ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:৮

#ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:৮
#Writer:#Meheruma_Imtaz_Raya(S.Q)

রাত ৯:১০,

ট্রেন সিলেট স্টেশনে এসে থামলো, মুহিব আর মিরাজ ট্রেন থেকে নেমে গেলো।ট্রেন থেকে নামার পর মুহিব এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো একজন লোক তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে ,লোকটির বয়স বেশি হলে ৩৫ হবে
-আপনি মুহিব?
-জ্বী
-আমি অফিসার মাহির
– জ্বী আপনার সম্পর্কে শুনেছি আমি ,মামা আমাকে বলেছে ,
– আপনার মামা খুব ভালো একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন ,উনি এখন কেমন আছেন ?
– ভালোই আছেন ,রিধির কোনো খোঁজ পাওয়া গিয়েছে?
– আপাতত না কিন্তু আশা করি খুব শিঘ্রই আমরা উনার খোঁজ পেয়ে যাব , কারণ উনি যে নাম্বার থেকে কল দিয়েছিলেন সেই নাম্বার এর লোকেশন এখান থেকে একটু দূরে,
– আচ্ছা নাম্বারটা আসলে কার ছিলো?
-নাম্বারটি নাসরিন বেগম নামের একজন মহিলার
– সেই লোকেশনে পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগতে পারে?
– বেশি হলে ৪০ মিনিট , আচ্ছা মুহিব আমাকে একটা কথা বলুন তো ,আপনাকে যে কল দিয়েছিলো সে যে রিধি সেটা আপনি এতো জোর দিয়ে কিভাবে বলছেন ?
– অফিসার ,রুদ্র কয়েকদিন যাবত সিলেটে আসা যাওয়া করছে,আর একি নাম্বার থেকে আমার আর মিরাজের নাম্বারে কল আসাটা আর যাই হোক কোইনসিডেন্স নয় ,
– আপনি রুদ্র কে এতো সন্দেহ করছেন কেনো?
– অফিসার আপনি নিশ্চয় রুদ্রের পাস্ট সম্পর্কে জানেন , রুদ্র আগেও রিধি কে কিডন্যাপ করেছিলো ,তাই রুদ্রকে। সন্দেহ করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়,
– হ্যা , রুদ্রের উপর কড়া নজর রাখতে হবে
– অফিসার আমার মনে হয় এখন আমাদের আর সময় নষ্ট করা উচিত নয় ,আমি নিশ্চিত নাসরিন বেগম এর কাছে গেলে আমরা রিধির সম্পর্কে কিছু না কিছু জানতে পারবো ,
– জ্বী চলুন,

তারপর গাড়িতে উঠে পরলো।মুহিবের কাছে মনে হচ্ছে রাস্তা যেনো শেষই হচ্ছে না । রুদ্র জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে , রিধি কিডন্যাপ হওয়ার ১ সপ্তাহ আগের কথা ভাবছে ,
সেদিন রিধি কে মুহিব নিজের মনের কথা জানিয়েছিলো , সরাসরি রিধি কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো আর রিধিও সাথে সাথে এক্সেপ্ট করেছিলো । মুহিব এর আগে অনেক বার চেষ্টা করেছিলো নিজের মনের কথা জানানোর কিন্তু প্রত্যেকবারই কোনো না কোনো বাঁধা এসেছিলো । ৬বছর আগে যখন প্রথম মুহিব রিধির সাথে দেখা করার জন্য রিধিদের এলাকায় গিয়েছিলো সেদিন রুদ্রের ওই ঘটনার জন্য রিধি কে নিজের মনের কথা জানাতে পারেনি । এরপর রুদ্র যেদিন রিধি কে কিডন্যাপ করলো সেদিনও মুহিব রিধি কে নিজের মনের কথা জানানোর জন্যই দেখা করতে বলেছিলো কিন্তু আবারও রুদ্র এসে সব নষ্ট করে দিয়েছিলো । তাই এরপর মুহিব আর রিধি কে নিজের মনের কথা জানায়নি কারণ আবারও যদি কোনো বাঁধা আসে । কিন্তু এইবার মুহিব সব বাঁধা কে উপেক্ষা করে রিধি কে নিজের মনের কথা জানিয়েছিলো । সেদিন রিধি অনেক খুশি হয়েছিলো ,মুহিব আর রিধি সেদিন একসাথে অনেক ঘুরেছিলো। মুহিবের চোখে আজো রিধির সেই হাসি ভরা মুখ টা ভাসে ,রিধির কথা ভাবতে ভাবতে টুপ করে এক ফোঁটা পানি চোখ দিয়ে পরলো ,মুহিব সাথে সাথে চোখ মুছে ফেললো , কারণ এখন দূর্বল হলে চলবেনা ,যেভাবেই হোক রিধি কে খুঁজে বের করতেই হবে । এসব ভাবতে ভাবতেই গাড়ি এসে একটা ছোটখাটো বস্তির সামনে দাড়ালো , পুলিশ অফিসার বললো
-আমরা গন্তব্যে এসে পরেছি

