নিরুদ্দেশ ২য় খন্ড,পর্ব ২৬

নিরুদ্দেশ ২য় খন্ড,পর্ব ২৬
_______________
ভোররাতে সূর্যময় পৃথিবীত ত্যাগ করেছে। অথচ লতার চোখে জল নেই। সে স্বামীর পায়ের কাছে চুপচাপ বসে আছে। একফোঁটাও চোখ থেকে জল ঝরে পড়ছে না। সে জানতো সূর্যময় বেশি দিন পৃথিবীতে থাকবে না। তবুও মানুষটা চলে গেছে। মন খারাপ হবে না? মন খারাপ হলে তো মানুষ কাঁদে। তাহলে লতা কেন কাঁদছে না? সে শক্ত পাথর হয়ে গেছে। পাথরকে আঘাত করলে কি পাথর কষ্ট পায়? পায় না। লতাও পাচ্ছে না। নীরব নিশ্চুপ শান্ত। গভীর পুকুরের জলের মতো শান্ত আর শীতল। তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা চলে গেছে। আর কখনো ফিরবে না। কোনো কথা হবে না। খারাপ ভালো যে কোনো কথা সর্বপ্রথম যে মানুষটাকে বলতো সে মানুষটা আজ থেকে তার কথা শুনবে না। কাকে বলবে এত কথা? কে তার কথা শুনবে? এত কথা কোথায় জমা রাখবে? খুব কষ্ট হচ্ছে। কোনো কিছু সহ্য করতে পারছে না। নিজেকে খুব অসহায় নিরালা জরাগ্রস্ত লাগছে। মৃত্যুর খবর মুহূর্তের মধ্যে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। মা কিছুতেই নিজেকে সামলে নিতে পারছেন না। ছেলের মৃত্যুতে নিজে ভয়ার্ত হয়ে উঠেছেন। বারবার মূর্ছা হয়ে পড়ছেন। তাকে সামলাতে দুজন লেগেছে। অতুল বাবু কোনোরকম নিজেকে সামলে নিয়েছেন। অন্তর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ধক ধক করে কাঁদতে পারছেন না। খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু কাঁদছেন না। চোখ থেকে জল ঝরে পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলে নিজেকে শক্ত মানুষ প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হৃদয়ের অন্তঃকরণ ঝলসে তামাটে হয়ে গেছে। বিধাতা এত নিষ্ঠুর হলেন কেন? যে বন্ধুরা বিপদে-আপদে প্রথমে ছুটে আসতো। তারা আজ কেউ আসেনি। তাদের কাছে মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছায়নি। তারা জানে তাদের বন্ধু বেঁচে আছে। কত স্বপ্ন অধরা থেকে গেল। কথা ছিল সারা জীবন একসঙ্গে থাকবে। কখনো নিরুদ্দেশ হবে না। আজ একজন নিরুদ্দেশ হয়ে গেল অথচ বন্ধুরা জানতে পারল না। তার জন্য চোখ থেকে দুফোঁটা জল ফেললো না। কি নিষ্ঠুর নিয়তি! ছোটো ময়ূর বোঝে না পিতৃহারার যন্ত্রণা। বাড়িতে অনেক মানুষজনের আগমনে তার মনে ফুর্তি জেগেছে। এত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও তার আনন্দের শেষ নেই। তার কৌতুক কেউ থামাতে পারল না। সকাল থেকে কিছু খায়নি। বেলা বাড়তে তার খিদে পেল। আজ তাকে কেউ খেতেও বলছে না। অথচ অন্যান্য দিন খাবার খাওয়ার জন্য সবাই কত জোর করে। মার কাছে গিয়ে খাবারের কথা বলল। মা একটাও কথা বলল না। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কোনো কথার গ্রাহ্য করলো না। তার অস্তিত্ব অবলম্বন হারিয়ে গেছে। নিবন্ধহীন মানুষ। ময়ূর নিজে রান্না ঘরে চলে গেল। কিছু খাওয়ার আছে কিনা দেখলো। বিস্কুট ছাড়া তেমন কিছু নেই। ডিব্বা থেকে বিস্কুট বের করতে গিয়ে পাশে থাকা কাচের গ্লাস ধপ করে নিচে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। ভয় পেলো। বাবা জানতে পারলে বকুনি দেবে। খুব ভয় হলো। কি করবে কিছু বুঝে উঠল না। বিস্কুট আর নিল না। ধীরে সুস্থে একটা একটা কাঁচের টুকরো তুলে নিল। সাবধানের সাথে সেগুলো নিয়ে গিয়ে জঙ্গলে ফেলে দিল। আশেপাশে চোখ ফিরে দেখল কেউ আছে কিনা! অনেকেই আছে। তাহলে সবাই দেখে ফেলেছে? কি হবে এখন? তারা যদি বাবাকে বলে দেয়? সে নিঃশব্দে ধীরগতিতে সেখান থেকে সরে পড়লো। রাস্তা দিকে বেরোলো। তোতা কাকিমাকে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠল। তোতা দ্রুতপায়ে তাদের বাড়ির দিকে আসছে। বাবার সাথে অনেকবার তোতাদের বাড়িতে গেছে। তোতাও এ বাড়িতে অনেকবার এসেছে। অপরিচিত নয়। খুব আপন। ময়ূর ছুটে গিয়ে তোতাকে জড়িয়ে ধরল। তোতা সঙ্গে সঙ্গে তাকে কোলে তুলে নিল। চোখেমুখে ভয়ার্ত ভাবান্তর। হাসি মাখা কন্ঠে তোতা জিজ্ঞেস করল,’কি হয়েছে তোমার, ভয় পেয়ে আছো কেন?’
