ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:১২,১৩

ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:১২,১৩
মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:১২

আশ্বিন চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে।। এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না সে।। বিষয়টা যদি অন্যকিছু হতো তাহলে এতক্ষণে আশ্বিন একটা না একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতো। কিন্তু অধরার বিষয়ে হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে রিক্স নিতে চায় না আশ্বিন।।

অর্ণব আশ্বিনকে খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখে আশ্বিন মাথা নিচু করে বসে আছে।।

— “”তুই এখানে বসে আছিস। আর আমি তোকে সব জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছি।।
কি হয়েছে তোর?? এভাবে বসে আছিস কেনো??””

— আশ্বিন মাথা তুলে অর্ণবের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে,,,,””শাহিন সবকিছু জেনে গিয়েছে অর্ণব।। অধরার সব সত্যি জেনে গিয়েছে তারা।।””

— অর্ণব কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল,,,””কিহহ?? ক..কিভাবে জানলো?? এখন কি হবে?? অধরাকে সব বলে দিবে??””

— “”শান্ত হও অর্ণব।।
শাহিনকে অধরার জীবন নিয়ে খেলতে দেওয়া যাবে না।। পরশু দিন মিটিংয়ে শাহিন অধরার সত্য প্রকাশ করার আগেই আমাদের কিছু একটা করতে হবে।।””

— “”কি করবো আমরা?? বল,,,কি করবো??
পনেরো বছর ধরে যেই সত্যি আমরা ছাড়া আর কেউ জানতো না…সেই সত্য এখন আমাদের শত্রু জেনে গিয়েছে।।
বাবার প্রোজেক্ট আমার দরকার নেই,,,,আমার কাছে আমার বোন ইমপরটেন্ট।। দিয়ে দিবো শাহিনকে ওই প্রোজেক্ট।।””

— আশ্বিন অর্ণবের দিকে তাকিয়ে,,,””বোকার মত কথা বলিস না অর্ণব।। তোর কি মনে হয়,,,প্রোজেক্ট ফেরত দিয়ে দিলেই শাহিন অধরার সত্য ভুলে যাবে?? শাহিনের কাছ থেকে নিজেদের প্রোজেক্ট ছিনিয়ে এনে আমরা তার ইগো হার্ট করেছি।। এটা সে সহজে ভুলবে না।।””

“”মনে আছে..১৫ বছর আগে আমরা দুজন প্রমিস করেছিলাম,,অধরার কোন ক্ষতি আমরা হতে দিবো না।। আমরা আমাদের কথা রাখবো… যেভাবেই হোক রাখবো।।””

অর্ণব আশ্বিনের কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।। দুজন নিজেদের সামলে নিয়ে সবার কাছে চলে আসে।। অধরা সবার সাথে গল্প করতে করতে আপনমনে হেসে যাচ্ছে।। আশ্বিন দূর থেকে সেই মুক্ত হাসির দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।।

—অর্ণব সবার সামনে এসে,,,””সবার জন্য একটা নিউজ আছে।। একটা বিশেষ কারনে কাল আমাদের ফিরে যেতে হবে।।””

সবাই কথাটা শুনে একটু আফসোস করে।। অধরা গাল ফুলিয়ে অর্ণবকে বলে…
— “”ভাইয়া আর দুই দিন থেকে যাই। প্লিজ ভাইয়া প্লিজ!””

— অর্ণব অধরার মাথায় হাত রেখে বললো,,,””বোঝার চেষ্টা করো বোন। আমাদের কাল ফিরে যাওয়া অনেক জরুরী।
কিন্তু কথা দিলাম,,,তোর পরীক্ষা শেষ হলে সবাই মিলে আবার আসবো।। ঠিক আছে??””

— অধরা কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,,””ঠিক আছে,,,ভাইয়া।।””

সবাই মিলে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাগান বাড়িতে ফিরে আসে।। অধরা আর তিশা খাটের উপর অধশোয়া অবস্থায় বসে আছে।।

— অধরা তিশার দিকে ফিরে,,,””আমার মাথায় না একটা বুদ্ধি এসেছে।।””

— তিশা চোখ ছোট ছোট করে অধরার দিকে তাকিয়ে,,,,””তোর কুখ্যাত সব বুদ্ধির আশেপাশেও যেন আমি না থাকি।।””

অধরা কথাটা শুনেই শক্ত করে তিশার চুল টেনে ধরে।। তিশা চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে…
— “”আহ! অধরা,,,লাগছে ছাড়।।। আচ্ছা ঠিক আছে,,,বল আমার কি করতে হবে।।””

— অধরা তিশার চুল ছেড়ে দিয়ে,,,,””এই তো ভালো মেয়ে।। শোন,,,কাল যাওয়ার সময় তুই গাড়িতে অর্ণব ভাইয়ার পাশে বসবি না।।””

— তিশা চুল ঠিক করতে করতে,,,””কেনো,,কেনো?? তাহলে আমি কোথায় বসবো??””

