বউ চুরি
সিজন-২
পর্ব ঃ ২
লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা
গ্রামের বেশ কয়েকজন লোক জড় হয়ে গেলো।
তাদের মধ্যে একজন এগিয়ে গেলো মুসকানের দিকে। নাকের কাছে হাত নিয়ে শ্বাস চলছে কিনা বুঝার চেষ্টা করলো। তারপর বলে ওঠলো- এই এই ধর ধর একে এখুনি হাসপাতালে নিতে হবে। বেঁচে আছে তবে জ্ঞান হারিয়েছে তারাতারি নিয়ে চল।
সবাই ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
ইমন রা গ্রামের এক থানায় এসে সেখানকার ওসির সাথে কথা বলছে। ঠিক সেই সময়ই ওসির ফোনে কল এলো স্থানীয় হাসপাতাল থেকে। আর যা ইনফরমেশন দিলো তা শুনে ওনি ইমনকে বললেন-
আমাদের এখুনি হাসপাতালে যেতে হবে। আপনারাও চলুন।
ইমনের বুক টা ধক করে ওঠলো হাসপাতালের কথা শুনে। দিপক ইমনের কাঁধে হাত রেখে বললো চলো।
হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে মুসকান কে। যারা মুসকান কে ভর্তি করিয়েছে তারা পুলিশকে সব কিছু খুলে বললো। একজন বললো- স্যার মেয়েটার বয়স অল্প। মনে হয় মেয়েটার সাথে খুব খারাপ কিছু হয়েছে।
ইমনের কান গরম হয়ে গেলো। সেই সাথে বুকে জমলো ভয়। তার মুসকান নয়তো,,,
মেয়েটা কোথায় আমাকে এখুনি নিয়ে চলুন সেখানে।
আরেকজন লোক এসে বললো- মেয়েটার অবস্থা খুব খারাপ। মেয়েটা নাকি অন্তঃসত্তা ছিলো, বাচ্চাটা নাকি নষ্ট হয়ে গেছে।
দিপক আর ইমন বুঝে গেলো মেয়েটা আর কেউ নয় মুসকান,,,
তবুও ইমন মনকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো। বিরবির করে বলতে শুরু করলো না এটা মুসকান না। আল্লাহ এটা যেনো আমার মুসকান না হয়।
দিপক বললো- ভাইয়া তারাতারি চল যদি আমাদের মুসকান হয় আমরা ওকে শহড়ের ভালো হসপিটালে নিয়ে যাবো। তারাতারি চল ভাইয়া।
পুলিশ অফিসার বললেন হ্যাঁ চলুন আপনারা। আপনারা যাকে খুঁজছেন ইনি তো সেও হতে পারে।
ইমনের বুকে যেনো একটা বিশাল পাথর চাপানো হলো। বহুকষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে সবার সাথে ভিতরে গেলো।
ভিতরে যাওয়ার সাথে সাথে চিৎকার শুনতে পেলো।
চিৎকার টা ইমনের কানে আসতেই ইমন বুকে বড়সড় এক ধাক্কা খেলো। নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
দিপক বললো- ভাইয়া আমাদের মুসকান,,,মুসকান ওভাবে চিৎকার করছে কেনো?
