দোলনচাঁপার_পর্ব,দ্বাদশ_পর্ব
দেবারতি_ধাড়া
ডায়েরিটা হাতে নিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়লো কিঙ্কিণী। তার পরের ঘটনা গুলোও দেখার চেষ্টা করলো চোখের সামনে। কিন্তু কিছুতেই আর কিচ্ছু দেখতে পেলোনা অনেক চেষ্টা করেও! তখনই ও মনে মনে ভাবলো, “আমি যা যা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম, তার মানে এই সবকিছুই কী সত্যি? সত্যি সত্যিই কী আমার দেখা মেঘা আর এখানকার মেঘা দিদিমণি, মানে মেঘোমালা সরকার কী একই মেয়ে? তারপর কী হলো? কী হলো তারপর?! আমি এত চেষ্ট করেও আর কিচ্ছু দেখতে পারছিনা কেন?! তাহলে কী দুলাল বাবু আমাকে মিথ্যে বলেছিলেন যে মেঘোমালা ট্রান্সফার নিয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে? কিন্তু উনি কেন আমাকে মিথ্যে বলতে গেলেন? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা! কিচ্ছু না! কী করবো আমি এখন? ইস্! কী নৃশংসভাবে মেরে ফেললো ওরা মেঘাকে! সত্যি কী এমনটাই হয়েছিলো মেঘার সাথে? আর আমি কেনই বা এসব দেখতে পাচ্ছিলাম আর এখন আর কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিনা কেন..? এই ডায়েরিটাতেও তো আর কিছুই লেখা নেই!! আমাকে এক্ষুণি দুলাল বাবুর সাথে কথা বলতে হবে! আমার মনে হচ্ছে উনি সবটা জেনেও আমার কাছ থেকে সবকিছু লুকিয়ে রাখতে চাইছেন! কিন্তু কেন উনি আমার থেকে সবকিছু লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন? ওনার কী স্বার্থ আছে এতে? আমাকে সবটা জানতেই হবে!
কিঙ্কিণী ডায়েরিটা টেবিলের ওপর রেখে পাশের ঘরে গিয়ে ফোন করে ডাকতে গেলো দুলাল বাবুকে। দুলাল বাবু না আসা পর্যন্ত কোকোকে কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বসেছিলো কিঙ্কিণী। দুলাল বাবু এসে গেটে শব্দ করতেই দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো কিঙ্কিণী। কোকোও কিঙ্কিণীর পিছন পিছন বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। গেটটা খুলে দিয়ে কিঙ্কিণী রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
-ভিতরে আসুন দুলাল বাবু! আপনার সাথে আমার এক্ষুণি অনেক কথা আছে!
দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদার আর রাগের ফলে কিঙ্কিণীর চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে ফুলে গেছে। ভীষণ ফর্সা কিঙ্কিণী, তাই রাগের ফলে ওর মুখ আর কানও লাল হয়ে গেছে। কিঙ্কিণীকে এরকম রেগে থাকতে দেখে এবং কিঙ্কিণীর গলা শুনে ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলেন দুলাল বাবু। ভয়ার্ত গলায় উনি বললেন,
-আপনার কী হয়েছে কিঙ্কিণী ম্যাডাম? আপনার কী শরীর খারাপ লাগছে?
-মেঘোমালা কোথায় দুলাল বাবু?
-আপনি কার কথা বলছেন বলুন তো কিঙ্কিণী ম্যাডাম?
-আমি কার কথা বলছি সেটা কি আপনি বুঝতে পারছেননা দুলাল বাবু? দয়া করে বলুন মেঘোমালা কোথায়? কোথায় মেঘোমালা?!
চিৎকার করে উঠলো কিঙ্কিণী। কিঙ্কিণীর চিৎকারে দুলাল বাবু চমকে উঠলেন, তারপর বললেন,
-আপনি কি বলছেন আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না কিঙ্কিণী ম্যাডাম! মেঘোমালা কোথায় সেটা আমি কি করে বলবো?
