বউ চুরি সিজন-২ পর্ব ঃ ১৪

#বউ চুরি

সিজন-২

পর্ব ঃ ১৪

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

মুসকান,,,এটা কি হচ্ছে এভাবে কাঁদছো কেনো।
এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি রেগে যাবো।
মুসকান কাঁদতে কাঁদতে বললো- তুমি কাউকে আসতে দিওনা। কেউ যেনো না আসে আমি তোমার থেকে আলাদা হতে চাইনা।

ইমন মুসকানের দুকাঁধে হাত রেখে ওঠিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো তোমার মাথায় কি বুদ্ধিশুদ্ধি কোনদিন হবেনা,,, এই মেয়ে মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে। এইটুকু বয়সে এইটুকু হাত নিচু করে দেখিয়ে বললো এইটুকু বয়সে বুদ্ধি খাটিয়ে তোমাকে নিয়ে এসেছি। এতোগুলো বছর এতোটা যুদ্ধ করে নিজের করে নিয়েছি। কেউ এসে তোমাকে নিয়ে যেতে চাইবে আর দিয়ে দিবো নাকি।
মুসকানের কান্না থেমে গেলো। হা করে চেয়ে রইলো ইমনের দিকে। গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা কালো দাঁড়ি,,, গোলাপী ঠোঁটে প্রলাপ করছে। মুসকান হা করে চেয়ে শুনছে।
মুসকান,,, যে আসবে ওনি তোমার জন্মদাএী মা।
ওনার কাছ থেকে আমি তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম।
না ওনার কাছ থেকে না ওনার মায়ের থেকে।
মুসকান ইমনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। উপর দিকে চোখ রেখে তাকিয়ে রইলো মুখের দিকে।
আর ইমন এক গাল হাসি একে বলতে লাগলো।
মুসকান,,,আল্লাহর পর যদি দুনিয়াতে কারো স্থান প্রথম থাকে সেটা হচ্ছে মা। আল্লাহর পর যদি আমাদের কে কেউ সব থেকে বেশী ভালোবেসে থাকেন সে হলো আমাদের জন্মদাএী।
কিন্তু ওনি তোমাকে ভালোবাসার সুযোগ পায়নি।
আর তোমারও ওনার ভালোবাসা পাওয়া হয়নি।
আর এর জন্য কোন না কোন ভাবে আমিই দায়ি।
কিন্তু এই দায়িটাও যে কোন না কোন ভাবে তোমার জন্য মঙ্গল কর সেটা তুমি ধীরে ধীরে বুঝবে।

মুসকান ইমনের একহাত আঁকড়ে ধরে নিজের গালে ছুঁয়ালো।ইমন একটু হেসে মুসকানকে ওঠিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
“আর বললো বউ বড় আদরের জিনিস। কিন্তু সেই বউ কে আদর করে কোন কিছু মানানো যে কতো বড় কঠিন কাজ তা শুধু পুরুষ মানুষরাই বোঝে।,,
মুসকান নাক টেনে টেনে বললো বুঝোগা,,,
ইমন বললো মুসকান,,,আমি তোমাকে আজি এ বিষয়ে জানাতাম না। কিন্তু আজ না জানালে ওনার সামনে তুমি কি সিনক্রিয়েট করতে সেটা আমি ভালো করেই জানি। তাই আজি বলে রাখছি তোমায়। ঐ মানুষ টা জীবনে কিছু পায়নি, না পেয়েছে স্বামী সুখ, না পেয়েছে সন্তান সুখ, ছোট মেয়ে টা কে জন্মের পরই হারিয়েছে। ঐ মানুষটার না কষ্টের শেষ রয়েছে না দুঃখের শেষ রয়েছে। তাই আমি চাইনা কাল আমাদের এখানে এসে তোমার থেকে সে কোন দুঃখ পাক।
এ বাড়ির কারো সাথে তোমার রক্তের সম্পর্ক নেই কিন্তু ওনার সাথে তোমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ ওনি তোমার,,,
যেমনটা আমার মা আমার কাছে শ্রেষ্ঠ,,,