অধরা তিশার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যজনক হাসি দেয়।। এদিকে তিশা ড্যাবড্যাব করে অধরার দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে।।

🍁পরদিন….

সকাল থেকে সবাই ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।। অধরা তিশা ইশমি গাড়ির সামনে এসে দেখে মারিয়া একা একা বসে আছে।। অধরা তিশাকে ইশারা দিতেই তিশা একটা রাগী রাগী ভাব নিয়ে গিয়ে ধপ করে মারিয়ার পাশে বসে পড়ে।।

— মারিয়া তিশাকে তার পাশে দেখে,,,””হোয়াট দ্য..!! তুমি এখানে বসেছো কেনো?? এটা আশ্বিনের সীট,,,এখনি উঠো বলছি।।””

— তিশা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে তাকিয়ে,,,””আজব তো মারিয়া আপু।। তুমি এমন করছো কেনো?? পাশে একজন বসলেই তো হয়।। অধরার সাথে ঝগড়া করেছি বলে এখানে বসেছি,,,নয়তো কখনোই বসতাম না।।””

— “”শাট্ আপ!! একটা কথাও শুনতে চাই না আমি। তুমি যেখানে ইচ্ছা বসো কিন্তু আমার পাশে বসবে না।। সো ওঠো।।””

এর মধ্যে আশ্বিন আসতেই তিশা বলে ওঠে…
— “”আশ্বিন ভাইয়া,,,আমি কি এখানে বসতে পারি? ওই ফালতু মেয়ের ((অধরার দিকে ইশারা দিয়ে)) সাথে আমি বসতে চাই না।। আর মারিয়া আপু বলছে এটা নাকি তোমার সীট। তাই তোমার অনুমতি চাচ্ছি।।””

— আশ্বিন মারিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে তিশাকে বললো,,,””আচ্ছা ঠিক আছে।। তুমি মারিয়ার সাথেই বসো।। আমি নাহয় পিছনের সিটে বসছি।।””

এদিকে দূর থেকে অধরা কান পেতে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করছিলো।। আশ্বিন মারিয়ার পাশে বসেনি শুনে মনে মনে উড়া ধুরা ডান্স দিচ্ছে অধরা।। হঠাত সামনে কারো অস্তিত্ব বুঝতে পেরে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন দাঁড়িয়ে আছে।।

— অধরা আশ্বিনের থেকে চোখ সরিয়ে আমতা আমতা করে,,,””কিহহ?? এভাবে কি দেখছো?””

— আশ্বিন সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,,,””তোর আর তিশার কি হয়েছে?? সত্যিই ঝগড়া হয়েছে নাকি…।।””

— “”নাকি….?? ওই পচা মেয়ে আমার অর্ণব ভাইয়ার পিছু লেগেছিল। আমি শুধু বলেছি তোর মত পচা মেয়েকে আমার ভাইয়ের গলায় ঝুলাবো না।। এই নিয়ে রেগে গেলো।।””

— আশ্বিন অধরার গাল টেনে ধরে,,,””দিন দিন চালাক চতুর হয়ে যাচ্ছিস। কিন্তু এটা ভুলে গেছিস,,,তোকে আমার থেকে ভালো আর কেউ চিনে না।।
তুই যে কতোবড় ড্রামা কুইন আর কুখ্যাত বুদ্ধির বুদ্ধিমতী এটা আমি ভালো করেই জানি।।””

— অধরা চোখ ছোট করে তাকিয়ে,,,,””এসব বলে তুমি কি বুঝাতে চাও ভাইয়া??
আমি তিশাকে বুদ্ধি দিয়েছি যেন আমার উপর রেগে থাকার অভিনয় করে মারিয়ার পাশে বসে পড়ে?? যেন তুমি গিয়ে মারিয়ার পাশে বসতে না পারো। এসব মনে হয় তোমার??””

