বউ চুরি সিজন-২ পর্ব ঃ ১৩

#বউ চুরি

সিজন-২

পর্ব ঃ ১৩

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

এশা সবার সামনে গিয়ে দীপান্বিতা কে বললো কাকি মুসকানের নাকি জ্বর হয়েছে,,, খাবাড় দিয়ে আসতে বললো ভাইয়া। দীপান্বিতা এশা কে থামিয়ে বললো আচ্ছা আমি দেখছি।
এশা সহ সবাই মিলে পৃথুলার কাছে গিয়ে বসে বসে আড্ডা দিতে লাগলো। মেঘা বললো কি ব্যাপার মুসকান কে দেখছি না,,, ঘুম ভাঙে নি নাকি?
নতুন বউ এর ঘুম ভেঙে গেলো আর মুসকানের ঘুম ভাঙলো না কাহিনী টা কি।
মিম বললো আগেই বলেছিলাম আমি,,,সবাই হো হো করে হেসে ওঠলো।
ইশ ভাবী গুলা কি দুষ্টু,,, পৃথুলা মনে মনে ভাবছে আর মুচকি হাসছে।
রিপা বললো কি,,,নতুন বউ কি ভাবছো এরা বড় হয়ে এমন তামাশা করছে কেনো???
এরা এমনি,,, আমরা সব জা রাই খুবই ফ্রি,,, একদম বন্ধুর মতো সম্পর্ক সবার মাঝে। এরা সব সময় এমন ভাবেই জ্বালাবে কিন্তু।
পৃথুলা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে বললো হুম,,,

ইমন ল্যাপটবে কাজ করছে আর মুসকান তার ভেজা চুল গুলো ছেড়ে তয়ালে টা চেয়ারের ওপর রেখে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ইমন আড় চোখে মুসকানের কান্ড দেখতে লাগলো।
মুসকান চোখ বুজতেই ইমন বলে ওঠলো কি ব্যাপার আবার ঘুমাচ্ছো কেনো,,, খেতে হবে তো। খেয়ে ওষুধ খেয়ে তারপর নতুন বউ, ভাবীদের সাথে দেখা করে এসো। কি ভাববে সবাই ওঠো ওঠে বোসো এখুনি খাবাড় নিয়ে আসবে খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও।
মুসকান ঘুমু ঘুমু চোখেই ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো আমি এখন কিছু খাবোনা। একটু ঘুমিয়ে নেই তারপর ভাবীদের কাছে যাবো ।

দীপান্বিতা খাবাড় নিয়ে এসে বললো তোমরা দুজনই খেয়ে নাও। ইমন, তোমার দাদু একটু তার সাথে দেখা করতে বলেছে খেয়ে দেখা করে এসো।
মুসকান ওঠে খেয়ে নে। বলেই চলে গেলো দীপান্বিতা।
ইমন কয়েকবার ডাকাতেও মুসকান ওঠলো না।
বালিশের দিকে চেয়ে দেখলো চুলের পানিতে ভিজে একাকার,,,
দেখেছো অবস্থা চুলটাও ঠিকভাবে মুছে নি,,,এখন জ্বরে ভুগবে তারপর ঠান্ডায় ভুগবে। জ্বর ঠান্ডার ফেক্টরি খুলে বসবে আর আমাকে ভোগাবে অশান্তি তে । বিরবির করতে করতে শুকনো তয়ালে নিয়ে মুসকানের পাশে বসলো। মাথায় ধরে একটু উঁচু করে তয়ালে দিয়ে পুরো মাথা পেঁচিয়ে দিয়ে বললো ওঠো আর নিজে খাও আমাকেও খাওয়িয়ে দাও।

তুমি খেয়ে নাও,,, আমি একটু পর খাচ্ছি চোখ বন্ধ করেই বললো মুসকান।
ইমনের মেজাজ বিগরে গেলো। এক ধমক দিয়ে বললো ওঠবে নাকি তুলে ঢিল মারবো একটা।
মুসকান খুব কষ্টে চোখ খুলে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো আমার খুব খারাপ লাগছে,,,মাথাটা ঝিম ধরে আছে। শরীর টাও প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
ইমন মুসকানের দিকে ভালো করে তাকালো ঠোঁটের কোনে দাঁগ পড়ে গেছে,,, গলায় লাঁলচে দাগ স্পষ্ট।
চোখ দুটো বড় বড় করে বললো এই, এটা শরীর না মোম সেটা বলো তো,,, তোমাকে কি ছোয়াও যাবে না নাকি। এবার বাড়ি ভর্তি মানুষ কে জানিয়ে ছাঁড়বে তোমার আর তোমার বরের মধ্যে রাতে কিছু ঘটেছে।

