শব্দহীন_অনুভূতি,পর্ব_৩,৪

শব্দহীন_অনুভূতি,পর্ব_৩,৪
পলি_আনান
পর্ব_৩

-হৃদিতা তুই নাকি আজ টিউশনিতে যাস নি তবে কোথায় ছিলি এতক্ষণ? আর তোর ফোন বন্ধ করে রেখেছিস কেন?
-কেন আবার যত নিরেট, পাগল,সব আমার ভাগ্যই জোটে। এইভাবে যদি আর এক সাপ্তাহ যায় তবে আমি নিজেই পাগল হয়ে যাবো!
আপন মনে বকবক করতে করতে হৃদিতা তার রুমে ডুকে।নেহা অবাক হয়ে হৃদিতার কান্ড দেখছে হঠাৎ এই মেয়ে ক্ষেপে যাওয়ার কারনটা বুঝতে পারছে না সে।
-হৃদিতা তোর কি হয়েছে?কাকে বকছিস এইভাবে?
– নেহা আপু এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। তবে শুনে রাখো নতুন টিউশনি হয়েছে আমার ফিরতে ফিরতে হয়তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে।গোসল করবো পুকুর পাড়ে গেলাম আমি।
সামনে দাঁড়ানো নেহার প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করে হৃদিতা জামা কাপড় হাতে নিয়ে পুকুর পাড়ে চলে যায়। এদিকে নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাতের দুইটায় বাড়ি ফেরার পথে নোমানের সাথে আরাফের দেখা হয়।নোমানকে দেখেই বিরক্তে মুখ কুচকে নিজেকে আড়াল করার আগেই নোমান তার সামনে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়।
– কিরে তুই কি ভালো হবি না আর।চাচাজান বাড়িতে না থাকলেই এত রাত করে বাড়ি ফিরিস। বন্ধুদের সাথে এইসব না করে পড়ালেখায় মনযোগ দে। ওই মেয়েটা কেমন পড়াচ্ছে তোকে?
-হুম ভালোই পড়াচ্ছে।আমার আর পড়ালেখা!এইসব ক,খ,১,২,আমার ধারা হবে না আমায় বরং তোমরা মুক্তি দিয়ে দাও একটু চিল মুডে বাচঁতে চাই।
-আহ! এইসব কোন ধরনের কথা আরাফ?তোর হবু বউ কিন্তু যথেষ্ট ভালো পড়াশোনা যানে আর তুই হবি কি না এমন মুর্খ?অন্তত নিজের স্টেটাস বজায় রাখতে তোকে একটু ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে হবে।তোর ভার্সিটি শেষ হলে প্রভার সাথে কানাডায় সেটেল হয়ে যাবি। আর কোন চিন্তা নেই। এই কয়েক বছর অন্তত ভালো ভাবে পড়াশোনা কর।
নোমানের কথা গুলো শুনে ধুপ করে নিভে যায় আরাফ।নোমানের সাথে আরাফের সঙ্গচ্যুত কারন একমাত্র প্রভা।নোমানের খালাতো বোন প্রভা প্রায় তিন বছর আগে বিডিতে আসে।বিদেশি অপরিচিত মেয়েকে দেখে ফ্লার্টিং করা শুরু করে আরাফ। মজা ছলে প্রভাকে প্রেমের জালে ফাসাতে গিয়ে উলটো নিজে ফেসে যায়।আর সেই থেকেই প্রভার জালে আটকা পড়ে বেচারা নিজেই।নোমানের কাছে প্রভা নিজের পছন্দের কথা জানালে নোমান আরাফের সাথেই প্রভার বিয়ে ঠিক করে নেয়।কিন্তু এতে রাজি নয় আরাফ।গত তিন বছর নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রভার সাথে নিয়মিত ফোন কল টেক্সট চালিয়ে যায় এক মাত্র নোমানের ভয়ে।

-কিরে দম ধরে গেলি কেন?
নোমানের ধমকে বাস্তবে ফিরে আসে আরাফ।রাগে দাতে কিড়মিড় করে বলে,
-একটু তাড়াতাড়ি হাটো ভাই, কাল সকালে আমার ক্লাস আছে।

পরের দিন দুপুরে ভার্সিটির গেটের সামনে আরাফের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে হৃদিতা।বিরক্তে তার সব কিছু অসহ্য লাগছে। ক্লাস শেষ হয়েছে প্রায় আধা ঘন্টা হতে চললো এখনো আরাফের আসার নাম নেই, বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও ফোন বন্ধ।তাই বিরক্ত নিয়ে ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তার।
দূর থেকে হৃদিতাকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে লিবান।চারপাশটায় চোখ ঘুরিয়ে আরাফকে খুজঁতে থাকে।
-এখানে একা কি করছো হৃদিতা?
পেছন থেকে পুরুষের কন্ঠে চমকে তাকায় সে।নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,
-আরাফ ভাইয়ের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।কিন্তু তিনি কোথায়?
-ওহ আরাফ সে তো এখন প্রেম করতে ব্যস্ত।ক্লাসে বসে নতুন একটা মেয়ের সাথে প্রেম গহীনে হারিয়ে গেছে।তুমি বরং বাড়ি ফিরে যাও।
লিবানের কথা শুনে বেশ রাগ লাগলো হৃদিতার। ক্লাসে অবশ্য দেখেছিল একটা মেয়ের সাথে ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলছিল তবে কি তার সাথেই এখন সময় কাটাচ্ছে আরাফ?কিন্তু হৃদিতাকে এইভাবে অপেক্ষা করানোর মানে কি?হৃদিতা নিজের রাগটাকে আড়াল করে লিবানের দিকে তাকায় শান্ত দৃষ্টিতে।
-জানিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।আমি আসি তাহলে।
হৃদিতা গেট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই কানে আসে সেই পরিচিত কন্ঠ।

