ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:১

#ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:১
#Writer:#Meheruma_Imtaz_Raya(S.Q)

জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে অন্ধকার এক ঘরে আবিষ্কার করলো রিধি, আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কোথায় আছে সে ,, অন্ধকার হলেও বুঝতে পারলো যে রুম টা বেশ বড় ,,,হঠাৎ রিধির চোখ পড়লো সামনে একটু দূরে একটা চেয়ারে মাথা নিচু করে কে যেনো বসে আছে ,,অন্ধকার হওয়ায় চেহারা বোঝা যাচ্ছে না,,রিধি একবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না ,,মাথাটা অনেক ভারি হয়ে আছে ,,,,,,,

-অবশেষে জ্ঞান ফিরলো তোমার ,,(স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে)

রিধি কে উঠতে দেখে সামনে থাকা ব্যক্তিটি কথাটা বলে উঠলো ,,,আচমকা পুরুষালি কন্ঠস্বর শোনায় রিধি একটু চমকে গেলো ,,,রিধি সামনে থাকা ব্যক্তিটি কে উদ্দেশ্য করে বললো ,,

-কে আপনি ??আমি এখানে কিভাবে এলাম? আমার যতটুকু মনে আছে ,,আমি তো শপিং মল থেকে বের হয়ে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম ,, হঠাৎ কে যেনো আমার মুখ চেপে ধরে ,,,এরপর আমার আর কিছু মনে নেই ,,, আপনি আমাকে এখানে এনেছেন তাইনা ??
-হুম আমি এনেছি ,,,
– কিন্তু কেনো ?আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি বলুন ?কেনো আমাকে এইভাবে তুলে এনেছেন?
-বড্ড ভলোবাসি যে তোমায় ,, অনেক অপেক্ষা করেছি আমি ,,,

ছেলেটিরকথা শুনে রিধি অবাক হচ্ছে ,,নিজেকে সামলিয়ে বললো ,,,

-কে আপনি ?
– তোমার প্রিয়তম ,,,
-মানে ?
-আমাকে ভুলে গেলে রায়া ,,
– আরে আজব তো ,, অন্ধকারে আমি আপনার মুখ দেখতে পাচ্ছি না ,,

তখনি রুমের লাইট জ্বলে উঠলো ,,,, হঠাৎ লাইট জ্বলে ওঠায় রিধি হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে ,,,,চোখ খোলার পর রিধি অবাক হয় কারণ পুরো রুম জুড়ে শুধুই রিধির ছবি ,,,আর ছবি গুলো শুধু এখনকার নয় বরং অনেক বছর পুরনো ছবিও আছে ,,,,,,রিধি অবাক হয়ে ছবি গুলো দেখছে,,,,

-দেখোতো এখন চিনতে পারো কিনা ?

রিধি সামনে তাকালো ,,, কিন্তু ছেলেটি কে চিনতে পারলো না ,,,,
-কে আপনি ??আর আমার এতো ছবি এখানে কেনো ????
– চিনতে পারছো না আমাকে ?ভালো মতো দেখো ,,,,

রিধি ভালো মতো তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করলো ,,,,রিধি অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু তাও চিনতে পারলো না ,,শেষে বিরক্ত হয়ে বললো ,,,,

-কে আপনি হ্যা ??আমি আপনাকে চিনি না ,,,আমাকে যেতে দিন প্লিজ,,,
-রিধি তুমি আমাকে এখনো চিনতে পারছো না? (হতাশ কন্ঠে)
-না,,
-ভালো মতো দেখো ,,

রিধি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো ,,, ছেলেটা লম্বায় প্রায় ৬ফুট ,,গায়ের রং হালকা ফর্সা ,,,রিধির কাছে একটু একটু চেনা চেনা লাগছে ,,
-আপনাকে আমার চেনা চেনা লাগছে , কিন্তু চিন্তে পারছিনা ,,,
-আমি তোমার সেই পুরোনো প্রিয়তম ,,,
-কে ?
– মুহিব ,,,,,,,,,,

