ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:১৪,১৫

ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:১৪,১৫
মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:১৪

শাহেদ রুমে প্রবেশ করেই রাগে সব কিছু ভাঙচুর শুরু করে।। এদিকে শব্দ শুনে সাহিল দৌড়ে শাহিনের রুমে প্রবেশ করে।।

— সাহিল শাহিনকে আটকানোর চেষ্টা করে,,,, “”ড্যাড!! কি করছো এসব?? আরে থামো।। কি হয়েছে?? বলো আমাকে।।””

— শাহিন ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পড়ে,,,””সব কিছু শেষ হয়ে গেলো।।
আমি নিজ হাতে ফাইলে অধরার রিপোর্ট নিয়ে গিয়েছি।। তাহলে সেই রিপোর্টগুলো কোথায় গেলোওও???
আর রিপোর্টের পরিবর্তে এই ডকুমেন্ট গুলো সেখানে কিভাবে আসলো??””

— সাহিল ভ্রু কুঁচকে শাহিনের দিকে তাকিয়ে,,,””ড্যাড।। তুমি কি বলছো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।। আমাকে প্রথম থেকে সব খুলে বলো।।””

শাহিন চোখ বন্ধ করে একটা বড় নিশ্বাস ফেলে প্রথম থেকে সবকিছু সাহিলকে খুলে বললো।। সাহিল সবটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে একটু ভেবে বললো।।

— “”এটা কিভাবে সম্ভব ড্যাড।। তুমি ফাইল নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে সোজা অফিসে গিয়েছো। তাহলে কিভাবে রিপোর্ট চেঞ্জ হয়??””

— “”গাড়ি আমি ড্রাইভ করিনি। রহিম অসুস্থ তাই একটা ছেলেকে পাঠিয়েছিল।। কি যেন নাম,,,,ও হ্যা আধার। সে ড্রাইভ করেছে।। সে যাই হোক,,,আমার রিপোর্ট….।।””

— সাহিল শাহিনকে থামিয়ে দিয়ে,,,,””ওয়েট… ওয়েট ড্যাড।। কি বললে তুমি?? আধার?? কে আধার??
রহিম যাকে পাঠিয়েছিল মানে কাশিম তো মমকে নিয়ে আজ সকালে শপিংয়ে গিয়েছিলো।। তারমানে…।।””

— শাহিন গর্জে ওঠে দাঁড়িয়ে,,,””তারমানে ওটা আশ্বিন ছিলো!!! আমার বাসায় এসে আমারই চোখের সামনে থেকে সে রিপোর্ট নিয়ে চলে গেল।।

শাহিন হাসাদের বাসায় এসে শাহিনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সফল হয়ে বেরিয়ে গিয়েছে এর জবাব তো তাকে দিতেই হবে।।
এইটুকু একটা ছেলের এতো বড় সাহস??””

— “”তোমাকে বলেছিলাম ড্যাড।। আশ্বিনকে কাচা খেলোয়াড় ভেবে ভুল করো না।। দেখো,, তুমি আমার কথা না শুনে কি ভুল করলে।।
যাই হোক,,,আমি জানি রিপোর্টগুলো এখন আশ্বিনের কাছেই আছে।।
আমি যেভাবেই হোক,,,আশ্বিনের কাছ থেকে সেই রিপোর্ট নিয়ে আসবো।।

— সাহিলের দিকে তাকিয়ে,,,””কি করবে??””

— “”কাটা দিয়েই কাটা তুলবো আমি।”” কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দেয় সাহিল।।

🍁এদিকে…..

অধরা আর আশ্বিন মিলে বাইক নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছে।। আশ্বিনকে পাশে পেয়ে অধরা মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে।। অধরা এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে আর আশ্বিন তাকে বাঁধা না দিয়ে উল্টো ধীরে ধীরে তার পিছু হেঁটে যাচ্ছে।। হঠাত আশ্বিনের ফোনে কল আসতেই দেখে অর্ণবের ফোন।।

— “”হ্যা অর্ণব।। বল।।””

— “”অধরা নাকি তোর সাথে মেলায় গিয়েছে?? সত্যি নাকি?? আজ কোন দিকে সূর্য উঠলো?? তুই অধরাকে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিস,,ভাবা যায়!!””