-ওই পিচ্চি কই যাচ্ছিস?আমাকে না পড়ানোর পায়তারা হচ্ছে তাহলে?খবরদার নোমান ভাইকে ইনফর্ম করতে দুইমিনিট ও সময় নেবো না।
আরাফের কথা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সে।
– এতক্ষণ আমাকে দাড় করিয়ে রাখার মানে কি?আপনার কি ধারনা আমার হাতে অফুরন্ত সময়?
-যানি রাগ করেছিস,আর এমন হবে না। এখন পড়াতে চল।
হৃদিতা কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে যায়।আরাফ আবারো পিছু ফিরে লিবানের দিকে তাকায়।
– ওই তোর সমস্যা কি? হৃদিতার কানে কি বিষ মন্ত্র ঢেলে দিয়েছিস?
-কই আ..আমি কি করেছি আমি তো তেমন কিছু বলি নি!
– শোন নাফিসা আর শাকীলের রাগ মিটিয়ে দিয়েছ আপদত তারা নিজেদের মাঝে কথায় ব্যস্ত তুই বরং বাড়ি চলে যা এখন আমিও পড়তে যাবো।
আরাফের কথায় বেশ রাগ লাগলো লিবানের।সবার মাঝে নিজেকে কেমন উটোকো ঝামেলা মনে হলো তাই উলটো দিকে পা বাড়ালো। আরাফও আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে কফিশপের উদ্দেশ্য যাওয়ার জন্য বাইক স্টাট দিলো।

– সূত্র চারটা মুখস্থ হয়েছে আপনার?
হৃদিতা একের পর এক বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকে। কিন্তু আরাফ তার দিকে তাকিয়ে আছে সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। কয়েক মিনিটেও আরাফের কথার আওয়াজ না পেয়ে মাথা তুলে তাকায় হৃদিতা।তার দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকা আরাফের সাথে চোখাচোখি হতেই দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়।
-আপনাকে আমি কিছু প্রশ্ন করেছি!
– তোকে আমি কাল কিছু আদেশ দিয়েছি।
আরাফের প্রত্যুত্তরে চকিতে তাকায় সে। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ ছোট করে বলে,
– কি বলেছিলেন?
– বলেছিলাম তোকে দেখবো ;একদম সেদিনের মতো করে!তীব্র তাপদাহে যে ভাবে বৃষ্টির রুপে আমার হৃদ জমিনে আছড়ে পড়েছিলি, আমার অনুভূতি গুলোকে যেভাবে আনকোরা করে দিয়েছিলি ঠিক সেদিনের মতো করে তোকে দেখবো যদি আমায় “আপনি” বলে সম্মোধন করিস।
আরাফের এমন ভয়াবহ কথার ভাজে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায়ন্তর ছিল না হৃদিতার।নিজের ওষ্ঠ দিয়ে শুষ্ক অধরটা ছুয়ে কিছুটা সাহস সঞ্চার করে ঢোক গিললো। আমতা আমতা সুরে নিজের অনিচ্ছার বিরুদ্ধে বলে,
– আপনি আমার ছোট!আপনাকে আমি কি করে -“তুই” বলে সম্মোধন করি?
হৃদিতার কথা শেষ হতেই টেবিলের উপর বাম হাত দিয়ে জোরে থাবা মেরে বিকট শব্দে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে আরাফ। গমগমে সুরে বলে,
– ব্যস! এটাই যেন শেষ কথা।আমি যা বলেছি তাই হবে। আজ আমি তোর শিক্ষক। এবার পড়, “আরাফ তুই আর আমি, আজ থেকে বন্ধু বেশে শত্রু”
আরাফের এমন অযৌক্তিক কথা শুনে ভড়কে যায় হৃদিতা। চুপচাপ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সামনে থাকা অদ্ভুত মানুষটির দিকে।এই ছেলেটা এমন কেন, মূহুর্তে আগুন আবার কিছু মূহুর্তে পানি।
-কি হলো বলছিস না কেন?নাকি কান মলানি খাবি?
-এয়্য্য্যহ!
– হ্যা এবার বল দ্রুত, না হলে যা বলেছিলাম তাই করবো।
আরাফের কথা শেষ হতেই হৃদিতা চোখ মুখ কুচকে নেয়।তাকে যেন কেউ বিরক্তকর তিতা করলা খেতে বলেছে।পাশ ফিরে দোকানের মেনেজার আর কর্মচারি লোকটির দিকে পরখ করে।আরাফের পাগলামিতে যে তারাও অবাক তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে সে। সামনে থাকা অগ্নিশর্মা মানবটির দিকে তাকিয়ে বলে,
– আ–রাফ তুই আর আমি, আজ থেকে বন্ধু বেশে শ—ত্রু”
-গুড!এবার পড়া। কালকের পড়া আমার মুখস্থ হয়ে গেছে আজ আবার নতুন করে পড়াতে থাক।আজকে পড়া শেষ করবি চারটায়।তারপর তোর বাকি দুই টিউশনি পরপর করলে সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
– বুঝলাম না এখানে শিক্ষক কে?আমি নাকি আপ—,না মানে তুই?
– পড়ানোর দায়িত্ব তোর আর ছুটি দেওয়ার দায়িত্ব আমার নে পড়া।
হৃদিতা ঢোক গিলে সামনে থাকা বইটি টেনে নেয়।সম্মুখে থাকা এমন উগ্র মানুষটার আর কত, শত শর্ত, বাহানা নিয়ম যে তাকে মানতে হবে তার কোন
বিচারবিবেচনা নেই।এই দায় থেকে কবে মুক্তি পাবে সে?অন্তত ফাইনাল এক্সামটা মিটে গেলেই নিশ্চিত হৃদিতা। বাকি বর্ষ গুলোতে না হয় আরাফ ভালো কোন টিউটর রেখে পড়বে।