‘আমাকে একটা কাঁচের গ্লাস এনে দেবে?’
‘কাঁচের গ্লাস! কি হবে?’ ইশারা করে বোঝালো সে কানে কানে বলতে চায় আর সে যেন কাউকে এ কথা না বলে। তোতা রাজি হতে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,’আমি একটা গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেছি। বাবা জানতে পারলে বকুনি দেবে। তুমি আমাকে একটা কাঁচের গ্লাস এনে দাও। আমি সেখানে রেখে দেবো।’
‘আমার কাছে তো এখন গ্লাস নেই। তুমি ভেতরে চলো। তোমার বাবাকে আমি বলে দেবো বকুনি দেবে না।’
‘তুমি চলে যাওয়ার পর ঠিক বকুনি দেবে। আমাকে গ্লাস এনে দাও।’ তোতা অনেক বুঝিয়ে ময়ূরকে শান্ত করল। তাকে কোলে নিয়ে ভেতরে গেল। কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখতে ব্যর্থ হলো। চোখ থেকে অনবরত জল বেরিয়ে গেল। ছোট্ট ছেলে বোঝেনি তার বাবার না ফেরার দেশে চলে গেছে। আর কখনো ফিরে আসবে না। কখনো তাকে বকুনি দেবে না।

পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী জিনিসটা এখন অতুলবাবুর কাঁধে। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ এমন ভয়ার্ত দৃশ্য কি আর পৃথিবীতে আছে? এ শাস্তি ফাঁসির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এই দৃশ্যর বর্ণনা করা সম্ভব নয়। শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। নরম মনের মানুষেরা এমন দৃশ্য সহ্য করতে পারে না। বাড়ির উঠোনে এলোমেলো অবস্থায় বসে আছে লতা। কিছু মানুষ স্বামীর লাশ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শ্মশানের অভিমুখে। সে বাধা দেয়নি। তাকে নিয়ে যেতে দিয়েছে। খিন্ন চোখে দূরে তাকিয়ে রয়েছে। জড়ো বস্তুর মতো বসে আছে। এত মানুষ দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে ময়ূরের। মানুষের ভিড়ে সে কিছুটা পথ এগিয়ে গেল। তারপর কেউ একটা বাধা দেওয়ায় সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ল। আর এগিয়ে গেল না। মুখের মধ্যে আঙ্গুল ভরে দাঁড়িয়ে রইল। সমস্ত মানুষ আড়াল হয়ে যেতে ফিরে এলো। মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। সে এখনো কিছু বোঝে উঠেনি। তাকে আগলে নিল লতা। চোখ থেকে ঝর ঝর করে জল ঝরে পড়লো। ময়ূর ভীতু কন্ঠে বলল,’কাঁদছো কেন মা? কি হয়েছে তোমার।’ লতা জবাব দিল না। ছেলেকে খুব জোরে আঁকড়ে ধরল। শ্রাবণে যেন নদীর বাঁধ ভেঙ্গেছে। চারিদিকে নিরবতা। বাড়িতে মানুষের অনুপস্থিতি বাড়ছে। তাদের কাছে এসে তোতা বসলো। লতা তোতোর চোখের জল দেখে বলল,’তুমি কাঁদছো কেন? তোমার কি হয়েছে?’