-আপনি সবটা জানেন দুলাল বাবু! সবকিছু জেনে শুনেও আপনি আমাকে মিথ্যে কথা বলেছেন! আপনি মিথ্যে বলছেন যে মেঘোমালা সরকার এই স্কুল থেকে ট্রান্সফার নিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে! কেনো মিথ্যা বলেছিলেন আমাকে আপনি? আপনি যদি এক্ষুনি আমাকে সবটা খুলে না বলেন তাহলে কিন্তু আমি আপনার নামে পুলিশে ইনফর্ম করবো! আর কেন পুলিশে ইনফর্ম করবো জানেন? কারণ আপনি প্রত্যেকদিন রাতে আমার আর কোকোর খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশান!
কী হলো দুলাল বাবু? আপনি খুব অবাক হলেন তাই না? আপনি এটাই ভাবছেন তো, আমি কি করে জানলাম যে আপনি আমাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশান?
আর এক্ষুণি এবং এই মুহূর্তে যদি আপনি আমাকে না জানান যে, আপনি কেন আমাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশান, আর মেঘোমালা সরকারেরই বা কি হয়েছিলো, তাহলে কিন্তু আমি মেঘোমালা সরকারের খুনের অভিযোগে আর আমাদের দিনের পর দিন ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আপনাকে পুলিশে দিতে বাধ্য হবো দুলাল বাবু! আমি মেঘোমালার ডায়রিতে সবটা পড়েছি! আর মেঘোমালার ডাইরিতে আপনার নামটা কিন্তু লেখা ছিলো দুলাল বাবু!
-কী সব বলছেন আপনি কিঙ্কিণী ম্যাডাম? মেঘা দিদিমণির ডায়েরি আপনি এখানে কোথায় পাবেন?
-কেন পাবোনা? ওই তো! ওই ঘরের মধ্যেই তো সবকিছু রয়েছে! মেঘোমালা সরকারের ডায়েরি, ওনার ব্যবহৃত প্রসাধনী, সিঁদুর কৌটো, শাঁখা-পলা, ওনার আর ওনার হাসব্যান্ডের ছবি সবকিছুই তো রয়েছে ওই ঘরে…
-কী সব উল্টোপাল্টা বলছেন ম্যাডাম?এখানে ওই সব কিচ্ছু নেই! আপনি আমাকে ফাঁসানোর জন্য এই সমস্ত কথাবার্তা বলছেন!
-আমি কোনো উল্টোপাল্টা কথা বলছিনা দুলালবাবু! আপনি নিজের চোখেই দেখবেন চলুন সবকিছু! আসুন আমার সঙ্গে!
-আচ্ছা চলুন!
কিঙ্কিণী দুলালবাবুকে সাথে নিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো পাশের ঘরটার। তারপর দুলালবাবুকে ঘরে ঢুকে দেখতে বললো,
-নিন দুলাল বাবু! আপনি নিজের চোখেই সবকিছু দেখুন!
দুলালবাবু ঘরে ঢুকে ঘরটা ভালো করে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,
-আমি তো বললাম আপনি উল্টোপাল্টা বকছেন! মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার! এই ঘরে কিচ্ছু নেই কিঙ্কিণী ম্যাডাম!
দুলালবাবুর কথা গুলো শুনে দুলাল বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গিয়ে কিঙ্কিণী ঘরে ঢুকে নিজের চোখে সবকিছু দেখতে গেলো। ঘরে ঢুকে দেখলো দুলাল বাবু সত্যি কথাই বলছেন। সত্যিই তো ঘরে কিচ্ছু নেই! ঘরে নিদারুণ নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে! অবাক হয়ে গেলো কিঙ্কিণী। নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলোনা ও। চিৎকার করে বলে উঠলো,
-তাহলে কী এতদিন ধরে এই সবকিছু আমার মনের ভুল ছিলো?! কিন্তু কী করে সবকিছু আমার মনের ভুল হতে পারে? আমি তো এইখানে, হ্যাঁ হ্যাঁ এইখানেই একটা চেয়ারে বসে মেঘার ডায়েরিটা পড়েছি! এখানেই একটা টেবিল ছিলো, ওইখানের বুকশেল্ফটাতে কত ভালো ভালো বই ছিলো… আমি নিজের চোখে ওদের ছবিও দেখেছি! ওদের আগত সন্তানের আসার আনন্দ ভাগ করে নিয়েছি ওদের সাথে! ওদের কত ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের সাক্ষী আমি.. এমনকি, এমনকি আমি মেঘার মৃত্যুরও সাক্ষী….