— “”ফালতু কথা না বলে…কেনো ফোন করেছিস সেটা বল।।””

— “”হিহি।। আচ্ছা,,,ভালো কথা। রিপোর্টগুলো তোর কাছেই রেখেছিস তো?? দেখিস যেন শাহিন ভুলেও আর না পায়।।””

— “”চিন্তা করিস না।। আমার কাছেই আছে।। আগে তুই বল,,,,তখন শাহিনের বকাগুলো শুনতে কেমন লেগেছিল??””
মজা করে কথাটা বললো আশ্বিন।।

— অর্ণব রাগী ভাব নিয়ে,,,””এই আশ্বিন…একদম মজা নিবি না বললাম।। শুধু মাত্র বোনের জন্য ওই শাহিনের কথাগুলো চুপচাপ শুনেছি।।
তাও ভালো তুই এই সময়ের মঝেই রিপোর্ট সরিয়ে ফেলেছিস।। নয়তো রাগের বশে কখন জানি আমি কিছু একটা বলে ফেলতাম।।””

— আশ্বিন হাসতে হাসতে,,,””যাই হোক,,,রাখছি। বাসায় ফিরে দেখা করবো।। বাই।””

আশ্বিন ফোন রেখে সামনে তাকাতেই দেখে অধরা একটা ভিলেন হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।। আশ্বিন চোখ ছোট ছোট করে বলে…

— “”কিহহ? এমন ছাগলের মত করে তাকিয়ে আছিস কেনো??””

— অধরা দৌড়ে এসে আশ্বিনের হাত শক্ত করে চেপে ধরে,,,””ভাইয়া চলো। আমরা নাগরদোলায় চড়বো।।””

— আশ্বিন চোখ বড় বড় করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে,,,,””জি না।। আমি নাই। তোর ইচ্ছা হলে তুই যা।।””

— “”উফ হো….ভয় নেই ভাইয়া।। There is no fear when Adhora is here..চলো চলো।””

আশ্বিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অধরা তার হাত ধরে টেনে নাগরদোলায় বসিয়ে দেয়।। আশ্বিনের ছোট থেকেই এই নাগরদোলা ভয় পায়,,,,তবুও প্রতিবার শুধুমাত্র অধরা জেদ ধরে বলে সে ভয়কে জয় করে নাগরদোলায় উঠে বসে।।

আশ্বিন একহাত দিয়ে অধরাকে শক্ত করে চেপে ধরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বসে আছে।। এদিকে অধরার কাছে মুহূর্তটা বেশ ভালোই লাগছে।। সে বরাবরই জানে আশ্বিন নাগরদোলা কতটা ভয় পায়,,,তবুও অধরা জোর করলে সে কখনো না করেনি।।
আচ্ছা এটা কি ভালোবাসা না?? প্রিয় মানুষটার একটু খুশির জন্য,,,নিজের কথা একবারও ভেবে না দেখা।।

নাগরদোলা থেকে নেমে আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো,,,,হাঁটার মতো শক্তিটাও তার নেই।। চোখ শক্ত করে অধরার দিকে একবার তাকাতেই অধরা ভয় মিশ্রিত একটা বোকা হাসি দিয়ে পানির বোতল আশ্বিনের দিকে এগিয়ে দেয়।। আশ্বিন অধরার হাত থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেয়ে সামনে আগাতে শুরু করে।। অধরাও চুপচাপ হাত দিয়ে শক্ত করে আশ্বিনের শার্টের কোণা চেপে ধরে পিছন পিছন আসতে শুরু করে।।

— আশ্বিন অধরার দিকে না তাকিয়ে,,,””আরো ঘুরবি…নাকি এখন বাসায় ফিরে যাবি??””