— আশ্বিন বাঁকা হেসে,,,, “”আমি তো তোকে এসব বলিনি।
মানে তুই এসব সত্যিই করেছিস।।””

— অধরা কথাটা শুনেই মুখ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আমতা আমতা করে,,,”””ন..নাহ।। আমি এমন কিছু করিনি। “”

— আশ্বিন হালকা হেসে অধরার হাত ধরে টেনে,,,,””হুম হুম বুঝেছি।। চল এখন।।””

গাড়িতে অধরা আর আশ্বিন একসাথে বসেছে।। অধরার তো খুশির সীমা নেই। অপরদিকে,,,মারিয়া দাঁতে দাঁত চেপে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।। ধ্রুব অর্ণবের পাশে ফ্রন্ট সীটে বসেছে।।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে।। আশ্বিন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।। এদিকে অধরা এক ধ্যানে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে।।

— “”এভাবে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?? সমস্যা কি??””

— আশ্বিনের কথায় অধরা একটা ভাব নিয়ে বললো,,,””তুমি সুন্দর। তাই চাহিয়া থাকি,,সেকি মোর অপরাধ??””

অধরার কথা শুনে আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার দিকে ফিরে তাকিয়ে অধরার ডান হাতের আঙুলে নিজের আঙুল গুজে শক্ত করে হাতটা ধরে রাখে।।

এদিকে অধরা অবাক নয়নে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আবার তার হাতের দিকে তাকায়। তারপর ধীরে ধীরে তার বাম হাত আশ্বিনের হাতের উপর রেখে আশ্বস্ত দিয়ে বলে….

— “”ভাইয়া!! তোমার কি মন খারাপ?? কেউ কি তোমার মনে কষ্ট দিয়েছে?””

এই মুহূর্তে অধরার বলা কথাটা সোজা আশ্বিনের বুকে গিয়ে আঘাত লাগে।। চাইলেও যে সে প্রকাশ করতে পারছে না তার মনের অনুভূতি।।

আশ্বিনের মনে প্রতিটি মুহূর্ত অধরাকে হারানোর ভয় বিরাজ করছে,,,,যা কখনোই আশ্বিন অধরাকে বলতে পারবে না।। অধরার সত্যিটা যেমনই হোক তা নিয়ে আশ্বিনের কোন মাথা ব্যাথা নেই।। তার কাছে সত্যিটা হলো তার অধরাকেই চাই।। অধরা যেমন,,,,তেমন ভাবেই তাকে চাই।।

— আশ্বিন জানালা দিকে তাকিয়ে মনে মনে,,,””ভালোবাসি_তাই❤ আমার শুধু তোকেই চাই।।””

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। অধরা আশ্বিনের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।। আশ্বিন এখনও একহাত দিয়ে অধরাকে ধরে রেখেছে।।

অবশেষে গাড়ি তাদের বাসার সামনে থামতেই মারিয়া এসে দেখে অধরা আশ্বিনের কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।। মারিয়া রেগে অধরাকে ডাক দিতে নিবে তখনই…

— আশ্বিন মারিয়াকে থামিয়ে দিয়ে,,,””মারিয়া।।ডেকো না অধরাকে।। অধরার ঘুমের মধ্যে তাকে কেউ জোরে ডেকে তুললে সে অনেক ভয় পায়।। আমি নিয়ে যাচ্ছি তাকে।।””

কথাটা বলেই ধীরে ধীরে অধরাকে কোলে তুলে সামনে আগাতে শুরু করে।। এদিকে সবাই আশ্বিনের কান্ড দেখে মজা নিতে শুরু করে।।

— শ্রাবণ অর্ণবকে বললো,,,””এই হাতিকে কোলে নিতে নিতে কবে যেনো আশ্বিনের হাত ছুটে যায়।।””
শ্রাবণ আর অর্ণব একসাথে হেসে যাচ্ছে।। আর মারিয়া রাগে ফুঁসছে।।

🍁এদিকে….

আশ্বিন অধরাকে তার রুমের খাটের উপর আলতো করে শুইয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো…
— “”আশ্বিন বেঁচে থাকতে তার অধরার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।।””

আশ্বিন অধরার গায়ে চাদর দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই ফোন একটা ম্যাসেজ আসে।। ম্যাসেজ চেক করে একটা বাঁকা হাসি দেয় আশ্বিন।।

—চলবে❤

#ভালোবাসি_তাই❤
#মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:::১৩

শ্রাবণ,,অর্ণব,,দাদু ভাই,,ছোট আব্বু আর আকাশ চৌধুরী সবাই মিলে দাদুর রুমে বসে আছে জরুরি কথা বলার জন্য।। সবার নিরবতার অবসান ঘটিয়ে দাদু ভাই বললেন….