দুপুরের রোদটা যখন পরে আসছিল মিটিং শেষ করে পার্টি অফিস থেকে গাড়িতে উঠছিল নোমান।পকেটে থাকা নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত ফোনটায় ব্রাইভেট হতে দ্রুত হাতে তুলে নেয়।অচেনা নাম্বার দেখেই ধনুকের মতো বাঁকানো ভ্রু দুটো কিঞ্চিৎ কুচকে যায়।এই নাম্বারে এখন কে ফোন করেছে?পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউতো এই নাম্বারের খোঁজ যানে না তবে কে?ভাবনার গুলোর অবসান ঘটিয়ে দ্রুত ফোন রিসিভ করে সে।মূহুর্তেই কানে ভেসে আসে সুরেলা উৎসুক কন্ঠ,
– জনাব কেমন আছেন?
– মাইশা!
-এইতো কে বলেছে আপনি আমায় ভালোবাসেন না। যদি ভালোই না বাসতেন তবে অন্য নাম্বার থেকে ফোন করার পরেও আপনার আমাকে চেনার কথা না।
– তোমার এইসব বিরক্তকর বক বক রাখো আগে বলো কেন ফোন করেছো?
– আমার জনাব ভালো আছে নাকি খারাপ আছে সেই খোঁজতো আমি নিতেই পারি।এবার বলুন কেমন আছেন আপনি?
– আমাকে আমার মতো করে থাকতে দাও।আর মেয়ে হিসেবে এইসব বেহায়াপনা রাখো।ভেবোনা রাজনীতির খাতিরে শুধুমাত্র দুইচারটা ছেলেদের লাশ পড়ে আমার হাতে,আমার উপর চরকি ঘোরালে মেয়েদেরকেও ছাড় দেবোনা আমি।

কথা শেষ করেই ফোনটা কেটে দিলো নোমান। বিরক্তে মুখ কুচকে আছে।মাইশা নামের মেয়েটাকে এর পর থেকে সামনে পেলে কষিয়ে দুটো চড় দেবে। ইদানিং মেয়েটা বাড়াবাড়ি একটু বেশি করছে।

অপরদিকে ক্ষুণ্ণমনা হয়ে মোবাইল ছুড়ে মারে মাইশা।গত একবছর থেকে নোমানের পেছনে ঘুরছে সে কিন্তু নোমান তাকে কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছে না।বাবার সাথে লন্ডন থাকা কালীন একবার দেশি চ্যানালের সংবাদ মাধ্যেমে নোমানকে তার চোখে পড়ে তারপর থেকেই নোমানের পিছু ছাড়ছেনা সে।গত আট মাস বিডিতে থেকে নোমানের সামনে অনেকবার নিজের মনের কথা বলেছে ফোনে প্রতিনিয়ত বিরক্ত করে গেছে কিন্তু এটিটিউড নোমান এক চুল পরিমানেও পালটায় নি।তার বাবার নির্দেশে গত মাসেই লন্ডন ফিরে গেছে আবার কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম গুলোতে নোমানকে বিরক্ত করা এক চিমটেও কমেনি।
– নোমাইন্না আমাকে আর কত ঘুরাবি।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোকে তুলে এনে বিয়ে করি।মেয়ে মানুষ বলে সেই দুঃসাহস করিনা। তবে এইভাবে আর বেশিদিন না প্রয়োজনে তোকে তুলে এনে বিয়ে করবো।এই মাইশা দেওয়ানকে ইগ্নোর বিষয়টা মানা যাচ্ছে না।
মাইশা মোবাইল হাতে নিয়ে আপন মনেই বিড়বিড় করছে। কিন্তু তার কথা গুলো পেছনে দাড়িয়ে শুনে নেয় তার বাবা গিয়াস দেওয়ান।

– এইসব কি মাইশা? ওই ছেলেকে তুমি এতটা দাম দিচ্ছো কেন?তোমার জন্য কি ছেলের অভাব পড়েছে।বরং ওইসব ছ্যাচড়ের চাইতেও ভালো ছেলে খুঁজে দেবো তোমায়।
– আহ বাবা! মেয়ের হবু জামাইকে নিয়ে এইভাবে কথা কেউ বলে। রেসপেক্ট করো বাবা হি ইজ মাই অনলি ওয়ান হাবি!
– এইসব ছেড়ে এবার ভালো পথে আসো। কি দেখে ওই বদমাইশটার প্রেমে পড়লে?আমার তো তাকে তিলার্ধেক পরিমানেও ভালো লাগে না।
গিয়াস দেওয়ানের এমন ফিচেল হাসির কথা শুনে তার বাবার সাথে হাটু মুড়ে বসে মাইশা।ঝপাং করে বাবার কোলে ঝাপিড়ে পড়ে ভাবনার দুয়ারে কড়া নেড়ে বলে,
– আমি তো তার এটিটিউড, রাগ, বেপরোয়া,গমগম সুরে কথা বলার প্রেমে পড়েছি।তুমি ভাবো যে ছেলে কাউকে পরোয়া করেনা, সবার সাথে আগুনের ফুলকি নিয়ে চলে সেই ছেলেটা আমার সামনে পানি।আমাকে হারানোর ভয়টা তার মাঝে থাকবে, আমার জন্য এক আকাশ সমান আকুলতা তাকে গ্রাস করবে।সবসময় আমাকে কিভাবে খুশি রাখা যায় সেই চিন্তায় থাকবে। এবার ভাবো যদি আমার কথা গুলো খাপে খাপ মিলে যায় তবে ওই এটিটিউড ছেলেটাকে চুজ করে আমি কি ঠিক করিনি?
– না ঠিক করোনি তুমি!আমি চাই না এইসব বেহায়াপনা তোমার মাঝে দেখতে।ওই ছেলেকে দেখলেই আমার গায়ে আগুন লেগে যায়।ইতর বাদর ছেলে কোথাকার, বাংলাদেশটাকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
– বাবা! এইভাবে নোমানকে নিয়ে বাজে মন্তব্য কেন করছো তুমি। এবার আমি কিন্তু কষ্ট পাচ্ছি।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
মেয়ের পাগলামিকে আর গুরুত্ব না দিয়ে দ্রুত হেটে চলে যান দরজার দিকে।যাওয়ার আগে মাইশার পুরো রুমটা একবার ভালোভাবে পরখ করে। সারা রুম জুড়ে নোমান এনায়েতের ছবি এই ছেলে নির্ঘাত তার মেয়ের মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছে। এইভাবে বেশি দিন আর চলানো যাবে না এর একটা সুরাহা তাকে করতেই হবে।