‘কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।’ তোতা তাদের দিকে তাকাতে পারলো না। তাদের দিকে তাকাতেই বুক মোচড় দিয়ে উঠছে। দুঃখ বেদনায় আর্তনাদ করে উঠছে। কথা ছিল তিন বন্ধু সারা জীবন একসঙ্গে থাকবে। কোনো কিছুই তাদের আলাদা করতে পারবে না। তারা নিরুদ্দেশ হবে না। আজ একজন চলে গেল। কেউ একজনও দেখতে এলো না। শেষ দেখা হলো না। শেষে কি নিয়ে কথা বলেছিল তাও জানে না। অঘ্রানের শেষে নতুন ধান উঠার পর তিন বন্ধু মিলে মাঠে আর ঘুড়ি ওড়াবে না। গ্রীষ্মে পড়ন্ত দুপুরে নির্জন জায়গায় বসে ভাব বিনিময় হবে না। তিন বন্ধু মিলে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাবে না। তিনজন একসঙ্গে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আর আড্ডা হবে না। চতুর্দিকে নির্জনতা এখন থেকে ভয়ের কারণ হয়ে উঠবে। একজনের কষ্টে আর দুজন কাঁদবে না। একজনের হাসিতে বাকি দুজন আর হাসবে না। একটা মৃত্যু কত কিছুর সমাপ্ত ঘটিয়ে দিলো। একটা মুহূর্ত অনেক কিছু শেষ করে দিল। কোনো কিছুর বিনিময় আর পুরনো মুহূর্ত এক সেকেন্ডের জন্যও পাওয়া যাবে না। চতুর্দিকে স্তব্ধতা আর নির্জনতা আর ব্যাকুলতা।
বাড়ির চারিদিকে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কেউ ‌কথা বলছে না। সময় এগিয়ে যাচ্ছে না। একটা জায়গায় যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। সবকিছু ছন্নছাড়া লাগছে। সন্ধ্যা হয়ে এলো। সবার মুখ শুকনো। গতকাল রাতে সূর্যময় ঘুগনি খাবে বলে ছিল। সেজন্য লতা রাতে মোটর ভিজিয়ে রেখে ছিল। এখনো খাটের তলায় ভেজানো আছে। মানুষটা যে ভোর রাতে চলে যাবে বুঝতে পারেনি। জামা কাপড় সব কিছু এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। সূর্যময়ের সমস্ত পোশাক আশাক দাহ করার জন্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তার ব্যবহৃত কিছু জিনিস থেকে গেছে। সেগুলো যত চোখে পড়ছে ততোই মন খারাপ হচ্ছে লতার। কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। বুকের মধ্যে কেমন জ্বালা হচ্ছে। হাত কেটে গেলে কিংবা দেহের কোনো অংশ পুড়ে গেলে যেমন কষ্ট হয় এখন তেমন কষ্ট হচ্ছে না। এই কষ্ট কিছুটা আলাদা। এর নাম হয়তো বেদনা। এ সহ্য করা যায় না। ভালোবাসা মানুষকে বোকা বানায় আর বেদনা মানুষকে বোবা বানায়। তার যে কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে। বুকের এ কি যন্ত্রণা! তীব্র যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেলো। সঙ্গীহীনতা মানুষকে এত কষ্ট দেয় আগে জানতো না। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো। মুখে কেউ কিছু তুললো না। ময়ূরকে খেতে দিল। সেও খেতে চাইলো না। বিকেল থেকে মন ভারি করে রেখেছে। তার মনে হচ্ছে, বাবা তাকে না নিয়ে কোথাও ঘুরতে চলে গেছে। বাবার উপর রাগ হয়েছে। রেগে কিছু খেলো না। মাও জোর করলো না। খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লো। ময়ূরের ঘুম এলো না। একা একা ঘরের মধ্যে খেলতে‌ রইল। কিছুটা সময় পর লতা বলল,’ঘুমোবে আসো। অনেক রাত হয়ে গেছে।’ ময়ূর মায়ের দিকে তাকালো। তারপর বিছানার উপর চলে আসতে আলো বন্ধ করে দিল। মায়ের উপর উঠে মায়ের বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে বলল,’আমার ঘুম পাচ্ছে না। আমি তো দুপুরে ঘুমিয়েছি।’
‘এমনি এমনি শুয়ে থাকো। ঘুম চলে আসবে।’
‘না, আমি বাবার কাছে যাবো।’ ছেলের দিকে তাকালো লতা। তার দৃষ্টি আভাহীন পরাধীন অর্থহীন উদাসীন অস্বাভাবিক। কি বলবে ছেলেকে? নিজেকে কোনোরকম সামলে বলল,’আমার কাছে ঘুমানো যায় না?’
