শব্দহীন_অনুভূতি,পর্ব_১৫,১৬
পলি_আনান
পর্ব_১৫
দুপুরের কিছু আগ মূহুর্তে বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় মাইশা।কিন্তু যাওয়ার আগে সবার সাথে দেখা হলেও দেখা হয়নি নোমানের সাথে।
নিয়াজ মাইশাকে দেখেই ভড়কে যায়।কথা বলার স্টাইল আচার-আচরণ পোশাকে একদম ভিন্ন মাত্রর একটি মেয়ে।তানিয়ার কাছ থেকে জানতে পারে এই মেয়ে সদূর লন্ডন থেকে নোমানের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখে আর নোমান কি না মেয়েটাকে এত কাছে পেয়েও পায়ে ঠেলে দূর করে দিচ্ছে। বিষয়টি হাস্যকর নিয়াজের কাছে।সে ঘাড় ঘুরিয়ে দোতালার রেলিঙের দিকে তাকালো। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে শাড়ি পরিধানকারী একটি মেয়ে। যার চোখ, মুখ কিছুই দেখা যাচ্ছে না।মেয়েটি হৃদিতা।
হৃদিতা আরাফের ভয়ে নিচে নামতেও পারছে না। তাই উপর থেকে দাঁড়িয়ে সবটা পরখ করছে।নিয়াজ কি ভেবে যেন সরে গেলো কিচেনের দিকটায় আড়ালে সরে গেলো।নিয়াজকে আড়াল হতে দেখেই হৃদিতা মুখের দিকটায় শাড়িটা সরিয়ে নেয়।আর প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়। এতোক্ষণ তার কাছে দম বন্ধ লাগছিলো। কিন্তু বেচারি যানে না তার দিকে দুটো চোখ বিস্ময় চাহনীতে তাকিয়ে আছে।নিয়াজ কিচেন থেকেই হৃদিতার মুখের একপাশটা দেখলো।বেগুনি রঙের শাড়িটায় তাকে যেন নিয়াজের কাছে একদম আবেদনময়ী লাগছে।মুখ দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে সে বলে”উফফফ পুরাই আগুন!
আরাফকে এগিয়ে আসতে দেখে আবারো কিচেনের দিকাটায় আড়াল হয় সে।হৃদিতাও তার রুমে ডুকে দরজা আটকে দেয়।
বাড়ির সবার আড়াল হয়ে নোমানকে ফোন করলো আরাফ।পার্টির কাজে ইদানীং নোমান একটু বেশি ব্যস্ত থাকে,
– হ্যালো নোমান ভাই,
– হ্যা বল।
– মাইশা তো চলে গেছে একটু আগে।
আরাফের কথা শুনে একবার ঢোক গিলে নোমান।বুকের ভেতরটায় হঠাৎ করে যেন তান্ডব হচ্ছে। সারা শরীরে অস্থিরতা যেন বৃদ্ধি পেয়েছে।চোখের সামনে থাকা সব এলোমেলো লাগছে,কিন্তু কেন এমন হচ্ছে নোমান নিজেও যানে না।
– তো আমার কি তাতে?সে গেছে যাক।
– এইভাবে তাকে ফিরিয়ে দিবি দাভাই।মেয়েটার ভালোবাসা কিন্তু মিথ্যা নয়।
আরাফের ব্যাকুল কন্ঠে চুপ থাকে নোমান। কিছু একটা ভেবে আরাফকে বলে,
– মেয়েটা কোথায় এখন?
– বাড়ির গাড়ি দিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেছে।
– ওকে আমি রাখছি।
নোমান ফোন রাখতেই আরাফের ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি।
নোমানের সাথে কথা বলা শেষ করে পকেটে ফোন রাখতেই আবারো বেজে উঠে ফোন।স্কিনের দিকে তাকিয়ে প্রভার নামটা দেখতেই বিরক্তে চোখ কুঞ্চিত করে।
– হ্যা বলো,
– কেমন আছো তুমি?
– হুম ভালো।
– রেগে আছো,সেদিনের জন্য?
– না রাগবো কেন।কি প্রয়োজনে ফোন করেছো সেটা বলো প্লিজ, আমার একটু কাজ আছে।
– নেক্সট মান্থে বিডিতে আসবো.।
-হোয়াট?
আরাফের ধমকে চমকে যায় প্রভা।দূর থেকে নিয়াজ আরাফের হঠাৎ রেগে যাওয়াটাকে স্বাভাবিক চোখে দেখছে না।ফ্রিজ থেকে ক্যান হাতে নিয়ে তার মধ্যে কয়েক চুমুক দিয়ে স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে।
– আমি বুঝলাম না আরাফ,আমার বিডিতে আসার নিউজটা শুনলেই তুমি খেপে যাও কেন?
– লিসেন প্রভা,তুমি এই মূহুর্তে বিডিতে আসবে না।না মানে না।
– তুমি এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছো বলে মনে হচ্ছে , সমস্যা কি তোমার?
