বউ চুরি সিজন-২ পর্ব ঃ ৩

বউ চুরি

সিজন-২

পর্ব ঃ ৩

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

ইমনকে জাবটে ধরে ভয়ে গুটিশুটি হয়ে বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে মুসকান। মুসকানের প্রত্যেকটা চিৎকার ইমনের বুকে গিয়ে লাগছে। মুসকানকে দুহাতে জরিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো ইমন। আর বললো- মুসকান ভয় পেও না। এইতো আমি এসে গেছি কিছু হবে না। তুমি শুধু আমাকে এইটুকু বলো সেদিন ঠিক কি হয়েছিলো তোমার সাথে। ইমন মনে মনে ভাবলো – মেডিকেল রিপোর্টে খারাপ কিছু ঘটেনি এটাই প্রমান হয়েছে। তাছাড়াও কি ঐ জানোয়ারগুলো ওর সাথে কোন ধরনের খারাপ আচরন করেছে। আমাকে জানতেই হবে।
ইমন মুসকানের দুগাল ধরে মুখোমুখি করে জিগ্যাস করলো – মুসকান তুমি ভয় পেওনা সেদিন কি ঘটেছিলো। তোমার সাথে ওরা ঠিক কি করেছিলো।
মুসকান আবারো ইমনকে জাবটে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো- আমি কিছু করতে দেইনি, দেইনি কিছু করতে, আমি আমার স্বামীর আমানত আর আমার সন্তান কে বাঁচানোর জন্যই পালিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা, ওরা আমাকে দেখে ফেলেছিলো ওদের হাত থেকে বাঁচতে গিয়েই আমি ছাদ থেকে পড়ে যাই,,, নিজেকে রক্ষা করার খুব চেষ্টা করেছি। নিজের সন্তান কে বাঁচানোর খুব চেষ্টা করেছি। আমি পারিনি পারিনি আমি,,, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো মুসকান। ইমন চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। কতোটা যুদ্ধ করেছে মুসকান,,, তবুও আমার বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারেনি।
কিন্তু আরো তো কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে। ইমন বললো- তুমি ওদের হাতে কীভাবে গেলে। তুমি ভার্সিটির পিছন দিক দিয়ে কেনো বের হলে মুসকান,,,তোমার সাথে আর কেউ কেনো ছিলো না??
মুসকান খানিকটা থেমে গেলো মুখ চেপে কেঁদে কেঁদে বললো- আমার ফোনে একজন ফোন করেছিলো। আর বলেছিলো তুমি ওয়েট করছো আমার জন্য। সিলেট থেকে ফিরেই আগে আমার কাছে এসেছো একসাথে বাড়ি ফিরবে বলে। তাই আমি আর কিছু না ভেবে চলে গেছি। খুশিতে আমার এটাও খেয়াল ছিলো না যে তুমি কেনো পিছন গেইট দিয়ে যেতে বলবে,,, আমার বাচ্চা,,, আমার বাচ্চা শেষ হয়ে গেলো। আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। আমার মুন,,,আমার মুন আমার কোলে এলো না ইমন,,,

ইমনের বুকে রক্তক্ষরন যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছিল। রাগে ক্ষোপে জাবের কে খুন করতে ইচ্ছে হলো তার।
এতোটা হিংসা এতো শত্রুতা যে আমার সব খোঁজ খবড় নিয়েছিস। আমার বউ এর নাম্বার জোগার করেছিস। এতো হিংস্রতা তুই আমাকে দেখাতে এসেছিস জাবের,,,ঘুমন্ত বাঘ কে ক্ষেপিয়ে তুলে তুই খুব একটা ভালো কাজ করিসনি। সারাজীবন এখন আফসোস করে কাটাবি।