মুসকান মাথা ধরে ওঠে বোসলো ঠোঁট ফুলিয়ে বললো ঘটেছেই তো,,, আমার বর আমাকে ভালোবাসার নাম করে টর্চার করেছে। এই দেখো কি করেছো বলেই ঠোঁট এগিয়ে দেখালো।
ইমন বাঁকা হেসে বললো ইমন চৌধুরীর স্পেশাল টর্চার এগুলো শুধুই মুসকানের জন্য,,,

এদিকে এসো,,,
মুসকান এগিয়ে গেলো ইমন বললো চোখ বন্ধ করো।
মুসকান চোখ বন্ধ করতেই ইমন মুসকানের ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলো।
মুসকান শিউরে ওঠলো চোখ গুলো বড় করে তাকালো।
ইমন ভ্রু নাচিয়ে বললো কি,,,ঘুম সেড়ে গেছে তো।
এবার চাঙ্গা হয়ে গেছেন একদম। এবার আমাকে খাওয়িয়ে দিন আর নিজেও খেয়ে নিন। তারপর ওষুধ টাও খেয়ে নিন।
মুসকান অভিমানী সুরে বললো সারা রাত টর্চার করে এখন তুমি আমাকে খাওয়িয়ে দেবে তা না আমাকে বলছো।
আগে তো ঠিকি খাওয়িয়ে দিতে এখন কি ভালোবাসা কমে গেলো।
ইমন হেসে ফেললো,,, বউ এখন বড় হয়েছে আগে তো ছোট ছিলো তাই আদর বেশী পেয়েছে। এখন বড় হয়েছে এখন তো তাকেও তার পতি সেবা করতে হবে।
আর কথা নয় তারাতারি কাজে লেগে পড়ো ।
মুসকান খাবাড় প্লেট হাতে নিয়ে খাবাড় মেখে ইমনের সামনে ধরতেই ইমন এক হাসি দিয়ে খাবাড়টা মুখে পুরে নিলো। ইমন ল্যাপটবে কাজ করছে আর মুসকান ইমনকে খাওয়িয়ে দিচ্ছে সাথে নিজেও খেয়ে নিচ্ছে ।
খাবাড় শেষে ইমন বললো মায়ের হাতের পর আর কারো হাতে যদি খাবাড় খেয়ে তৃপ্তি পেয়ে থাকি সেটা হচ্ছে বউ,,,
মুসকান লজ্জা পেয়ে ওঠে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো,,,
চুলগুলো আঁচড়ে ওড়নাটা ভালো ভাবে গায়ে জরিয়ে নিলো ইমন মুসকান কে বললো এদিকে এসো তো একটু। মুসকান ইমনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো ল্যাপটবে চোখ রেখেই তাকে ডাকছে।
ইশ ঢং কতো এদিকে এসো এটা করো,ওটা করো হুকুমের ঝুড়ি খুলে বসেছে সকাল সকাল।
কি হলো বিরবির না করে তারাতারি আসো।
মুসকান ভড়কে গিয়ে তারাতারি কাছে গেলো।
আবার না কখন ঝাড়ি দিয়ে বসে,,,
ইমন মুসকানকে একটানে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে ল্যাপটব টা অফ করলো।
মুসকানের ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো,,,
এটার ই অপেক্ষায় ছিলাম,,,
সব নেশাই তো পূরন করেছো এটাই বা বাদ রাখবে কেনো বলেই চুল ছেঁড়ে ঘারে মুখ ডুবালো।
মুসকানের শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন হতে শুরু করলো।
ধীর গলায় বললো এবার যাই আমি,,, ওদের একটু সময় দিতে হবে তো।
ইমন চোখ বন্ধ করেই ভারী আওয়াজে বললো হুম। ভাবীরা কিন্তু অনেকরকম কথাই বলবে তুমি চুপচাপ থাকবা।
যদি ওলটা পালটা কিছু বলেছো,,, আর কোন প্রকার ছেলেমানুষী করেছো আজ বাড়ি নিয়ে একদম ছাদ থেকে ঢিল দিবো।
মুসকান চট করে হাত ছাড়িয়ে ওঠে পড়লো।
আমি যাই এখন তুমি থাকো বলেই এক দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। ইমন বাঁকা হেসে ফোন বের করে সাব্বির কে ফোন করলো আর বললো তুই উনাকে আমার বাড়ি নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর। আমি আর মুসকান ছাড়া কেউ থাকবে না ওকে রাখছি।
সাব্বির বললো ওকে সব ব্যবস্থা করছি।