– আমার সমস্যা তোকে নিয়ে, প্লিজ আসবি না তুই বিডিতে,যদি ও বা এসেই পড়িস তবে আমাকে পাবি না, এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশন।
আরাফ ফোন হাতে নিয়ে হনহন করে উপরে তার রুমে চলে যায়।রুমে গিয়েই বিছানার উপরে মোবাইলটা ছুড়ে মারে।আবারো ওয়াশরুমে ডুকে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিতে থাকে।
এদিকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি ঠিক করছিল হৃদিতা কিন্তু আরাফের হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারনটা না বুঝতে পেরে কয়েক সেকেন্ড নিরবদর্শকের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।বিছানার দিকে তাকাতেই ফোনটা চোখে পড়ে এখনো কেউ কলে আছে।আর অপর পাশের ব্যক্তিটি অনবরত কথা বলেই যাচ্ছে।হৃদিতা ফোনটা হাতে তুলে নেয়, স্কিনে ভেসে উঠে একটি মেয়ের নাম “Prova”। কানের কাছে ফোনটি ধরতেই হৃদিতার সব সাজানো সপ্ন গুলো যেন একে একে ভেঙ্গে যেতে লাগলো।পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেছে তার। আচমকা মাথাটা ঘুরে উঠতেই ধপ করে বিছানায় বসে যায়।আর নিশ্চুপ ভাবে শুনতে থাকে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটির কথা,
– আরাফ তুমি এমন করছো কেন হঠাৎ ।দেখো আর মাত্র এক দুই বছর পর আমাদের বিয়ে।তুমি আমাকে ইগ্নোর করা শুরু করলে কেন?আমি আসবো,হ্যা আমি আসবো, আমি বিডিতে সামনের সাপ্তাহেই আসবো। প্রয়োজনে সেদিনা আমাদের বিয়ে হবে।তোমার অবহেলা আমি আর সহ্য করতে পারছি না।নোমান ভাইকে বিষয়টা জানাতে গিয়েও সেদিন জানালাম না একমাত্র ভাই তোমার উপর ক্ষুব্ধ হবে দেখে। কিন্তু আর না আমি আসছি,!
প্রভা দ্রুত ফোনটা কেটে দিল। হৃদিতা কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ থেকে ফোনটা আগের জায়গায় রেখে দিলো।দুচোখের পানি টলমল করছে তার।চোখ বন্ধ করলেই দু-গাল বেয়ে ঝরে যাবে সে পানি।গত রাতে আরাফের কথা মনে পড়তেই বুকের ভেতরটায় চাপা কষ্টের অনুভব হয়।কাল আরাফের বুকে মাথা গুজে যে ঘুমটা দিয়েছিল তা যেন ছিল কত জনমের শান্তির ঘুম।
ছিটকিনির শব্দে নিজেকে ধাতস্ত করে নেয় হৃদিতা।দু হাতের তালু দিয়ে চোখ পরিষ্কার করে আরাফের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখে,
– কি রে রেগে আছিস কেন হঠাৎ?
– কিছু না।
আরাফ বারান্দায় চলে যায়। হৃদিতাও শান্ত হয়ে আগের জায়গায় বসে থাকে।কিছুক্ষণ পর আরাফ রুমে এলে হৃদিতা গম্ভীর কন্ঠে বলে,
– প্রভা কে আরাফ?
হৃদিতার মুখে ‘প্রভা’ নামটি শুনেই বিষম খেলো আরাফ।
– ক..কই কেউ না। কেউ না প্রভা।
হৃদিতা একটু হাসলো। আরাফের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রাখতেই আরাফ তার দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।মনের ভেতরটায় বারবার অপরাধ বোধটা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
– আমি তোর বন্ধু হয়ে নয় বরং স্ত্রী হয়ে সত্যিটা জানতে চাইছি।আশা করি স্ত্রী হিসেবে তোর সব বিষয়ে অবগত থাকা আমার কর্ত্যবর মধ্যেই পরে। আর মিথ্যা বলিস না প্লিজ!তুই ফোন না কেটেই ওয়াশরুমে গেছিলি যা বোঝার আমি বুঝে নিয়েছি কিন্তু আমি তোর মুখ থেকে জানতে চাই।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
আরাফ বিছানার এক কোনায় বসে যায়।হাটুতে দুই হাত রেখে মাথা ঠুকে, শুরু থেকে শেষ সবটা বলতে থাকে হৃদিতাকে।বিয়ের কারন,নোমানকে রাজী করানো,প্রভার সাথে পরিচয়।সবটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে হৃদিতা।দুচোখ ফেঁটে শুধু বার বার অশ্রু কণারা গড়িয়ে পড়তে চায়।কিন্তু না এই মূহুর্তে চোখের পানিকে আশকারা দেওয়া যাবে না।নিজেকে করতে হবে শক্ত দৃঢ়।আরাফের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না সে। তাই অন্যদিকে তাকিয়ে নিজেকে আড়াল করে মনে মনে সিধান্ত নিচ্ছে সে।