হঠাৎ মুসকান চুপ হয়ে গেলো। ইমনকে ছাড়িয়ে ভালো ভাবে বসলো। ইমনের গালে এক হাত রেখে বললো- তুমি তো সব পারো আমার সব চাওয়া পূরন করেছো। তুমি তো আমায় খুব ভালোবাসো তাহলে আমার মুনকে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দাও,,, দাওনা আমার মুনকে ফিরিয়ে। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে অনবরত আর মুখ দিয়ে বার বার বলে যাচ্ছে আমার মুন কে ফিরিয়ে দাওনা। ফিরিয়ে দাও। পেটে হাত রেখে বললো- এখানে কেনো কোন সারা নেই,,, কেনো আমার ক্ষিদে পাচ্ছে না,,, চিৎকার করে ওঠলো মুসকান। ইমন মুসকানকে আবারো বুকে চেপে নিলো। মুসকান বলতেই থাকলো, খাওয়ার জন্য কতো ছটফট করেছে ও আমি ওকে শেষ খাবাড় ও দিতে পারিনি। আমার সন্তান কে বাঁচাতে পারিনি আমি, পারিনি। বুক থেকে ওঠে পাগলের মতো ছটফট করতে লাগলো মুসকান। ইমনের দিকে রেগে বললো-
সব তোমার জন্য হলো,,, তুমিই তো চাওনি এতো তারাতারি মুন পৃথিবীতে আসুক তাইনা,,, এবার খুশিতো এবার খুশি হয়েছোতো। আমার মুন নেই দেখো নেই আমার মুন ইমনের হাত নিয়ে পেটের উপর রেখে বললো মুসকান।
ইমন মুসকান কে শক্ত করে জরিয়ে চিৎকার করে বললো- এই তুই শান্ত হ তুই দয়া করে চুপ কর। ইমনের চোখ বেয়েও পানি ঝড়ে পড়লো। মুসকানও কেঁদে চলেছে।
আমাকে মুন কে এনে দাওনা,,,এনে দাও ওকে পেলে আমি আর এমন করবো না। কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে বললো মুসকান ইমন বললো- এনে দিবো সোনা তুমি একটু শান্ত হও আমরা আবারো বেবী নিবো তো তুমি শান্ত হও সুস্থ হয়ে ওঠো।

একজন নার্স কেবিনে আসলো। ইমন তাকে ইশারা দিতেই সে মুসকান কে স্যুপ খেতে দিলো ইমন জোর করে মুসকানকে সেটা খাওয়িয়ে দিলো। নার্স এসে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো তাকে। ইমন মুসকানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো- সন্তান হারানোর যন্ত্রণা কতোটা সেটা নিজের চোখে দ্বিতীয় বার দেখলাম, নিজেও ফিল করছি মুসকান , ১৯বছর আগে আমার মাও এইভাবে ছটফট করেছিলো তাই তার জন্য আমি সেই বহুদূর থেকে তোমায় এনে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি মুনকে কিভাবে এনে দিবো। এতো তারাতারি যে সম্ভব না। আমাদের যে অনেক অপেক্ষা করতে হবে। ইরাবতী হসপিটাল আসার পর ইমন বেরিয়ে যায়। দিলারা চলে যাবে তাই ওনার সাথে দেখা করাটা দরকার সেই ভেবেই বেরিয়ে পড়লো ইমন।
বাড়ি গিয়ে দিলারার সাথে বেশ কিছুক্ষন কথাবার্তা বললো। তারপর কুমিল্লার উদ্দেশ্য রওনা দিলেন তিনি। দিলারাকে এগিয়ে দিয়ে ইমন আবার বাড়ি ফিরলো। নিজের রুমে গিয়ে বেশ কিছুক্ষন ঝিম ধরে বসে রইলো। দেয়ালে আটকানো বাচ্চার ছবিগুলার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো। কিছুদিন আগেই এটা ইমন কিনে এনেছিলো। মুসকান কতো হ্যাপি হয়েছিলো সেটা দেখে। ইমন তখন বলেছিলো –
এই যে ম্যাডাম এগুলো এখন থেকে এখানে থাকবে আপনি রুমে বসে এদের দেখবেন আর মুন কে নিয়ে ভাববেন। মা বলেছে এই সময়ে যাকে সবসময় চোখের সামনে দেখবে তার মতোই হবে বেবীটা।
মুসকান খুব খুশি হয়ে এক লাফ দিয়ে বলে ওঠে ছিলো সত্যি,,,
ইমন চোখ গরম করে মুসকানের দিকে তাকাতেই মুসকান চুপ হয়ে মাথা নিচু করে বলেছিলো সরি। আর এমন হবে না।
ইমন মুসকানকে একটু কাছে টেনে পিছন থেকে জরিয়ে নিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেছিলো।
এবার তো আরো বকবো। এক নাম্বার ভুল এমন সময় লাফিয়ে ওঠা দুই নাম্বার ভুল এমন সময় এভাবে মন খারাপ করা। এসব এখন করা যাবে না বুঝেছেন।
মুসকান আল্হাদী স্বরে বললো- তাহলে অমন করে তাকালে কেনো? ভালোবেসে তাকালে কি আমি মন খারাপ করতাম?
আপনি এমন করে তাকানোর কাজ না করলেই তো পারেন। বলেই মুসকানের চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
মুসকান ও আবেশে চোখ বুজে ফেললো।
সামনের দিকে ঘুরিয়ে ইমন ফিসফিস করে বললো- এই যে বাবুর আম্মু,,,
মুসকান লজ্জায় ইমনের বুকে মুখ লুকালো। ইমন ও মুচকি হেসে ফেললো।

