দোলনচাঁপার_টানে,ত্রয়োদশ_পর্ব

দোলনচাঁপার_টানে,ত্রয়োদশ_পর্ব
দেবারতি_ধাড়া

-আপনি কোনো চিন্তা করবেন না দুলাল বাবু। সৌহার্দ্য বাবুর বেঁচে থাকার কথাটা কেউ জানতে পারবে না। কিন্তু আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে, আপনি প্লিজ আমার এই অনুরোধটা রাখবেন?
-নিশ্চয়ই রাখার চেষ্টা করবো ম্যাডাম, আপনি বলুন কি অনুরোধ?
-আমাকে একবার সৌহার্দ্য বাবুর সাথে দেখা করাতে পারবেন আপনি?
-কিন্তু আপনি দাদাবাবুর সাথে দেখা করে কি করবেন কিঙ্কিণী ম্যাডাম?
-প্লিজ দুলাল বাবু, আপনি দয়া করে না করবেন না। আমার ওনার সাথে দেখা করাটা খুবই দরকার। একটিবারের জন্য আমাকে সৌহার্দ্য বাবুর সাথে দেখা করিয়ে দিন.. আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি ওনার বেঁচে থাকার কথাটা আমি আর আপনি ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে! আমি আপনাকে নিয়ে যাবো দাদাবাবুর কাছে…

-তাহলে আর দেরি কেন? আজ রাতেই আমরা বেরিয়ে পড়ি সৌহার্দ্য বাবুর সাথে দেখা করতে!

ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কুশল কথাগুলো বললো। হঠাৎ করে কুশলকে আসতে দেখে কিঙ্কিণী অবাক হয়ে গেলো। আর বললো,

