মায়াবন_বিহারিনী 🖤 #অন্তিম_পর্ব

#মায়াবন_বিহারিনী 🖤
#অন্তিম_পর্ব
#আফিয়া_আফরিন

ইমন অনেকক্ষণ যাবৎ ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। মিমোকে ফোন করে ছাদে আসতে বলেছে। মিমো বললো, “দুই মিনিটে আসছি।”

অথচ প্রায় আধাঘন্টা হতে চললো, ওর আসার কোন নামগন্ধ নাই।
এমন সময় পেছন থেকে বা-বা ডাক শুনে ইমন পিছন ফিরে তাকালো। মিমো এসেছে, সাথে ইমা ও এসেছে।

ইমন ইমাকে কোলে নিতেই মিমো বললো, “কি ব্যাপার কি? এত জরুরী তলব কি জন্য?”

“আমি আসলে একটা প্ল্যান করেছি। যদিও তোকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি, কিন্তু ইমার জন্য তোকে দরকার।”

“আচ্ছা সমস্যা নেই। কিসের প্ল্যান?”

“কাল মায়ার জন্মদিন। আমি ওকে সামান্য একটু সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছি।”

“ওয়াও দ্যাট’স গ্রেট! তো কি প্ল্যান করছো?”

“করি নাই তবে করতেছি। সেটা আমি নিজের মতো করে প্ল্যান করে নিতে পারবো।
তোরা তোদের মত ওকে উইশ করবি, আরো যা যা করা দরকার হয় করবি। আর আমি যা করার হয় ছাদে করবো। তুই শুধুমাত্র ঐ সময়টুকু ইমাকে রাখতে পারবি না?”

“এইটা কোন ব্যাপার নাকি। অবশ্যই পারবো। তাছাড়াও যদি কোন হেল্প লাগে তাহলে বইলো। আচ্ছা তুমি কি ছাদ ডেকোরেট করবে?”

“না না অতদূর পর্যন্ত ভাবি নাই। দেখি কি করা যায়।”

“আচ্ছা। নিজের মতো করে নিজের বউকে সারপ্রাইজ দাও। আমি তাহলে যাই এখন।”

“যাহ।”

“ওকে দাও।”

“থাকুক আমার কাছে।”
.
.
রাতের বেলা। বারোটা প্রায় ছুই ছুই। একটু বাদে মায়ার জন্মদিন।
মায়া ইমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজে উঠে বসলো। যদিও ঘুমে চোখ লেগে আসছে। কিন্তু এখন ঘুমানো যাবে না। রাত ঠিক বারোটায় ইমন মায়া কে প্রথম উইশ করে। এইবারও মায়া সেই জন্যই অপেক্ষা করতে লাগছিলো।

কিন্তু বারোটা বেজে মিনিট দশেক পার হয়ে যাওয়ার পরও ইমনের কোন পাত্তাই পাওয়া গেল না। নিজের মনে বসে বসে কি যেন হিসাব করছে। মায়া আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো।
শেষে ইমনের সামনে গিয়ে বললো, “কি করছো?”

ইমন একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মায়াকে বললো, “এখনো জেগে আছো যে? ঘুমাওনি কেন?”

“আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করছি।”

“ওহ। কই কিছু করছি না তো।”

“আজকে কি মনে নাই?”

ইমন তারিখ দেখে বললো, “কি? ও হ্যাঁ আজকে তোমার জন্মদিন।”

মায়া গাল ফুলিয়ে বললো, “উইশ করলে না কেন?”