যদি একবার পিছু ফিরে তাকিয়ে আরাফকে দেখতো তবে তার চোখে পড়তো , দু গাল আর নাক বেয়ে গড়িয়ে পড়া নেত্রবারি গুলো আরাফের হাটুটা ভিজিয়ে দিয়েছে।দ্রুত টিস্যু নিয়ে দুচোখ মুছে নেয় আরাফ।হৃদিতাকে পাওয়া তার সাধ্যের বাইরে ভাবলেই দুনিয়া যেন আধাঁর হয়ে যায় ।
– আরাফ সবটাই বুঝলাম।আমার দায়িত্ব নিয়েছিস ভালো কথা। তবে এবার আমাকেও আমার দায়িত্ব নিতে হবে।আমি আগের টিউশনি গুলোতে আবার জয়েন হবো।হঠাৎ প্রভা দেশে চলে এলে আমাকে এমনিতেও সরে যেতে হবে তাই আমার ভিত্ত আগে থেকেই আমাকে শক্ত করতে হবে আশা করি তুই নিষেধ করবি না আমায়।
– এটা হয় না। তোকে আমি বাইরে খেটে খেটে টিউশনি করতে দেবো না।আমি যতদিন আছি ততদিন তুই আমার আন্ডারেই থাকবি।
আরাফের দৃঢ় কথায় অম্লান হাসে হৃদিতা।
– আরাফ এনায়েন, এখনো বাবার হোটেলে দিন পার করছো তাই হয়তো দুনিয়া বুঝতে শেখনি।আমার মতো লাথি উষ্টা খেয়ে বড় হলে তবেই তোমার দুনিয়া চালচলন বুঝতে শিখতে।আমি আমার কাজে দৃঢ় সংকল্প করলাম।
হৃদিতা চলে যায় রুমের বাইরে। আরাফ এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।সত্যিটা তো সামনে আগেই আসার কথা ছিল তাহলে এখন কেন ভেঙ্গে পড়ছে সে।
– তুই আমার নীরদ ভালোবাসা।যাকে দেখা যায় ছুঁয়ে দেওয়া যায় না।ছুঁতে গেলেই কান্না হয়ে আছঁড়ে পড়িস আমার বুকে।এই মন না মতির বালকটার তুই অবর্ণীয় রানী!
হৃদিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কথাটি বলেই থামলো আরাফ।দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আবারো ধুপ করে বিছানায় বসে যায়।
খুশি আজ যেন মাইশার আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে গেছে।নিরিবিলি শুনসান রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে গাড়ি জানলা দিয়ে মাথা বের করে প্রশান্তির শ্বাস নিচ্ছে। হুট হাট গেয়ে উঠছে এক দুই লাইন গান।আর তার এমন বেমালুম কান্ড দেখে অদ্ভুত চাহনীতে তাকিয়ে আছে ড্রাইভার।
একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাটা কি করে ভুলবে সে।নোমানের চাহনী, ধমক, সবটা দেখে আরো একবার ফিদা মাইশা।
কিছুক্ষন আগে নিরিবিলি পিচ ঢালা রাস্তায় এগিয়ে চলছিল মাইশার গাড়ি তখবি তাদের গাড়ির সামনে দুইটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। বিষয়টি হঠাৎ হওয়ায় মাইশা চমকে যায়।পরবর্তীতে সেই গাড়ি থেকে মাক্স সানগ্লাস দিয়ে নিজেকে আড়াল করে বেরিয়ে আসে নোমান।
মাইশাকে আবারো এনায়েত মঞ্জিলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।কিন্তু প্রথমে বাদ সাধলেও পরবর্তীতে ঠিকি আবার এনায়েত বাড়ির উদ্দেশ্য গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়।
মাইশা ঠোঁটের কোনে ফুটে আছে তৃপ্তিত হাসি।যেন না পাওয়া কোন মূহুর্ত সে খুব সহজেই জয় করে নিয়েছে।
কেটে যায় দুইদিন।হৃদিতা আগের টিউশনি গুলোতে আবারো জয়েন করেছে।বাড়ির কেউ বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেনা।আরাফের প্রাণ প্রিয় জেঠিমা হুমায়রাও অনেক বার নিষেধ করে হৃদিতা যেন বাইরে টিউশন করতে না যায়।কিন্তু আরাফ হৃদিতাকে বারণ করতে পারলোনা।সে ভালো করেই যানে এটা হৃদিতাত জেদ থেকেই করছে।সেদিনের পর আরাফ আর হৃদিতার সম্পর্ক সম্পূর্ণ পালটে গেছে।আগের মতো প্রয়োজন ছাড়া একজন আরেকজনের সাথে কথা নেই।দুজনের মাঝেই কেমন যেন পালাই পালাই ভাব।
আজ রেজাল্ট প্রকাশ হবে আরাফ আর হৃদিতার।হৃদিতার নিজের উপর কনফিডেন্স আছে।সে নিজে পাশ করে এলেও আরাফের জন্য তার মনটা ভীষণ খচখচ করছে কে জানে, কি লিখে এসেছে খাতায়।
লাইব্রেরিতে একা উৎকন্ঠা মনে বসে আছে সে।আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। সবাই রেজাল্ট দেখতে গেছে। বইয়ের তাক থেকে ফিলোসোফির একটা বই নিয়ে দু-চার পাতা উল্টাতেই হঠাৎ করে এমন একটা ঘটনা ঘটে যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে।
#চলবে….
🌼পর্বটা কেমন হয়েছে যানাবেন….