-একী! কুশ তুমি! এখন? হঠাৎ করে কিছু না বলে কেন চলে এলে?
-কেন কিঙ্কি? তোমার এখানে আসতে গেলে কি আমাকে তোমার অনুমতি নিয়ে কিংবা তোমাকে জানিয়ে তবেই আসতে হবে?
-এভাবে বলছো কেন কুশ? এই সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ করে তুমি কিছু না বলেই চলে এলে, তাই জন্যই আমি একটু অবাক হলাম! কিন্তু সৌহার্দ্য বাবুর সাথে দেখা করার কথা তুমি কী করে জানলে?
-আমি অনেকক্ষণ আগেই এসেছে কিঙ্কি! এসে দেখলাম বাইরের গেট খোলা, তারপর তোমার ঘরে গিয়ে দেখলাম ঘরেও তুমি বা কোকো কেউই নেই! তাই তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে এই ঘরের বাইরে এসে তোমাদের গলা পাচ্ছিলাম। তাই তোমাদের আর না ডেকে দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ.. ক্ষমা করবে আমাকে.. আমি তোমাদের সব কথাই শুনেছি! দুলাল বাবু আপনিও আমাকে ক্ষমা করবেন! কিন্তু কিঙ্কিণী আমি তোমার থেকে এটা আশা করিনি! এত বড় একটা ঘটনা তুমি আমার থেকেও লুকিয়ে গেলে? তুমি এটা কী করে পারলে কিঙ্কি? তুমি জানো, আমি আর আঙ্কেল-আন্টি কত চিন্তা করছিলাম তোমাকে নিয়ে? হঠাৎ করে তুমি এভাবে সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলে! আমাদের কী চিন্তা হবেনা তোমাকে নিয়ে? তাই জন্যই তো আমি তোমাকে না বলেই চলে এলাম তোমার কাছে, তুমি ঠিক আছো কিনা সেটা দেখতে! আর তাছাড়া তোমরা এরকম ইরেসপন্সিবলের মতো কাজ করলে কীভাবে? বাইরের গেট খোলা, ঘরের দরজা খোলা, আর তোমরা এভাবে এসব কিছু আলোচনা করছো? আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ আসতো? তাহলে কী হতো কিঙ্কি?
-সরি কুশ.. আমি বুঝতে পারিনি তুমি এতটা রাগ করবে বলে.. আসলে তুমি তো এমনিতেই ভূতে ভীষণ ভয় পাও.. আর আমার সাথে যা যা ঘটেছে সেগুলো তো প্যারানরমাল এক্সপেরিয়েন্সরই মতো। তাই আমি তোমাকে কিছু বলিনি.. আর আমিতো এতদিন সত্যিটা জানতামও না। দুলাল বাবুর মুখেই তো সবটা শুনলাম। প্লিজ কুশ… তুমি আর আমার ওপর রাগ করে থেকো না… আই অ্যাম রিয়েলি এক্সট্রিমলি সরি..
-আমি তোমার উপর রাগ করিনি কিঙ্কি! আমি শুধু এটাই বলছি যে, ব্যাপারটা আমাকে আগে থেকে জানাতে পারতে.. আর এক্ষেত্রে তো এই বাড়িতে একা থাকাটা তোমার পক্ষে এখন সেফও নয়। তোমার প্রোটেকশন এর জন্য এখানে হাই সিকিউরিটির দরকার…
আর দুলালবাবু, আপনাকেও তো আমার ঠিক মতো বিশ্বাস হচ্ছে না! আপনি যে সব সত্যি কথা বলছেন, তারই বা কী মানে আছে?
-আপনারা বিশ্বাস করুন কুশল বাবু.. আমি যা বলছি, সবটা সত্যি কথা.. আমার বলা কথা গুলোর মধ্যে একটুও মিথ্যে নেই…
-তাহলে আপনি কিঙ্কিণী আর কোকোর খাবারে ঘুমের ওষুধ কেন মেশাতেন?! আপনি জানেন দিনের পর দিন ঘুমের ওষুধ খেলে মানুষের শরীরে ঠিক কতটা ক্ষতি হয়? আর আমি আপনার জন্য শুধু শুধু এতদিন কিঙ্কির ওপর রাগ করতাম! ভাবতাম হয়তো ও ইচ্ছে করে আমাকে ফোন করে না! ইচ্ছে করে ঘুম থেকে দেরিতে উঠছে। ওর শরীর খারাপ থাকা সত্ত্বেও ও ইচ্ছে করে আমাকে বলছেনা! আর ঠিক এই কারণেই আমার ভীষণ সন্দেহ হতো! ও তো বাড়িতে এত বেলা পর্যন্ত কখনোই ঘুমাতোনা। আর কোকোর শরীরে এই পাওয়ারফুল স্লিপিংপিল গুলো কতটা হার্মফুল আপনি জানেননা?! ও তো আর আমাদের মতো না! যে বিভিন্ন রকম জোড়ালো ওষুধ পত্র খেয়েও ঠিক থাকতে পারবে!