“উইশ করতেই হবে নাকি? আগের মত বাচ্চা আছো কি? বড় হয়ে গেছো না? এক বাচ্চার মা ও হয়ে গেছো।”

কিঞ্চিৎ অভিমানে গাল ফুলালো মায়া। ছোট্ট করে ‘আচ্ছা’ বলে শুয়ে পড়লো। ইমনও আর কথা বাড়ালো না।

মায়ার অনেকক্ষণ পর্যন্ত ঘুম এলো না। এটা কি ইমনের অবহেলা ছিলো? দিন যত যাচ্ছে ভালবাসা কি তবে কমে যাচ্ছে?
.
.
.
সকাল বেলায় ইমন ঘুম থেকে উঠে বাইরে চলে গেলো। মায়ার ক্ষীণ ধারণা ছিলো, ইমন হয়তো রাতের ব্যবহারের জন্য সরি বলবে, ক্ষমা চাইবে। কিন্তু না ধারণা ভুল, পাত্তাই দিল না। উল্টো লাট সাহেব সেজে বাহিরে চলে গেলো।

দুপুরের একটু কিছুক্ষণ পর মায়া ফোন করলো ইমনকে। প্রতিদিন এই সময়ের আগে আগেই বাসায় চলে আসে, কিন্তু আজ এখনো আসে নাই।

ইমন ফোন রিসিভ করেই প্রথমে বললো, “কে বলছেন?”

মায়ার সন্দেহের দৃষ্টিতে নিজের ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালো। হ্যাঁ ঠিকই তো আছে। ইমনকেই তো ফোন করেছে সে। তাহলে?

বিষ্ময় নিয়ে বললো, “মানে? কাকে ফোন করেছি মানে?”

“হ্যাঁ। সেটাই তো বলছি। আপনি কাকে ফোন করেছেন? আমি তো চিনতেই পারছি না আপনাকে।”

“বাহ! দিন দিন ভালোই তো উন্নতি হচ্ছে তোমার।”

“সত্যি আমি আপনাকে চিনতে পারছিনা। যদি দয়া করে পরিচয়টা বলেন, তাহলে সুবিধা হতো।”

“তুমি আজকে শুধু বাসায় আসো একবার। আমাকে চিনো না, চিনাচ্ছি দাঁড়াও। আর না চিনলে এত কথা কিসের, হু? মেয়ে মানুষের কন্ঠ পেলে আর হুঁশ থাকে না তাই না?”

“এই যে ম্যাডাম শুনেন, একদম বাজে বকবেন না। আপনিও তো কম না। সোজাসাপটা বলে দিলেই তো হয় আপনি কে? আমার মত শান্তশিষ্ট, ভদ্র, ইনোসেন্ট ছেলেদের আকর্ষণীয় ভয়েস শুনে অযথাই কথা বাড়াচ্ছেন। ভালো হয়ে যান ম্যাডাম, সময় থাকতেই।”

মায়া রাগের চোটে ফোন কেটে দিলো। ইমনের উপর কাল রাত থেকে এমনিতেই মেজাজ খারাপ ছিল, এখন আবার সপ্তমে চরেছে। সাহস কত বড়?

ইমন ছাদেই ছিল। সে এখানে তার প্লানের যাবতীয় কাজগুলো রেডি করছে। মিমো আর ইমাও আছে। ইমা খুব দুষ্টুমি করছে। হাঁটা শিখেই এদিক ওদিক ছোটাছুটি। স্থিরতা নাই মেয়েটার মধ্যে।

মিমো ইমাকে ছেড়ে দিয়ে ইমনের কাছে এসে বললো, “ভাইয়া তুমিও পারো বটে। এসব করার কি দরকার আছে?
আপুকে মুখে উইশ করে দিলেই সে বেশি খুশি হতো। এত হুলস্থুল কান্ড করার দরকারই পড়তো না। ওই যে ধরো, কিছু মানুষ আছে না অল্পতেই খুশি হয়ে যায়। মায়া আপু ঠিক সেই ধরনের মানুষ। তুমি কাল রাতে তাকে উইশ করো নাই, এইজন্য মন খারাপ।”

“আমি জানি তো রে। কিন্তু মাঝে মাঝে এইসব করতে হয়। আমি কি সব সময় করছি নাকি? দশ বছরে একবার করলে কি সমস্যা?”