ক্লাসের সবচেয়ে শান্তশিষ্ট মেধাবী ছাত্র কবির।পরের দিন তার কাছ থেকেই নিজের না পারা পড়া গুলো বুঝে নিচ্ছে হৃদিতা। পড়া বোঝানের এক পর্যায়ে হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠে দুজনেই।তাদের হাসি থামার যেন কোন নাম নিচ্ছে না। বিষয়টি দূর থেকে অনেকক্ষন ধরে পরখ করছে আরাফ।তাদের হাসি দেখে আরাফের সারা অঙ্গে কেউ যেন আগুন ছুড়ে দিয়েছে। রাগে তালে মাথার রগ গুলো ফুলে উঠেছে।সামনে দাঁড়ানো নাফিসা আর শাকীল আরাফের রেগে যাওয়াটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে কিন্তু কেনো রেগে গেলো সেই বিষয়টি বোধগাম্য হয়নি তাদের।হৃদিতার দিকে এক দৃষ্টিতে লোভাতুর হয়ে তাকিয়ে আছে লিবান। আনমনে সবার সামনে মুখ ফুটে বলে,
– সো বিউটিফুল! পর্দার আড়াল থেকেও আমি অনুভব করছি হৃদিতার হাসিটা কতটা সুন্দর।যদিও আমি তার চেহারা দেখিনি। কিন্তু নেকাব বাঁধা অবস্থায় হাস্যজ্বল চোখ গুলো আমার মনে হয় যেন সমুদ্রের তীরের আছড়ে পড়া সূর্যের আলোর ঝলমল করছে তার দুচোখ।

লিবানের কথায় আরো রেগে যায় আরাফ। কিন্তু সেই রাগ বাইরে প্রকাশ করলোনা। ভেতটায় রাগের মাত্রা ক্ষনে ক্ষনে বেড়ে যাচ্ছে।শাকীল আর নাফিসার দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে বলে,
– আমি কফিশপে যাচ্ছি।

কবিরের সাথে কথায় যখন মশগুল হৃদিতা তখন তার ফোনে আবারো মেসেজের টোন বেজে উঠে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে চেক করে দেখে এটা সেই নাম্বার যেটা গন্ড-মূর্খ দিয়ে সেভ করা। মানে কি আরাফ আবার কি মেসেজ দিয়েছে তাকে?দ্রুত একটু আড়াল হয়ে মেসেজ গুলো পড়া শুরু করে হৃদিতা,

-তোর হাসিতে দাগ লেগে যাক। সর্বস্ব জায়গায়,সর্বস্ব স্থানে, সর্বস্ব মানুষের সামনে তোর হাসিটি বিষদিগ্ধ হয়ে যাক।শুধুমাত্র একটি নিদিষ্ট মানুষের কাছে তোর হাসিটা হয়ে থাকুক অমূল্য রত্ন!আর সেই মানুষটা ছাড়া সবার সামনে হাসাটা তোর জীবনে নিষিদ্ধ করা হোক!❣️

‘দ্রুত কফিশপে আয়,আমি অপেক্ষা করছি।

হৃদিতার মুখে যে হাসিটা ছিল হঠাৎ করেই সেই হাসিটা উবে যায়।খন্ড খন্ড বিষাদ ভাব নেমে আসে তার চোখ মুখে।আরাফের এমন কথার মানে কি?তার হাসিটা কি এতই বিশ্রী।হৃদিতা মোবাইলটা হাতে নিয়ে,লেডিস ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে সোজা হাটতে থাকে।কবির অবাক হয়ে হৃদিতার কান্ড দেখছে।দূর থেকে শাকীল, লিবান, নাফিসা কেউ বুঝলনা হৃদিতার গুম হয়ে যাওয়ার বিষয়টি।
#চলবে….

শব্দ সংখ্যা ২০২১
🍂পর্বটি কেমন হয়েছে জানাবেন!