#শব্দহীন_অনুভূতি
#পলি_আনান
#পর্ব_১৬
লাইব্রেরির বইয়ের তাকের সামনে হতভম্ব হয়ে বসে আছে হৃদিতা।তার সামনেই স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে আরাফ,শাকীল,নাফিসা লিবান।বিরক্তে মুখ কুচকে সবাইকে বোকতে বোকতে উঠতে নিলেই হাটুর ব্যাথ্যা আবারো পা মুড়িয়ে বসে যায় হৃদিতা।কালো বোরকাটায় বালির আস্তরণ পরে আছে।নাফিসা পেছন থেকে আরাফকে ধাক্কা দিলে তার হুশ ফিরে আসে
তড়িঘড়ি করে হৃদিতাকে উঠাতে গেলেই হাত ঝাঁকরা দিয়ে সরিয়ে দেয়।কিন্তু তবুও আরাফ আবারো হাত বাড়িয়ে টেনে ধরতে গেলেই ক্ষেপে যায় হৃদিতা।
– অসভ্য ছেলে একদম ছুঁবি না আমায়।
হৃদিতার রাগ বুঝতে পেরে আরাফকে সরিয়ে নাফিসা এগিয়ে আসে।নাফিসার হাত ধরেই দ্রুত চেয়ারে বসে বোরকা পরিষ্কার করতে থাকে সে।
কিছুক্ষণ আগে হৃদিতা যখন ফিলোসোফি বইটাকে উলটে পালটে দেখছিল তখনি হঠাৎ করে কেউ এসে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে।টাল সামলাতে না পেরে বিকট শব্দে টেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে সেঁটে যায় হৃদিতা।তখনি আরাফের উপর ঝাপিয়ে পড়ে শাকীল।ঝোক সামলাতে না পেরে হৃদিতা ছিটকে পরে তাকের সামনে।
এদিকে পেছন থেকে নাফিসা আর লিবান বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছে।সব যেন তাদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
– তোমার লাগে নি তো?
নাফিসার প্রশ্নে কিড়মিড় করে আরাফের দিকে তাকায় হৃদিতা।ব্যাগ থেকে পানি নিয়ে কয়েক ঢোক গিলে চুপচাপ বসে থাকে।আরাফ তার পাশে চেয়ার টেনে বসে হৃদিতার দুই হাত টেনে শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে।
– প্লিজ প্লিজ প্লিজ! মাফ কর আমায়।আমি বুঝতে পারিনি।যত দোষ এই শাকীল্লার।তাকে কে বলেছিল আমার উপর হামলে পড়তে।
আরাফের কথা শুনে নাফিসা তীর্যক দৃষ্টিতে তাকায় শাকীলের দিকে।কিন্তু হৃদিতা এখনো চুপচাপ বসে আছে।ভেতরটায় রাগের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে।
– বিশ্বাস কর হৃদিতা ,পাশ করে আমি এতটাই এক্সাইটেড ছিলাম যে কে বউ আর কে বন্ধু আমি ভুলেই গেলাম।বন্ধুদের উপর তো হামলে পড়া যায় কিন্তু বউ, মেয়ে মানুষ একটু আস্তে-ধীরে জড়িয়ে ধরা প্রয়োজন ছিল সরি রে,
– বউ?
আরাফের কথা শেষ না হতেই লিবানের “বউ ” বলে চিৎকার দেওয়ার বিষয়টি সবার মাথার উপর দিয়ে গেলো।আরাফ দাত কিড়মিড় করে লিবানের দিকে তাকায়।
– সমস্যা কি চিল্লাচ্ছিস কেন?
– ত..তুই আরেকজনের বউকে জড়িয়ে ধরে আবার বউ বলছিস!হোয়াটিস দিস আরাফ?
– আমার বউ আমি জড়িয়ে ধরবো নাকি ল্যাং মেরে ফেলে দেবো তা আমার ইচ্ছা।
– তোর বউ মানে?
লিবান আশ্চর্যের শেষ সীমানায় যেন পৌছে গেছে।আরাফের বিরক্তির কারন বুঝতে পেরে নাফিসা লিবানের হাত ধরে আড়ালে নিয়ে যায়।
– লিবান হৃদিতা আরাফের বিবাহিত স্ত্রী।
– স্ত্রী মানে?হৃদিতা আমাকে বলেছে তার বর দেশের বাইরে থাকে , কিন্তু আরফা, মানে কি আমাকে বুঝা তুই!
নাফিসা সবটা বুঝিয়ে বলে লিবানকে।লিবান তার ডাগর ডাগর চোখ দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আরাফের সামনে দাঁড়িয়ে অবাক সুরে বলে,
– মানে বিয়ে শাদী করে নিলি,আর আমাকে একটু জানালিও না। তোর কি বন্ধু মনে হয় না আমায়?
– যদি হৃদিতার দিকে নজর না দিতি তবে তোকেও বিয়ের বিষয়টা জানানো যেতো।আরেকটা কথা।এই লাইব্রেরির বাইরে যদি আমাদের বিয়ের কথাটা লিক হয় তবে তোর মেইন পয়েন্ট কেটে মাঠে ঝুলিয়ে রাখবো মাইন্ড ইট।
আরাফের কথায় নাক দিয়ে উদ্ভট শব্দ করে হাসতে থাকে শাকীল।শাকীলের হাসিতে রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় লিবান।হৃদিতা উঠতে নিলেই আরাফ হাত ধরে আগের জায়গায় বসিয়ে দেয়।
– সরি বলেছিত আমি!দেখি তোর কোথায় লেগেছে দেখা আমায়।
– হাত ছাড়। বাড়ি যাবো আমি।
– ওকে আমিও যাবো এবার চল..
