নিলাদ্রি গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে যায়।
আর সেসময় সেখানে উপস্থিত হয় নুর নাহার।যে তার ক্ষমতার দ্বারা নিলাদ্রিকে বাঁচিয়ে নিজের কাছে নিয়ে যায়।বেশি সময় নিলাদ্রির শরীর আগুনে পুড়েনি।আর একটু দেরি হলে হয়তো আর বাঁচানো যেত না।কিন্তু ভাগ্যক্রমে নিলাদ্রির সন্তান বেঁচে যায়।নিলাদ্রি সুস্থ হয়ে উঠলেও মানষিক ভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়ে সে এটাও জানে না যে,তার স্বামী নাঈম বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে।কিন্তু নুর নাহার জানায় ওর স্বামী মারা গেছে।তখন নিলাদ্রি আরো ভেঙ্গে পড়ে।নুর নাহার নিজে নিলাদ্রির দেখাশোনা করে।তারপর যখন নিলাদ্রি সন্তান নিশির জন্ম হয় তখন নুর নাহার নিজের আসল পরিচয় নিলাদ্রিকে দেয়।নুর নাহার একজন পিশাচ সাধক।পিশাচদের দ্বারা সে অনেক কিছু করতে পারে।নুর নাহার নিলাদ্রির মধ্যে পিশাচ ক্ষমতা প্রবেশ করায়।এর ফলে নিলাদ্রি বেশ কিছু ক্ষমতা লাভ করে,সে যেকোনো মেয়ের রুপ ধারন করতে পারবে।নিলাদ্রি সঙ্গম ক্ষমতা কয়েকগুন বেড়ে যায়,সেই সাথে ওর সাথে যে পুরুষ মিলন করবে তার শরীরে জন্ম নিবে ক্ষুদ্রাকৃতির পিশাচ যারা শরীরের ভিতরের সবকিছু খেয়ে শেষ করে ফেলবে।আর নিলাদ্রি এরকম কিছুই চাইতো।এরকম ক্ষমতা পাওয়ার পর নিলাদ্রি নিরা রুপে ফিরে আসে আর একে একে এই দুইজনের ওপর টার্গেট নেয়।আর নিজে প্লান মাফিক ওদের দুইজনকে মেরে ফেলে।যখন নিলাদ্রি ওদের ওই অবস্থা করার পর মাথা কেটে ফেলতো,তখন যেন সে অজানা এক তৃপ্তি লাভ করতো।নিলাদ্রি টার্গেট এবার রিফাত।কিন্তু ওকে সৌরভ আর সাইমনের মতো মারা যাবে না,কারন ইতিমধ্যে পুলিশ ওর প্রতি নজর রেখেছে।তাই এমন ভাবে কাজ করতে হবে যাতে সাপেও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে।

আকাশের ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলো সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।আর আকাশের সামনে পুলিশের এসিপি দাড়িয়ে আছে বেশ রাগী অবস্থায়।আকাশ তাকে দেখে উঠে বসতেই সে রেগে বলল
->তোমাদের গায়ের ওপর দরজা খুলে পড়লো কি করে?তোমরা আসামি ধরতে গিয়েছিলে নাকি দরজা খুলে আনতে গিয়েছিলে?
তখন আকাশ এসিপিকে সবকিছু বললো।সব শুনে এসিপি আরো রেগে গিয়ে বলল
->ফালতু কথা বলার জায়গা পাওনি তাইনা।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুনিকে খুঁজে বের করো।আর যদি না পারো তাহলে সেটা বলে দাও।
->না স্যার আমি পারবো।
এসিপি আর কিছু না বলে চলে গেলো।আকাশ ভাবছে যে করেই হোক এখন নিরাকে খুজে বের করতে হবে?
রিফাত সৌরভ আর সাইমনের মৃত্যু নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে।না জানি সে আবার মারা না যায়।এমন সময় রিফাতের ফোন আসলো।রিফাত ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সুনয়না ফোন করেছে।সুনয়না বলল
->বাবু তুমি না আমার সাথে দেখা করতে চাইলা কবে দেখা করবে বলো?তুমি যদি বলো কাল দেখা করো তাহলে আমি তাই করবো।
কথা শুনে রিফাতের চোখ চকচক করে উঠলো।রিফাত খুশিতে বলে উঠলো
->ঠিক আছে তাহলে তুমি কাল রাতে চলে আসো।
->আচ্ছা।
রিফাত সুনয়নাকে তার বাসার ঠিকানা দেয়।রিফাতের বেশ আনন্দ লাগছে,অনেকদিন পর সে একটা মেয়ের শরীর পাবে।রিফাতের মতো নারীর শরীর লোভীরা শরীর পেলে আর কোনো কিছু ভাবতে পারে না।পরেরদিন রাতে সুনয়না ওর বাসায় আসে।রিফাত সুনয়নাকে দেখে একদম ফিদা হয়ে যায়।রিফাত সুনয়নাকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে যে মাত্র ওর ওপর ঝাপিয়ে পড়বে আর তখনই ওর মাথা কেমন যেন ঘুরে উঠলো আর সাথে সাথে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।যখন সে চোখ খুললো তখন দেখলো ওর হাত-পা একটা চেয়ারের সাথে বাঁধা।গায়ে একটা কাপড়ও নেই।রিফাত তাকিয়ে দেখলো ওর সামনে একজন মেয়ে দাড়িয়ে আছে সে সুনয়না নয়।ওর সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির শরীর পুড়ে যাওয়া।রিফাত বলল
->কে তুমি?সুনয়না কোথায়?
তখন সে মেয়েটি সুনয়নার রুপ ধারন করলো।এমন কাহিনি দেখে রিফাত একদম চমকে উঠলো।তারপর মেয়েটি নিলাদ্রির রুপে ফিরে আসতেই রিফাত অবাক হয়ে বলল
->তুমি বেঁচে আছো?