মুসকান বললো আর আমি,,,
তুমি,,,তুমি হচ্ছো আমার অমূল্য রত্ন,,, আমার সম্পত্তি। যার ওপর শুধু আমার ই অধিকার রয়েছে বলেই ঘাড়ে আলতো ভাবে ঠোঁট ছুঁইয়িয়ে দিলো।
মুসকান শিউরে ওঠলো।
ইমন মুসকানের একহাত শক্ত করে চেপে আরেক হাতে কোমড় জরিয়ে নিতেই মুসকান বললো আচ্ছা ওনার স্বামী বা সন্তান নেই কেনো।
ইমন থেমে গেলো চোখ খুলে মুসকানের দিকে চেয়ে কঠোর গলায় বললো ওনি তোমার মা।
মুসকান চুপসে গেলো।
ইমন বললো একবারেই সব জেনে যাবে আস্তে আস্তেই সব জানতে পারবে। ওনিই বলবে তোমায় সব। কিন্তু তুমি কাল ওনার সাথে যথেষ্ট ভদ্র আচরন করবে। কোন প্রকার অসম্মান করবে না। আর মা বলে ডাকবে।
মুসকান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইমন বললো।
উহুম,,, কোন কথা নয় এটা আমার আদেশ,,, কথার নড়চড় হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

মুসকান মুখ টা গম্ভীর করে ফেললো।
ইমন গালটা একহাতে চেপে ধরে নিজে একটু নিচু হয়ে ঠোঁটে আস্তে করে কামড় দিলো।
মুসকানের পুরো শরীর কেঁপে ওঠলো। ইমন ঠোঁট ছেড়ে গলায় কামড় দিলো,,,
মুসকান খানিকটা ব্যাথা পেয়ে আহ,,,করে উঠতেই ইমন মুখটা একহাতে চেপে বললো। এখন মুখ গম্ভীর করে থাকো কোন নিষেধ নেই,,, শুধু আমার কাজে বাঁধা দিও না। গলায় আলিঙ্গন করতে লাগলো।
মুসকানের শ্বাস ঘন হয়ে এলো,,, ইমন বেশ কিছুক্ষন আদরের ছলে মুসকান কে জ্বালিয়ে ছেড়ে দিলো।
মুসকান ইমনকে আটকে ভারী আওয়াজে বললো কোথায় যাচ্ছো,,,
ইমন বললো ঘুমিয়ে পড়ো,,,
বিছানা ছেড়ে ওঠে টেবিলের সামনে গিয়ে গ্লাসে পানি ভড়ে পানিটা খেয়ে নিলো ইমন।
মুসকানের দিকে তাকাতেই দেখলো মুসকান ইমনের দিকে চেয়ে আছে।
ইমন লাইট টা অফ করে মুসকানকে বুকে জরিয়ে নিলো।
মুসকান ইমনের গালে হাত রেখে থুতনিতে কিস করলো।
ইমন চোখ বন্ধ করেই বললো মুসকান,,, ঘুমিয়ে পড়ো। নো দুষ্টুমি। কাল কিন্তু বাসায় একজন আসবে, সারাদিন মাটি না করতে চাইলে চুপচাপ ঘুমাও,,,
মুসকান লজ্জা পেয়ে ইমনের বুকে মুখ গুজে ফেললো। ইমন বাঁকা হেসে মুসকানের মাথায় কিস করলো।

সকাল হতে না হতেই সুমন ফোন করলো ইমনকে।
ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের মুসকানকে একহাতে জরিয়ে আরেক হাতে ফোন নিয়ে রিসিভ করলো।
সাথে সাথেই ওপাশ থেকে বলে ওঠলো ভাই কি মেয়ে বিয়ে করলাম,,, জীবন টা আমার অতীষ্ট করে ফেললো। না ছুঁতে দেয়, না খেতে দেয়।

ইমন ধমকে বললো কিহ,,,
সুমন ভয়ে ঢোক গিলে বললো আরে ভাই মা গেছে তার বোনের বাড়ি কাল রাতে না খেয়ে ঘুমাইছি।
রান্নাবান্না কিচ্ছু করে না কিছু বলতে গেলেই কেমন তেড়ে আসে ভাই। বউ না রনমূর্তি কিচ্ছু বুঝিনা।
একটু ছুলে মনে হয় গায়ে ফোসকা পড়ে।

এই শালা বউ সামলাতে পারোস না কেমন পুরুষ হইছোস তোর বউ কি আমি সামলে দিবো। নিজের বউ নিজেই সামলা। আর যদি আমার সামলাতে হয় তাহলে কিন্তু তোর বউ এর কপালে দুঃখ আছে।
পুরুষ হলে দুদিনের মধ্যে বউ ঠিক করবি। বউ ঠিক না করে আমার সামনে আসলে তোর কি হাল করবো ভাবতেও পারবিনা৷ রাখ ফোন,,, বলেই ফোন রেখে দিলো।

