মায়াবন_বিহারিনী🖤 #পর্ব_০৫,০৬

#মায়াবন_বিহারিনী🖤
#পর্ব_০৫,০৬
#আফিয়া_আফরিন
০৫

রাতের বেলা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে, মায়ার নিজের রুমে বসে বই খাতা গোছাচ্ছিল। এমন সময় পাশে তার মায়ের রুম থেকে ফুপির কিছু কথা শুনতে পেল।

“আমাদের তাড়াতাড়িই ফিরে যেতে হবে। বেচারার নীলার কত শখ ছিল, একটু ঘুরবে। তা আর হলো কই? সেটা তো আর সম্ভবই না একদম!”

মায়া হাতের বইগুলো টেবিলের উপর রেখে পাশের রুমে গেল।

ফুপি কে জিজ্ঞেস করল, “চলে যাবে নাকি তোমরা?”

সুহাদা জামান কিছু বলার আগে জাহানারা বেগম বললেন, “হ্যাঁরে, দেখ কাল ই নাকি চলে যাবে? নীলার নাকি পরীক্ষা।”

“বললেই হলো, চলে যাবে। আর নীলা আপুর পরীক্ষার কথা তো আগে শুনলাম না। কিসের পরীক্ষা তার? এভাবে হুটহাট করে কখনো পরীক্ষা হয়?”

ফুপি বললেন, “হ্যাঁরে মা। মেয়েটা সকালে বললো আমায়। হঠাৎ করেই নাকি পরীক্ষার ডেট দিছে।”

“নাহ। এভাবে হঠাৎ করে তাই যাওয়া যায় নাকি? আমাদের কত প্ল্যানিং ছিলো। কবে পরীক্ষা নীলা আপুর?”

“পরশু!”

মায়া অবাক হয়ে বললো, “তাহলে কাল ই চলে যাবে তোমরা?”

“তাছাড়া তার উপায় দেখছি না। তার মধ্যে নীলাকে আবার একা পাঠাই কেমনে বল? মেয়েটা আসছে আমাদের সাথে, যাবে একা!”

“এটা কি হলো? দুইদিন থাকলে না, তাতেই চলে যাওয়ার জন্য বায়না শুরু করলা। তুমি থেকে যাও।”

“নাহ রে। আমি ইমন আর নীলা চলে যাই। মিমো থাকুক।”

মায়া মন খারাপ করে বললো, “আচ্ছা।”
.
.
ইমন চলে যাবে শুনে মায়ার মনটা একেবারেই খারাপ হয়ে গেলো। আবার কবে দেখা হবে না হবে, তারপরও ঠিক ঠিকানাই নাই। কারণ ছাড়া তো এতদূর এমনি এমনি আসা-যাওয়া হয় না। সেদিন রাতে মায়া আর কথাও বললো না ইমন এর সাথে।

সকাল সকাল তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। নয়টার গাড়ি।

ব্যাগ পত্র গোছানো শেষে বাইরে এসে দাঁড়ালো ইমন। মায়ার দেখা পায় নি গতকাল রাত থেকেই। খুব ইচ্ছে ছিল শেষের কিছুটা সময় তার সাথে কাটানোর।
কিন্তু মেয়েটা তো জেদ ধরে বসে আছে! কই এসে একটু কথা বলবে তা না?

ইমনের মা তারা দিতে লাগলেন। নীলা সবার সাথে দেখা করে গাড়িতে এসে বসলো।
ইমন হঠাৎ নিচ থেকে দেখতে পেল মায়াকে। ছাদের এক কিনারে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করলো না। বাথরুমে যাওয়ার নাম করে ছাদে উঠে এলো।
পেছন থেকে গিয়ে মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আচমকা মায়া চমকে উঠল। তবে বুঝলো এটা ইমনের স্পর্শ।

“তুই কি আমার উপর রাগ করছিস?” ইমন মায়াকে ছেড়ে বলল।

“না রাগ কেন করব?”

“দেখ, নীলার পরীক্ষা। এর উপর তো আমার বা তোর কোন হাত নেই তাই না?”