#শব্দহীন_অনুভূতি
#পলি_আনান
#পর্ব_৪

প্রখর সূর্যের দাপটে উত্তাপ আজকের দিনটি।ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হৃদিতা।একটু রিলেক্স করতে দ্রুত ভার্সিটির কমন রুমের দিকে পা বাড়ায়।মুখে থাকা নেকাবটি খুলে দ্রুত চোখে মুখে পানির ঝাপটা দেয়।ব্যাগ থেকে পানি নিয়ে কয়েক ঢোক গিলে বোতলের মুখ আটকে মাথা ঘুরাতেই নাফিসার সাথে ধাক্কা লাগে।
-আল্লাহ! সরি আমি খেয়াল করিনি আপু।
নাফিসা তড়াক করে সামনে তাকিয়ে হৃদিতাকে দেখতে পায়। কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ হৃদিতার দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষন করে বলে,
– এই তুমি হৃদিতা রাইট?
– জি আপু, আমি হৃদিতা মেহেরীন।
– মাশাল্লাহ! মাশাল্লাহ! মাশাল্লাহ! তুমি হৃদিতা! এই প্রথম আমি তোমায় দেখলাম। সব সময়তো নেকাব পড়ে থাকো।চোখ দুটো ছাড়া তোমার মুখমন্ডল আমার দেখা হয়নি।মাশাল্লাহ তুমি দেখতে একদম মায়াবিনী।
নাফিসার কথায় হৃদিতা লজ্জা ভঙ্গিতে একটু হাসে।পানির বোতলটা ব্যাগে রেখে আবারো চাতকপাখির মতো উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা নাফিসার চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে বলে,
– শুকরিয়া আপু।
– এই তুমি আপু কাকে বলছো?আমি তোমার বয়সী। আমাকে নাফিসা বলেই ডাকবে।
– আমি ভেবেছিলাম আপনি..
হৃদিতাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নাফিসা তাকে হাত ইশারায় থামিয়ে দেয়।
– তুমি কি ভেবেছো আমি শাকীল, লিবান আর আরাফের মতো?
– শাকীল,লিবান কে?
– আমাদের সাথে থাকে একটু মোটা করে সে লিবান।আর আরাফকে তো তুমি চিনো বাকি যে ছেলেটা সে শাকীল।আমি কিন্তু তাদের মতো নই আমি তোমার মতো প্রত্যাক ক্লাসে পাশ করেই উঠেছি।
– ওহ এবার চিনতে পেরেছি।
– আরাফকে কেমন বুঝলে? পড়াশোনা করছে তো?
নাফিসার প্রশ্নে আহাজারি করে উঠে হৃদিতা। কোমড়ে হাত গুজে পায়চারি করে সামনে থাকা একটি বেঞ্চিতে বসে যায়।

– কি যে বলবো তোমায়!আমি জানি তোমরা অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তবুও তোমায় কথা গুলো না বললে নয়।তাকে পড়াচ্ছি গত এক সাপ্তাহ থেকে বিশ্বাস করো এত বলদ টাইপের স্টুডেন্ট আমি বাপের জন্মে দেখিনি।হ্যা অনেক স্টুডেন্ট আছে পড়া পারেনা বা তাদের পড়া বুঝতে সমস্যা হয় কিন্তু আরাফ তেমন ছেলে না।একটা বিষয় আমি বুঝিনা তাকে মাঝে মাঝে খুব ভালো মনে হয় স্বাভাবিক ভাবেই পড়া শিখে দেয় আমাকে।হ্যা একটু সময় লাগে কিন্তু মাঝে মাঝে নিজের ইচ্ছায় পড়ালেখা করেনা এইসব সে কেন করছে আমার মাথায় ডুকছেনা বিশ্বাস করো।
গত তিনদিন আমি একটা চ্যাপ্টার নিয়ে পড়ে আছি।আসল কথা তার পড়ালেখায় মন নেই।কয়েকদিন পর আমাদের ফাইলান কিন্তু এতেও তার মাথা ব্যাথা নেই।তার থেকেও আমার ক্লাস ফাইভ ফোরের স্টুডেন্ট গুলো সো গুড।তাদের অন্তত পড়াশোনা আগ্রহ আছে।

সম্পূর্ণ কথাটা এক নাগাড়ে শেষ করে হৃদিতা দম ছাড়ে। নাফিসা সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।হৃদিতার কথার ভাব ভঙ্গিতে সে বুঝে নিয়েছে আরাফ তাকে জ্বালিয়ে মারছে।এত মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে আরাফ এত ত্যাড়ান্যাড়া কেন যে করছে? এবার নাফিসার নিজের বেশ রাগ লাগছে।তবে এটাতো সত্যি আরাফ আসলেই হাঁদারাম স্টুডেন্ট।
নাফিসাকে চুপ থাকতে দেখে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় হৃদিতা।শুষ্ক গলায় কয়েকটি ঢোক গিলে বলে,
– নাফিসা তুমি কি মনে কষ্ট পেয়েছো আমার কথায়?আসলে বলতে চায় নি কিন্তু বলে ফেলেছি সরি!
হৃদিতাকে গম্ভীর হতে দেখে তার পাশে ধুপ করে বসে যায় নাফিসা।হৃদিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিজে আশ্বাস্ত সুরে বলে,
– কি যে বলো তুমি! আসলে একদম ঠিক কথাই বলেছো তুমি।শুধু আরাফ না ওই তিন ছেলের একটাই কাজ সারাদিন মাস্তি হই হুল্লোড়। রাত জেগে পার্টি।অবশ্য আমিও তাদের সাথে শামিল হই তবে নিজের পড়ালেখাটা ঠিক রাখি।শাকীল আমার কাজিন, সে আমার বড় খালামনির ছেলে। এই বছর তাকে পড়ানোর দাড়িত্বটা বলতে গেলে আমার। আস্তে আস্তে তাদের পার্টি গুলো ভেস্তে দিচ্ছি। শাটের কলার টেনে এনে পড়তে বসাই তবুও আমাকে মানতে চায় না নানান দখল সামলে তাকে আমার পড়াতে হয়। আর লিবানের বাবা তাকে গার্ড দিচ্ছে আর আরাফের কথা কি বলবো?অতীত থেকে সাম্প্রতিক যত টিউটর তার জন্য ঠিক করা হয়েছে সব কটাকে রাম ধোলাই দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছে।আন্টি বয়সী মেডাম গুলোকে প্রপোজ করে উত্ত্যক্ত করেছে শুধু মাত্র তারা যেন আরাফের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ানো বন্ধ করে দেয়। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, শেষে কি না আরাফ জিদ ধরে তোমার কাছে পড়বে আসলেই আমরা বন্ধুরা সবাই অবাক হই।