সারাঘরের নিস্তব্ধতা এক নিমেষে শেষ হয়ে গিয়ে বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো কিঙ্কিণীর চিৎকারের আওয়াজ! মুখে হাত চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘরের মেঝেতে বসে পড়লো কিঙ্কিণী। কিঙ্কিণীর কান্নার শব্দে সারা ঘর যেন কম্পিত হয়ে উঠলো! কিঙ্কিণীকে এভাবে কাঁদতে দেখে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো কোকোও.. কোকো ভাবলো দুলাল বাবুই হয়তো কিঙ্কিণীকে কাঁদিয়েছেন, কষ্ট দিয়েছেন। তাই চিৎকার করে তেড়ে গেলো দুলাল বাবুর দিকে। দুলাল বাবু কিঙ্কিণীর কথা গুলো শুনে অবাক হয়ে গেলেন। কিঙ্কিণী যা যা বলছে, তার সবটাই তো সত্যি! এই ঘরের যা যা বর্ণনা দিলো, মেঘোমালা থাকাকালীন তো এভাবেই সাজানো ছিলো ঘরটা। কিন্তু কিঙ্কিণী এসব কী করে জানলো সেটাতেই সন্দেহ হলো দুলালবাবুর। আর উনি মনে মনে ভাবলেন, “কিঙ্কিণী ম্যাডাম শেষে ওটা কী বললেন? উনি মেঘা দিদিমণির মৃত্যুরও সাক্ষী? মানে? ওনার কথাটার তো কোনো মানেই আমি বুঝতে পারলামনা! তারমানে মেঘা দিদিমণি সত্যিই কী আর বেঁচে নেই?”
দুলালবাবু কিঙ্কিণীকে জিজ্ঞেস করতে কিঙ্কিণী সবটা খুলে বললো দুলালবাবুকে। সেই সাথে দুলাল বাবুও তারপর থেকে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনার কথা বলতে শুরু করলেন..
-সৌহার্দ্য দাদাবাবু মেঘা দিদিমণির ফোনে বারবার ফোন করা সত্ত্বেও মেঘা দিদিমণি ফোন ধরছিলেননা! ফোনে না পেয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন সৌহার্দ্য দাদাবাবু। উনি ভাবলেন মেঘা দিদিমণি হয়তো কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, বা ওনার শরীরটা হয়তো এতটাই খারাপ যে উনি ফোন ধরতে পারছেননা। বার বার ফোন করা সত্ত্বেও মেঘা দিদিমণিকে না পেয়ে, সেদিন রাতেই পাড়ার এক পরিচিতের গাড়ি ভাড়া করে দাদাবাবু ফুলতলী গ্রামে এসে পৌঁছালেন। এসে সারাবাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও মেঘা দিদিমণিকে দেখতে পেলেননা। তখনই উনি ফোন করলেন আমাকে। আমি সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে এলাম এই বাড়িতে। পাড়ার আশেপাশে, স্কুলের চারিদিকে, সমস্ত জায়গায় খুঁজেও কোথায় পাওয়া গেলোনা মেঘা দিদিমণিকে। ওনার স্কুলের অনেক কলিগদের নাম্বার ছিলো সৌহার্দ্য দাদাবাবুর কাছে। তাদেরকেও ফোন করে কোনো লাভ হলোনা। তারা কেউই জানেননা মেঘা দিদিমণি কোথায় গেছেন। মেঘা দিদিমণিকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে পাগলের মত করতে লাগলেন সৌহার্দ্য দাদাবাবু। সারাবাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলেন ওনার সমস্ত জিনিস এবং ওনার ফোন। ফোনটা টেবিলের উপরেই রাখা ছিলো। ফোনটা হাতে নিয়ে কললিস্ট চেক করে উনি দেখলেন সৌহার্দ্য দাদাবাবুর ফোন ছাড়াও আরো অনেকগুলো আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসতো ওনার ফোনে। এমনকি আগের দিন রাতেও ফোন এসেছিলো মেঘা দিদিমণির ফোনে। সেই নাম্বার গুলোতে ঘুড়িয়ে ফোন করতে লাগলেন সৌহার্দ্য দাদাবাবু। কিন্তু সেই সবকটা নাম্বারই