মুহিব নাম টা শোনার পর রিধি ভয়ে এক পা পিছিয়ে গেলো ,,,,কারণ এই মুহিব নামটার সাথে রিধির ৬বছর আগের এক ভয়ংকর অতীত জরিয়ে আছে,,,,

-কোন মুহিব?(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
-তোমার সেই জুনিয়র মুহিব ,,,,,

কথাটা শুনে রিধি ঢোক গিলে বললো,,,,,
-তুমি আমার স্কুলের জুনিয়র মুহিব ?(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
-এইতো এতক্ষণে চিনতে পেরেছো ,,,

ভয়ে রিধির হাত পা যেনো কাঁপতে লাগলো ,,,রিধির মাথা যেনো কাজ করছেনা ,,,কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছেনা ,,,রিধি বললো ,,,

-তুমি আমাকে এইখানে এনেছো কেনো ?(শান্ত কন্ঠে)
– আমার কাছে সারাজীবন রেখে দেয়ার জন্য ,,
-মানে ?
-মানে হলো ,আমি তোমাকে আর আমার কাছ থেকে দূরে যেতে দিবো না ,,,,,তার আগের বার ওরা সবাই তোমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছিল ,,,তখন আমি ছোট ছিলাম তাই কিছু করতে পারেনি ,, কিন্তু এবার আমি তা আর হতে দিচ্ছি না ,,,,,বড্ড ভালোবাসি যে তোমায় ,,,
– তুমি কি পাগল হয়ে গেছো হ্যা ???(উত্তেজিত হয়ে)
-হ্যা আমি পাগল হয়ে গেছি ,,,তোমার জন্য পাগল হয়ে গেছি ,,তোমাকে ভালোবেসে পাগল হয়েছি ,,,,,

রিধি বুঝলো যে উত্তেজিত হয়ে কোনো লাভ হবেনা ,,তাই নিজেকে শান্ত করে বললো ,,,

-দেখো মুহিব ,,আর ১সপ্তাহ পর আমার বিয়ে ,,,,আমাকে যেতে দাও ,,,
– কিসের বিয়ে ,,তোমার বিয়ে আমার সাথে হবে ,,,অনেক অপেক্ষার পর আমি তোমাকে নিজের কাছে পেয়েছি ,,,,
– মুহিব আমি তোমাকে ভালোবাসি না ,,,আর জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায়না ,,আমি রুদ্র কে ভালোবাসি ,,,

রুদ্র এর নাম শুনতেই মুহিবের চেহারার রং পাল্টে গেলো ,,,,মুহিব রিধির দিকে তেড়ে এসে রিধির হাত শক্ত করে ধরে ঝাঁকিয়ে বললো ,,,,

– আবার সেই রুদ্র ,,,,কি আছে ওই রুদ্র এর মধ্যে যা কিনা আমার মাঝে নেই ?????(চেঁচিয়ে বললো)

হাত শক্ত করে ধরায় রিধি ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো ,,,

-মুহিব আমার হাত ছাড়ো আমার ব্যথা লাগছে ,,,

রিধির কথা শোনার পর মুহিব ওকে ছেড়ে দিলো ,,আর কেমন যেনো পাগলের মতো বলতে লাগলো ,,,,
-রিধি আম সরি ,,,আমাকে ক্ষমা করো ,,আমি তোমাকে ইচ্ছা করে ব্যথা দিতে চাইনি ,,,তুমি আমার সামনে কেনো রুদ্র এর নাম তুললে বলো ??রিধি আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি ,,,

পাগলের মতো প্রলাপ করতে করতে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো মুহিব ,,,,,

রিধি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুহিব এর দিকে ,,,,, হঠাৎ মুহিব উঠে দাঁড়ালো ,,,রিধির একদম কাছাকাছি চলে আসলো ,,আলতো করে রিধির গাল ছুঁয়ে দিলো ,,, আকস্মিক ঘটনায় রিধি চমকে উঠলো ,,,,,,,

-মুহিব দূরে যাও ,,,(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
-আজ কতদিন পর তোমার কাছাকাছি এসেছি ,,তোমাকে ছুয়েছি ,,,তোমাকে কাছ থেকে ছোঁয়ার সৌভাগ্য আমার ২বার হয়েছিলো ,,,,একবার হলো খেলার সময় আর আরেক বার হলো ,,,,,,,,,,
মুহিব পুরো কথা বলতে পারলো না তার আগেই রিধি কানে হাত দিয়ে চিৎকার করে নিচে বসে পড়লো ,,,,,