মায়া মনে মনে বলল, “পরীক্ষা না কি তা ভালো করেই জানা আছে আমার?”
মুখে বলল, “হ্যাঁ যাও।”

“রাগ করিস নি মুখে বলছিস। কিন্তু, মুখ দেখে কথা শুনে উল্টোটা মনে হচ্ছে।”

“এসব জ্যোতিষ বিদ্যাগিরি দেখিও না। রাগ করি নাই, যাও তুমি।”
পরক্ষণ এই মায়া করুণ চোখে ইমনের দিকে তাকালো।
বললো, “আবার কবে দেখা হবে আমাদের?”

“আল্লাহ যেদিন চাইবে। তবে আজকের বিদায়টা তুই হাসিমুখে দে। কাল ইচ্ছা ছিল, পুরো সময়টা তোর সাথে কাটানোর। কিন্তু তুই তো!”

মায়া এইবার হাসিমুখেই বলল, “আচ্ছা যাও তবে।”

ইমন মায়ার কপালে অধর জোড়া ছোঁয়ালো। তারপর চলে গেল। পিছন ফিরে আর তাকালো ও না একবার। মায়া উপর থেকে তাদের চলে যাওয়া দেখল।
চোখ থেকে পানিও গড়িয়ে পরলো নির্নিমেষে। আর নীলার চোখে মুখে তখন বিশ্বজয়ের হাসি।
মিমো যেহেতু রয়ে গেছে, তাই একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে ইমন আসার।
.
.
ইমন রা চলে যাওয়ার পর দুইদিন পার হয়ে গেছে। কথা তো হয় প্রতিদিনই, তবুও প্রিয় মানুষকে দেখার জন্য একটা অনুভূতি ও কাজ করে।
মায়া প্রতিনিয়ত চিন্তায় থাকে ইমনকে নিয়ে। আগে বাধন ছাড়া ছিল। কিন্তু এখন সে চিন্তায় চিন্তায় শেষ।
কারণ নীলা নামের একটা আশংকা যে থেকেই যায়।

মিমো আর মায়া কয়েক দিনের সারা শহর ঘুরে ফেলল। দুজনে মিলে অনেক কেনাকাটা করল। মহাস্থানগড়, বেহুলা লক্ষিন্দরের বাসর ঘর ঘোড়া শেষে আর তেমন কোন ঐতিহাসিক জায়গা নেই, তাই মিমো বললো, “আপু ঢাকায় যাবে?”

“নাহ। আমি কেন যাবো?”

“চল না। কি হইছে তাতে? ভাইয়া ও তো আছে।”

“মা তো বছরের মাঝামাঝি যাইতে দেবে না রে।”

“সমস্যা নাই তুমি একবার রাজি হয়ে যাও। তারপর মামীকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।”

“আচ্ছা দেখ। আগে মাকে বল, মা যদি অনুমতি দেয় তাহলে আমার যাইতে আপত্তি নাই।”

মিমো বহু বলে কয়ে মামিকে রাজি করালো। সে তাদের যাওয়ার পারমিশনও দিল।
কিন্তু মিমো মাঝখানে এক শর্ত দিয়ে বসলো।

“আমরা যে যাব এটা যেন মা-বাবা বা ভাইয়া কেউ না জানে। আমরা সারপ্রাইজ দেব।”

তাই শুনে জাহানারা বেগম বললেন, “তা কিভাবে হয়? ইমনকে আসতে বল। ও এসে নিয়ে যাবে তোদের কে।”

“ভাইয়া কেমনে আসবে? তাছাড়া গাড়িতে জোড়া সিট থাকে। ভাইয়া আসলে ব্যাপারটা বেজোড়া হয়ে যায় না?”

“বাহানা করিস না মিমো। তোদেরকে যে যেতে দিচ্ছি এটাই তোদের সাত পুরুষের ভাগ্য। এই ভাগ্যটা টেনে টেনে আর লম্বা করতে চাস না। তোরা দুইটা জোয়ান মেয়ে, আমি একা এত দূরে রাস্তা যেতে দিব কিভাবে? অসম্ভব!”

“মামি প্লিজ। আমরা তো ভোরের গাড়িতে যাব। প্লিজ মামী না করোনা। মামা আমাদেরকে গাড়ি পর্যন্ত তুলে দিয়ে আসবে তো।”

“এই, এমন করলে যাওয়াই বাদ তোদের।”

“নাহ মামী। প্লিজ!”