ইমন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না।
অফিসারদের দিকে তাকিয়ে বললো- এই অফিসার ওখানেই আমার বউ আছে। ও ওভাবে চিৎকার করছে কেনো? আমার বউ এর কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বোনা কাউকে ছাড়বোনা,,, চিৎকার করে বলে ওঠলো ইমন।
অফিসার বললেন – মি.চৌধুরী শান্ত হন। ওনি আপনার স্ত্রী হলে ওনাকে ইমিডিয়েটলি এখান থেকে শহড়ে নেওয়া দরকার। এখানকার চিকিৎসা ব্যাবস্থা তেমন উন্নত নয়।
দিপক আমার ওকে দেখার প্রয়োজন নেই তুই তারাতাড়ি এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কর ওকে। ওর চিৎকার আমি আর শুনতে পারছিনা, পারছিনা।
দিপক ডক্তারের সাথে কথা বলতে চলে গেলো। ইমন মোজাম্মেল চৌধুরী কে ফোন করে জানালো এম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও করতে বললো।
যারা মুসকানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে তাদের থেকে সব ইনফরমেশন নিয়ে পুলিশ চলে গেলো সেই পুরোনো ভাঙা বাড়িতে।
দিপকের হাত পা কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। ইমন এর অবস্থা দেখে। মুসকান আবারো জ্ঞান হারিয়েছে।
ইমন মুসকানকে বুকে জরিয়ে রয়েছে।
এম্বুলেন্স করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো তারা।
দিপক বললো- ভাইয়া চিন্তা করোনা। আমরা মুসকানকে ফিরে পেয়েছি এই তো অনেক।
ইমন বললো- আমি ওকে নিয়ে চিন্তা করছিনা। আমার কাছে ফিরে এসেছে ও আর কিসের চিন্তা এবার সবটা ঠিক করে নিবো আমি।
কিন্তু আমি চিন্তা করছি তার কথা যে তার কি হবে এবার। ইমনের হাত থেকে কি করে বাঁচবে। খুব বড় ভুল করে ফেলেছিস তুই এই ভুলের কোন ক্ষমা হয় না। চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারন করেছে ইমনের।
তার বুকের ভিতর যে কষ্ট যে যন্ত্রনা হচ্ছে সেটা হয়তো কেউ অনুভব করতে পারবে না।
মুসকান কে হসপিটালে এডমিট করানো হয়েছে।
বাড়ির সকলে হসপিটাল এসে ভীড় জমিয়েছে।
ইমন মাথা নিচু করে বসে আছে। ইরাবতী ছেলের পাশে এসে বসলো। ইমন মা কে দেখে মায়ের বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেললো। ইরাবতীও কান্নায় ভেঙে পড়লো। ইমন বললো- মা গো বাবা হওয়ার আনন্দ টা যে কি,তা এই তিনমাসে আমি বুঝে গিয়েছিলাম। যে পৃথিবীর আলোই দেখতে পারলো না। যাকে আমি দুচোখে দেখলামই না তার জন্য কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে মা। কেনো আমার বুকে পাথর চেপে রয়েছে।
ইমনকে এভাবে দেখে সবাই বাকরুদ্ধ। সবাই এই প্রথম ইমনকে কাঁদতে দেখছে। এতো স্ট্রং একজন মানুষ ও এভাবে কাঁদতে পারে। যাকে দেখে সবাই জম এর মতো ভয় পায় সে আজ এইভাবে ভেঙে পড়েছে। বাড়ির সবার চোখেই পানি চলে আসলো।
দিপান্বিতা হঠাৎ বলে ওঠলো- আমার মেয়েটাকে কিভাবে সামলাবো ও যখন সুস্থ হবে জ্ঞান ফিরবে তখন ওকে কি জবাব দিবো আমরা,,,মেয়েটা যে শেষ হয়ে যাবে। এশা এসে দিপান্বিতার কাঁধে হাত রাখলো।
ইমন মায়ের কোল থেকে মাথা ওঠালো। নিজেকে একটু শক্ত করে নিয়ে বললো- কিছু হবে না। ওর সামনে কেউ অস্বাভাবিক আচরন করবে না তোমরা।
আমাদের মাঝে যে তিনমাস যাবৎ কেউ এসেছিলো সেটাই ভুলে যাবো আমরা। যাকে ১৯বছর যাবৎ ভালোবেসে আগলে রেখেছি তার জন্য এই তিনমাসের মায়া ত্যাগ করাটা কোন ব্যাপার না।
ইমন কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে গেলো।
ইরাবতী আবারো কেঁদে ওঠলেন।
এতোবড় সাহস কার যে আমার পুএবধূর দিকে হাত বাড়ায়। ঐ হাত আমি উপড়ে ফেলবো। ইমন কি করবে সেটা আমি জানিনা কিন্তু আমি তাকে দেখেই ছাড়বো। মোজাম্মেল চৌধুরী রাগে হুংকার ছাড়লেন।
দিপক বললো- বড় বাবা এই কাজটা এমন কেউ করেছে যে ইমনের দূর্বলতা সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানতো।
কে সেই কাপুরুষ,,, যে পিছন থেকে ছুড়ি মারে সাহস থাকে তো সামনে আসুক।
ফোন বেজে ওঠলো মোজাম্মেল চৌধুরীর।
ইমন ফোন কেরেছে কোথায় ইমন,,,বলেই ফোন রিসিফ করলো।
বাবা তোমরা মুসকানের খেয়াল রেখো। রাতে আমার খুব পরিচিতি একজন গাইনোকলজিস্ট আসবে। হসপিটাল গিয়ে মুসকান কে দেখে আসবে। ওখানকার ডক্টরদের সাথে কথাও বলবে। আর আমাদের এখানে দুদিন থাকবে। ঢাকা এসেছে দুদিন হলো আমি খবড় পেয়ে ওকে খুব রিকোয়েস্ট করেছি। কোন এক সময় তাকে খুব উপকার করেছিলাম বলে আমার কথা ফেলতে পারেনি।
দুদিন থেকে যাবে। তোমরা তাকে সসম্মানে আমাদের বাসায় থাকতে দিবে আমি আজ ফিরতে পারবো কিনা জানিনা। তবে চেষ্টা করবো আজি ফেরার।
মোজাম্মেল চৌধুরী বললেন- বাবা তুমি কোথায় যাচ্ছো? আর গাইনোকলজিষ্ট এর নাম কি বাবা।
নাম – ডাঃ দিলারা রহমান। আমার বয়সি। চিন্তা করোনা ওকে আমি বলে দিয়েছি আমার নাম বলবেই, চিনতে অসুবিধা হবে না।
হ্যাঁ বাবা। তুমি এখন কোথায়?