সেসব ভেবে ইমনের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। চট করে ওঠে সব ছবি খুলে ফেললো ইমন।
বিছানায় তাকাতেই টেডিবিয়ার চোখে পড়লো। আবারো মনে পড়ে গেলো কিছুদিন আগের ঘটনা।
এই টেডিবিয়ার টা দেখে মুসকান সে কি খুশি হয়েছিলো। চারবছর বয়সে যে বাচ্চা মেয়েটার থেকে তার সমস্ত পুতুল কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো। বাড়ির প্রত্যেকটা লোক কে বলা হয়েছিলো ওকে যেনো কোন পুতুল কিনে দেওয়া না হয়। তারপর থেকে আর কখনো মেয়েটা পুতুল খেলতে পারেনি। ধীরে ধীরে বড় হওয়ার পর ও কখনো কোন পুতুল তাকে দেওয়া হয়নি শুধু মাএ ইমনকে পুতুলের মামা বানিয়েছিলো আর স্বামী বিদেশ আছে এটা বলেছিলো বলে। সামান্য খেলাতেও ইমন বাচ্চা মেয়েটার উপর প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলো। তাই সব পুতুল নিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছিলো। অনেক বছর পর তার সেই বাচ্চা বউ এর যখন বাচ্চা পেটে এলো তখন সে নিজে গিয়ে তার জন্য প্রথম একটা টেডিবিয়ার কিনে নিয়ে আসে সেটা দেখে মুসকান খুব খুশি হয়। ইমনকে জরিয়ে ধরে আর বলে –
জানো আমার ছোট থেকে কতো ইচ্ছে হতো আমি পুতুল খেলবো ঘর ভর্তি পুতুল থাকবে আমার কিন্তু কেউ আমাকে কিনে দেয়নি। তুমি সবাইকে না করে দিয়েছো। তোমার উপর সেই নিয়ে খুব রাগ হয়েছিলো খুব অভিমান হয়েছিলো কিন্তু আজ, আজ সব রাগ অভিমান শেষ বলেই ইমনের গালে টপ করে একটা কিস করে।
ইমন বাঁকা হেসে বলে- হুম যে ভুলের কারনে এসব কেড়ে নিয়েছি অমন ভুল করলে আবারো কিন্তু অমন হবে। মুসকান ক্ষেপে গিয়ে ইমনের বুকে মারতে শুরু করে ইমন মুসকানের হাত আটকে একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে – আজ নিজের শুনতেও খারাপ লাগে তাহলে তখন আমার কেমন লেগেছে যখন তুমি বলেছিলে। মুসকান ইমনের বুকে কিস করে বললো আর এমন হবে না সরি তো,,,
আর এমন হলে আপনাকে আমি ছেড়ে দিবো নাকি একদম খেয়েই ফেলবো।
মুসকান লজ্জা পেয়ে আবারো মুখ লুকালো ইমনের বুকে।