মুসকানের ঘুম ভেঙে গেছে। গলা জরানো কন্ঠে বললো কার বউ,,, কি হয়েছে?
কিছু হয়নি। সব কথা কান পেতে শুনতে হবে তোমার,,,
যাও ওঠে রান্না করো তোমার মা আসবে সে আসার আগে যেনো সব রেডি থাকে।
আর হ্যাঁ পায়েস টা করবে আজ। মায়ের থেকে ফোন করে শুনে নিবে। যাও ওঠো আমাকে দু’ঘন্টা পর ডেকে দেবে। বলেই ইমন ওপর হয়ে শুয়ে পড়লো।
মুসকান ওঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ইমনের ফোন নিয়ে ইরাবতী কে ফোন করে নিচে চলে গেলো।

ইমনের জন্য ইলিশ মাছ ভাজি করবে তাই কড়াইয়ে তেল দিলো। তেল দেওয়ার সময়ই খানিকটা তেল ছিটকে মুসকানের গলায় লাগলো।
সাথে সাথে হালকা চিৎকার করে আবার নিজেই মুখটা চেপে ধরে উপরে তাকালো। গ্যাস বন্ধ করে তারাতারি গলায় ঠান্ডা পানি দিলো। খানিকসময় পর জ্বালা কমতেই আবার রান্নায় মনোযোগ দিলো।
একঘন্টা পর প্লেট গুলো ধুয়ে তরকারি টা বসিয়ে দিয়ে উপরে গেলো মুসকান।
ইমন ঘুমিয়েই আছে,,, গলায় কেমন জ্বালা জ্বালা অনুভব হচ্ছে তাই ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে গলায় তাকাতেই ভয়ে আত্মা টা কেঁপে ওঠলো দুজায়গায় ফোসকা পড়ে গেছে।
হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো মুসকানের,,,ভয়ে ভয়ে ইমনের দিকে একবার চেয়ে দ্রুত নিচে চলে গেলো।
ফ্রিজ থেকে কয়েক টুকরো বরফ বের করে গলায় লাগাতে লাগলো। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়তে লাগলো।
জ্বালা পোড়ার জন্য নয়,,,ইমনের চোখে ফোসকার দাগ পড়লে আজ তার কালদিন শুরু হয়ে যাবে সেই ভয়েই হাতপা কাঁপতে শুরু হয়েছে তার।
কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলো,,,
বেশ জ্বালা পোড়াও হচ্ছে,,,
এখন কি করবো আমি,,, আমাকে তো আজ মেরেই ফেলবে ভেবে ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো।
খুব ভয় আর চিন্তায় পড়ে গেলো। এদিকে ইমনকে ডাকার সময়ও হয়ে গেছে।
কি করবো এখন আমি আল্লাহ রক্ষা করো। ওড়নার দিকে চোখ পড়তেই -এইতো,,, হ্যাঁ এটা দিয়েই পেঁচিয়ে যাই আপাদতো। প্লিজ ওর চোখে যেনো না পরে, ওর যেনো এদিকে খেয়াল ই না হয়। ভালো ভাবে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে উপরে গিয়ে ইমন কে কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকলো।
আল্লাহ,,, আমার গলা এমন কাঁপছে কেনো,,,
গলাটা একটু স্বাভাবিক রেখেই আবার ডাকলো,,,
ইমন ওঠে বসতে বসতে বললো দু’ঘন্টা হয়ে গেছে।
মুসকান বললো হুম হয়ে গেছে তুমি ওঠো বলেই বিছানা গুছাতে লাগলো।
ইমন চট করে ওঠে বাথরুম চলে গেলো।

কলিং বেলের আওয়াজে ইমন দ্রুত নিচে চলে গেলো।
মুসকান স্বস্থির এক শ্বাস ছেড়ে ওড়না সরিয়ে গলাটা দেখলো। এতো জ্বলছে তবুও চুপ করে রয়েছে। কারন ইমন দেখলে খুব রেগে যাবে। সেই সাথে কষ্টও পাবে। তাই ভয়ে এবং কষ্ট পেতে দিতে চায়না বলেই ফোসকার জায়গাটা আড়াল করেই রাখলো।

