বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_০২

বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_০২
লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরাভ এতোটা পাল্টে গেল কি করে!(নিধিকা)

নিধিকা আর না দাঁড়িয়ে আরাভের রুম থেকে চলে গেল।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে একটা পাঞ্জাবি পড়ে নিচে চলে আসলাম।ব্রেকফাস্ট করে কাজে লেগে পড়লাম।যতই যাইহোক আমার বড় ভাইয়ের বউভাত সবটা তো আমাকেই দেখতে হবে।তবে একটা জিনিস খুব খারাপ করে ফেলছি।রিধিকার সাথে ওমনটা করা আমার উচিত হয়নি।ও কে সরি বলতে হবে।

নিধিকার বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে।তবে অবাক করা বিষয় রিধিকাকে একবারও দেখলাম না।সবাইকে খাবার খাওয়াচ্ছি।হঠাৎ দেখলাম রিধিকা একটা টেবিলে বসে কয়েকটা মেয়ের সাথে গল্প করছে।আমি ওদের খাবার দিলাম।রিধিকা আমাকে দেখে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।আমি ওর প্লেটে খাবার দেওয়ার সময় ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,”সরি রিধিকা।সকালে বেশি বাজে বিয়েভ করে ফেলছি।”

রিধিকা আমার দিকে রাগী লুকে তাকালো।আমি ওদের থেকে দূরে চলে আসলাম।

নিধিকা এতোক্ষণ ধরে সবটা দেখছিল।নিধিকার কেন জানি অসহ্য লাগছে আরাভকে রিধিকার সাথে দেখে।

কিরে দোস্ত বড় ভাইয়ের তো বিয়ে হয়ে গেল।তোরটা কবে হবে?(অন্তু)

আমার তো বিয়ে করার ইচ্ছাই নাই।(আমি)

থাকবেই বা কি করে নিধিকা যা খেল দেখালো।(রাজন)

চুপ কর ভাইয়া জানি কিছু না শোনে।(আমি)

আচ্ছা নিধিকা এমন কেন করল তুই কি কিছু জিগাসা করে ছিলি?(অন্তু)

না রে ভাই।ওর সাথে কথা বলার ইচ্ছাই মরে গেছে।ও কে দেখলেই ঘৃণা হয়।(আমি)

কাকে দেখলে ঘৃণা হয় আরাভ?(মা)

পিছনে তাকিয়ে দেখি মা দাঁড়িয়ে আছে।আমার তো বুক ধুপধুপ করছে।

না মানে ইয়ে মানে…..(আরাভ)

কার কথা বলছিস তুই আরাভ?স্পষ্টভাবে বল।(মা)

আরে আম্মু আমি তো নাইমের কথা বলছি।ও আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।তাই বলছিলাম আরকি!(আমি)

কখনও কোন কিছু না জেনে কাউকে ঘৃণা করতে হয় না।হয়তো তার কোন অসুবিধা হয়েছিল তাই তোমাদের বলতে পারে নাই।এর জন্য ঘৃণা করবে!এরপরে জানি এমন কথা আমি না শুনি।(মা)

কথাগুলো বলে আম্মু চলে গেল।

আসলেই তো নিধিকা কেন এমন করল আমি তো তা জানি না।না জেনে কাউকে ঘৃণা করা ঠিক নাহ্।তবে ওর সাথে কথা বলার আমার কোন ইচ্ছা নেই।

এই যে মি.আরাভ।এদিকে একটু শুনেন।(রিধিকা)

হুম বলুন।(আমি)

আরে এতো বুড়ো একটা লোক আমাকে আপনি বলে।ধূর আপনি যদি আমাকে আপনি বলেন তাহলে আমার নিজেকে বুড়ি মনে হয়।আপনি আমাকে তুমি বলবেন।(রিধিকা)

আচ্ছা ঠিক আছে।কি বলবে তা বলো!(আমি)

আপনি কিন্তু অনেক বাজে একটা লোক।আমাকে সকালে কিভাবে বকেছেন মনে আছে।(রিধিকা)

রিধিকা আমি তো সরি বলেছি।(আমি)

সরি বললেই সব দোষ মুছে যায় না।(রিধিকা)

তো আমার এখন কি করা লাগবে?(আমি)

আমার সব বান্ধবী,কাজিন আর আমাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে।(রিধিকা)

হোয়াট?(আমি)

কানে শুনেন না নাকি?এক কথা বারবার বলতে পারব নাহ্।(রিধিকা)

আমি এইসব পারব নাহ্।তোমার জিজুকে নিয়ে যাও।(আমি)

দোষ করছেন আপনি আর ফুচকা খাওয়াবে জিজু!(রিধিকা)

তোমার জিজু তো আমার ভাই তাইনা!(আমি)

সো হোয়াট?দোষ আপনার আপনিই খাওয়াবেন।(রিধিকা)

কি আর করার সবাইকে নিয়ে ফুচকা খাওয়াতে গেলাম।সবাই ফুচকা খাচ্ছে কিন্তু আমি খাচ্ছি না।এগুলা আমার একদম পছন্দ নাহ্।আগেও কখনও খাই নাই।নিধিকাও অনেক জোর করতো কিন্তু কখনো খাওয়াতে পারে নাই।

কি হলো মি.চৌধুরী?খাচ্ছেন না কেন আপনি?(রিধিকা)