পুতুল টা হাতে নিয়ে ইমন সেদিনের সব কথা ভাবলো। এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পুতুলটা নিয়ে ওয়ারড্রবের ভিতর রেখে দিলো।
মুসকানের সামনে এসব কিছুই রাখা যাবে না। তাহলে ও আরো বেশী কষ্ট পাবে। যতোটা সম্ভব এসব বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে। ওকে স্বাভাবিক জীবনে আনতে হবে। কিন্তু মুসকান কি আমায় ভুল বুঝছে আমায় দোষী ভাবছে এসব নিয়ে। তখন যে বললো। নাহ ওগুলো তো কষ্ট থেকে বলেছে ওর মনের অবস্থাও তো ঠিক নেই। তাই বলেছে ও কি জানেনা আমি কেনো বেবী নিতে চাইছিলাম না। সবটা তো ওর জন্যই ওর বয়স ওর পড়াশোনা এসব ভেবেই, কিন্তু যখন শুনলাম আমি বাবা হবো সব থেকে খুশি তো আমিই হয়েছি। বাবা হতে কে না চায়। কিন্তু যে ক্ষতিটা হয়ে গেলো,,, আমার মায়ের সাথে যা হয়েছে সেটা ওর সাথে হবেনা তো,,,
ইমন চোখ দুটো বন্ধ করে ফললো,,,
নাহ কিছুতেই না। একবার যা হয়েছে হয়েছে । এবার আর ভুল নয়। কয়েকবছর পর আবারো বেবী নিব আমরা। আর এই কয়েকবছর মুসকান কে আমার সামলাতেই হবে। পড়াশোনায় মনোযোগী করতে হবে ওকে সে পর্যন্ত ওর একটা সঠিক বয়স হবে বেবী নেওয়ার। আজ পর্যন্ত আমার অবাধ্য হয়ে হয়ে নিজের অনেক ক্ষতি করেছে সেই সাথে আমারো। আর নাহ এবার আমার কথা তোমার শুনতেই হবে।
আমার কথা শুনে যদি কটাদিন ভার্সিটি না যেতে আজ এই পরিস্থিতি হতো না। এবার আমার নিয়ম আমি আর কাউকে ভাঙতে দিবো না।

ইমন দুপুরের দিকে থানায় গিয়ে পুলিশের সাথে কথা বললো। জাবেরের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করলো সেই সাথে যারা যারা তার সাথে ছিলো সবাইকে শনাক্ত করাও হয়েছে। খুব তারাতারি তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

রায়া সহ মুসকানের আরো কয়েকজন বান্ধবী মুসকানকে তিনদিন পর হসপিটালে দেখতে আসলো। ইমন ছিলো তখন ওরা বেশকিছু ক্ষন সময় থেকে চলে যায়। দীপান্বিতা আর দিপক দুপুরের দিকে হসপিটাল আসে। ইমন গোসল করার জন্য বাড়ি যায় তখন ঠিক সে-সময় টাকেই কাজে লাগায় হেনা। দুবছর হেনার সাথে কোন যোগাযোগ ছিলো না মুসকানের। ইমন যোগাযোগের কোনরকম সুযোগ ই দেয়নি। কিন্তু মুসকানের সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছুই হেনা শুনেছে। আর এটাও শুনেছে বরাবরের মতো ইমন মুসকানকে ঠিক তার কাছে ফিরিয়ে এনেছে। কেউ পারেনি তাদের আলাদা করতে। আর হেনা পারেনি তার অপমান ভুলে যেতে দুবছর আগের সেই অপমান গুলো আজো তার মনে তীব্র ভাবে গেঁথে রয়েছে। তাই সে শেষ একটা সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে আর কিছু না পারলেও মুসকানের মনকে বিষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা সে করবেই। ইমন মুসকানকে কোনভাবেই সুখে সে থাকতে দিবে না। ওদের আলাদা না করতে পারলেও ওদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করেই ছাড়বে। সেই ভেবেই হেনা আসে হসপিটালে। দিপক কেবিনের বাইরে বসে ফোন ঘাটাঘাটি করছিলো আর দীপান্বিতা মুসকানকে খাওয়িয়ে শেষ করলো। এমন সময় হেনা দিপক কে পরিচয় দিলো – ভাইয়া আমি মুসকানের বান্ধবী হুমায়রা। ডাক নাম বললে চিনে ফেলবে তাই আসল নাম ই বললো। দিপক বললো- ওও আচ্ছা ভিতরে যাও তাহলে,,, দিপক হেনাকে ভিতরে নিয়ে গেলো। মুসকান হেনাকে দেখে একদম চুপ হয়ে গেলো অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। হেনা বললো কেমন আছিস মুসকান,,,
দিপক দীপান্বিতা কে বললো মা ও মুসকানের বন্ধু।
ওরা কথা বলুক মুসকানের মনটাও ভালো লাগবে তাহলে।
দীপান্বিতা বললো- তুমি একা যে রায়া ওদের সাথে আসোনি সকালে??