— অধরা একটু মুচকি হেসে বায়না ধরে,,,””ভাইয়া!! আমাকে একটা সুন্দর দেখে শাড়ি কিনে দিবে?? দুদিন পর কলেজের ফাংশনে সবার মতো আমিও শাড়ি পড়তে চাই।।””

— অধরার দিকে তাকিয়ে কঠোর ভাবে,,,””কোন দরকার নেই।। নরমাল ড্রেস পড়ে যাবি। এখন চল।””

— অধরা ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে,,,””জানতাম তুমি দিবে না।। তোমার জায়গায় যদি এখন অর্ণব ভাইয়া থাকতো তাহলে ঠিকই কিনে দিতো।।
আপন ভাইয়া,,,আপন ভাইয়াই হয়।।””

— আশ্বিন চোখ গরম করে তাকিয়ে,,,””কি বললি তুই?? চল আমার সাথে।।””

আশ্বিন অধরার হাত ধরে টেনে শাড়ির দোকানে নিয়ে আসে।। তারপর অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শাড়ি দেখে অধরার জন্য একটা লাল রঙের শাড়ি পছন্দ করে।। শাড়ির সাথে মিলিয়ে চুড়ি কিনে অধরাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।।

— “”এখন হয়েছে?? খুশি??””

অধরা দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।।

— মনে মনে,,,,””আরে…খুশি হবো না?? এইগুলা পড়েই তো আমি ওই মারিয়া শাকচুন্নিকে দেখিয়ে বলবো,,,দেখো দেখো এইসব আশ্বিন ভাইয়া নিজে পছন্দ করে আমাকে কিনে দিয়েছে।। আহ!! তখন মারিয়ার চেহারাটা একদম দেখার মতো হবে।। ওয়াহ!! অধরা ওয়াহ!! আই এম সো প্রাউড আফ মি।।””

🍁🍁

সাহিল রুমে বসে কিছু একটা ভাবছে তখনি তার সহকারী রাদ রুমে প্রবেশ করে।।

— “”স্যার।। আশ্বিনদের পিছু বাগান বাড়িতে আমরা যেসব গার্ড পাঠিয়েছিলাম তারা ফিরে এসেছে।।””

— “”সন্দেহ জনক কিছু কি ঘটেছিলো সেখানে?? মানে এমন কিছু যা আমাদের কাজে আসতে পারে।।””

— “”তেমন কিছু ঘটেনি স্যার।। তবে এই ভিডিওটা দেখতে পারেন।।””

সাহিল ফোন হাতে নিয়ে ভিডিওটা দেখে চমকে উঠে।। লেকের পারে অধরাকে যখন মারিয়া লুকিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় সেই মুহূর্তের ভিডিও।। যেখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মারিয়া ইচ্ছা করেই অধরাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে সাথে সাথে পালিয়ে যায়।।

— সাহিল একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,,,””গুড জব রাদ।। আমি সন্দেহ করেছিলাম মারিয়া আশ্বিনকে পছন্দ করে।। আর সেই হিসেবেই অধরাকে ঘৃণাও করে।। কিন্তু এতটা ঘৃণা করে তা বুঝিনি।।
যাই হোক,,,পেয়ে গেলাম রিপোর্ট ফিরে পাওয়ার উপায়।।””
কথাটা বলেই বাকা হাসি দেয় সাহিল।।

—চলবে❤

#ভালোবাসি_তাই❤
#মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব::::১৫

আশ্বিন বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই অধরা দৌড়ে আশ্বিনদের বাসায় ঢুকে পড়ে।। আশ্বিন অধরার যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি পার্ক করে ফোন দেখতে দেখতে বাসায় প্রবেশ করে।।

— অধরা এক দৌড়ে আশ্বিনের মায়ের কাছে এসে,,,””মামুনি!! মামুনি!! দেখো,,,আশ্বিন ভাইয়া আমাকে কি কিনে দিয়েছে।।””

— “”কোথায়?? দেখি তো,,,আমার মেয়েটাকে কি কিনে দিয়েছে।।””

— “”এই যে দেখো।। একটা লাল শাড়ি আর চুড়ি কিনে দিয়েছে।।””