— “”আমাদের বংশের প্রথম মেয়ে হিসেবে অধরা আমাদের সবারই খুব আদরের।। আমার বড় ছেলে অমিত তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রোজেক্ট অধরার নামে ডেডিকেটেড করেছিলো।।
তার সেই স্বপ্নটা পূরণ করতেই তো আমরা প্রোজেক্ট শাহিনের থেকে নিজের কাছে ফিরিয়ে এনেছি।।””

— অর্ণব দাদুর কথার প্রসঙ্গে বললো,,,””যদি শাহিন কাল অধরার সত্যি প্রকাশ করে দেয় তাহলে প্রোজেক্টের সাথে সাথে আমি আমার বোনকেও হারাবো দাদু। মানলাম অধরা এখন আগের থেকে সুস্থ কিন্তু ডাক্তার কি বলেছিলো মনে আছে তো??””

— ছোট আব্বু নিচের দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললো,,,””একটা এক্সিডেন্ট আমাদের জীবনটা কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেলো।। আমাদের ছোট্ট অধরা সেদিন….।। ছয় মাস কোমায় ছিল আমার মেয়েটা।। ১৫ বছর ধরে চিকিৎসা করাতে করাতে মেয়েটা যখন একটু সুস্থ স্বাভাবিক হয়েছে,,,,তখনই এই ঝড়টা আসার কি খুব দরকার ছিল??””

— আকাশ চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,””আমার মনে হয় শাহিনের সাথে কথা বলে আমাদের একটা ডিল করা উচিত।। এতে অধরার সত্যটা তাহলে গোপন থাকবে আর তাকে আমরা সসম্মানে প্রোজেক্ট ফিরিয়ে দিবো।।””

— “”কাউকে কিছুই করতে হবে না ড্যাড।।”” কথাটা বলতে বলতে আশ্বিন রুমে প্রবেশ করে অর্ণবের পাশে সোফায় বসে পড়ে।।

— শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে,,,””কি বলিস তুই এসব?? কাউকে কিছুই করতে হবে না মানে?””

— “”হুম। কাউকে কিছুই করতে হবে না।। শুধু মাত্র আমি যা যা বলবো কাল মিটিয়ে তোমরা তাই বলবে।। বাকিটা আমি আর অর্ণব মিলে সামলে নিবো।।””

অর্ণবের দিকে একবার তাকিয়ে আবার সবার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয় আশ্বিন।। উপস্থিত সবাই জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে।।

🍁পরদিন সকালে…..

শাহিন সকাল থেকেই ফুরফুরে মেজাজে আছে।। রহমান ফ্যামিলির গোপন সত্যি প্রকাশ করে তাদের মিথ্যাবাদী প্রমাণ করে,,,তার স্বপ্নের প্রোজেক্ট ফিরে পাবে সে।।

— সাহিল বাবাকে এমন খুশি দেখে,,,””বাহ!! রহমানদের শিক্ষা দেওয়ার খুশি তোমার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে ড্যাড।। বেস্ট অফ লাক।।””

— শাহিন বাঁকা হেসে,,,””থ্যাংকস মাই সান।।
জানো,,,এই প্রোজেক্ট নিয়ে যখন আমি আর অমিত একসাথে কাজ করছিলাম তখন আমি ভেবেছিলাম অমিত প্রোজেক্টটা নিজের নামে করে নিবে।। কিন্তু নাহহ।।
আমার সব প্ল্যান নষ্ট করে দিয়ে অমিত প্রোজেক্টের জন্য অধরাকে ডেডিকেটেড করে।।

কিছু পেতে হলে তো কিছু হারাতেই হয়।। এন্ড,,, এখানেই লুকিয়ে আছে আমারও একটা সিক্রেট।। হিহিহি।।””

— সাহিল হালকা হেসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে,,,””ড্যাড আমাকে এখনই যেতে হবে।। তুমি সাবধানে পৌঁছে আমাকে কল করো।। বাই।””

শাহিন সাহিলকে বিদায় দিয়ে অধরার রিপোর্টগুলো গুছিয়ে হাতে তুলে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে।।

— “”যার নামে এতো বড় প্রোজেক্ট আর সেই যদি হয় এমন…?? নট ফেয়ার।।।
বেচারা অমিত,,,মেয়ের এমন জীবন দেখতে পারলো না।। মেয়ের জন্য এতো কষ্ট করে গেলো অথচ অধরা এর যোগ্যই না।।””

শাহিন রিপোর্টগুলো একটা ব্যাগে ভরে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির সামনে আসে।। ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় শাহিন।। ড্রাইভার মুখে কালো মাক্স পরে মুখ ঢেকে রেখেছে ।।

— “”তুমি আবার কে?? আর রহিম কোথায়??””