আসলে আন্টি আমি ঢাকার বাইরে থাকি। সকালেই এসেছি আর এসেই মুসকানের ব্যাপারে শুনলাম তাই এখন একাই চলে আসলাম।

ওহ,আচ্ছা কথা বলো তোমরা। বলেই দীপান্বিতা আর দিপক বেরিয়ে গেলো।

হেনা এসে মোড়া টেনে মুসকানের বেডের পাশে বোসলো।
কিরে এখনো রেগে আছিস আমার উপর,,,
মুসকান কিছু বললো না।
হেনা বললো – আমাকে ক্ষমা করে দে রে মুসকান। আমি আমার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। আর তোর এই সময় আমি তোকে না দেখতে এসে থাকতে পারিনি। হাজার হলেও আমরা তো খুব ভালো বন্ধু ছিলাম তাইনা। আর মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এমন অবস্থায় কি করে পাশে না থেকে থাকবো বল। বলেই মুসকানের দুহাত আঁকড়ে ধরলো হেনা।
মুসকান মনের দিক থেকে খুবই নরম মনের একটা মেয়ে তাই সে আর রাগ করে থাকতে পারলো না। কেঁদে ফেললো হেনা মুসকানকে আরো দূর্বল করার জন্য ওঠে গিয়ে মুসকানের পাশে বোসলো। মুসকানকে জরিয়ে ধরে কান্নার ভান করলো। মুসকানও হেনাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো। হেনা মুসকানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো- তোর এতো বড় ক্ষতি যারা করলো তাদের কি কোন শাস্তি হবে না মুসকান?
মুসকান কান্না থামিয়ে ওঠে বোসলো।
হ্যাঁ ওদের উপযুক্ত শাস্তি ওরা পাবে।
কিন্তু তোর সন্তান কে কি ওরা ফেরত দিতে পারবে?

মুসকান অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো হেনার দিকে।
বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে তার। একজন মা ই বুঝে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা কি,,,
আহত গলায় বললো মুসকান আমি আমার কলিজাকে ফেরত পাবো না। কিন্তু যাদের জন্য আমি আমার সন্তান কে পাওয়ার আগেই হারালাম তাদের আমি কোনদিন ক্ষমা করবো না। কোনদিন না।
হেনা এবার সুযোগ পেলো কথা তোলার তাই বললো- আচ্ছা মুসকান ওরা কেনো তোকে কিডন্যাপ করলো কেনোই বা তোকেই ওভাবে তুলে নিয়ে গেলো। এর কারন কি তুই জানতে পেরেছিস?

এবার মুসকানের হুশ ফিরলো।
সত্যি তো আমিতো এ বিষয়ে একবারো ভাবিনি যে কেনো আমাকে ফোন করে মিথ্যা বলে বের করলো। কিসের শত্রুতা আমার সাথে। আর ইমন, ইমন বা মা বাবা, ভাইয়া, মামনি কেউ তো আমাকে এবিষয়ে কিছু বললো না। আমিও তো এটা ভাবিইনি। মুসকান আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লো।
সত্যিতো আমি ওদের কি ক্ষতি করেছি হেনা যে ওরা আমার সাথে এতো বড় অন্যায় করলো। কেনো আমার সাথে এটা করলো। কি করেছি ওদের সাথে কিসের শত্রুতা আমার সাথে ওদের।

হেনা মুসকানকে সান্ত্বনা দিতে দিতে বললো- কাঁদিস না মুসকান। কাঁদিস না জানিসতো একজনের পাপের ফল আরেক জন ভোগ করে। হয়তো তুই কোন দোষ করিস নি অন্যকারো দোষের জন্য তোর ভুগতে হচ্ছে।