হৃদিতা নিজের হাত ছাড়াতে নিলেও আরাফ ঠিকি শক্ত করে ধরে রাখলো।তাদের বন্ধন দেখে শাকীলের পেটে একটি ধাক্কা দিয়ে নাফিসা বলে,
– কোন দিন এইভাবে আগলে রেখেছিস?হাতে হাত রেখেছিস,তোর সাথে প্রেম করে আমার জীবন বৃথা।
– আরাফের মতো চল বিয়ে করে ফেলি তখন দেখিস, এই হাত আর ছাড়বোনা।
– ইহহহ বিয়ে করবে,দুই টাকা রুজি করিস?খাওয়াবি কি আমাকে?
– কেন তুই কি ছোট বাচ্চা নাকি যে পিডার ধরে রেখে খাওয়াতে হবে আমায়?
শাকীলের যুক্তিহীন তর্কে বিরক্ত নাফিসা।
– আমি চললাম। তোর বকবক নিয়ে তুই থাক।
নাফিসা দ্রুত পা চালাতেই পেছন থেকে শাকীল তার হাত ছুঁয়ে দেয় শক্ত করে ডান হাতটা ধরে ওষ্ঠে হাত ছোঁয়ায়।
নাফিসা চমকে তাকালে শাকীল তাড়াতাড়ি দিয়ে বলে,
– এবার তো চল!
বিকেল শেষে সন্ধ্যার দিকটায় এনায়েত বাড়িতে রীতিমতো একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।পরিক্ষায় পাশ করার তাগিদে আরাফকে যে ফ্লাট দেওয়ার কথা ছিল।সে ফ্লাটটি দেওয়ার কথা প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা জহির।অনেক বার আকুতি করা শর্তেও তিনি কিছুতেই রাজি নয় আরাফকে ফ্লাটটা দিতে।রাগের মাথায় মুখে যা এসেছে তাই বলেছে সে। নিয়াজ, মায়মুনা, হুমায়রা তানিয়া কেউ তাকে শান্ত করতে পারেনি।অবশেষে নিজেকে আড়াল করে হৃদিতা এগিয়ে এলেও আরাফের মা মাহমুদা কাঠখোট্টা গলায় জানিয়ে দেন তার “এইসব তাদের পারিবারিক বিষয় আর পারিবারিক বিষয়ে হৃদিতা যেন না আসে ”
সব কিছুর সাথে সাথে হৃদিতার অপমানটা সহ্য করতে পারলোনা আরাফ।এদিকে সুযোগ বুঝে নিয়াজ হৃদিতার দিকে এক ঘোরে তাকিয়ে আছে।তা দেখে আরাফের রাগ আরো দিগুন বেড়ে যায়।নিচ তলা থেকে সবার সামনে ধমক দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দেয় তাকে।আরাফের আচরণে হৃদিতা ভড়কে যায়।মনে মনে অল্পস্বল্প রাগো জমা হয়। যার দরুনে দুচোখ টলমল করতে থাকে।ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে কাদঁতে থাকে।
– লিসেন,বাবা শেষ বারের মতো বলছি;আমার ফ্লাট আমায় ফিরিয়ে দেবে কি না?এন্সার মি!
– আমি আগেই বলেছি আরাফ ওই ফ্লাট তুমি পাবে না।না মানে না।আমার কথার খেলাফ আমি কখনোই করি না আশা করি তুমি যানো।
জহিরের কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু আরাফের রাগ দেখাতে দেরি হলোনা হাতের কাছে যা পেয়েছে ইচ্ছে মতো আছাড় মেরে ভেঙ্গেছে।রাগের নিমিত্তে দুচোখ লাল হয়ে আছে।চোখের পানিরা টলমল করছে।দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়।
জহির ছেলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের রুমে চলে যায়।তার পেছন পেছন এগিয়ে আসে মায়মুনা।ছেলের এমন রাগ তিনি বহুদিন পরে দেখেছে। আরাফের চালচলনের প্রতি তিনি বিরক্ত হলেও কখনো ছেলের অমর্যাদা করেন নি।বরং হাত খরচের টাকা জহির দিতে অস্বীকৃতি জানালেও তিনি স্বামীর আড়ালে ছেলের জন্য মোটা অংকের টাকা সরিয়ে রাখেন।অফিসের কাজে বাইরে থাকলেও টাইম টু টাইম ছেলের খোঁজ রাখেন।
– তুমি ছেলেটার সাথে বেইমানি করলে কেন?আরাফ এই ফ্লাটটি পাওয়ার আগেই কথা ছিল।
মায়মুনার কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় জহির।
– যা বোঝনা তা নিয়ে কথা বলবে না একদম।
– কি বুঝিনা আমি?ছেলেটার সাথে কাজটা তুমি মোটেও ঠিক করো নি.