নাফিসার কথা গুলো শুনে ধাপে ধাপে অবাক হয় হৃদিতা। একটা ছেলে কি পরিমানে অসভ্য তা এখন উপলব্ধি করতে পারছে সে।হৃদিতাকে চুপ থাকতে দেখে নাফিসা আবার বলে,
– আসলে আরাফের কথা কি বলবো। বেচারা যে পরিমানে লম্বা সেই পরিমানে যদি একটু বুদ্ধি থাকতো তাহলে হয়েই যেতো।যত পাগলামি করিস নিজের ক্যারিয়ারটার কথা একটু ভাব।
– কে বলেছে তোমার বন্ধু লম্বা সে অন্তত আরেকটু লম্বা হতে পারতো। আরেকটু লম্বা হলে অন্তত বুদ্ধিটা আরেকটু বাড়তো।
হৃদিতার কথায় ফিক করে হেসে দেয় নাফিসা।
– কি যে বলো না তুমি!তোমার সাথে আরাফ দাড়ালে আমার ভীষণ হাসি পায় মনে হয় যেন জিরাফ আর হরিন একসাথে দাড়িয়ে আছে।

নাফিসা হাসতে থাকে। হৃদিতাও নিশব্দে হেসে যায়।

নাফিসা ক্লাসে ফিরে দেখে শাকীল আর লিবান যেন কি নিয়ে ঝগড়া করছে তাদের পাশেই চুপচাপ সিগারেট ফুঁকছে আরাফ।সে যেন কিছু দেখেও না দেখার ভান করে আছে।অবশ্য আরাফের এটা নতুন নয় সে আগে থেকেই এমন কোন ঝগড়া বিবাধ সে মিটমাট করবে না বরং চুপচাপ দেখতে থাকে।সে যেন তার ভাবনায় বিচরন করেই সুখ পায়।বিরক্তে মুখ বিগড়ে এগিয়ে আসে নাফিসা।

– এইসব কি? আরাফ তুই ওদের শান্ত করছিস না কেন?আর শাকীল তোকে আমি বলেছিলাম না আর যদি ঝগড়া বিবাধে লিপ্তহস তবে আমি তোর সাথে ব্রেকাপ করে নেবো। শুনবি না তুই আমার কথা।
নাফিসা এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে থেমে যায়। শাকীল মাথা নিচু করে নাফিসার উদ্দেশ্য সরি বলে।নাফিসা সেদিকে মন না দিয়ে আরাফকে বলে,
– যানিস একটা জম্পেশ খবর আছে। আজ আমি হৃদিতাকে দেখেছি কমনরুমে নেকাব ছাড়া।
আরাফ চমকে তাকায় নাফিসার দিকে। দ্রুত সিগারেট ঠোঁট থেকে নামিয়ে বলে,
– কি? কোন ছেলে ছিল সেখানে?
– আরে মেয়েদের রুমে ছেলে এলাউ হবে কেন? কি উলটা পালটা বকছিস তুই?আর হৃদিতা সবসময় ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে।
আরাফ যেন শান্ত হয়। আটকে যাওয়া দমটা যেন ছাড়া পেয়েছে।আরাফের কথাকে অগ্রাহ্য করে লিবান বলে,
– বলিস কি? মেয়েটা দেখতে কেমন রে?
– কেমন মানে!আহামরি সুন্দরি হয়তো না তবে মায়া! মেয়েটার চেহারার যে মায়াটা আছে তোকে এক দৃষ্টিতেই ঘায়াল করে দেবে।
– কি বলছিস তুই, সত্যি?ইসসস মেয়েটাকে দেখার আমার সুভাগ্য হলো না।
লিবানের কথায় চোখ মুখ কুচকে যায় আরাফের হাতে থাকা সিগারেটটা মুষ্টি বদ্ধ করে দুমড়ে মুছড়ে নিভিয়ে নেয়।চোয়াল শক্ত করে নাফিসাকে ধমকে বলে,
– ওই মেয়ে সবার কাছে নিজেকে আড়াল করছে আর তুই কি না তাকে দেখেই চেহারার বর্ননা দিতে চলে এসেছিস,তাহলে ওই মেয়ের আর নেকাব করার কি ছিল?ডাফার একটা।মেয়ে হয়ে মেয়ের সম্মান রাখতে পারছিস না।আমরা এখানে তিন তিনটা ছেলে নিশ্চই ওর দিকে পরের বার থেকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাবো সেই কমনসেন্স তোর নেই?
আরাফ কথাটা বলেই শব্দ করে শ্বাস ছাড়লো।শাকীল পকেটে হাত ঢুকিয়ে এটিটিউড ভঙ্গিতে বলে,
– আমার কোন মেয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট নেই।রক্তের সম্পর্ক ছাড়া সকল মেয়ে আমার বোন বুঝলি আরাফ।আর আমার মহারানী আমার সামনেই আছে। তাকে ছাড়া কারো উপর নজর দেওয়া আমার জন্য অনুচিত।
নাফিসা আড় দৃষ্টিতে তাকায় শাকীলের দিকে।শাকীল মাথা নুইয়ে নিঃশব্দে হাসে।