মুসকান সবার মাঝে গিয়ে বোসলো। এশা মুখ ফসকে বলে ফেললো তোমার জ্বর কমেছে।
মুসকান হকচকিয়ে গেলো।
হুম কমেছে,,,
মিম বললো তা ননদিনী,,, তোমার ঠোঁটে কি জ্বর ওঠা ওঠেছে নাকি।
মুসকান লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। পৃথুলাও মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো।
রিপা বললো ইশ দশটা না পাঁচ টা না একটা মাএ ননদ। তাকে তোমরা এক দন্ড শান্তিও দাও না।
মুসকান বললো জ্বর ওঠা মানে কি ভাবি,,,
মেঘা বললো মানে হচ্ছে জ্বরের রেশ বের হয় জিহ্বা, ঠোঁট দিয়ে।
মুসকান বললো আমি একদম ঠিক আছি। তোমরা সবাই শুনো আজ তো আমি ফিরে যাচ্ছি,,, তোমাদের সাথে আবার কবে দেখা হবে জানিনা।
তোমরা অবশ্যই আমাদের ওখানে যাবে।
পৃথুলা বললো আজি চলে যাবে আজকের দিন থেকে যাওনা,,,
মিম বললো আরে পৃথুলা কি বলছো,,,
আমার দেবর তো তার বউ ছাড়া এক ঘন্টাও কোথাও টিকতে পারে না বউ রেখে যাবে সেটা ভাবা তো অসম্ভব তার কাছে।
মুসকান বললো ইশ ভাবি মোটেই না,,, আমার পড়াশোনার ও ক্ষতি হচ্ছে।
মেঘা বললো এই মিম তুই কি তোর স্বামীকে একা একা যেতে দিবি নাকি,,, বর বউ একসাথে থাকবে এটাই তো নিয়ম।
মুসকান মুখ ফসকে বলে ফেললো হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছো ভাবি,,, বলতেই জিবে কামড় দিয়ে ধরলো।
সবাই অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো।