– আরাফ যদি অবিবাহিত হতো তবে আমি কোন বিধিনিষেধ ছাড়াই ওই ফ্লাট তাকে দিয়ে দিতাম কিন্তু সে এখন বিবাহিত বুঝতে পারছো তুমি?বউ নিয়ে একবার যদি ওই ফ্লাটে উঠে নির্ঘাত আর পরিবারের কাছে ফিরে আসবে না।ওখানেই সংসার শুরু করে দেবে।আর আমার ছেলের সাথে এই মেয়েকে সংসার করতে আমি কিছুতেই দেবো না।
– কি বলছো তুমি এইসব।যত যাই হোক ছেলেটা নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে আর আমরা কি না!
– তার পছন্দ হলেই হবে না আমাদে রো পছন্দ আছে।নোমান কি বুঝে এই মেয়েকে বিয়ে করতে সম্মোতি জানালো আমি বুঝি না দূর!ছেলের জীবনটা নিয়ে লুডু খেলছে সবাই।খবরদার তুমি ছেলেকে ভুলেও আশকারা দেবে না।
জহির আর মায়মুনা মাঝে বেশ কিছুক্ষণ আলাপচারিতা হয়।তাদের একটাই হতাশা আরাফের ভবিষ্যত!
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
রাগের মাথায় রুম থেকে আর বের হয়নি হৃদিতা।বেশ অনেকক্ষন কান্নার ফলে দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসে।চোখ পীট পীট করে খুলে যখন দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায় তখন সারা শরীর তড়িৎগতিতে ঝলকানি দিয়ে উঠে।ঘড়িতে রাতের দুইটার শেষ দিকে।
দ্রুত চমকে এদিক থেকে সেদিক তাকিয়ে আরাফকে খুঁজতে থাকে কিন্তু আরাফ রুমে নেই।মোবাইলটা হাতে তুলে চেক করতে আরাফের কোন মিডস কল, মেসেজ চোখে পড়ে নি।মানে কি আরাফ কোথায়?
দ্রুত গায়ে ওড়না জড়িয়ে বারন্দার দরজা খুলে উঁকি ঝুঁকি মারে।রাতের আকাশটা ঘোর অন্ধার হয়ে আছে।মৃদুমন্দ বাতাসে সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে।আবারো দরজাটা আটকে দিয়ে আরাফের নাম্বারে কল করে। কিন্তু না আরাফ ফোনটা ধরলো না।এবার বেশ রাগ লাগে হৃদিতার তবে মনে মনে ক্রমশ ভয়ের সঞ্চার হচ্ছে।আরাফের বাকি বন্ধুদের একে একে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয় কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করছে না।সময় এগিয়ে যাচ্ছে, ঘড়ির কাটা তিনটা পচিঁশে ছুইছুই।
ভয়ে হাত পা অসাড় হয়ে কান্না গুলো দলা পাকিয়ে গলায় বাধঁছে।কি করবে সে এই মূহুর্তে? দরজা খুলে বাইরে উঁকি ঝুঁকি দিতেই নিয়াজের রুম চোখে পড়ে। রুমের দরজা অর্ধ খোলা,সেই রুম থেকে ভেসে আসছে সিগারেটের অসহ্যর গন্ধ।
পুরো বাড়ি সুনশান নিরিবিলি।নিচ তালায় ড্রিম লাইটের আলোতে সব আবছা লাগছে।নিয়াজ হঠাৎ করেই উচ্চ শব্দে মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বলে উঠে।তড়িৎ গতিতে রুমে ঢুকে।হৃদিতা দরজাটা বন্ধ করে দেয়।ভয়ে সারা শরীর কাপঁছে।এক পর্যায়ে আরাফের চিন্তায় মুখে হাতদিয়ে ফুফিঁয়ে কেঁদে উঠে।বেশ কিছুক্ষন আবারো পাগলের মতো ফোন করতে থাকে কিন্তু ফোন সুইস্টপ। হঠাৎ কেউ দরজায় ‘ধুম ধুম’ শব্দ করে।হৃদিতা বেশ কয়েকবার জানতে চায় দরজার বাইরে কে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু দরজার অপর প্রান্তের লোকটি ঠিক কে তা ভালো মতো ঠাহর করতে পারছে না হৃদিতা।লোকটা মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে কি যানি বলছে এবার বেশ ভয় লাগে তার।যদি নিয়াজ হয়,তখন কি করবে সে।দরজার শব্দ ক্রমশ বেড়েই চলছে।হৃদিতা এক হাতে একটি ফুলদানি নিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে অন্য হাত দিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলতেই আরাফকে চোখে পড়ে।
হৃদিতা দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে।
– এত রাতে কোথায় ছিলি তুই?
আরাফের কোন উওর না পেয়ে ঘুরে তাকায় হৃদিতা। আরাফের হেলদোল অবস্থা দেখে যা বোঝার বুঝে নিয়েছে সে আরাফ ড্রিংক করেছে।দ্রুত দরজা বন্ধ করে আরাফের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখে হৃদিতা।এতক্ষণ কান্নার ফলে চোখ গুলো ভিজে আছে। আরাফের অবস্থা দেখে আবারো দুচোখের পানি টলমল করতে দেখা যায়।হৃদিতার দিকে হেলেদুলে তাকাতেই আরাফ খেয়াল করে হৃদিতার চোখ গুলো ভেজা।নিশ্চই কান্না করছিল এই মেয়ে,
– তোর কি হয়েছে, কান্না করছিস কেন তুই?