— মামুনি শাড়িটা আলতো করে অধরার মাথার উপর ধরে,,,,””আরে বাহ!! আমার মেয়েটাকে তো এই লাল শাড়িতে একদম লাল টুকটুক বউ লাগছে।। হুমম,,,দেখতে হবে না কার মেয়ে!!
তবে যাই বলো,,,আশ্বিনের কিন্তু চয়েস আছে।।””

মামুনির কথা শুনে অধরা খানিকটা লজ্জা পেলো।। মুহূর্তেই তার গলুমলু গালগুলো লালচে রঙ ধারণ করে।।
এর মধ্যে আশ্বিন রুমে প্রবেশ করতেই অধরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে একটা মুখ ভেংচি কাটে। আশ্বিন একবার ভ্রু কুঁচকে অধরার দিকে তাকিয়ে মামুনিকে বললো…

— “”মম,,,আমি একটু বের হলাম।। জরুরী,,,অর্ণবকে নিয়ে এক জায়গায় যেতে হবে।। ফিরতে একটু দেরি হতে পারে।।””
কথাটা বলেই আশ্বিন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।।

আশ্বিন চলে যাওয়ার পর অধরা আর মামুনি বেশ কিছুক্ষণ একসাথে গল্প করে।। মামুনির বিভিন্ন কথায় অধরা মন খুলে হাসতে থাকে।।
— “”অধরা মা,,,,এই শার্টগুলো একটু আশ্বিনের রুমের আলমারিতে রেখে আসবে??””

— “”হুম,,এখনি রেখে আসছি।।””

অধরা এক দৌড়ে আশ্বিনের রুমে এসে আলমারিতে শার্টগুলো রেখে চলে আসতে নিতেই হঠাত থেমে যায়।। আলমারির ভেতর বড় আকৃতির একটা বক্সের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সে।। এই বক্স তো আগে কখনো দেখেনি অধরা।। আগ্রহ নিয়ে বক্সটা আলমারি থেকে বের করে খাটের উপর বসে।।

বক্সটা খুলতেই অধরার চোখ একদম কপালে উঠে যায়।। অবাক হয়ে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে অধরা।।
— “”এগুলো সবকিছুই তো আমার।। আমার ছোটবেলার খেলনা,,,নূপুর,,,জামা…ছবি।। কিন্তু এগুলো…!!
আশ্বিন ভাইয়া এতদিন সব যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো??””

হঠাত রক্ত মাখা সাদা জামাটার দিকে চোখ যায় অধরার।। জামাটা হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে…
— “”এই জামাটা আবার কার?? আমার নয়তো?? কিন্তু কার রক্ত লেগে আছে এখানে??””

জামাটা বক্সে রাখতে গিয়ে হঠাত একটা জিনিসে চোখে পড়ে তার।। অধরা ধীরে ধীরে তা হাতে তুলে দেখে,,,,

— “”রিপোর্ট!! এগুলো কার রিপোর্ট??””

অধরা রিপোর্টটা উল্টে দেখতে নিবে তার আগেই কেউ একজন টান দিয়ে অধরার হাত থেকে রিপোর্ট ছিনিয়ে নেয়।। আচমকা টান দেওয়ায় অধরা পিছনে ঘুরে দেখে আশ্বিন!! রেগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে তার।। অধরা ভয়ে ভয়ে খাট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে…

— “”ভ..ভাইয়া!! আমি…””

অধরাকে বাকি কথা বলতে না দিয়েই আশ্বিন রেগে গিয়ে শরীরের সব শক্তি দিয়ে অধরাকে একটা চড় মারে।। অধরা টাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে যায়।।

— আশ্বিন রেগে দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে চিৎকার করে,,,””তোর সাহস কিভাবে হয় আমার অনুমতি ছাড়া আমার পার্সোনাল বক্স ধরার?? বল এতো সাহস কিভাবে পেয়েছিস তুই??
বেশি লাই দিয়ে তোকে মাথায় তুলে ফেলেছি,,,তাই না??””