মুসকান আর পৃথুলা বেশ কিছু সময় গল্প করলো।
দুপুরের দিকে পৃথুলাদের বাড়ির সবাই এলো। বউ ভাত এর অনুষ্ঠানটা বেশ বড়সড় করেই হলো চৌধুরী বাড়ি। বিকালের দিকে সকলে মিলে মুসকান আর ইমন কে এগিয়ে দিলো। মুসকান যাওয়ার আগে রূপ কে অনেক আদর করে দিলো। ইমন মুসকানের রুপকে আদর করাটা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো।
সিজান আর মেঘ কেও আদর করে কপালে চুমু খেলো।
রূপালী ইরাবতীর কাছে এসে বললো মেয়েটা যতোই বাচ্চা বাচ্চা থাকুক, যতোই অবুঝ থাকুক, ওর ভিতরে আলাদা একটা বোঝ শক্তি আছে। আর সেটা কি জানো ভাবী,,, ইরাবতী রূপালীর দিকে জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
রূপালী বললো ওর মধ্যে মায়ের মমতা, স্নেহ ভরে আছে। ওর ভিতর একটা নিষ্পাপ প্রান আছে। আর ওর মুখ,চোখ দেখেই বোঝা যায় ও যেমন ভালোবাসার কাঙাল হয়ে থাকে, সবার ভালোবাসা চায়, এখন তার থেকেও বেশী একটা সন্তানের কাঙাল হয়ে আছে।
ইরাবতী বললো তুই ঠিক বলেছিস। ভালোবাসার কোন কমতি আমার ছেলে রাখেনি। ভাগ্যের দোষে এই বয়সেই সন্তান হারা হয়েছে কিন্তু আমার ছেলে থাকতে ওর কোন কমতি থাকবে না।
মুসকান ইরাবতীর সামনে এসে বললো মামনি যাচ্ছি তোমরাও তারাতারি এসে পড়বে কিন্তু,,, ইরাবতী বললো আমার ছেলেকে কটাদিন রেঁধে খাওয়াতে পারবি তো,,,
মুসকান খানিকটা লজ্জা পেয়ে বললো ভুল তো হবে মামনি তোমার ছেলেকে বলে দাও বকাবকি যেনো না করে। আর আমি পারবো অনেকটাই তো পারি বলেই মুসকান একটা হাসি দিলো।
রূপালী বললো আচ্ছা আমিও বলে দিচ্ছি ইমন কে।
ইরাবতী থামিয়ে বললো না তুই কিছু বলিস না আমিই বলছি।ছেলে আমার ত্যাড়া আছে তুই বললে আবার ভাববে মুসকান বলেছে। আমি তো সবসময়ই বলে দেই তাই আমি বললে সমস্যা হবে না।
মুসকান বললো হ্যাঁ তোমার ছেলে তুমিই বলো চলোতো কাকি বলেই রুপালীকে নিয়ে এগিয়ে গেলো মুসকান।
ইরাবতী ইমনের কাছে গিয়ে বললো বাবা শোন,,,
সাবধানে থাকিস। আলেয়া কে ফোন করলেই চলে আসবে। আর শোন মুসকান কে বকাবকি করিস না কিছু নিয়ে কেমন।
ইমন বললো তোমার কথা শেষ, এবার আমার কথা শুনো তারাতারি চলে যেও। আর সবাইকে বলো তারাতারি বিদায় দিতে দেরী হয়ে যাচ্ছে আমার কাজ আছে।
রূপম এসে বললো চলে যাচ্ছিস আবার কবে দেখা হবে কে জানে। বেশ ভালোই কাটলো কিছুদিন গ্রামে।
তাহলে সিলেট যাবি কবে,,,
আমার আর সময় হবে না, তুমি ভাবি কে আর রূপকে নিয়ে যেও।
রূপম খোঁচা দিয়ে বললো তোর সময় নাই মুসকানকে পাঠিয়ে দিস তোর যেতে হবে না।
ইমন বাঁকা চোখে রূপমের দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী হাসি দিলো৷ রূপম ও দাঁত কেলিয়ে হেসে ওঠলো।
ইমন সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে গাড়িতে ওঠে বোসলো।

সবাই মিলে মুসকান কে গাড়ি অবদি এগিয়ে দিলো।
গাড়িতে ওঠে মুসকান সবাই কে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। মিম জোর গলায় বলে ওঠলো যাচ্ছো দুজন,,, পরেরবার যেনো তিনজন দেখতে পাই।

মুসকান লজ্জা পেলো সেই সাথে ইমনের দিকে কটমট করে তাকালো। ইমন দেখেও না দেখার ভান করে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

আধাঘন্টা পর ইমন দেখলো মুসকান বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। হায়রে ঘুম,,, গাড়িতেও ঘুমাতে হবে একটা রাত জেগে থাকতে পারে না এই মেয়ে। মাঝে মাঝে মুসকান কে আড় চোখে দেখছে ইমন। মনে মনে ভাবলো তোমার জন্য কতো বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। এতোগুলো দিন তোমার থেকে লুকিয়ে যে কাজটা আমি কমপ্লিট করেছি এবার সেটা তোমার সামনে আসবে,,,
আর সেই মূহুর্তে তোমার হাসি,তোমার আনন্দ, তোমার চোখের পানি কতোটা তৃপ্তিময় হবে তা এক আমিই জানি। তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া সেদিন হবে যেদিন আমি তোমাকে একটা সন্তান দিতে পারবো। কিন্তু যার জন্য আমি তোমাকে পেয়েছি সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ টা কে যখন তুমি পাবে সেটাও কি শ্রেষ্ঠ পাওয়া হবে না,,,

পৌঁছাতে রাত দশটা বেজে গেলো। মুসকান কে ডেকে ওঠালো ইমন।
আর কতো ঘুমাবে বাড়ি এসে গেছি আমরা।
সত্যি,,,বলেই মুসকান চোখ দুটো ভালোভাবে কচলাতে লাগলো।
ইমন গাড়ির ডোর খুলে বললো তারাতারি বের হও।
মুসকান চট করে বেরিয়েই এক লাফ দিলো,,,
ইয়ে,,,আমাদের বাড়ি এসে গেছি ।
কতোদিন পর নিজের বাড়ি ফিরলাম,,, যতো ভালো জায়গায়ই যাই না কেনো নিজের বাড়ি থাকার শান্তিই আলাদা। নিজের বাড়িতেই স্বর্গের মতো সুখ অনুভূত হয় খুব মিস করেছি বাড়িটাকে। ইয়য়য়াহু,,,, বলেই দুদিকে দুহাত রেখে চিৎকার করে ওঠলো মুসকান।