“আপু তোমাকে এমনিই ভালোবাসে।”

“মায়া কিন্তু আমার জন্য অনেক কিছু করেছে। সবটাই ছোট ছোট। কিন্তু সেই ছোট জিনিসগুলোকে আমি মনের গহীনে যতন করে রেখেছি। এই জিনিসগুলো সম্পর্কের মধ্যে খুব দরকার। কিছু কিছু মুহূর্ত, মস্তিষ্কের মধ্যে গেঁথে রেখেছি আজও!
আমাদের ভালোবাসার মানুষের প্রত্যেকটা কাজ খেয়াল করতে হয়। তার খুব ছোট ছোট ইচ্ছা, আকাশ সমান মর্যাদা দিতে হয়। তার প্রতিটা কথা, ইঙ্গিত, ইশারা, কাজ খুব সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করতে হয়।
তুই যদি তাকে কিছু দিতেই না পারিস, আশা করবি কিভাবে? কিছু পেতে গেলে তো কিছু খসাতেই হবে। সাপোজ ধর, তুই কাউকে খুব ভালোবাসিস। যখন একটা ছেলে তোর কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়া শুরু করবে, তখন সেও তোকে পাগলের মত ভালবাসবে। তবে এখনকার যুগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ভালোবাসাটা শারীরিক চাহিদার মধ্যে আটকে গেছে। সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ কখনো এটা চাইবে না। সে চাইবে সামান্য সান্নিধ্য, তোর কাছে তার সামান্য গুরুত্ব। তোর ভালোবাসার মধ্যেই ভালো থাকতে চাইবে। অবহেলা করলে থমকে যাবে। হয়তো প্রথম প্রথম কয়েকদিন সহ্য করবে। কিন্তু আর কতো?”

“তোমার মত করে কখনোই এই কথাগুলো ভেবে দেখিনি ভাইয়া। আমি আসলেই ব্যাপারটা জানতামই না।”

“ভাবতে হয়। মাঝে মাঝে ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপ করে দেখতে হয়। আমি মায়ার একটা উদাহরণ দেই, আমাদের সম্পর্ক আরো অনেক বছর আগে। সেই ছোট থেকেই। মেয়েটা কিন্তু আমায় প্রচুর যত্ন করতো। ছোটখাটো সামান্য বিষয়গুলো প্রচুর গুরুত্ব দিতো। তখনো সে ভালোবাসা বুঝতো না, কিন্তু আমায় প্রচন্ড ভালোবাসতো। তারপর আমাদের বিয়ে হলো। নিজের জীবন বাজি রেখে আমার এক সন্তানের মা হলো। এই পর্যন্ত তো ওই আমার জন্য সবকিছু করেছে।
আমি যদি আর সামান্য কিছু করে ভালোবাসা প্রকাশ করি, তাতে ক্ষতি কি? ভালোবাসি তো। দুজনেই দুজনার ভালোবাসার ব্যাপারে জানি। তবু ও মাঝে সাঝে ঢাকঢোল পিটিয়ে সেটা প্রকাশ করলে ক্ষতি কি!
ভালোবাসার মানুষেরা তো আমাদের ভালবাসবেই। কিন্তু সেই ভালোবাসার গভীরতা টা আমাদের নিজেদেরকেই নির্ধারণ করে নিতে হবে।
মানুষের মন মাটির চেয়েও নরম। কিন্তু মাটি গলানোর যেমন সহজ, মন গলানো ঠিক ততটাই কঠিন। কিন্তু ভালোবাসা সেটাকে সার্থক করে। মায়ার ভালোবাসার গভীরতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ও সেটা প্রকাশও করে মাঝে মাঝে, কিন্তু আমি পারিনা। তবে আজ করবো, চার ভাগের এক ভাগ।”

মিমো মুগ্ধ হয়ে এতক্ষণ কথাগুলো শুনছিল। তারপর বলল, “চার ভাগের একভাগ প্রকাশের জন্যই এত আয়োজন!”