ইশ কি জ্বলছে কি দিলে ঠিক হবে বরফ তো দিয়েছি। ও দেখার আগেই যেনো ঠিক হয়ে যায়। নয়তো খুব রেগে যাবে আল্লাহ এই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচাও আমায়। ওড়নাটা পেঁচিয়ে ভয়ে ভয়ে নিচে চলে গেলো।

ইমন দরজা খুলতেই ৪৭বছর বয়সি একজন মহিলা এবং সাথে সাব্বির কে দেখতে পেলো। ইমন সালাম দিয়ে বললো কেমন আছেন মা,,,
মহিলাটি ইমনের দুগালে হাত রেখে -ভালো বাবা তুমি কেমন আছো।
ইমন ওনার কাধে ধরে ভিতরে নিয়ে আসতে আসতে বললো ভালো আছি। সাব্বির ও ভিতরে এসে বোসলো।
মুসকান সিঁড়ি তে দাঁড়িয়েই থেমে গেলো। হঠাৎ ই বুকের ভিতর ঠান্ডা অনুভূত হলো সেই সাথে বুক টা ধকধক করতে লাগলো। একদমই অচেনা,অজানা এক অনুভূতি ভর করলো তার শরীরে, মনে। সেই সাথে কেমন অস্বস্তিকর লাগতে শুরু করলো।
ইনি আমার মা,,,
ইমনের দিকে চেয়ে দেখলো কতো সম্মানের সাথে কথা বলছে,,, এমনটা বোধহয় আর কারো সাথেই করতে দেখা যায় না,,, অসম্মান না করলেও এতো আন্তরিকতা বোধ হয় কাউকেই দেখায়না।
তবে কি আমার মা বলেই এতো টা আন্তরিকতা,,,
ভেবেই মায়ের দিকে তাকালো,,, মুখের দিকে তাকাতেই বুক টা কেঁপে ওঠলো চোখের কোন অজান্তেই পানি চলে আসলো।
মুসকানের মা বিদিষা বেগম মুসকানের দিকে তাকাতেই বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো চোখ দুটো তার মুসকানের দিকে। ইমন সেই চোখ অনুসরন করেই মুসকানের দিকে তাকালো।
মুসকান খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো। ইমন বললো মুসকান,,, এদিকে এসো।
মুসকান ইতস্ততভাবে এগুতে লাগলো।
বিদিষা বেগমের চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি পরতে লাগলো। সে যে মা,,, যে সন্তান কে জন্মের পর মাএ পাঁচদিন বুকে আগলাতে পেরেছিলো সেই সন্তান আজ তার সামনে।
ঊনিশটা বছর পর আজ সেই ছোট্র মেয়েটা কে দেখছে বিদিষা,,, মনে পড়ে যাচ্ছে সেই পাঁচ দিনের মুখ টা।
মুসকান এসে সামনে দাঁড়াতেই বিদিষা মুসকান কে জাবটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো।
ইমন পকেটে হাত রেখে সরে দাঁড়ালো।
মুসকানের ও চোখ বেয়ে পানি ঝড়তে লাগলো।

পৃথিবীতে সব থেকে শক্তিশালী সম্পর্ক হলো মা এবং সন্তানের সম্পর্ক। যতো কঠিন পরিস্থিতিই আসুক না কেনো একজন মা কে কখনো কেউ তার সন্তান থেকে আলাদা করতে পারেনা। আর যদিও বা ভাগ্যের ফেরে এমন ঘটনা ঘটে যায় তাহলে দুনিয়ার যে প্রান্তেই মা এবং সন্তান থাকুক না কেনো তারা এক হবেই। একজন মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন হচ্ছে তার সন্তান। সেই নাড়ির টানেই একজন আরেকজন কে ঠিক পেয়ে যায়। কোন না কোন ভাবে ঠিক সন্তান মা আর মা সন্তান এর কাছে পৌঁছে যায়।

বিদিষা বেগম মুসকানে দুগালে ধরে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলেন। সাব্বিরের মা মেয়ের দৃশ্য দেখে চোখে পানি এসে গেলো৷ ইমনের পাশে গিয়ে দাড়ালো।