“আমি কিছু জানি না। তোর মামা আসুক, তুই কথা বলে দেখিস।”

“আচ্ছা। মামাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। আর সবচেয়ে বড় কথা, মামা কখনোই আমার কথা ফেলবে না।”

অবশেষে মামাও রাজি হল। তাকে রাজি করানোর জন্য কোন কাঠখড় পোড়াতে হয়নি।
ওদের যাওয়ার কথা শুনে, তিনি বললেন,
“যাবি তো যা। তোদের আটকে রাখছে কে? তোরা এখন বড় হয়েছিস, নিজেদের একটা স্বাধীনতা আছে।”

মায়া বললো, “মা আমাদেরকে একা ছাড়তে চাচ্ছে না।”

“আমি তো বললাম। এখন আর কোন সমস্যা নেই।”
.
ঢাকা যাওয়ার আগে মায়া ভার্সিটি থেকে কয়েকটা প্র্যাকটিক্যাল তুলে নিল।

সময় করে একদিন মিমোকে নিয়ে মহুয়ার শ্বশুরবাড়ি থেকেও ঘুরে এলো। ওখানে গিয়ে বাঁধলো আরেক বিপত্তি।
একটা ছেলে সম্পর্কে মহুয়ার চাচাতো দেওর, সে সম্পূর্ণ মায়ার পিছিয়ে লেগে গেলো। বিরক্তির আর সীমা রইলো না মায়ার। শুধুমাত্র বড় বোনের শ্বশুরবাড়ির মানুষ দেখে মায়া চুপচাপ ছিল।

একপর্যায়ে ছেলেটা এসে বলল, “মহুয়া ভাবীর বিয়ের দিন থেকেই তোমাকে দেখতেছি। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। হয়তো ভালোওবাসি। আমার নাম লিমন।”

মায়ার মনে হলো কি ছ্যাঁচড়া ধরনের প্রস্তাব, এমন ছ্যাঁচড়া ধরনের প্রস্তাব বোধ হয় আর দুটিও নেই।

সে বিরক্তি ভাব দেখিয়ে বলল, “এভাবে আবার ভালোবাসা হয় নাকি?”

“হয়না তো হবে এখন থেকে। আচ্ছা এক মিনিট, তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?”

মায়া ইতস্তত করতে লাগলো। সত্যি কথা বলতে পারবে না, আবার মিথ্যেই বা বলে কি করে?

মায়ার হয়ে মিমো কড়া কণ্ঠে বললো, “মায়া আপুর বয়ফ্রেন্ড না থাকলে বুঝি আপনার সাথে প্রেম করতে হবে?”

লিমন নামের ওই ছেলেটা মিমো কে থামিয়ে বলল, “বড়দের মাঝখানে তুমি ছোট মানুষ কথা বলতে এসো না!”

মিমো চুপ করে গেলো। কিন্তু মায়া শান্তি পেল না। তাই চুপি চুপি একপর্যায়ে মহুয়াকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।

পথিমধ্যে মিমো বললো, “কি ফাজিল ছেলে দেখলে আপু? ভাগ্যিস ভাইয়া ছিল না, পোলাডার বারোটা বাজিয়ে ছাড়তো তাহলে!”

“আচ্ছা শোন, তুই যেন বলিস না প্লিজ তোর ভাইকে। মাইন্ড করবে। নয়তো আমাকেই দোষ দিয়ে বলবে, ‘তুই গেছিস কি জন্য’?”

“আরেহ জানি আমি। বলবো না। টেনশন ফ্রি থাকো।”
.
.
.
আজ রাতটা কাটছে বড় উত্তেজনায়। শেষ পর্যন্ত ইমনের সাথে দেখা হওয়ার সৌভাগ্য হচ্ছে তাহলে।
সকাল ছয়টায় বাসের টিকিট। রাতেই ব্যাকপত্র গুছিয়ে ইমন কে ফোন দিল। এত এক্সাইটমেন্ট মায়ার ধরে রাখতে পারছে না। তবুও আগামীকাল যাওয়ার ব্যাপারটা ইমন কে সে বললো না। অনেকক্ষণ কথা হলো, কিন্তু তারপরেও বলল না।

অতঃপর সকাল ছয়টায় মায়া আর মিমো ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
.
.
.
.
.