ইমন মুসকানের এতো খুশি হওয়া দেখে তাকিয়ে রইলো।
মুসকান বাচ্চা দের মতো লাফাতেই লাগলো।
নাহ এই মেয়েকে এবার থামানো উচিত বলেই ধমক দিলো ইমন।
মুসকান থেমে গেলো ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো সরি,,,আসলে খুব ভাল্লাগছে আমার।
হুম ভিতরে চলো এবার অনেক হয়েছে।
মুসকান ভেঙচি কেটে ইমনের পিছন পিছন যেতে লাগলো।
ইমন বাড়ি ঢুকেই মুসকান কে বললো কয়েক দিনের জন্য তুমি আমি একা সময় কাটাবো,,,রান্না থেকে শুরু করে সংসার সামলানো সব দায়িত্ব তোমার।
মুসকান বললো আলেয়া চাচী আসবেনা,,,
না আসবে না, আমার সাথে একা থাকবে বাড়িতে।
যাও ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমে আসো।

ইমন কাপড় পালটে বেলকুনিতে গিয়ে বসলো।
মুসকান পানি নিয়ে যেতেই ইমন পানিটা ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।
মুসকান গ্লাস রাখতেই বললো কিচেনে খাবাড় আছে ওগুলো গরম করো গিয়ে, রাতে খাবো কি।
আম্মু দিয়ে দিয়েছে ওগুলো,,,
হুম।
তুমিও নিচে চলো একা একা ভয় লাগে আমার কেউ নেই তো,,,
ইমন মুসকানের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললো বাড়িতে ভয় কিসের,,, আমি কি সব সময় থাকবো,কাল সারাদিন তো একাই থাকতে হবে বাড়িতে।
কি,,,বলেই মুসকান বড় বড় করে তাকালো।
ইমন ওঠে দাঁড়িয়ে বললো জ্বি,,,
যাও এবার একাই কাজ করো গিয়ে বউদের একাই

সব করতে হয়, স্বামীরা কি সবসময় কাছে থাকবে নাকি।
এখন তো আছো চলো না তুমি,,,
যা বলছি তাই করো যাও।
মুসকান মুখ ভাড় করেই নিচে চলে গেলো।
কিচেনে গিয়ে তরকারিটা গরম করলো,,, তারপর ভাবলো ইমন তো শশা ছাড়া মাংস একদমই খায়না তাই শশা টা কাঁটতে লাগলো।