অধরা গালে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।। জীবনে প্রথম আশ্বিন তার গায়ে হাত তুলেছে। টলমল চোখে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে অধরা।। আশ্বিন রেগে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে।। হঠাত অধরার নাক দিয়ে টপ টপ করে তরল কিছু পড়তে শুরু করে।। অধরা হাত দিয়ে দেখে রক্ত।।

এদিকে অধরার দিকে একবার তাকিয়ে রক্ত দেখে আশ্বিন ঘাবড়ে যায়।। সে দৌড়ে অধরার কাছে এসে দু’হাত দিয়ে অধরার মুখ উঁচু করে ধরে,,,অবাক হয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে…

— “”অধরা….!!
ড্যাম ইট!! আমি,,এটা কি করে ফেললাম!! বিশ্বাস কর অধরা,,,আমি এমনটা চাইনি।। আমি…।।””

আশ্বিনের কোন কথাই অধরার কানে যাচ্ছে না।। সে আশ্বিনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।।
আশ্বিনের মা আশ্বিনের চিৎকার শুনে রুমে প্রবেশ করতেই অধরা তার পাশ কাটিয়ে চলে যায়।। মামুনি অধরাকে অনেকবার ডাকলেও অধরা সাড়া দেয়না।

— মামুনি আশ্বিনের সামনে এসে,,,””কি হয়েছে বাবা?? অধরার উপর এভাবে চিৎকার করছিলি কেনো??””

— আশ্বিন খাটের উপর বসে মাথা নিচু করে দুহাতে ভর দিয়ে,,,””রাগের বশে ভুল করে ফেলেছি,,,মম।। ওই রিপোর্টগুলো অধরার হাতে দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না।। মম,,আমি.. আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি…।।””

আশ্বিনের মা ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আশ্বিনের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।।
এদিকে অধরা দৌড়ে রুমে প্রবেশ করে খাটে উঠে কান্না শুরু করে।। একটা ছোট বিষয়ে আশ্বিন তার গায়ে হাত তুলেছে।। কি এমন করেছে সে?? কি ছিলো ওই রিপোর্টে??

সারাদিন অধরা রুমেই বসে ছিলো।। অর্ণব অধরার পাশে বসে তাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু অধরা কারো কথাই শুনেনি।। আশ্বিনেরও আর অধরার সামনে আসার সাহস হয়নি।।

রাতে…
আশ্বিন বারান্দায় বসে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেয়।।
অপরদিকে অধরা খাটে শুয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলে।।

🍁পরদিন….

অধরা আজ আগে আগেই কলেজে চলে এসেছে।।
এদিকে আশ্বিন সকালে অধরাকে খুঁজতে এসে শুনে অধরা আর অর্ণব আরও আগেই কলেজে চলে গিয়েছে।। তাই সে আর এক মুহূর্ত দেরী না করেই কলেজে চলে আসে।।

— আশ্বিন অর্ণবের কাছে এসে,,,””অধরা কোথায়??””

— অর্ণব আশ্বিনের কাধে হাত রেখে,,,””তুই আগে শান্ত হও।। অধরা ক্লাসে আছে।।
আমি বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থা।। কিন্তু অধরা…।।””

— আশ্বিন অর্ণবের পাশে বসে,,,””আমার রিপোর্টগুলো আরো বেশি সাবধানে রাখা উচিত ছিলো।। কাল যদি সময় মতো না পৌছাতে পারতাম তাহলে অধরা…. এতক্ষণে সব জেনে যেতো।।””

— “”কে কি জেনে যেতো আশ্বিন??””
কথাটা শুনে আশ্বিন আর অর্ণব পিছনে ফিরে দেখে মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে।।

— মারিয়া আশ্বিনের পাশে বসে,,,””তুমি আমাকে রেখেই চলে এসেছো কেনো?? জানো আমি তোমার জন্য কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম।।””

মারিয়ার কথাগুলো এই মুহূর্তে বিরক্ত লাগছে আশ্বিনের,,,তবুও তা প্রকাশ করছে না।। এর মধ্যেই,,,অধরার ক্লাস শেষ হলে সে নিধি আর তিশার সাথে হেঁটে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে।।

— আশ্বিন দূর থেকে অধরাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে,,,””আমি একটু আসছি।।””