সুইচ অফ এলো। তখনই দাদাবাবুর চোখে পড়লো টেবিলের ওপর রাখা মেঘা দিদিমণির ডায়েরিটার দিকে। ডায়েরিটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলেন উনি। জানতে পারলেন মেঘা দিদিমণিকে ফোন করে খুনের হুমকি দেওয়ার কথা আর সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়ার থ্রেট দেওয়ার কথা। তখনই দাদাবাবুর মনে পড়ে গেলো মেঘা দিদিমণির ফোনে তো একটা অ্যাপস্ ডাউনলোড করা আছে, যেখানে ওনার ফোনে আসা এবং যাওয়া সমস্ত ফোন কল রেকর্ড হয়ে যায়। মেঘা দিদিমণি নিজেই এখানে আসার পরে ওই অ্যাপটা ডাউনলোড করেছিলেন নিজের ফোনে। সৌহার্দ্য দাদাবাবু আর মেঘা দিদিমণির সমস্ত কথা রেকর্ড করে রাখার জন্য। যাতে সৌহার্দ্য দাদাবাবু কখনো কাজে ব্যস্ত থাকলেও মেঘা দিদিমণি ওদের কল রেকর্ডটা শুনতে পারেন। আর ওনার নিজেকে একা না লাগে তাই।
সঙ্গে সঙ্গেই মেঘা দিদিমণির ফোনের কল রেকর্ড চেক করতে লাগলেন দাদাবাবু। কল রেকর্ড চেক করতেই আমরা জানতে পারলাম ওই বদমাশ লম্পট সমাজবিরোধী গুলোর কথা। সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে সাথে নিয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগ করতে গেলেন সৌহার্দ্য দাদাবাবু। সাথে নিলেন মেঘা দিদিমণির ডায়েরি আর ফোন কলের রেকর্ড। কিন্তু স্থানীয় থানা কেবলমাত্র একটি ডায়েরি লিখে নিয়েই চুপ করে গেলেন। তদন্ত করা তো দূরের কথা মেঘা দিদিমণিকে খোঁজারও কোন রকম ব্যবস্থা করলেননা ওনারা। পুলিশ সময় চাইলো দুদিন। থানার বড়বাবু বললেন, দুদিনের মধ্যে যদি মেঘা দিদিমণি ফিরে না আসেন তবেই ওনারা মেঘা দিদিমণিকে খোঁজা শুরু করবেন। কিন্তু পুলিশের কথা শুনে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারলেননা সৌহার্দ্য দাদাবাবু। উনি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করলেন। মেঘা দিদিমণিকে ফোন করে হুমকি দেওয়ার সমস্ত কথা জানালেনও। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনো খোঁজ পাওয়া গেলোনা মেঘা দিদিমণির। দাদাবাবু আবারও থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেন সমস্ত প্রমান নিয়ে। কিন্তু থানার পুলিশ যা ইচ্ছে করে সৌহার্দ্য দাদাবাবুর কোনো অভিযোগই জোড়ালো ভাবে গ্রহণ করতে চাইলেননা। শুধু বললেন, ওনারা নাকি ওনাদের মতো তদন্ত চালাচ্ছেন। তাই বারবার থানায় এসেও কোনো লাভ নেই। খবর পেলে ওনারা নিজের থেকেই জানাবেন। থানা থেকে ফেরার সময় ওই সমাজ বিরোধী দল লোহার রড দিয়ে সৌহার্দ্য দাদাবাবুর মাথায় বুকে শরীরে আঘাত করে ফেলে দিয়ে গেলো জঙ্গলে। জানতে পারলো না কেউ। একমাত্র আমি ছাড়া। কারণ একমাত্র আমিই সৌহার্দ্য দাদাবাবুর সঙ্গে সবসময় থাকতাম এবং মেঘা দিদিমণিকে খোঁজার লড়াইয়ে ওনার পাশে আমিই ছিলাম সারাক্ষণ।
সেদিনও সৌহার্দ্য দাদাবাবুর সাথে আমিও গিয়েছিলাম থানাতে। কিন্তু থানার পাশেই কোন একটা কাজে আটকে পড়েছিলেন উনি। তাই উনি আমাকে বললেন,
-দুলাল বাবু আপনি মেঘার এই ডায়েরি আর ফোনটা নিয়ে গিয়ে ঘরে রাখুন.. আমার এই সামনেই একটা কাজ আছে.. আমি কাজটা সেরেই ফিরছি!