হৃদিতা এখনো শক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে।আরাফের মুখের কথা গুলো বারবার গুলিয়ে যাচ্ছে।
– হৃদিতা কাদঁছিস কেন?বলনা এই মেয়ে কাদঁছিস কেন?
– তুই ড্রিংক করেছিস?
– হু একটু একটু, আজ বন্ধুদের পার্টি ছিল।মিস করি কি করে বল।
আরাফ হৃদিতার দিকে এক দুই পা এগিয়ে আসতেই পিছিয়ে যায় সে।
– খবরদার কাছে আসবি না। আমার বুমি আসছে তোর গায়ের গন্ধে ছিহহহ।
-তুই কাদঁছিস কেন আগে সেটা বল।
হৃদিতা কথা বাড়ালো না বিরক্ত হয়ে বিছানায় শোয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। তখনি আরাফ হাত টেনে ধরে তার দুইহাত দিয়ে হৃদিতার গাল দুটো আবব্ধ করে নেয়।
– কি হয়েছে কাদঁছিস কেন বলনা আমায়?কে বকেছে, নাকি মেরেছে বল আমায়।
– আরাফ ছাড় বলছি এইসব বেল্লিক গিরি আমার সাথে করবি না একদম।
আরাফ হৃদিতাকে ছাড়লোনা উলটো ধাক্কা মেরে হৃদিতাকে বিছানায় ফেলে তার পাশে সটান হয়ে শুয়ে যায়।কিন্তু তাতেও হাত দুটো ছাড়লো না।
– তোর মদের গন্ধে আমার বুমি আসছে আরাফ ছেড়ে দে প্লিজ!
আরাফ হৃদিতার হাত ছাড়লোনা বরং আঙুলে আঙুল জড়িয়ে হাতটা শক্ত করে ধরলো।অন্য হাত দিয়ে হৃদিতার ভেজা চোখ দুটো মুছে দিল।
– তোর চোখটা এখন বর্ষার বারিধারার মতো লাগছে।কাদঁছিস কেন বল আমায়?
– তোকে না পেয়ে কাদঁছিলাম।চিন্তা হচ্ছিলো এত রাতে বাড়ি ফিরলি না যে, তাই!
আরাফ ঠোঁট কামড়ে হাসে। বারবার ঢলে পড়তে গিয়েও হৃদিতার সামনে অটল থাকে।হঠাৎ করেই আরাফ থেমে যায় হৃদিতার চোখে চোখ রাখে। আরাফের পরিবর্তনে ভড়কে যায় হৃদিতা তবুও নিজেকে ধাতস্ত রাখে।আরাফ হৃদিতার হাতে তার অধঁর ছোয়ালো
– ভালোবাসিস আমায়?
আরাফের প্রশ্নে বিমূঢ় হয়ে যায় হৃদিতা।আরাফের চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা কথা বলার সাধ্যি তার নেই। তাই মাথা ঘুরাতেই আরাফ আবারো আরেক হাত দিলে তার মুখবিবর স্পর্শ করে।তার দিকে ফিরিয়ে ব্যাকুল কন্ঠে বলে,
– কিরে উওর দে!
হৃদিতা ঠোক গিললো নিজের আবেগকে নির্মূল করে দৃষ্টি সরিয়ে “না” বললো।তৎক্ষণাৎ দমে যায় আরাফ।হাতের বন্ধনী শিথিল হতেই হৃদিতা উঠে বসে অন্য দিকে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত করে নেয়। আরাফ হঠাৎ করেই লাফিয়ে হৃদিতার সামনে মেঝেতে বসে। হৃদিতার কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠে।হৃদিতা অবাক হলেও চুপচাপ তার কার্যকলাপ দেখতে থাকলো।
-আমার রিক্ত জীবনে তুই সিক্ত হয়ে এলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো?কিন্তু না তুই এলি তিক্ত মনে। যার আমার জন্য নেই কোন আকুলতা,নেই কোন আসক্তি যা আছে তা হলো অবজ্ঞা,আর মুষড়ানো কিছু কথা।
আরাফ থামলো তার কন্ঠ কাঁপছে।হৃদিতার কোল থেকে আবারো মাথা তুললো।হৃদিতার চোখে চোখ রেখে আবারো কোলে মাথা রেখে বিড়বিড় করে বলে,
– আমার নেশাবতী আমি তোমাতেই অনুরক্ত।তুমি কি হবে আমাতে সিক্ত?চলনা হারিয়ে যাই,
যাই নেশার দুনিয়ায় যেখানে বাঁধা প্রাপ্তির প্রয়াস থাকবে না।
আরাফ থেমে খিলখিল করে হাসতে থাকে। আরাফের কান্ডে হৃদিতা ঘেমে একাকার। আরাফের কান্ড গুলো সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। হুট করেই হৃদিতার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। মাতাল অবস্থায় নাকি সব সময় সত্যি কথা মুখ দিয়ে বের হয়! তবে তো আরাফের মুখ থেকে সব সত্যি কথা এক নিমিষেই বের করতে পারবে হৃদিতা। ঝোক বুঝে কোঁপটা মেরে বসে হৃদিতা।
– আরাফ তুই আমায় বিয়ে করলি কেন?