মুসকান বললো মানে কি বলছিস তুই।

হেনা বললো- আমি কিছু বলতে চাই নারে তোদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছি। আমি যা শুনেছি তা তোকে বলে আর দোষের ভাগীদার হতে চাইনা আমি।

কি শুনেছিস তুই। বল হেনা কি শুনেছিস, কি জানিস তুই।

মুসকান তোকে এটা বললে ইমন ভাইয়া যদি জানতে পারে যে সব সত্যি আমি তোকে বলে দিয়েছি তাহলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে রে।

মুসকানের বুকটা কেঁপে ওঠলো অজানা ভয়ে। সেই সাথে তার পাগল পাগল লাগতে শুরু করলো। অস্থির হয়ে পড়লো মুসকান। হেনার পা দেখিয়ে বললো তোর দুটো পায়ে পড়ি আমাকে সব বল।
তোকে আমি কথা দিচ্ছি কেউ জানতে পারবে না যে তুই আমাকে আজ কি বলেছিস না বলেছিস।
হেনা মনে মনে বেশ খুশি হয়ে বললো- তাহলে আমাকে কথা দে আজকের বলা কথা গুলো তুই আর কাউকে বলবিনা আর জানতেও দিবি না।

মুসকান দ্বিতীয় বারের মতো আবারো হেনা কে বিশ্বাস করলো। বিশ্বাসঘাতক দের দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়াটা একজন মানুষের জীবনে করে যাওয়া সব থেকে বড় ভুল । আর সেই ভুলটাই করলো মুসকান।

আমি শুনেছি জাবের ভাইয়া আর ইমন ভাইয়া একি কলেজে পড়তো । ওরা দুজনই ছাএলীগ এর নেতা ছিলো। কিন্তু সবদিক দিয়ে সবাই ইমন ভাইয়া কে বেশী মানতো। ইমন ভাইয়ার বাবার টাকা আছে পাওয়ার আছে তাই। জাবের ভাইয়া হিংসা করতো সেটা নিয়ে। ইমন ভাইয়া কে টেক্কা দেওয়ার জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে হাত মেলায়। আর ইমন ভাইয়ার সাথে শত্রুতা করে। কিন্তু কোনভাবেই ইমন ভাইয়ার সাথে পেরে ওঠে না। সে বছর নির্বাচনে ওদের দুজনের সাথে মারামারি হয়। জাবের একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতাও করে ভোট নিয়ে । ইমন ভাইয়া তখন জাবের কে সবার সামনে বেইজ্জতি করে। জাবের ভাইয়া লজ্জায় ঘেন্নায় দেশ ছেড়েই চলে যায়। বয়সের তুলনায় ইমন ভাইয়া খুবই জ্ঞানী ভার বুদ্ধিসম্পন্ন একজন মানুষ থাকায় তাকে সেই তখন থেকেই সবাই অনেক মানে সম্মান দেয়।
কিন্তু জাবের ভাইয়া সেই পুরানো শত্রুতা মনে পুষে রাখে আর এতো বছর পর ইমন ভাইয়ার ক্ষতি করতেই তোকে তুলে নিয়ে যায়।

হেনা সব কথা বললেও এটা বললো না যে জয় এর ভাই জাবের। আর তাকে অপহরন করার মুখ্য কারন হলো জয় । আর জয় কে নিজের জীবনে নিয়ে আসার ভুলটা মুসকান ই করেছে ইমন নয়। কিন্তু হেনা সেটা না বলে মুসকানের ব্রেন ওয়াশ করলো এটা বলে যে ইমনের সাথে শত্রুতার কারনেই জাবের মুসকানকে তুলে নিয়ে গেছে। আর এটাই বুঝালো যে এসব হওয়ার পিছনে কোন না কোন ভাবে ইমনই দায়ী। ইমন আর ইমনের এই পলিটিক্স এর জন্যই জাবের এতো বড় অন্যায় করেছে।