-কুশ ঠিকই বলেছে দুলাল বাবু! আপনি কেন আমার আর কোকোর খাবারে প্রত্যেকদিন রাত্রিবেলা ঘুমের ওষুধ মেশান? কি কারণে দুলাল বাবু? বলুন? আজকে আপনাকে বলতেই হবে!
-আমাকে ক্ষমা করবেন কিঙ্কিণী ম্যাডাম.. আপনিও আমাকে ক্ষমা করবেন কুশলবাবু.. আমি ইচ্ছে করে আপনাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশাতামনা.. মেঘা দিদিমনির মৃত্যুর পর এখানে আরও অনেকে স্কুলের চাকরির জন্য এসেছিলেন.. আর তারাও এই বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু তারা প্রত্যেকদিন রাতে বাগান থেকে ওই সমাজবিরোধী লোক গুলোর কথাবার্তার আওয়াজ শুনতে পেতেন। আর ওনারা ছুটে যেতেন বাগানের দিকে.. তার ফলে ওনাদেরকেও অনেক রকম হুমকির শিকার হতে হয়েছে! এই বাড়িতে তারপর থেকে কেউই আর থাকতে পারেননি। শুধুমাত্র বাগান থেকে কথাবার্তার আওয়াজ শুনতে পাওয়া নয়, মেঘা দিদিমণি মারা যাওয়ার পর এই বাড়িতে অনেক অস্বাভাবিক ঘটনাও ঘটতো.. আর সেগুলো সবই ঘটতো রাত বারোটার পরে! সারা ঘরে দোলনচাঁপা ফুলে ভর্তি হয়ে যেত.. আসলে মেঘা দিদিমণি যে ভীষণ ভালোবাসতেন দোলনচাঁপা ফুল। ছাদের সব গাছ গুলো মারা গেলেও একমাত্র ওই দোলনচাঁপা গাছটাই বেঁচে ছিলো। সেটা দেখে অনেকেই ভয় পেতেন, আবার অনেকেই দোলনচাঁপা গাছটা থেকে ফুল তুলতে যেতেন, কিন্তু গাছে হাত দেওয়ার সাথেসাথেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়তেন। বিভিন্ন রকম অস্বাভাবিক ঘটনার সম্মুখীন হতে হতো তাদের। আর সেই কারণেই এই বাড়িতে মেঘা দিদিমনির মৃত্যুর পর আর কেউই থাকতে পারেননি, যতজন স্যার বা ম্যাডাম এই বাড়িতে থাকতে এসেছিলেন সবাইকেই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল! তাই ভয়ে তারা কেউই আর এখানে থাকেননি.. সবাই ট্রানস্ফার নিয়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলেন। একমাত্র কিঙ্কিণী ম্যাডামই এখানে এতদিন থাকতে পারলেন। আমি তো ওনার ঘরে দোলনচাঁপা ফুল দেখে বেশ অবাকই হয়েছিলাম। কিন্তু কিঙ্কিণী ম্যাডাম কিছু বলেননি বলে আমিও আর কিছু বলিনি ওনাকে। শুধু রাতে ওনাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিতাম, যাতে ওনারা খাবার খাওয়ার পরেই ঘুমিয়ে পড়েন, আর বাগানের কোন আওয়াজও যাতে ওনারা না শুনতে পান। আর কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলেও যাতে আপনারা ঘুমিয়ে থাকেন, বুঝতে না পারেন। এতে আমার কোনো দোষ নেই বিশ্বাস করুন.. আর ওই সমাজবিরোধী লোক গুলোও আমাকে বলেছিলো যে, এরপর এই বাড়িতে যেই আসুক কেন তারা যেন বাগানের দিকে ভুলেও না যায়! গেলে তার জীবন সংশয় হতে পারে। সেই কারণেই আমি ওনাদের খাবারে রাতে ঘুমের ওষুধ দিতাম… আমি এত কিছু ভাবিনি বিশ্বাস করুন কুশল বাবু.. আপনারা চাইলে আমাকে পুলিশে দিতেই পারেন.. আসলে আমার ঘরেও একটা দশ বছরের বাচ্চা আছে, আমার ছেলে.. আমাকে ওরা হুমকিও দিয়েছিলো যাতে আমি সৌহার্দ্য দাদাবাবুর মতো আর কারোর পাশে না থাকি.. তাহলে সৌহার্দ্য দাদাবাবুর মতো আমাকে আর আমার ছেলে আর স্ত্রীকেও ওরা মেরে ফেলবে! আমি আমার ছেলেটাকে হারাতে চাইনা কুশল বাবু… নিজের ছেলে আর স্ত্রীর মৃত্যু নিজের চোখের সামনে কী করে দেখবো বলুন তো কিঙ্কিণী ম্যাডাম? দয়া করে আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দিন…