নাফিসা আর শাকীলের সম্পর্ক সেই কিশোর-কিশোরী বয়স থেকেই। কিন্তু কেউ কাউকো সরাসরি বলেনি।দুজনের আবেগ, কথা বলার ভাব ভঙ্গিতেই একজন আরেক জনকে বুঝে নিয়েছে।তাদের সম্পর্কটা এমন একটা পর্যায়ে আছে না পারছে অতি আবেগে উপচে পড়া ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারছে দুজন দুজনের সেই ভালোবাসাময় তিক্ত আবেগ বিসর্জন
দিতে। চুপচাপ পরিস্থির সাথে তাল মিলিয়ে চলা ছাড়া দুজনের মাঝে আর কোন রাস্তা নেই।

আরাফের কথা গুলো শুনে নাফিসার মাঝে অনুসূচনার সঞ্চার হয়।গলার স্বর অস্পষ্ট করে বলে,
– সরি দোস্ত,আর এমন হবে না। কিন্তু তুই কি কখনো হৃদিতাকে দেখিস নি?হৃদিতা নেহা আপুর কাজিন সেই সুবাদে দেখার কথা।
– না দেখিনি আর নেহা যানে না হৃদিতা আমাকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে।
আরাফের কাঠ কাঠ জবাব।তার ঘোমড়া মুখের বাজঁখাই সুরের জবাবে সবাই বিশ্বাস করে নেয় আরাফ সত্যি কোন দিন হৃদিতাকে দেখে নি।

আরাফের বাবা জহির এনায়েতের সাথে কথায় মশগুল নোমান।গুরুত্বপূর্ণ কথার এক পর্যায়ে মুঠো ফোন ভাইব্রেট করতে থাকে। নোমান আড়ালে মোবাইলটায় দৃষ্টি ফেলতেই মাইশার নাম্বারটা চোখে পড়ে।দ্রুত ফোনটা সুইস্টপ করে আবারো কথায় মশগুল হয় তখনি ম্যানেজারের হাতে থাকা নোমানের ফোনে আবার কল আসে।ম্যানেজার দ্রুত নোমানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
– স্যার মাইশা মেডাম ফোন করেছে।
– দ্রুত ফোন কেটে ব্লক লিস্টে ট্রান্সফার করো।
– ওকে।
কথা শেষ করে আবারো কথায় মন দেয় আরাফ।কিন্তু পাচঁ মিনিট পর সেন্টার টেবিলের উপর থাকা ল্যান্ড ফোনটি বেজে উঠে।জহির ভ্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।তিনি বুঝতে পারছেন না এখন আবার কে ফোন করলো।সব ভাবনার সমাপ্তি জানিয়ে দ্রুত ফোন রিসিভ করতে কানে আসে একটি মেয়ের কন্ঠ,
– আসসালামু আলাইকুম!
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন?
– নোমান স্যার আছে?তার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা ছিল কিন্তু তিনি ফোন তুলছেন না।
– ওকে আমি দিচ্ছি তুমি লাইনে থাকো।
– আংকেল আপনি ভালো আছেন?
মাইশার এমন প্রশ্নে নিঃশব্দে হাসলো জহির।এক মূহুর্তে মেয়েটা প্রমাণ করে দিয়েছে সে অতন্ত মিশুক একটা মেয়ে।
– হ্যা ভালো আছি মা। তুমি ভালো আছো?
– জি!

জহির ফোনটা একটু আড়াল করে সামনে থাকা নোমানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– নোমান তোর ফোন।
– বাড়ির ফোনে আমাকে কে ফোন করবে?
– কথা বলে দেখ।
নোমান দ্রুত ফোন নিয়ে কিছু টা দূরে চলে যায়।বুকের ভেতটায় কিছুটা হলেও ভয়ের সঞ্চার হয়েছে।মাইশা যে পরিমানের চতুর এই মেয়ে আবার ফোন করেনিতো?
– হ্যালো কে বলছেন?
– তোমার বউ গো বউ!যাকে তুমি বিয়ে না করে দূরে সরিয়ে রেখেছো।
– হোয়াটিস দিস মাইশা? আমার বাড়ির নাম্বারে ফোন করার সাহস তুমি কোথায় পেলে?
– ভালোবাসা যখন বাধঁ মানে না তখন অনেক কিছুই করতে হয়।বাইদা ওয়ে আমি এইসব রং ডংয়ের কথা বলতে তোমায় ফোন করিনি।

হঠাৎ করেই নরম মিষ্টি সুরের কথা বলা মাইশার কন্ঠ হয়ে গেছে গম্ভীর তেজীপূর্ণ।মাইশার কান্ডে নোমানের ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকায়৷ এই মেয়ে হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারনটা কি?
– কি কারনে ফোন করেছো আমায়?
– তোমার ফেসবুক একাউন্টে এত সুন্দর সুন্দর ছবি দেয়ার কারন কি?বজ্জাত মেয়ে গুলো রেজিস্ট্রি ছাড়াই তোমাকে স্বামী বলে দাবি করছে এইসব কি? কেউ জান বলছে, কেউ কলিজা বলছে কেউবা বলছে আমার বয়ফ্রেন্ড আমার স্বামী।আমার তো এইসব এক বিন্দু পরিমানেও সহ্য হচ্ছে না।প্রত্যাকটা মেয়ে কি পরিমানে লুচু তুমি বুঝতে পারছো?
– হুম তোমার মতো। রেজিস্ট্রি ছাড়া তুমি যেমন করে আমায় স্বামী দাবি করো ঠিক তারাও করছে।সো হোয়াট, নোমান এনায়েতকে সবাই ভালোবাসতে পারে।
– তুমি ওই মেয়েদের সাথে আমাকে তুলনা করছো?
– হ্যা করছি, তুমি কি আমার কিছু হও? শুধুই আমার পেছন পেছন ঘুরো আর আমায় বিরক্ত করো।এই নোমান নিশির রাত ছাড়া কোন মেয়েকে পাত্তা দেয় না।
– মানে কি?তুমি এখনো ওইসব মেয়ের সাথে রাত কাটাও ছিহহহ!আমি তো মানতে পারবো না আমার হাজবেন্ড এতটা কেরেক্টারলেস আমি মানতে পারবো না।
– যদি মানার থাকে তাহলে রাতে বিছানায় চলে এসো, আমায় একদম বিরক্ত করবেনা আমি বিজি আছি।