গাড়ি থেকে নেমে পরলো সবাই ,
বস্তির ভেতরে প্রবেশ করলো সবাই , নাসরিন বেগম এর নাম বলতেই একজন লোক অফিসার কে নাসরিন বেগম এর রুম দেখিয়ে দিলেন । রুমে ধাক্কাতেই ভেতর থেকে আওয়াজ এলো,
– কেডা?(নাসরিন)
– একটু গেট টা খুলুন দরকারি কথা আছে (মাহির)
নাসরিন দরজা খুলে অপরিচিত মানুষ দেখে মুখে বিরক্তিকর ভাব এনে বললো,
-আপনেরা কেডা?(নাসরিন)
-আমরা পুলিশ,মেয়েটাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন ?( মাহির)
পুলিশ নাম শুনেই নাসরিন একটু ভয় পেলো,
-কোন মাইয়া?(নাসরিন)
-দেখুন প্লিজ বলুন রিধি কোথায় (মুহিব)
-আমি কোনো রিধি রে চিনি না (নাসরিন)
মিরাজ তখন ফোন বের করে নাসরিন কে ছবি দেখালো ,
-এই যে এ হলো রিধি ,আমার বোন প্লিজ বলুন আমার বোন কোথায় ?(মিরাজ)
রিধির ছবি দেখার পর নাসরিন আরেক দফা ভয় পেলো ,সে তোতলাতে তোতলাতে বললো,
-আপনেরা হুদাই কামে এইহানে আইসেন,আমি কাউরে চিনি না ,আপনেরা এহন এইহান থেকা যান ( নাসরিন)
কথাগুলো বলে নাসরিন দরজা লাগিয়ে দিচ্ছিলো ,তখন অফিসার মাহির সঙ্গে সঙ্গে ধমক দিয়ে বললো ,
– একদম থানায় উঠিয়ে নিয়ে যাবো ,ধলাই দিলে সব সত্যি কথা মুখ দিয়ে বের হয়ে যাবে (মাহির)
কথাটা বলেই অফিসার মাহির কিছু লেডি কনস্টেবল কে ডাক দিলো তারা এসে নাসরিন কে ধরলো,
– আমারে ছাইড়া দেন,আমি সত্যি কতা কমু, আমারে ছাইড়া দেন (নাসরিন)
তারপর নাসরিন দুপুরে রুদ্রের বাসায় ঘটা সব কিছু গড়গড় করে বলে দিলো ,
– রিধি ঠিক আছে তো ?( মুহিব)
-হো , কিন্তু রুদ্র স্যার যদি জানে আমি আপনাগোরে এইসব কইসি তাইলে আমারে হেয় মাইরা ফালাইবো(নাসরিন)
-আপনি ভয় পাবেন না ,আপনার কোনো ক্ষতি হবে না ( মিরাজ)
– আপনি আমাদের কে এখনি রুদ্রের বাড়িতে নিয়ে চলুন ,(মুহিব)
– আইচ্ছা ( নাসরিন )
মুহিবরা আর দেরি না করে রওনা দিলো,