‘না, তুমি খারাপ। আমি বাবার কাছে যাবো।’
লতা উত্তর দিল না।
‘আমি যাবো।’ কেঁদে উঠলো। তাকে সামলাতে পারলো না। সে কিছুতেই ঘুমোবে না বাবা না হলে। তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করল। কোনো উপায় খুঁজে পেল না লতা। দীর্ঘক্ষণ কান্না না থামায় অতুল বাবু ভেতরে এলেন। সব কিছু জেনে ময়ূরকে কোলে তুলে নিলেন। না,শান্ত হলো না। আরও বেশি কাঁদতে শুরু করল। লোভনীয় কোনো কিছু দেখিয়ে তার কান্না থামানো গেল না। এবার লতা বিরক্ত হয়ে পড়লো। ছেলেকে কড়া স্বরে ধমকে দিল। শুনলো না ময়ূর। গালে ঠাস ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিলো। ময়ূর কান্না থামালো না ঠিকই তবে ভয় পেয়ে গেল। লতা নিজেও কেঁদে উঠলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,’এমন কেন করছো? তোমার বাবা আর কোনোদিন আসবে না। সব ছেড়ে চলে গেছে। মরে গেছে। মরে গেছে।’ কথাগুলো একদমই সহ্য করতে পারলেন না অতুল বাবু। বৌমার পাশে বসে বৌমাকে শান্ত করলেন। ছেলের উপর রাগ দেখিয়ে কি হবে? মৃত্যু তো বিধাতার লেখা। বিধাতার কাছে মানুষ অসহায়। ছোট্ট ছেলে জন্ম মৃত্যু কিছুই বোঝে না। অযথা ভয় পাবে। লতা সব কিছু বোঝে কিন্তু নিজেকে আর সামলাতে পারছে না। একটু শান্ত হতে অতুল বাবু ফিরে এসে আবার শুয়ে পড়লেন। লতাও ছেলেকে নিয়ে শুয়ে পড়লো। ময়ূর মাকে উত্তেজিত দেখে ভয়ে কাঁপছে। অনেকদিন আগে মাতৃস্তন পান করা ছেড়ে দিয়েছে। আজ অকারনেই মাতৃস্তন পান করতে চাইলো। লতা বাধা দিল না। ময়ূর ধক ধক কেঁদে যাচ্ছে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। গালে কপালে চুমু খেলো। খুব কাঁপছে। এখন লতার একমাত্র অবলম্বন ময়ূর। তার চোখ থেকেও জলের ফোঁটা গড়িয়ে এলো। কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর আবার ঘুম ভেঙে গেল ময়ূরের। মাঝ রাতে উঠে আবার বাবাকে খুঁজে বেড়ালো। আবার কাঁদতে বসলো। সারারাত বাবাকে না পেয়ে মাকে নাজেহাল করে ছাড়লো। লতার চোখে বিন্দুমাত্র ঘুম এলো না।

পরের দিন বিকেলে তাদের বাড়িতে তোতা আবার একবার এসে হাজির হলো। সে জানে লতাদের বাড়ির অবস্থার কথা। লতার সাথে বসে গল্প করলো। আগ্রহ প্রকাশ করতে পারল না। দু-একটি কথা বলে থেমে গেল। তার কিছু ভালো লাগছে না। মুষড়ে পড়েছে। লতাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতোও কিছু নেই। কিন্তু বেঁচে থাকতে হবে। বেঁচে থাকতে হলে ভালো থাকাটা জরুরী। লতাকে ভালো রাখবে কে? কষ্ট হবে দুঃখ হবে তার মধ্যেও ভালো থাকতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে ময়ূর হারিয়ে যাবে। সে এখন শিশু তাকে সুন্দর ভাবে বড়ো করতে হবে। মানুষ করতে হবে। তার সুন্দর জীবন রয়েছে। এভাবে হারাতে দিলে হবে না। তোতা লতার কাঁধে হাত রাখতে সে তোতার দিকে তাকালো। তার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। এই সহজ-সরল চোখের মধ্যে কত বেদনা লুকিয়ে আছে কেউ বুঝবে না। তোতা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,’ময়ূর আমার সাথে কিছু দিন থাকুক। তোমরা স্বাভাবিক হয়ে ওঠো। দুঃখ কষ্টের মধ্যে ছেলেকে নিমজ্জিত করো না। আমি সবকিছু বুঝতে পারছি। কি করবে? তুমি সবকিছু জানতে তারপরও এতটা ভেঙে পড়লে চলবে না। সূর্যময় চলে গেছে কিন্তু সে তোমার আর ময়ূরের মধ্যে বেঁচে থাকবে। তোমরা এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। তুমি দুঃখ কষ্ট পেলে সে কি ফিরে আসবে? কোনো দিন আসবে না। তোমাকে তো বাঁচতে হবে তাই না। কষ্ট হবে। সহ্য করতে হবে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো!’