-কিন্তু দাদাবাবু আপনার একা যাওয়াটা কী ঠিক হবে? আমিও যাইনা আপনার সাথে?
-আমার কিচ্ছু হবেনা দুলাল বাবু! আমি আর আমার জীবনের ভয় পাইনা.. কিন্তু এই প্রমাণ গুলো লোপাট হয়ে যাওয়ার ভয় পাই! আর তাই জন্যই তো এগুলো আপনার হাতে দিয়ে দিচ্ছি! আপনি দয়া করে এগুলো সামলে রাখবেন। এগুলোই এখন সবকিছু আমার কাছে। এগুলো কোনো ভাবে হারিয়ে গেলে আমি যে আমার মেঘাকে খুঁজে পাওয়ার সব রাস্তা হারিয়ে ফেলবো দুলালবাবু! এখানে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাটা ঠিক হবেনা.. আপনি বাড়ি যান.. আমি একটু পরেই আসছি!
-আচ্ছা দাদাবাবু.. আপনি কিন্তু তাড়াতাড়ি চলে আসবেন!
একভাবে কথা গুলো বলে চলেছেন দুলাল বাবু.. কিঙ্কিণী হাঁ করে সব কথা গুলো শুনছিলো। দুলাল বাবু চুপ করে যাওয়ায়, কিঙ্কিণী বললো,
-তারপর? তারপর কী হলো? বলুননা দুলাল বাবু?!
-আমি ওনার কাছ থেকে কিছুটা এগিয়ে আসার পরেই সৌহার্দ্য দাদাবাবুকে এক ঝাঁক
সমাজবিরোধীর দল ঘিরে ধরেছিলো। ওরা দেখেনি যে আমিও ওনার সাথেই ছিলাম। দেখলে ওরা আমাকেও ছাড়তোনা! আমি পালিয়ে এসছিলাম ওখান থেকে! আমার কাছে যে মেঘা দিদিমণির ডায়েরি আর ফোনটা ছিলো… আমি ওখানে থাকলে ওই প্রমাণ গুলো ওরা লোপাট করে দিতো!
-কিন্তু তাই বলে আপনি ওখানে সৌহার্দ্য বাবুকে একা ফেলে রেখে চলে এলেন?! তারমানে সেদিন সৌহার্দ্য বাবুও মারা গেলেন? ওহ্ গড! কী নিষ্ঠুর তুমি!
আপনি ওনাকে ওই গুন্ডা গুলোর হাতে একা ছেড়ে দিয়ে কী করে চলে আসতে পারলেন দুলালবাবু?
-হ্যাঁ কিঙ্কিণী ম্যডাম.. আমি তখন ওই প্রমাণ গুলো বাঁচানোর জন্য ওখান থেকে চলে এসেছিলাম ঠিকই, কিন্তু সেদিন রাতেই আমি আবার গিয়েছিলাম ওই গভীর জঙ্গলে.. আর ওখান থেকে তুলে এনেছিলাম অচেতন দাদাবাবুকে। রাতের অন্ধকারেই দাদাবাবুকে নিয়ে চলে গিয়েছিলাম গ্রামের বাইরে। তারপর কলকাতার একটা হসপিটালে ওনার চিকিৎসা করিয়েছিলাম..
-ওহ্ তার মানে উনি বেঁচে ছিলেন? উনি কী এখনো..
-হ্যাঁ কিঙ্কিণী ম্যাডাম.. উনি এখনো বেঁচে আছেন… ওনার বেঁচে থাকার কথাটা এতদিন শুধুমাত্র আমি জানতাম.. আর আজ আপনিও জানতে পারলেন! কিন্তু আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, আমি আপনার কাছে হাত জোড় করে বলছি দয়া করে আপনি দাদাবাবুর বেঁচে থাকার কথাটা কাউকে বলবেননা… তাহলে আর দাদাবাবুকে বাঁচানো যাবেনা.. ওই জানোয়ার গুলো দাদাবাবুকে বাঁচতে দেবেনা…
ক্রমশ…