আমি এইসব খাই না।তুমি খাও।(আমি)

রিধিকা জোর করে আমার মুখে একটা ফুচকা ঢুকিয়ে দিল।আমার ফুচকা খাওয়ার স্টাইল দেখে সবাই হাসছে।

এমন একটা ভাব মনে হয় বিদেশী বাবু!(রিধিকা)

একদম বেশি পাকা কথা বলবে না।(আমি)

এ্যা আপনি বললেই মনে হয় আমি শুনবো।(রিধিকা)

কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।এই মেয়ে কথা শোনার পাত্র নাহ্।(আমি)

ফুচকা খাওয়া শেষ করে সবাই বাড়িতে আসলাম।

কি রে রিধিকা তোরা কোথায় গেছিলি?(নিধিকা)

আজকে বিয়াইসাবের টাকা ভাঙিয়েছি।(রিধিকা)

আরে নিধিকা তোর দেবর তো ফুচকাও খায় নাহ্।রিধিকা জোর করে খাইয়ে দিয়েছে।(নিহা)

নিধিকা আমার মুখের দিকে তাকালো।আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম।

বাহ্ ভালো তো।আচ্ছা চল সন্ধ্যা হয়ে গেছে।এখন তো আমাদের বাড়িতে যেতে হবে।(নিধিকা)

ওহ্ হ্যাঁ।আচ্ছা চলো।(রিধিকা)

ভাইয়া আর নিধিকাকে নিয়ে ওরা সবাই চলে গেল।সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে।রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।চোখটা লেগে গেছে।আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙল।

আরাভ রাত হয়ে গেছে খেতে চল।(মা)

আম্মুর সাথে নিচে খেতে গেলাম।সবাই একসাথে খাচ্ছি।হঠাৎ বাবা বলল,

আরাভ!তোর তো পড়াশোনা শেষ কাল দিয়ে অফিসে জয়েন কর।আমি আর যেতে পারব না।তোরা দুই ভাই মিলে অফিস সামলা।(বাবা)

আচ্ছা বাবা।(আমি)

অফিসে গেলেই ভালো হবে।কাজের মধ্যে থাকলে এমন অশান্তি লাগবে নাহ্।

ভাইয়া কালকে তুই,আমি,রিধিকা আপু আর ভাইয়া,ভাবি একসাথে ঘুরতে যাবো।(আনহি)

আমি যেতে পারব না।বাবা বলল শুনলি না যে কালকে অফিসে যেতে হবে।(আমি)

এখন কয়দিন যাওয়া লাগবে না।সবকিছু মিটে যাক তারপরে যাস।(মা)

সব তো হয়েই গেছে আম্মু।(আমি)

এই হয়েছে একটা ছেলে।একদম বাপের মতো কাজের পাগল।(মা)

আম্মু তুমি এখন আবার এগুলো বলা শুরু করলে কেন!(আমি)

তুই যে দুইটা বছর আমার কাছে ছিলি না আমার কত কষ্ট হয়েছে জানিস।আর বিদেশ থেকে আসলি দুইদিন হতে না হতেই অফিসে যাওয়া লাগবে।তুই এখন কয়দিন বাড়িতেই থাকবি তারপরে অফিসে জয়েন করবি।আর হ্যাঁ কালকে ওদের সাথে ঘুরতে যাবি।আমার উপরে জানি আর একটা কথাও না শুনি।(মা)

আম্মু রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।বাবা তো একদম চুপ।শান্ত ছেলের মতো খাচ্ছে।আমি আর আনহি মুচকি মুচকি হাসছি।

কি চৌধুরী সাহেব এতো শান্ত হয়ে গেলেন কি কারণে?(আমি)

চুপ কর।চুপচাপ খেয়ে নে।নাহলে আমার আবার কথা শুনতে হবে।(বাবা)

সবাই খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে আসলাম।

অন্যদিকে,

আপু মি.চৌধুরীর সাথে কি তোর কোন প্রবলেম আছে?(রিধিকা)

মি.চৌধুরী কে?সেটা আগে বল।(নিধিকা)

আরে আরাভ চৌধুরী।(রিধিকা)

তুই ও কে আরাভ ভাইয়া ডাকবি।তুই মি.চৌধুরী বলিস কেন?(নিধিকা)

এটা আমার ইচ্ছা।তোমার ওতো বলতে হবে না।ওই রাগী বিদেশি বাবুকে নাকি ভাইয়া ডাকব।আচ্ছা এখন বল উনার সাথে কি কোন সমস্যা আছে তোর?(রিধিকা)

আরাভের সাথে আমার কিসের সমস্যা থাকবে।কোন সমস্যা নাই।(নিধিকা)

আমি কেমন জানি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।(রিধিকা)

কি বলছিস তুই?(নিধিকা)

আচ্ছা বাদ দে।যা জিজু রুমে একা।উনার আনইজি ফিল হতে পারে।(রিধিকা)

তবে তুই কি বলতে ছিলি।(ভয়ে ভয়ে বলল নিধিকা)

আরে তুই এমন ভয় পাচ্ছিস কেন?আমি তো এমনি জিগাসা করছি।যা তো।আমি এখন ঘুমাবো।(রিধিকা)

হুম যাচ্ছি।(নিধিকা)

নিধিকা রুম থেকে চলে গেল।রিধিকা বিছানায় শুয়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।

চলবে……..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করি!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here