‘কি আর দেখবো! আমি কখনো শক্ত মানুষ ছিলাম না। আর আমার সাথে এমন ঘটল!’
‘মানুষ কখনো শক্ত থাকে না। কঠিন আঘাত মানুষকে শক্ত বানায়। মনে হবে আমার সাথে এমনটা কেন হলো? আমার সাথে না হলেও পারতো। কিন্তু তোমার সাথেই হয়েছে তোমাকে মেনে নিতে হবে। দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই।’ লতা আবার চুপ করে গেল। বেশি কথা বলতে চাইলো না তোতা। এই সময়ে একা থাকা ভালো। বেশি কথা বলে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে চাইলো না। বলল,’ময়ূরকে নিয়ে যাবো আমি? ক’দিন আমার কাছে থাকুক না।’
‘আমিও তাই চাই। আমার কাছে একদমই থাকতে চায় না।’ লতা ময়ূরকে ডাক দিতে সঙ্গে সঙ্গে হাজির হলো। সে জানতো না তার বাড়িতে তোতা কাকিমা এসেছে। তাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এলো।
‘কি হয়েছে বাবু?’ ময়ূর জবাব না দিয়ে কোলে গিয়ে বসলো। মুখে ফুলের কুঁড়ির মতূ সূক্ষ্ম দাঁতের আড়াল থেকে হাসি ফুটে উঠল। খুশি হলো লতা। ছেলেকে হাসিখুশি দেখতে খুব ভালো লাগে। নিজের কাছে একদমই থাকে না। তাতে অভিমান হয় ঠিকই। তবে রাগ করে না বেশিক্ষণ। লতা ছেলের গাল টিপে বলল,’কাকিমার কাছে থাকবে? ওদের বাড়িতে যাবে?’
‘না, আমি বাবার কাছে যাবো।’
‘বোঝো ঠ্যালা। এর একটাই কথা। বাবা ছাড়া কাউকে বোঝে না।’
তোতা ময়ূরকে আঁকড়ে ধরে বলল,’আমার বাড়িতে থাকবে চলো ক’দিন। আমার সঙ্গে থাকবে তো? ঘুমানোর সময় গল্প শোনাবো। তোমার ভালো লাগবে।’
‘বাবা কখন আসবে?’
‘আসবে। সময় হলে চলে আসবে।’
ময়ূর যেতে রাজি হলো। তোতা লতাকে বললো,’তোমার মন খারাপ হবে না তো?’
‘না না। মন খারাপ হলে বলবো ছেড়ে দিয়ে যাবে। তোমার কাছে সে অনেক খুশিতে থাকবে।’
‘সাবধানে থেকো। মন খারাপ করবে না। আমরা সবাই সঙ্গে আছি‌।’
ময়ূর এ বাড়িতে অনেকবার এসেছে। সবকিছু নখদর্পণে। পোঁছে চারিদিকে দৌড়াতে শুরু করলো। এ-ঘর ও-ঘর ঘুরতে রইল। সমস্ত জিনিস নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখল। কেউ বাধা দিচ্ছে না। কেউ বাধা দিতে নেই। পাখির মতো স্বাধীনতা পেয়েছে। সে যে গতকাল বাবাকে হারিয়েছে তা জানে না। এত দুঃখ কষ্ট মধ্যেও তার বালক মনে হাসি কৌতুক আনন্দ কেউ আটকাতে পারল না। সে খুশি। খুব খুশি। রাতে রান্না শেষ করে ময়ূরকে নিয়ে বসল তোতা। তাকে কবিতা শেখালো। সেও সুন্দর করে কবিতা বললো। অনেক দিনের পর অনেক খুশি হয়েছে তোতা। এ বাড়িতে যখন সবুজ থাকতো তখন এমন খুশি চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো। সারা বাড়ি খুশিতে গমগম করতো। অকারনে সব কিছুর মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেতে। সবুজের বাচ্চা সুলভ ব্যবহার মুগ্ধ করতো। যখন-ই দুঃখ কষ্ট হতো তখনই সবুজের মুখটা মনে পড়ে যেত। মনে হতো সবুজ তো আছে। আর কি চাই? কিছু কিছু মানুষ একটা মানুষকে কেন্দ্র করেই বাঁচতে চায়। সে তাই চাইছিল। তার কাছে সেটা আছে। তাই সহজে খুশি হয়ে যেত। মন খারাপ হতো না। এখন তো সবুজ কাছে নেই। প্রতিটা মুহূর্তে মন খারাপ হয়ে যায়। আজ ময়ূরকে পেয়ে অনেক খুশি। নিজে হাতে ময়ূরকে খাওয়ালো। অনেকটাখানি খেলো। আবার নিজের ভাবনার কথা ভেবে অনুতাপ করল। শিশুর খাবারের দিকে নজর দিতে নেই। দু-দিন ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারেনি। খাওয়া-দাওয়া করেনি। খিদে তো পাবেই। ঘুমানোর সময় ময়ূর যখন তাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো তখন নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না তোতা। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। সেও তো মা হতে চেয়েছিল। তার ছোট্ট সংসার ছিল। সবুজকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছিল। সে বলেছিল তার সন্তান হওয়ার সময় তাকে বাপের বাড়িতে ছেড়ে আসবে না। তার হাত শক্ত করে ধরে রাখবে যাতে তার কষ্ট না হয়। কিন্তু কি সব হয়ে গেল। সব কিছু বদলে গেল। তোতার কাঁপুনি ঠিক বুঝে ফেলল ময়ূর। সে ঘুমোয়নি। বলল,’কাকিমা, তুমি কাঁদছো?’ তোতা চোখের জল মুছে তার পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বলল,’না তো।’
‘আমার মাও সবসময় এমন ভাবে কাঁদে। আমার খুব ভয় করে তাই আমি মায়ের কাছে থাকি না। কিন্তু বাবা কখনো কাঁদে না। সবসময় খুশি থাকে।’ তোতা হাসলো। শিশুমন দুঃখ কষ্ট বোঝে না। খুশি থাকতে চায়। তার সামনে সবসময় ঘ্যাম ঘ্যাম করে কাঁদলে তার মন বিষাদে ভরে যাবে। তার কাছে থাকতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক। তাকে যতটা সম্ভব খুশিময় পরিবেশে রাখা উচিত। শুধু তাকে নয় তার আশেপাশের সবকিছুতে পজেটিভলি হওয়া উচিত। শিশু তবেই পরিণতর মতো পরিণত হবে। তোতা আর কাঁদলো না। বুকে আগলে নিয়ে আদর করলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে তোতার মন খারাপ হয়ে গেল। তার সাথে সাথে ময়ূর উঠে পড়েছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে দুজনে অনেকক্ষণ গল্প করল। আর তোতা বারবার সবুজকে মনে করলো। সে এ ভাবে ভোর রাতে উঠে গল্প করতে পছন্দ করতো। কত স্মৃতি রয়েছে। মানুষটা না থাকলেও সময় ঠিক করে ফিরে আসছে। সময় অনেক কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে দুজনই ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া সারলো। ময়ূরকে মায়ের মত স্নেহ আদর করলো। তার বাবা আসার কথা। বাবা এলেন। মেয়ের সাথে ঠিকমতো কথা বললেন না। মেয়েকে এভাবে দেখতে পারছেন না। কষ্ট হচ্ছে। তার সে-ই ছোট্ট মেয়ে কতটা বদলে গেছে। যাকে একটা চড় মারলে সারাদিন কেঁদে বেড়াতো। কোনো কিছুর বিনিময়ে থামানো যেত না। খুব অভিমানী কারোর থেকে একবার মুখ ফিরিয়ে নিলে আর যেত না। খুব আত্মসম্মানবোধ ছিল। কোথাও নিজেকে ছোট মনে করলে কিংবা অসম্মানিত হলে দ্বিতীয় বার ওই জায়গায় যেতো না। মানুষটা যতই জ্ঞানী হোক বড়ো হোক একবার তাকে ভুল মনে হলে দ্বিতীয় বার ফিরতো না। আজ সে-ই মেয়ে কি হয়ে গেছে। বদলে গেছে। পুরোনো তোতা নেই। ভালোবাসা তার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। মেয়েকে এমন অবস্থায় দেখতে পারছেন না খোকন বাবু। খুব কষ্ট হচ্ছে। ময়ূরের সাথে বসে গল্প করছিলেন। কিছুক্ষণ পর তোতা এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিল। খোকন বাবু মেয়ের সঙ্গে কথা বললেন না। তোতো অনেকক্ষণ পর বলল,’আমার সাথে কথা বলবে না?’ মুখ তুলে মেয়েকে দেখে আবার মুখ ফিরিয়ে নিলেন। ময়ূরের সাথে ইচ্ছাহীন বাক্য ব্যয় করলেন। তোতা এবার একটু রেগে বলল,’যদি কথা বলবে না তাহলে এসেছো কেন? আসার দরকার ছিল না। তোমার মেয়ে ভালো আছে। আর কি?’