চলবে……

[কাটেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]

#মায়াবন_বিহারিনী🖤
#পর্ব_০৬
#আফিয়া_আফরিন

ক্যাম্পাস থেকে ফিরে, ঘরে এসে সটান বিছানায় শুয়ে পড়লো ইমন। সকাল সকাল উঠার কারণে এখন ঘুম ধরছে।
শোয়ার সাথে সাথে তন্দ্রা ভাব চলে এসেছে। আদো ঘুম আদো জাগরণে মনে হচ্ছে কপালে কারো হাতের স্পর্শ পাচ্ছে।
কর্ণ-কুহরে নুপুরের রিনিঝিনি আওয়াজ এর মতো একটা শব্দ বারবার বেজেই চলছে, “এই উঠো!”

মায়া ইমন এর বাহু ধরে ঝাঁকুনি দিলো।
“কি হলো উঠবে না? আর কত ঘুমাবে?”

কোন সারা শব্দ নাই। ইমন সামান্য একটু নড়েচড়ে ওই দিক ফিরে শুয়ে পড়লো।
মায়া মাথায় হাত দিয়ে বলল, “নাহ, এ তো দেখছি বড্ড আজিব একখান প্রাণি! এত ডাকার পরও ওঠেনা। তার মধ্যে এরকম অবেলায় ঘুমানোর শক্তি কি কোন মানে আছে? যত্তসব বাজে অভ্যাস।”

মায়া ফের ইমনকে ডাকতে গেলে ইমন মায়ার এক হাত টেনে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে।
মায়া বুঝলো, ঘুম এখনো ভাঙ্গেনি ইমনের। ঘুমের ঘোরেই তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে।
কিন্তু, মায়ার তো দম বন্ধ হয়ে যায় যায় অবস্থা। ইমন কে সামান্য নাড়া দিয়ে বললো, “আমাকে মেরে ফেলবে নাকি? আমি তোমার কোলবালিশ না। প্লিজ, ছাড়ো আমায়। ফুপি বাসায় আছে, এভাবে আমাদেরকে দেখে ফেললে বিরাট কেলেঙ্কারি ঘটবে। প্লিজ প্লিজ, ছাড়ো।”

ইমন হঠাৎ চোখ খুলে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড সে কিছু বুঝতে পারল না। যখন বুঝলো তখন মায়াকে ছেড়ে এক লাফে উঠে বসলো, “তুই?”

মায়া ছাড়া পেয়ে আগে বড় বড় নিশ্বাস নিতে লাগলো।

ইমন ফের বলল, “তুই এখানে? কিভাবে সম্ভব? আমি কি এই ভর দুপুরে স্বপ্ন দেখতেছি নাকি?”

মায়া খপ করে ইমন এর হাতে খামচি দিয়ে বসলো। ইমন হাত চেপে ধরে বলল, “তারমানে সত্যিই এটা তুই?”

“হ্যাঁ আমি। আরেকটু হলেই তো মেরেই ফেলতে আমায়!”

“কি করলাম?”

“এইভাবে কেউ চেপে ধরে? আমার হাড় হাড্ডি ভেঙ্গে দিছো সব।”

“কিন্তু, তুই কিভাবে?”

“কেন খুশি হও নাই আমি আসায়? নাকি আমি এসেছি বলে বিপত্তি বাড়লো তোমার?”

“কোনটাই না। আমি আসলে বিশ্বাস করতে পারছি না। কাল রাতেও তোর সাথে ফোনে কতক্ষণ বকবক করলাম, একবার বললিও না।”

“বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো? আমি আর মিমো চলে এলাম সকাল সকাল।”

“একা?”

“হ্যাঁ। তাছাড়া আবার কে আসবে সাথে?”

“বাবারে বাবা।”

“আচ্ছা থাকো এখন। সরি ঘুমে ডিস্টার্ব করার জন্য। আমি ফুপির কাছে যাই।”

মায়া উঠতে নিলে ইমন ওর এক হাত টেনে বসিয়ে বলে, “আমার ঘুম হারাম করে দিয়ে এখন কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?”