— ড্রাইভার মাথা নিচু করে,,,””আমি আধার।। রহিমচাচা অসুস্থ তাই আমাকে পাঠিয়েছেন।।””

— শাহিন আধারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে,,,””ও হ্যা রহিম বলেছিলো।। যাই হোক অফিসে চলো।””

কথাটা বলেই শাহিন গাড়ির দরজা খুলে ব্যাগ রেখে সীটে বসতে নিবে তখনই তার ফোনে কল আসে।। ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে হঠাত রেগে যায় শাহিন।। ফোনের অপর পাশের মানুষকে কয়েক দফা বকা দিয়ে ফোন কেটে গাড়িতে উঠে বসে।।

— শাহিন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে,,,””যতসব…রাবিশ।।””

আধারের দিকে তাকিয়ে,,,””তুমি বসে আছো কেনো?? গাড়ি স্টার্ট দাও তাড়াতাড়ি।।””

শাহিনের কথায় আধার চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দেয়।। শাহিন গাড়ির সীটে মাথা হেলান দিয়ে বসে মুচকি হাসছে।। আজকে তার বিশেষ একটা দিন।।
গাড়ি অফিসের সামনে থামতেই শাহিন ব্যাগ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।।

এদিকে,,,শাহিনকে প্রবেশ করতে দেখে কেউ একজন দূর থেকে বাঁকা হাসি দেয়।।

🍁🍁

শাহিন মিটিং রুমে প্রবেশ করে দেখে সবাই আগে থেকেই এখানে বসে আছে।। শাহিন গিয়ে চেয়ারে বসে সবার উদ্দেশ্যে….

— “”আ’ম সরি গাইস।। একটু লেইট হয়ে গেলো।। মিস্টার নাজমুল এন্ড মিস্টার রবিন ধন্যবাদ আমার কথায় এখানে আসার জন্য।।””

— নাজমুল শাহিনের দিকে তাকিয়ে,,,””শাহিন ভাই। হঠাত এভাবে জরুরী তলব করার কারণ কি?? আপনার কথা শুনে মনে হয়েছিল কোন জরুরী কথা বলবেন।।””

— শাহিন আকাশ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে,,,””আমি আপনাদের কিছু সত্যি জানাতে এসেছি।। এটা জানাতে এসেছি যাদের সাথে আপনারা প্রোজেক্ট নিয়ে ডিল করছেন তারা কতটা মিথ্যা কথা বলে এই প্রোজেক্ট নিয়েছে।।””

— রবিন সাহেব একটু অবাক হয়ে,,,””কি সত্যি?? কি এমন মিথ্যা বলেছেন মিস্টার আকাশ চৌধুরী??””

— শাহিন ব্যাগ থেকে রিপোর্টের ফাইল বের করে তাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে,,,””আপনারা নিজেরাই দেখে নিন।।””

নাজমুল শাহিনের হাত থেকে রিপোর্ট নিয়ে দেখা শুরু করলো।। সম্পূর্ণ রিপোর্ট ভালোভাবে চেক করে তারা দুজন আকাশ চৌধুরীর দিকে অবাক হয়ে তাকালো।।

এদিকে আকাশ একদম স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে।। শাহিনের ঠোঁটে লেগে আছে বিজয়ের হাসি।।

— রবিন শাহিনের দিকে তাকিয়ে,,,,””এসবের মানে কি শাহিন সাহেব??
আপনি অনুমতি ছাড়া কিভাবে প্রোজেক্ট থেকে বিশ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন?? এমন কাজ কিভাবে করলেন আপনি??””

— শাহিন থতমত খেয়ে,,,””ম..মানে?? কি ব..বলছেন এসব??””