সেটা পরে জানলেও চলবে। তোমরা মুসকানের খেয়াল রেখো। বলেই ইমন ফোন কেটে দিলো।
মোজাম্মেল চৌধুরী বুঝতে পারলেন ছেলে কোথায় যেতে পারে, বা কি কাজে যেতে পারে।
ইমনের পনেরো, ষোল জন বন্ধু এয়ারপোর্টে ইমনের জন্য অপেক্ষা করছে।
ইমন বাইক নিয়ে সেখানে তাদের সামনে থামলো।
ইমনের বন্ধু মুন্না বললো- ইমন দেখ তো একে চিনতে পারিস কিনা। বলেই মুন্না তার সামনে থাকা ছেলেটার ঘারে চেপে ধরে উপরে ওঠালো।
ইমন রক্তচক্ষুতে সামনের লোকটা কে দেখে যাচ্ছে।
আশে পাশের মানুষ গুলো আড় চোখে একবার করে দেখে আবার মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছে।
ইমন বললো জোর গলায় বললো- মুন্না,,,আমি ভদ্র জায়গায় অভদ্রতা করতে চাই না।
আশা করি বুঝতে পেরেছিস।
মুন্না দাঁত কেলিয়ে হালকা হাসলো। ইমন বাইক নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
শহড় থেকে কিছুটা দূরে চলে গেলো ইমন। পাকা রাস্তা শেষে কাঁচা রাস্তায় গিয়ে ওঠলো রাস্তার বাম পাশে বেশ ঘন জঙ্গল তার ভিতর ঢুকে পড়লো।
মুন্না আর তার সাথে সব বন্ধুরা মিলে দুজন লোক কে টেনে হিঁচড়ে জঙ্গলের ভিতর ঢুকে পড়লো।
ইমন পুলিশ কে ফোন দিয়ে বললো- এক ঘন্টা পর আসতে। বাবার বন্ধু হওয়াতে পুলিশ অফিসারকে বুঝাতে খুব একটা অসুবিধা হলো না তার।
ইমন পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। মুন্নারা ওদের দুজন কে ধরে নিয়ে ইমনের পিছনে দাঁড় করালো।
আমাকে ক্ষমা করে দে ইমন। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমাকে ক্ষমা করে দে। আমাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে দে। আমি আর এই দেশে আসবো না। কোনদিন তোর সামনে আসবো না। কান্না করতে করতে বলে ওঠলো একজন।
এই জাবের,,, চিৎকার করে বলে ওঠলো ইমন।
সামনের দিকে ঘুরে জাবেরের নাক বরাবর এক ঘুষি দিলো। নাক দিয়ে গড়গড় করে রক্ত ঝড়তে লাগলো।
তুই আমার কাছে ক্ষমা চাইছিস। আমার কাছে,,, এই কিসের ক্ষমা ক্ষমা বলে কোন শব্দ এখন আমার আইনে নেই। তুই শুধু আমার বুকের বাম পাশে আঘাত করিস নাই, তুই আমার কলিজাটাকে একদম ছিঁড়ে ফেলেসিস। বলেই দিলো আরেক ঘুষি। মুন্না আর ইমন মিলে জাবের কে ইচ্ছে মতো মারলো। আর বাকি সবাই জবাবের বন্ধু মিলনকে মারছে। ইমনের রাগ কিছুতেই থামছে না। জাবেরের কলিজাটা ছিঁড়ে নিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটলেও যেনো আজ তার শান্তি হবে না।
জাবের ইমনের পা জরিয়ে বললো- ভাই আমাকে ক্ষমা করে দে অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দে ভাই।
ইমন জাবেরের কলার ধরে ওঠালো।