“হ্যাঁ। এখন তুই ইমাকে নিয়ে নিচে যা তো। দেখ, কেমন কাঁচা ফুলগুলো খাচ্ছে।”

মিমো ইমার দিকে এগিয়ে গেলো। ইমার হাত থেকে ফুলগুলো ফেলে দিয়ে কোলে তুলে নিলো। ছাদ থেকে যেইনা নামতে যাবে, অমনি বা-বা-বা-বা করে কান্না জুড়ে দিলো।

মিমো কড়া দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললো, “সব সময় বাবা কিরে? আমরা যে তোকে এত আদর করি, সেটা কি চোখে পড়ে না।”

ইমা দুই হাত মুখে পুড়ে খিল খিল করে হাসতে লাগলো।
.
.
.
মায়া খুব সুন্দর করে সেজেছে। চোখে কাজল দিয়েছে, গাঢ়ো করে। কাজল নামের কালো রং কি ভাবে চোখে এত সুন্দর করে মানিয়ে যায় কে জানে?
মেয়েরা উৎসব উপলক্ষে শাড়ি পড়তে পছন্দ করে। মায়া ও তেমনি পড়েছে। আকাশী আর সাদা রংয়ের কম্বিনেশন এ কাতান শাড়ি।

ইমন ঠিক সেই সময় ঘরে ঢুকলো। মায়াকে দেখে, সেখানেই তার সময় থমকে গেলো। ইমন ধীর পায়ে মায়ার দিকে এগিয়ে এলো।
মায়া পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে মন দিলো।
ইমন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই মায়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, “অচেনা মানুষকে এভাবে হুটহাট স্পর্শ করতে নেই।”

“কিন্তু আমি তো আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি। অচেনা মানুষ কিভাবে হলো?”

“একটু আগে কে যেন কি বলেছিলো? মনে নেই।”

ইমন জিভ কেটে সরে পড়ছিলো। মায়া ওর গেঞ্জির কলার ধরে থামালো।

“এই যাচ্ছো কোথায়? আমার পরিচয় নেবেনা? কে আমি? খুব তো তখন আমায় বলা হচ্ছিলো, তোমার মত ইনোসেন্ট ছেলের কণ্ঠ শুনে আমি নাকি কথা বাড়াচ্ছি। কি এখন মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কেন? খুব তো নেতাগিরি দেখালে ফোনের মধ্যে।”

ইমন কাচুমাচু ভঙ্গিতে বললো, “সরি জান। এখন তুমি আমার দিকে একবার তাকাও তো।”

মায়া তাকিয়ে বলল, “হুমমম। তারপর?”

এমন একটা চোখ টিপি দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

মায়া ও ইমনকে জড়িয়ে ধরে বললো, “জীবনে আর যাই করো না কেন, কখনো আমাকে চেনো না এই কথাটা বলোনা। মজা করেও না। আমার কষ্ট হয়। মনে হয়, সত্যি যদি এমনটা হয় কোনদিন। শুধু শুধু কখনো মনের মধ্যে আশঙ্কার বীজ বপন করে দিও না।”

ইমন মায়ার কপালে সামান্য ঠোট ছুঁয়ে বলে, “আরে পাগলি! আমি তো তোমারই আছি সারা জীবন। তোমার কাছেই থাকবো।”

“সারা জীবন এমনই থাকবে তো? এর চেয়ে আর বেশি কিছু চাইনা আমি। অন্তত আমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও এতোটুকু করো।”

ইমন কিছু না বলে আরও শক্ত করে মায়াকে জড়িয়ে ধরলো।

মায়া মাথা তুলে ইমনের দিকে তাকিয়ে বলল, “কিন্তু একটা ব্যাপারে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। তুমি এখনো আমাকে উইশ করো নাই। মা করেছে, বাবা করেছে, আমার মা-বাবা করেছে, আপু দুলাভাই সহ সবাই। কিন্তু তুমি?”

“উইশ না করলে কি হয়?”

“কি হবে আবার? কিছু না। তবুও!”