‘কি কথা বলবো বলো? আয়নায় নিজের মুখ দেখেছো? কি অবস্থা হয়েছে তোমার? আর কতদিন এভাবে চলবে?’
‘সারা জীবন এভাবে চলবে।’
‘এভাবে চলতে পারে না। তুমি আমার সঙ্গে ফিরে চলো। এখানে পড়ে থেকে কি পাচ্ছো? কেন নিজের জীবনটাকে নষ্ট করছো? তোমার ভবিষ্যৎ নেই? এখানে সবকিছু শেষ নাকি!’
‘একই কথা কেন বারবার বলছো? তোমার কথায় আমি কখনো ফিরে যাব না। আমি সারা জীবন একা থাকার জন্য প্রস্তুত।’
‘আমারই ভুল হয়েছিল। সেদিন তুমি ঠিক কথা বলেছিলে -এত বড়ো বাড়িতে বিয়ে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। কিছু রয়েছে যার জন্য তারা গরিব ঘরের মেয়েকে বউ বানাচ্ছে। সেদিন ভেবেছিলাম এদের পরিবার খুব সুন্দর। এখন বুঝতে পারছি…..।’
‘আমার মনে হয় না এই পরিবারের মানুষগুলো ভুল। সবুজ কখনো ভুল নয়। ওর মতো সুন্দর মনের মানুষ এই পৃথিবীতে পাবে না। সে আজকে যা কিছু করছে সব আমার জন্য। আমার জন্য ভুল পথে গেছে। তার শাস্তি আমি পেয়েছি।’
‘কেন নিজেকে দোষারোপ করছো?’
‘আমি সত্যি সত্যি দোষী। সব দোষ আমার। সবুজ কিন্তু বিয়ের আগে এমন ছিল না। বিয়ের পর এমন হয়েছে। সে কখনো ভুল কাজ করতো না। আমি তাকে দিয়ে ভুল কাজ করেয়েছি। এবার বলো দোষ কার? একটা শিশুকে আমি বললাম যা তুই ওদের বাড়ি থেকে পেয়ারা চুরি করে নিয়ে আয়। অমুকের বাড়ি থেকে আম চুরি করে নিয়ে আয়। ওর বাড়ির ছেলেটাকে মেরে ছুটে চলে আয়। শিশু আমার মতো সবকিছু করল। শিশু আমার কথা মতো অনেক বদ কাজ করলো। আর আমি একদিন কিছুই বললাম না কিন্তু সে পাশের বাড়ি থেকে টাকা চুরি করে নিয়ে এলো। তখন দোষটা কি শুধু শিশুর?’
‘এসব যুক্তি দিয়ে কি বোঝাতে চাইছো?’
‘একটা কথাই বোঝাতে চাইছি। সব দোষ আমার। আমার জন্য সবুজ এমন হয়েছে।’
‘কিন্তু সবুজ বাচ্চা ছিল না।’
‘ছোটবেলা থেকে সে বাবা-মাকে পায়নি। শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষাটা পেয়েছে। বাবা-মা থেকে দূরে দূরে থেকেছে। কেউ তাকে কাছে টেনে নিয়ে বোঝায়নি কোনটা সঠিক কোনটা ভুল। পাপ পূর্ণ ভুল কাজ এগুলো তার মধ্যে ঢুকে ছিল। তার নেওয়া সিদ্ধান্ত গুলো সঠিক মনে করে। ধীরে ধীরে সে অস্বাভাবিক মানুষ হয়ে ওঠে। ছোটবেলা থেকে একা থাকতে শুরু করে। তার মস্তিষ্কের বিকৃতি শুরু হয়। স্বাভাবিক জীবন থেকে বহু দূরে চলে যায়। বাস্তব কখনো বোঝার চেষ্টা করেনি। আর আমি যখন তার কাছে আসি তখন সে বয়সে বড়ো হয়ে গেলেও মনটা শিশু মতো ছিল। আর সে-ই সময় আমার উচিত ছিল তাকে ভালো মানুষের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমি তা না করে তাকে খারাপ পথে নিয়ে গেছি। তাকে দিয়ে ভুল কাজ করিয়েছি। কাজ গুলো অবশ্যই ভুল ছিল না। কিন্তু তার চোখে ভুল ছিল।’
‘তার মানে তুমি যাবে না? এখানে থেকে কি করবে তাহলে?’