এই সব ভুলের ক্ষমা আছে কিন্তু খুন করার মতো ভুলের কোন ক্ষমা নেই। তুই আমার সন্তান কে হত্যা করেছিস। তুই একটা নিষ্পাপ জীবন কেড়ে নিয়েছিস। তুই আমার আর আমার স্ত্রীর স্বপ্ন কে মেরে ফেলেছিস। তুই আমাকে বাবা হতে দিসনি। তুই একজন মায়ের থেকে তার সন্তান কেড়ে নিয়েছিস। একজন বাবার থেকে তার সন্তান কে কেড়ে নিয়েছিস। তোর কোন ক্ষমা হয় না কোন ক্ষমা হয় না। আমার সাথে তোর বহু বছর আগের শত্রুতাকে তুই পুষে রেখে তুই আমার কলিজায় আঘাত করলি জাবের । তোকে কোনভাবেই ক্ষমা করতে পারবো না। বলেই নিচে ফেলে বুকের উপর পা দিয়ে পিষতে লাগলো। আর বললো- তুই নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে পারিস নি বলে এই জঘন্য কাজ করলি জাবের। তুই আমার মহামূল্যবান সম্পদটাই কেড়ে নিচ্ছিলি। কিন্তু তুই এটা জানিস না এক উপরওয়ালা ছাড়া আমার থেকে আর কেউ মুসকান কে আলাদা করতে পারবে না কেউ না। উপরওয়ালা ও করবে না। কারন ও আমার সারাজীবন মরনের সাথী। নিজের হাতে গড়েছি ওকে আমি। তোর মতো চামচিকা এসে আমার থেকে ওকে কেড়ে নিবে। হাহাহাহা।
জাবেরের মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসলো। গলা চেপে চেপে বললো আমাকে ছেড়ে দে ইমন। ছেড়ে দে আমাকে।
তোকে ছাড়বো তার আগে বল আর কে কে আছে এসবের মধ্যে। আর এটাও বল সামান্য পলিটিকসে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে পারিসনি বলে তুই আমার স্ত্রী কে অপহরন করলি? না কি এর পেছনে আরো অন্য কেউ আছে? অন্য কোন রহস্য আছে?
এতোবছর পর হঠাৎ তুই কেনো এলি দেশে আর কেনোই বা আমার জিনিসে নজর দিলি বল জাবের বল?, চিৎকার করে বলে ওঠলো ইমন।
জাবের গলা চেপে বললো- ইমন তুই ভুল ভাবছিস শুধু তোর সাথে শত্রুতার কারনে আমি তোর বউকে অপহরণ করিনি। তুই আমার ছোট ভাইকে মেরেছিস তোর বউ এর জন্য। সেই রাগ থেকেই আমি ভেবেছিলাম তোর বউকে অপহরন করে তোকে শিক্ষা দিবো। কিন্তু আমি জানতাম না তোর বউ অন্তঃস্বত্তা।
ওওও তাহলে আমার সন্দেহই ঠিক বলেই জাবের কে ধরে ওঠালো।ইচ্ছা রকম কয়েকটা ঘুষি দিলো। মুন্নাও মারতেই থাকলো।
ইমন বললো- এবার জান নিয়ে তোর ভাইয়ের কাছে ফিরতে পারবি কিনা ভাব। কাপুরুষ,,, লড়াই করতে হলে সামনে থেকে করার সাহস রাখ পিছন থেকে ছুঁড়ি মারিস কেনো। তোর সাথে আর কে কে ছিলো তাদের তো আমি দেখেই নিবো।
মিলন কে মারতে মারতে মরার অবস্থায় রেখে ছাড়লো। জাবেরের অবস্থাও বেশ খারাপ।
ইমন একসময় ক্লান্ত হয়ে গেলো পুলিশ ও এসে গেছে। ইমন তাদের হাতে জাবের আর মিলনকে তুলে দিলো। আর বললো- আমার সন্তানের খুনীর শাস্তি চাই আমি।
রাত দুটায় হসপিটাল ফিরলো ইমন। ফেরার পর দীপান্বিতা বললো- ইমন মুসকান সব জেনে গেছে আর বুঝেও গেছে প্রচুর কান্নাকাটি করছিলো। মানসিক অবস্থা খুব খারাপের দিকে। আর শরীরের অবস্থাও ভালো না। মেয়েটা এমনিতেই দূর্বল প্রকৃতির। কেউ সামলাতে পারছিলোনা। তোমার নাম ধরে চিৎকার করছিলো। কতোবার ফোন দিলাম তোমার ফোন ও বন্ধ ছিলো তাই ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে।
ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো- দিলারা এসেছিলো?