“বাদ দেই এই ব্যাপারটা।”

সন্ধ্যায় কেক কাটা হলো। আরেক দফা আনন্দ উল্লাস করা হলো। রাত ১১ টা পার হয়েছে। ইমনের আরো যারা কাজিন ছিল, ইমা তাদের সাথে দুষ্টুমি করছিল, খেলাধুলা করছিল। আবার একপর্যায়ে মাহিদের সাথে একচোট মারামারিও লেগে গেছিল।

ইমন মিমোকে দায়িত্ব দিল, ইমা কে যেনো একটু দেখে রাখে। তারপর সুযোগ মতো মায়াকে ছাদে নিয়ে এলো। সিঁড়ি ঘরের এসে পাঞ্জাবি পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে মায়ার চোখ বেধে দিল।
তারপর কোলে তুলে নিয়ে ছাদ পর্যন্ত এলো। ছাদে এসেই মায়াকে নামালো। মায়া বলল, “কি করছো কি? এখন বাঁধনটা তো খুলে দাও।”

“ওয়েট। জাস্ট পাঁচ মিনিট।”

মায়া বাধ্য মেয়ের মতো ৫ মিনিট অপেক্ষা করলো। ইমন এসে চোখের বাঁধন খুলে দিতেই কড়া চোখে পিটপিট করে তাকালো আর সাথে সাথে চোখ ধাঁধিয়ে উঠলো।

একবার সামনে তাকাচ্ছে তো, আরেকবার ইমনের দিকে। মায়া বিস্ময় কাটিয়ে করতে পারছে না।

ইমন সামনে এগিয়ে এসে মায়ার গাল নিজের দুহাতের আজলায় নিয়ে এসে বলল, “শুভ জন্মদিন!”

আনন্দ, হ্যাঁ আনন্দে মায়ার চোখ ছল ছল করে উঠলো। ছাদের এই অংশটুকু ইমন শুধুমাত্র মোমবাতি দিয়ে সাজিয়েছে। নানান রঙের মোমবাতি। মাঝখানে ছোট একটা টি টেবিলের উপর কেক রাখা।

চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতোই সৌন্দর্য আশেপাশে। অন্ধকার রাত, তার মধ্যে গোধূলি রঙের আলো, পাশেই ইমন, মায়ার মনে হচ্ছে সে যেন স্বর্গে ভেসে যাচ্ছে।

সামনের দিকে এগিয়ে এসে বলল, “পুরো ক্যান্ডেল লাইট বাসর ঘর বানিয়ে ফেলেছো তুমি!”

“সারপ্রাইজ কেমন লাগলো?”

“ভাষায় তো প্রকাশ করতে পারবো না। কেমন যে লাগতেছে ব্যক্ত করা যাবে না!”

ইমন মুচকি হাসলো। মায়া আবারো বলল, “একদম বাসর ঘর বানিয়ে দিছো। তা তোমার কি এখানে বাসর করার সাধ জাগছে নাকি?”

ইমন আবারও হাসলো। মায়া ধীরে ধীরে কেকের কাছে এগিয়ে গেলো। মাঝারি সাইজের একটা কেক, তার উপর লেখা;

“শুভ্র শরতের আগমন!
একগুচ্ছ কাশফুল নিয়ে আপনার মন করবো অপহরণ!”
শুভ জন্মদিন!♥️

লেখাটা পড়ে মায়া হাসলো।
ইমন বলল, “বারোটা বাজতে বেশি দেরি নেই। এখন কেকটা কেটে ফেল।”

“কিন্তু ইমাকে ছাড়া?”