শাহিন তাদের হাত থেকে ফাইলটা হাতে নিয়ে চেক করে দেখে এটা তার এজেন্টে সব ধরনের প্রমাণের ফাইল।।
শাহিনের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।। এটা কিভাবে হলো?? সে তো ঠিক ফাইলই এনেছিলো।।

— আকাশ চৌধুরী ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে,,,””দেখেছেন আপনারা? আমি আপনাদের আগেই বলেছিলাম,,,আপনারা আমার কথা বিশ্বাস করেননি।। এখন তো সব নিজ চোখে দেখলেন।।””

— নাজমুল শাহিনের দিকে তাকিয়ে,,,,””আকাশ সাহেব আমাদের মাফ করবেন।। এতোদিনের ডিলার যে এমন বিশ্বাস ঘাতক হবে বুঝতে পারিনি।

আর শাহিন সাহেব,,,দুদিনের মধ্যে আপনি আপনার পাওনা হিসেব ঠিক করবেন নয়তো আমরা আপনার বিপক্ষে আইনি ব্যবস্থা নিবো। কথাটা মনে রাখবেন। চলুন রবিন সাহেব।।””

একে একে রুম থেকে সবাই বেরিয়ে যায়।। শাহিন এখনও ফাইল হাতে বসে আছে।। তার এই গোপন ফাইল এখানে কিভাবে আসলো? তাছাড়া অধরার রিপোর্ট কোথায় গেলো? কিছু ভেবে পাচ্ছে না সে।।

🍁এদিকে,,,

— আকাশ ফোন কানে ধরে,,,””আই এম সো প্রাউড অফ ইউ বাবা আশ্বিন।। সত্যিই তুমি কিভাবে করলে এসব??””

— আশ্বিন নিজের রুমে প্রবেশ করে,,,””আশ্বিন চৌধুরীর কাছে এটা তো বাহাতের খেল ছিলো ড্যাড।। আমার সাথে পাল্লা নেওয়ার শিক্ষা দিয়ে দিলাম।।
যাই হোক,,,রিপোর্টগুলো এখন আমার কাছে আছে।।””

আশ্বিন আরো কিছু কথা বলে ফোন রেখে রিপোর্টগুলো আলমারিতে লুকিয়ে রাখছে।।

এদিকে কেউ একজন আশ্বিনকে পর্যবেক্ষণ করছে।। আশ্বিন রিপোর্ট রেখে পেছনে ফিরেই চমকে ওঠে।।

অধরা চোখ ছোট করে আশ্বিনের দিকেই তাকিয়ে আছে।। আশ্বিন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।। তবে কি অধরা সব জেনে গিয়েছে?? রিপোর্টগুলো দেখে ফেলেছে??

— আশ্বিন কাপা কাপা কন্ঠে,,,,””কিহহ??””

— অধরা কোমরে হাত গুজে,,,””তুমি এমন ড্রাইভারের মতো পোশাক পরে আছো কেনো ভাইয়া??””

— আশ্বিন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,,,””এমনি।। তুই এখানে কি করিস??””

— অধরা একটা লাজুক ভাব নিয়ে,,,””সকাল থেকে তোমাকে একবারও দেখিনি। তাই তোমাকে দেখতে এসেছি।।””

— আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার গাল টেনে,,,””যা রেডি হয়ে আয়। তোকে নিয়ে বাইক রাইডে যাবো।””

অধরা অবাক হয়ে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,,,পর মুহূর্তে খুশি হয়ে লাফাতে শুরু করে।।
হঠাত স্লিপ খেয়ে ধপাস করে পড়ে যায়।। শব্দ শুনে আশ্বিন পিছনে ফিরে দেখে অধরা মেঝেতে পড়ে আছে। সে দৌড়ে এসে অধরার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।।

অধরা কাঁদো কাঁদো চেহারায় আশ্বিনের দিকে একবার তাকিয়ে হঠাত ফিক করে হেসে দেয়।। অধরা আপনমনে হেসে যাচ্ছে।। আর আশ্বিন অবাক নয়নে সেই হাসি দেখে যাচ্ছে।। এই হাসিটাই তো তার সর্বনাশের মূল।।

— “”তোকে আর কেউ কষ্ট দিবে না অধরা। তোকে যে কষ্ট দিতে চাইবে আমি তাকেই শেষ করে দিবো।।
আমি সবসময় তোর পাশে আছি অধরা।। সব..সময়।।””

মনে মনে কথাগুলো বলে আশ্বিনও মুচকি হেসে হাত দিয়ে অধরার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়।।

—চলবে❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here