ইমন চুপি চুপি এসে ড্রয়িং রুমে বোসলো আর দৃষ্টি স্থির রাখলো মুসকানের দিকে।
মুসকান একবার চুল সরাচ্ছে আবার ওড়না ঠিক করছে তো আবার কাজ করছে। ইমন গভীর চোখে তার বউ এর কর্মকাণ্ড দেখতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষন পর ধীরে ধীরে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলো।মুসকানের পিছনে দাঁড়িয়ে ওড়নাটায় ধরে এক টান দিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।
মুসকান ভয়ে আঁতকে ওঠলো পিছনে তাকাতেই এক নিশ্বাস ছেড়ে এক হাত বুকে দিয়ে বললো ওহ তুমি,,, ভয় পেয়ে গেছিলাম,,, এটা কি হলো,,,
কাজে ডিস্টার্ব করছে তো এটার কি প্রয়োজন,,, তোমার হাজব্যান্ড ছাড়া কেউ নেই পুরো বাড়িতে সো এটার ও প্রয়োজন নেই বলেই হাতে পেঁচাতে লাগলো ওড়নাটা।
মুসকান লজ্জা পেয়ে পিছন ঘুরে আবার কাজে মনোযোগ দিলো। শশা কাটা শেষে রাইস কুকারে ভাত বসিয়ে দিলো। একবারো আর পিছন ঘুরে তাকালো না। ইমন সেখানে দাঁড়িয়েই মুসকানের কাজ গুলো দেখতে লাগলো।
মনের ভিতর আলাদা এক শান্তি তে ভরে গেলো ইমনের। না আমি যা ভাবছিলাম তা না,,, মুসকান সত্যি এখন অনেক বোঝে,আর সব সামলাতেও পারবে। যতটা পারছে করছে আর মন দিয়েই করছে। করবে নাই বা কেনো এটা তো ওর ই সংসার।
ওর স্বামীর জন্যই তো করছে সব,,,এবার একটা সন্তান,,, তবেই আমি আমাদের জীবন টা পরিপূর্ণ।
কিন্তু তার জন্য আরেকটু ম্যাচিওর হতে হবে তোমায়। ভাবতে ভাবতেই মুসকানের একদম পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
হুট করেই পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
বড্ড আদর করতে ইচ্ছে করছে মুসকান, তোমার মধ্যে এখন কেমন বউ বউ রূপ এসেছে। যা দেখে সত্যি আমার আত্না টা তৃপ্তিময়ে ভরে ওঠেছে।
মুসকান লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। শ্বাস ঘন হয়ে এলো তার।
ইমন পেটে গভীর ভাবে দুহাতে চেপে ধরলো ঘারে মুখ ঠেকিয়ে বললো মেয়েদের শরীরের ঘামের গন্ধ ও মারাত্মক,,,
কাজটা শেষ করতে দিবে না নাকি পরে তো আমাকেই বকবে,,,
ইমন চোখ বন্ধ করে বললো রেমান্স করছি ভালো লাগছেনা নাকি।
মুসকান কিছু বলবে তার আগেই ইমনের ফোন বেজে ওঠলো।
ইমন ছেড়ে দিলো মুসকান কে ফোন রিসিভ করে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলো। মুসকান সব রেডি করে ডায়নিং টেবিলে সাজিয়ে রাখলো। আর বিরবির করে বললো মুসকান বেটিয়া এবার জামাইকে আদর -যত্ন করে খাওয়াও,,,
দশটা না পাঁচ টা না একটা মাএ জামাই তোমার।
ইমন চেয়ার টেনে বসে মুসকানের দিকে কঠোর চোখে তাকালো,,,
জামাই কয়টা থাকে মানুষের?
মুসকান আমতা আমতা করে বললো এএকটাই তো।
আমি তো মজা করছিলাম।
বাহ খুবই ভালো। এমন মজার কথা কোথায় থেকে শিখে আসলা ভাবী দের কাছ থেকে।
মুসকান উৎসাহিত হয়ে খাবাড় এগিয়ে দিতে দিতে বললো হ্যাঁ,,, ভাবিরাতো বলে দশটা না পাঁচ টা না একটা মাএ ননদিনী আমার। তাই আমি ওটা মিলিয়ে ননদের জায়গায় স্বামী বসালাম হিহিহি।
ইমনের দিকে তাকাতেই মুসকানের হাসি উড়ে গেলো। কাচুমাচু করে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
ইমন গম্ভীর গলায় বললো ঠিক এই জন্যেই তোমাকে রেখে আসিনি,,, আর কি কি শিখেছো শুনি বলোতো।
কককই আর কিছু না তো।
মুখ গম্ভীর করেই বললো হুম গুড।
এবার খেতে বোসো।

দুজন একসাথে খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে ইমন ইরাবতীকে ফোন করে জানিয়েও দিলো।

মুসকান শুয়ে আছে ইমন ল্যাপটবে কাজ করছে।
হঠাৎ ইমন বলে ওঠলো -মুসকান,,,
কাল তোমার সাথে একজন দেখা করতে আসবে।
মুসকান ধপ করে ওঠে বোসলো। কে আসবে কাল,,, রায়া আসবে কি???
ইমন মুসকানের চোখে চোখ রেখে বললো যার জন্য তোমাকে পেয়েছি বা যার থেকে বহুবছর আগে তোমায় ছিনিয়ে এনেছি। যার বুক খালি করে নিজের বুকের ভিতর ভালোবাসার ছোট্ট ঘর তুলে তোমায় বন্দিনী করে রেখেছি,,, ঠিক সেই মানুষ টাই আসবে।

মুসকানের আত্মা টা কেঁপে ওঠলো। অজানা ভয় ঘিরে ধরলো তাকে। মুখ টা মলিন হয়ে গেলো। অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো ইমনের দিকে।
চোখ দুটো চিক চিক করছে তার। ইমন একটু এগিয়ে এসে মুসকানকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
মুসকান ইমনকে দুহাতে জরিয়ে কেঁদে ফেললো।

চলবে……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here