ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:২৮

ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:২৮
মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন

একটা পুরোনো বাসার মেঝেতে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে অধরা।
পিটপিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে সবকিছু আবছা আবছা দেখতে পাচ্ছে সে। কানে ভেসে আসছে কিছু কথা..

— ” কথা মতো আমি আমার কাজ করেছি।
অধরা ঐ রুমে আছে। এখন আপনারা তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন নাকি মেরে ফেলবেন সেটা আমার দেখার বিষয় না।
বাই দ্য ওয়ে,, আপনার সাথে আমার যে চুক্তি হয়েছিলো সেটা এখন পূরণ করেন। ”

— ” হুম,, অবশ্যই। আমাদের এতো সাহায্য করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ মারিয়া। শেষ সময়ে তুমি অনেক ব্রেইন করে আশ্বিনের চোখ ফাঁকি দিয়েছো। আই এম ইমপ্রেসড।
যাই হোক। সাহিল,, মারিয়ার পাসপোর্ট আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব তাকে দিয়ে দাও। ”

— ” ইয়েস ড্যাড।
এই নাও মারিয়া। আমাদের হেল্প করার জন্য তোমাকে থ্যাংকস। তবে চাইলে নিজের শত্রুর শেষ পরিণতিটা দেখে যেতে পারো। ”

— ” হুহহ,, তা তো অবশ্যই। না দেখে আমি যাবো না। ”

এদিকে,, কথাগুলো শুনে অধরার আর বুঝতে বাকি নেই এরা কারা। মারিয়া তাকে হিংসা করে এটা সে জানতো,, তাই বলে এমন কাজ করবে কোনদিন ভাবেনি সে। অধরা অনেক চেষ্টা করছে হাত পায়ের বাধন খোলার।

হঠাত রুমে কেউ প্রবেশ করে। অধরা মূখ তুলে দেখে শাহিন সাহিল আর মারিয়া। তারা ধীর পায়ে হেঁটে অধরার সামনে এসে দাঁড়ালো।

— শাহিন একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,, ” কেমন আছো অধরা মামুনি? ”

— অধরা মুখ শক্ত করে,, ” আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো? ছাড়ুন আমাকে। ভাইয়া জানতে পারলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। ”

— সাহিল অধরার গাল টেনে,, ” অধরা জানু,, আমি তোমার ভাইকে ভয় পাই নাকি? দেখো কিভাবে তোমার ভাইয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে তোমাকে তুলে নিয়ে আসলাম। ”

— অধরা রাগী চোখে তাকিয়ে,, ” কি চাও তুমি? ”

— শাহিন মুচকি হেসে,, ” দেখো অধরা মামুনি,, তোমার সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। তাই তোমাকে বিপদে ফেলার কোন ইচ্ছাও আমার নেই।
তাই বলছি ভালোয় ভালোয় আমাদের কথামত কাজ করো। ”

— ” এর মানে কি? কি বলতে চান আপনি? আর কিসের কাজ? ”

— ” আমার খুব শখের প্রোজেক্ট তুমি আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছো। আমি চাই তুমি বিনা শর্তে আমাকে সেই প্রোজেক্ট ফিরিয়ে দিবে।
নয়তো আমরা কঠিন হতে বাধ্য হবো। ”

— অধরা চিৎকার করে,, ” আমি কখনোই আমার বাবার প্রোজেক্ট আপনাকে দিবো না। এটা আমার বাবার স্বপ্ন ছিল। ”

— মারিয়া বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে,, ” আঙ্কেল,, বলেছিলাম না? এই মেয়েকে সহজভাবে কিছু বললে সে করতে চায় না।
একে বুঝিয়ে কোন লাভ নেই। ”

— শাহিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,, ” সহজ কথা সহজভাবে মেনে না নিলে তো আমাদের অন্যভাবে কাজ হাসিল করতে হবে। ”

— অধরা শক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে,, ” আমি কখনোই আমার বাবার প্রোজেক্ট তোমাদের দিবো না। ”

শাহিন শব্দ করে কিছুক্ষণ হেসে একটা চেয়ার টেনে অধরার সামনে বসে,,

— ” জানো অধরা? তুমি তখন খুব ছোট ছিলে,, তোমার বাবা আমার স্বপ্ন আমার প্রিয় প্রোজেক্টের দায়িত্ব পায়।
সকিন্তু সেই প্রোজেক্ট তো আমার চাই মানে চাই। তারপর আমি কি করেছি জানো? ”

অধরা শক্ত দৃষ্টিতে একধ্যানে তাকিয়ে আছে শাহিনের দিকে। শাহিন অধরার দৃষ্টি উপেক্ষা করে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,,

— ” আমি খুব সাবধানের সাথে উনার গাড়ির ব্রেক নষ্ট করে দিয়েছি।
হুহহ,, আর তার ফল স্বরূপ আজ তুমি আর অর্ণব এতিম। মেরে ফেলেছি আমি তাদের। ”

শাহিনের কথা শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়। এটা কি বললো শাহিন? তার বাবা মাকে শাহিন ইচ্ছাকৃত ভাবে মেরে ফেলেছে!