আরাফ চোখ তুলে তাকায় হৃদিতার দিকে।আরাফের চোখ একদম লাল হয়ে আছে যা দেখে হৃদিতা মুষড়ে যায়।
– তুই যেন আমার পাশে পাশে থাকিস সে জন্য!ওই লোকটাকে বিয়ে করলে তোকে পাওয়া আমার সাধ্যের বাইরে হয়ে যাবে।কিন্তু আমার যে তোকে চাই, তোকে চাই, তোকে চাই..
আরাফ থামলোনা “তোকে চাই” শব্দটা বার বার বিড়বিড় করে বলতে থাকলো।হৃদিতার বুকের ভেতরটায় প্রলয়ংকরী ঝড় যেনো দিগুন বেড়ে গেছে।
– তাহলে প্রভা?প্রভাকে তুই ভালোবাসিস না?
– উহুহ একটু ও না। আমি শুধু তোকে চাই।বিশ্বাস কর আমার কসম আমি তোকে ভালোবাসি কিন্তু কি করবো আমার হাত পা বাধাঁ।
-কেন?
– তোর উপর দূর্বল হলে নোমান ভাই তোর ক্ষতি করে দেবে, ক্ষতি করে দেবে নোমান ভাই,কিন্তু আমি তোর ক্ষতি দেখতে পারবো না।তুই তো আমার দূর্বলতা।
হৃদিতা শ্বাস ছাড়লো।আরাফ এখনো কাদঁছে হৃদিতার কোলে মাথা রেখেই কাদঁছে কিন্তু কেন কাঁদছে এই ছেলেটা।
– তুই আমায় ভালোবাসিস হৃদিতা?
আরাফের প্রশ্নের জবাব হৃদিতা দিতে পারলো না।চুপচাপ তাকিয়ে রইলো নিষ্পাপ মুখটার দিকে।হঠাৎ করেই আরাফ শব্দ করে কেঁদে উঠে আছড়ে পড়ে হৃদিতার কোলে,
– আমার অনেক সপ্নরে হৃদিতা, আমার অনেক সপ্ন,আমার তোকে চাই,তোর আদর চাই, তোকে নিয়ে বাচঁতে চাই,যদি কোন দিন দূরে সরে যেতে হয় তবে তোকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে হৃদিতা ‘দূরত্বে ভালোবাসা বাড়ে কিন্তু দূরত্বটাতো ঘুচে না।’ আমি তোর চোখে চোখ রেখে বাচঁতে চাই। তুই আমায় দূরে সরিয়ে দিস না প্লিজ!
আরাফের কথায় কঠিন মুখ করে বসে থাকে হৃদিতা তার গাল বেয়ে ঝরে যাচ্ছে নেত্রবারি।কিন্তু মুখ দিয়ে প্রকাশ করতে পারছে না।আরাফ মাথা তুলে তাকায় হৃদিতার দিকে।হৃদিতাকে কাদঁতে দেখেই আবারো রেগে যায়।
– এই মেয়ে কাদঁছিস কেন? কি হয়েছে বল,বলনা আমায় কি হয়েছে?
হৃদিতা এবার হেচঁকি তুলে কাদঁতে থাকে।আরাফের চোখে চোখ রেখে বলে,
– যানি না!
-তবে কি জানিস তুই?আচ্ছা ভালোবাসিস আমায়?
– যদি বলি বাসি! তখন কি করবি তুই?
হৃদিতার কথায় তড়িৎ গতিতে দাঁড়িয়ে যায় আরাফ।হৃদিতাকে এক টানে দাড় করিয়ে দুগাল স্পর্শ করে।
– কিচ্ছু করবো না আগলে রাখবো জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে।
– যদি তোর ভালোবাসা ফুরিয়ে যায় তখন?যদি ভুলে যাস?
হৃদিতার হেঁচকি তোলা প্রশ্নে মাতাল আরাফ হাঁসে।
ঢুলতে ঢুলতে হৃদিতার কপালে কপাল ঠেকাতে যায়। কিন্তু সূদীর্ঘ আরাফ ছোট্ট অনুচ্চ হৃদিতার কপালে কপাল রাখতে পারলো না।তাই পা মুড়িয়ে হৃদিতাকে কোলে তুলে কপালে কপাল ঠেকায়।হৃদিতার সন্দিহান দৃষ্টি দেখে বলে,
– যাকে কোন কারণ ছাড়া ভালোবাসা যায় তাকে ভুলে যাওয়া এত সোজা নয়!
তোকে ভালোবেসেছি কারণ ছাড়া এবার বল ভুলবো কি করে আমি!
আরাফের কথা শুনে হৃদিতাও হেসে দেয়।নেশার দরুনে হৃদিতাকে নিয়ে ঢুলে পড়ছে আরাফ।হৃদিতা অতীতের কথা ভুলে আরাফের চোখে চোখ রাখে।আরাফের নেশার ঘোরে থাকা রক্তিম লাল চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
– যদি তোর মাতাল চাহনি, আমার অতীতের ক্লেশ এক মূহুর্তের জন্য ভুলিয়ে দিতে পারে। তবে এই মাতাল চাহনি আমার জন্য শ্রেয় হোক!
চলবে….