‘আমি সবুজকে খুব ভালোবাসি। এই বাড়ি ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। স্মৃতি নিয়ে সারা জীবন থেকে যাবো।’
‘তবে তাই হোক।’
‘তুমি তাহলে ফিরে যাবে?’
‘এসেছি যখন মেয়ের হাতের রান্না খেয়ে যাবো।’
তোতা বাবার দিকে তাকালো। বাবার চোখ দুটো ছলছল করছে। চোখের কোণে জল।
‘তোমার চোখে জল কেন, বাবা!’
‘জানি না।’
‘বলো!’
বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে খোকন বাবু বললেন,’মা গো, তোমার কষ্ট হয় না!’
‘হয় তো। খুব কষ্ট হয়।’
‘তাহলে সবকিছু সহ্য করে আছো কেন? চলো আমার সাথে ফিরে চলো। ভালো থাকবে।’
‘ভালো থাকবো বলে এখানে আছি। আর কোথাও আমি ভালো থাকবো না।’
‘তোমাকে বলে হবে না। আমার কথা তুমি শুনবে না।’ চোখের জল মুছতে মুছতে বারান্দার দিকে বেরিয়ে গেলেন খোকন বাবু। তোতা যেমন বসে ছিল তেমন ভাবে বসে রইল। ময়ূর সবকিছু খেয়াল করেছে। খোকন বাবু উঠে যেতে সে বলল,’দাদু ওভাবে কাঁদছিল কেন?’ তোতা কি উত্তর দেবে খুঁজে পেল না। তাকে ভালো রাখার জন্য এখানে নিয়ে এসেছিল। আর এখানে এসেই একই পরিবেশে থাকতে হচ্ছে। সুস্থ থাকার জন্য এমন পরিবেশ কখনো মঙ্গলময় হতে পারে না। ময়ূরকে কোনোরকম বুঝে শান্ত করলো। তাকে নিয়ে স্নান করতে গেল। ফিরে এসে রান্না বসালো। সারাদিন তোতার পেছনে পেছনে ঘুরতে রইল ময়ূর। খুব ভালোভাবে সময় কাটলো। ছোট ছেলেটাকে আদর-যত্ন সেবা সুস্থতা করতে বেশ ভালোই লাগছে। মন পরিষ্কার হয়ে গেল। ময়ূরও খুব খুশি হয়েছে। পরের দিন সকালে বাবা ফিরে গেলেন। যাওয়ার আগে তিনি আবার একবার মেয়েকে তাঁর সঙ্গে যাওয়ার কথা বললেন। রাজি করাতে পারলেন না। ময়ূর আরও কয়েকদিন তোতার সাথে রইল। সুন্দরভাবে দিন কাটলো। কিন্তু পরের দিন আর থাকতে চাইলো না। মায়ের কথা মনে পড়ছে। মায়ের কাছে যাবে। তোতা তাকে আটকালো না। মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এলো। বাড়িতে ফিরে এসে তার কিছু ভালো লাগলো না। একা বোধ করলো। এই কয়টা দিনে ময়ূর তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল। কত স্মৃতি জমা হয়ে গেছে। বাড়ির এ-দিকে ও-দিকে সমস্ত জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। সবগুলোতে লেগে রয়েছে ময়ূরের ছোট্ট নরম হাতের স্পর্শ। খুব খারাপ লাগলো। তারও যদি এমন একটা ছেলে থাকতো তাহলে কত খুশি হতো। সারাদিন তাকে নিয়ে বসে থাকতো আদর করতো গল্প করতো। সুন্দরভাবে সময় পার হতো। সবার কপালে তো সব জুটে না। তারও জুটেনি। পরের ঘরের ছেলেকে বেঁধে রাখার সাধ্য নেই তার। যতই তার কাছে খুশি থাকুক না কেন তার তো মা রয়েছে। মার কাছ থেকে আলাদা করতে চায় না। মা হতে না পারায় বুঝতে পারছে মা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা কতটা কষ্টের আর খুশির।

পর্ব ২৭ আসছে।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here