হ্যাঁ। এসেছে তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিলো। বলেছে ইমন ফিরলে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন।
ওহ তাহলে থাকো তোমরা আমি বাড়ি যাচ্ছি। দিলারার সাথে কথা বলে আবার আসবো।
এশা বাড়িই আছেতো,,,
হ্যাঁ। তোমার বাবা, কাকাও আছে যাও।
খেয়াল রেখো। দিপক থাক আমি আসার পর তুই বাড়ি যাবি।
দিপক বললো-ঠিকাছে সমস্যা নেই। আছি আমি চিন্তা করো না।
ইমন বাড়ি ফিরেই দিলারা কে ফোন করলো। দিলারা বললো- গেস্টরুমের বেলকুনিতে আসো। ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।
ইমন চলে গেলো সেখানে। দুজনেই টুকটাক কথা বললো দিলারা ইমনকে সম্পূর্ণ সাহস দিলো। আর বললো- ভয়ের কিছু নেই এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। আর এই সময়ে সব থেকে বেশী স্ট্রং থাকতে হবে তোমাকে। আমি জানি তুমি অনেক স্ট্রং একজন মানুষ। যে কোন বিপদ,সমস্যা মোকাবিলা করতে সক্ষম তুমি। আমার দেখা অনেক পুরুষের মধ্যে আমি তোমাকে একজন বীরপুরুষ বলেই গন্য করি। তবুও এই সমস্যা টা তোমার নিজের জীবনের। তোমার বিশাল বড় এক দূর্বলতা এটা কিন্তু তবুও তোমাকে স্ট্রং থাকতে হবে। তোমার ওয়াইফ এর জন্যই তোমাকে স্ট্রং থাকতে হবে। তোমার ওয়াইফ এখনো বাচ্চা বয়সটা অনেক কম। আমি একজন ডক্টর হিসেবে এটুকু বলতে পারি এ বয়সটা বাচ্চা নেওয়ার পারফেক্ট বয়স না। আর দুঃখজনক এটাই যে এই বয়সেই সে তার বাচ্চা হারালো পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেললো।যা তাকে শারীরিক আর মানসিক ভাবে বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ইমনের হাত পা ঠান্ডা হতে লাগলো কথা গুলো শুনে।
আর বললো- না,,,কোন ক্ষতি হতে দিবো না আমি ওর। এর জন্য যা যা করা দরকার সব করবো আমি।
তুমি শুধু আমাকে বলো আমার কি করা উচিত। কোনটা ওর জন্য ভালো হবে। প্রয়োজন পড়লে দেশের বাইরে নিয়ে যাবো।
দিলারা হেসে দিলো ইমনের কথা শুনে।
গুড। পৃথিবীতে প্রত্যকটা মেয়েই যদি তোমার মতো স্বামী পেতো তাহলে হয়তো ঘরে ঘরে আজ এতো অশান্তি, বিচ্ছেদ হতো না। তুমি জানো ববী লষ্ট হওয়ার কারনে কতো অহরহ সংসারে বিচ্ছেদ হচ্ছে।
না সেসব আমি জানতে চাইনা। আমি শুধু জানতে চাই কিভাবে আমার বউ সুস্থ হয়ে ওঠবে।
দিলারা বললো ইমন একটি গর্ভপাত নিঃসন্দেহে একটি বিধ্বংসী ও হৃদয় ভঙ্গকারী ঘটনা, বিশেষ করে যখন একজন মেয়ে পরিবারে এক নতুন সদস্যকে স্বাগত জানানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে চলে অনেক আশা স্বপ্ন দেখে ফেলে আর সেটা ভেঙে যায় তখন মেয়েটার অবস্থা হয়ে ওঠে বিষাদময়,জীবন এর প্রতিও অনেকের অনীহা এসে যায়। যদিও মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হওয়াটা সাধারণ একটা ঘটনা, তবে এটি একজন মায়ের পক্ষে শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এবং দুঃখ–মর্ম যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠতে পারে।