-চুপ,,,,,,,,,(চিৎকার করে )
-জানো রিধি ওই মুহূর্ত গুলো আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত ,,,,,
-প্লিজ চুপ করো প্লিজ (কাঁদতে কাঁদতে)
-রিধি জানো আমাকে যখন তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম ,,,তোমাকে ছাড়া প্রত্যেকটা মুহুর্ত আমার কাছে খুব যন্ত্রনাদায়ক ছিলো ,,,সব হয়েছিলো ওই রুদ্র এর জন্য ,,,,আমি কখনোই রূদ্র কে ক্ষমা করবো না ,,,,(রাগান্বিত স্বরে)
– রুদ্র এর কোনো দোষ নেই বুঝলে ,,তুমি একটা পাগল ,,,একটা বদ্ধ উন্মাদ ,,,,(চিৎকার দিয়ে)
-হ্যা আমি পাগল ,,তোমার জন্য পাগল ,,,রিধি আমি তোমার জন্য সব করতে পারি বিশ্বাস করো ,,,,,,,আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি(পাগলের মতো প্রলাপ করতে করতে)
– কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না ,,,,(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
– রুদ্র কে ভালোবাসো তাইনা ,,,
-হ্যা ,,,,,
– তোমার আর আমার মাঝে থার্ড পারসন কে জানো ?
-কে?
– রুদ্র ,,, আচ্ছা যদি এই থার্ড পারসনটাই না থাকে তাহলে কেমন হবে ?
-মানে,,?(ভয়ার্ত কন্ঠে)
-মানে হলো ,, তোমার আর আমার মাঝখান থেকে রুদ্র কে আমি সরিয়ে দিবো ,,,,(স্বাভাবিক কন্ঠে)

মুহিব এর কথা শুনে রিধি অনেক ভয় পেয়ে গেলো,,,,
-মুহিব তুমি এমন কিছু করবেনা ,,,(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
– আচ্ছা রিধি আমরা বিয়ের পর কোথায় ঘুরতে যাব বলোতো ?

রিধি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মুহিব এর দিকে ,,,রিধি বেশ ভালো মতোই বুঝতে পারছে যে মুহিব এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি ,,,তার সাথে এটাও বুঝতে পারছে যে মাথা গরম করে কোনো লাভ হবে না ,,,রিধি কে ঠান্ডা মাথায় সব কিছু করতে হবে ,,,, সব কিছুর আগে এইটা জানতে হবে যে মুহিব তাঁকে কোথায় এনে রেখেছে ,,,,,
রিধি বেশ স্বাভাবিক ভাবে বললো ,,,,
-মুহিব আমি কিছু খাইনি,,, আমাকে কিছু খেতে দিবে ,,,
রিধির কথা শুনে মুহিব বললো ,,,
-ওহ হ্যা দেখেছ,,,আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ,,,,তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি ,,,,,,,
কথাটা বলে মুহিব চলে গেলো ,,,যাওয়ার আগে দরজাটা বাহির দিক দিয়ে বন্ধ করে দিলো ,,,রিধি রুমটা ভালোমতো দেখতে লাগলো ,,রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো ,, প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র এখানে আছে ,,তবে কোনো জানালা নেই ,,,একটা ওয়াসরুম আছে ,,রিধির মাথা কাজ করছেনা ,,কিভাবে এখান থেকে বের হবে সেটাই ভেবে পারছেনা ,,,মুহিব এর চোখ ফাঁকি দিয়ে এখান থেকে পালানো সম্ভব না ,,,

রিধির সেই ৬বছর আগের সেই ভয়ংকর অতীত এর কথা মনে পরছে ,,যেই অতীত কে রিধি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো সেই অতীত আজ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ,,,,,রিধি ৬বছর আগের সেই অতীতে ডুব দিলো ,,,,,

৬বছর আগে,,,,

#চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here