কুশলের হাত ধরে নিজের অপরাধ স্বীকার করে কান্নায় ভেঙে পড়লেন দুলাল বাবু। কুশল দুলাল বাবুকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-দয়া করে আপনি কাঁদবেন না.. আপনার কোনো চিন্তা নেই দুলাল বাবু.. আমি বা কিঙ্কিণী কেউই আপনার নামে কোনো অভিযোগ করবোনা… আপনি একদম নিশ্চিন্তে থাকুন!
-হ্যাঁ দুলাল বাবু, কুশ ঠিকই বলেছে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন.. আমারা কাউকে কিচ্ছু বলবোনা… আপনি প্লিজ আমাদেরকে সৌহার্দ্য বাবুর কাছে নিয়ে চলুন..
-কিন্তু দাদাবাবু যে এই গ্রামে নেই কিঙ্কিণী ম্যাডাম.. উনি তো কলকাতায় আছেন.. কাল সকালের আগে তো ট্রেন চলবেনা..

কলকাতায় থাকে শুনে কুশল বললো,

-আমি তো গাড়ি এনেছি.. আমার গাড়িতেই চলুন.. আমাদের এখনই বেরিয়ে যাওয়া ভালো.. তাহলে সকাল হওয়ার আগেই আমরা ওখানে পৌঁছে যেতে পারবো!
-হ্যাঁ, সেটাই বরং ভালো হবে! আপনি বরং আপনার বাড়িতে ফোন করে বলে দিন যে, আজ রাতে আপনি বাড়ি ফিরতে পারবেন না..

সেই মতোই দুলালবাবু বাড়িতে ওনার স্ত্রীকে ফোন করে জানিয়ে দেওয়ার পরেই, কিঙ্কিণী, কুশল আর কোকো দুলালবাবুর সাথে রওনা হলেন কলকাতায় সৌহার্দ্যের কাছে। প্রায় তিন-চার ঘন্টা ড্রাইভ করার পর ওরা পৌঁছালো সৌহার্দ্যের বাড়িতে। গাড়িতে আসতে আসতেই সৌহার্দ্যের বাড়িতে ফোন করে দিয়েছিলেন দুলালবাবু। ওখানে গাড়ি থেকে নামার পরেই একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক ওদেরকে সৌহার্দ্যের ঘরে নিয়ে গেলেন। ওরা ঘরে ঢুকে দেখলো সৌহার্দ্য বিছানার এক কোণায় কোণঠাসা হয়ে বসে কী একটা করছে। দুলালবাবু ডাকলেন,

-দাদাবাবু..?
-কে? কে?!
-আমি দাদাবাবু.. কেমন আছেন আপনি?
-ওহ্ দুলালবাবু আপনি? আসুন আসুন! আমি খুব ভালো আছি.. আপনি কেমন আছেন?
-ভালো আছি দাদাবাবু..
-আপনি বসুন দুলাল বাবু! আমি মেঘাকে ডাকছি.. মেঘা শুনছো..? এসে দেখো কে এসেছেন! তাড়াতাড়ি এসো..
-আপনি এটা কী করছেন দাদাবাবু?
-দেখুননা দুলালবাবু! আমার মেয়েটা কী দুষ্টুই না হয়েছে! আর ওই যে আপনার মেঘা দিদিমণি রান্না করছেন! আর মেয়ের দোল দেওয়ার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছেন! জানেন দুলাল বাবু? মেঘার মতো, মেঘার মেয়েও আমাকে ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারেনা!

কথাটা বলার পরেই আবারও নিজের মনে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে দোল দিতে শুরু করলো সৌহার্দ্য। দরজার বাইরে কিঙ্কিণী আর কুশল দাঁড়িয়ে ছিলো। ধীরে ধীরে ঘরের ভিতরে ঢুকলো ওরা। কিঙ্কিণী বললো,

-দুলাল বাবু, সৌহার্দ্য বাবু কী..
-হ্যাঁ কিঙ্কিণী ম্যাডাম.. দুলালবাবু বেঁচে আছেন ঠিকই, কিন্তু মরে গিয়েও বেঁচে আছেন.. ওই গুন্ডা গুলো দাদাবাবুর মাথায় আঘাত করায় দাদাবাবুর মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে কিঙ্কিণী ম্যাডাম.. উনি মনে করেন মেঘা দিদিমণি বেঁচে আছেন, তাই উনি মেঘা দিদিমণি আর ওনার মেয়েকে কল্পনায় দেখেন… উনি মনে করেন, ওনাদের একটা মেয়েও হয়েছে..