নোমান দ্রুত ফোনটা কেটে দিলো। অপর দিকে মাইশা রেগে হাতে থাকা ফোনটা দেয়ালের সাথে ছুড়ে মেরে হাটু মুড়ে কাদঁতে বসে যায়।
– এই লোকটা এত খারাপ কেন? আমি কি না একটা কালো ধোঁয়ার পেছনে ছুটছি।তবে এইসব কি আমার উপচে পড়া আবেগ?না আবেগ তো নয় আমি কি ১৭/১৮ বছরের মেয়ে নাকি আবেগের সাগরে হাবুডুবু খাবো।আমি যথেষ্ট এডাল্ট একটা মেয়ে।নোমানকি আমায় কখনো বুঝবেনা!

মাইশা এখনো কাদঁছে। তার ভিষন কষ্ট হচ্ছে নোমান তাকে কেন বুঝেনা।

অন্যদিকে নোমান তার ম্যানেজারকে ইশারাতে আড়ালে ডেকে বলে,
– শোন,ফেসবুক ইন্সট্রাতে আমার পাচঁ খানা ছবি পোস্ট করো।বেছে বেছে ভালো দেখে। এট্রাক্টিভ লুকের ছবি গুলো।
– ওকে স্যার।
নোমান দ্রুত জহিরের সামনে চলে যায় এদিকে ম্যানেজার বিরক্ত ভঙ্গিতে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলে,
– একটা ছবি পোস্ট করলে নটিফিকেশনের জালায় পাগল হয়ে যাই।মেয়েরা যেভাবে চুষে চুষে খায় আর পাঁচটা দিলে তো হয়েই গেলো।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
চুপচাপ হৃদিতার সামনে বই নিয়ে বসে আছে আরাফ।সে আজ শান্তশিষ্ট। হঠাৎ করেই হৃদিতার প্রতি জমে থাকা রাগ ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়।তখন শাকীল আর নাফিসাকে হৃদিতার প্রতি জমে থাকা রাগ ক্ষোভ গুলোর কথা আরাফ তাদের সাথে সেয়ার করে।এতে শাকীল আর নাফিসা রেগে যায় তার সাথে।মেয়েটা নিজে পরিশ্রম করে ভালোভাবে পড়াশোনা করছে। তাতে আরাফের বাবা প্রশংসা করতেই পারে।আরাফ এর রাগ হৃদিতার উপর মেটারনোর কোন মানে হয় না।নানান কথা চিন্তা ভাবনার পর আরাফ ডিসিশন নেয় সত্যি আর হৃদিতাকে বিরক্ত করবে না বরং বন্ধু হয়েই থাকবে।

– পিচ্চি আজকে পড়বো না চল আজ আমরা আড্ডা দিবো।
– এইসব কি?হাতে আর বেশি সময় নেই কয়েকদিন পরেই ফাইনাল এক্সাম।
– এই তোদের ব্রিলিয়ান্টদের একটাই প্রব্লেম সারাদিন পড়া পড়া আর পড়া।উফফ অসহ্য।
আরাফ কিছুটা থামলো। মাথা নুইয়ে রাখা হৃদিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
– বন্ধু হবি আমার?
আরাফের হঠাৎ এমন প্রশ্নে তড়িৎ গতিতে তাকায় হৃদিতা।বুকের ভেতটায় যেন আষাঢ়ের মেঘ জমাট হয়ে গুম গুম করে ডাকছে।এই ছেলে হঠাৎ এত কোমল সুরে কথা বলছে কেন?
– কি রে কথা বলছিস না কেন পিচ্চি?
– না! আপনার বন্ধু হলে আমিও আপনার মতো হয়ে যাবো।
– হলে হবি তাতে কি সমস্যা?
– আমি আমার মতো আমি কারো মতো হতে চাই না।
হৃদিতার কথায় মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে চেয়ারের হাতে হেলান দিয়ে আরাফ বলে,

– হবি হবি একদিন তুই আমার জন্য আমার মতো করে হয়ে যাবি।সেদিন তোর উঠানেও আছড়ে পড়া প্রণয় দহনেরা, শব্দহীন অনুভূতি গুলোর শব্দ খোঁজার জন্য লাগামহীন ছুটে বেড়াবে।সেই অনুভূতির শেষ থাকবেনা। ক্ষনে ক্ষনে যেন নতুন করে উপলব্ধি করবি। কিন্তু সেই মানুষটাকে পাশে পাওয়ার অবকাশ থাকবে না। তাই সময় থাকতে অনুভূতি গুলোকে আশকারা দে।ডুবে যা নাম না যানা গহীনে এক অফুরন্ত সৌহার্দ্য রাজ্য।

আরাফের কথায় অবাক হয়ে তাকায় হৃদিতা। এই ছেলে এইসব কি উল্টা পাল্টা বকছে।সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।সে কি তাকে বন্ধু হওয়ার নিবেদন করছে নাকি প্রেমের!

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here