অধরা চুপচাপ নিধি আর তিশার পাশে হেঁটে আসছিলো হঠাত সামনে আশ্বিন চলে আসায় অধরা চলে আসতে নিতেই আশ্বিন অধরার হাত ধরে টেনে দূরে নিয়ে আসে।।

— “”ভাইয়া।। ছাড়ো আমাকে।।””

অধরা হাত ছাড়িয়ে চলে আসতে নিতেই আশ্বিন একটানে অধরাকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে রাখে।। অধরা বারবার আশ্বিনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে অথচ আশ্বিনের ছাড়ার কোন লক্ষণ নেই।। শেষে বাধ্য হয়ে অধরা শান্ত হয়ে আশ্বিনের বুকে মাথা রেখে কান্না শুরু করে।। আশ্বিন একহাত দিয়ে অধরাকে জড়িয়ে ধরে অন্য হাত আলতো করে অধরার মাথায় রাখে।।

— “”আর কাঁদিস না তো পিচ্চি।। কাঁদলে তোকে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো লাগে।। আর এতো কাঁদলে কালকে ফাংশনে তোকে দেখতেও বাজে লাগবে।।””
আশ্বিনের কথায় ফিক করে হেসে উঠে অধরা।।

🍁এদিকে….

মারিয়া দূর থেকে তাদের দেখছে আর রাগে ফুঁসছে।। আশ্বিনের পাশে অধরাকে তার একদমই সহ্য হচ্ছে না।। দুহাত শক্ত করে চেপে দাঁড়িয়ে আছে সে।।

— সাহিল মারিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে,,,””তাদের একসাথে কতো কিউট লাগে,,তাই না??””

— মারিয়া রাগী দৃষ্টিতে সাহিলের দিকে তাকিয়ে,,,””গেট লস্ট।।””

— সাহিল হালকা হেসে,,,””আমি যতদূর জানি আশ্বিন অধরাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।। তবে হ্যা,,,সে অন্য সবার মতো প্রকাশ করে না।।
কিন্তু,,,যদি কেউ অধরার বিন্দু মাত্র ক্ষতি করতে চায়,,,আশ্বিন তাকে ছেড়ে কথা বলেনা।।””

— মারিয়া সাহিলের দিকে ফিরে,,,””এসব কথা তুমি আমাকে কেনো বলছো??””

— “”কারণ তো আছেই।।
আমি জানি তুমি ছোট থেকেই আশ্বিনকে ইমপ্রেস করতে চাও।। কিন্তু আশ্বিন অধরার মতো তোমাকে কখনোই গুরুত্ব দেয়নি।। তাই তুমি অধরাকে হিংসা করো।। এতো বেশি হিংসা করো যে অধরাকে লেকের পানিতে ফেলে দিয়েছিলে তুমি।।””

— “”হোয়াট রাবিশ!! আমার সম্পর্কে এসব বলার সাহস পেলে কিভাবে?? কোন প্রমাণ আছে তোমার কাছে??””

— “”হুহহ,,,সাহিল প্রমাণ ছাড়া কথা বলে না।। প্রমাণ চাও তো তুমি?? ওকে ফাইন।। এই নাও।””

সাহিল ফোনের ভিডিও ফুটেজ মারিয়ার সামনে ধরে।। মারিয়া ভিডিওটা দেখে একদম চুপসে যায়।। সাহিল মারিয়ার ভয়ার্ত চেহারা দেখে বলে…

— “”তো?? কেমন লাগলো প্রমাণ?? একদম সেইইই,,,তাই না।। ভিডিওটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি অধরাকে ইচ্ছে করেই লেকে ফেলে দিয়েছিলে।।
যাই হোক,,,,ভিডিওটা আশ্বিনকে দেখালে কেমন হবে?? ভালো নাহহ??””

— মারিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে সাহিলের দিকে তাকিয়ে বললো,,,””কি চাও তুমি??””

কথাটা শুনেই একটা বাঁকা হাসি দেয় সাহিল।। এতক্ষণ ধরে তো একথাই শুনতে চাইছিলো সে।। মারিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্য জনক হাসি দেয় সাহিল।।

—চলবে❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here