দুলাল বাবুর কথাটা শুনে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো কিঙ্কিণী। তারপর কান্না জড়ানো গলাতেই চেঁচিয়ে উঠে বললো,

-এসব কী বলছেন আপনি দুলাল বাবু?! উনি এইভাবে? এত কষ্টে? আমি ওনাদের যে ছবি দেখেছিলাম, তাতে তো কত সুন্দর ছিলেন উনি.. কিন্তু এখন ওনার চেহারার কী অবস্থা হয়েছে? ওহ্ মাই গড!

কিঙ্কিণীকে এত জোরে কথা বলতে দেখে সৌহার্দ্য ওদের কাছে এগিয়ে এসে নিজের মুখের কাছে একটা আঙুল নিয়ে গিয়ে বললো,

-আস্তে.. আস্তে কথা বলুন আপনারা..! দেখছেন না? আমার মেয়েটা ঘুমাচ্ছে! এত জোরে কথা বললে তো আমার মেয়েটা উঠে পড়বে!

সৌহার্দ্যকে এমন উত্তেজিত হয়ে পাগলামি করতে দেখতে আরও জোরে কেঁদে উঠলো কিঙ্কিণী। ওকে কাঁদতে দেখে সৌহার্দ্য উত্তেজিত হয়ে বললো,

-আপনাকে বলছিনা! আমার মেয়ে ঘুমাচ্ছে! ও জেগে যাবে তোহ! আর ও এখন জেগে গেলে মেঘার কাজ করতে অসুবিধা হবে তো নাকি!

সৌহার্দ্যকে রেগে যেতে দেখে কুশল বললো,

-আহ্ কিঙ্কিণী! উনি তো ঠিকই বলেছেন, দেখছোনা? ওনার মেয়ে তো ঘুমাচ্ছে! চুপ করো তুমি…

কুশলের ধমকে একেবারে চুপ করে গেলো কিঙ্কিণী। দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে নিয়ে নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলো ও। কিঙ্কিণীকে ওভাবে কাঁদতে দেখে সৌহার্দ্য কুশলকে বললো,

-একী? উনি এভাবে কাঁদছেন কেন? কী হয়েছে ওনার? ওনার কী মন খারাপ? কেউ বকেছে ওনাকে? ওনাকে দয়া করে চুপ করতে বলুন! আমার ভালোলাগেনা কেউ কাঁদলে!

সৌহার্দ্যের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারলোনা কুশল। মাথাটা নামিয়ে নিলো শুধু নিজের চোখের জল লুকানোর জন্য। কুশলের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সৌহার্দ্য এগিয়ে গেলো দুলাল বাবুর দিকে। তারপর ওনাকে প্রশ্ন করলেন,

-ওনারা কে দুলালবাবু?! কে ওনারা? আর উনি ওই ভাবে কাঁদছিলেন কেন? কী হয়েছে ওনার?
-ওনারা মেঘা দিদিমণির কলিগ দাদাবাবু.. ওনারা আপনার সাথে দেখা করতে এসেছেন..
-কিন্তু ওনারা তো মেঘার কলিগ, তাহলে আমার সাথে দেখা করে কী করবেন? দাঁড়ান আমি মেঘাকে ডেকে দিচ্ছি..

তারপর দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে আবারও বলে উঠলো,

-ওই তো! ওইতো মেঘা এসেগেছো! এই দেখো মেঘা কারা এসেছেন! তোমার দুজন কলিগ এসেছেন.. ওই ম্যাডামের মনে হয় তোমার জন্য মন খারাপ লাগছিলো, তাই জন্যই উনি কাঁদছিলেন.. নাও তোমরা কথা বলো.. আমি বরং মেয়েকে দেখছি…

কথাটা বলেই আবারও এগিয়ে গেলো বিছানার এক কোণের দিকে। তারপর নিজের মনেই শূন্যে হাত নাড়াতে শুরু করলো দোল দেওয়ার মতো করে…

ক্রমশ…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here