মুসকান হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো। হেনাকে জাবটে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো- এই জন্যেই ইমন আমায় এসব নিয়ে কিছু বলে নি। বাড়ির কেউ এ ব্যাপারে কিছু বলে না আমার সামনে। আমি আমার সন্তান কে হারালাম। নিজের স্বামীর জন্যই হারালাম নিজের সন্তানকে। হেনা মুসকানকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো। আর মনে মনে বললো- মি. ইমন চৌধুরী এবার আমি দেখবো তোমরা কিভাবে সুখে থাকো। সেদিনের থাপ্পরটা আমি ভুলিনি। ভুলিনি সেদিনের করা অপমান গুলো সব অপমান সুদে আসলে ফেরত দিলাম। এখন দেখো তোমার সাথে তোমার বউ ঠিক কি করে। সুখের মুখ আর বোধ হয় দেখা হলো না তোমার। ভেবেই বাঁকা হাসলো হেনা।
মুসকান মনে মনে ভাবলো -ইমন তুমি এই বাচ্চা টা চাওনি এতো তারাতারি। কিন্তু ও তো তোমার সন্তান ছিলো। তোমার ই ভুলের জন্য তোমার পুরনো শত্রু তোমার আর আমার সন্তান কেড়ে নিলো। তোমার মধ্যে বিন্দু অনুতাপ ও নেই। তোমার জন্যই আজ আমরা মুনকে হারালাম। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো মুসকান।

সাতদিন পর মুসকান কে বাড়ি নিয়ে আসা হলো।
ইমন খুব চিন্তায় আছে কারন কদিন যাবৎ মুসকান কান্নাকাটি করছে না। ইমনের সাথেও ভালো করে কথা বলছে না। ইমন তাকে স্পর্শ করলেই কেমন একটা ছাড়া ছাড়া ভাব করছে। বাড়ির সবার সাথে তো ঠিকই আছে তাহলে আমার সাথে কিছু নিয়ে রাগ বা অভিমান করেছে কি?
মুনের কথা মনে পড়ছে বলেই কি আমার সাথে রাগ অভিমান করছে। হতেই পারে এই সময়টা তে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। আমার মায়ের মতো যে হয়নি এতেই হাজার হাজার শুকরিয়া।

বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে মুসকান। আাকাশের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। মুসকানের বিষন্ন মন দেখে ইমন এগিয়ে গেলো।
পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো মুসকানকে। ইমনের স্পর্শ পেয়ে হালকা কেঁপে ওঠলো সে।
ইমন তাকে আরো গভীরভাবে জরিয়ে নিলো। মুসকানের ঘারে মুখ লাগিয়ে ভারী আওয়াজে বললো- এভাবে মন খারাপ করে থেকো না মুসকান।
আমি আর পারছিনা এভাবে তোমায় দেখতে।
মুসকান এক ঝটকা দিয়ে ইমনকে ছাড়িয়ে দিলো।

ইমন ধমকে ওঠলো এই কি করছো কি পাগল হয়ে গেছো। তোমার লেগে যাবে তো। শরীরের অবস্থা ঠিক নেই। পা নিয়ে হাঁটতে পারোনা ঠিকভাবে শরীরের বেশ কিছু জায়গায় আঘাত রয়েছে এখনো। এরকম করার মানে কি। উত্তেজিত হয়ে বললো ইমন।
মুসকান কিছু না বলে সেখান থেকে রুমে চলে আসলো।

ইমন হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মুসকানের এমন ব্যবহারের কোন অর্থ সে খুঁজে পেলো না। এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমে গেলো।
মুসকান পিছন ফিরে সুয়ে আছে। ইমন লাইট অফ করে মুসকানের পাশে শুয়ে মুসকানকে টেনে একদম কাছে নিয়ে এলো।
মুসকান বার বার ইমনের হাত সরানোর চেষ্টা করতে লাগলো। ইমন মুসকানের এমন আচরন দেকে আর চুপ থাকতে পারলো না।
ওঠে হালকা ঝুকে মুসকানের দুহাত শক্ত করে চেপে ধরলো বিছানায়। মুসকানের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো- এই বউ,,, কি হয়েছে কেনো এইভাবে দূরে থাকতে চাইছো,,,

ইমনের শ্বাস মুসকানের মুখে লাগতেই তার পুরো শরীর শিউরে ওঠলো। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ইমনকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে কিন্তু,,,,

চলবে…

যারা সিজন ওয়ান পড়েননি পড়ে নিবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here