— ” অমিত মারা যাওয়ার পর আমি প্রোজেক্ট তো হাতে পাই কিন্তু জানতে পারি এই প্রোজেক্ট অমিত তোমাকে ডেডিকেটেড করেছে। আর আঠারো বছর হলে এই প্রোজেক্টের সকল দায়িত্ব তোমার। ”

” বিশ্বাস করো,, আমার ইচ্ছা হয়েছিলো তখনই গিয়ে তোমাকে মেরে ফেলি। কিন্তু আমি এমন করিনি। ধৈর্য ধরে ছিলাম,, কিন্তু এখন আর না। তুমি যদি বাঁচাতে চাও তাহলে ভালোয় ভালোয় এই প্রোজেক্ট আমাদের দিয়ে দাও। নয়তো আমি তোমাকে তোমার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিবো। ”

— অধরা স্তব্ধ হয়ে,, ” আপনি একটা খুনি। আমার বাবা মায়ের খুনি। আমি সবাইকে বলে দিবো,, আপনাকে পুলিশে দিবো আমি। সারা জীবন জেলে বন্দি থাকবেন তাও আপনার শাস্তি কম হয়ে যাবে। ”

— মারিয়া একটা ধমক দিয়ে,, ” এই চুপ। অনেক বকবক করিস তুই। তোকে আমার কোনদিনই সহ্য হয়না। তোর জন্য আশ্বিন কখনো আমাকে মূল্যায়ন করেনি,, আমাকে সব সময় ইগনোর করেছে। আর এখন তোর জন্য আমি আশ্বিনের চোখে খারাপ হয়েছি।
কি ভেবেছিস? আমি এতো সহজে তোকে জিততে দিবো? নাহ। আশ্বিন তো আমার হলো না,, এখন আমি চাই যেনো তোকেও আশ্বিন না পায়। ”

— অধরা একদৃষ্টিতে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে,, ” আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে,, একটা সময় তোমার মতো মেয়েকে আমি আমার বোন ভাবতাম।
ছোট থেকেই আমি তোমার সাথে ক্লোজ হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি প্রতিবারই আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছো।
সবসময় তুমি আমাকে নিজের ইগো দেখিয়েছো। বিভিন্ন ভাবে আমাকে অপমান করেছো,, তবুও কোনদিন আমি তোমার মুখের উপর একটা কথাও বলিনি। ”

” দেখো,, আমার সাথে তুমি এতকিছু করার পরেও তুমি একবার বলেছো দেখেই আমি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। কারণ আমার বিশ্বাস ছিলো,, মারিয়া আপু আমার মনে কষ্ট দিলেও কখনো আমার ক্ষতি করবে না।
হুহহ,, আমি ভুল ছিলাম। তুমিই আমার সবচেয়ে বড় শত্রুর সাথে হাত মিলিয়েছো। ”

— মারিয়া একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,, ” আমার কখনোই তোর মতো বোনের দরকার নেই। বিরক্ত লাগে তুই আমার আশেপাশে থাকলে। শুধুমাত্র আশ্বিনের ভয়ে তোকে ছোট থেকেই সহ্য করেছি। কিন্তু আর না। আমি তোকে আর দেখতে চাই না। ”

মারিয়া শাহিনকে উদ্দেশ্য করে,, ” অধরা সহজে আপনাদের প্রোজেক্ট দিবে না। সো,, বিকল্প পথ বেছে নিন। আর যা করার এখনই করতে হবে। ”

— শাহিন অধরার দিকে তাকিয়ে,, ” ঠিক বলেছো মারিয়া। সহজ ভাবে যখন মেনে নেয়নি তবে তাকে কঠিন ভাষায় বুঝাতে হবে। সাহিল…।”

— সাহিল একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,, ” চলো অধরা জানু,, তোমাকে তোমার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেই। ”