বিদিষা বেগম একবার বুকে চেপে ধরছেন তো আরেকবার মুখ ওঠিয়ে চুমু খাচ্ছেন।
মুসকান যেনো কিছুক্ষনের মধ্যেই বড় মায়ায় পড়ে গেলো। সেই সাথে তার আত্মা টা প্রশান্তি তে ভরে গেলো। বিদিষা বেগম আদর করতে করতে বললো মা,,, আমার মা,,,আমার সোনামুনি,,, আমার কলিজা,,,একবার মা বলে ডাক মা একবার মা বলে ডাক।
মুসকান চাপা গলায় আস্তে করে বললো মা,,,
বিদিষা বেগম হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

ইমন ভাবতে পারেনি মুসকান এতো সহজেই মেনে নেবে। বেশ অবাক এবং সেই সাথে খুশি হয়েই সাব্বিরকে বললো –

‘ সত্যি মায়ের উদাহরণ মা নিজেই। মায়ের সাথে সন্তানের যে যোগসূত্র তা ভাষায় প্রকাশ করাটা কঠিন। শুধু অনুভব করা যায়, মায়ের মমতা ভরা ছোয়া। মুসকান ঠিক তার মায়ের মমতা, ভালোবাসা বুঝতে পেরেছে। সেই সাথে কতোটা শান্তি পেয়েছে তা আমি জানি।
ওর জীবনের একটা আফসোস আমি কাটিয়ে দিলাম।
সাব্বির ইমনের কাঁধে হাত রেখে বললো সত্যি তুই বলেই পারিস। তোর মতো এমন একজন স্বামী,সন্তান কজন পায় বলতো।
ইমন বাঁকা হেসে বললো আর বন্ধু,,,
সাব্বির বলললো সে আর বলতে,,,

হঠাৎ ই ইমনের হাসি মুখটা মিলিয়ে গেলো।
মুসকানের গলায় ওড়না পেচানো কেনো টনসিল বাড়লো নাকি,,,
নাহ ওর মা কে দেখে মাথায় ওড়না দিয়েছিলো বোধ হয়,,,

কতো বড় হয়ে গেছে আমার মেয়েটা বলেই ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো বাবা এদিকে আসো।
ইমন গিয়ে মুসকানের পাশে দাঁড়ালো।
বাহ,বেশ মানিয়েছে দুজন কে,,,
ইমন লজ্জা পেয়ে গেলো,মুসকান অবাক চোখে তার নিজের মা কে দেখে যাচ্ছে। মুখের সাথে নিজের মুখের বেশ মিল পাচ্ছে। মনটা তার খুশিতে ভরে ওঠলো।
ইমন বললো মুসকান সবাইকে

খেতে দাও,,, বিদিষা বেগম বললেন না বাবা।
মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললেন মা তুমি সব দেখিয়ে দাও আমি নিজের হাত তোমাদের বেড়ে আর আমার মেয়েকে নিজের হাতে খাওয়াবো

বিদিষা বেগমের কথা সবাই শুনলো। বিদিষা বেগম পরম আদরে মুসকানকে খাওয়িয়ে দিলো।
মুসকানের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়লো।বিদিষা বেগম ও কেঁদে চলেছে এযেনো মা মেয়ের আনন্দের কান্না।
ইমন বেশ লক্ষ করলো মুসকান কেমন যেন ইমনকে ভয়ে ভয়ে দেখছে মাঝে মাঝে।
বেশ সন্দেহ হলো ইমনের। আর বার বার বুঝতে পারলো ওড়নাটা অস্বাভাবিক ভাবেই পেঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু কিছু বললো না।
সাব্বির খাওয়া দাওয়া শেষে চলে গেলো।
বিদিষা বেগম কে নিয়ে মুসকান তার নিজের রুমে চলে গেলো। মা মেয়ে একা সময় কাটাবে বলে।
কিন্তু ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো মুসকানের যাওয়ার পানে।