“আজকের জন্য ছুটিতে ও কে। মিমোর কাছেই থাক।”

মায়া আর কথা বাড়ালো না। কেকটা এক সাইড থেকে কেটে ইমনকে খাইয়ে দিলো। ইমন ও ওকে খাইয়ে দিল।
ইমন খেয়াল করলো মায়ার ঠোঁটের কোণে একটু কেক লেগেই রয়েছে। সে আঙ্গুল দিয়ে কেকের অংশটুকু মায়ার ঠোঁট থেকে উঠিয়ে নিজের মুখে নিলো। মায়া হঠাৎ চমকে উঠল। ইমনের এহেন কাণ্ডে আর লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারল না। ইমন বুঝলো ঠিকই, কিন্তু না বোঝার ভান করে ফিসফিসিয়ে বললো, “কি হলো?”

“কই কিছু নাতো। কিন্তু তুমি এত দেরিতে কেন আমায় উইশ করলে?”

“আমি শুধুমাত্র তোমার জীবনের শেষ পর্যন্ত থাকতে চাই। একদম শেষের দিকে মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই। আমি চাই আমি তোমার জীবনের সর্বশেষ মানুষ হবো। তোমার সর্বশেষ ভালোবাসা হবো।
প্রথমে তো যে কেউ থাকতে পারে। আমি শেষ পর্যন্ত থাকার ভাগ্যটা লুফে নিবো। শুধুমাত্র শেষের পরিচ্ছেদে আমায় রেখে দাও।”

“আগে কেন বললে না তুমি এই কথা? জানোই তো না বললে বুঝি না। আমি আসলেই একটা বোকা, গাধা, মহামূর্খ। অযথাই তোমাকে ভুল বুঝলাম।”

“তো এখন প্রতিদান কই আমার?”

“কিসের?”

“এই যে ভুল বুঝলে, রাগ করলে; তার।”

মায়া লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। ইমন কাছে এসে জড়িয়ে ধরে কপালে গভীর ভাবে ওষ্টদ্বয়ের ছোঁয়া দিলো। মায়া খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো জীবনকে।

কতশত গল্প হলো চাঁদের আলোয় বসে। বাতাসের মৃদু ঝাপটায়, মোমবাতিগুলো নিভতে বসেছে। আবছা আলোয় ইমন ফের মায়ার ওষ্টে আপন ওষ্ট ছোঁয়ালো। ভালোবাসার আরেক রাজ্যে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।

মায়া অভিনিবেশ কণ্ঠে বললো, “তুমি থাকো!”

ইমন পাল্টা উত্তর দিলো, “তুমি থেকে যাও আমার পরিপূর্ণতায়!”

“তুমিও থেকে যাও আমার হয়ে, আমার মনের আঙিনায়।”

“তুমি নিষ্প্রাণের মাঝে প্রাণ সঞ্চারের অনুভূতি!”

“তুমি হৃদয় আঙ্গনে ভারী মেঘের তর্জন গর্জন কে বাতাসে মিলিয়ে দেওয়ার প্রবল শক্তি!”

“হৃদয় অভ্যন্তরীণ নিকোষ কালো অন্ধকারে আলোর ন্যায় তুমি!”

“আমার জাহাজ বিহীন সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার দুঃসাহস তুমি!”

“তুমি এসেছো!”

“এক বসন্তকালে!”

“এমনি করেই রয়ে যাও তুমি!”

“বহু রক্তিম শ্রাবণে!”

“তোমার ঠোঁটের পরশ!”

“আমার কপালে তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া!”

“তুমি কি বোঝো না!”

“হৃদয়ের গভীরতা!”

“তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমার মায়াবিনী!”

“বিহারের ন্যায় উৎকণ্ঠা, উচ্ছলতা দিনশেষে একটু ঘুমের গভীরতা!”

“আমার মায়াবন বিহারিনী জুরে কেবল তোমারই বিচরনতা!” ইমনের কন্ঠে মাদকীয়তা।

অতঃপর দুজন দুজনার হাতে হাত রাখলো।
জীবন সুন্দর। ভালোবাসা আসলেই সুন্দর!❤

মাঝে মাঝে সকল বাঁধা ডিঙিয়ে, সবকিছুকে হারিয়ে জিতিয়ে দিতে হয় ভালোবাসা।
.
.
.
.

সমাপ্ত!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here