এদিকে,,

রাতের রান্না শেষ করে , টেবিলে পরিবেশন করছে রিধি ,খাবার পরিবেশন শেষ করে রুদ্র কে ডাকতে গেলো , কিন্তু পেলো না তাই ডাইনিং রুমে ফিরে এলো ,এসে দেখলো রুদ্র সোফায় বসে আছে ,
-রুদ্র,
-হ্যা বলো ,তুমি কি এতক্ষণ এখানেই বসে ছিলে?
-হ্যা , কেনো?
-না আমি তো তোমায় দেখিনি
-হয়তো খেয়াল করোনি
-হুম,
– খাবার হয়ে গেছে , টেবিলে বসে পরো
-আচ্ছা ,
রুদ্র হাত ধুয়ে এসে টেবিলে বসে পরলো , তারপর খাওয়া শুরু করলো ,
-রিধি তুমিও খেতে বসো ,
-না না তুমি খাও আমি পরে খাবো ,
-আমি কোনো কথা শুনবো না
রিধি আর কথা না বাড়িয়ে খেতে বসতে যাচ্ছিলো তখনি রুদ্র বললো ,
-এই একটু দাঁড়াও ,ফ্রিজে লেবু আছে তো তাইনা ,একটা লেবু কেটে আনতে পারবে ?
-কিন্তু আমি তো লেবু রেখেছিলাম টেবিলে ,
– হয়তো ভুলে গেছ ,
-হয়তো ,
-রিধি তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে ?(চিন্তিত কন্ঠে)
-নাতো , কেনো?
-আসলে তখন আমি সোফায় বসে ছিলাম কিন্তু তুমি খেয়াল করোনি আবার এখন বলছো লেবু নাকি কেটে টেবিলে রেখেছ , কিন্তু টেবিলে লেবু নেই ,
-আসলে আমি কখনো এইভাবে রান্না করিনি তো ,তাই একটু ক্লান্ত লাগছে
– এর জন্য তখন মানা করেছিলাম রান্না করতে,
-আচ্ছা বাদ দাও ,আমি লেবু কেটে আনছি
রিধি রান্না ঘরে চলে গেলো ,
লেবু কেটে নিয়ে এসে দেখলো রুদ্র খাবার বেড়ে রেখেছে রিধির জন্য ।রিধি খেতে বসে পরলো,
খাওয়ার সময় রিধি খেয়াল করেছে রুদ্র আড়চোখে কিভাবে যেনো তাকাচ্ছিলো ,রিধি তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করলো ।
খাবার শেষ করে টেবিল পরিষ্কার করার পর ডাস্টবিনে ময়লা ফালানোর সময় রিধি দেখলো কিছু ভালো লেবু ডাস্টবিনে পরে আছে ,রিধি ভাবলো হয়তো সে নিজেই ভুল করে ফেলে দিয়েছিলো । সব কিছু গুছিয়ে ঘরে আসার পর অস্বাভাবিক ভাবে রিধির ঘুম আসতে লাগলো ,রিধি অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু কোনোভাবেই নিজের চোখ খোলা রাখতে পারলো না , শেষ পর্যন্ত ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো । তখনি ঘরে রুদ্র প্রবেশ করলো ,,
-সরি রিধি ,তোমাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলো না ,,
রুদ্র রিধি কে কোলে তুলে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো ,,

মুহিব আর বাকি রা সবাই রুদ্রের বাড়ির সামনে এলো , মুহিব কলিং বেল বাজালো কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে ফেললো তারপর যা দেখলো তা দেখে সবাই অবাক হলো কারণ ,,

#চলবে ,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here