মায়া খিলখিল করে হেসে উঠলো।

“আচ্ছা এখন ছাড়ো। ফুপি আছে, কি মনে করবে আবার?”

“বিয়ে করে নিয়ে আসব বুঝলি। তারপর দেখবো, কার বাহানা দিয়ে কিভাবে দূরে থাকিস তুই!”
.
.
.
ঘুনে পোকা গুলো যেমন কাঠকে কুরে কুরে খেয়ে নিঃশেষ করে দেয়, সে ঘুনে পোকার বিচরণ এখন নীলার মাথায় হচ্ছে। মায়ার আসার খবর শুনে মেজাজটা অতিমাত্রায় গরম হয়ে গেছে তার। এই মেয়ে,সব জায়গায় এসে ভাগ বসাচ্ছে। যার কারণে বগুড়া থেকে এত তাড়াতাড়ি পরীক্ষার নাম করে ঢাকা ফেরা, সেই বিপদ আর থাকলো কই? একেবারে এসে হাজির!
তবে নীলা যে করেই হোক, মায়া আর ইমনের পথ আলাদা করবেই। বদ্ধপ্রতিজ্ঞ সে।
.
.
ছাদের পেছন পাশটায় রেলিং দেওয়া নাই। সেখানে পা ঝুলিয়ে বসে আছে মায়া।
আর ভাবছে, “এই ছয় তলা ছাদের রেলিং কি জন্য দেয় নাই? যদি হুট করে কেউ নিচে পড়ে যায়, তাহলে কি হবে?”

এমন সময় ইমন পেছন থেকে এসে ঘাড়ে ঝাকি দিতেই চমকে গেল মায়া।

“উফ তুমি? এভাবে চমকে দেয় কেউ?”

“এভাবে বসে আছিস কেন? পড়ে গেলে?”

“পড়ে গেলে আর কি? মরে যাব। সোজা হিসাব।”

“দেব না থাপ্পর আগে একটা।”

“সে কি কথা? মরতে তো হবে একদিন।”

“তা তো হবেই। তার আগে তুই আমার হবি। আমার মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসবি। তারপর, বাকি সব হিসেব।”

“আচ্ছা, তোমায় বুঝি এখন ভালবাসি না?”

“বাসিস, তবে অল্প।”

“মোটেও না। আমি তোমায় কি পরিমান ভালোবাসি তা আমি নিজেও কখনো পরিমাপ করতে পারবো না। আর ভালোবাসা তো পরিমাপ করার বিষয় নয়। এটা শুধুমাত্র মন প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করতে পারবো।”

ইমন হেসে মায়াকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে, “এত ভালবাসা বিশারদ হয়ে গেলি কবে থেকে, বলতো?”

“যবে থেকে আপনাকে ভালোবেসেছি।”

তারপর ইমনের টি-শার্ট/প্যান্টে হাত দিয়ে বললো, “তোমাকে এমন ভেজা ভেজা লাগছে কেন? বিছানায় হিসু-টিসু দিয়ে আসছো নাকি আবার?”
বলেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।

ইমন করুন মুখে তাকিয়ে বলল, “সে বয়সে আমার বহুযুগ আগেই পার হয়ে গেছে। আমি তো খেলে আসলাম।”

মায়া চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললো, “তাই, তো কি খেলে আসলে? ওডিআই নাকি টি টুয়েন্টি?”

“তোর মতলব ভালো ঠেকছে না। কোন খেলার কথা বোঝাচ্ছিস তুই?”

মায়া মুখে হাত দিয়ে হেসে ফেলল। ইমন ঠিকই বুঝলো। আর বললো, “ভালো হো, ভালো হো। কি সব আজেবাজে চিন্তাভাবনা মাথার মধ্যে নিয়ে ঘুরিস? কালকে রাতেই তোর আর মিমোর ঘর থেকে আওয়াজ পেলাম, কি যেন রোমান্টিক মুভি নিয়ে দুজন মিলে আলাপ-আলোচনা করছিস?”

“তুমি আমাদের ঘরে আড়ি পেতে ছিলে? তোমার নামে মানহানির মামলা করা উচিত!”