এই অবস্থাটির সাথে মোকাবিলা করার প্রক্রিয়াটিতে প্রচুর পরিমাণে মানসিক এবং শারীরিক সাহসিকতা এবং চিকিৎসাগত পরামর্শ ভালভাবে জড়িত থাকা প্রয়োজন।একটি গর্ভপাত ঘটার পর যন্ত্রণা এবং রক্তক্ষরণ অনুভব করাটা পুরোপুরি স্বাভাবিক।তবে প্রতিটি স্বাভাবিক অসুস্থতাই যেমন শরীরের উপর প্রভাব ফেলে, গর্ভপাতও ঠিক এমনই একটি ঘটনা, যেখানে এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেলে তার সাথে একজন মেয়ের দেহকে মোকাবিলা করতে হতে পারে।
আশা করি বুঝতে পেরেছো আমি কি বুঝাতে চাইছি।
তোমাকে এখন মুসকানকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দিতে হবে। তোমার সাপোর্ট টাই ওর বেশী প্রয়োজন।
দিলারার সাথে বেশ কিছু ক্ষন মুসকানের বিষয়ে আলোচনা করে ইমন হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
হসপিটাল গিয়ে দিপক আর দীপান্বিতা কেও বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।ভোর পাঁচ টা বাজে। ইমন মোড়া টেনে মুসকানের বেডের কাছে এসে বোসলো।
মুসকানের মুখের দিকে একমনে চেয়ে রয়েছে।
হঠাৎ ই চোখের কোনে তার পানি এসে গেলো।
মুসকানের মুখের দিকে চেয়ে মনে মনে বললো-
আমার আত্নাটা ঠান্ডা করার জন্য তুমিই যথেষ্ট মুসকান আর কিছু চাই না আমার। যতোটা কষ্ট তুমি সহ্য করেছো তার তিনগুন আমি ঐ নরপশুদের দিয়েছি আর দিবো ও।
মুসকানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো- মুখটা অনেক শুখনো লাগছে। তারাতারি সুস্থ হয়ে ওঠো। বাড়ি নিয়ে যাবো তো আর এবার আরো বেশী আগলে আর ভালোবেসে রাখবো। তুমি আমার একটা খাঁটি রত্ন, তুমি আমার ননীর পুতুল। একটু অবহেলা পড়লেই অনেক বেশী ক্ষতি হয়ে যায়। আর হবেনা এমন এই ইমন আর কখনো তোমায় চোখের আড়াল হতে দিবে না। বলেই মুসকানের কপালে চুমু খেলো।
ওঠে বসে মুসকানের পেটের দিকে তাকালো। সাথে সাথে তার বুকে মোচড় দিয়ে ওঠলো। পেটের উপর হালকা করে হাত রেখে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
আর বললো- চলেই যদি যাবি মাকে এতো কষ্ট দিতে কেনো এলি? খুব মজা পেলি মা কে কষ্ট দিয়ে? এখন তোর মা কে তোর বাবা কীভাবে সামলাবে? একটু ও বাবার কথাটা ভাবলি না। একটু ও ভাবলি না তোর বাবার এই অমূল্য জিনিসটাকে আঘাত দিলে তোর বাবা সহ্য করতে পারে না। কেনো চলে গেলি, কেনো চলে গেলি,বাবা মা কে ছেড়ে কি খুব ভালো থাকবি? কতো আদর ভালোবাসা জমাচ্ছিলাম সেগুলো না পেয়েই চলে গেলি। তোর মায়ের কিছু হলে কিন্তু তোকে আমি ক্ষমা করবো না,,,
বিরবির করে বলতে বলতে হালকা হেসে দিলো ইমন।চোখের কোনে এসে পানি জমলো।
মুসকানের ঘুম ভাঙতেই ঝাপসা চোখে ইমনকে দেখতে পেলো। ইমনের মুখ টা দেখেই মুসকান ইমন,,,বলে এক চিৎকার দিয়ে ওঠলো।
ইমন চমকে গিয়ে ওঠে বেডে বসে মুসকান কে জরিয়ে নিলো বুকের মাঝে,,,
চলবে…….
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।