কথাটা বলেই সাহিল পকেট থেকে একটা ইনজেকশন বের করে। অধরা সেদিকে একবার তাকিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

— মনে মনে,, ” ভাইয়া কোথায় তুমি? ”

সাহিল ধীর পায়ে অধরার দিকে এগিয়ে আসছে। অধরা বাঁচার জন্য চিৎকার চেঁচামেচি করেও কোন লাভ হচ্ছে না। এক পর্যায়ে সাহিল অধরাকে ইনজেকশন দিয়ে দেয়।

ধীরে ধীরে অধরা নিস্তেজ হতে শুরু করে। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে,, চোখের সামনে সবকিছু আবছা আবছা মনে হচ্ছে। সবকিছু কেমন করে যেন ঘুরপাক খাচ্ছে।

— মারিয়া ভ্রু কুঁচকে,, ” এটা কি ছিল? কিসের ইনজেকশন এটা? ”

— শাহিন বাঁকা হেসে,, ” এটা অনেক হাই ডোজের একটা ওষুধ,, এক ধরনের নেশার মতো। মানসিক ভারসাম্য হীনদের চিকিৎসার সময় তারা অবাধ্য হয়ে পাগলামো করলে তাদের এই ইনজেকশন দেওয়া হয়। ”

— মারিয়া অধরার দিকে একবার তাকিয়ে,, ” কিন্তু এই ইনজেকশন দিয়ে অধরার কি হবে? ”

— ” যেভাবে প্রমাণ ছাড়া আমি তার বাবা মাকে মেরেছি এখনও তাই করবো।
শুধু দেখতে থাকো। ”

কথাটা বলেই বাকা হাসি দিয়ে সাহিলকে ইশারা করতেই সাহিল অধরাকে কোলে তুলে গাড়িতে নিয়ে বসায়।

এদিকে,, অধরার চারপাশ শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে। তাদের কথাগুলোও ঠিকমতো শুনতে পাচ্ছে না। চোখের সামনে সব ঘোলাটে দেখাচ্ছে।

সাহিল শাহিন আর মারিয়া গাড়ি করে অধরাকে হাসপাতালের সামনে নিয়ে আসে। মারিয়া হাসপাতাল দেখে ভ্রু কুঁচকে,,

— ” এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন? ”

— ” আহা,, দেখোই না কি হয়। সাহিল..। ”

সাহিল কথাটা শুনেই বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে আস্তে করে অধরাকে বের করে রাস্তার মাঝে ছেড়ে দেয়। দূর থেকে শাহিন একটা ভিলেন হাসি দেয়।

— মনে মনে,, ” আমার প্রোজেক্টের মাঝে যে আসবে আমি তাকেই সরিয়ে দিবো। এই প্রোজেক্ট নিয়ে শুধু মাত্র আমিই রাজত্ব করবো। ”

🍁এদিকে..

অধরা আবছা আবছা চোখে বেসামাল ভাবে রাস্তায় মাঝখানে হেটে যাচ্ছে। ওষুধের প্রভাবে তার মাথা কাজ করছে না। হাইরোড হওয়ায় বড় বড় গাড়ি শো শো করে তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে। অধরা পাগলের মতো রাস্তার মাঝখানে চলাফেরা করছে।

মারিয়া দূর থেকে অধরার দিকে প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। শাহিন একটা হাসি দিয়ে,,

— ” বুঝলে মারিয়া,, অধরাকে এখানে কেনো নিয়ে আসলাম?
অধরা যে একজন মানসিক ভারসাম্য হীন এটা কম বেশি সবাই জানে। আর তার চিকিৎসা করতে প্রায়ই তারা এই হাসপাতালে আসে। তাই আমি এমনভাবে প্ল্যান সাজিয়েছি। যেনো মানুষ মনে করে,, অধরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। ”

মারিয়া কথাটা শুনে একবার শাহিনের দিকে একবার তাকিয়ে আবার অধরার দিকে ফিরে তাকায়।

এদিকে,, একের পর এক গাড়ি অধরার পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। হঠাত একটা বড় গাড়ি অধরার দিকেই এগিয়ে আসছে। অধরা ঝাপসা চোখে কিছু একটা দেখতে পেলেও তার মাথা কাজ করছে না। গাড়িটা তার একদম কাছে চলে আসতেই…

— অধরা মনে মনে… ” আশ্বিন ভাইয়া। কোথায় তুমি? ”

দূর থেকে মারিয়া অধরার দিকে বড় গাড়ি এগিয়ে আসতে দেখেই চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর ঠিক তখনই…।

—চলবে❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here