“হ্যাঁ তাই কর গিয়ে। তোরা তো একেবারে পেকে গেছিস। তোদের নামেও পাকা মামলা করবো!”

“করো।”

“মায়ের একটাও মাটিতে পড়বে না, দেখিস।”

“তাহলে কোথায় পড়বে?”

“সোজা পিঠা। তোকে আর মিমোকে দুটোকেই পিটুনি দিতে হবে। দাঁড়া, আমি মাকে বলে দিচ্ছি সব।”

“আমিও বলে দেবো ফুপিকে।”

“কি বলবি?”

“তোমাকে কেন বলবো? ওটা আমার আর আমার ফুফির পার্সোনাল বিষয়।”

“আচ্ছা পার্সোনাল হলে বলার দরকার নেই। ছাদে এতো এতো জায়গা থাকতে, মরণ মুখো জায়গায় কেন বসে আছিস? এমনিতেই এই জায়গাটা পিচ্ছিল। পড়ে যাবি, উঠে আয়।”

“হুহ। তুমি যদি কোনদিন কোন মুহূর্তে আমায় ছেড়ে চলে যাও, তবেই দেখো আমি এখান থেকে নিজেই লাফ দিয়ে পড়ে মরবো।”
উদাসীন ভাবে কথাটি বলল মায়া।
.
.
.
আজ ইমনদের ক্যাম্পাসে ফুটবল ম্যাচ। সকাল থেকে তারই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ইমন।

ইমনের এক ব্যাচ নিচেই নীলা। তাদের সাথেই ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
জুনিয়র ভার্সেস সিনিয়র!

মায়া কে বারবার বলছে, “চল, চল সাথে মিমোও যাবে। নীলা আছে ওখানে, দেখা করিস।”

মায়া মূলত নীলার কারণেই যাচ্ছেনা। নীলার স্বভাবটা বড্ড গায়ে পরা গোছের। ইমনের সাথে সবসময় কাঁঠালের আঠার মতো লেপটে থাকে, দেখলেই একদম বিরক্ত লাগে।
নীলার এসব ভাব ভঙ্গি মায়া সহ্য করতে পারবে না, তাই সে ইমনের এত বলা সত্ত্বেও, ইমনের সাথে ক্যাম্পাসে যাচ্ছে না।

ইমন বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। মায়ার মন টিকতে চাচ্ছে না। একবার মনে হচ্ছে গেলেই ভালো হতো, তো আরেকবার মনে হচ্ছে থাক যাওয়া লাগবে না।

ভাবতে ভাবতে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। মায়া মিমো কে এসে বললো, “মিমো, চল না?”

“কোথায়?”

“তোর ভাইয়ার ক্যাম্পাসে। খেলা দেখতে যাব।”

“আহা গো ময়না পাখি! ভাইয়া এত পরে সাদলো গেলা না, তো দাঁড়াও মাকে বলে আসি। মা যাবে কিনা?”

“আচ্ছা।”

সুহাদা জামান ও মায়াদের সাথে যেতে রাজি হলেন। তিনজনে দ্রুত রিক্সা নিয়ে ক্যাম্পাসে পৌঁছালো। ততক্ষণে খেলা এক দফা শেষ হয়ে বিরতি চলতেছে।

ইমন সবাইকে দেখে বেশ খুশি হল। মায়াকে কানে কানে বলল, “কি থাকতে পারলি না? চলেই গেলি শেষ পর্যন্ত? এত মিস করিস আমায় তুই?”

“এই যে মিস্টার, মিস করার জন্য আসি নাই এখানে আজকে। তোমাকে পাহারা দেওয়ার জন্য আসছি।”

এমন সময় খেলা শুরু হওয়ার বেল বাজলো। কি বন্ধ করে চলে গেল। ইমন দের টিম আর নীলাদের টিম স্কোর সেম ছিলো। দুই পক্ষই এক গোল করে দিতে পেরেছে।
কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ইমনরা জিততে পারল না। বিপরীত পক্ষ শেষ সময়ে আরেকটা গোল দিয়ে ফেললো। মাত্র এক গোলের কারণে তারা হেরে গেলো।
.
.
.
.
.

চলবে……

[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here