বিদিষা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে রইলো মুসকান। বিদিষা বেগমের চোখ চলে গেলো মুসকানের গলায় আতঙ্ক হয়ে বললো একি মা,,, তোমার গলায় কি হয়েছে???
মুসকান ভয়ে ভয়ে চট করে ওঠে বসেই বললো চুপ চুপ,,,
প্লিজ আর কিছু বলোনা। বিদিষা বেগম অস্থির হয়ে বললেন কি হয়েছে এখানে।
মুসকান মাথা নিচু করে তেল ছিটে যাওয়ার কথা বললো।
প্লিজ ওকে কিছু বলোনা তাহলে আমাকে খুব বকবে,,,ভয়ংকর রেগে যাবে।
কি বলো মা এতো বোকামি কেনো করো এখানে তো ওষুধ লাগাতে হবে,,,
আহাগো অনেক কষ্ট হচ্ছে বলেই ফুঁ দিতে লাগলো।
বোধ হয় তার নিজেরই পুরে গেছে মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো মুসকান।
মুসকান কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো ওকে কিছু বলো না,,, বিদিষা মেয়ের দিকে চেয়ে ভয়ার্ত মুখ দেখে বুঝলো তার মেয়ে ভীষন ভয় পায় ইমনকে।
কিন্তু বিদিষা ইমনকে গতো দুবছরে খুব ভালোভাবে চিনে গেছে। ইমনকে না জানানোতে আরো রেগে যাবে তা খুব ভালো করেই বুঝলো। কিন্তু মেয়ের দিকে চেয়ে আর কিছু বললো না।
শুধু বললো পেস্ট এনে দাও আমি লাগিয়ে দেই ফোসকা পড়ে গেছেতো,,,
মুসকান ওঠে গিয়ে পেস্ট এনে দিলো বিদিষা পরম যত্নে তা লাগিয়ে দিলো।

বিদিষা মুসকান কে এ গল্প সে গল্পে হঠাৎ বললো তোমার বড় আপু আর ছোট আপুর ও বিয়ে হয়ে গেছে বাচ্চাও আছে।
মুসকান বিদিষার দিকে চেয়ে রইলো।
বিদিষা হেসে বললো ইমন যখন তোমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে আসে তখন ওদের একজনের বয়স চৌদ্দ আরেকজনের বয়স বারো। একটা ছেলের আশায় আবার সন্তান নিয়েছিলাম মা,,,তোমার ঐ অমানুষ বাবা বলেছিলো এবার মেয়ে হলে মা মেয়ে কে জ্যান্ত কবর দিবে,,,
ঠিক ঐ সময়ই ফেরেশতার মতো আটবছরের বাচ্চা ছেলেটা এসে আমার কলিজাটাকে বাঁচালো।
হয়তো সেদিন আমি কিছু জানতাম না কিন্তু আমার মায়ের থেকে ঐটুকু ছেলে সব শুনে শুনে তোমাকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে ফেলে।
এইটুকুনি ছেলেটা রোজ রোজ হসপিটালে গিয়ে বসে থাকতো,,, আহা কি মিষ্টি দেখতে ছেলেটা আজ কতো বড় হয়ে গেছে।

মুসকানের বেশ ভালো লাগলো সেই সাথে আরো শুনতে ইচ্ছে করলো। তাই বললো আমাকে দেখতে যেতো,,,
বিদিষা বললো হুম যেদিন তোমার জন্ম হয় সেদিন থেকেই যেতো পরপর চারদিনই গিয়েছে আর পাঁচ দিনের দিন হঠাৎ ই তুমি হারিয়ে যাও। আমার খটকা লাগে যে ঐ বাচ্চা ও তো আজ আসেনি,,, পুরো হসপিটাল তন্ন তন্ন করে খুঁজে ছিলো সবাই বা তোমাকে পেয়েছে,না ওকে পেয়েছে। ধীরে ধীরে বুঝতে পারি ঐ বাচ্চা টাই আমার সন্তান কে নিয়ে নিয়েছে। মায়ের মন তো প্রথম দিকে খুব কষ্ট হতো,,, কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারি যা হয়েছে বেশ ভালোই হয়েছে। ওর জন্যই তুমি একটা স্বাভাবিক জীবন পেয়েছো,,,

ইশ,,,ছোট থেকেই অমন গুন্ডা,,,
বলেই জ্বিবে কামড় দিলো। বিদিষা হেসে ফেললো।
আমার মেয়েটাও তো ভারী দুষ্টু।

মুসকান বললো আচ্ছা তুমি কোথায় থাকো,,,
বিদিষা বললো অমন ফেরেস্তার মতো জামাই থাকতে আমার কি আর থাকার জায়গার অভাব আছেরে মা,,, দুবছর ধরে তো তার কাছেই আছি।
মুসকান ভ্রু কুঁচকে বললো মানে,,,

চলবে,,,,
জানিনা কেমন হলো রিভাইস ও দেইনি ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here