->হ্যাঁ তার মানে চিনতে পেরেছো?জানো তোমার দুই বন্ধুকে কতটা কষ্ট দিয়ে মেরেছি?
নিলাদ্রি ওদের মৃত্যুর ঘটনা ওর সামনে বর্ণনা করতে লাগলো।রিফাত শুনে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।তখন নিলাদ্রি বলল
->এবার তোমাকে মারবো ওর চেয়ে বেশি খারাপ ভাবে।
->না না আমায় মেরো না প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও।
->আমিও এরকম ভাবে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তোরা কেউ শুনিস নি।
নিলাদ্রি ওর দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে।রিফাত তখন কাঁদতে শুরু করে।তখন নিলাদ্রি বলে
->ছেড়ে দিতে পারি এক শর্তে যদি তুই সবকিছু স্বীকার করিস।
রিফাত তাতেই রাজি হয়ে যায়।পরেরদিন রিফাত থানায় এসে নিলাদ্রি আর তার স্বামী নাঈমকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে।তখন পুলিশ ওকে গ্রেফতার করে।পুলিশ সহ সবার কাছে নিলাদ্রি আর নাঈম দুইজনই মৃত।দুইদিন পর একটা ফোন আসে,একটা নাকি লাশ পাওয়া গেছে।আকাশ এসআই রিমনকে নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখে লাশটা হলো একটা মেয়ের লাশ আর সেই মেয়ে আর কেউ না সে হলো নিরা।
নিরার ব্যাগ হতে একটা চিঠি পাওয়া যায় আর তাতে লেখা ছিলো,”সৌরভ আর সাইমনের খুন আমি নিজে করেছি।কারন ওরা আমার জীবনকে নষ্ট করে ফেলেছে তাই ওদের মেরে প্রতিশোধ নিয়েছি।আর হ্যাঁ আমার মধ্যে পিশাচ ক্ষমতা ছিলো যার কারনে আমার সাথে মিলন করার জন্য ওদের মধ্যে ওই পিশাচ প্রবেশ করে।আমি রিফাতকে মেরে ফেলতাম কিন্তু সে আগে তার করা পাপের কথা স্বীকার করে নিয়েছে তাই আর মারার প্রয়োজন মনে করিনি।আমার যেহেতু আপন বলতে আর কেউ নেই তাই নিজে মারা যাচ্ছি”।
ব্যাপারটা আকাশের কাছে কেমন যেন সন্দেহজনক লাগলো তাই সে আবারো সবকিছু পরিক্ষা করলো।আর প্রমান হলো যে নিরার সাথে মিলন করার কারনেই ওদের মধ্যে ওরা প্রবেশ করেছে।কেসটি এখানেই বন্ধ করা হলো।

নিলাদ্রি তার মেয়ে নিশিকে কোলে নিয়ে আদর করছে এমন সময় নুর নাহার বলল
->কি রে নাতনি তুই এটা কি করে করলি?
নিলাদ্রি হেসে বলল
->নানি তুমি আমায় যে ক্ষমতা দিয়েছো তার মাধ্যমে।আমি খবর পেয়েছিলাম একটা পতিতালয়ে এক মেয়ে আত্মাহত্যা করেছে তাই সেই লাশ ওরা লুকিয়ে কবর দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমি সেই লাশ কিনে নিয়ে আমার পিশাচ মায়ায় তার মধ্যে নিরার রুপ দিই।আর আমার ব্যবহার করা হাত ব্যাগ কাপড় ওর কাছে দিই।আর ডাক্তারে রিপোর্টে সব পজেটিভ আসার কারন হলো ওই সময় ডাক্তারের ব্রেন আমার পিশাচ কব্জা করে নেয়।যার কারনে সহজে সব পার হয়ে গেছে।
->বাহ নাতি বাহ।তোর কি ব্রেন?
->দেখতে হবে না নাতিটা কার।এখন আমি আমার মেয়েকে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিবো।
->হ্যাঁ তোকে আমি আর কোথায় যেতে দিবো না।
->আর যাচ্ছি না রে বুড়ি।
দুইজনে হাসলো কথা বলে।
রিফাতের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।রিফাতের দিন অন্ধকার জেলে কাটছে।নারীর প্রতি নেশা আজ ওর এই অবস্থার জন্য দায়ী।আজ যদি সাধারন মানুষের মতো জীবন যাপন করতো আর পছন্দ মতো কাউকে বিয়ে করে নিতো তাহলে আর এমন হতো না।এমন সময় সেখানে নিলাদ্রি উপস্থিত হলো।নিলাদ্রি হাতে একটা মোটা চাবুক।নিলাদ্রি ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে
->আজ থেকে তোকে প্রতিদিন এভাবে শাস্তি দিবো।
এই বলে নিলাদ্রি ওকে চাবুক দিয়ে আঘাত করতে থাকে।রিফাত চিৎকার করতে থাকে।রিফাতের চিৎকার শুনে পুলিশ এগিয়ে এসে দেখে রিফাত শুয়ে থেকে ছটফট করছে আর বলছে,আমায় মেরো না।এভাবে প্রতি রাতে চলতে থাকে।একসময় পুলিশ ভাবে রিফাত পাগল হয়ে গেছে।রিফাতের শরীর আঘাত সে ছাড়া আর কেউ দেখতে পারে না।রিফাত সবাইকে অনেক বলেছে কিন্তু কেউ তা বিশ্বাস করেনা।তাই এখন রিফাতে ঠাই হয়েছে মেন্টাল হাসপাতালে।আর এটাই ওর পাপের শাস্তি।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here